রাতের কুয়াশা পর্ব-০৬

0
1701

#রাতের_কুয়াশা
#পর্ব = ০৬

” আমি বললাম, বুড়ো কাকা এখন কোথায়? ”

” আমি তাকে হাত পা বেঁধে বাগানে চিৎ করে রেখে দিয়ে এসেছি। গায়ের সব পোশাক খুলে ঠান্ডার মধ্যে ফেলে এসেছি, শালা কতবড় বজ্জাত আমাদের সাথে এমন করে? ”

” এখন তার মোবাইল দিয়ে সর্দারের কাছে কল দিয়ে কথা বলাতে হবে, তাকে বলতে হবে সে যেন সর্দার কে বলে যে আমরা পালিয়ে গেছি। আর আমরা এখন দক্ষিণ দিকে যাচ্ছি, তাহলে সর্দার এখানে না এসে সরাসরি সেদিকে যাবে। আমরা ততক্ষণে হেল্প নাম্বারে কল দিয়ে পুলিশকে এখানে আসতে বলবো। তারপর দেখি কি করা যায়? ”

” ঠিক আছে মামা তাহলে চলেন তাড়াতাড়ি বুড়ো কাকাকে দিয়ে কথা বলানোর ব্যবস্থা করি। ”

” ঠিক আছে চলো। ”

প্রথমে পুলিশের হেল্প নাম্বারে কল দিয়ে তাদেরকে খুব তাড়াতাড়ি আমার নাম্বার লোকেশন অনুযায়ী আসতে বললাম।

আমি সামনে হাঁটতে শুরু করলাম, পিছন থেকে মুন্নী আমার হাত টেনে ধরলো। সে একা রুমের মধ্যে থাকতে চায় না তাই আমাদের সাথে সেও যাবে। বাগানে গিয়ে কাকার অবস্থা দেখে নিজের মায়া লেগে গেল কিন্তু এখন মায়া মহব্বতের সময় নেই।

” আমি তার সামনে বসে বললাম, কাকা ভুল যার করার করে ফেলেছেন এখন সর্দারের কাছে কল দিয়ে বলেন আমরা পালিয়ে গেছি। তাকে বলবেন আমরা দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যাচ্ছি তাই আমাদের ধরতে হলে তারা যেন দক্ষিণ দিকে যায়। ”

” কাকা মাথা নাড়িয়ে কি একটা বললো সঠিক বুঝতে পারছি না। আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম, কাকা রাজি আছেন? ”

” কাকা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। ”

সাজিদ তখন কাকার মোবাইল দিয়ে সর্দারের কাছে কল দিল, কল রিসিভ করলে কাকার সামনে ধরা হলো। কাকা তখন নিজের প্রানের ভয়ে আমি যা যা শিখিয়ে দিয়েছি সব বললো। বাড়তি করে বললো যে সে আমাদের পিছনে পিছনে দক্ষিণ দিকে যাচ্ছে তাই তারা কেউ যেন এখানে না আসে। সর্দার আচ্ছা বলে কল কেটে দিল, কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারছি তিনি মরিয়া হয়ে গেছে। ”

কথা বলা শেষ করে কাকা কে দুজনেই ধরে ঘরের মধ্যে নিয়ে গেলাম। আমি আর মুন্নী কাকার সামনে বসে আছি আর সাজিদ পিস্তল হাতে বাহিরে গেল। আমি তাকে বললাম যদি কেউ এদিকে আসে তবুও সে যেন একা একা কিছু না করে। কারণ এখন তো আমাদের কৌশলে বাঁচতে হবে তাই মাথা ঠান্ডা রেখে ভেবে চিন্তে কাজ করতে হবে।

আমি আর মুন্নী খাটের উপর বসে আছি আর কাকা আমাদের সামনে মাটিতে মুখ বাধা অবস্থায় পরে আছে। শীতে তাকে কাবু করে ফেলেছে, বেচারা করুন চোখে তাকিয়ে আছে। একটু পরে মুন্নী খাটের উপর থেকে একটা ছেঁড়া কাঁথা নিয়ে কাকার গায়ে দিয়ে দিল।

” আমি আস্তে করে বললাম, এটা কেন করলে? ”

” মুন্নী বলল, দেখছো না লোকটা শীতে কষ্ট পাচ্ছে?”

” সে আমাদের সাথে বেঈমানী করেছে, এখন এই মুহূর্তে তার জন্য আমরা টানটান উত্তেজনায় আছি।”

” তবুও শীতের কষ্ট বড় কষ্ট, এমন সময় আমাদের উচিৎ তাকে এতটা কষ্ট না দেওয়া। ”

” ঠিক আছে। ”

আধা ঘণ্টা পার হয়ে গেল কিন্তু সাজিদের ফেরার কোন গন্ধ পাচ্ছি না। আমরা দুজন কান খাড়া করে চুপচাপ বসে আছি, মুন্নী আবারও আস্তে আস্তে আমার পাশে ঘেঁষে বসে আছে। পায়ের নিচে মাটিতে কাকা কাঁথা গায়ে দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। একটু পরে সাজিদ রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো, সাজিদ এর দিকে তাকিয়ে দেখি সে মনে হয় বড্ড পরিশ্রম করে এসেছে।

” জিজ্ঞেস করলাম, কি হইছে সাজিদ কোই ছিলে তুমি? ”

” মামা সর্বনাশ হয়ে গেছে, আমাদের এখান থেকে পালাতে হবে। আপনারা ব্যাগপত্র যা কিছু আছে সব নিয়ে তাড়াতাড়ি চলুন। ”

” কেন কি হইছে সাজিদ? ”

” সবকিছু পরে বলবো আগে এখান থেকে বের হতে হবে বুঝতে পারছেন? ”

” আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু কাকার কি হবে? ”

” কাকা এখানে পরে থাকুক, যদি কেউ ঢুকে তাহলে তারা তাকে উদ্ধার করবে। এখন তো আমরা আগে নিজেদের জান বাঁচানোর চেষ্টা করবো। ”

” আচ্ছা চলো তাহলে। ”

★★

বাহিরে নেমে সাজিদ আমাদের দুজনকে নিয়ে বাড়ির পিছনে বাগান পেরিয়ে কাশফুলে ঘেরা স্থানে দাঁড়িয়ে গেল। জোৎস্নার আলো চারিদিকে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, রাত মনে হয় প্রায় শেষ হয়ে গেছে।

” সাজিদ সামনে একটা বিশাল গর্ত দেখিয়ে বললো, মামা আপনি মামিকে নিয়ে এই গর্তের মধ্যে ঢুকে পরুন। আমি উপর থেকে ছনপাতা আর ঘাস ইত্যাদি দিয়ে চাপা দিয়ে দিচ্ছি। আপনারা ভিতরে বসে থাকবেন আমার জন্য চিন্তা করবেন না। মোবাইল সবসময় চালু রাখবেন তবে সাইলেন্ট করা থাকবে। গর্তের মধ্যে আমি কিছু ঘাস বিছিয়ে দিছি কিন্তু শিশির পরে ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে আপনারা একটু কষ্ট করে থাকবেন। ”

” আর তুমি? ”

” ওই ঘরে থাকাটা বিপজ্জনক হবে তাই এমন ব্যবস্থা করেছি, এখন যদি তারা আসে তাহলে জানবে যে আমরা পালিয়ে গেছি। আমরা শুধু পুলিশ আসার অপেক্ষা করবো কারণ পুলিশ আমাকে কল করেছে তারা রওনা দিয়েছে। ”

” তোর বিপদ হবে সাজিদ, মুন্নীকে এখানে রেখে তুই আর আমি উপরে থাকি? ”

” না মামা, আপনি এখানে মামির সাথে থাকবেন। আপনি মামিকে পাহারা দিয়ে রাখবেন আর আমি আপনাদের পাহারা দিয়ে রাখবো। আর উপর থেকে আল্লাহ আমাদের তিনজনকে পাহারা দিয়ে রাখবে। ”

” মুন্নি বললো, সাজিদ তুমি যদি সজীবকে মামা না ডেকে ভাই ডাকতে তাহলে আমি তোমাকে আমার ভাই বানাতাম। ”

” সমস্যা নেই, আমরা তো আর রক্তের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলছি না, আমাকে যিনি এই ডাকাত দলের সদস্য করেছেন তাকে মামা ডাকতাম। আর তিনি এখানে সবাইকে ভাই ডাকতো, তার জন্য আমি সবাই কে মামা ডাকি। ”

” ঠিক আছে আজকের এই ভয়ংকর রাতের কুয়াশা কেটে গিয়ে আগামীকাল নতুন সূর্য উঠবে তখন থেকে আমরা নতুন করে জীবনের গল্প তৈরি করবো।

” আচ্ছা ঠিক আছে। ”

আমরা দুজন গর্তের মধ্যে নামলাম, ঘাস হালকা ভেজা ভেজা মনে হচ্ছে তবে তেমন একটা অসুবিধা হবে না। সাজিদ গর্তে উপর প্রথম কিছু গাছ দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে। গাছ থেকে ময়লার গুড়ো আমাদের গায়ের উপর পরবে বলে সে আমাদের চাদর মুড়ি দিতে বললো। একটু পরে প্রায় সম্পুর্ণ গর্তের মুখ বন্ধ করে দিল তারপর বাহিরে থেকে আমার নাম্বারে কল দিল।

” আমি রিসিভ করার পরে বললো, সবকিছু ঠিক আছে মামা আপনি চিন্তা করবেন না। সর্দার যদি সবাইকে নিয়ে আসে তবুও আপনাদের পাবে না। ”

” বললাম, তুই সাবধানে থাকিস সাজিদ। ”

” জ্বি মামা আমি সাবধানে আছি। ”

” আচ্ছা যা কিছু ঘটে জানাস কিন্তু? ”

” ঠিক আছে মামা। ”

আমি আর মুন্নী দুজনেই গর্তের মধ্যে বসে আছি, মনে হয় বড় কোন কাজের জন্য এখান থেকে মাটি কেটে কাজ করা হয়েছে। গর্তটা মোটামুটি ভালোই বড় দেখা যাচ্ছে তাই দুজনেই অনায়সে বসে আছি। মুন্নী আমার সাথে জড়িয়ে ধরে বসে আছে, কিছুক্ষণ পরে দেখলাম বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তাই ঘাসের উপর শুয়ে পরলাম।

সারা রাতের ক্লান্তিতে দুজনেই ঘুমিয়ে গেছিলাম, হুট করে যখন ঘুম ভাঙ্গলো বেলা তখন সাড়ে নয়টা। আমি মোবাইলে তাকিয়ে দেখি সাজিদের নাম্বার থেকে 53 মিসড কল। সাজিদ এতবার কল করেছে কিন্তু আমি রিসিভ করতে পারি নাই। সাজিদের কোন বিপদ হলো নাকি? ইসস কেন যে হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পরলাম ! আমি সাজিদের নাম্বারে কলব্যাক করলাম কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছে না। বারবার কল দিচ্ছি কিন্তু রিং বেজে বেজে কেটে যাচ্ছে তবুও রিসিভ হচ্ছে না। মুন্নী এখনো ঘুমিয়ে আছে, মোবাইল এর আলো দিয়ে তার চেহারার দিকে তাকিয়ে আছি। বাহিরে যদিও সকাল হয়ে গেছে কিন্তু আমরা গর্তের মধ্যে বসে আছি তাই অন্ধকার।

হঠাৎ করে কিছু একটা শব্দ পাচ্ছি, খেয়াল করে বুঝলাম কারা যেন আমাদের গর্তের মুখ থেকে সব কিছু সরিয়ে ফেলছে। প্রথমে ভেবেছিলাম সাজিদ মনে হয় এসেছে কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম যে এখানে অনেক গুলো মানুষ। কারণ পাঁচ সাতজন মানুষের কথা শোনা যাচ্ছে, কেউ বলছে হ্যাঁ হ্যাঁ এই গর্তের মধ্যে আছে মনে হয়। আবার কেউ কেউ বলে তাড়াতাড়ি করো, ওদের দুজনকে বের করতেই হবে তারপর আমাদের অন্য কাজ।

আমি আস্তে করে মুন্নীকে ডাক দিলাম, শরীরের সব শিরায় শিরায় ভয় ঢুকে যাচ্ছে কারণ বাহিরে যারা কথা বলছে তাদের মধ্যে দু একটা কণ্ঠ পরিচিত মনে হচ্ছে।

চলবে
লেখাঃ
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)