রূপসীর_আচল পর্ব-০৭

0
1848

#রূপসীর_আচল
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৭

মারিয়া,আর মাত্র কয়েকটা দিন, তারপর আব্বুকে বলে তোমায় বিয়ে করে নিবো,আর তোমায় অনেক গুলো বাবু উপহার দিবো?

এমন সময়
হটাৎ হিয়া আকাশের কেবিনে আসে,আর যখন কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে তখন দুজনকে এই অবস্থায় দেখে না বলে চোখে হাত দিয়ে ফেলে…!

মারিয়া,তো রেগে মেগে আগুন,এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না,তোমাকে কেবিনে আসার অনুমতি কে দিছে..?

অন্যদিকে আকাশের তো লজ্জায় পুরো মাথা শেষ,আল্লাহ এখন মেয়েটা আমায় কি ভাববে,আর সেদিন যে আচরণ টা করেছি,সেটার জন্য এমনিতে ওর চোখে খারাপ হয়ে আছি,তার উপরে এখন আবার এই সব..?

হিয়া,সরি সরি আমি আসলে বুঝতে পারি নি,প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন,আর এমন ভুল হবে না বলে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়..!

আকাশ,মারিয়া তুমি এমন ধারা আচরন না করলেও পারতে ওর সাথে…?

মারিয়া,চুপ থাকো একদম একটাও কথা বলবা না,রোমাঞ্চ করতে ধরেছি তখন এই ঐ মেয়ের আসতে হবে হা..?

আকাশ,কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না,আকাশের খুব খারাপ লাগছে,কারন হিয়া যে তার বিয়ে করা বউ,কাকে কি বলবে সে,না পারছে মারিয়াকে কিছু বলতে না পারছে হিয়াকে..!

মারিয়া,রেগে মেগে আকাশের কেবিন থেকে বের হয়ে যায়..!

অন্যদিকে,
হিয়া,চুপচাপ বসে আছে,আর একটু আগের ঘটনাটা খালি চোখে ভাসছে,হিয়ার কেন জানি মনে হচ্ছে ওর শরীর থেকে ওর কলিজাটা কেউ বের করে নেওয়ার চেষ্টা করছে,কেন এমন লাগছে আমার,ঐ লোকটা তো আমার কেউ না,ঘটনা চক্রে বিয়ে হয়েছে আমাদের,আমি তো ঐ লোক টাকে স্বামী হিসেবে মানি না,কিন্তু কেন ঐ ঘটনাটা দেখার পর থেকে এমন লাগছে আমার,কেন এত খারাপ লাগছে,হিয়া লক্ষ করে ওর চোখের কোন বেয়ে পানি বেয়ে পড়ছে..!

আকাশ,চুপচাপ কেবিনে বসে আছে,ওর মনের মধ্যে খালি একটাই জিনিস বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে সে হিয়ার সামনে গিয়ে কি ভাবে দাঁড়াবে,যতই হোক আমার বিয়ে করা বউ তো…!

দুপুরে খাওয়ার জন্য ব্রেক দিয়েছে,আকাশ কেবিন থেকে বের হয়ে হিয়াকে ডাকতে যায়,কারন ওকে খাইয়ে দিতে হবে,তার আগে পিয়নকে দিয়ে কেন্টিন থেকে খাবার আনিয়ে রেখেছে সে..!

গিয়ে দেখে হিয়া চুপচাপ বসে আছে,এই হিয়া চলো খাবারের সময় হয়ে এসেছে তোমাকে খাইয়ে দিতে হবে..?

হিয়া,দরকার নাই আমাকে খাইয়ে দেওয়ার,আমি আজ থেকে নিজ হাতে খাওয়ার চেষ্টা করবো,কারোর সাহায্যের প্রয়োজন নেই..!

আকাশ,কি বলছো এই সব তুমি,তোমাকে খাইয়ে না দিলে তো খেতে পারবে না,সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার করবে..!

হিয়া,ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার করলে করবো,আপনি গিয়ে ঐ মেয়েটাকে খাইয়ে দিন,আমাকে খাওয়াতে হবে না..?

আকাশ,আরে পাগল নাকি আমি আমার বউকে না খাইয়ে দিয়ে অন্য মেয়েকে খাইয়ে দিতে যাবো…!

হিয়া,হুহ এখন আসছে বউ বউ করতে,তখন মনে ছিলো যখন কোলে নিয়ে রোমাঞ্চ করেছিলেন…??

আকাশ,আরে আজিব তো,ও তো জোর করে আমার কোলে..?

হিয়া,থাক আর মিথ্যে বলতে হবে না,আমি আপনার হাতে খাবো না, ঐ ডাইনিকে গিয়ে খাইয়ে দেন..!

আকাশ,এই ওয়েট ওয়েট আমার একটা জিনিস মাথায় কাজ করছে না?

হিয়া,কি..?

আকাশ,ঐ মেয়ের সাথে রোমাঞ্চ করেছি,তাতে তোমার এত রাগ হচ্ছে কেন..?
তুমি তো আমাকে স্বামী হিসেবে মানো না,আর তোমার তো খুশি হওয়ার কথা..?

হিয়া,কিহহ আমার কেন রাগ হতে যাবে,আপনার যা মনে চাই তাই করেন আমার কি,আর আমার রাগ কি এত সস্তা নাকি?

আকাশ,সস্তা না দামি তা দেখা যাচ্ছে?

হিয়া,এই এই কি বলতে চান আপনি হা?

আকাশ,কিছুনা চলো খাবার খাবে..!

হিয়া,না আমি খাবো না বলেছি?

আকাশ,তোমার খেতে হবে না আমি তোমায় খাইয়ে দিবো,বলে জোর করে কোলে তুলে নিজের কেবিনে নিয়ে যায়,কেউ নাই সবাই খাবার খেতে কেন্টিনে গেছে,তাই কারোর নজরে পরলো না,তবে আকাশের কেন জানি মনে হচ্ছে হিয়াও আকাশকে ভালো?
না হয় ওর এত জ্বলছে কেন..??

হিয়াকে,কেবিনে নিয়ে গিয়ে কোল থেকে নামিয়ে দেয়,তারপর হাত ধুয়ে খাবার হাতে হিয়ে এই হা করো..?

হিয়া,না করবো না?

আকাশ,দেখো এখন কিন্তু ভালো হচ্ছে না?
হিয়া,ভালো না হলে নাই আমার কি?

আকাশ,শেষ বারের মত বলছি হা করো,না হয় না খাইয়ে রাখবো একদম..?

হিয়ার,খুব খিদে পেয়েছে,আর এবার যদি হা না করে লুচু টা আর খাইয়ে দিবে না পরে,তাই হিয়া হা করে,

আকাশ,হিয়াকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে নেয়,আর হিয়াকে পাশে বসিয়ে রেখে অফিসের কাজ করতে থাকে,এমন সময় আকাশের ফোনটা বেজে উঠে,

ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অপরিচিত একটা নামবার,প্রথমে রিসিভ করেনা,কারন অপরিচিত নাম্বার আকাশ কখনোই রিসিভ করে না,আবার ফোন দেয় অপরিচিত নাম্বারটা থেকে,

তারপর আকাশ ফোনটা রিসিভ করে,হ্যালো কে বলছেন..?

অপরপাশ থেকে,বাবা আমি হিয়ার আব্বু বলছিলাম,

আকাশ,ওর আপনি, তারপর সালাম বিনিময় করে,আর লক্ষ্য করে হিয়া পাশে আছে,তাই সে কেবিন থেকে বরে হয়ে যায় কথা বলার জন্য..!

হিয়ার বাবা,আকাশ বাবা আমরা আজ আসতে চাচ্ছিলাম,যদি একটু ঠিকানাটা বলতে তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো..?

আকাশ,কিহ সত্যি আজ আপনারা আসবেন..?

হিয়ার বাবা,হা বাবা..?

আকাশ,বাবা তাহলে আমি স্টেশনে যাবো আপনাদের রিসিভ করতে..!

হিয়ার বাবা,আচ্ছা বাবা,তারপর সময় টা বলে দেয়,আর আকাশ সময় মত অফিস থেকে একটু আগে বের হয়ে যায়,হিয়াকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তুমি থাকো আমি আসছি..?

হিয়া,নাহ আমিও যাবো আমার একা থাকতে ভয় করে,তার উপরে আবার অচেনা একটা জায়গায়..!

আকাশ,আরে ভয় এই কি আছে,আমি এখন যাবো আর এখন আসবো..!

হিয়া,আচ্ছা..!

আকাশ,স্টেশনে চলে যায়,হিয়ার বাবাকে আর ওর আম্মুকে রিসিভ করতে..!

আর হিয়া ঘরে বসে বসে আমি জানি তো কোথায় গেছে লুচুটা,ঐ ডাইনির সাথে দেখা করতে,সমস্যা নাই আর তো মাত্র কিছুদিন তারপর তো চলে যাবো..!

আকাশ,হিয়ার আব্বু-আম্মুকে রিসিভ করে বাড়িয়ে নিয়ে আসে,তারপর ঘরে এসে দরজার বেল বাজায়,হিয়া দরজা খুলে যখন ওর আব্বু-আম্মুকে দেখতে পেয়ে খুশিতে কান্না করে দেয়,আর ওর আব্বু-আম্মুকে জড়িয়ে ধরে..!

হিয়ার আম্মু,আরে পাগলী মেয়ে এমন ভাবে কান্না করতে হয়,আমরা নাই তো কি হয়েছে,কত সুন্দর আর কত ভালো একটা বর পেয়েছিস..!

হিয়া,হুহ কত ভালো না ছাই,আমার কাউকে দরকার নাই আমি তোমাদের সাথে চলে যাবো এই লোককে ডিভোর্স দিয়ে..!

আকাশ,হিয়ার কথা শুনে মনটা একদন খারাপ হয়ে গেলো,আসলেই কি হিয়া আমায় ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবে..!

হিয়ার আম্মু,এই মেয়ে কি বলছিস এই সব অলক্ষুণে কথাবাত্রা..?

হিয়া,যা বলেছি ঠিক এই বলেছি…!

হিয়ার আব্বু, আরে রাখো তো মেয়ের কথা,এখন অনেকটা পথ অতিক্রম করে এসেছো একটু রেস্ট করো,পরে দেখা যাবে ঐ সব কথাবাত্রা,

আকাশ,তাড়াতাড়ি করে বাহিরের দোকান থেকে গিয়ে নাস্তা কিনে নিয়ে আসে শুশুর-শাশুড়ীর জন্য,

বিকাল বেলায় সবাই মিলে নাস্তা করতে বসে এমন সময় হিয়ার বাবা,
আকাশ,বাবা তুমি এখানে একা থাকো বাবা-মা নেই..?

আকাশ,নাহ আসলে অফিসের কাজের জন্য এখানে একা থাকি..!

হিয়ার বাবা,বাবা তুমি আমার পাগল মেয়েটাকে দেখে রেখো,

আকাশ,আপনি ওসব নিয়ে চিন্তা করবেন না,আমার বউ আমি যদি দেখাশোনা না করি..!

হিয়ার আম্মু,যাক মেয়েটা একটা ভালো ছেলের কাছেই পড়েছে,এবার আমাদের আর কোন টেনশন নাই…!

হিয়া,বাবা আমার কিছু কথা আছে,আমি উনার সাথে আর থাকবো না তোমাদের সাথে চলে যাবো..?
এতে যদি তোমরা আমাকে উনার সাথে থাকার জন্য জোড়াজুড়ি করো তাহলে কিন্তু খারাপ কিছু ঘটে যাবে,এই লোকটা একদম ভালো না…!

কেউ কিছু বলতে পারছে না,সবার মুখের বুলি বন্ধ হয়ে গেছে,কারন হিয়ার বাবা মা হিয়ার রাগকে খুব ভয় পায়,কখন কি ঘটিয়ে বসবে কে জানে,আর আকাশ তো চুপ করে আছে,কি বলবে সে হিয়া তো সব সত্যি কথায় বলেছে,আমি একদম ভালো না…!

হিয়ার বাবা-মা সেদিন থেকে পরেরদিন চলে যায়,হিয়াও উনাদের সাথে চলে যায়..!

আকাশ,হিয়াকে যাওয়ার আগে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু হিয়া আর থাকবে না,তাই কি আর করা নসিবে লিখা ছিলো ওর সাথে এতদিন এই সংসার করবো…!

হিয়া,চলে যাওয়ার পর আকাশের কাছে ঘরটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে,কিছুই যেন আর আগের মত নেই,আকাশের চোখ জোড়া দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ে পড়ছে, মেয়েটা আকাশের মনে একদম গভীর ভাবে জায়গা করে নিয়েছে,তবে সমস্যা নেই,আমি আমার মত করে ভালোবেসে গিয়েছি,আজ ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করেছে,একটা সময় এমন আসবে যে সেই হিয়া আমাকে পাগলের মত খুজবে কিন্তু সে আর আমায় পাবে না…!

হিয়া,তো বাড়িতে এসে মহাখুশি সে অনেকদিন পর নিজের বাড়িতে এসেছে,হিয়ার মা-বাবা হিয়ার সাথে কেউ কথা বলে না,দুজনেই কথা বলা অফ করে দিয়েছে,কারন আকাশের মত একটা ভালো ছেলেকে সে ঠুকরে এসে গেছে..!

অন্যদিকে হিয়ার শহরে আসার খবর মাস্তান রানার কাছে পৌঁছে গেছে..!
রানা,এবার আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচাবে,তোমাকে বউ করেই ছাড়বো…!

হিয়া,রাতের বেলায় নিজের রুমে শুয়ে আছে,তখন কয়েকটা গাড়িতে করে রানার লোকেরা আসে,আর হিয়াকে জোড় পূর্বক ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়…!

হিয়ার-বাবা-মা আটকাতে চাইলেও ওদেরকে আটকাতে পারে না,

অন্যদিকে,
আকাশ,রাতে খাটে শুয়ে আছে,হিয়ার সৃতি গুলো বারবার চোখের সামনে ভেসে আসছে ওর,চোখ জোড়া যেন আর বাধা মানছে না, ইচ্ছে মত পানি ঝরছে চোখ জোড়া থেকে,এমন সময় হটাৎ হিয়ার বাবা ফোন করে আর বলে হিয়াকে রানার লোকেরা জোর করে তুলে নিয়ো গেছে….!

চলবে…?

ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন…!