রাগ পর্ব-০২

0
4039

#রাগ
#লেখকঃরনি হাসান
#পর্বঃ২

সকালে ঘুম থেকে উঠে। প্রথমে রাকিবের রুমে দিকে উকি দিতেই লক্ষ্য করলাম। দরজা খুলা দেখে ভিতরে প্রবেশ করলাম। রাকিব রুমে নেই। সাদ সকালে আবার কোথায় গেলো। নিশ্চয়ই রাস্তা হাটতে গেছে মনে হই। আনমনে ভেবে চলে আসতে যাবো হঠাৎ টেবিলের উপর একটা চিঠি রাখা দেখে আগ্রহ সহিত চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম”

প্রিয় ভাইয়া

আজ একটা কথা বলতে খুব কষ্ট যে আমি তোমার আপন ভাই নাকি রাস্তার কোনো ছেলে তা আমি জানি না। ছোট থেকেই তোমার কুলে পিটে বড় হয়েছি। ভেবেছি বাবা মা না থাকলে কি হবে ” আমার তো বাবা মার মতো ভালোবাসার একজন ভাইয়া আছে, এতেই অনেক। কিন্তু গতকাল যখন আমার কোনো কথা না শুনেই মারতে শুরু করলে তখন বুঝতে পারলাম। তুমি আমার আপন ভাই নাহ। আপন ভাই হলে কেউ কখনো তার আপন ছোট ভাইকে এতটা মারধর করতে পারে না।যাই হক ছোট থেকে যেহেতু আমার সব ভরপোষনের দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়েছো। সেদিক থেকে আমাকে মারতে মারতে মেরে ফেলেও কোনো আপত্তি ছিলো না। কিন্তু ভুল বুঝে আমাকে এতটা আঘাত করলে তা আমি মেনে নিতে পারছি না।

ভাবি হইত আমার নামে তোমাকে অনেক কিছু বলছে মনে হই। প্রকৃত পক্ষে ভাবিকে কখনো খারাপ কিংবা বাজে নজরে দেখেনি। ছোট থেকে মা বোনের ভালোবাসা কি তা আমি পাইনি। তাই রোদেলার ভাবির মাঝে মা বোনের ভালোবাসাটা আমি খুজে পেতাম। ভাবিকে একটু বেশিই জ্বালাতাম। ভাবি আমার বিষয় গুলা কেমনে নিতো তা আমি জানি না। তবে সেদিন তোমাদের রুমে আমার ফোন চার্জে লাগানো ছিলো। প্রাইভেট থেকে এসে তড়িঘড়ি করে তোমাদের প্রবেশ করে যে আপত্তিকর একটা অবস্থায় আমাকে পড়তে হবে তা জানতাম নাহ। বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি সত্যিই জানতাম না যে ভাবি দরজা লক করা ছাড়াই কাপড় বদলাচ্ছিলো।

যার দারুণ ভাবি ও আমাকে ভুল বুঝে অনেক বকাঝকা করে। আর আমি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলে আমাকে ধমকিয়ে চুপ করে দেই। যাই হক ভাইয়া তুমি আমাকে অনেক দয়া করুনা করেছো। আর তোমার দয়া কিংবা করুনার পাত্র হতে চাই হতে না। চিরতরে জন্য এবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। বেচে থাকলেও হইত তোমাদের সঙ্গে আর দেখা হবে না। তোমাদের বয়সের তুলনায় আমি অতি তুচ্ছ একজন তারপর ও দোয়া রইলো সুখে শান্তিতে থাকো। আর আমার মতো বেয়াদব টাকে ভুলে যাও। আল্লাহ হাফেজ

চিঠিটা পড়া শেষে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। নিজের অজান্তেই চোখের জল গাল বেয়ে চিঠিতে পড়তে লাগলো। আজ কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। ছোট ভাইটা অভিমান করে বাড়ি ছেড়েছে।আমার রাগের জন্য যে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি তা আমি কখনো ভাবিনি। আনমনে ভেবে কান্না করছি আর চিঠির দিকে তাকিয়ে দেখছি। রোদেলা আমাকে অনেক জোরেই ডাকাডাকি করছে আমি শুনেও কেন জানি তার জবাব দিতে পারছি না। পরিশেষে রোদেলা রাকিবের রুমে আমাকে কান্না করা অবস্থায় দেখে বলে উঠে ”

–“তুমি হঠাৎ রাকিবের রুমে এসে কান্না করছো হাতে আবার কিসের কাগজ

রোদেলার কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে চিঠিটা ওর হাতে তুলে দিলাম। চিঠি হাতে পেয়ে ও আগ্রহ নিয়ে পড়তে লাগলো। পড়ার শেষে রোদেলাও কান্না করে বলে উঠে ” এসব আমার জন্য হয়েছে তাই না। রাকিব আমাকে মা ভাবতো আর আমি ওকে ছি,, এখন নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হচ্ছে কেনো যে তোমাকে ওসব কথা বলতে গেলাম

–“রোদেলার কান্না দেখে বললাম ” এতে তোমার কোনো দোষ নেই। সব তো আমার রাগের কারনে হয়েছে
–“আচ্ছা রাকিব কি আর ফিরবে না (রোদেলা)
–“ফিরবে কিনা জানি না। তবে আমি আজ এখন থেকে ওকে খুজতে শুরু করবো

এই বলে মানিক ব্যাগটা হাতে নিয়ে প্রথম রাকিবের ক্লাসমেইট সজীবের কাছে গেলাম।ছোট ভাইটার সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব। তো সজীবের বাসায় গিয়ে সজীবকে জিজ্ঞেস করলে বলে” ওর সঙ্গে তো দুইদিন ধরে ভালোভাবে দেখেই হই না। তবে তানবীর সঙ্গে কলেজ মাঠে প্রতিদিনই ক্রিকেট খেলতে যায়। ভাইয়া আপনি বরং তানবীরের বাসায় যান

সজীবের কথা মতো তানবীবের বাসায় চলে আসি। তারপর তানবীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি কিন্তু রাকিবের কোনো খুজ খবর দিতে পারলো না। এভাবে ছোট ভাইয়ের যত গুলো বেস্ট ফেন্ড ছিলো সবাই কাছে গিয়েছি। কেউ কোনো খুজ খবর আমাকে দিতে পারল নাহ। নিরাশ হয়ে রাতে বাড়িতে ফিরলাম ” আমার ক্লান্তি ভরা চেহারা দেখে রোদেলা বলে ” রাকিবের সন্ধান পেয়েছো_?

বিছানা বসে আহত কণ্ঠে বললাম” নাহ পাইনি। রাকিবের সব ক্লাসমেটদের কাছে গিয়েছি। কিন্তু তারা আমাকে রাকিবের কোনো সন্ধান দিতে পারে নাই –

–“রোদেলা আমার কাধে হাত রেখে বলে” চিন্তা করো না। রাকিব কে আমরা পেয়ে যাবো। এখন খেতে আসো তো। সারাদিন তোমার উপর অনেক ধকল গেছে ”
–“খেতে ইচ্ছা করছে না-
–“না খাইয়ে থাকলে কি ছোট ভাইটা আসবে_?আসবে না
–“নিশ্চুপ
–“না খেয়ে নিজেকে কষ্ট দিবার কোনো মানেই হয় নেই। তোমাদের চিন্তা ভাবনায় আমিও খাইনি

রোদেলার কথা শুনে ইচ্ছা না থাকার পরেও খাবার খেয়ে নিয়েলাম। খাবারের পর্ব শেষে রাকিবের রুমে যায়। দেয়ালে ছোট ভাই টার হাসি উজ্জ্বল ছবিটা দেখে বুকের পা যেন দুমড়ে মুচড়ে উঠলো। চোখ থেকে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আনমনে ভেবে নিলাম” এই হাত দিয়ে আমি আমার ছোট ভাইটাকে পশুর মতো আঘাত করেছি

এ হাত আর রাখবো না। রেগে গিয়ে দেয়ালে অবিরাম হাতটা আঘাত করতে লাগলাম। রোদেলা ওপাশ থেকে শব্দ পেয়ে রুমে এসে আমাকে দুরুত্বই আটক নিয়ে বলে ” একি করছো হাত থেকে তো অনেক রক্ত ঝড়ছে। প্লিজ থামো (রোদেলা কান্না করে)

রোদেলা আমি এ হাত দিয়ে ছোট ভাইটাকে পশুর মতো আঘাত করেছি। আমি এই হাত আর রাখবো না (এ বলে আবারও দেয়ালে আঘাত করতে লাগলাম। রোদেলা আমাকে পিছন দিকে জড়িয়ে ধরে এখান থেকে সরিয়ে নেই। তারপর নিজেকে শান্ত করতে বাধ্য করলাম। রোদেলা আমার হাতের অবস্থা দেখে কান্না করছে আর রক্তাক্ত হাতে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিচ্ছে। আনমনে ভেবে যাচ্ছি ” আমার এত রাগ হই কেনো। এই রাগের জন্য ছোট ভাই দূরে সরে গেলো। মন খারাপ নিয়ে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলাম। রোদেলা পাশে থাকলেও নিশ্চুপ হয়ে আছে কিছু বলছে না। রাতের ঘুমটা নির্ঘুমেই কেটে গেলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনে লক্ষ্য করলাম তানবীরের নাম্বার থেকে ১০ বার মিস কল উঠে আছে। তড়িঘড়ি করে তানবীরের ফোনে কল দিতেই ওপাশ থেকে যা বলল তা শুনার জন্য আমি মোটুও প্রস্তুত ছিলাম না..
!
!
(চলবে)