রাগে অনুরাগে পর্ব-০৭

0
294

#রাগে_অনুরাগে💚✨

#পর্ব_০৭

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

মিহির একটা রেস্টুরেন্টের সামনে রিক্সা দাঁড়া করাতে বললো।মিহির আর আরাধ্যা রিক্সা থেকে নেমে পড়লো।মিহির রিক্সা ভাড়া দিতে গেলে আরাধ্যা মিহিরের হাত চেপে ধরলো।মিহির অবাক হয়ে আরাধ্যার দিকে তাকালো।আরাধ্যা মিহিরের হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,

“রিক্সা ভাড়া আমি দিবো!”

“আরে এই কয়টা টাকা।সমস্যা নেই তো।আমি দিচ্ছি।”

“নাহ্ মিহির বাবু।আমি যখন বলেছি তখন আমিই দিবো।”

মিহির ফুস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,

“আপনাকে নিষেধ করে তো লাভ হবে না।আচ্ছা আপনিই দিন।”

মিহিরের কথায় আরাধ্যা হাসি দিয়ে রিক্সা ভাড়া দিলো।মিহির আর আরাধ্যা রেস্টুরেন্টের ভিতরে গেলো।লাঞ্চ করে দুজনে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো।মিহির আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বললো,

“এখনও আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।এটাই আমাদের আজকে ঘুরতে আসার অন্যতম কারণ।”

“কি সারপ্রাইজ?”

“সারপ্রাইজ যদি আগে থেকেই বলে দেই।তাহলে কি সেটা সারপ্রাইজ থাকে নাকি!”

আরাধ্যা আর কিছু বললো নাহ্।মিহির আরাধ্যাকে নিয়ে রিক্সায় উঠলো।তারপরে একটা জায়গায় নিয়ে গেলো।জায়গাটা এরকম দেখতে-চারিপাশে অনেক গাছপালা দিয়ে ঘেরা আর তার মধ্যে অনেক সুন্দর করে সাজানো একটা জায়গা!দেখলে মনে হয় কাপলদের জন্য সাজানো হয়েছে।উপরের দিকে তাকালে খোলা আকাশ দেখা যায়।

আরাধ্যা চারিপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছে।মিহির আরাধ্যার পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে বললো,

“জায়গাটা ভালো লেগেছে?শুধুমাত্র আপনার জন্য সাজিয়েছি!”

আরাধ্যা মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,

“অনেক সুন্দর জায়গাটা।আমার খুব ভালো লেগেছে।”

মিহির কিছু না বলে আরাধ্যার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।আরাধ্যা নিরব সৃষ্টিতে সবটা দেখছে।মিহির আরাধ্যার দিকে একটা আংটি এগিয়ে দিয়ে বললো,

“আপনাকে যেইদিন প্রথম দেখেছি সেদিন থেকে আপনার প্রতি ভালোলাগা কাজ করতেছে।আমি জানি যে,প্রথম দেখায় কখনো ভালোবাসা হয় না। যা হয় তা হলো ভালো লাগা । আর সেই ভালো লাগা নিয়ে ভাবতে থাকলে সৃষ্টি হয় ভালবাসার।আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন নাহ্ যেদিন থেকে আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছে সেদিন থেকে শুধু আপনার কথাই ভেবে চলেছি।যেই কাজই করি নাহ্ কেনো আপনার কথা আমার মনে পড়বেই!

তাই আমি বলতে চাই:-

বলো তুমি কি আমার হবে-
বলো রাখবে কি অনুভবে!🤍🦋

আরাধ্যা মুগ্ধ দৃষ্টিতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু কিছু একটা ভেবে আরাধ্যা নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,

” মিহির বাবু আমাকে একটু টাইম দিতে হবে।আমি এখনি কিছু বলতে পারছি নাহ্!”

“আচ্ছা আপনি যতো সময় লাগে নিন।তবে আংটিটা নিলে কি সমস্যা হবে!”

“যেদিন আপনার ভালোবাসায় সাড়া দিবো সেদিনই নাহয় নিবো।”

মিহির কিছু বলতে যাবে তার আগে আরাধ্যা তার হাত ধরে বললো,

“এখন বেশি কথা না বলে উঠে দাঁড়ান।আকাশে অনেক মেঘ বৃষ্টি শুরু হতে পারে যেকোনো সময়!”

মিহিরের কিছুটা মন খারাপ হয়েছে।তাও সে নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।মিহিরের যে মন খারাপ হয়েছে সেটা আরাধ্যা বুঝতে পেড়েছে।সে মিহিরের একটা হাত ধরে বললো,

“সবকিছু নিয়েই একটু ভাবতে হয় বুঝলেন!এই ভাবার জন্যই একটু টাইম নিতে হবে।আর আপনি তো জানেন এর আগে আমার সাথে কি হয়েছিলো!”

“ওফ্ আরাধ্যা আমি আপনাকে বলেছি ওইসব ভুলে যেতে তাও আপনি সেগুলো মনে রেখেছেন?”

“ভুলে তো যেতে চাই।কিন্তু ওই মানুষটা বারবার এসে সামনে দাঁড়ায়।”

মিহির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“আচ্ছা আপনি ভালো করে ভেবে দেখেন।তবে হ্যাঁ ভাবার শেষে উত্তরটা যেন হ্যাঁ-ই হয়।নাহলে কিন্তু আপনার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কিডন্যাপ করে বিয়ে করবো!”

আরাধ্যা মিহিরের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে দিলো।মিহিরও হাসছে।মিহির হাসি থামিয়ে বললো,

“আচ্ছা একটা কথা বলি?”

“জ্বি বলুন।”

“আমি আপনাকে ‘তুমি’ করে বলতে চাই।কারণ ভালোবাসার মানুষকে আপনি করে বলাটা ঠিক মানায় নাহ্।”

মিহিরের কথায় আরাধ্যা মুচকি হেসে বললো,

“আপনার যা খুশি বলতে পারেন।”

হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো।মিহির বৃষ্টি দেখতে দেখতে বললো,

“তোমার আর আমার সাথে মনে হয় বৃষ্টিও কানেক্টেড হয়ে গেছে।যখনই আমাদের একসাথে দেখে তখনই নেমে পড়ে।”

আরাধ্যা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বললো,

“একদম ঠিক।আমাদের মনে হয় বৃষ্টি অনেক ভালোবাসে।”

আরাধ্যার কথা মিহির মুচকি হাসলো।মিহির আরাধ্যার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।আরাধ্যার মুখের উপর চুল এসে পড়ে আছে।আরাধ্যা সেই অবস্থাতেই বৃষ্টিতে ভিজছে।চুলগুলো মুখ থেকে সরানোর সময়ও মনে হয় তার নেই।মিহির আরাধ্যার হাত ধরে টেনে তার একদম কাছাকাছি নিয়ে আসলো।আরাধ্যা অবাক হয়ে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।মিহির আরাধ্যার চোখ থেকে চশমাটা খুলে তার বুক পকেটে রাখলো।তারপরে আরাধ্যার মুখের উপরে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিলো।মিহির মুগ্ধ দৃষ্টিতে আরাধ্যাকে দেখছে।আরাধ্যার কিছুটা লজ্জা লাগছে।তাই সে কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,

“মিহির বাবু কি করছেন!”

মিহির আরাধ্যার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

“একটু রোমান্টিক হওয়ার চেষ্টা করছি এই আরকি!”

আরাধ্যা মিহিরকে ধাক্কা দিয়ে অন্য দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে রইলো।লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সে।এই প্রথম কোনো ছেলে তার এতো কাছাকাছি এসেছে।তার হার্টবিট বেড়ে গেছে।

মিহির পিছনে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।হাসা বন্ধ করে বললো,

“চাশমিশ হার্টবিট বেড়ে গেছে তাই-না!এটা আমার সাথে প্রতিদিনই হয়।তুমি আমার কাছাকাছি থাকলেই আমার হৃদয় স্পন্দন বেড়ে যায়।”

আরাধ্যা মিহিরের দিকে তাকালো।বৃষ্টি থেমে গেছে।মিহির তার চুলগুলো ঝেড়ে পানি ফেলছে।তারপরে চুলগুলো ঠিক করে আরাধ্যার সামনে গিয়ে বললো,

“লজ্জা পাওয়া শেষ হলে এখন চলো।সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়ই।তোমার বাবা-মা তো কিছু জানে নাহ্।তারা চিন্তা করতে পারে।”

আরাধ্যা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো।আরাধ্যা কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে হাঁটা শুরু করতে গিয়ে পিছলে পড়ে যাচ্ছিলো।তার আগে মিহির তাকে ধরে ফেললো।মিহির আরাধ্যাকে দাঁড়া করিয়ে বললো,

“চশমাটা না নিয়েই হাঁটা শুরু করলে!”

মিহির তার পকেট থেকে চশমাটা বের করে আরাধ্যাকে বললো,

“এইবার আর পিছলে পড়তে যাবে নাহ্!”

আরাধ্যা মুচকি হেসে বললো,

“পড়তে গেলেও বা কি হয়েছে আপনি তো আছেন!”

আরাধ্যা কথাটা বলে হাঁটা শুরু করলো।মিহির মুচকি হেসে আরাধ্যার কাছে দৌড়ে গেলো।আরাধ্যার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বললো,

“একটা টান তো তৈরি হয়েছে তাই-না!”

আরাধ্যা ভ্রু নাচিয়ে বললো,

“সেটা তো জানতেই পারবেন।একটু ধৈর্য্য ধরেন।”

“দেখো ধৈর্য্য ধরতে ধরতে আমি যেন আবার বুড়ো না হয়ে যাই।”

মিহিরের কথা শুনে আরাধ্যা জোরে হেসে দিলো।মিহির একটা রিক্সা ডেকে আরাধ্যাকে বললো,

“আরাধ্যা তোমার বাসা তো এখান থেকে কাছেই তুমি বরং রিক্সায় করে চলে যাও।বাবার জন্য ঔষধ কিনতে হবে।আমি ঔষধ কিনে যাবো নে।”

“আসলাম একসাথে।একসাথে গেলেই তো ভালো হবে।আমাদের বাড়ির পরে তো আপনাদের বাড়ি।আমাকে বাড়িতে দিয়ে না হয় আপনি গেলেন।”

“আমি ঔষধ কিনবো তুমি আবার অপেক্ষা করবে!”

“একটু অপেক্ষা করলে কিছু হবে না।যান গিয়ে ঔষধ কিনে আনুন আমি রিক্সায় বসতেছি।”

মিহির ঔষধের দোকানের দিকে গেলো।ঔষধ কিনে এসে রিক্সায় উঠে বসলো।আরাধ্যার বাড়ির সামনে রিক্সা থামলো।আরাধ্যা বললো,

“মিহির বাবু ভিতরে আসুন।যেই বৃষ্টিতে ভিজলেন।একটু আদা চা খেয়ে যান।”

“কি যে বলো নাহ্ তুমি!হবু শ্বশুর বাড়ি কি কেউ খালি হাতে যায়।আজকে বরং তুমি যাও পরে একদিন আসবো।”

“এখনো কিন্তু হবু শ্বশুর বাড়ি হয়নি।”

“আমার কাছে হয়ে গেছে।”

আরাধ্যা মুচকি হেসে মিহিরকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।মিহির তার বাড়িতে চলে আসলো।

—🍂—

মিহিরের বেলকনিতে বসে রাতের আকাশ দেখছে আর আরাধ্যার কথা ভাবছে।

“ধ্যাত এতোবার দেখা হয় কিন্তু নাম্বারটা চাইতে অনেক থাকে নাহ্।”

মিহির তার পকেট থেকে আংটির বক্সটা বের করে কিছুক্ষণ সেটার দিকে তাকিয়ে রইলো।

“আচ্ছা আরাধ্যা কি রাজি হবে?ও কি আমার প্রপোজাল একসেপ্ট করবে?যদি না করে?তাহলে আমার কি হবে?আমি তো পাগল হয়ে যাবো!”




আরাধ্যা তার বিছানায় শুয়ে মিহিরের কথা ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

“পাগলটা আমাকে সারপ্রাইজ দিয়েছে।আমারও তো তাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে হবে।এতো সহজে রাজি হলে তো চলবে নাহ্!আর রাজি না হলেও কি?সে ঠিকই আমাকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করবে!”

আরাধ্যা কথাটা বলে জোরে হেসে দিলো।আরাধ্যা গলা ছেড়ে গাইলো,

তারে ধরি ধরি মনে করি
ধরতে গেলেও আর পেলেম না
ধরি ধরি মনে করি
ধরতে গেলেও আর পেলেম না

দেখেছি, দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপ সাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা!❤️

আরাধ্যা মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করলো।

#চলবে…………………