রৌদ্র মেঘের আলাপণ পর্ব – ১১

0
586

#রৌদ্র মেঘের আলাপণ
#পর্ব-১১
#WriterঃMousumi Akter

সময় টা আষাঢ় মাস।আকাশে মেঘ রৌদ্দুরের খেলা চলছে প্রতিনিয়ত। আকাশের মেঘ রৌদ্দুরের সাথে সাথে আকাশের নিচে থাকা দুজন মানব -মানবী মেঘ আর রৌদ্রর দূরত্ব কমছে ধীরে ধীরে।মেঘ এখনো একটা দিন ও বাইরে যায় নি রৌদ্রর সাথে ঘুরতে।রৌদ্রর দাদার রিকুয়েষ্ট এ মেঘ বিকালে বের হয়েছে রৌদ্রর সাথে।রৌদ্র গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পরেই মেঘ সাদা শাড়ি লাল পাড় পরে বের হলো সাথে লাল ব্লাউজ।মাথায় সাদা গাজরা।ঠোঁটে গাড় লিপিস্টিক।রৌদ্র ভীষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেঘ তার সাথে বাইরে যাওয়ার জন্য এতটা সেজেছে।মেঘের তো তার সাথে যাওয়ার ই ইচ্ছা ছিলো না।তাহলে এভাবে সেজেছে যে।এমনিতেই মেঘের ভুবন ভোলানো সুন্দর চেহারা যা দেখে যেকোনো পুরুষ ই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখবে মেঘ কে।রৌদ্র তো চেয়েছিলো মেঘ এই শাড়িটা পরে তার সামনে এসে এভাবেই দাঁড়াক।দীর্ঘদিনের চাওয়ার স্বাদ বুঝি এইবার ই মিটলো রৌদ্রের।মেঘ গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে রৌদ্রর খেয়াল ই নেই।

মেঘ বুঝতে পারলো রৌদ্র অন্য কোনো ধ্যানে আছে।মেঘ রৌদ্রর হাতে একটা চিমটি কেটে বললো,

“এক্সকিউজ মি!স্যার।দরজা না খুললে ভেতরে প্রবেশ করবো কিভাবে।মেঘের চোখে মুখে ভীষণ হাসি।মেঘ কে এত খুশি দেখেও বেশ অবাক রৌদ্র।”

রৌদ্র দরজা খুলে দিলে মেঘ রৌদ্রর পাশে গিয়ে বসলো।রৌদ্র মেঘের দিকে ঝুঁকে গিয়ে গাড়ির সিট বেল্ট বেঁধে দিলো।অতঃপর গাড়ি স্টার্ট করলো।গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত ঘুরাতে ঘুরাতে বললো রৌদ্র,,

“মেঘ তোমাকে আকাশের সাদা মেঘের থেকে আজ আলাদা করা যাবে না।”

“আচ্ছা তাইনা?”

“হুম!এভাবেই দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো অনেকদিন যাবত ধরে।শাড়িটা বেশ যত্নে রেখেছিলাম এতদিন।একটা কথা ভীষণ জানতে ইচ্ছা করছে।”

“হুম বলুন।”

“আজ প্রথমবার তুমি আমার সাথে বাইরে যাচ্ছো।নিজের ইচ্ছায় সেজেছো, আমার পাশে এসে বসেছো, আবার চোখে মুখে আনন্দ কেউ কি তোমায় জোর করেছে না মানে দিব্বি টিব্বি দিয়েছে।না হলে এই কাঁলাচানের পাশে তো বসে হাসার কথা নয় তোমার।ভাবছি প্রসাধনী ব্যাবহার করবো মেঘ।না হলে প্লাস্টিক সার্জারী করাবো।তবুও সাদা হতে চাই।তাহলে যদি সে আমায় একটু দেখে,আমার প্রেমে পড়ে,আমায় নিয়ে ভাবে।”

মেঘ ফিক করে হেসে দিলো।

”হাসছো যে।”

“নিজেই নিজেকে কাঁলাচান বলছেন?”

হুম যা সত্য তাই।এইজন্য তো এক নারীর ভালবাসা পেলাম না।”

“শ্যামসুন্দর পুরুষ রা যে মেয়েদের কাছে আকর্ষনীয় হয় সেটা কি জানেন।”

“নাতো।”

“মিথ্যা বলছেন কেনো? আপনার জন্য তো কত মেয়ে পাগল ছিলো।”

”হয়তো ছিলো।কিন্তু যে নারীর জন্য আমি পাগল ছিলাম সে নারী আমাকে ভালবাসে নি।আমাকে দুনিয়ার সবাই ভালবাসলেও যাকে আমি চেয়েছি সে ভালবাসে নি।”

–এমন সময় গাড়িটা এসে থামলো কদম গাছের নিচে।বিশাল বড় পুকুর তার চার পাশ জুড়ে কত গুলো কদম গাছ।দুজনেই গাড়ি থেকে নামলো।কদম ফুল মেঘের ভীষণ প্রিয়।প্রিয় মানে খুব প্রিয়।এই ফুলের জন্যই রৌদ্রর চোখে পড়েছিলো সে।মেঘ গাড়ি থেকে নেমে ফুল পাড়ার চেষ্টা করছে লাফিয়ে লাফিয়ে।শুভ্র রঙে রাঙানো মেঘের এরুপ সুন্দর রুপে পলকহীন ভাবে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে রৌদ্র।এই সৌন্দর্য ধরে রাখতে রৌদ্র ভিডিও করছে মেঘ কে।মেঘ মন খুলে হাসছে।লাফিয়েই যাচ্ছে কিন্তু ফুল নাগাল পাচ্ছে না।রৌদ্র এগিয়ে গিয়ে মেঘ কে উঁচু করে ধরলো।রৌদ্রর এমন স্পর্শতে মেঘে শরীর কেঁপে উঠলো।আকস্মিক এইভাবে রৌদ্র তাকে উঁচু করে ধরবে ভাবতে পারে নি মেঘ।ছোট বেলায় রৌদ্র তাকে এইভাবে অনেক বার উঁচু করে তুলে ধরতো।নিমিষেই মনে পড়লো সেই মিষ্টি অতীতের কথা।

মেঘের ফুল ছেড়া হয়ে গেলে উঁচু করে রেখেই রৌদ্র বললো,

“মেঘ মনে আছে এমন কত ধরেছি তোমাকে।আর তুমি স্কুলের এক ঘন্টা আগে এসে দাঁড়াতে আমার জন্য।আমি এক গুচ্ছ কদম আর অনেক গুলো বাদাম কিনে অপেক্ষা করতাম।তোমাকে বাদামের খোসা ছড়িয়ে দিতাম আর তুমি খেতে।কি কিউট লাগতো তোমায়।কত ভিজেছো আমার সাথে তুমি এই বরষায়।”

“মনে তো আরো কত কিছু আছে।বন্ধবীর লাভ লেটার টা আপনাকে দিতেই আমাকে ফুল দেন নি একদিন।”

–রৌদ্র হাসলো।

এরই মাঝে এক ঝাঁক বৃষ্টি এলো।হেলে যাওয়া সূর্যের আলো এখনো আছে।এই রোদের মাঝেই বৃষ্টি হচ্ছে।

মেঘ বললো,

“দেখেছেন রোদ বৃষ্টি একসাথে হচ্ছে।”

“রৌদ্র মেঘ যে একসাথে আছে তাই।”

“হুম সেটা তো বুঝলাম বাট আমাকে নামাবেন না আপনি।হাতে ব্যাথা পাচ্ছেন আমি বেশ বুঝতে পারছি।”

রৌদ্র তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।

মেঘ বললো,

“মানুষ কি ভাববে দেখলে।নামান বলছি।আর কি দেখছেন এইভাবে তাকিয়ে।এইভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে আমার লজ্জা করে।”

“মেঘ তুমি এত সুন্দর কেনো বলতে পারো।আমি তো চোখ সরাতে পারিনা।পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর নারী আমার বউ এখন। ভাবতেই আমার ভীষণ ভাললাগে।এই সুন্দর নারী কি আমায় ভালবাসবে না। আমায় কি কখনোই ভালবাসবে না মেঘ।”

মেঘ নিচে নেমে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।

“কসম লাগে মেঘ মুখ ফিরিয়ে নিও না কিছু বলো।তোমার মুখে ভালবাসি কথাটা শুনেই মৃত্যু হোক আমার।সে মরণ মেনে নিবো হাসিমুখে মেঘ বালিকা তবুও বলো ভালবাসি প্লিজ বলো।”

মেঘ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,,

“আমি কি আদেও আপনার যোগ্য রৌদ্র।আপনি কেনো আমাকে ভালবাসেন বলতে পারেন।আপনি একটা অবিবাহিত ছেলে আর আমি একটা বিবাহিতা নারী তবুও বিধবা।আমার শরীর ছুয়েছে অন্য পুরুষ রৌদ্র।কি আছে আপনাকে দেবার মতো।আপনি অনেক ভাল মেয়ে ডিজার্ভ করেন।আমার সাথে জড়িয়ে নিজের জীবন কলঙ্কিত করবেন না প্লিজ।”

রৌদ্র নিঃশব্দে বেশ কিছু সময় হেসে বললো,,

”আমাকে এইভাবে অপমান না করলেও তো পারতে মেঘবালিকা।তুমি এমন ভাবে বলছো যেনো তোমার শরীর ভালবেসেছি আমি।শরীর তো পরিতালয়ে অভাব নেই মেঘ।কিন্তু তোমার ভীষণ অভাব এই জীবনে।আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমায় মায়ায় ভয়ংকর ভাবে আবদ্ধ আমি।এ মায়ার জাল কখনো কেটে বেরোনো সম্ভব নয়। আমায় ভাল না বাসো সমস্যা নেই তবুও এটা বলো না কখনো যে তুমি অপবিত্র কেউ ছুঁয়েছে তোমায়।তোমাকে নিয়ে এমন কিছু তো ভাবতেও পারিনা আমি।”

“আপনি সত্যি অনেক উদার রৌদ্র।আফসোস আপনার উত্তম প্রতিদান আমি কখনো দিতে পারলাম না।”

সেদিন রৌদ্রর আলমারি খুলে মেঘ একটা ডায়রি পেয়েছিলো।ডায়রি জুড়ে লেখা মেঘ কে নিয়ে কতশত লেখা।সেখানে একটা পৃষ্টায় লেখা ছিলো।”

–খুব ইচ্ছা ছিলো কোনো একদিন মাথায় গাজরা পরে,লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজবে আমার সাথে।তোমার চোখে থাকবে কাজল, ঠোঁটে থাকবএ গাড় লাল লিপিস্টিক।শাড়িটা আজ কত গুলো বছর কিনে রেখেছি তোমাকে তোমাকে এ শড়িতে দেখা এ জন্মে আর হবেনা হয়তো।

তাইতো মেঘ আজ সেই শাড়িটা পরেছে।একটা মানুষের এটুকু চাওয়ার মূল্য দিতে সায় দিয়েছে মেঘের মন।

—————————————————-

মেঘ কয়েকদিন যাবৎ ভেবেই যাচ্ছে রৌদ্র কে তৃধার হাতের লেখা লেটার টার কথা জানাবে।কিন্তু কিভাবে বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। রৌদ্র ডায়নিং টেবিলে বসে চা খাচ্ছে আর একটা ফাইল দেখছে।ডায়নিং এ তখন কেউ নেই।মেঘ রৌদ্রর পাশে আরেক টা চেয়ারে গিয়ে বসলো।বার বার ঠোঁট নাড়াচ্ছে কিছু বলবে।কিন্তু রৌদ্র তার দিকে তাকাচ্ছেই না।না তাকালে বলতেও পারছে না।কারণ রৌদ্রর সাথে সে এতটা ইজি না যে ডেকে কিছু বলবে।রৌদ্র ফাইল দেখছে কপালের চামড়া কুচকে আছে।

ফাইলের দিকে মনোযোগ রেখেই বললো,

–কিছু বলবে মেঘ?

–মেঘ বেশ অবাক হয়ে রৌদ্রের দিকে তাকালো।আর ভাবলো রৌদ্র তার দিকে না তাকিয়ে কিভাবে বুঝলো সে কিছু বলতে চাই।কিওরিসিটি আর প্রকাশ করলো না।শাঁড়ীর আঁচল কচলাচ্ছে মেঘ হাতের মুঠোয় নিয়ে।তার আনিত প্রশ্নে রৌদ্র আবার মাইন্ড না করে।

–রৌদ্র আবার বললো,এত না ভেবে বলে ফেলো কি বলতে চাও।

এবার মেঘ বললো,

–আচ্ছা তৃধার হাতে একটা কাটা দাগ আছে খেয়াল করেছেন।হাত কেটে R লেখা আছে।আমার মনে হয় এই নামের কোনো ছেলের সাথেই তৃধার রিলেশন ছিলো।আমরা যদি তৃধার আশেপাশের সব R নামের ছেলেদের খেয়াল করি তাহলে তো কিছু খুজে পেলেও পেতে পারি।দেখুন আমি নিশ্চিত সে যেই হোক তৃধার ভীষণ পরিচিত কেউ।

–রৌদ্র এবার হাতের ফাইল টা বন্ধ করে রাখলো।মেঘের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকালো।মেঘের লাল হলুদ ছাপার হলুদ সুতি শাড়ি কুচি দিয়ে পরা।মেঘের ফর্সা শরীরে ভীষণ সুন্দর মানিয়েছে।রৌদ্র চোখ ফেরাতে পারছে।রৌদ্র কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,এই শাড়িটা তো আমি কিনিনি।কোথায় পেলে মেঘবালিকা।

চলবে,,,,,