#রুপা
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#প্রথম_পর্ব
একদিকে সন্তান জন্ম দিয়ে হসপিটালে ভর্তি রুপা।অন্য দিকে শুনে যে স্বামী ২য় বিয়ে করে বউ এর সাথে রাত কাটাচ্ছে।
তাই তার সন্তানকে সে দেখতেও আসেনি।
সেই মুহূর্তে একটা মেয়ের কেমন লাগতে পারে,সেটা শুধু সেই মেয়েই জানে যারা কিনা নিজের স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিয়েছে।
পৃথিবীতে মেয়েরা সব কিছুর ভাগ দিতে পারলেও,স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারেনা।
বা দিতে চায়না।তবুও কিছু কিছু মেয়ের সেই ভাগ টাই অনিচ্ছাকৃত ভাবেই দিতে হয়।
আশ্চর্য জনক বিষয় হচ্ছে রুপা আর রুপার স্বামীর সাথে কোন রকম দ্বন্দ্ব বা ঝগড়াও হয়নি।
এমনকি তারা খুব খুশিও ছিলেন তাদের প্রথম সন্তান হবে এই বিষয় টা নিয়ে।
হসপিটালে ভর্তি হবার আগের দিন ও তারা বাচ্চার নাম কি রাখবে,বাচ্চা কাকে বেশি ভালবাসবে, বাচ্চাকে বড় হলে কি বানাবে এই সব নিয়ে গল্প করেছে।
রুপা সব সময় ভাবতো,ওর মত ভাগ্যবতী মেয়ে হয়তো দুনিয়ায় আর একটাও নেই।
যার স্বামী কিনা তাকে এত ভালবাসে।
মেয়েটা বিয়ের পর থেকে ওর স্বামীকে রেখে বাবার বাসায় পর্যন্ত যেতোনা।
মেয়েরা বিয়ে হয়ে গেলেও বাবার বাড়ী ছাড়তে চায়না।
আর রুপা তার বরকে পেয়ে বাবার বাড়ী যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলো।
শাশুড়ি যখন বলতো,তুমি বাসায় কেন যাওনা?
রুপা তখন উত্তর দিতো,
আমার ভালো লাগেনা মা।
রুপাকে আরাফ ভালবেসে বিয়ে করেছে।
রুপা যদিও প্রথমে পাত্তা দিতোনা।
কারণ আরাফ ছিলো হ্যাংলা পাতলা একটা ছেলে।
গাল ভাঙা।
চেহারা কাটিং সুন্দর হলেও তাকে দেখতে ভালো লাগতোনা।কারণ সে শুকনা ছিলো।
আর অন্য দিকে রুপা ছিলো একদম ফর্সা।
দেখতে খুবই সুন্দরী।
তবে ও নিজেও ছিলো শুকনা।
কিন্তু আজকাল মেয়েরা শুকনা হলে সবাই বলে স্লিম,সুন্দরী।
আর ছেলেরা শুকনা হলে বলে,এই ছেলে নিশ্চিত নে*শা করে।
এই হলো এই যুগের মানুষের অবস্থা।
রুপা দেখতে সুন্দরী ছিলো বলে আরাফ খুব সহজেই প্রেমে পড়ে যায় রুপার।
ওদের দেখা হয় কর্ম সূত্রে।
দুজনই এক কোম্পানিতে জব করতো।
রুপাকে প্রথম দেখেই আরাফ যেন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে অবস্থা।
কিন্তু ওই যে বললাম,রুপার পছন্দ না এমন ছেলে।
আরাফ একদিন জব চলাকালীন সময় রুপাকে ডেকে বলেছিলো,আমি তোমায় কিছু বলতে চাই।
রুপা সেদিন উত্তর দিয়েছিলো,যা বলতে চান তা বলেও কোন লাভ হবেনা।
তাই না বলাটাই ভালো।
রুপা আরাফের কিছু দিনের ভাব-সাপ দেখে,চোখের চাহনি দেখে বুঝতে পেরেছিলো আরাফ রুপাকে পছন্দ করে।
আর রুপার আজকের কথায় আরাফও বুঝতে পারে রুপা আরাফকে তেমন একটা পছন্দ করেনা।
তাই আরাফ খুব বুদ্ধি করে রুপার মায়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলো।
একজনের কাছ থেকে বাসার ঠিকানা নিয়ে চলে গেলো রুপার বাসায়।
রুপা জব থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে সবে মাত্র একটু রেস্ট নিতে শুয়েছে।
আর কলিং বেলের আওয়াজ।
উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে আরাফ।
_আপনি?
আমাদের বাসায়?
ঠিকানা পেলেন কই?
কি দরকারে এসেছেন?
_ভেতরে তো আসতে দিবে আগে,নাকি?
_আচ্ছা আসুন।
রুপা আরাফকে আর তার বন্ধুকে বসতে বলে নাস্তা আনতে চলে যায়।
রুপার মা এসে তাদের সাথে কথা বলা শুরু করে।
রুপা নাস্তা নিয়ে আসে।
সবাই নাস্তা করার পর আরাফ রুপার মাকে সোজাসুজি বলে দেয়,
_আন্টি,আমি রুপাকে ভালবাসি।
আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।
যদি আপনারা রাজি হোন,তাহলে আমি আপনাদের বাসায় আমার পরিবারকে পাঠাবো।
_রুপাও কি তোমাকে ভালবাসে?
_না আন্টি।
_তাহলে?আমি ওর পছন্দ ছাড়া ওকে বিয়ে দিবোনা বাবা।
ও যদি তোমাকে পছন্দ করে তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
আরাফ ওর বায়োডাটাও রুপার মাকে দেয়।
রুপার মা ভাবে ছেলেতো ভালোই।
কিন্তু রুপার মত থাকাটাও জরুরি।
আরাফ সেদিন যাবার সময় রুপার মাকে বলে যায়,আপনি একটু বুঝাবেন ওকে মা।
ডিরেক্ট মা বলে সম্বোধন করে যায় আরাফ রুপার মাকে।
রুপার মা ও আরাফের ব্যবহারে,ওর বংশ মর্যাদা স্ট্যাটাসের কথা শুনে গলে যায়, রাজি হয়ে যায়।
এরপর থেকে আরাফ শুরু করে রুপাকে ইমপ্রেস করা।
রুপা জবে আসার আগেই ওর টেবিলে ফুলের তোড়া রেখে দেয় আরাফ প্রতিদিন।
কখনো কাঁচের চুড়ি।
কখনো লাল টিপের পাতা।
কখনো বা পায়েল।
একদিন জব থেকে বাসায় ফেরার পথে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়।
রুপা ভিজে একাকার।
রাস্তায় কোন রিক্সা বা গাড়িও নেই।
রুপা খুব বৃষ্টি বলে একটা দোকানের পাশে দাঁড়ায়।
আর তখনই একটা গোলাপ হাতে আরাফ হাজির হয়।
গোলাপ টা নিয়ে আরাফ বসে পড়ে রাস্তার মাঝ খানে।
আর জোরে জোরে বলতে থাকে,রুপা!
আমি তোমাকে ভালবাসি।
আমাকে বিয়ে করবে?
তুমি যদি আজ উত্তর না দাও
তাহলে আমি এখান থেকে আজ উঠবোনা।
রুপা দোকান থেকে আরাফের দিকে এগিয়ে আসে।
তারপর আরাফের সামনে এসে দাঁড়ায়।
_বিয়ে করবে আমায় রুপা?
আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
আমি তোমায় অনেক ভালবাসি।
_অতীত শুনবেন আমার?
আমার একটা অতীত আছে।
আর সেই অতীত এর কথা শুনলে এক্ষুণি আপনি এখান থেকে উঠে চলে যাবেন।
_কি অতীত?কি এমন অতীত আছে তোমার।যেই অতীতের কথা শুনলে উঠে চলে যাবো আমি?
বলেই ফেলো আমায় তাহলে।
_তবে শুনুন,
আজ থেকে ৩ বছর আগে,
চলবে..
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)