রৌদ্র মেঘের আলাপন পর্ব – ১৪

0
472

#রৌদ্র মেঘের আলাপন
#পর্ব-১৪
#WriterঃMousumi Akter

সমস্ত বাড়ির মানুষ যেখানে দীর্ঘদিন পরে আনন্দে আত্মহারা ঠিক তখন ই দরজার কলিং বেল লাগাতার বেজেই যাচ্ছিলো।আনোয়ার হোসেন দরজা খুলতেই মেঘ চমকে গেলো।তার আগের শ্বশুর বাড়ির সবাই এসছে।আহসান আহমেদ,তার ওয়াইফ মাহি,মেঘের বাবা ও এসছে সাথে।নিমিষেই কালো হয়ে গেলো মেঘের মুখ।কি উত্তর দিবে আজ মেঘ তাদের।মাহির ঠিক হওয়া পাত্রের সাথে আজ মেঘের বিয়ে হয়েছে।এর আগে অনেকবার মেঘ চেয়েছে তারা কেউ আসুক আর মেঘ কে নিয়ে যাক।কিন্তু মেঘ আজ বিষন্ন একটুও খুশিনা নিজের পরিবার কে দেখে।অথচ মেঘের খুশি হওয়ার কথা ছিলো।মেঘের অজান্তে বদলে গিয়েছে মেঘের মন।কবে,কখন কিভাবে কিছুই জানেনা মেঘ।এর কোনো উত্তর জানা নেই মেঘের।একটা অচেনা অজানা ফ্যামিলির ভালবাসা পেয়ে মেঘ মিশে গিয়েছে তাদের সাথে।

রৌদ্র মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে এক নজরে।রৌদ্র বেশ বুঝতে পারছে মেঘের প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে।তাদের এমন উপস্হিতি মেঘ হয়তো আশা করে নি।

আনোয়ার হোসেন মুখে অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি নিয়ে বললো,

আরে আপনারা আসুন বসুন ভাই।কারো মুখে কোনো কথা নেই সবাই তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।

আনোয়ার হোসেন মেঘের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

“উনাকে ঠিক চিনলাম নাতো।”

“বাবা উনি আমার বাবা।”

মেঘের মুখে বাবা ডাক শুনে মাহি,মাহির মা, মাহির বাবা খুব আশ্চর্যজনক ভাবে তাকালো।তার মানে তারা যেটা শুনেছে সেটা সত্য।মেঘ এখন রৌদ্রর বাবাকে বাবা ডাকছে।তার মানে মেঘের এদের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

মাহির মা বেশ কটমট করে মেঘের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,

“কি বললে?উনাকে বাবা ডাকলে তুমি।উনি কোন জন্মের বাবা হয় তোমার মা।আমার সংসার টা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে এসে এখানে সংসার পেতে নিয়েছো।আমার ছেলে মেয়ের জীবন শেষ করে কালনা*গিনী এখানে নিশ্চিন্তে সংসার করছে।”

মেঘ মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।সাথে সাথেই রৌদ্র জ্বলে উঠলো আগুনের মতো।রাগে চোখ ছুটে যাচ্ছে তার।চোখ ছুটে যাচ্ছে, ভয়ানক ভাবে রেগে তেড়ে যেতেই রাজন হাত চেপে ধরলো রৌদ্রের।রাজন জানে রৌদ্র মেঘ কে কত ভালবাসে।কেউ কিছু বললে খারাপ কিছু করে বসবে।রাজন রৌদ্রকে আটকে বললো,

“আন্টি এটা একটা ভদ্রলোকের বাড়ি।আপনারা এসছেন বসুন। কোনো কিছু বলার থাকলে ভদ্রভাবে মুখের ভাষা সংযত করে বলুন আন্টি।ভাবিকে এভাবে আক্রমণ করে কথা বলবেন না প্লিজ।তাহলে আপনাদের সম্মান করতে পারবো না।”

“ভদ্রলোকের বাড়ি, এটা কি ভদ্রলোকের বাড়ি।ভদ্রলোক কাকে বলে জানে এরা।যে বাড়ির ছেলে অন্য বাড়ির বউ ভাগিয়ে নিয়ে আসতে পারে সে বাড়ি কিসের ভদ্রলোক বসবাস করে।এই বাড়ির ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আমার বাড়ির বৌমা কে নিয়ে পালিয়ে এসছে।”

মাহির বাবা আহসান আহমেদ কিছুক্ষণ গম্ভীর মুডে থেকে বললেন,

“আপনাদের ভদ্রলোক ভেবেছিলাম আমরা।কিন্তু আপনাদের পরিবারের এমন জঘন্য রিতীনিতী আগে জানতাম না। ছিঃআপনাদের ছেলে কিনা আমাদের মেয়েকে ঠকিয়ে আমার ই পুত্রবধুকে বিয়ে করেছে।আপনারা আবার সেই বিয়ে মেনেও নিয়েছেন।আপনাদের বিবেক এ একবার ও বাঁধলো না।”

রৌদ্রের বাবা বললো,

“আপনাদের ভুল হচ্ছে।আপনারা ভুল বুঝছেন।”

মাহির মা আবার রেগে গিয়ে বললো,

“ভুল কিসের ভুল।অসভ্য পরিবার একটা।”

রৌদ্র এবার চোয়াল শক্ত করে বললো,

“বেরিয়ে যান এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে।আমার ধৈর্যর বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে কিন্তু।কি আপনাদের বাড়ির বৌমা বৌমা করছেন।বাড়ির বউ এর সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয় সেটা আমার মা বাবার থেকে শিখে যাবেন।দিনের পর দিন অত্যাচার করেছেন মেঘ কে।মেঘ চুপচাপ সহ্য করেছে সব।মেঘ এখন আপনাদের বাড়ির বউ না ও এখন রৌদ্রুপ সাইফ এর ওয়াইফ।তাই আগের মতো বিহ্যাভ করা বন্ধ রেখে বেরিয়ে যান।”

মেঘের বাবা রাগে কাঁপতে কাঁপতে মেঘের কাছে গিয়ে গায়ে হাত তুলতে যেতেই রৌদ্র হাত ধরে ফেললো।রৌদ্র আর মেঘের বাবা দুজনে মুখোমুখি, চোখে চোখ পড়েছে দুজনের।দুজনের চোখ দিয়েই অগ্নি ঝরছে।

রৌদ্র চোয়াল শক্ত করে বললো,

“নো,নো আঙ্কেল।আমার সামনে আমার ওয়াইফ এর গায়ে হাত তুলবেন সেটা তো আমি হতে দিবো না।”

“রাস্কেল ছাড়ো আমার হাত।ও আমার মেয়ে সেটা ভুলে যেও না।বিয়ের আগে থেকে আমার মেয়ের সংসারে আগুন জ্বালিয়েছো তুমি।”

“নিজেকে কি বাবা বলে দাবি করছেন?আপনি কি বাবা হওয়ার যোগ্য।”

“তুমি আগেও বেয়াদব ছিলে, এখনো বেয়াদব ই আছো।বিয়ের আগে আমার মেয়ের বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করেছো।এর এখনো আমার মেয়ের পিছে লেগে আছো।”

“রৌদ্র বাঁকা হাসি দিলো।সিরিয়াসলি আংকেল।মেয়েকে খুব ভালবাসেন বুঝি।এতই যখন ভালবাসেন মেয়ে বিঁধবা হওয়ার পরেও শ্বশুর বাড়িতে ফেলে রেখেছিলেন কেনো?কোথাও দেখেছেন এভাবে বিধবা মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি অত্যাচারিত হতে দেখে চুপ থাকতে।”

“আমার তো এখন মনে হচ্ছে মেঘের শ্বাশুড়ি যেটা বলে ঠিক বলে।মেঘের কোনো প্রেমিক নাকি মাহিম কে খু*ন করেছে।আমার মেয়ের তো তুমি ছাড়া কারো সাথে কোনো সম্পর্ক ছিলো না।তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করবে বলে প্লান করে আমার জামাই কে খু*ন করেছো।হ্যাঁ তুমি সেই খু*নী।”

মেঘ চোখের পানি মুছে বললো,

“বাবা কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে।রৌদ্রকে নিয়ে প্লিজ আর একটাও বাজে কথা বলবে না।”

মেঘের কথায় রৌদ্র ভীষণ অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকালো।মেঘ তাকে সাপোর্ট করছে।এইদিকে মাহির মা আর বাবা আরো বেশী অবাক।মাহির মা বেশ অবাক হয়েই মেঘের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

“তার মানে এই রৌদ্রই সেই ছেলে।যে বিয়ের আগে মাহিম কে ফোন করে বিয়ে ভাঙতে বলেছিলো।আমার ছেলেকে খু*ন করার হুমকি দিয়েছিলো।প্রায় ফোনে হুমকি দিতো।আমার ছেলে বেশ কয়েক বার আমাদের শুনিয়েছে।আমার ছেলের খ*নি তাহলে এই রৌদ্র।যার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।মাহির বাবা পুলিশ কে ফোন দাও এই সেই খু*নী।”

মেঘ বললো,

“দেখুন আপনার ভুল হচ্ছে।আপনার ছেলে বিদেশ গিয়ে খু*ন হয়েছে আর রৌদ্র তো দেশে থাকে।”

“তাহলে কে খু*ন করেছে আমার ছেলেকে জানতে চাই।কে ওই একটায় মাত্র ছেলে আমার।”

মাহি রৌদ্রর সামনে এসে বললো,

“রৌদ্র কেনো আমাকে ঠকালেন।কেনো বলুন।কি দোষ ছিলো আমার।কি এমন আছে মেঘের মাঝে যা আমার মাঝে নেই।”

“আপনার সাথে আজ সেকেন্ড টাইম কথা হচ্ছে আর আমি ঠকিয়েছি আপনাকে ভেরি ফানি।কোনো কমিটমেন্ট আমি করিনি আপনার সাথে।”

মাহি মেঘের সামনে গিয়ে বললো,

“ভাবি বলতে ঘৃনা লাগছে তোমাকে।আমার জীবন টা দিলে তো শেষ করে।বাই এনি চান্স এ যদি আমার ভাইয়ার খু*নি হয় তাহলে কি করবে তুমি।তোমার এক স্বামি আরেক স্বামির খু*নী।কি করবে এর সাথে সংসার করবে নাকি ভাইয়ার জন্য জাস্টিস চাইবে।তুমি না ভাইয়াকে ভালবাসতে।এত দ্রুত ভুলে গেলে।”

“আমি তোমার ভাইয়াকে ভালবাসলেও সে আমাকে কখনো ভালোবেসেছে কিনা জানিনা।তোমার ভাইয়া আমার মনের মাঝে সম্মানের জায়গা আজ ও আছে।আর সারাজীবন থাকবে।”

তৃধা এগিয়ে এসে বললো”,এক্সকিউজ মি!মেঘ আমার মিষ্টি ভাবি।তোমার ঘৃনা লাগাতে ভাবির কিছুই যায় আসে না।”

চলবে??