#রাগে_অনুরাগে💚✨
#পর্ব_০৮
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
মিহির সাদা শার্ট আর নেভি ব্লু কমপ্লিট পড়ে রেডি হলো।তারপরে নিচে গিয়ে দেখলো মুবিন সাহেব আর মুহিত ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।মিহির গিয়ে তাদের সাথে বসলো।তারপরে তিনজনে ব্রেকফাস্ট করা শুরু করলো।
“ভাইয়া ভাবিকে পটাতে পারলি!”
মুহিতের কথা শুনে মিহির তার দিকে তাকালো।মুহিতের মাথায় একটা চাটি মেরে বললো,
“তুই এতো চালাক হয়েছিস কিসের জন্য?বাবা তুমি ও-কে কিছু বলতে পারো নাহ্!”
“আরে মিহির আর কতো দেরি করবি।এবার বিয়েটা তোর করা উচিত।”
“বাবা বলতাম তো একটু টাইম দেও।”
মুবিন সাহেব আর কিছু বললেন নাহ্।ব্রেকফাস্ট শেষ হতে মিহির উঠে দাঁড়ালো।মুহিত মিহিরকে বললো,
“ভাইয়া আমাকে একটু ভার্সিটিতে ড্রপ করে দিও।আমার ড্রাইভ করতে মন চাইছে নাহ্ আজকে।”
“আচ্ছা চল।”
মিহির মুহিতকে তার ভার্সিটিতে নামিয়ে অফিসের দিকে রওয়ানা দিলো।অফিসের দিকে যেতে গেলে হঠাৎ তার চোখ পড়লো একটা বইয়ের দোকানের সামনে।সে দেখলো আরাধ্যা একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতেছে।ছেলেটা আরাধ্যার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ ছেলেটা হাঁটু গেড়ে আরাধ্যার সামনে বসলো।আরাধ্যার দিকে একটা গোলাপ ফুল এগিয়ে দিলো।আরাধ্যা হাসি দিয়ে ফুলটা নিলো।
মিহির রাগে কাঁপছে।মিহির দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“তাহলে এই কারণেই আরাধ্যা আমার প্রপোজ একসেপ্ট করেনি।ওকে!আমি তাহলে তোমাকে আর ডিস্টার্ব করবো নাহ্।”
মিহির গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।
—🌻—
“যাক তাহলে তুই রুশাকে পটিয়ে ফেলেছিস।কারণ তুই তো আমাকে বলেছিলি আমি যদি তোর সাথে রুশার প্রেম হওয়াতে সাহায্য করি তাহলে তুই আমাকে গোলাপ দিবি।”
আরাধ্যার কথা শুনে নোমান হাসি দিয়ে বললো,
“হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস।আধা তোর জন্যই তো আমি রুশাকে সবটা বলতে পেড়েছি।তুই আইডিয়া না দিলে আমার আর প্রেমটা হতো নাহ্।”
“দেখ নোমান আমি তোর একদিনের বড় সো আমাকে আপু ডাকবি।”
“আসছে আমার আপু!”
নোমান কথাটা বলে হেসে দিলো।আরাধ্যা হাতের ঘড়িতে টাইম দেখে বললো,
“নোমান আমার এখন যেতে হবে।কারণ অফিসের টাইম হয়ে গেছে।আর শোন মামা-মামিকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসবি।আর হ্যাঁ রুশাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেল।তাহলে আমরাও একটা দাওয়াত পেতে পারি!”
“আচ্ছা ঠিক আছে।যা তাড়াতাড়ি।”
“আর শোন এভাবে আমাকে গোলাপ দিস নাহ্।তাহলে তোকে মানুষ ক্যারেক্টারল্যাস ভাববে!”
“হয়েছে জ্ঞানী নারী।এখন যা অফিসে নাহলে তোর বস তোর বারোটা বাজাবে।”
“আরে নাহ্ আমার বস অনেক ভালো।”
“কিছু চলছে নাকি?”
আরাধ্যা মুচকি হেসে বললো,
“চলছে না দৌড়াচ্ছে।”
আরাধ্যার কথায় নোমান হেসে দিলো।আরাধ্যাও হাসলো।
/🦋/
মিহির অফিসে গিয়ে দেখলো টিনা এসে সেখানে বসে আছে।এমনি সকালে এমন একটা ঘটনা দেখে মিহিরের মেজাজ বিগড়ে আছে।এখন আবার টিনা তার অফিসে এসে হাজির।মিহিরকে দেখে টিনা তার কাছে দৌড়ে এসে বললো,
“মিহির তুই এসেছিস!তোর জন্য কতক্ষণ ধরে ওয়েট করতেছি।”
“তোকে কি আমি ওয়েট করতে বলছি নাকি?আর তুই আমার অফিসে এসেছিস কি করতে?”
“মিহির দেখ আমি এখন একদম ভালো হয়ে গেছি।আমি শুধু তোকে ভালোবাসি।মিহির প্লিজ আমাকে মেনে নে।”
“আচ্ছা টিনা তুই আমাকে ভালোবাসিস না আমার টাকাকে?”
মিহিরের প্রশ্ন শুনে টিনা কিছুটা চমকে গেলো।সে আমতা আমতা করতে করতে বললো,
“ইয়ে মানে তুই এইসব কি বলতেছিস মিহির!”
“আমি তো সিম্পল একটা কোশ্চেন করেছি।তুই এতো চমকে গেলি কেনো?”
“এমন একটা প্রশ্ন করলে যে কেউ চমকে যাবে।”
মিহির কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,
“দেখ তুই আর কখনো আমার অফিসে আসবি নাহ্।ইনফেক্ট আমার সামনেই আসবি নাহ্।তোকে দেখলেই আমার অসহ্য লাগে।”
আরাধ্যা অফিসে এসে দেখলো মিহির টিনার সাথে অনেক রাগ দেখিয়ে কথা বলছে।আরাধ্যা কিছু বলতে গিয়েও বললো নাহ্।আরাধ্যা মিহিরের ক্যাবিনের দরজায় নক করলো।মিহির তাকিয়ে দেখলো আরাধ্যা দাঁড়িয়ে আছে।আরাধ্যাকে দেখে মিহির চোয়াল শক্ত করে ফেললো।মিহির অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
“কামিং!”
আরাধ্যা মিহিরের ক্যাবিনে প্রবেশ করলো।মিহির টিনার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে আরাধ্যার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।মিহির টিনার মুখের সামনে তুলি মেরে বললো,
“এই যে তোকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে বলিনি।অফিসে অনেক কাজ আছে।এখান থেকে দয়া করে যা।”
টিনা কিছু বলতে যাবে টিনাকে থামিয়ে মিহির বললো,
“আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই নাহ্।সো গেট আউট।”
টিনা আর কিছু না বলে রাগে ফুসতে ফুসতে মিহিরের ক্যাবিন থেকে বের হয়ে চলে গেলো।টিনা চলে যেতে মিহির আরাধ্যার দিকে তাকালো।আরাধ্যা চুপচাপ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।মিহির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরাধ্যার সামনে গিয়ে বললো,
“আরাধ্যা তোমার উচিত ছিলো আমাকে সত্যিটা বলা।যাক তোমার ইচ্ছা হয়নি বলোনি।তবে হ্যাঁ আমি আর তোমাকে ডিস্টার্ব করবো নাহ্।এখন থেকে তুমি শুধুই আমার পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট।এ ছাড়া আর কিছুই নাহ্।আর আমি তোমার বস।এই সম্পর্ক ছাড়া আমাদের মাঝে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে নাহ্।”
আরাধ্যা মিহিরের কথা শুনে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আরাধ্যা নিজেকে সামলে বললো,
“আপনি কিসের কথা বলছেন মাহির বাবু?”
“মাহির বাবু নাহ্।স্যার!আমি আপনার স্যার।আমি আগে যা বলেছি সেটা ভুলে যান।আর কাজে মন দেন।আমার টেবিলের উপরে যেই ফাইলগুলো আছে সেগুলো নিয়ে যান।”
মিহির কথাগুলো বলে তার ক্যাবিনের জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
মিহিরের এই ব্যাপারে আরাধ্যা অনেক কষ্ট পেয়েছে।তার চোখ ছলছল করছে।সে আজকে চেয়েছিলো মিহিরকে তার মনের কথা জানাতে।তাই সে একটা বই কিনে এনেছিলো।বইয়ের ভিতরে মিহিরের জন্য একটা চিঠি লিখে নিয়ে এসেছিলো।
আরাধ্যা তার জায়গায় কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে ফাইলগুলো নিয়ে মিহিরের ক্যাবিন থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
আরাধ্যা চলে যেতে মিহির পিছনে ফিরে তাকালো।তার চোখে পানি।সে চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে তার চেয়ারে গিয়ে বসলো।
“আমি তো আরাধ্যাকে সত্যিই ভালোবেসে ছিলাম।তাহলে আমার সাথে এমন কেনো হলো!”
মিহির কথাগুলো বলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।
||🌸||
অফিস শেষ হতে আরাধ্যা সবার আগে অফিস থেকে বের হয়ে গেলো।কারণ তার মন আজকে প্রচুর খারাপ।আরাধ্যা আনমনে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে।হঠাৎ রুশা এসে আরাধ্যার সামনে দাঁড়ালো।রুশাকে দেখে আরাধ্যা চমকে গেলো।রুশা আরাধ্যার মুখ মলিন দেখেই বুঝতে পেড়েছে তার কিছু হয়েছে।
“আধু তোর কি হয়েছে?”
“রুশু তুই এখানে?ভালো হয়েছে তোর সাথে দেখা হয়ে গেলো।আমার মনটা খুব খারাপ রে।”
“কি হয়েছে তোর সেটা তো বল?”
“তোকে তো কাল কলে সবটা বলেছি।মাহির বাবু যে আমাকে প্রপোজ করছে।কিন্তু হঠাৎ আজকে কেমন জানি বিয়েইভ করছে আমার সাথে।”
“মানে?কি করেছেন উনি?”
আরাধ্যা রুশাকে সবটা বললো।রুশা সবটা শুনে বললো,
“ওয়েট নোমান তোকে গোলাপ দিয়েছে না আমাকে পটাতে পেড়েছে বলে?”
“হুম দিয়েছে তো।”
“বাই অ্যানি চাঞ্চ!মিহির বাবু মেইবি সেটা দেখে ফেলেছে।তাই তোকে এইসব বলছে।”
আরাধ্যা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“আসলেই তুই তো ঠিকই বলেছিস।আমি তো এটা ভেবে দেখিনি।কারণ আমি যেই বইয়ের দোকানে গিয়েছিলাম মিহির বাবুর বাড়ি ওই দিকেই।হয়তো উনি অফিসে আসার সময় দেখেছেন আমাকে নোমানের সাথে।”
“হয়তো না এটাই হয়েছে।তোর গাধু ভাই-ই প্যাঁচ লাগিয়েছে।”
“আরে নোমানের কোনো দোষ নেই।ওতো এইসব পাগলামি করেই থাকে।তুই তো আমার চেয়ে ভালো চিনিস।আফটার অল তোর বয়ফ্রেন্ড।”
“হয়েছে ঢং বাদ দে।এখন কি মিহির সাহেবকে সবটা বলবি?”
“আমি কেনো বলবো?উনার আমার প্রতি বিশ্বাস নেই?যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসাও নেই।”
“বুঝতে পেড়েছি।তোর মাথা এখন গরম হয়ে গেছে।চল দুজনে মিলে কফি খেয়ে আসি।তাহলে হয়তো ভালো লাগবে।”
“হুম চল।”
–🌻–
মিহির আরাধ্যাকে দেখার জন্য অনেকক্ষণ যাবৎ অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো।কিন্তু সে জানতে পারলো অফিস আওয়ার শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আরাধ্যা অফিস থেকে চলে গেছে।
মিহির রাগে গজগজ করতে করতে গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেলো।মিহির লেকটাকে চিনে।কারণ এই ছেলেটাকে সে আজ আরাধ্যার সাথে দেখেছে।মিহির ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“আরাধ্যাকে খুঁজতে এসেছেন?”
হঠাৎ নিলয় এসে বললো,
“স্যার উনি আপনাকে খুঁজতে ছিলেন।”
নোমান মিহিরকে দেখে হাসি দিয়ে বললো,
“তার মানে আপনিই মাহির সাহেব!তা কেমন আছেন হবু দুলাভাই?”
মিহির অবাক হয়ে বললো,
“মানে কি বলছেন আপনি?”
“আরে ভবিষ্যতে যদি আধা সরি মানে আরাধ্যার সাথে আপনার বিয়ে হয় তাহলে তো আপনি আমার দুলাভাই হবেন।তাই-না!”
নোমানের কথা শুনে মিহির তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
“বাহ্!নিজের প্রেমিকাকে আরেকজনের সাথে বিয়ে দিতে চান?”
“আস্তাগফিরুল্লাহ্!ও আমার ফুফাতো বোন হয়।”
মিহির অবাক হয়ে বললো,
“মানে?”
নোমান তাকে সবটা বললো।সবটা শুনে মিহির হেসে দিলো।তারপরে বললো,
“তার মানে আপনি আরাধ্যার বয়ফ্রেন্ড নাহ্?”
“আরে নাহ্।আর আমার গার্লফ্রেন্ড হলো রুশা।আরাধ্যার বেস্টফ্রেন্ড।ওই আমাকে কল করে সবটা বললো।আরাধ্যা ও-কে সবটা বলেছে।তাই আমিও দেরি না করে চলে আসলাম আপনাকে সবটা জানাতে।”
মিহির কিছুক্ষণ চুপ করে হেসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আমার শালাবাবু বলে কথা।চলো তোমাকে আজ আমি ট্রিট দিবো।তুমি যদি সবটা এসে না জানাতে তাহলে আমাদের সম্পর্কটা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যেতো।”
“সবটাই রুশার ক্রেডিট।ও আরাধ্যার চোখে ফাঁকি দিয়ে আমাকে সবটা জানিয়েছে।তবে হ্যাঁ আরাধ্যা কিন্তু খুব রেগে আছে।ওর রাগ ভাঙানো কিন্তু অনেক কষ্টকর।”
“কি আর করার রাগ তো ভাঙাতেই হবে।নাহলে তো আমি আর তোমার দুলাভাই হতে পারবো নাহ্!”
#চলবে………………
(রি-চেক করতে পারিনি।একটু ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে!)