রহস্যময়ী লেডি কিলার পর্ব-২০

0
304

#রহস্যময়ী_লেডি_কিলার
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_২০

–“ডক্টর পাগলের মতন ইনজেকশনটা আমার গলায় পুশ করার প্রয়াস করলো। যেটা দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে! কারন ডক্টর হটাৎ করে এমন পাগলামো শুরু করেছে কেন! ডক্টরের এমন আচরণে আমি কোনো কিছু চিন্তা-ভাবনা করার মতন শক্তি হারিয়ে ফেলেছি! “অন্যদিকে ডক্টর ইনজেকশনটা আমার গলায় লাগিয়েই দিবে, তার ঠিক আগ মুহূর্তে অবনী তার হাত দিয়ে ডক্টরের শরীরে সজোড়ে আঘাত করে। যার ফলে ডক্টর আমার সামনে থেকে ছিটকে গিয়ে দেয়ালের উপরে আছড়ে পড়ে। অবনী তার শক্তির মাধ্যমে ডক্টরকে আমার থেকে কয়েক হাত দূরে দেয়ালের উপর নিয়ে আছড়ে ফেলেছে। যার ফলে ডক্টর ব্যথায় চেঁচাতে আরম্ভ করে। আমার থেকে কিছুটা দূরে মুজাহিদ দাঁড়িয়ে ছিলো। সে ডক্টরের এমন আচরণ দেখে সোজা গিয়ে ডক্টরকে টেনে ফ্লোর থেকে উপরে উঠায়। তারপর তার গলা চেপে ধরে তাকে বলে,

–এই জানোয়ার, তুই কোন সাহসে ভাইয়ের উপরে প্রাণ নেওয়া হামলা করেছিস? তোর তো দেখছি সাহস কম না। দ্বারা তুই খালি একটু ওয়েট কর। তোকে আজকে সাপের মতন পিটিয়ে মারবো। আমি এক্ষুনি নিচ থেকে ছেলেপেলেকে খবর দিচ্ছি।
.
মুজাহিদ প্রচন্ড ক্ষেপে যায় ডক্টরের উপরে। তাই সে পকেটে থাকা ফোনটা বের করে নিচে ছেলেপেলের ফোন লাগাতে যায়। তখনি আকাশ তাকে বলে,

–এই মুজাহিদ ছেলেপেলেদের পরে ফোন দে। তুই আগে ওর ঘাড় চেপে ধরে তাকে আমার সামনে আন।
.
মুজাহিদ আকাশের কথা মতন ফোন করা বাদ দিয়ে রেখে ডক্টরের ঘাড় চেপে ধরে তাকে আকাশের কাছে নিয়ে যায়। ডক্টরকে আকাশের সামনে নিয়ে যেতেই আকাশ তাকে বলে,

–কিরে হারামজাদা তোর সাহস কি করে হয় রে আমার দিকে তেড়ে আসার? তোকে আমি এক বছরের অগ্রীম টাকা দিয়ে রুগীকে ঠিক করার জন্য হায়ার করেছি। সেখানে তুই কিনা রুগী ঠিক করা বাদ দিয়ে রেখে উল্টো রুগীকে মারতে উঠে পড়ে লেগেছিস। কাহিনী কি তোর? তুই আসলে চাস টা কি? নাকি তুই আমার কোনো শত্রু পক্ষের লোক? যার কারনে তুই আমার প্রাণ নেওয়া হামলা করেছিস?

–না ভাই আমি কোনো শত্রু পক্ষের লোক না। আর আমি কাউকে ইচ্ছাকৃত ক্ষতিও করতে চাই না। কিন্তু আপনার এই বাসায় আসার পর আমার মাথা আউলে গেছে। যেদিকেই তাকাই সবার হাতে আর কোমরে অস্ত্র। এসব দেখতে দেখতে দুই দিনেই আমার মাথা নড়বড়ে হয়ে গেছে। আমি এখান থেকে অনেক কয়বার চলে যেতেও চেয়েছি। কিন্তু আপনার লোক আমাকে জোর করে আঁটকে রেখেছে। যার কারনে আমি ক্ষিপ্ত হয়ে এমনটা করেছি।

–কিহহ তুই খালি এই সামান্য কারনে আমার উপরে হামলা করলি?

–জ্বি ভাই। এছাড়া আমার কোনো ভিন্ন মতলব নেই।

–এই মুহাজিদ কমিনাটাকে অর্ধেক বছরের পারিশ্রমিক দিয়ে কিক মেরে ঘর থেকে বিদায় কর। বেটাকে দিয়ে কাজের কাজ তো তেমন কিছুই হয়নি। বরং সে আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। তাই তাকে জলদি বিদায় কর। না হয় কখন কার উপরে হামলা করে বসে ঠিক নেই।

–ভাই কমিনাটা যা করেছে তাতে তো সে মাইর ডিজার্ভ করে। কিন্তু আপনি খামোখা তাকে টাকা দিতে বলছেন কেন?

–না থাক বাদ দে। বেটা এমনিতেই ঘরের পরিবেশ দেখে আধা পাগল হয়ে আছে। পরে মাইর দিলে দেখা যাবে পুরোপুরি পাগল হয়ে জীবন কাটাতে হবে তার।

–ঠিক আছে ভাই তাহলে বেটাকে টাকা দিয়ে বিদায় করে দিচ্ছি।

–হুম তাই কর।
আর অন্য কোনো ডক্টরকে ঠিক করে নিয়ে আয়।

–আচ্ছা ভাই।

–মুজাহিদ ডক্টরকে ঘাড় চেচে ধরে নিচে নিয়ে গেলো। তখনি অবনী আমায় বলে উঠলো,

–দেখেছেন কতোবড় শয়তান সেই ডক্টর। আমি না থাকলে তো আজ সে আপনার বড়সড় একটা ক্ষতি করে বসতো।

–হুম।

–ধুর এখন আপনার হাতের কি হবে! আপনার হাত তো পুড়ে গেছে।

–অবনী তুমি খামোখা এসব নিয়ে টেনশন করিও না। আমার হাত তেমন বেশি পুড়েনি। আর তাছাড়া মুজাহিদ অন্য একজন ডক্টরকে ঠিক করে নিয়ে আসবে।

–আচ্ছা ঠিক আছে। তবে আপনি কিন্তু এখন রুম থেকে কোথাও যাবেন না।

–ঠিক আছে যাবো না। তবে আগে তোমার ক্লোন টাকে সামলে রেখে আসি।

–ঠিক আছে।

–অবনীর ক্লোন টাকে রুমের এক কোনায় সামলে রেখে আবার খাটে এসে বসলাম। তারপর অবনীর সাথে রুমে বসে এটা সেটা নিয়ে কথাবার্তা বলতে লাগলাম। কথাবার্তার এক পর্যায়ে ড্রয়িডের লোকজনকে নিয়ে কথা উঠেছে। তাই আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম, আচ্ছা অবনী ড্রয়িডের লোকজনের সাথে তুমি এতোদিন ছিলে। এবং এক বছর যাবৎ তুমি তাঁদের থেকে ট্রেনিং করছো। তুমি কি তাঁদের বিষয়ে এমন কোনোকিছু জানোনা, যাতে করে আমি সমস্ত ড্রয়িডবাসীকে ধরতে পারি? এবং সাথে তাঁদেরকে মেরে সমস্ত দাঙ্গাফাসাদকো শেষ করতে পারি।

–না আমি তো তাঁদের বিষয়ে আর বেশি কিছু জানি না। আমি যেটুকু জানতাম সেটুকু আপনাকে বলে দিয়েছি। তবে হ্যাঁ একটা কথা,

–কি কথা?

–আমি না প্রায় সময় একটা স্বপ্ন দেখি। যেটা কিনা আপনাকে বলি নাই।

–কি স্বপ্ন অবনী?

–যে একটা লোক বৃত্তের মতন গোলাকার একটা উজ্জ্বল আলোকরশ্মির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তবে তার চেহারা আমি কখনোই দেখিনি। কারন সে বৃত্তের মতন গোলাকার উজ্জ্বল রশ্মিটার দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকে। আর এই স্বপ্নটা আমি ঘুমালে প্রায় দেখি। আমার কেন জানি মনে হয় আমার এই স্বপ্নের পিছনে কোনো রহস্য আছে।

–অবনী স্বপ্ন স্বপ্নই হয়। সেটার বাস্তবিক কোনো রূপ থাকে না। আর থাকলেও আমি শিওর করে বলতে পারি, যে তোমার এই স্বপ্নের কোনো মাহাত্ম্য বা রহস্য নেই।

–আমি যদি বলি আছে?

–অবনী এটা সিনেমাটিক একটা স্বপ্ন। এটার বাস্তবিক রূপ থাকে কি করে?

–প্রিয় আমরা মানুষ হয়েও আমাদের মাঝে সুপারন্যাচারাল ক্ষমতা আছে। তাহলে এই স্বপ্নের ও কোনো ব্যাখ্যা আছে। আর এটা আমি নিশ্চিত করে এজন্যই বলতে পারছি, কারন এই জিনিসটা খালি আমার স্বপ্নে নয়। আমি যখন সজাগ থাকি, তখন ও মাঝেমধ্যে এই জিনিসটা আমার সাথে ঘটে।

–মানে কি অবনী?

–মানে হলো ধরেন আমি রাস্তা দিয়ে হাটছি, তখন হুট করে আমার চোখের সামনের সমস্ত কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। জমজমাট পরিবেশটা পাল্টে গিয়ে আমি অদ্ভুত ভাবে সেই স্বপ্নের জায়গাটায় চলে যাই। যেখানে বৃত্তের মতন গোলাকার উজ্জ্বল রশ্মিটা রয়েছে। তারপর সেখানে পৌঁছানোর পর দেখি বৃত্তের মতন গোলাকার উজ্জ্বল রশ্মিরটার সামনে সেই লোকটা একই ভাবে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমাকে উজ্জ্বল গোলাকার বৃত্তটা চুম্বকের মতন তার দিকে টানছে। যার কারনে আমি লোকটা এবং গোলাকার বৃত্ত টার দিকে এগিয়ে যাই। আর তখনি সেই লোকটা বৃত্তের মতন গোলাকার উজ্জ্বল রশ্মিটাকে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয়। যার ফলে অনেক জোরালো একটা আলোর বিস্ফোরণ ঘটে। তারপর লোকটা সহ সেই আলোর বৃত্তটা গায়েব হয়ে যায়। আর আমিও আমার আগের জায়গায় ফিরে আসি। এবার আপনিই বলুন এটা কি রহস্যজনক কিছু নয়? এই জিনিসটা শুধু স্বপ্নে হলে সারা যেতো। কিন্তু স্বপ্নের মতন করে সজাগ থাকা অবস্থায় বাস্তবে হয় কি করে বলুন?

–অবনী হ্যাঁ আমার এখন মনে হচ্ছে তোমার এই স্বপ্নের মধ্যে কোনো রহস্য আছে। কারন একটা মানুষ কখনো একাধিক বার একটা জিনিস নিয়ে স্বপ্ন দেখেনা। আর তাছাড়া অনেক সময় স্বপ্নই মানুষের রহস্য খোঁজার সুত্র বলে দেয়। তোমার কথাবার্তা শুনে আমার মনে হচ্ছে তোমার স্বপ্নটা বাস্তবে এগজিস্ট করছে। আর বৃত্তাকার রশ্মিটার সামনে যেই লোকটা দাঁড়িয়ে থাকে, সেই হয়তো ডেভিল রিপার। না হয়তো তার সাথে ড্রয়িডের লোকদের কোনো না কোনো ভাবে জোরালো সম্পর্ক রয়েছে।

–হ্যাঁ যে কোনো কিছুই হতে পারে। তবে ড্রয়িডে থাকা অবস্থায় আমাদের রাখোয়াল, যে কিনা আমাদের ট্রেনিং করাতো। এবং আমাদের ড্রয়িডের প্রতিনিধিও ছিলো। সে একবার আমাদের সবাইকে বলেছে, যে আমাদের সবাইকে যে এমন অদ্ভুত শক্তির অধিকারী বানিয়েছে। তার কাছে এমন একটা জিনিস আছে। যেটা কিনা এই পৃথিবীর কোনো মানুষের কাছে নেই। এবং পৃথিবীর কোনো মানুষ সেটাকে জীবনে কোনোদিন ও দেখে নি। যার দ্বারা সে এসব কিছুর সুত্রপাত করেছে। আর আমরাদের কাছে সুপারন্যাচারাল শক্তি এসেছে তার সেই জিনিসটা দ্বারা।

–অবনী এবার আমি ক্লিয়ার সমস্ত বিষয়ে। আর শুনো সেই লোকটাই ডেভিল রিপার। কারন দেখো প্রথমত তোমার সেই স্বপ্ন এবং কল্পনা। তার উপরে ড্রয়িডের রাখোয়াল তার বসের যেই উপমা দিয়েছে, সেটাতে করে বোঝাই যাচ্ছে সে ডেভিল রিপার। না হয়তো তোমার সেই স্বপ্ন আর কল্পনা একাধিক বার কখনোই আসতো না। তোমায় ঐ যে একটু আগে আমি বললাম স্বপ্ন মানুষের রহস্যের সুত্র খুঁজে দেয়। তোমার বেলাতেও ঠিক তেমনটাই হয়েছে। আমি শিওর তোমার সাথে সেই বৃত্তাকার উজ্জ্বল রশ্মিটার কোনো না কোনো সম্পর্ক আছে। তাই সেই জিনিসটা তোমার স্বপ্নে এবং কল্পনায় বারবার আসছে।

–হতে পারে। কারন আমিও শুনেছি মানুষ যখন কোনো কিছু নিয়ে অতিরিক্ত শকট খায়, বা তার সাথে বিস্ময়কর কিছু ঘটে, তখন সেই জিনিসটাকে তার ম্যামোরি জোরালো ভাবে ক্যাপচার করে নেয়। আমার বেলাতেও হয়তো এমনটাই হয়েছে।

–অবনী তোমার বেলাতে কি হয়েছে সঠিক বলতে পারছি না! কারন তোমার এই জিনিসের দু’টো দিক দেখতে পাচ্ছি। এক হয়তো তোমার সাথে যা ঘটছে সব কিছুই বাস্তব। না হয় দ্বিতীয়ত সব কিছুই তোমার একটা ভ্রম। মানে হলো সব কিছুই তুমি কল্পনা করছো। তবে এই দু’টো দিকের গন্তব্য কিন্তু একটাই। চাই সব কিছু তোমার কল্পনা, না হয় বাস্তব। কিন্তু সত্যিকারত্বে সেই বৃত্তাকার উজ্জ্বল রশ্মি এবং লোকটা বাস্তবে এগজিস্ট করে। আর আমি তোমার এই সুত্রপাত ধরেই এগিয়ে যাবো এসবের শেষপ্রান্তে। তারপর পুরো ড্রয়িডবাসীকে পায়ের নিচে কুচলে মারবো। কিন্তু একটা জিনিস আমি বুঝে উঠতে পারছি না, যে আমি কোন স্থান থেকে আমি তাঁদের খোঁজা শুরু করবো!

–আমার মতে আপনি আবার ড্রয়িডে গেলে তাঁদের খোঁজ পাবেন।

–অবনী তারা তো সেদিন আমার চোখের সামনেই সব কিছু নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে। সেখানে গিয়ে তাঁদেরকে কি করে পাবো?

–গায়েব হলেও তারা আবার এসে সেই জায়গায় আড্ডা বসাবে। আর তারা সেদিন গায়েব হয় নাই। তারা সেদিন টেলিপোর্ট হয়ে নিজেদের আইডেন্টিটিকে মুছে দিয়েছে। যাতে করে আপনার মনে হয় যে তারা সবাই পালিয়ে গেছে। মানে হলো তারা আপনাকে বোকা বানিয়েছে। আর আপনিও বোকা হয়ে সেখান থেকে ফিরে এসেছেন। আমি লিখিত দিতে পারি যে আপনি আবার ড্রয়িডে গেলে তাঁদেরকে দেখতে পাবেন।

–ঠিক আছে তাহলে আমি আবার লোকজন নিয়ে সেখানে যাবো। আর এবার লোকজন আরো বাড়িয়ে নিয়ে যাবো। তারপর বেটাদেরকে ধরে ধরে জবাই করবো।

–প্রিয় আপনাকে হাজার বারন করলেও আপনি আমার বারন শুনবেন না সেটা আমি আগেই জেনে গেছি। তাই আপনাকে আর আটকাচ্ছি না। না হয়তো আমার স্বপ্নের কথা আমি আপনাকে আরো বহু আগেই বলে দিতাম। কিন্তু শেষমেশ আপনার জেদ দেখে এই বিষয়টাকে আর লুকিয়ে রাখতে পারলাম না। দেখুন আপনি যা করার করেন, কিন্তু আমি আপনার সঙ্গেই থাকবো।

–না অবনী তোমার জীবন বিপদের মুখে ফেলতে পারবো না। তুমি এমনিতেই সেই নড়ক থেকে পালিয়ে এসেছো। তোমায় আমি সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর যদি তাঁদের হাতে তুমি কোনো না কোনো ভাবো পাকড়াও হও, তাহলে আমার সাথে সাথে তুমিও শেষ।

–আমার রাগ উঠাবেন না প্লিজ।
আমি যেতে চেয়েছি ব্যস আমায় সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন।

–অবনী আমি তোমার এই কথা রাখতে পারবো না। এটাই আমার ফাইনাল কথা। কারন সেখানে যাওয়ার পর কোনো বিপদ হলে আমাদের সাথে সাথে তুমিও ফেঁসে যাবে।

–এই বদলোক তোকে একবার আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে। আর তুই সেখানে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবি, আর আমি এখানে বসে বসে কলা চুষবো? শুনে রাখ তা কখনোই হবে না। বিপদ আসলে এক সাথে দুজনের উপরেই আসবে। মরলে দু’জন একসাথে। আর বাঁচলেও দু’জন একসাথে। মোট কথা তুই আমাকে রেখে সেখানে একা যেতে পারবি না। কারন তোকে ছাড়া আমার এই জীবনের কোনো দাম নেই। না হয়তো শহরের এতো অনিষ্ট করছে তারা আমার জন্য। আমি বহু আগেই নিজেকে তাঁদের হাতে শপে দিতাম। না হয়তো নিজেই তাঁদের কাছে চলে যেতাম। কিন্তু তোকে পেয়ে আমি বেঁচে থাকার উৎস খুঁজে পেয়েছি। তাই মরলে দু’জন একসাথে। বাঁচলেও একই সাথে। তাই আমার কথাটাই ফাইনাল। আমি তোর সাথে যাচ্ছি মানে যাচ্ছি।

–অবনীর জেদ দেখে মাথায় রাগ উঠে গেলো। কিন্তু তৎক্ষনাৎ কিছু একটা চিন্তা করে মাথা ঠান্ডা করে ফেললাম। কারন আমি যেমন মেয়েটাকে সুরক্ষায় রাখতে চাচ্ছি, যাতে করে তার কোনো বিপদ না হয়। তেমন ভাবে মেয়েটাও হয়তো আমাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আমার সাথে যেতে চাচ্ছে। তাই রাগকে দমিয়ে রেখে অবনীকে বললাম, ঠিক আছে তুমি আমাদের সাথে যেও। তবে আগে সময় হোক। আর তুমিও পুরোপুরি সুস্থ হও।

–বদ লোক নিজের কারনেই আমার মুখে তুইতোকারি শুনেছেন। একটু আগে হ্যাঁ বললে কি হতো? আর আমি তো বলিনি যে আমি এখন যাবো।

–কারন একটু আগে আমার মাথায় আসেনি, যে তুমি আমার সুরক্ষার জন্য আমাকে কখনোই একা ছাড়বা না।

–হুম ঠিকই ধরেছেন। আপনি আমার ভালো-মন্দ
নিয়ে ভাবতে পারলে আপনাকে ঐ নড়কে আমি একা কি করে যেতে দেই বলেন?

–অবনীর কথা শুনে চোখের কোণে পানি চলে এসেছে। কারন মেয়েটা আমাকে এতো বেশি ভালোবাসে যা কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। অবনীর কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ অবনীকে নিজের কাছে টেনে নিলাম। অবশ্য সে এতো সময় আমার কাছাকাছিই ছিলো। কিন্তু সেই কাছে থাকা আর এখনের মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ।
এতো সময় সে আমার গা ঘেঁষে বসে ছিলো। আর এখন আমি তাকে নিজের কাছে টেনে নেওয়ার পাশাপাশি তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি। অবনী আমার এই রূপ আচরণ দেখে পাল্টা আর কোনো প্রশ্ন করলো না। সে চুপচাপ আমার শরীরের উষ্ণতা নিতে লাগলো। তখনি দরজার বাহির থেকে মুজাহিদ অনুমতি চাইলো রুমে প্রবেশ করার। আমি অবনীকে ছেড়ে দিয়ে মুজাহিদকে ভিতরে আসতে বললাম। মুজাহিদ অন্য একজন ডক্টরকে হায়ার করে এনেছে। মুজাহিদদের আনা ডক্টর শুরুতে আমার হাত ওয়াশ করে তারপর সেটাতে মলম লাগিয়ে দিলো। পরবর্তীতে পুড়ে যাওয়া সমস্ত স্থান জুড়ে পট্টি লাগিয়ে দিলো। এখন কিছুটা ব্যাটার ফিল করছি। দেখতে দেখতে এভাবেই দুই থেকে তিন দিন কেটে গেলো। আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। অবনীও প্রায় সুস্থ হয়ে এসেছে। অবনী আমি সবাই মিলে নিচে সোফায় বসে বসে কথাবার্তা বলছি। অবনী সবাইকে ড্রয়িডের বিষয়ে বিস্তারিত বলছে। কারন সে সেখানে ছিলো। এমন সময় অবনীর ক্লোনটা আমাদের রুম থেকে আপনা-আপনি নিচে এসে সবার দিকে এক জাতীয় ধারালো রিং ছুঁড়তে লাগলো। যার ফলে সেই রিংয়ের আঘাতে ছেলেপেলে অনেকেরই হাত-পা কেটে গেছে। অবনীর ক্লোনের এইরূপ আচরণ দেখে অবনী তার ক্লোনকে সামলানোর জন্য তার দিকে এগিয়ে গেলো। অবনী ক্লোনের সামনে যেতেই হুট করে রুমের মাঝে একটা ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটলো। যার ফলে পুরো রুমের নকশা সহ পাল্টে গেছে! রুমের অবস্থা দেখে কোনো দিক থেকেই মনে হচ্ছে না যে এটা আমার বাসস্থান। মনে হচ্ছে যেনো এটা কোনো ভয়ানক যুদ্ধের ময়দান। রুমের মধ্যে যারা যারা ছিলো, সবাই চোখে মুখে হাত দিয়ে ফ্লোরের উপরে গড়াগড়ি খেতে আরম্ভ করেছে। যেটা দেখে আমার বুকের ভিতরে ধুপধুপানি শুরু হয়ে গেছে…..

চলবে…..

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।