রৌদ্র মেঘের আলাপণ পর্ব – ০৩

0
414

#রৌদ্র মেঘের আলাপণ
#পর্ব-৩
#WriterঃMousumi Akter

আহসান মজ্জিলে রাতে ডিনার টাইমে তরকারীতে লবন হওয়ার জন্য মেঘ কে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করছে তার শ্বাশুড়ি।সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলেও কথা শোনানোর একটা কারণ খুজে মেঘ কে মেঘ কে কথা শোনাতে ছাড়েন না মেঘের শ্বাশুড়ি।অথচ বিয়ের সময় এই মহিলা বলেছিলো মেঘ তার আরেক টা মেয়ে হয়েই থাকবে।বিয়ের সময় বলেছিলো মেঘের জীবনে কোনো কষ্ট ই সে আসতে দিবে না।তার ও একটা মেয়ে আছে মেয়ের মর্ম সে বুঝে।অথচ বিয়ের পরেই তার খারাপ ব্যবহার শুরু হয়েছে।যেখানে নিজের মেয়ে মাহি সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায়, বাড়ির একটা কাজ ও করে না, নিজের মেয়ে একশ টা অন্যায় করলেও বলেন মাহি বুঝতে পারে নি।অন্যদিকে মেঘ কোনো ভুল করলে দুনিয়া উদ্ধার করে ছাড়েন,মেঘের বাবার কাছে নালিশ করেন,পাড়ার মানুষ এক করে ফেলেন।মেঘের কথা বলেন, বয়স কি কম হয়েছে যে বোঝে না।মা হারা মেঘ অল্প বয়সেই বিষাক্ত এক জীবন পাড়ি দিচ্ছে।কেউ নেই তার যে তাকে একবার জিজ্ঞেস করবে তোমার ও কি কষ্ট হয়।

–শ্বাশুড়ির বকা ঝকা শুনেও মেঘ চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে কোনো কথা বলছে না।এর ই মাঝে মেঘের ফোন বাজছে।মাহি মেঘের ফোন টা ধরে অবাক হয়ে যায় যে মানুষ টা কে মাহি কয়েক হাজার বার কল দিয়েছে কখনো রিসিভ করেনি অথচ তার ভাবির নাম্বারে কল।এই কল মেঘের জীবনে আরো বড় ঝড় বয়ে নিয়ে এলো।মাহি অবাক হয়ে তার মা বাবাকে বলে বাবা রৌদ্র ভাবির নাম্বারে কল দিচ্ছে।আহসান আহমেদ খাওয়া ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় চোখে মুখে বিস্ময় এর চিহ্ন।মেঘ ও ভীষণ অবাক তার নাম্বারে ফোন কিভাবে দিবে।তার নাম্বার তো জানেনা।মেঘের শ্বাশুড়ি কটমট করে বলে ওঠেন কি ব্যাপার মেঘ তোমার নাম্বারে আমাদের হবু জামাই কল দিচ্ছে কেনো?

–মেঘ ভয়ে ভয়ে বললো আমি তো জানিনা মা।

–তোমার নাম্বার কোথায় পেয়েছে?

–আমি সেটাও জানিনা মা।আপনি বিশ্বাস না হলে আমার ফোন চেক করে দেখুন আমি কখনো কথা বলেছি কিনা।

–মাহি বললো,উনি তোমার কাছে কি বিয়ে ভাঙার কারণ বলতে ফোন দিয়েছেন।প্লিজ ভাবি উনাকে বুঝিয়ে বলো তুমি।উনাকে কেউ বুঝিয়ে বলবে সেই সুযোগ টায় পাচ্ছে না।

–আহসান আহমেদ বললেন,আহা মাহির মা মেঘ এ বাড়ির সদস্য আর এ বাড়ির জামাই মেঘ কে ফোন দিতেই পারে।এমন তো হতে পারে মেঘ ভাবি হয় তাই মেঘ কে কিছু বলতে চাইছে।মা মেঘ তুমি ফোন টা রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দাও।

–মেঘ বললো,না বাবা মাহি রিসিভ করুক না।আমি কি বলতে কি বলবো তার ঠিক নেই।

–মেঘের শ্বাশুড়ি বললেন,তোমার শ্বশুর যা বলছেন সেটাই করো।ফোন রিসিভ করো দেখি কি বলে।আমাদের মান সম্মান আর থাকলো না।সব দোষ মাহির বাবার,কি এক পাত্র দেখেছে এত বড় বেয়াদব তার বাবা ছ মাস ধরে বিয়ে ঠিক করছেন আর সে বিয়ে ভেঙে দিচ্ছে।

–মেঘ ফোন টা রিসিভ করে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললো আসসালামু আলাইকুম।

–রৌদ্র এর ভেতরে যেনো তোলপাড় শুরু হলো।এই সেই কন্ঠ যে কন্ঠ টা শুনতে রৌদ্র পাগল হয়ে গেছিলো।দীর্ঘ দুই বছর পরে রৌদ্র সেই কন্ঠ টা শুনলো।মেঘের কন্ঠে এমন কিছু আছে যা রৌদ্র কে পাগল করে তোলে।কিছুতো আছে মেঘের কন্ঠে যা রৌদ্র কে পাগল করে তোলে,ভেতরের অস্হিরতা বাড়িয়ে রৌদ্রের সূর্যের ন্যায় তেজ নরম করে ফেলে।এতদিনের দগ্ধ ক্ষত যেনো শিতল হলো।

আসলেই একটা ছেলে যখন একটা মেয়েকে ভালবাসে এতটায় ভালবাসে যে ভালবাসার সাথে হাজার যুগ পরে দেখা হলেও ভালবাসাটা একই রকম থাকে।পুরুষ মানুষের প্রকৃত ভালবাসা হয় ভয়ংকর প্রকৃতির ভালবাসা।যে ভালবাসা একটা পুরুষ কে হিংস্র করে তুলতে পারে,পাগল করে তুলতে পারে, খারাপ বানিয়ে ফেলতে পারে,আবার খারাপ ছেলেটাকে পারে সবার থেকে কোমল আর শান্ত বানাতে।পুরুষ মানুষ যখন কাউকে মন দিয়ে ফেলে তখন প্রেয়সীর ভাল লাগার জন্য এমন কিছু নেই করেনা।রৌদ্র ভালবেসেছিলো মেঘ কে ভীষণ ভালবেসেছিলো,সেই ভালবাসা আজ ও একই রকম আছে।

–রৌদ্র চুপ আছে কোনো কথা বলছে না।

–মেঘ এর বুকের মাঝে বাড়ি দিচ্ছে যেনো হাতুড়ি দিয়ে কেউ।সালাম দিয়ে শ্বশুর শ্বাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।ফোনের ওপাস থেকে দীর্ঘনিঃশ্বাস ভেষে আসছে।

–মেঘ আবার ও বললো আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন।

–এক আকাশ দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে রৌদ্র বললো কেমন আছো মেঘ?

–বিয়েটা ভেঙে দিলেন কেনো রৌদ্র বাবু।মাহি আপনাকে খুব ভালবাসে।কি দোষ ছিলো মাহির। কারো মনে কষ্ট দিয়ে কি সুখি হওয়া যায়।

–আমার মনেও তো কেউ কষ্ট দিয়েছিলো মেঘ।মন তো খুব নরম জিনিস।সেখানে আঘাত করলে কি সে সহ্য কর তে পারে।শরীরের আঘাত সহ্য করা যায় মেঘ,কিন্তু মনের আঘাত সহ্য করা যায় না।মন ভেঙে চুরে গুড়িয়ে যায়,জ্বলে পোড়ে,তীব্র যন্ত্রণা করে।কিন্তু আমি কখনো চাই নি সে অসুখী হোক।আমি চেয়েছি আমার মনের এই তীব্র যন্ত্রণা যেনো তার জীবনে সুখ হয়ে দোলা দেয়।

–দেখুন রৌদ্র বাবু, আ,আপনার জীবনে কি হয়েছে ভুলে যান প্লিজ।মাহি অনেক ভাল মেয়ে। আপনাকে খুব ভালবেসে ফেলেছে।সবাই জানে মাহির বিয়ে।এখন বিয়ে ভেঙে বিয়ে আমাদের সম্মান নষ্ট হবে।

–কি মাহি মাহি করছো মেঘ।আমার এই দুই কানে এই জীবনে কোনো মেয়ের কথা পৌছাতে দেয় নি আর দিবোও না।আমি শুনতে চাই না কোনো মাহির কথা।প্লিজ মেঘ বলোনা তুমি।আমার কন্ঠ শুনে কি তুমি কিছুই বুঝতে পারছো না।তুমি আমাকে না বুঝলেও আমি বুঝেছি তোমাকে দেখেই তুমি ভাল নেই মেঘ।

–আপনি মাহির সাথে কথা বলুন প্লিজ বলেই মেঘ মাহির কাছে ফোন টা দিয়ে দিলো।মাহি হ্যালো বলতেই কেটে দিলো রৌদ্র ফোন।

–রৌদ্র বুঝতে পারে নি মেঘের পাশে কেউ ছিলো।তাছাড়া এটা মেঘের ব্যাক্তিগত ফোন।রৌদ্র আবার দুঃচিন্তায় পড়ে গেলো এখন মেঘের উপর দিয়ে না জানি কত ঝড় তুফান যাবে।এইজন্যই কি মাহি এত জড়তা নিয়ে কথা বলছিলো।

–মেঘের শ্বশুর, শ্বাশুড়ি,ননদ রৌদ্রের কথা শুনে স্পষ্ট বুঝে নিলো তাদের মাঝে কিছু চলছে।মেঘের শ্বশুর বললো,মা মেঘ আমি কখনো তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করি নি।তোমার শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে থেকেছি সব সময়।কিন্তু আজ আমি ভাবতে পারছি না।তুমি এমন টা করতে পারলে।কবে কখন এসব হলো মা মেঘ।তোমাকে তো আমি বলেছি মা বিয়ের কথা কিন্তু তুমি রাজি হও নি। আর আজ আমার মেয়ের জীবন টা এভাবে কেনো নষ্ট করলে।

–মাহির দু’চোখ বেয়ে ঝরছে বেদনার অশ্রু।সে কেঁদে বললো ভাবি তুমি না আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডের মতো,বোনের মতো।তাহলে কিভাবে পারলে এমন করতে।আমি কখনো তোমাকে ক্ষমা করবো না।

–মেঘের শ্বাশুড়ি মেঘের গালে ঠাসস করে কয়েক টা থাপ্পড় মেরে বললো,চরিত্রহীনা আমার ছেলে মরে নি দুবছর হতে পারলো না এখনি নষ্টামি শুরু হয়েছে।না জানি আর কত ছেলের সাথে কত কি করেছিস তুই।মাহির সুখ তোর সহ্য হয় নি তাইনা।বিয়ের আগে তোর চরিত্রে সমস্যা ছিলো।তোর মতো মেয়েকে এ ঘরে এনে আমার ছেলেকে হারিয়েছি।এখন আমার মেয়েকে আমি হারাতে চাই না।তোর পূর্ব প্রেমিক আমার ছেলেকে কয়েক বার খু*ন করার হুমকি দিয়েছিলো।তারপর ই আমার ছেলে খু*ন হলো।

চলবে,