#রাগ
#লেখকঃরনি হাসান
#পর্বঃ৩
ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনে লক্ষ্য করলাম তানবীরের নাম্বার থেকে ১০ বার মিস কল উঠে আছে। তড়িঘড়ি করে তানবীরের নাম্বারে কল দিলাম কয়েকবার রিং হবার পর তানবীর ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে বলে উঠে
–“ভাইয়া একটা bad নিউজ আছে
–“সাদ সকালে আবার কি bad নিউজ..?
–“ভাইয়া রাকিব যে বাসে ঢাকায় যাচ্ছিলো সে বাসটি Accident হয়েছে। শুনলাম বাসের মধ্যে যত গুলো যাত্রী ছিলো সবই নাকি অনেক খারাপ অবস্থায় আছে। ভাইয়া আমার তো রাকিবকে নিয়ে অনেক ভয় হচ্ছে–
তানবীরের এ কথা শুনার পর আমার দুনিয়া ধারী নিমিষেই যেন উলোটপালোট হয়ে গেলো। সাদ সকালে এরকম একটা নিউজ শুনার জন্য আমি মোটুও প্রস্তুত ছিলাম না। কাপা কাপা গলায় তানবীরকে বললাম
–“বাসটি কোথায় Accident হয়েছে বলতে পারো_?
–“ভাইয়া বাসটি বেশি দূরে যেতে পারেন নাই আমাদের শেরপুর ও দিকেই সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েছে। আপনি বরং বাসস্ট্যান্ডে আসুন আমিও ওখানে দাঁড়িয়ে আছি গাড়ি পেলে রাকিব ওখানে যাবো।আর আপনি আসলে একসঙ্গে যাওয়া যাবে-
–“ওকে যাচ্ছি আমি-
রুমে এসে তড়িঘড়ি করে শার্ট গায়ে দিয়ে। মানিক ব্যাগ পকেটে রেখে দিলাম। রোদেলা আমার তড়িঘড়ি দেখে জানার আগ্রহ নিয়ে বলে উঠে ”
–“তড়িঘড়ি করে কোথায় বের হচ্ছো_?
–“রোদেলা অনেক বড় অঘটন ঘটে গেছে_!!
–“অঘটন ঘটেছে মানে_?
–“রাকিব যে বাসে ঢাকায় যাচ্ছিলো সে বাসটি শেরপুর ও অতিক্রম করতে পারেনি সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েছে। রাকিবের বন্ধু আমাকে ফোন দিয়ে এইমাত্র জানালো, এখন ওখানেই যাচ্ছি-
–“আমিও যাবো তোমার সঙ্গে_?
–“আচ্ছা ঠিক আছে জলদি বের হও সময় নেই
রোদেলা চট করে বোরকা পড়ে আসলো। অন্যান্য দিনে কোথায় নিয়ে যেতে চাইলে। সাজগোছ করতে অনেক লেট করত।কিন্তু আজ আর লেট করলো নাহ।
জলদি রেডি এসে পড়লো আমি রোদেলা এবং তানবীর, ছোট ভাই টার বন্ধুকে নিয়ে শেরপুর চলে যায়। লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে তারা নানান রকম কথা বলে “যে বাসের মধ্যে যে সকল যাত্রী ছিলো অধিকাংশই বেচে নেই। হাতে গুনা কয়েকজন মনে হইত বেচে আছে –
লোকজনের এরকম ধারা কথাবার্তা শুনে আমার তো চোখের জল অঝোর ধারায় পড়ছে। আমার সঙ্গে রোদেলা ও কান্না করছে। উপর দিকে তানবীর শুধু আমাদের দুইজনকে শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে। আমার জীবনে আজ এ নিয়ে দুইবার কষ্টের কান্না কেদেছি
-বাবা মা যখন আমাকে এতিম বানিয়ে চলে গেলো তখন একবার কেদেছি।আর আজ ছোট ভাইটার জন্য কান্না করছি। যদি ভাই টার কিছু হয়ে যায় তো নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।সারাজীবন নিজেকে দোষী ভেবে যাবো। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমি একেবারে এতিম হয়ে যাবো। ছোট ভাই ছাড়া আপন বলতে কেউ আর নেই। আল্লাহর কাছে হাজার বার বলছি আমার ভাইটাকে যেনো কোনোভাবে বেচে যায়। আনমনে এসব ভাবতে ভাবতে শেরপুর চলে আসি। যেখানে বাসটি Accident হয়েছে সেখানে প্রথম যায়। গিয়ে দেখি শুধুমাত্র বাস ভাংচুর অবস্থায় পড়ে আছে। আর লোকজন বলাবলি করছে-
যাত্রীর আত্নীয়স্বজন যারা আসছেন তারা ওমুক সরকারি হাস্পাতালে চলে যান। আপনাদের আত্নীয়স্বজনদের ওখানে চিকিৎসা চলছে। লোকটির মতো হাস্পাতালে চলে যায়।
হাস্পাতালে এসে কান্না যেন কোনো বাধায় মানছে না। আমার মতো এখানে অনেকজনেই এসে তার রিলেটিভর জন্য কান্নাকাটি করছে।
যখন আমার সামনে দুই তিন টা লাশ এম্বুলেন্সে নিয়ে গেলো তখন ছোট ভাই টার কথা ভেবে বুক ফেটে যেন কান্না চলে আসছে। পাগলের মতো ছোট ভাইকে খুঁজতে লাগলাম। হাস্পাতালে অনেক রোগীর ভিড়ে আমার ভাইকে খুজেই যেন পাচ্ছিলাম না। সিড়ি বেয়ে উপরে তলায় উঠে প্রথম কক্ষেই ছোট ভাইকে অজ্ঞান অবস্থা দেখা মিলে গেলো। হাতে পায়ে রক্ত ঝড়ছে কোনো ডাক্তার যেন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই অবহেলায় ফেলে রেখেছে। নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে ডাক্তারকে রাগান্বিত হয়ে বলে উঠলাম ”
–“ডাক্তার আমার ভাইটা যে রক্ত ঝড়ছে তার চিকিৎসা না করে অবহেলায় ফেলে রেখেছেন কেনো-
–“দেখুন আমরা এখানে অনেক চাপের ভিতরে আছি কাকে ছেড়ে কাকে ট্রিটমেন্ট করবো বলেন তো। পারলে আপনার ভাইটাকে অন্য কোনো হসপিটালে নিয়ে যান। এখানে রোগীদের তুলনায় ডাক্তার খুব অল্পসংখ্যক। সব রোগীদের ভালো ট্রিটমেন্ট আমরা করতে পারছি না।
ডাক্তারের কথা শুনে কোনো দেরি করলাম না।রাকিবকে নিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে এডমিন করিয়ে নেই। সেখানে চুল পরিমান ও পেসেন্টদের প্রতি তারা অবহেলা করে না। পারলে তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চিকিৎসা করে থাকে। তো ডাক্তার ট্রিটমেন্ট করার ডাক্তার বলল
আপনার ভাইয়ের ডান পা ভেঙেছে এবং দুই হাতে বেশ আঘাত পেয়েছে। চিন্তা করিয়েন না খুব দুরুত্বই আপনার ভাই ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ
ডাক্তার কথা শুনে নিজের মাথায় হাত রেখে ধপ করে বেঞ্চ বসে পড়লাম। আমার কাধে হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে মাথা উপরে তুলে তাকাতেই রোদেলা ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
–“প্লিজ এভাবে ভেঙে পড়ো না। রাকিব ভালো হয়ে যাবে আল্লাহর উপর ভরশা রাখো। (রোদেলা)
–“ভাইয়া রাকিব নিশ্চয়ই ভালো হবে আপনি চিন্তা কইরেন না (তানবীর)
সারাদিন ভাইটার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে রোদেলা আর তানবীরের কথা যেন ভুলেই গেছিলাম। যে আমার সঙ্গে ঘুরাঘুরি করে তারাও অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সারাদিন না খেয়ে তাদের দুইজনের মুখ যেন শুকিয়ে আছে। তাদের এ অবস্থা দেখে নিজের কাছেই অনেক খারাপ লাগলো। তড়িঘড়ি করে হোটেল থেকে খাবার এনে তানবীর আর রোদেলার হাতে তুলে দেই। রোদেলা আমাকে ছাড়া খেতে ইচ্ছুক না। ইচ্ছা না থাকার পরেও রোদেলা আমাকে জোর করে খাবার মুখে তুলে দিলো। চোখের জল মুছে অল্প কিছু খাবার খেয়ে আর খেতে পারলাম না। খাবার পর্ব শেষ করে নিলাম। তানবীরের উদ্দেশ্য বললাম
–“তানবীর কাল তোমাকে এত করে বললাম রাকিব কোথায় আছে তার সন্ধান কি জানো। সব জেনেও আমাকে তখন মিথ্যা বলছো কেনো_?
–“সরি ভাইয়া। রাকিব আমাকে নিষেধ করেছিলো। এরজন্য সবটা জেনেও মিথ্যা বলছি (তানবীর)
–“থাক না এসব কথা। যা হবার তা তো হয়েছেই (রোদেলা)
রোদেলার কথা শুনে নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। ওদেরকে এসব দোষ দিয়ে কি হবে। সব তো আমার রাগের কারণেই হয়েছে। ছোট ভাইয়ের উপর যদি রাগ না দেখাতাম তাহলে এত কিছু আর হতো না। সারাদিন এভাবেই কেটে গেলো সন্ধ্যার সময় রাকিবের জ্ঞান ফিরলো। চোখে মেলে আমাদেরকে দেখে বলে উঠলো
!
!
(চলবে)