#রুপা
#২য়_পর্ব
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
_কি অতীত?কি এমন অতীত আছে তোমার।যেই অতীতের কথা শুনলে উঠে চলে যাবো আমি?
বলেই ফেলো আমায় তাহলে।
_তবে শুনুন,
আজ থেকে ৩ বছর আগে,
আমার ডিভোর্স হয়েছে।
আমার বিয়ে হয়েছিলো।আমি সেখানে সংসার করেছি।
এবং একটা সময় আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।
আমি একজন ডিভোর্সি।
কথা গুলো শুনে আরাফ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
_বলেছিলাম না কথা গুলো শোনার পর চলে যাবেন?
হয়েছে সব জানা এখন?এবার আসুন।
_রুপা!
আমি তোমাকে ভালবাসি।
বিয়ে করবে আমায়?
রুপা এবার আরাফের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
_মানে?আপনি কি আমার কথা গুলো ফান মনে করছেন?
_নাহ একদম না।
_তাহলে?
কিভাবে একটা ডিভোর্সি মেয়েকে আপনি আপনার জীবনে জড়াতে চান?
_একটা কথা কি জানো রুপা।ভালবাসা এই সব বিয়ে,ডিভোর্স,সংসার করা এসব মানেনা।
আমি তোমার অতীত দিয়ে কি করবো?
বুঝলাম তোমার জীবনে একটা এক্সিডেন্ট ঘটে গেছে।
তো এখানে তোমার তো কোন দোষ নেই।
তাহলে এই একটা কারণে তুমি কেন কষ্ট পাবে আজীবন?
_দেখুন,আপনি একটা আনম্যারিড ছেলে।
আর আমি ডিভোর্সি।
আপনার পরিবার কোন দিন মেনে নিবেনা এ সম্পর্ক।
তাছাড়া সমাজ?সমাজের লোকজন আমার দিকে আপনার দিকে আঙুল তুলে কথা বলবে।
আপনি কি এসব মানতে পারবেন?
আর তাছাড়া,আমার আগের বিয়ে নিয়ে
একটা সময় ঠিকই আমাকে আপনি খোটা দিবেন।
আর তখন যদি আমাকে কোন কারণে ছেড়ে দেন।আমি কোথায় যাবো বলতে পারেন?
_ছিঃ।এমন কথা ভাবতে পারলে তুমি?
আমি তোমাকে খোটা দিবো?
আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো?
যেই আমি তোমাকে পাবার জন্য পাগলের মত ঘুরছি।সেই আমি কিনা তোমাকে পেয়ে হারিয়ে ফেলবো?
আমি কথা দিচ্ছি,
কোন দিন তোমাকে আমি তোমার অতীত সম্পর্কে কিচ্ছু বলবোনা।
আর কোন দিন তোমার হাত ছাড়বোনা।
বিয়ে করবে আমায়?
আমি না তোমায় অনেক ভালবাসি।
আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।
_সত্যিই কোন দিন ছেড়ে যাবেন নাতো?
_একদম না।
_সারাজীবন আগলে রাখবেন ভালবাসবেন তো?
_হুম রাখবো।সারাজীবন ভালবাসবো।
রুপা আরাফকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
এক্সেপ্ট করে নেয় আরাফের প্রোপোজাল।
আর সেই থেকেই শুরু হয় তাদের ভালবাসা।
এরপর থেকে অফিস শেষ করে দুজন এক সাথে ঘুরতে বের হয়।
হলে যায়,সিনেমা দেখে।
কখনো কখনো পার্কে ঘুরে বেড়ায়।
যখন তখন ফোনে কথা হয়।
সামনাসামনি যখন না থাকে।
রুপাও আরাফকে ভালবেসে ফেলে অনেক।
দুজনের ভালবাসা একটা সময় গভীর ভালবাসায় পরিপূর্ণ হয়।
যখন তারা মনে করে আর দূরে থাকা সম্ভব নয়।
ঠিক তখনই দুজন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
একদিন অফিস ছুটির দিনে রুপা আর আরাফ ঘুরতে বের হয়।
সেদিনই রেস্টুরেন্টে বসে আরাফ রুপাকে বলে,
_এভাবে আর কত দিন হুম?
আমার আর দূরে দূরে থাকতে ইচ্ছে করছেনা।
তোমায় ছাড়া ঘুম আসেনা আমার।
_তাহলে কি করবো এখন?
_চলো বিয়ে করে ফেলি।
_সত্যি বলছো?
_হুম।চলো বিয়ে করে ফেলি।প্রেম ভালবাসা অনেক তো হলো।
বাকি প্রেম ভালবাসা না হয় বিয়ের পরই হবে।
_তোমার পরিবার মানবে তো?
_রুপা!
_হ্যাঁ বলো।
_বিশ্বাস করো আমাকে?
_হুম নিজের থেকেও বেশি।
_তাহলে আমি যা বলবো ঠিক তাই করবে হুম?
_ঠিক বুঝলাম না।
_তোমার যে আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো,এই কথা টা যেন আমার পরিবারের কেউ কোন দিন না জানে।
_কি বলছো তুমি?
_হ্যাঁ ঠিকই বলছি।কোন দিন তুমি কাউকে এ কথা বলবেনা।
আমার জানার দরকার ছিলো আমি জেনেছি।আর কারো জানার দরকার নেই।আর বিয়েটা আমি করছি,আমার পরিবার বা অন্য কেউ না।তাই আমি জানলেই হবে।
_এভাবে এত বড় সত্যি টা লুকিয়ে বিয়ে করাটা ঠিক হবে?
যদি কখনো তারা জেনে যায়?
_কেউ জানবেনা।
কারণ তোমার বাসা এক জেলায়,আর আমার বাসা আরেক জেলায়।
কর্মসূত্রে আমরা এখন অন্য আরেকটা জেলায় আছি।
আর এখানকার কেউ তোমায় বা তোমাদের চেনেনা জানেনা।
আমাদেরও কেউ চিনেনা জানেনা।
যে কেউ কিছু আমার পরিবারে বলবে।
তাছাড়া যখন আমরা আমার জেলায় চলে যাবো,তখনও কেউ জানবেনা কিছু।
কারণ আমার জেলার কেউও তোমায় চিনেনা।
তাহলে কথা সেটাই রইলো।
আমি আমার পরিবার নিয়ে আগামীকাল তোমাদের বাসায় আসবো।
তুমি তোমার বাসার সবাইকে জানিয়ে দিও।
কেউ যেন তোমার আগের বিয়ের কথা না উল্লেখ করে।
আমি এটা গোপন রাখতে চাই আজীবন।
_আচ্ছা ঠিক আছে,বুঝলাম
কিন্তু কেন গোপন রাখতে চাও,সেই কথাটা তো বলবে?
_কারণ আমি চাইনা,ভুল করেও আমার পরিবার বা সমাজের কেউ তোমায় কোন কটু কথা বলুক।
আর যে কথা শুনে তুমি আঘাত পাও কষ্ট পাও।
রুপার দু চোখ সেদিন আরাফের কথায়,টলমল করতে থাকে।
যে,ছেলেটা ওকে এত ভালবাসে।
রুপা সেদিন ওর মাকে গিয়ে বলে আগামীকাল আরাফ ওর পরিবার নিয়ে বিয়ের কথা বলতে আসবে।
আর ও চায় আমার আগের বিয়ের কথা টা সবার কাছে গোপন রাখতে।
ও চায়না কেউ কোন দিন আমাকে বাজে কথা বলুক।
বা খোটা দিক।
ওর জানার দরকার ও জেনেছে ব্যস শেষ।
রুপার মাও এমন ছেলেকে জামাই হিসেবে পাবে বলে অনেক খুশি।
রুপার মা রুপার বাবা ভাই বোনকে সব কিছু জানান।
পরের দিন রুপার বাসায় রান্না বাড়া সহ আরো আয়োজন করা হয়।
আরাফের পরিবারের লোকজন এসে রুপাদের বাসায় খাওয়া দাওয়া করেন।
রুপার বাসার লোক জন সবাই রাজি এই বিয়েতে।
কারণ ছেলে ভালো,কোন সমস্যা নেই ছেলের।
তাদের মেয়েকে ভালবাসে।
আরাফের পরিবার ছেলেকে দূরে বিয়ে করাতে, অন্য জেলায় বিয়ে করাতে প্রথমে রাজি না হলেও,পরে রাজি হয়।
রাজি হবার পরই দেখতে আসে রুপাকে।
আর রুপা যেহেতু দেখতে শুনতে সুন্দরী, আর তাদের ছেলে এই মেয়েকেই বিয়ে করবে।
তাই আরাফের পরিবার আর অমত করেন না।
দুই পরিবারের সম্মতিতেই আরাফ আর রুপার বিয়ে ঠিক হয়।
বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই অনুষ্ঠিত হয়।
গায়ে হলুদ,বিয়ের প্রোগ্রাম সবই হয়,তবে শুধু মাত্র দুই পরিবারের কিছু সংখ্যক লোক জন নিয়ে।
দুই পরিবারের জেলা থেকে অল্প সংখ্যক লোকজন মিলিত হয় বিয়েতে।
আরাফ আর রুপা যেই জেলায় জব করে সেখানে বিয়েটা অনুষ্ঠিত হয়।
বিয়ে টা খুব সুন্দর ভাবেই হয়ে যায়।
রুপাও চলে যায় আরাফদের বাসায়।যেখানে আপাতত আরাফরা ভাড়া থাকে।আরাফের জবের কারণে।
আনন্দের সাথে শুরু হয় ওদের সংসার জীবন।
চলতেও থাকে আনন্দের সাথেই।
বিয়ের পর রুপা দেখতে আরো বেশি সুন্দরী হয়ে যায়।
আর সাথে আরাফকেও দেখতে এখন ভালো লাগে।
স্বাস্থ্য ভালো হবার পর আরাফকে দেখতে খুব বেশিই ভালো লাগে।
দুজনকে এখন খুব ভালো মানায়ও।
দেখতে দেখতে কেটে যায় সংসার জীবনের দুই বছর।
একটা সময় রুপা মনে করে এখন ওদের একটা বাচ্চা নেয়া উচিৎ।
আর বুদ্ধিটা রুপার মা ই রুপাকে দেন।
যাতে আরাফ কোন দিন রুপাকে ছেড়ে দিতে না পারে।
এই সন্তানের জন্য হলেও যেন সংসার টা টিকে যায়।
রুপাও ওর বরকে জানায়,ওদের এখন একটা বাচ্চা নেয়া উচিৎ।
আরাফও রাজি।
আসুক একটা সন্তান।
কয়েক মাস পর একদিন রুপা জানতে পারে ও প্রেগন্যান্ট।
আর এই খবরটা যখন আরাফকে দেয়,আরাফও খুব বেশি খুশি হয়।
দুই পরিবারের সবাই খুশি বেবী আসবে বলে।
একদিন রুপা চেকাপে যাবার জন্য আরাফকে বলে,
আজ একটু অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় এসো।
ডাক্তারের কাছে যাবো।
ডাক্তার যেভাবে যেভাবে বলে সেই ভাবেই তো চলতে হবে।
আরাফ আচ্ছা বলে সেদিন অফিসে চলে যায়।
রুপা বিয়ের পর থেকে আর অফিসে যায়না।
সেদিন রুপা কয়েক বার আরাফকে ফোন করে,
কিন্তু আরাফ ফোন রিসিভ করেনা।
সারাদিন চলে যায় একটা ফোনও দেয়না রুপাকে।
দিন পেড়িয়ে রাত আসে,কোন খবর নেই আরাফের।
রাত ১২ টা রুপা আবার আরাফকে ফোন দেয়।
এবার ফোন টা রিসিভ হয়।
আর ফোন টা রিসিভ করে আরাফ ধমকের সাথে রুপাকে বলে___
চলবে,