রৌদ্র মেঘের আলাপণ পর্ব -১০

0
364

#রৌদ্র মেঘের আলাপণ
#পর্ব-১০
#WriterঃMousumi Akter

–বেশ অনেক সময় হয়ে গিয়েছে রৌদ্রকে দেখা যাচ্ছেনা।মেঘ একটু এদিক সেদিক উঁকি মেরে দেখলো কিন্তু রৌদ্র কোথাও নেই।রৌদ্রর যে মন ভীষণ খারাপ মেঘ সেটা বুঝতে পারলো।মনের মাঝে বেশ খারাপ লাগছে মেঘের,অশান্তি হচ্ছে।রৌদ্রের ভেতরের কষ্ট অনুভব করতে পারছে মেঘ।পৃথিবীর কোন ভাই আছে যে বোনের এমন জীবন দেখে ভালো থাকতে পারে।

“মেঘ সেলিনা বেগমের কাছে জিজ্ঞেস করলো,, মা উনি কোথায়?”

“সেলিনা বেগম বললেন,,বাগানেই আছে মা। রোজ সকালে এক্সসারসাইজ করে বাগানে।তুমি যাও না, গিয়ে ঘুরে দেখে আসো।”

“আমি যাবো মিহি কন্ঠে বললো মেঘ।”

“হুম যাও, এ বাড়ি তো তোমার ই।চারদিক ভালভাবে দেখেশুনে নাও।আমি তোমার হাতে সব বুঝে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাই।”

–মেঘ কাল রাতে এ বাড়িতে এসেছে।তাই কিছু দেখতে পারে নি।দিনের আলোয় বাড়ির বাইরে টা বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে।খয়েরী খালারের বিল্ডিং এর চার পাশ জুড়ে রয়েছে ফুল বাগান।বাড়ির সিঁড়ি থেকে সোজা ইটের রাস্তা গিয়ে মিশেছে এ বাড়ির বাগানে।বাগান টা কোনো জঙ্গল এর মতো নয়,বিভিন্ন ফুল গাছ,সবজি গাছ এর ভর পুর।বাগানে বেশ কয়েকটি খরগোশ ছানা ছুটে বেড়াচ্ছে।এ বাড়ির এরিয়া টা বেশ বড়।মেঘ গুটি গুটি পায়ে সব কিছু দেখতে দেখতে সামনে এগোচ্ছে।যতটা এগোচ্ছে ততটায় মুগ্ধ হচ্ছে মেঘ।এই বাগানের সব থেকে সুন্দর দৃশ্য এবার তার চোখে পড়লো।

–কালো ট্রাউজার পরা, খালি গায়ে বুক ডাউন দিচ্ছে রৌদ্র।ঘেমে তিরতির অবস্থা। শ্যাম সুন্দর চেহারাটা অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে।মেঘ দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে রৌদ্রকে।কয়েকবার বুক ডাউন দিচ্ছে আবার কয়েক মিনিট রেস্ট নিচ্ছে।আঙুল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ফেলছে, চুল গুলো কপালে পড়ে আছে, রৌদ্র বার বার হাত দিয়ে চুল সরাচ্ছে।কিছুক্ষণ পরে রৌদ্র বাগানে রাখা একটা বেঞ্চে বসলো। তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে নিয়ে পানির বোতল এর মুখ খুলে পানি খায়ে নিলো।পানি খাওয়া শেষ করে,
একটা খরগোশ কোলে নিয়ে আদর করছে রৌদ্র।অতিমাত্রায় সুন্দর দেখতে সে দৃশ্য।বাগানে আরো কতগুলো খরগোশ ছুটে বেড়াচ্ছে।মেঘ ও একটা খরগোশ ছানা কোলে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।হঠাত রৌদ্রর চোখে পড়লো সেই ভীষণ সুন্দর দৃশ্য।রৌদ্র মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।এই বাগানের কতশত ফুলের মাঝে মেঘ কে যেনো একটা ফুটন্ত ফুল মনে হচ্ছে। অন্য সব ফুলের থেকে মেঘ কে বেশী সুন্দর মনে হচ্ছে।কোলে খরগোশ ছানা মুখে হাসি রৌদ্র ভাবতেই পারেনি মেঘ কখনো হাসবে তাও এত দ্রুত।প্রকৃতির সৌন্দর্য যেনো নিমিষেই রৌদ্রের চোখে বহুগুন বেড়ে গেলো।কিছুক্ষণের মাঝে দুজনের চোখ দুজনের চোখে পড়লো।রৌদ্রকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ এগিয়ে এসে বললো, খরগোশ খুব ভাল লাগে আমার, দেখেই কোলে নিলাম।
এতক্ষণে রৌদ্রর হুঁশ এলো,খরগোশ ছানা দ্রুত নামিয়ে দিয়ে গেঞ্জি গায়ে পরলো।রৌদ্র মনে হয় বেশ লজ্জা পেয়েছে।এইভাবে তাড়াহুড়া করে গেঞ্জি পরতে দেখে মেঘ জোরে হেসে দিলো।এত সময় মুখ বন্ধ করেই ছিলো সে।মেঘ কে এইভাবে হাসতে দেখে রৌদ্র মাঝে যেনো আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো।রৌদ্র মাথার চুলে হাত চালাতে চালাতে মেঘ কে দেখছে আর ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি।

মেঘ একটা বেঞ্চের উপর বসলো।চারদিকে তাকিয়ে ভীষণ মুগ্ধ হলো মেঘ।সত্যি এ বাড়ির বাগান টা ভীষণ সুন্দর দেখতে।বেশ কয়েক টি খাঁচায় বিভিন্ন ধরনের পাখি।

মেঘ বললো,

“এই ফুলগাছ,খরগোশ, পাখি এগুলো কার আপনার।”

“রৌদ্র একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,নাহ সব ই তৃধার।তৃধার শখ ছিলো একটা ফুল বাগান করা,বিভিন্ন পাখি পালা।আমার কাছে বায়না করতো আর আমি কিনে এনে দিতাম।ও নিজেও লাগিয়েছে অনেক গুলো।ওর হ্যাপিনেস ছিলো ওর এই ফুলবাগান,আর ওর পোষা প্রাণি গুলো।এখন তো আর ও যত্ন করতে পারে না,তাই এগুলো অযত্নে আছে।”

“মেঘ বুঝতে পারলো রৌদ্র মন খারাপ করছে।মেঘ উঠে দাঁড়িয়ে রৌদ্রর ঘাড়ে হাত রাখলো। আর বললো,আবার সব ঠিক হবে চিন্তা করবেন না।আপনাকে মন খারাপে মানায় না।”

রৌদ্র যেনো ভীষণ অবাক হলো মেঘ তার কাধে হাত রেখেছে।এটা যেনো ডুমুরের ফুলের দর্শন এর মতো।

রৌদ্র বললো,

“তাহলে আমাকে কিসে মানায়?”

“আপনাকে মানায় কিলার লুকে, রাগী,মুডি, জেদি লুকে।”

“অপমান করলে?”

“মেঘ গাল চেপে হেসে বললো,নাতো।”

“আমি কি সেটা বুঝি না।তোমাকে ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছি বলে আমাকে কিলার বানিয়ে দিলে।আমি কি আসলেই কিলার।রৌদ্রর চোখে মুখে একটু অভিমানের ছাপ।”

“আগে তো জানতাম না কিলার,বাট সেদিন তো দেখলাম,তবে রাগ, জেদ এসবে কমতি ছিলোনা কোনদিন।”

“তোমার তো রাগী,মুডি,জেদী ছেলে পছন্দ নয় তাইনা মেঘ।?”

“অতিরিক্ত কিছুই পছন্দ নয়,তবে ছেলে মানুষের রাগ থাকা ভালো।রাগহীন ছেলে আবার ছেলে হলো নাকি।”

দেখো মেঘ আমার জীবনে অনেক কিছুই ঘটে গিয়েছে।রাতের পর রাত ঘুমোয় না আমি।ভীষণ দুঃচিন্তা মাথায়।আসলেই যে আমি খুব খারাপ তা নয় মেঘ।আমি চেয়েছিলাম তোমার সাথে সুখি সুন্দর একটা জীবন কাটাতে।আমার কপাল টায় খারাপ মেঘ কিছুই নেই আমার কপালে।আমি কি এতটায় খারাপ মেঘ কোনো ভাল কিছু আমার জীবনে হলো না।হঠাত তুমি হারিয়ে গেলে কি অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছিলাম ঠিক সে সময়েই আমার বোনের সাথে এমন ঘটনা ঘটে গেলো।কিভাবে ভাল থাকবো আমি।মেজাজ খিটখিটে হতে শুরু করলো।এমন কেউ নেই মেঘ যার কাছে নিজের কষ্ট গুলো উজার করে দিতে পারি।মনের একান্ত ব্যাক্তিগত কষ্ট শেয়ার করতে পারি।আমার জীবন টা এমন কেনো মেঘ।কেনো পারলাম না অন্যর মতো একজন কে ভুলে আরেকজন কে মেনে নিতে।তাহলে তোমার কাছেও আজ রাগের কারণ হতাম না, ঘৃণার কারণ হতাম না।কেনো ভীষণ ভালবাসলাম মেঘ।তবে মাহিম থাকলে আমি তোমার জীবনে বাঁধা সৃষ্টি করতাম নাহ।আমি শুধু তোমায় একটা সুন্দর জীবন দিতেই এসব করেছি।

মেঘ শান্ত কন্ঠে বললো,আমার সাথে কি সব শেয়ার করা যায় না রৌদ্র।

তুমি শুনবে আমার কথা।

“কেনো শুনবো না?আপনি বললে নিশ্চয়ই শুনবো।”

“প্লিজ মেঘ এখান থেকে পালিয়ে যেও না।দুই মাস থাকো মেঘ।তারপর চলে যেও।আই প্রমিজ দুই মাস পর যেখানে যেতে চাও আমি দিয়ে আসবো।আটকাবো না তোমায়”

“দুই মাস পরে যেতে দিবেন সিওর।”

“হুম দিবো।”

মেঘ রৌদ্রর মন ভালো করার চেষ্টা করলো কিছুটা।আরো অনেক সময় গল্প করবো।

–গল্প করতে করতে বাগান থেকে একটা গোলাপ ছিড়তে গিয়ে মেঘের হাতে কাট ফুটে গেলো।রৌদ্র দ্রুত বললো,ওহ নো!মেঘ সাবধানে।আমাকে বলবে না তুমি,আমি ছিড়ে দিতাম তোমায় ফুল।বলেই মেঘের আঙুল মুখে নিয়ে চুষে দিলো।মেঘ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রৌদ্রের দিকে।কাটা মেঘের ফুটেছে ব্যাথা যেনো রৌদ্র পেয়েছে।রৌদ্র পাগলামি করছে আর বলছে,অনেক ব্যাথা পেলে তুমি,অনেক কষ্ট হচ্ছে মেঘ।যা লাগে আমায় বলবে আমি এনে দিবো।কোনো জটিল কাজ তুমি কখনো করতে যেও না।মেঘ এর ভেতরে খেলে যাচ্ছে অশান্তি।মেঘের হাত কেটে গেলে মাহিম কে বলেছিলো দেখো আমার হাত কতটা কেটে গিয়েছে,মাহিম বলেছিলো এইটুকু কাটায় কিচ্ছুই হবে নাহ।দুটো মানুষের মাঝে কত তফাত।

–সেদিন সকালের খাবার খেয়ে মেঘ তৃধার ঘরে প্রবেশ করলো।তৃধা বিছানায় সুয়ে আছে, চোখ মেলে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে, চোখের কোনায় পানি।মেঘ আস্তে করে তৃধার পাশে বসলো তৃধার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,তৃধা শুনতে পাচ্ছো আমার কথা।আমি তোমার ভাইয়ার বউ।তোমার ভাইয়া তোমার সাথে গল্প করতে আমাকে নিয়ে এসেছে।আমি গল্প করতে চাই তোমার সাথে।তৃধা কোনো কথা বলছে না।মেঘ তৃধাকে উঠিয়ে বসালো বালিস হেলান দিয়ে।মেঘ এক ভাবে বকবক করেই যাচ্ছে।তৃধা অনেক্ষণ পরে একবার তাকালো মেঘের দিকে।হয়তো ভাবছে মেয়েটি কে?কে তার সাথে এত কথা বলছে।মেঘ তৃধাকে জড়িয়ে ধরে বললো,আমাকে তোমার বেষ্ট ফ্রেন্ড বানাবে।তৃধার মুখে কোনো কথা নেই সে চুপ হয়ে মেঘকে দেখছে।

–মেঘ খেয়াল করলো তৃধার হাতে ” R” লেখা বেশ বড় আকারে।মেঘ বেশ কিছুক্ষণ লেখা টা খেয়াল করলো।

–সকাল গড়িয়ে রাত,রাত গড়িয়ে দিন এইভাবে কাটছে সময়।যতটা সময় যাচ্ছে মেঘ ধীরে ধীরে তত বেশী মায়ায় জড়িয়ে পড়ছে এই ফ্যামিলির। সেই সাথে রৌদ্রর প্রতি জমানো মেঘ মন থেকে একটু করে মুছে যাচ্ছে।মানুষ আসলেই মায়াশীল আর ভালবাসার কাঙাল।যেখানে ভালবাসা পায় সেখানের মায়ায় জড়িয়ে পড়ে।ভালবাসা ছাড়া আর কোনো বাঁধনে কোনো মানুষ কে বেঁধে রাখা যায় না।
___________________________________

কেটে গেছে দশদিন।মেঘ এই দশ দিনে বেশ ভালোই মানিয়ে নিয়েছে এ বাড়ির সবার সাথে।দীর্ঘদিন পরে মেঘ যেনো মানসিক শান্তি পেয়েছে। এ পরিবারে এসে পেয়েছে মা বাবার ভালবাসা,পেয়েছে দাদুর ভালবাসা।ভালবাসার এক নতুন পৃথিবী শুরু হলো মেঘের।দিন রাত তৃধার ঘরে থাকছে,তৃধার সাথে মেশার চেষ্টা করছে,মেঘ এক মনে তৃধার সেবাযত্ন করছে।তৃধাকে দেখলেই মেঘের ভীষণ কষ্ট হয়।সপ্তাহে দুবার ডাক্তার এসে ট্রিটমেন্ট করে যাচ্ছে তৃধার।

–ঘড়িতে সময় রাত দশটা।মেঘ নিজের ঘরে প্রবেশ করলো।

–মেঘকে দেখেই রৌদ্র বললো,কি ব্যাপার মেঘবালিকা কি মনে করে এ ঘরে।

–মা পাঠিয়ে দিয়েছেন।

–মা পাঠালো আর তুমি এলে।

–আসতে চাইনি,মা জোর করলো।

–আমি জানতাম তুমি তো এমনিতে আসার মেয়ে না।নিশ্চয়ই মা জোর করেছে।মা বুঝতে পেরেছে তার ছেলে বউ ছাড়া কি যন্ত্রণায় আছে।

–আমি কারো বউ না।

–তাহলে কী?

–এ বাড়ির বউমা কিন্তু আপনার বউনা।

–এ বাড়িতে আমি ছাড়া অন্য কোনো ছেলে আছে বুঝি।

–আছেতো কলাগাছ,কলাগাছের বউ হিসাবে আছি আমি।

–রাতে খাওয়া হয়েছে।

–না।

–কেনো?

–আপনি খান নি তাই?

–আমাকে স্বামি হিসাবে মানোনা আবার না খেলে খাচ্ছো না কাহিনী কী?

–মা বাবা না খেলে খান না,এখন আপনি না খেলে আমি খেলে কেমন দেখা যায় বলুন তো।

–তো এই হলো কাহিনী?

–জ্বী।

ফ্লোরে পড়ে থাকা পানিতে পা পিছলে পড়ে গেলো মেঘ।রৌদ্র দ্রুত মেঘ কে ধরে বললো,

আহা মেঘ সাবধানে হাঁটবে তো!তুমি কতটা ব্যাথা পেলে।তোমার কিছু হলে আমার কি হবে ভেবেছো।আমি জাস্ট সহ্য করতে পারিনা তোমার কিছু হলে।রৌদ্র ছুটে গিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ এনে লাগিয়ে দিলো মেঘের পায়ে।

দিনে দিনে রৌদ্রর ভীষণ কেয়ার মেঘের মন দূর্বল হতে শুরু করেছে।

মেঘ রৌদ্রকে তৃধার হাতের “R” লেখা নিয়ে বলবে ভাবছে কিন্তু কিভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।তৃধা কি নিজের ভাইয়ের নাম ই লিখেছে নাকি অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে ছিলো।

(গল্পটা আমার মনের মতো সাজাতে পারছি না কেনো তা জানিনা।কেমন জানি খাপ ছাড়া লাগছে।যারা পুরাটা পড়েছেন কমেনটে জানাবেন আগাবো কিনা।)

চলবে,,,