রৌদ্র মেঘের আলাপন পর্ব – ০১

0
870

#রৌদ্র মেঘের আলাপন
#পর্ব-১
#WriterঃMousumi Akter

–নিজের ননদের জন্য ঠিক করা পাত্রের জায়গা কলেজের বহুআলোচিত সিনিয়র ভাই কে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলো মেঘ।মেঘ কখনো ভাবতে পারে নি এতদিন পরে আবার এই মানুষ টার সাথে দেখা হবে।মেঘ কখনো চাই ও নি তার সাথে দেখা হোক,দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়িয়েছে এই মানুষ টার থেকে।মেঘের সামনে বসে আছে কাঙ্ক্ষিত সেই মানুষ টা যার সাথে আজ তার ননদের পাকা কথা হওয়ার কথা।কিন্তু মানুষ টাকে দেখেই মেঘের সমস্ত শরীরে কম্পণ শুরু হলো।ভেতরে শুরু হলো প্রচন্ড তুফান।আবার কোন বিপদের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে মেঘ।মেঘের সামনে বসে থাকা মানুষ টা মানেই মেঘের জীবনের আতঙ্ক।আবার কোন ঝড় নিয়ে এসেছে সে মেঘের জীবনে।সে কি ইচ্ছা করেই খুজতে খুজতে মেঘের জীবনে আবার ঝড় তুলতে এসেছে।নাকি নিয়তি আবার তাদের দুজন কে এক জায়গা করেছে,এটা কি নিয়তির খেলা।ভাগ্য মেঘ কে আর কোথায় নিয়ে যাবে কে জানে।মেঘ মুখে শাড়ির আঁচল টেনে ঢেকে দিলো।মেঘের সামনে বসে থাকা মানুষ টার নাম রৌদ্রুপ আহমেদ রৌদ্র।মেঘের সামনে সামনে বসে আছে শ্যামবর্ণের অধিকারী লম্বা সুঠাম দেহের অধিকারী রৌদ্র।গায়ের বর্ণ অতিমাত্রায় কালো ও না সাদা ও না কালো সাদার মাঝামাঝি ছেলে মানুষের গায়ের এরুপ বর্ণেই বোধহয় বেশী পারফেক্ট লাগে। চোখের মনি সম্পূর্ণ কালো নয়। সামনের চুল কপালে পড়ে আছে অসম্ভব সিল্কি তার চুল, জোড়া ভ্রু, সরু নাক। তার মুখের দিকে তাকালেই অন্যরকম এক ভাল লাগার কাজ করে বিশেষ করে তার কপালে পড়ে থাকা চুল গুলোর জন্য।

রৌদ্র গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।এই সেই মায়াবী চোখ যে চোখের মায়ায় পড়েছিলো রৌদ্র।জীবনের একটা সময় ভীষণ ভালবেসেছিলো মেঘ কে।কিন্তু মেঘ সে ভালবাসার সায় কখনোই দেয় নি,কারণ মেঘ এনগেজড ছিলো মাহিম এর সাথে।মেঘের সৌন্দর্যের বর্ণনা এমনি দিয়ে শেষ করা যাবে না।টানা চোখ,টানা নাক,কোমর পর্যন্ত চুল দেখতে কোনো পরীর থেকে কম হবে না।বাড়ির সবাই যেখানে বিয়ে নিয়ে আলোচনা করতে ব্যাস্ত সেখানে রৌদ্রর দুটি চোখ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।

–মেঘের শ্বশুর আহসান আহমেদ বললেন, তাহলে আগামি সপ্তাহে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করি।আজ আংটি বদল হোক দুজনের।

–এরই মাঝে মেঘের শ্বাশুড়ি ছোট করে মেঘ কে বললো, তুই এখানে কেনো এসছিস?এখানে কি তোর।আমি বলেছিলাম না কোনো শুভ অনুষ্টানে তুই আসবি না অপয়া।

–মেঘ নরম কন্ঠে বললো,মা মাহি ডেকেছিলো আমাকে।

–মাহি না হয় কিছু বোঝে না, তুই কি কিছুই বুঝিস না।যা এখান থেকে।

–মেঘের শ্বাশুড়ির কথা তখন স্পষ্ট রৌদ্রের কানে পৌছালো।

–তখন রৌদ্র উঠে দাঁড়িয়ে বললো,আমি একটু মাহির সাথে আলাদা কথা বলতে চাই যদি কারো আপত্তি না থাকে।বলেই রুদ্র কপালের চামড়া ভাজ করে উপস্হিত সবার দিকে তাকালো।

–আহসান আহমেদ বললেন,বেশ তো বাবা যাও না কথা বলো। আজ বাদে কাল তোমাদের বিয়ে আলাদা কথা বলতেই পারো কোনো সমস্যা নেই।

–রৌদ্র বললো,ওকে ধন্যবাদ।

–আহসান আহমেদ বললো,মাহির ঘরে যাও তোমরা গিয়ে কথা বলে নাও আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি।

–সো সরি আমি একা মাহির সাথে কথা বলতে চাই না,সাথে কেউ আসলে ভালো হয়।কজ আমাদের এখনো বিয়ে হয় নি।মাহির আনইজি লাগতে পারে।

–মাহির মা বললো,আমি মা হয়ে কি যেতে পারি বাবা।

–আপনি কেনো আসবেন আপনার বৌমা আছে না।উনি আসলেই হবে।

–মাহির মা বাধ্য হয়েই মেঘ কে ডেকে দিলো।

–মেঘের যেতে আপত্তি থাকলেও শ্বাশুড়ির ধমকানিতে যেতে বাধ্য হলো।

–মাহির রুমে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে স্ট্রং হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুৌদ্র।মেঘ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।রৌদ্র বললো,এক্সকিউজ মি!আপনি ভেতরে আসুন।বাইরে থাকলে আনইজি লাগছে আমার।রৌদ্রের এরুপ আহবানে ভয়ে কাঁপছে মেঘ।মেঘের চোখে মুখে ভয় দেখে রৌদ্র বললো,আপনি কি আমাকে ভয় পাচ্ছেন?আপনাকে এমন আনইজি লাগছে কেনো মিসেস মেঘ।
–মাহি বললো,আপনি ভাবির নাম ও জানেন।
–খুব অদ্ভুত কথা বললেন না মিস মাহি।আমার বিয়ের কথা হচ্ছে সে বাড়ির একমাত্র বৌমার নাম জানবো না।
–ওহ আচ্ছা!আসলে ভাবির অনেক লজ্জা তো তাই এমন করছে।
–ওকে আপনাকে আমি প্রশ্ন করতে পারি মাহি।

–জ্বী করুণ।

–আপনারা কয় ভাই-বোন

–দুই ভাই-বোন

–আপনার ভাই কোথায়?

–ভাইয়া তো আর নেই।

–নেই মানে।

–দু’বছর আগে ভাইয়া খুন হয়েছে বিদেশে।কেউ বা কারা যেনো খুন করেছে।

–ওহ মাই গড!বলেই রৌদ্র মেঘের দিকে তাকালো।মেঘ তার মানে বিধবা।এই বয়সে মেঘ বিধবা।মেঘের জীবন এ বয়সেই এমন এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।রৌদ্র আসলে এই ফ্যামিলির কিছুই জানে না।মা বাবার জোরাজোরিতে পাত্রী দেখতে এসছে।মেঘের নাম সে আগেই জানে এজন্য মাহিকে বলেছে সে এ ফ্যামিলর সবার নাম জানে।

–কিভাবে খুন হলো,কিছু কি জানেন?

–মেঘের দু’চোখ দিয়ে পানি পড়ছে?এই বয়সে স্বামিকে হারিয়ে বেঁচে থেকেও একটা মৃত মানুষের মতো জীবন কাটাচ্ছে মেঘ।

–মাহী একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো সে অনেক কথা, পরে জানতে পারবেন।

–রৌদ্র মাহিকে বললো আমার আর কিছুই জানার নেই।আপনি কি কিছু জানতে চান।

–আমি নতুন করে আর কি বা জানবো।

–ওকে ফাইন আমি বাড়ি গিয়ে যা জানানোর জানাবো।আমার গুরুত্বপূর্ণ কল এসেছে।রৌদ্র তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো ফোনের দিকে মনোযোগ দিতে দিতে।রৌদ্র নিজের মা বাবাকে রেখেই বেরিয়ে গেলো কারণ তার অফিসের একটা ইমারজেন্সি কল এসছে।

–রৌদ্র বাড়িতে গিয়ে জানিয়ে দিলো সে এই বিয়েটা করতে পারবে না।রৌদ্রের মা বাবা ও অবাক হয়ে গেলো ছেলের মুখে এমন কথা শুনে।রৌদ্রের চোখে ভাষছে সাদা শাড়ি পরা মেঘের দুঃখি দুঃখি মুখ টা।

মেয়ের বিয়ে ভাঙার সমস্ত দায় নিজের ছেলের বৌ এর কাঁধে দিয়ে দিলেন মেঘের শ্বাশুড়ি।

–“ওর মতো অলুক্ষুণে মেয়েকে শুভ কাজে রাখলে সেকাজ তো অশুভ হবেই তাইনা মাহির বাবা।বিয়ের দু’মাসের মাথায় নিজের স্বামি কে খেয়েছে।এখন আমার এই পরিবার কে খাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।আমি বার বার বলেছিলাম ও বিধবা কোনো শুভ অনুষ্টানে রেখো না।গেলো তো আমার মেয়ের বিয়েটা ভেঙে।আমার ছেলেকে খেয়েছে এখন আমার মেয়েকে খেলেই ওর শান্তি তারপর একে একে আমাদের খেয়ে ফেলিস।আমার সংসারে যেদিন থেকে এসেছে কিছু না কিছু খারাপ ও করেই ছেড়েছে।ওর জন্য আজ আমাদের সংসার টা ছারখার।আমার একমাত্র ছেলে আজ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।কোথা থেকে এক চরিত্রহীন মেয়েকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলে। বিয়ের আগেই ছিলো অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক।ওর আগের প্রেমিক আমার ছেলেকে খুন করেছে।ওই মেয়ে আমার বাড়ি থেকে দূর না করে কেনো রেখেছো তুমি।”

আহসান আহমেদ বললেন,আহা মাহির মা চুপ করোনা।এখানে মেঘের কি দোষ। মেঘ কে আর কত দোষারোপ করবে তুমি।বিয়ে কেনো ভেঙেছে আগে শুনে দেখি।

শ্বাশুড়ির এমন কুমন্তব্য শুনে স্তম্ভিত হয়ে যায় মেঘ।এটা আজ নতুন না, নিজের স্বামির মৃত্যুর পর রোজ শ্বশুর বাড়িতে এমন ই বাজে কথা শোনা লাগে তাকে।মেঘ এই আহসান মঞ্জিল এর একমাত্র পুত্রবধু।ইন্টার পাশ করা মাত্রই বাবা তার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়।বিয়ের পরে দু’মাস খুব ভালোই ছিলো মেঘ।কিন্ত তার স্বামির মৃত্যুর পর থেকে প্রতিটা দিন কেটেছে বিষাদময়।তার স্বামির মৃত্যুর জন্য তাকেই দায়ী করা হয় প্রতিনিয়ত।

চলবে,,