রহস্যময়ী লেডি কিলার পর্ব-১১+১২

0
223

#রহস্যময়ী_লেডি_কিলার
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১১

“অপরদিকে আরেকজন নিচ থেকে হাতের সাহায্যে সেই মেয়েটার শরীরে ইলেকট্রক্যাল শর্ট দিচ্ছে। যাতে করে সেই মেয়েটার শরীর থেকে বরফের শিল্ড বা রক্ষাকবচ টা ভেঙ্গে যায়। দূর থেকে আকাশ এসব দৃশ্য দেখে তার চোখ কপালে উঠে যায়! তাই সে চোখ বড় বড় করে তাঁদের দিকে দৃষ্টিপাত করে তাকিয়ে থাকে! তবে এতটুকুতেই শেষ নয়। আকাশের এখনো আসল ঝাঁটকা খাওয়া বাকি আছে। আকাশ বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের দিকে দৃষ্টিপাত করে তাকিয়ে থাকার পর তার নজর যায় পাশের একটা গোলাকার সার্কেলের ভিতরে। যেখানে একটা অল্প বয়সী ছেলে বিদ্যুৎ এর গতিতে ছোটাছুটি করছে। আর তার একটু পাশেই আরেকটা মেয়ে নিজের আধ্যাত্মিক শক্তি দ্বারা কোনো এক জাতীয় ধোঁয়ার সাহায্যে পরিবেশ টাকে আঁধার বানিয়ে রেখেছে। মনে হচ্ছে যেনো উপর ওয়ালা তাকে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে নিয়জিত করেছে। সেই মেয়ের মাথার উপর বরাবর অনেক খানি জায়গা ভয়ঙ্কর অন্ধকার হয়ে আছে। আর সেই অন্ধকারের ভিতর থেকে তুমুলভাবে বিজলী চমকাচ্ছে। তাঁদের এই কর্মকান্ড দেখে আকাশের বুঝতে বাকি নেই, যে সেই মেয়ের মধ্যে মেঘ জমানো এবং বিজলী বর্ষন করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই আকাশ পুরোপুরি চুপসে যায়। কিন্তু তার ভিতর থেকে এখনো মনোবল হারায় নি। কারন সে এসবের আসল রহস্য জানতে চায়। তাই সে কোনো ধরনের চিন্তা-ভাবনা ছাড়া সেই সব আধ্যাত্মিক মানুষ জনদের দিকে এগোতে থাকে। আকাশ হাঁটতে হাঁটতে তাঁদের প্রায় কাছে চলে যায়। এবার আকাশকে সেই মানুষ গুলাও দেখে নিয়েছে। তাই তারা সবাই নিজেদের সুপারন্যাচারাল শক্তির ব্যবহার করা বাদ দিয়ে রেখে সবাই স্বাভাবিক হয়ে আকাশের দিকে এগিয়ে আসে। তারপর তাঁদের থেকে একজন যে কিনা হাতের সাহায্যে আগুন ছুঁড়তে পারে, সে আকাশকে বলে,

–এই বেটা তোর তো দেখি সাহস কম না?
তুই সেদিন আমার মুখোমুখি হয়ে আমার মুখে মুখে তর্ক করেছিস। তার উপরে আজকে আবার আমাদের বাসস্থানেই চলে এসেছিস। আজ তো তুই শেষ।

–ও আচ্ছা তার মানে তুই সেই ব্যক্তি, যে কিনা আগুনের সাহায্যে মানুষের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিস। এবং সাথে অনেক অসহায় মানুষের ও প্রাণ নিয়েছিস।

–হুম আমিই সেই ব্যক্তি। আর তুই ও এখন তাঁদের মতন করে পুড়ে মরবি। তোকে এখন আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। নিজেই সেধে মৃত্যুর চৌকাঠ পর্যন্ত চলে এসেছিস। তাহলে তোকে না মেরে জীবিত রাখি কি করে বল?

–ওকেহ তোর যদি ক্ষমতা থাকে, তাহলে তুই আমাকে মেরে দেখা। অবশ্য আমি এখানে আসার আগে কোনো ধরনের প্রটেকশন নিয়ে আসিনি। কিন্তু তারপরেও আমার মনে হচ্ছে তুই আমাকে মারতে পারবি না।

–এই বেটা আমরা পারি না যে এমন কোনো কাজ নেই। আর তুই সেদিন হয়তো কোনো না কোনো এক ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছিস। কিন্তু তাই বলে সব সময় যে বেঁচে যাবি, এমনটা কিন্তু ভাবিস না।

–আচ্ছা যা ভাবলাম না। কিন্তু তুই পারলে আমায় মেরে দেখা। না হয় তোকে চেপে ধরে তোর মুখের ভিতরে গুলির সব কয়টা বুলেট ঢুকিয়ে দিব।
পরে ইঁদুরের মতন দফাদফি করতে করতে মরবি।

–কিহ তুই আমার মুখে মুখে তর্ক করছিস। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।
.
তারপর সে আকাশের উপরে রেগে গিয়ে নিজের সারা শরীর আগুন দ্বারা বেষ্টন করে হাওয়ার সাহায্যে ভেসে আকাশের দিকে আগুন নিক্ষেপ করবে, এমন সময় আকাশ নিজের কোমর থেকে পিস্তল বের করে সেই মানুষ আকৃতির আগুনের গোলাটার দিকে গুলি করে। কিন্তু আকাশের এই গুলিতে আগুনের গোলাটার কিছুই হয় না। বরং সে আরো রেগে যায়। আর আকাশের দিকে তেড়েফুঁড়ে আগুন নিক্ষেপ করতে আরম্ভ করে। কিন্তু গতবারের ন্যায় এবারো আশ্চর্যজনক বিষয়টা আকাশের সাথে ঘটে বসে। তবে আশ্চর্যজনক বিষয়টা এবার আগের চাইতে একটু বেশি করেই ঘটে। মানুষ আকৃতির আগুনের গোলাটা আকাশের দিকে আগুন নিক্ষেপ করলে আকাশ সেই আগুন থেকে বাঁচার প্রত্যাশায় ঢাল স্বরূপ নিজের হাত সামনে এগিয়ে দেয়। যার ফলে সেই আগুন আকাশের শরীরকে আর স্পর্শ ও করে না। বরং সেটা আকাশের শরীরের কাছ থেকে ঘুরে গিয়ে উল্টো সেই মানুষ আকৃতির আগুনের গোলাটার শরীরের উপরে গিয়ে পড়ে। যার ফলে উল্টো সে নিজেই তার নিক্ষেপ করা আগুন দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এবং তার আধ্যাত্মিক রূপ পাল্টে গিয়ে মানুষের আকৃতি ধারণ করার পাশাপাশি সে মাটির উপরে আছড়ে পড়ে। যেটা দেখে তার সঙ্গী সাথী সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়! তবে তারা থেমে নেই। সবাই নিজের সঙ্গী সাথীর প্রতিবাদ স্বরূপ একত্রে একজোট হয়ে আকাশের উপরে আধ্যাত্মিক শক্তির প্রয়োগ করে বসে। কিন্তু এতেও আকাশের কিছু হয় না। বরং তারা সকলেই তার সঙ্গী সাথীর মতন মাটির উপরে লুটিয়ে পড়ে। তাঁদের প্রয়োগ করা শক্তি উল্টো তাঁদের সবার গায়ের উপরে গিয়ে লেগেছে। যেটা দেখে আকাশ তাজ্জব হয়ে যায়! সে বর্তমানে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে নিজেও কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারছে না! তখনি আকাশের সামনে অদৃশ্য থেকে মাঝামাঝি বয়সের একটা মহিলা প্রকট হয়ে আকাশকে বলে,

–হ্যাঁ তুই তাহলে সেই ব্যক্তি, যার হাতে কিনা অপ্রাপ্য শক্তির ছোঁয়া লেগেছে। আর তার জন্যই তুই সবাইকে একাই দমিয়ে দিয়েছিস। তবে তুই একদম চিন্তা করিস না। আমি এখন এদের সবাইকে নিয়ে যাচ্ছি। তবে পরবর্তীতে তোর সাথে এদের আবার দেখা হবে। তখন তোর অপ্রাপ্য শক্তি এরা সবাই মিলে দমিয়ে দিবে। আর তোকে কোনো মেটেরিয়াল বস্তুর ন্যায় দুমড়েমুচড়ে মাটির নিচে পিষে মারবে।
.
মহিলাটা আকাশকে এসব হুমকি দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চোখের পলকে সেখান থেকে গায়েব হয়ে যায়। আকাশ ব্যতীত সেই জায়গাতে আর কিছুই নেই। সেই মহিলাটা তাঁদের সমস্ত অস্তিত্ব নিয়ে গায়েব হয়ে গেছে। আকাশ শূন্য একটা জমিনের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখের সামনে যেই পাকা দালান টা ছিলো, সেটাও গায়েব হয়ে গেছে। এক কথায় তাঁদের কোনো নাম নিশানাও নেই বর্তমানে। মহিলাটা আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী মানুষ গুলো নিয়ে গায়েব হওয়ার সাথে সাথে সেই পাকা দালান বাড়িটাও গায়েব হয়ে গেছে।”অন্যদিকে অদৃশ্যের মায়াবী দেয়ালটাও চলে গেছে। যার কারনে সবাই আকাশের দিকে দৌড়ে আসে। তারপর সবার মধ্যে থেকে মুজাহিদ আকাশকে বলে,

–ভাই এতো সময় যা ঘটেছে, বিশ্বাস করেন সব কিছুই আমাদের মাথার উপর দিয়ে গেছে! শুরুতে আমরা কেউ চেষ্টা করে অদৃশ্য দেয়াল ভেদ করে ভিতরে ঢুকতে পারলাম না। কিন্তু আপনি ঢুকে গেলেন। তারপর ঢুকে গিয়ে সবাইকে একাই ধুল চাটিয়ে দিয়েছেন। আমরা দূর থেকে মোটামুটি সব কিছুই দেখেছি। ভাই আসল কাহিনীটা কি একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ।

–মুজাহিদ কি ভাবে কি হয়েছে আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারছি না! আমি শুধু নিজেকে বাঁচানোর প্রত্যাশায় নিজের হাত মুখের সামনে এনেছি। তখনি দেখি তারা সবাই একে একে করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। আর তাঁদের আধ্যাত্মিক শক্তি তাঁদের জন্যই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

–ভাই আমার মনে হয় কি আপনার মধ্যেও কোনো আধ্যাত্মিক শক্তি আছে। আর সেই আধ্যাত্মিক শক্তিটা তাঁদের তুলনায় আপনার কাছে হয়তো দ্বিগুণ। যার কারনে তারা আপনার কাছে পরাজয় হয়েছে।

–মুজাহিদ আমার কাছে কি আছে সেটা আমি নিজেও জানি না! তবে আমার নিজের কাজ কর্ম দেখে আমি নিজেই অবাক হচ্ছি! আর পরিশেষে এসে এখন আমার নিজের এই নিজের উপরে সন্দেহ হচ্ছে! না হয়তো সেই মহিলাটা কেন বললো, যে আমার হাতে অপ্রাপ্য শক্তির ছোঁয়া লেগেছে।

–ভাই আমি নিশ্চিত আপনার মধ্যেও তাঁদের মতন কিছু একটা আছে।

–জানি না আমি! আচ্ছা এখন এসব কথা বাদ দিয়ে রেখে হেলিকপ্টার মোতায়ন কর। কারন যাদের খোঁজে এসেছি। তারা সবাই তো নিজের গাট্টি-গোস্তা নিয়ে পালিয়েছে। তাহলে এখানে থেকে আর কোনো লাভ নাই।

–আচ্ছা ভাই আমি হেলিকপ্টার মোতায়ন করছি।

–মুজাহিদ আমার কথা মতন পাইলটকে খবর লাগলো। আর সাথে বর্তমান জায়গার লোকেশনটাও দিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পেরোতেই সব কয়টা হেলিকপ্টার আমাদেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চলে এসেছে। তারপর সবাই মিলে হেলিকপ্টারে উঠে নিজেদের বাংলোয় ফিরে এসেছি। আসতে আসতে মাগরিব হয়ে এসেছে। তবে আমার ভিতরে এখনো সেসব চিন্তা-ভাবনাই কাজ করছে। যে আমি কি করে নিজের অজান্তে তাঁদের এতজনের সাথে মোকাবিলা করলাম! বাসায় এসে এসব নিয়ে ভাবছিলাম, তখনি অবনী ফোন দিলো। ফোন রিসিভ করতেই অবনী ভয়ানক ভাবে ক্ষেপে গিয়ে আমায় বললো,

–আকাশ তোরে কিন্তু আমি জবাই করে দিব। সমস্যা কি তোর? তুই আমায় না বলে কোথায় গিয়েছিস, যে তোর কোনো খোঁজ খবর নাই। তার উপরে কয়টা ফোন দিয়েছি তোকে? তুই আমার ফোন এই রিসিভ করছিস না। আচ্ছা তুই কি চাস আমি মরে যাই?

–অবনীর কথা শুনে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। কারন সে হুট করেই তুইতোকারি শুরু করেছে। এই অবনী তোর সাহস কি করে হয় আমার সাথে তুইতোকারি করে কথা বলার? তার উপরে কি সব যা তা কথা বলছিস তুই?

–হুম আমার উপরে তোর মেজাজ এই খারাপ হবে। আমি মরতেছি তোর টেনশনে। আর তুই কিনা আমাকে বকাঝকা করতে শুরু করেছিস। বাহ বেশ ভালো তো। আচ্ছা শোন তোকে আর তুই করে বলবো না। কারন সেই অধিকার এখনো আমি পাইনি। তবে আমার দিক থেকে আপনাকে আমি পুরোপুরি অধিকার দিয়ে দিয়েছি। আচ্ছা যাক গে এখন এসব কথা। আপনাকে যেটার জন্য ফোন করেছি। আজকে চুলোয় রান্না করতে গিয়ে আমার হাত পুড়ে গিয়েছে।

–কিহহহহ!
অবনীর কথা শুনে সমস্ত রাগ মুহুর্তের মধ্যেই পানি হয়ে গেছে। এই তুমি এখন কোথায় আছো?

–কোথায় থাকবো আবার বাসায় আছি।

–আচ্ছা তুমি বাসার লোকেশনটা দাও। আমি এক্ষুনি আসছি।

–নাহ তার কোনো প্রয়োজন নেই।
আপনাকে আসতে হবে না কোথাও। আপনি নিজের কাজে নিরুদ্দেশ হয়ে থাকেন।

–অবনী দুঃখীত। এমনটা আর কখনো হবে না। প্লিজ তুমি লোকেশনটা দাও।

–নাহ বললাম তো আপনার বাসায় আসতে হবে না।

–তো বাহিরে কোথাও দেখা করো।

–ওকেহ সেটা করা যায়। আপনি সেদিনের ন্যায় পার্ক টাতে চলে আসেন।

–আচ্ছা।
আর শুনো তুমি সাবধানে আসিও।

–হুম।

–তারপর ফোন রেখে দিয়ে চটজলদি পার্কে চলে গেলাম। পার্কে গিয়ে দেখি রাত হওয়ায় পার্ক বন্ধ করে দিয়েছে। তাই পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
আমি গিয়ে দাঁড়াতেই অবনী চলে আসলো। সে রিক্সায় করে এসেছে। তাকে রিক্সা থেকে নামতে দেখে তার কাছে এগিয়ে গেলাম। সে রিক্সা ওয়ালা মামাকে ভাড়া দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি অবনীর কাছে গিয়ে সর্বপ্রথম তার হাত দেখাতে বললাম। সে আমার কথা মতন হাত এগিয়ে দিয়েছে আমার সামনে। সে হাত সামনে এগোতেই আমার মাথা ঘুরে উঠলো! কারন তার হাতে রক্ত জমাট হয়ে ফুলে সেটা দানব আকৃতি ধারণ করেছে। তার উপরে হাতের চামড়ায় কালো কালো পোড়া দাগ পড়েছে। তার মানে সত্যিই আবনীর হাত পুড়ে গিয়েছে। অবনীর হাতের অবস্থা দেখে আমার চোখ থেকে আপনা-আপনিই টলমল করে পানি ঝড়তে আরম্ভ করেছে। আমি চোখের পানি ফেলতে ফেলতে তাকে জিজ্ঞাস করলাম, এই তুমি ডক্টরের কাছে যাওনি?

–যেয়ে কি করবো?
কার জন্য বেঁচে থাকবো আমি? আমার তো কেউ নেই। আপনি থেকেও না থাকার মতন। কদর করেন না আমার। আজ সারাদিন একটা ফোন ও পাইনি আপনার। সেখানে দেখা করা তো দূরের কথা। তার উপরে কিছু বললেই রেগে যান। তো নিজের যত্ন নিয়ে কি হবে আর?

–অবনী একদম বাচ্চাদের মতন কথাবার্তা বলবে না। আর ক্ষমাপ্রার্থী আমি তোমার কাছে। এবার প্লিজ ডক্টরের কাছে চলো।

–না আমি ডক্টরের কাছে যাবো না। আপনি আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন সেটা করে চলে যান।
খামোখা আমায় নিয়ে এতো টেনশন করতে হবে না।

–অবনী অতিরিক্ত হচ্ছে কিন্তু।

–হ্যাঁ আপনার কাছে অতিরিক্ত মনে হলে আমি অতিরিক্তই করছি।

–অবনী ডক্টরের কাছে চলো।

–আমি যাবো না বললাম তো।

–অবনী এখন কিন্তু মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো তোমাকে।

–এটা ছাড়া আর কি’ই বা পারবেন বলেন?
পারেন তো খালি মারধোর এই করতে। তো মারেন মারতে ইচ্ছে হলে আমাকে।

–অবনীর কথার আর জওয়াব দিলাম না। কারন মেয়েটার প্রচন্ড অভিমান হয়েছে আমার উপরে। তাই আমি এখন যতো কথা বলবো, ততোই ঝামেলা হবে। তাই চুপচাপ কোনো কথাবার্তা ছাড়া অবনীকে কোলে তুলে নিয়ে একটা রিক্সা দাঁড় করলাম। তারপর রিক্সায় উঠে অবনীকে একপাশ করে বসিয়ে দিয়ে তাকে এক সাইড থেকে জড়িয়ে ধরলাম। পরে রিক্সা ওয়ালা মামাকে বললাম সামনের হসপিটালে নিয়ে যেতে। আমার এমন কর্মকান্ডে অবনী কিছুই বললো না। কারন মেয়েদের রাগ ভাঙ্গানোর ট্রিকস আমার জানা আছে। মেয়েরা সব সময় চায় তার প্রিয় মানুষটা তার উপরে জোর খাটিয়ে কেয়ার নিক। আর আমি সেটাই করছি। তার উপরে তাকে কোলে করে উঠিয়ে এনে রিক্সায় বসানোর পাশাপাশি তাকে জড়িয়েও ধরেছি। যার কারনে অবনী একদম চুপচাপ হয়ে আছে। রিক্সা ওয়ালা মামা আমার বলা গন্তব্য অনুযায়ী রিক্সা ছুটিয়ে নিয়ে চলেছে। কিন্তু কিছুটা পথ পাড়ি দেওয়ার পর হুট করেই একটা বড় গাড়ি আমাদের রিক্সার দিকে তেড়েফুঁড়ে আসে। যেটা দেখে রিক্সা ওয়ালা মামা ভয় পেয়ে আমাদেরকে রিক্সার মধ্যে ফেলে রেখে সে সাইড কেটে পড়ে। আর বড় গাড়িটা আমাদের একদম সামনা সামনি চলে আসে। তখনি অবনী তার পোড়া হাতটা দিয়ে বড় গাড়িটার দিকে ইশারা করে। যার ফলে বড় গাড়িটা আমাদেরকে কুচলে দেওয়ার আগেই সেটা ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। যেটা দেখে আমার মাথা ভো ভো করে ঘুরতে আরম্ভ করেছে! তার উপরে আশেপাশের সমস্ত লোকজন আমাদের দিকে আজব দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে…

চলবে….

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।

#রহস্যময়ী_লেডি_কিলার
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১২

–“অবনী তার পোড়া হাতটা দিয়ে বড় গাড়িটার দিকে ইশারা করতেই আমাদের দিকে তেড়ে আশা
বড় গাড়িটা ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। যেটা দেখে আমার মাথা ভো ভো করে ঘুরতে আরম্ভ করেছে! তার উপরে আশেপাশের সমস্ত লোকজন আমাদের দিকে আজব দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে! আমিও অবাক দৃষ্টিকোণ করে আশেপাশের মানুষদের মতন অবনীর দিকে তাকিয়ে আছি! সে আমার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে জিজ্ঞাস করলো,

–এই যে মহাশয়, কি হয়েছে আপনার?
আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

–অবনী এভাবে তাকিয়ে থাকার কারনটা কিন্তু তোমার আর আমার চোখের সামনেই পড়ে রয়েছে।

–মানে কি?

–মানে টা তো তুমি আমার থেকে ভালো জানবে। তো এবার ক্লিয়ার করে বলো যে আসল কাহিনীটা কি? আর কি করে হাতের সাহায্যে তুমি এমনটা করেছো?

–আমি হাতের সাহায্যে এমনটা করেছে মানে কি?
আমি তো নিজেদেরকে সেইভ করার জন্য হাতটা সামনের দিকে এগিয়ে ছিলাম। যেমনটা মানুষ বাঁচার জন্য করে। কিন্তু আপনি এখানে রহস্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন কেন?

–অবনী আমি আগেই বলেছি, যে সব কিছুই আমাদের চোখের সামনে প্রমাণ স্বরূপ পড়ে আছে। এতো বড় একটা গাড়ি। যে কিনা আমাদের দু’জনকে এতো সময়ে মাটির সাথে পিষে দেওয়ার কথা। সেখানে তোমার হাতের এক ইশারাতে গাড়িটাই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। এটা কি আশ্চর্যজনক কিছু নয়?

–হ্যাঁ এটা আশ্চর্যজনক কিছু। কিন্তু আপনি এর সাথে আমায় মিলিত করলে তো চলবে না। কারন এসবের আগামাথা আমি কিছুই জানি না! আমি শুধু বাঁচার প্রত্যাশায় হাতটা সামনে এগিয়ে দিয়ে ছিলাম। কিন্তু তারপর যা ঘটেছে, তার সাথে আমার কোনো সাদৃশ্যতা নেই। কারন আমি নিজেও অবাক এসব দেখে! যে এতো বড় গাড়িটা মূহুর্তের মাঝে কি করে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে!

–তার মানে তোমার সাথে এসবের কোনো সাদৃশ্যতা বা সম্পর্ক নেই?

–আলবাত নেই।

–ঠিক আছে তাহলে অন্য রিক্সায় করে আমার সাথে হসপিটাল চলো। তোমার হাতের ট্রিটমেন্ট করাতে হবে।

–আগের ন্যায় কোলে উঠিয়ে নিন আমায়। না হয় আমি একটা কদম ও মাটিতে ফেলবো না।

–এটা তুমি বললেও করবো। না বললেও করবো।
কারন তোমার ভাবমূর্তি দেখে আমার শুরুতেই বুঝে এসে গেছে, যে তোমার ঝোঁক উঠেছে আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকার। তাই তোমাকে কাছে না টানলে তুমি আমার কোনো কথাই শুনবে না।

–বাহ মহাশয়, আপনার মাথায় তো দেখি বেশ বুদ্ধি। কিন্তু আফসোস! আপনার মাথায় এতো বুদ্ধি থাকার পরেও আপনি সব পরিস্থিতিকে রাগান্বিত ভঙ্গিমায় ট্যাক-আপ করেন। যেটা কিনা না করলেই হয়।

–অবনী আমাকে শিখাতে হবে না তোমার।
আমি কি ভাবে কোন পরিস্থিতিকে সামলাবো, সেই বিবেক বুদ্ধি কিন্তু আমার আছে।

–এই যে দেখছেন আপনি কিন্তু এখুনি চোটে যাচ্ছেন।

–অবনী ধুর কি শুরু করেছো তুমি। বাদ দাও তো এসব কথাবার্তা। আমার একদম ভালো লাগছে না কিন্তু এসব।

–আচ্ছা বাদ দিলাম। আপনি এখন আমায় নিজের বাহুতে নিন। তারপর কোথায় নিয়ে যাবেন যান।

–আর কোনো কথাবার্তা না বলে অবনীকে আবারো কোলে উঠিয়ে নিলাম। তারপর আরেকটা রিক্সা ঠিক করে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি। তবে আশেপাশের লোকজন কিন্তু এখনো আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে আমি সেদিকে বেশি একটা ভ্রূক্ষেপ না করে রিক্সায় করে অবনীকে হসপিটালে নিয়ে এসেছি। তবে আমার মনের ভিতরে আশপাশ থেকে তাকিয়ে থাকা লোকজনদের মতন কৌতূহল কাজ করছে অবনীকে নিয়ে। তবে আমি সেটাকে অবনীর সামনে ফুটাপ না করে তাকে নিয়ে সোজা ডক্টরের কাছে চলে আসলাম। ডক্টরের কাছে এসে ডক্টরকে বললাম, ডক্টর ওর হাত পুড়ে গেছে রান্না করতে গিয়ে গ্যাসের চুলোয়। আপনি একটু দেখুন তো কি হয়েছে। আমার কথা মতন ডক্টর তার হাত দেখে বললো,

–উনার হাতের জমাট বাঁধা রক্ত গুলো ইমিডিয়েট বের করতে হবে। না হয় ভিতরে ইনফেকশন হয়ে যাবে। এমনিতেই অনেক লেইট হয়ে গিয়েছি।

–ডক্টর যা করবার করুন, কিন্তু অবনীর যেনো কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়।

–জ্বি আমরাও সেটা চেষ্টা করবো। আর আপনি এখানে বা বাহিরে বসে অপেক্ষা করুন। আমরা উনাকে পাশেই ওটিত নিয়ে যাচ্ছি।

–আচ্ছা।
তারপর ডক্টর দু’জন নার্সকে ডেকে এনে বললো অবনীকে ওটিতে নিয়ে যেতে। নার্স ডক্টরের কথা মতন অবনীকে ওটিতে নিয়ে গেলো। তার কিছুক্ষণ পর ডক্টর ও রুম থেকে বেরিয়ে ওটিতে চলে গেছে। আর আমি ডক্টরের চেম্বারে একা একা বসে আছি। আধঘন্টা পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ডক্টর এখনো ফিরে আসেনি। তাই আমি ডক্টরের কেবিন থেকে বেরিয়ে কেবিনের আশেপাশে পায়চারী করতে লাগলাম। তখনি ডক্টর আমার থেকে কিছুটা দূরে একটা কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসলো। হয়তো সেই কক্ষটাই ওটি। ডক্টর কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে আমায় জিজ্ঞাস করলো,

–আচ্ছা উনার হাতটা যে গ্যাসের আগুনে পুড়েছে, সেটাতে কি করে নিশ্চিত হচ্ছেন আপনি?

–কারন সে তো আমায় এমনটাই বলেছে। সে গ্যাসের চুলোয় রান্না করতে গিয়ে নাকি এমনটা হয়েছে।

–আপনাকে তিনি এমনটা বললেও উনার হাতের কন্ডিশন দেখে আমার মনে হয়নি যে উনার হাতটা গ্যাসের আগুনে পুড়েছে। কারন উনার হাতের যে ভয়াবহ অবস্থা, সেটা গ্যাসের আগুন দ্বারা সম্ভব নয়। আর সম্ভব হলেও কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে চুলোর জ্বাল বাড়িয়ে দিয়ে সেটার উপরে মিনিট পাঁচেক হাত ধরে রাখলে এমনটা হওয়া সম্ভব। কিন্তু নিশ্চয় তিনি এমটনা করেনি। তাই আমার মতে উনার হাতটা অন্য কোনো ভাবে পুড়েছে। না হয়তো উনার হাতের এই ভয়াবহ অবস্থা হতো না।

–মানে কি ডক্টর!

–মানে হলো অনেক উত্তপ্ত আগুনের মাঝে তিনার হাত পড়েছে। যার কারনে তিনার হাতের এই দশা হয়েছে। গ্যাসের আগুনে কখনোই এমনটা হওয়া সম্ভব নয়। এটা আমি লিখিত করে বলতে পারবো।

–তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন তার হাতটা গ্যাসের আগুনে পুড়েনি। পুড়েছি অন্য কোনো ভাবে। আর যেই ভাবেই পুড়ুক না কেন, আগুনের উত্তাপ বা হিট মাত্রাধিক ছিলো।

–জ্বি এক্সাক্টলি এটাই হয়েছে।

–ঠিক আছে ডক্টর আমি বিষয়টা দেখছি।
তবে সে এখন কেমন আছে?

–আমরা ছোট খাটো একটা সার্জারি করে উনার হাতের জমাট বাঁধা ব্লাড গুলো বের করে ফেলেছি। উনি এখন ঠিক আছেন। আর কিছুদিন আমার সাজেশন মতন ঔষধ কন্টিনিউ করলে উনি আর উনার হাত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন।

–ধন্যবাদ ডক্টর।

–আচ্ছা আপনি চেম্বারে আসুন।
নার্স কিছু সময়ের মাঝে উনাকে আমার চেম্বারে নিয়ে আসবে।

–ডক্টর আমাকে উনার চেম্বারে যেতে বলে হাঁটা দিলো। কিন্তু আমার মাথায় উনার কথা গুলো গোলকধাঁধার মতন ঘুরপাক খাচ্ছে! কারন অবনী বললো তার হাত রান্না করতে গিয়ে পুড়েছে। মানে গ্যাসের আগুনে। ডক্টর বলছে তার হাত গ্যাসের আগুনে পুড়েনি। কারন গ্যাসের আগুন এতোটা উত্তাপ বা হিট প্রোভাইড করতে পারে না সহজে। বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম এসব কথাবার্তা শুনে। বেখেয়ালি হয়ে পড়েছি ডক্টরের কথা শুনে। তখনি মনে পড়লো ডক্টর আমাকে চেম্বারে যেতে বলেছে উনার। তাই চিন্তা-ভাবনার অবসান ঘটিয়ে ডক্টরের চেম্বারে গেলাম। চেম্বারে যেতেই উনি আমাকে অবনীর জন্য প্রেসক্রিপশনে ঔষধ লিখে দিয়ে বললো,

–ঔষধ গুলা উনাকে কন্টিনিউ করাবেন। না হয় হাতের কিন্তু ইমপ্রুভমেন্ট হবে না।

–আচ্ছা।
প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে অবনীর জন্য অপেক্ষা করছি। এরমধ্যেই নার্স অবনীকে সাথে করে নিয়ে চেম্বারে ঢুকলো। অবনীর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে ডক্টর। আমি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে ডক্টরের ভিজিট টা দিলাম। তারপর অবনীর কাছে গিয়ে তাকে ডক্টরের সামনেই কোলে উঠিয়ে নিয়েছি। যেটা দেখে ডক্টর মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

–মহাশয় উনাকে অনেক ভালোবাসেন মনে হয় আপনি?

–জ্বি।

–আচ্ছা খেয়াল রাখবেন উনার। আর আপনি চাইলে যাওয়ার সময় আমাদের মেডিকেলের ফার্মেসী থেকেই ঔষধ গুলো কালেক্ট করতে পারেন।

–আচ্ছা আমি সেখান থেকেই ঔষধ গুলো কালেক্ট করে নিব। তারপর অবনীকে সেভাবে নিয়ে মেডিকেলের ফার্মেসীতে এসে ঔষধ কালেক্ট করলাম। সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। চরম লজ্জা লাগছে আমার। কিন্তু লজ্জা লাগলেও কিছু করার নেই। কারন অবনীকে এখন কোল থেকে নামালে সে কেয়ামত ঘটিয়ে দিবে। তাই বাধ্য হয়ে তাকে কোলের মধ্যে নিয়ে রেখেছি। হসপিটালের বাহিরে এসে একটা দোকান থেকে কিছু খাবারের জিনিস ও নিয়ে নিলাম। পরে একটা রিক্সা ঠিক করে দু’জনে সেটাতে উঠে বসলাম। রিক্সায় করে পার্ক অব্দি এসে অবনীকে জিজ্ঞাস করলাম, অবনী তোমার বাসার লোকেশন বলো। রিক্সায় করে তোমায় একদম বাসা পর্যন্ত নামিয়ে দিয়ে আসছি।

–এই না,না তার কোনো প্রয়োজন নেই।

–প্রয়োজন নেই মানে কি অবনী?
তুমি এই অবস্থায় বাসায় যাবে কি করে?

–আমি কষ্টবিষ্ট করে বাসায় চলে যেতে পারবো।
কিন্তু আপনি আমার বাসা পর্যন্ত গেলে সমস্যা হবে।

–কি সমস্যা হবে অবনী?

–আমার ফ্ল্যাটের বড় আপু গুলা আপনার উপরে লাইন মারবে। যেটা আমি কখনোই হতে দিব না।

–এই মেয়ে তুমি কি পাগল হয়ে গেছো নাকি?
তারা খামোখা আমার উপরে লাইন মারবে কেন?
আর যদি মারেও, তাহলে কি আমি তাঁদের পাত্তা দিব নাকি।

–নাহ তাও আপনার যেতে হবে না। আপনি নেমে অন্য রিক্সায় করে বাসায় চলে যান। আর আমি এটাতে করেই বাসায় চলে যাবো।

–ওকেহ ঠিক আছে যেমনটা তোমার মর্জি।
অবনীর কথা মতন রিক্সা থেকে নেমে গেলাম। তারপর তাকে ঔষধ আর খাবার গুলো ধরিয়ে দিয়ে বললাম টাইম মতন খেয়ে নিতে। পরে আমি অন্য একটা রিক্সা নিয়ে সেখান থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আজ গাড়ি নিয়ে আসিনি। অবনীর কথা শুনে মাথায় বাজ পড়েছে মতন অবস্থা। তাই বাসা থেকে বেরিয়ে সিএনজি নিয়ে সোজা পার্কের সামনে চলে এসেছি দেখা করবার জন্য। তাই রিক্সা করেই বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। রিক্সায় বসে বসে শান্ত মাথায় অবনীকে নিয়ে ভাবছিলাম, তখনি হুট করে একটা লোক আমার রিক্সার সামনে এসে মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে গেলো। যেটা দেখে আমি রিক্সা ওয়ালাকে বললাম রিক্সা থামানোর জন্য। রিক্সা ওয়ালা আমার কথা মতন রিক্সা থামিয়ে দিলো। তারপর আমি রিক্সা থেকে নেমে গিয়ে সেই লোক টাকে জিজ্ঞাস করলাম, এই যে ভাই মাল খেয়ে টাল হয়ে আছেন নাকি? আপনি খামোখা আমার রিক্সার সামনে চলে এসেছেন কেন?

–ভাই আমি কোনো মাল টাল খাইনি। আর আমি রিক্সার সামনে দাঁড়িয়েছি আপনাকে একান্ত ভাবে কিছু বলার জন্য।

–আমাকে কিছু বলার জন্য দাঁড়িয়েছেন মানে?

–আপনি একটু আমার সাথে সাইডে আসুন।

–লোকটার কথা মতন একটু সাইডে চেপে আসলাম। তখনি সে আমায় বলে উঠলো,

–ভাই আমি কে সেটা আপনাকে বলবো না। তবে বেশ কিছুক্ষণ আগে আপনাদের রিক্সার আগে একটা বড় গাড়ি আপনা আপনি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। আমি তখন সেখানেই ছিলাম। আর তখন থেকেই আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলবো বলে। এতে করে হয়তো আপনার কোনো উপকার হতে পারে।

–কি কথা বলুন?

–ভাই কিছুক্ষণ আগে যেই বড় গাড়িটা ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে, সেটা কিন্তু এমনি এমনি হয়নি। সেটা কেউ নিজের অলৌকিক বা আধ্যাত্মিক শক্তির দ্বারা ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ করেছে।

–আপনি এই কথা কতোটা শিওরিটি দিয়ে বলতে পারেন কি করে?

–কারন আমার মাঝে উপলব্ধি করার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। যেটা দ্বারাই আমি বুঝতে পেরেছি কেউ একজন তার শক্তির মাধ্যমে এমনটা করেছে।

–তো কে করেছে তার নামটা বলুন। বা তার পরিচয় বলুন।

–ভাই সেটা বলা আমার পক্ষে সম্ভব না। কারন না হয় আমি প্রাণে মারা পড়বো। আমি সেই মানুষটার নাম মুখে আনলেই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হবে আমাকে। তবে এটুকু বলতে পারি, যে আপনার খুব কাছের কেউ এমনটা করেছে। আর সেই কাছের মানুষ টাকে আপনার নিজেরই খুঁজে বের করতে হবে।

–লোকটার কথা শুনে সর্বপ্রথম আমার আপন মানুষ হিসেবে অবনীর কথাই মনে পড়লো। কারন সে বাদে সেখানে আমার কাছের মানুষ বলতে কেউ উপস্থিত ছিলো না। তাছাড়া তখন অবনীর আচরণে কেমন যেনো একটা লেগেছে! লোকটার কথা শুনে আমি অবনীকে নিয়ে ভাবুক হয়ে গেলাম। তখনি দেখি হুট করে কোথা থেকে যেনো অবনী সেই রিক্সা ওয়ালা মামা টাকে নিয়ে আমাদের সনানে হাজির হয়েছে। অবনীকে এভাবে অপ্রত্যাশিত ভাবে দেখে আমি পুরো তাজ্জব হয়ে গেছি! তাই অবনীকে জিজ্ঞাস করলাম, এই অবনী তুমি এখানে কেন? তুমি না রিক্সা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলে? অবনী আমার কথার কোনো উত্তর দিলো না। বরং সে রিক্সা থেকে নেমে সেই লোকটার দিকে তেড়ে যেতে লাগলো। যেই লোকটা কিনা আমার পথ আঁটকেছে একটু আগে। অবনী লোক টার দিকে এভাবে তেড়ে যেতে দেখে লোকটা মুহূর্তের মধ্যেই সামনের দিকে দৌড় মারে। যার পর কিনা লোকটা হুট করেই আমাদের চোখের সামনে থেকে গায়েব হয়ে যায়! যেটা দেখে আমার গা পুরোপুরি শিউরে উঠেছে! আমি বেকুবের মতন চুপচাপ চোখ বড় বড় করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি! ঠিক সেই সময় অবনী ফিরে এসে পিছন থেকে আমায় জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে চুমু খেতে আরম্ভ করলো…

চলবে….

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।