রাগে অনুরাগে পর্ব-০৫

0
308

#রাগে_অনুরাগে💚✨

#পর্ব_০৫

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরাধ্যা চলে যেতেই মিহির তার বা পাশের বুকে হাত দিয়ে বললো,

“হায় এই মেয়ের মুচকি হাসিতেই আমি পাগল হয়ে যাবো!”

মিহির কিছুক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো।বাড়িতে গিয়ে দেখলো মুবিন সাহেব আর মুহিত বসে বসে পোপকর্ণ খাচ্ছে।মিহির তাদের সামনে দাঁড়িয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো,

“বাহ্ আমাকে রেখেই তোমার খাওয়া শুরু করে দিয়েছো?”

“আরে ভাইয়া তুই চলে এসেছিস!তাড়াতাড়ি বসে পড়।এখনি খেলা শুরু হবে।আমরা তিন বাপ-ছেলে মিলে একসাথে আইপিএল খেলা দেখবো।”

“আচ্ছা একটু ওয়েট কর।আমি এখনি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।”

মিহির ফ্রেশ হয়ে এসে খেলা দেখায় যোগ হলো।



রাতের খাবার খেয়ে আরাধ্যা ছাদে এসে বসে আছে।হালকা শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে।যা বেশ লাগছে আরাধ্যার কাছে।হঠাৎ তার মনের মধ্যে মিহিরের বলা কথাগুলো আনাগোনা করতেছিলো।মিহিরের কথা মনে হতেই আরাধ্যার মুখে হাসি ফুটলো।

আরাধ্যা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“যেখানে আমাকে কত মানুষ চোখে সমস্যার কারণে কথা শোনায় সেখানে উনার কাছে নাকি আমি চশমা পড়ি বলে আমাকে বেশি কিউট লাগে!বিষয়টা বড়ই অদ্ভুত।উনি কি আমার প্রেমে পড়েছেন?নাকি মোহে?”

আরাধ্যা এটুকু বলে চুপ রইলো।তারপরে কি ভেবে যেন গাওয়া শুরু করলো,

কিছু কথার পিঠে কথা
তুমি ছুঁয়ে দিলেই মুখরতা,
হাসি বিনিময় চোখে চোখে
মনে মনে রয় ব্যাকুলতা।

আমায় ডেকো একা বিকেলে
কখনো কোনো ব্যথা পেলে,
আমায় রেখো প্রিয় প্রহরে
যখনই মন কেমন করে।

এটুকু গাইতেই আরাধ্যা হেসে দিলো।হাসি থামিয়ে বললো,

“I am in love?ধ্যাত্ মনে হয় পাগল হয়ে গেছি আমি।কি সব বলছি এগুলো!”

আরাধ্যা আর বেশিক্ষণ ছাদে না বসে নিচে তার রুমে চলে গেলো।

—🌻—

মিহির তার রুমের বারান্দায় বসে রাতের আকাশ দেখছে আর আরাধ্যার কথা ভাবছে।

“কবে যে সবটা মুখ ফুটে বলতে পারবো কে জানে!যদি না বলতে পারি তাহলে তো সমস্যা।চাশমিশকে যদি হারিয়ে ফেলি!নাহ্ চাশমিশকে হারানো যাবে নাহ্।কারণ সে আমার প্রথম ভালোবাসা।উনাকে সবটা তাড়াতাড়ি বলে দিতে হবে।তারপরে যা হবে দেখা যাবে।”

মিহির তার রুমের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।

/🌼/
পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে আসতেই আরাধ্যার ঘুম ভেঙে গেলো।সে চোখ খুলে দেখলো সকাল সাড়ে ছয়টা বাজে।সে বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে ফজরের নামাজ পড়ে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো হিমু সাহেব আর রুমা বেগম বসে বসে চা খাচ্ছেন।আরাধ্যা গিয়ে তাদের পাশে বসলো।

“বাবা-মা আমি তোমাদের কিছু বলতে চাই।”

হিমু সাহেব চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে বললেন,

“হ্যাঁ মা বল।”

“বাবা আমি চাকরি করতে চাই।আমার তো গ্রাজুয়েট কমপ্লিট হয়ে গেছে।আর তোমরা তো জানো আমার সব সময়ের ইচ্ছে চাকরি করার।কিন্তু তোমরা হঠাৎ বিয়েটা ঠিক করেছিলে তাই আমি আর কিছু বলিনি।কিন্তু বিয়েটা যখন ভেঙে গেছে তখন আমি এখন চাকরি করতে চাই।”

হিমু সাহেব আরাধ্যার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

“আচ্ছা মা।তোর মন যা চায় তাই কর।”

রুমা বেগম পাশে থেকে বললেন,

“মেয়েটা আগে যখন চাকরি করতে চাইতো তখন তো বাধা দিতে।মেয়ের বিয়েও ঠিক করে ফেললে।এখন যখন বিয়েটা ভেঙে গেলো তখন চাকরি করতে দিতে চাইছো।তা আগে চাকরি করতে দিলে কি হতো?”

হিমু সাহেব কিছু বলতে যাবেন কিন্তু আরাধ্যা উনাকে চুপ থাকতে বললেন।আরাধ্যা রুমা বেগমের হাত ধরে বললো,

“আম্মু তুমি এখন এইগুলো বলা শুরু করলে কেনো?যা হয়েছে ভুলে যাও।”

“চুপ কর তুই।এই লোকটা তো তোকে একদম ঘরবন্দী করে রাখতে চেয়েছিলো।বান্ধবীদের সাথেও তো তেমন মিশতে দিতো না শুধু রুশা ছাড়া।কিন্তু বিয়েটা যখন ঠিক করলো তখন তো রুশাকেও আসতে নিষেধ করেছিলো।তার পছন্দের ছেলে আর্য যদি তোর বদলে রুশাকে পছন্দ করে ফেলে!রুশা যদি আসতো তাহলে এমনটা হতো নাহ্।যেখানে নিজের বাবা-ই চোখের সমস্যা নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি করে।সেখানে পরের ছেলে তো সুযোগ পাবেই বলার!”

রুমা বেগমের কথাগুলো শুনে হিমু সাহেব চুপ করে রইলেন।আসলে রুমা বেগম তো সবটা ঠিক বলেছেন।কারণ হিমু সাহেব তো এমনটাই করেছেন!

তিনজনই নিরব হয়ে বসে আছেন।আরাধ্যা নিরবতা ভেঙে বললো,

“আম্মু আগে যা হয়েছে সেগুলো ভুলে যাও।আর বাবাকে এইসব বলো নাহ্।”

হিমু সাহেব হঠাৎ করে আরাধ্যার হাত দুটো চেপে ধরে বললো,

“মা আমাকে মাফ করে দে।আমি তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি।”

আরাধ্যা হিমু সাহেবের হাঁটুুর কাছে বসে বললো,

“বাবা তুমি এইসব কি বলছো!আমার এইসব কিছু মনে নেই।আমি যখন ভুলে যেতে চাচ্ছি তোমরা কেনো আমাকে মনে করাচ্ছো!”

হিমু সাহেব আর রুমা বেগম দুজনেই চুপ করে গেলেন।আরাধ্যা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“দশটার সময় একটা অফিসে ইন্টারভিউ দিতে যাবো।রুশা ব্যবস্থা করে দিছে।তোমরা দোয়া করো।”

_🦋_
মিহির অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।মিহির রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করে অফিসে গেলো।অফিসে যেতেই নিলয় তার সামনে এসে দাঁড়ালো।মিহির ভ্রু কুচকে বললো,

“তুমি কি কিছু বলবে নিলয়?”

“জ্বি স্যার।”

“আচ্ছা বলো কি বলবে!”

“মুবিন স্যার আপনার জন্য নতুন পি.এ ঠিক করেছেন।”

মিহির অবাক হয়ে বললো,

“বাবা অফিসে এসেছিলো?”

“জ্বি স্যার।একটু আগেই চলে গেলেন।”

মিহির মৃদু হেসে বললো,

“আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি নতুন পি.এ-কে আমার ক্যাবিনে আসতে বলো।”

“ওকে স্যার।”

নিলয় চলে গেলো।মিহির তার ক্যাবিনে গিয়ে চেয়ারে বসলো।চেয়ারে বসে বসে ফাইল চেক করছিলো মিহির।হঠাৎ তার ক্যাবিনের দরজায় কেউ নক করলো।তারপরেই একটা মেয়েলি কণ্ঠ মিহিরের কানে আসলো,

“May I come in sir?”

পরিচিত কণ্ঠ কানে আসতেই মিহির চোখ তুলে তাকালো।সে দেখলো দরজার বাইরে আরাধ্যা দাঁড়িয়ে আছে।

এতোক্ষণ মাথা নিচু করে থাকার কারণে বসের মুখ দেখতে পারেনি আরাধ্যা।মাথা উপরে তুলতেই সে অবাক হয়ে গেলো মিহিরকে দেখে।

মিহির আরাধ্যাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।হাসি দিয়ে বললো,

“আপনি এখানে?বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?ভিতরে আসুন।”

আরাধ্যা মুচকি হেসে মিহিরের ক্যাবিনের ভিতরে ঢুকলো।মিহির চেয়ারে বসে বললো,

“দাঁড়িয়ে না থেকে বসে পড়ুন।”

আরাধ্যার মিহিরের টেবিলের সামনে থাকা চেয়ারে বসে পড়লো।আরাধ্যা চোখের চশমা ঠিক করে বললো,

“আমিই আপনার নতুন পি.এ।মুবিন স্যার আমাকে চাকরিটা দিয়েছেন।”

মিহির মনে মনে বললো,

“থ্যাংকস বাবা।তুমি না জেনেই আমার উপকার করে দিলে।”

মিহিরকে মিটিমিটি হাসতে দেখে আরাধ্যা বললো,

“আপনি এভাবে হাসছেন কেনো?”

মিহির মুচকি হেসে বললো,

“বাবা আপনাকে আমার পি.এ বানিয়ে অনেক বড় উপকার করেছে।তাই মনে মনে থ্যাংকস বলতেছিলাম।”

আরাধ্যা কিছু বলতে যাবে তার আগে মিহির বললো,

“আচ্ছা আজকে আপনার কোনো কাজ নেই।কারণ আমি একটু পরেই অফিস থেকে চলে যাবো।আসলে আমার একটা জায়গায় যেতে হবে।একটা কাজ আছে আমার।”

“ওকে স্যার।”

মিহির ভ্রু কুচকে বললো,

“আরে স্যার বলছেন কেনো?মিহির বাবু বলুন।ওটা শুনতেই আমার ভালো লাগে চাশমিশ জি।”

“অফিসে আপনি আমার বস।মিহির বাবু বলা কি ঠিক হবে?”

“অফিসটা আমার।সো আমি যা বলবো সেটাই কিন্তু করতে হবে।”

আরাধ্যা উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আচ্ছা আমি তাহলে আসি স্যার সরি মিহির বাবু।”

“জ্বি মিস.চাশমিশ।”

আরাধ্যা মুচকি হেসে চলে গেলো।

💙

আরাধ্যা বিড়বিড় করছে আর রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে।

“শেষমেশ কিনা মিহির বাবুর পি.এ হয়ে গেলাম!আজকে যে কি হয়েছে উনার সাথে কথা বলতেই কেমন জানি লজ্জা লাগতে ছিলো।হয়তো কালকে ওইসব ভেবেছি বলে।”

হঠাৎ করে আরাধ্যার সামনে এসে একটা গাড়ি দাঁড়ালো।গাড়িটার দিকে আরাধ্যা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে।গাড়ি থেকে আর্য নেমে এসে আরাধ্যার সামনে দাঁড়ালো।

আরাধ্যা আর্যকে দেখে চোখ রাঙিয়ে বললো,

“আপনার তো চোখে সমস্যা নেই।চোখ একদম ঠিক আছে।তাহলে আপনি এভাবে আমার সামনে এনে গাড়ি দাঁড়া করালেন কেনো?”

আর্য বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

“শুনলাম তুমি নাকি চাকরি করবে।ফিহা বলতেছিলো।তা তোমাকে কে চাকরি দিবে?এমন কানা একটা মেয়েকে।”

আর্যর কথায় নিঃশব্দে হাসলো আরাধ্যা।একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,

“আমি না চাকরিটা পেয়ে গেছি।আর সবাই তো আপনার মতো চিপ মাইন্ডের নাহ্ জিজু।আর আমাকে নিয়ে আপনাকে কেউ এতো ভাবতে বলেনি।”

আরাধ্যা কথাটা বলে চলে যেতে যাবে এমন সময় আর্য আরাধ্যার হাত চেপে ধরলো।

#চলবে……………………