রহস্যময়ী লেডি কিলার পর্ব-৭+৮

0
247

#রহস্যময়ী_লেডি_কিলার
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৭

“মানুষ আকৃতির কিছু একটা হাওয়ায় উড়ে এসে সবার গাড়ির সামনে দাঁড়ায়। যার সারা শরীর থেকে কিনা জ্বলজ্বল করে আগুন জ্বলছে। আগুনের কারনে লোকটার চেহারার আকৃতি ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে না। এই ভয়ানক দৃশ্য দেখে সবার চোখ কাপলে উঠে যায়! আর মুহাজিদ আকাশের কথা মতন পকেটে করে নিয়ে আসা ছোট রেড লাইট টাও জোরে জোরে শব্দ করে জ্বলতে আরম্ভ করে! যেটা দেখে আকাশ এবং বাকি সবাই বুঝে যায়, যে সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে, সে কোনো সাধারণ মানুষ না! সে মানুষের আকৃতি ধারণ করা কোনো এক নরখাদক। তাই সবাই ভয়ে চুপসে আছে। কিন্তু আকাশের ভিতরে কোনো ভয়ভীতি কাজ করছে না। কারন সে সব সময় উপর ওয়ালার উপরে বিশ্বাসী। আল্লাহ যেদিন তার নসিবে মৃত্যু লিখে রেখেছে, সেদিন এই তার মৃত্যু হবে। এছাড়া এই লম্বা সফরের জীবনে অনেক কিছুর সাথেই তার মোকাবিলা করতে হবে। এমন মনোভাব নিয়েই সে এগিয়ে চলেছে জীবনযাত্রায়। ” অপরদিকে মানুষ আকৃতির সেই আগুনের গোলটা আকাশের গাড়ির একদম কাছাকাছি চলে আসে। আকাশ ও নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়ে গাড়ি থেকে একাই নেমে পড়ে। তবে নামার আগে মুজাহিদদের হাত থেকে রেড লাইট নিয়ে নামে। তারপর মানুষ আকৃতির আগুনের গোলা টাকে বলে,

–এই তুই কে? আর ফরেস্ট কলোনীর এই নাজেহাল অবস্থা হয়েছে কি করে?

–আমি তোর যম। আর এই ফরেস্ট কলোনীকে আমি আমার শক্তির দ্বারা জ্বলিয়ে পুড়িয়ে তসনস করে দিয়েছি। দেখ একবার ভালো করে তাকিয়ে চারপাশ টা। কি সুন্দর করে জ্বলজ্বল করছে সব কিছু। সমস্ত ঘরবাড়ি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সাথে এই এলাকার সমস্ত লোকজন চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে। সবাইকে শেষ করে দিয়েছি আমি।

–হায়রে যমরাজ, তোর বাহাদুরি সবার সামনে চললেও আমার সামনে চলবে না। কারন বাকি সবার মতন আমি না। তোর টক্কর আমি বরাবরের মতো করেই দিব। তোকে জায়গা মতন নিয়ে গিয়ে যন্ত্রণা দিয়ে মারবো। তুই যতো বড় পাষাণ হস না কেন, মনে রাখবি তোর থেকে বড় পাষাণ আমি। এই যে তুই এতো গুলা লোককে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরেছিস। এবং তাঁদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়োছিস, এর প্রাপ্য শাস্তি তুই পাবি।

–কিহহ তুই আমার মারবি? তোর সেই ক্ষমতা হয়েছে রে এখনো?

–ক্ষমতার এখনো কিছুই দেখিস নাই তুই।
আমি একবার ক্ষমতা দেখাতে শুরু করলে তোর এই শক্তি তোর জন্যই কাল হয়ে দাঁড়াবে। তাই তুই নিজের ভালো চাস তো নিজেকে প্রশাসনের কাছে শপে দে। না হয় কুকুরের মতন করে মেরে রাস্তার পাশে ফেলে রাখবো।
.
মানুষ আকৃতির আগুনের গোলাটা আকাশের কথা শুনে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে যায় আকাশের উপরে।
তাই সে হাত দিয়ে আশেপাশের কয়েকটা বড় বড় গাছের দিকে ইশারা করে। যার ফলে হাত থেকে আগুন বের হয়ে সেই গাছ গুলোর উপরে পরে।
আর সাথে সাথে গাছ গুলোতে আগুন ধরে যায়। যেটা দেখে আকাশ ভয় পাওয়ার বদলে বুকে সাহস জমিয়ে তাকে বলে,

–ভাই রে, তোর দেখানো ভয়ে আমার শরীরের পশম ও নড়বে না। তাই তুই পারলে আমার কিছু করে দেখা।
.
এবার মানুষ আকৃতির আগুনের গোলাটাকে আর ধরে রাখে কে। আকাশের কথা শুনে চরম পরিমাণে অপমান বোধ করে সে। তাই সে এবার আকাশের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে আকাশকে আগুনের সাহায্যে পুড়িয়ে মারার জন্য। কিন্তু তখনি অদ্ভুত কান্ডটা ঘটে। মানুষ আকৃতির আগুনের গোলাটা আকাশের দিকে আগুন ছুঁড়তে চাইলেও আগুন বের হয় না। যেটা দেখে সে এবার নিজেই তাজ্জব হয়ে যায়! ঠিক সেই সময় আকাশ কোমর থেকে মিনি সাইজের একটা গান বের করে সেই মানুষ আকৃতির আগুনের গোলাটার দিকে শুট করে। যার ফলে সে ভয়ানক ভাবে একটা চিৎকার দিয়ে সেখান থেকে উড়ে পালায়। আর উড়ে যেতে যেতে আকাশের দিকে আঙ্গুল ইশারা করে বলে,

–তোকে আমি দেখে নিব। তোর মতন মানুষ আমি আমায় পায়ের নচে কুচলে মারি। সেখানে তুই আমার গায়ে হিট করেছিস। এর ফল তুই পাবি। ভয়ানক ভাবে মরবি তুই।
.
এসব বলে মানুষ আকৃতির আগুনের গোলাটা উড়ে সেখান থেকে নিজের অবস্থা ত্যাগ করে। মানুষ আকৃতির আগুনের গোলাটা নিজের অবস্থান ত্যাগ করতেই আকাশ ও ফিরে এসে নিজের গাড়িতে উঠে বসে। আকাশ গাড়িতে উঠে বসতেই মুজাহিদ তাকে প্রশ্ন করে,

–ভাই এটা কি ছিলো! মানুষ আকৃতির আগুনের গোলাটা গাছের দিকে ইশারা করতেই গাছ আগুনে পুড়ে তসনস হয়ে গেছে। সেখানে আপনার দিকে হাতের ইশারা করায় তার হাত থেকে আগুন বের হয়নি। আর আপনারো কিছু হয়নি।

–মুজাহিদ এই অদ্ভুত কান্ডের বিশ্লেষণ আমি নিজেও করতে পারবো না! কারন আমি নিজেও অবাক হয়ে আছি! আমি ভেবেছি সে আমার দিকে আগুন ছুঁড়ে মারলে আমি সরে গিয়ে নিজেকে প্রটেক্ট করবো। সেখানে তার হাত থেকে আগুন এই বের হয়নি! উল্টো আমি তাকে ধুল চাটিয়ে দিয়েছি।

–ভাই যেটাই হবে হোক। আপনি সুস্থ স্বাভাবিক আছেন। আর সে আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। আমরা এতেই খুশি।

–আচ্ছা এখন কি করবি?
রাজের তালাশে এসেছিলাম। কিন্তু এই বদমাশ টা তো পুরো ফরেস্ট কলোনী আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। সাথে অনেক মানুষজন ও মেরে ফেলেছে।

–ভাই আমাদের এখন এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ।

–হুম ঠিক বলেছিস। এই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট কর।
.
আকাশের কথা মতন ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে ফরেস্ট কলোনী থেকে ফিরে আসবে, তখনি কোথা থেকে যেনো রাজ আকাশ ভাই বলে চিৎকার করে উঠে। রাজের গলার আওয়াজ শুনে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দেয়। আর সবাই গাড়ি থেকে নেমে পড়ে রাজের তালাশ করার জন্য। ঠিক সেই সময় রাজ তার সঙ্গী সাথী এবং মিনিস্টার সাহেব সহ ফরেস্ট কলোনীর ভিতর থেকে আরো অনেকেই বেরিয়ে আসে। যেটা দেখে কিনা সবাই খুশি হয়ে যায়। আকাশ তারাতাড়ি রাজের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাস করে,

–এই তুই ঠিক আছিস তো?

–হুম ভাই ঠিক আছি। কিন্তু আরেকটুর জন্য হলে মারা পড়তাম। কমিনার বাচ্চাটা আমাদের সবাইকে তুলে এনে একটা ঘরের মধ্যে বন্দী করেছে। যেখানে আগ থেকেই মিনিস্টার সাহেব এবং তার লোকজন ছিলো। তারপর কমিনার বাচ্চাটা আমাদেরকে ঘরের ভিতর রেখে ঘর বন্দী করে দেয়। আর পুরো ফরেস্ট কলোনীতে আগুন লাগিয়ে দেয়। যেই আগুনে অনেকেই জ্বলেপুড়ে মরে গেছে। কিন্তু আমরা সবাই কোনো ভাবে ঘরের দরজা ভেঙ্গে বেরিয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়েছি।

–যাক শুকরিয়া আল্লাহ বাঁচিয়েছে তোদেরকে।
আচ্ছা এখন চল এখন থেকে যাওয়া যাক। কারন এতো সময়ে সারা দেশে খবর ছড়িয়ে পড়েছে এই অগ্নিকাণ্ডের। তাই আমাদের চটজলদি এখান চলে বাসায় ফিরে যাওয়া উচিৎ। না হয়তো পরে আমরাই ফেঁসে যাবো। তুই তো জানিস এই দুনিয়ায় রীতি-রেওয়াজ কেমন। জালিম’রা জুলুম করে। আর ফেঁসে যায় নিরীহ মানুষ। তাই তাড়াতাড়ি এই জায়গা ত্যাগ কর।
.
আকাশের কথা শুনে পাশ থেকে মিনিস্টার সাহেব বলে উঠে,

–আকাশ ভাই আপনি কে সেটা আমি আপনাকে দেখেই বুঝে নিয়েছি। ভাই আপনি একদম চিন্তা করবেন না। কারন আপনার গায়ে হাত দিবে এমন বুকেরপাটা নিয়ে এখনো কেউ জন্ম হয় নাই। তার উপরে আমি তো আছিই। আর্মি,পুলিশ যেই আসুক না কেন, আমি সবাইকে সামলে নিব। আপনি একদম নিশ্চিন্তে থাকুন।

–ধন্যবাদ মিনিস্টার সাহেব। তবে আমাদের এখন চলে যাওয়া উচিৎ। কারন এখানে থেকে তো আমাদের আর কোনো কাজ নেই। তাই চলে যাওয়াই ব্যাটার।

–আচ্ছা ভাই ঠিক আছে আপনার মর্জি।
তবে ভাই আপনি চলে যাওয়ার আগে একটা রিকোয়েস্ট করবো আপনাকে।

–কি রিকোয়েস্ট?

–ভাই আমি আপনার সাথে একদিন বসে কথপোকথন করতে চাই। কারন এটা আমার অনেক দিনের ইচ্ছা। আমার এতো এতো ক্ষমতা এই পলিটিকাল লাইনে। কিন্তু আপনার দর্শন আমার কখনো হয়নি। আমি আপনার সাথে কথা বলার জন্য কতো কি না করেছি। কিন্তু আমার কখনোই সেই সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু এখন যাও হয়েছে, তাও অসময়ে। একে তো আপনার তাড়া আছে। দ্বিতীয়ত মর্মান্তিক একটা লোকেশনে আপনার দর্শন হয়েছে আমার। ভাই প্লিজ আপনি আমার রিকোয়েস্ট টা রাখেন। আপনার সাথে বসে একদিন কথপোকথন করতে চাই।

–আচ্ছা ঠিক আছে। সময় করে আপনার সাথে একদিন কথাবার্তা বলবো। রাজ আপনাকে লোকেশন মেইল করে দিব।

–অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।

–আচ্ছা এখন চললাম।
দূর থেকে পুলিশের গাড়ির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তারা এসে এখানে জাস্টিফাই করবে। খামোখা তাঁদের কাজে নাড়া বাঁধাতে চাই না।

–আচ্ছা ভাই।

–মিনিস্টার সাহেব থেকে বিদায় নিয়ে সবাই মিলে বাসায় চলে আসলাম। সবাই তো বেশ খুশি রাজ আর বাকিদেরকে ফিরে পেয়ে। আমারো বেশ ভালো লাগছে রাজকে সহিসালামতে পেয়ে। তাই দুপুরে সবাই মিলে একত্রে বসে খাওয়া দাওয়া করলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিত্যদিনের ন্যায় বিছানায় এসে গা এলিয়েছি। এমন সময় কেউ একজন ফোন দিয়েছে। বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করলাম। কলটা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে কেউ একজন ইচ্ছা ধুমসে বকাবকি করতে শুরু করেছে।

–এই বদমেজাজি হনুমান, তুই ঠিক আছিস তো?
তোর কিছু হয়নি তো? হনুমান তুই সেখানে গেছিস কি করতে? তোর গায়ে যদি সেই শয়তানের বাচ্চাটা আগুন ছুঁড়ে মারতো, তাহলে আমার কি হতো বল তো? তুই আমাকে এতো সহজে কেন বিধবা করতে চাইছিস বলবি একটু আমায়?

–অপরপাশের কথপোকথন শুনে হয়তো বুঝে গেছেন যে কে আমায় ফোন করেছে। হ্যাঁ অবনী ফোন করেছে আমায়। কিন্তু অবনীর কথায় আমায় একটা জিনিস খুব করে ভাবাচ্ছে। যে মানুষ আকৃতির আগুনের গোলাটা আমায় আগুন নিক্ষেপ করতে চেয়েছে। সেটা অবনী জানলো কি করে! তার তো এসব জানার কথা না! তাহলে সে এই বিষয় সম্পর্কে অবগত হয়েছে কি করে….

চলবে…..

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।

#রহস্যময়ী_লেডি_কিলার
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৮

–“অবনী ফোন করেছে আমায়। কিন্তু অবনীর কথা আমায় একটা জিনিস খুব করে ভাবাচ্ছে! যে মানুষ আকৃতির আগুনের গোলাটা আমায় আগুন নিক্ষেপ করতে চেয়েছে। সেটা অবনী জানলো কি করে! তার তো এসব জানার কথা না! তাহলে সে এই বিষয় সম্পর্কে অবগত হয়েছে কি করে! তাই অবনীকে প্রশ্ন করলাম, এই তুমি এসব বিষয়ে জানলে কি করে? তুমি তো সেখানে ছিলে না। তাহলে তুমি এসব বিষয় সম্পর্কে জানলে কি করে?

–এই মাথা মোটা, তোর মতন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সবাই বসে থাকে নাকি রে? আর তোর এই বিষয়ে খালি আমি কেন, পুরো দেশের মানুষ এই তো জানে।

–মানে কি অবনী!

–মানে হলো ফরেস্ট কলোনীর ঘটনাটা নিয়ে টিভিতে নিউজ সম্প্রচার করছে সাংবাদিক। সেখানে অনেকের ছবি দেখাচ্ছে। আর তাঁদের মধ্যে তুই ও আছিস। তোদের উপরে নাকি মানুষ আকৃতির কোনো এক ভয়ানক নরপিশাচ হামলা করেছে। যার শরীর থেকে কিনা জ্বলজ্বল করে আগুন জ্বলছিলো। এবং সেই নরপিশাচটা নাকি পুরো ফরেস্ট কলোনীকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। সেই এলাকার বা সেই কলোনীর তেমন কেউ এই নাকি বেঁচে নেই। হাতে গুনা কয়েকজন নাকি বেঁচে গিয়েছে। সাংবাদিক তাঁদের ছবি টিভির স্ক্রিনে দেখিয়েছে। এবং তাঁদের অনেকের থেকে সাক্ষাৎকার ও নিয়েছে। আমি টিভিতেই তোকে দেখেছি। তো এবার বল যে তুই সেখানে কি করছিলি?

–একটা কাজে গিয়েছিলাম।

–এই বেয়াদব ছেলে কি কাজ ছিলো সেখানে তোর? আজকে যদি তোর কিছু হয়ে যেতো, তাহলে আমার কি হতো একবার ভেবে দেখেছিস?

–অবনীর কথা শুনে মাথার রক্ত আবারো গরম হয়ে যাচ্ছে। তাই তাকে বললাম, অবনী এবার কিন্তু অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। তুমি আমায় নিয়ে চিন্তা করো সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তোমার অতিরিক্ত কাজকারবার গুলো আমার পছন্দ না। আমি তোমায় বলিনি, যে আমায় নিয়ে তুমি এতোটা চিন্তা করো। তো কোন সাহসে আমায় থ্রেট করে কথাবার্তা বলছো?

–আকাশ তোর হুমকিতে আমি ভয় পেলেও কিন্তু সব সময় আমি চুপ করে থাকবো না। কারন যেখানে আমি কথা না বললে আমার প্রিয় মানুষটার বিপদ হবে। সেখানে আমি অবশ্যই কথাবার্তা বলবো। আর তুই তুকারি করছি সেটা না হয় করলাম না। কিন্তু আপনি একটা জিনিস ভেবে দেখেন, আপনার যদি কিছু হয়ে যেতো, তাহলে আমার কি অবস্থা হতো? আপনি না হয় আমাকে সেভাবে ভালোবাসেন না। কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। না হয়তো আপনার মতন ভয়ঙ্কর মানুষকে গিয়ে কোনোদিন এই বলতাম না, যে আপনাকে আমার ভালো লাগে।

–মেয়েটার কথা শুনে এবার চুপসে গেলাম। কারন সব সময় সবার সাথে রাগ দেখালে হয় না। কিন্তু আমি কি করবো, আমার রাগ সব সময় মাথার উপরে উঠে থাকে। একটু তেড়া বাঁকা কথা শুনলেই মাথা আউলে যায়। তবে এখানে মানুষটা আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। তাই তাকে শান্ত গলায় বললাম, অবনী আসলে সরি। আর তুমি আমায় নিয়ে টেনশন করো সেটা নিয়ে আমি আর কিছু বলবো না। কারন টেনশন করার মতন অধিকার একটু হলেও তুমি রাখো।

–তো এবার বলেন আপনি সেখানে কেন গিয়েছিলেন?

–অবনী সেই এলাকাতে আমার এক পরিচিত মানুষ থাকে। আমি তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তুমি প্লিজ আমাকে নিয়ে এখন আর টেনশন করিও না। আমি ঠিক আছি।

–আপনি ঠিক আছেন কি না আছেন সেটা আমি নিজের চোখে দেখেই বিশ্বাস করবো। আপনি আমার সাথে এখুনি এসে দেখা করবেন। এমনিতেই সকাল বেলা একগাদা কথা শুনিয়ে রেখে গেছেন আমায়৷ তার উপরে টিভিতে এসব দেখে মাথা পুরো নষ্ট হয়ে আছে আমার। আপনি প্লিজ আমার সাথে একটু দেখা করুন। আমি আপনাকে দেখতে চাই এখুনি।

–অবনী এখন কি করে?
এখন তো ভরা দুপুর। আর তাছাড়া তুমি তো বাসায় চলে গিয়েছো। তোমার বাসার লোকজন কি বলবে?

–দুপুর টুপুর বুঝি না আমি। আপনি আমার সাথে এখন দেখা করবেন ব্যস। না হয়তো আমি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবো। আর আমার বাসায় পরিবারের কেউ থাকে না। আমি একাই এই শহরে থাকি। আমার পরিবার পরিজন সবাই গ্রামে। আমি পড়ালেখার জন্য শহরে এসেছি। শহরে এসে দু’জন পরিচিত আপুর ফ্ল্যাটে উঠেছি। কিন্তু আপনার এখানে আসতে হবে না। তবে বাসায় এসে দেখা করলে সমস্যা নাই। কিন্তু তার পরেও বাহিরে কোনো একটা জায়গায় দেখা করবো।

–আচ্ছা ঠিক আছে। তো এবার বলো কই দেখা করবা?

–আমার বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটা পার্ক আছে। আমি ঠিকানা ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি সেখানে চলে আসেন। আমি সেখানেই থাকবো।

–আচ্ছা আমি সেখানে পৌঁছাচ্ছি কিছু সময়ের মধ্যে।

–হুম জলদি আসবেন।

–আচ্ছা।
তারপর ফোন কেটে দিলাম। তবে এখনো একটা কথা বাকি আছে জানার অবনী থেকে। যেটা তার থেকে জিজ্ঞাস করতে ভুলে গেছি। সে আমার নাম্বার কোথা থেকে পেয়েছে সেটা জানা বাকি আমার। আচ্ছা সেটা অবনীর কাছে গিয়ে জেনে নেওয়া যাবে। তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে গায়ে শার্ট জড়িয়ে নিয়ে ড্রাইভারকে বললাম গাড়ি স্টার্ট দিতে। তখনি মুজাহিদ এসে বললো,

–ভাই আপনি কি কোথায় যাচ্ছেন?
যদি যেয়ে থাকেন, তাহলে আমি এক্ষুনি আসছি।

–আরেহ মুজাহিদ সমস্যা নেই। তুই বাসায় থেকে রেস্ট কর।

–ভাই সমস্যা নেই মানে! আপনি গার্ড ছাড়া বের হবেন নাকি?

–হুম গার্ড ছাড়াই বের হবো। কারন যেখানে যাবো, সেখানেই পরিবেশ টা একদম ভিন্ন। আর যার সাথে দেখা করতে যাবো, সেই মানুষটা আমাকে একদম একাকী দেখতে চায়। তাই তোদের কারোর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তোরা বাসায় থাক।

–ভাই আমার কেমন যেনো ভয় হচ্ছে।

–আরে ভয় পাচ্ছিস কেন খামোখা তুই?
আমি তো দূরে কোথায় যাচ্ছি না। আর কোনো পুরুষ মানুষের সাথেও দেখা করতে যাচ্ছি না। আমি যাচ্ছি অবনীর সাথে দেখা করতে। কারন মেয়েটা পাগলামো শুরু করেছে। তো তোরা যদি এখন আমার সাথে যাস, তাহলে মেয়েটা অন্য ভাবে রিয়েক্ট করবে।

–আচ্ছা ঠিক আছে ভাই তাহলে আপনি একাই যান। কারন ভাবীর সাথে দেখা করতে যাবেন, সেখানে আমরা যেয়ে কোনো কাজ নেই। তবে হ্যাঁ কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই কিন্তু ফোন করবেন।

–আচ্ছা।
মুজাহিদদের কথা শুনে আমার কেমন যেনো লেগেছে! সে হুট করে অবনীকে ভাবি ডাকার কারনটা বুঝতে পারলাম না! তবে সেই দিকে বেশি একটা ভ্রূক্ষেপ না করে গার্ডদেরকে রেখে শুধু ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে অবনীর পাঠানো ঠিকানা মতন পার্কে চলে গেলাম। পার্কে গিয়ে দেখি অবনী কটকটা রোদের মধ্যে একটা বেঞ্চ ধরে বসে আছে। আমি পার্কে এসেছি সেটা অবনী দেখেছে। সে আমাকে দেখতে পেয়েই বেঞ্চ থেকে উঠে দৌড়ে এসে পাগলের মতন ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ফুফিয়ে কান্না করতে আরম্ভ করলো। মেয়েটার আচরণে বেশ শকট হলাম! কিন্তু তাকে কিছুই বললাম না। কারন মেয়েটা এমনিতেই কান্না করছে। তার উপরে কিছু বললে কান্নার মাত্রাটা হয়তো বেড়ে যাবে। তাই চুপচাপ রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছি। আমি চুপ করে থাকলেও কিছুক্ষণ পর অবনী নিজেই মুখ খুলে আমায় বললো,

–আপনি প্লিজ কখনো আমায় ফেলে রেখে দূরে সরে যাইয়েন না। আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমার আপনাকে চাই। বিশ্বাস করেন বেঁচে থাকতে হলে আমার আপনাকেই লাগবে।

–এই পাগলী আমি কই গিয়েছি তোমায় ছেড়ে। আমি তো তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি। আর তুমি আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছো।

–আমি আপনাকে আজীবন এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখতে চাই। আমি কখনোই আপনাকে আমার থেকে দূরে যেতে দিব না। কারন আপনিই একমাত্র শেষ সম্বল আমার। আমি আমার জীবনে অনেক কিছুকেই হারিয়েছি। আর সর্বশেষ এসে আপনাকে পেয়েছি। আমি আপনাকে হারাতে চাইনা কখনোই। আপনি দয়া করে নিজেকে একটু সামলে রাখবেন। আর সাবধানে থাকবেন।

–মেয়েটার এখনের কথাবার্তা গুলো কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছে! “তবে আবার অন্যদিকে খুশিও লাগছে। কারন মেয়েটা আমায় নিয়ে বেশ চিন্তা করে। তাই তাকে বললাম, নাহ কোথাও যাচ্ছি না আমি। আর আমি সব সময় নিজের খেয়াল রাখবো। এবার তুমি দয়া করে শান্ত হও। আর এই রৌদ্র ছেড়ে ছায়াতে চলো।

–হুম চলেন।

–মেয়েটা আমার ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়েছে। তারপর আমার হাতের ভাঝে তার হাতের আঙ্গুল গুলো ঢুকিয়ে দিয়ে ছায়ার খোঁজে হাঁটা দিয়েছে। দু’জন মিলে হেঁটে ছায়ার মধ্যে একটা বেঞ্চ এসে বসেছি। বেঞ্চে এসে বসতেই সে আবারো আমায় জড়িয়ে ধরে আমার কাধের মাথা রেখে ফোঁপাতে আরম্ভ করেছে। উফফ আল্লাহ! মেয়েটা কি জন্য যে এমন করছে! এই অবনী তুমি আবারো ফোপাঁচ্ছো কেন? আমি তো বলেছি, যে আমি দূরে যাবো না।

–আপনাকে নিয়ে মনের ভিতরে যেই ভয় টুকু ঢুকেছে, সেটা কেন জানি বারবার আমার চোখ থেকে পানি ঝরাচ্ছে। বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে এমন করছি না।

–দেখো তুমি নিজেকে শান্ত করো। এভাবে করলে কিন্তু আমি চলে যাবো।

–এই না,না আমি শান্ত হচ্ছি। আপনি প্লিজ যাবেন না।

–হুম।
চলে যাওয়ার হুমকি শুনে মেয়েটা আমায় ছেড়ে দিয়ে একদম চুপচাপ শান্ত মতন বেঞ্চের উপরে বসলো। আমি তার এমন কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছি। কারন বেশ অদ্ভুত লাগছে মেয়েটার কান্ডকারখানা গুলো। আমি কোনো সাড়াশব্দ ছাড়া মেয়েটার চুপসে থাকা চেহারাটার দিকে তাকিয়ে আছি। এভাবে কয়েক সেকেন্ড যেতেই সে আবারে আগের ন্যায় পাগলামো শুরু করেছে। তবে এবারের পাগলামিটা একদম অন্যরকম। যেটা কিনা আমার গায়ের পশম ও খাঁড়া করে দিয়েছে। সে হুট করেই আমায় বলে উঠে,

–এই যে আকাশ বাবু, আপনি হাজার বার বলার পরেও আমি নিজেকে শান্ত করতে পারছি না। বিশ্বাস করুন আমার ভিতরে ভয়ের মাত্রাটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তাই আমি বলি কি আকাশ বাবু, আপনি আমায় বিয়ে করে নিজের ঘরে নিয়ে চলুন। দরকার হয় আপনার ঘরের চাকর বা কাজের মহিলার মতন থাকবো। ঘরের সব কাজ করবো। সব কিছুই করবো। মানে একটা কাজের মহিলা যা করে। ধরে নিবেন আমি আপনার ঘরের কাজের মহিলা। আমাকে কখনো বউ বলে স্বীকৃতি দিতে হবে না। আমার সাথে কখনো আপনার ঘনিষ্ঠ হতে হবে না। আমাকে কাজের মহিলার মতন ঘরের কোনো এক কোথায় জায়গা দিলেই হবে। তাও প্লিজ আপনি আমায় বিয়ে করে নেন। তাহলেই আমার ভয় টা কেটে যাবে। অন্তত সব সময় আপনাকে চোখের সামনে তো দেখতে পাবো। অন্তত সব সময় আপনার খেয়াল তো রাখতে পারবো। প্লিজ নেন না আমায় বিয়ে করে,

–অবনীর মুখে এমন কথাবার্তা শুনে আমার শরীরের সমস্ত পশম কাটা দিয়ে উঠেছে! সাথে সাথে মেয়েটাকে এক টান দিয়ে নিজের বুকে নিলাম। তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলতে আরম্ভ করেছি। মেয়েটার কথায় কেমন যেনো আমার শক্ত হৃদয় মোমের মতন গোলে গিয়েছে। তাই তাকে বললাম, অবনী তুই আমার মানে আমারাই। দুনিয়া উল্টে যাবে তো যাক। কিন্তু তুই আমার আছিস আমরাই থাকবি। তোকে আমি অনেক জলদি নিজের বউ বলে স্বীকৃতি দিব। তবে তুই তখন কাজের মহিলার মতন নয়, রাজরানীর মতন ঘরে থাকবি। মেয়েটা আমার এমন কথপোকথন শুনে আমায় জিজ্ঞাস করলো,

–আচ্ছা আপনি আমায় ভালোবাসেন তো?

–হুম রে পাগলী। তুই কি আমার চোখের পানি দেখে বুঝতে পারছিস না, যে আমি তোকে ভালোবাসি কি বাসি না।

–হুম পারছি।

–তাহলে এবার টেনশন করা বন্ধ কর। কারন তুই আমাকে তোর মতন বানিয়ে নিয়েছিস। এবার তোর মতন করে আমারো তোকে নিয়ে টেনশন থাকবে। তোর মতন করে আমার ভিতরেও এবার তোর জন্য টান কাজ করবে। তোর মতন আমার ভিতরেও ইচ্ছে জাগবে তোকে জলদি আপন করে নেওয়ার। তাই তুই এবার চিন্তামুক্ত থাক। তোকে আমি অনেক জলদি নিজের করে নিব। মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে এসব বলছিলাম, তখনি হুট করে আমার নজর গিয়ে পড়ে আমাদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মেয়ের উপরে। যে কিনা আমাদের দু’জনের দিকে চাক্ষুষ নয়নে তাকিয়ে আছে। আমি মেয়েটার দিকে তাকাতেই তার সাথে আমার চোখাচোখি হয়। সে আমার দিকে তাকিয়ে ভয়ানক একটা হাসি দিয়ে হুট করেই আমার চোখের সামনে থেকে গায়েব হয়ে যায়। যেটা দেখে আমার কলিজা বিভৎস রকমের একটা মোচড় দিয়ে উঠ! কারন একটা মেয়ে হুট করেই আমার চোখের সামনে থেকে গায়েব হয়ে গেলো কি করে!
কি করে সম্ভব এটা! আমি তারাতাড়ি করে অবনীকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। তারপর সামনে কয়েক কদম হেঁটে গিয়ে চারপাশে দৃষ্টিপাত করে মেয়েটাকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু মেয়েটাকে কোথাও পেলাম না। তাই আবারো অবনীর কাছে চলে এলাম। কিন্তু অবনীর কাছে ফিরে এসে দেখি সেও নাই। সেও কোথায় যেনো গায়েব হয়ে গেছে। যেটা দেখে কিনা এবার বুকের ভিতরে ভয়ঙ্কর রকমের ধুপধুপানি শুরু হয়! কিরে কি হচ্ছে এটা আমার সাথে! প্রথমে সেই মেয়েটা আমার চোখের সামনে থেকে গায়েব হয়ে গেছে! এবার দেখি অবনীও নাই। ঘটছে টা কি আমার সাথে এসব ….

চলবে….

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।