রৌদ্র মেঘের আলাপন পর্ব – ১৫

0
396

#রৌদ্র মেঘের আলাপন
#পর্ব-১৫
#Writer Mousumi Akter

মাহি তৃধার দিকে আক্রমনাত্মক কথা ছুড়ে বললো,

“তুমি না সেই মেয়ে যে ধ*র্ষিত হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলে।লজ্জা করে না তোমার মুখ উঁচু করে কথা বলতে।এমন পরিবারের মেয়ের অবস্থা তো এমন হবেই।চোরের মায়ের বড় গলা।নিজের তো কোনদিন বিয়েই হবে না এইজন্য অন্যর বিয়ে ভাঙার কষ্ট তুমি কি বুঝবে।”

মেঘ এগিয়ে এসে মাহির গালে থাপ্পড় মেরে বললো,

“খবরদার মাহি।একটা বাজে কথা যদি তৃধাকে বলো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।অনেক হয়েছে মাহি আর নয়।তোমরা এ দু’বছরে অনেক বলেছো আমাকে আমি সব সহ্য করেছি।কিন্তু আর নয়।এটা আমার পরিবার এখানের কাউকে কিছু বললে আমি ছেড়ে কথা বলবো না।কি বলছিলে ধ*র্ষণ হয়েছে তৃধা।এই পাপ টা যে করেছে না তাকে ঘৃণা করো তৃধাকে নয়।তৃধার বিয়ে হবে, কেউ যোগ্য সম্মান দিয়েই বিয়ে করবে।”

রাজন এগিয়ে এসে বললো,

“মিস মাহি!আপনি কি রিয়েলি মেয়ে।এমন ঘটনা যদি আপনার সাথে ঘটতো তাহলে কি করতেন।এই সেইম কথা ই বলতেন।তৃধা যদি আমাকে এক্সেপ্ট করে এখনি বিয়ে করবো আমি যোগ্য সম্মান দিয়ে।আপনাকে যে ছেলে বিয়ে করবে তার জন্য আফসোস হচ্ছে বড্ড।রৌদ্র তো বেঁচে গিয়েছে।”
রৌদ্র বললো,

“আপনাকে আমি কেনো বিয়ে করিনি নিজেই দেখুন।দেখুন মেঘ আর আপনার তফাত।এতদিন মেঘের সাথে থেকেও কিছু শিখতে পারেন নি ব্যাড লাক ফর ইউ।”

মাহি আর তার পরিবার অগ্নিচোখে তাকালো।তাদের চোখে মুখে অগ্নি ঝরছে।তাদের ইচ্ছা ছিলো মেঘ কে এখান থেকে নিয়ে যাবে কিন্তু এখানে এসে পরিবেশ আলাদা দেখে তাদের ভেতর হিংসা আরো বেড়ে গেলো।

মেঘের বাবা বললো,

“অনেক হয়েছে এসব নাটক।মেঘ আমার সাথে চলো। এসো আমার সাথে।”

রৌদ্র হাত চেপে ধরলো মেঘের।

মেঘ দাঁড়িয়ে আছে স্ট্রং হয়ে।মেঘের বাবা বলছেন,”মেঘ এসো বলছি।”

মেঘে নিজের হাত টা ছুটিয়ে বললো,

“আমি যাবো না বাবা।এভাবে আরো দু’বছর আগে তোমার নেওয়া উচিত ছিলো।যখন আমার তোমাকে প্রয়োজন ছিলো তুমি আসো নি।বরাবর আমাকে অপয়া বলে দূরে ঠেলেছো আজ কেনো এসছো।”

মাহির বাবা বললো মেঘের বাবাকে,

” ভাই আমাদের কাছে খবর আছে মেঘ কে জোর পূর্বক বিয়ে করেছে এই ছেলে।পুলিশ কে খবর দিন।দুদিন জেলে থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

মেঘের বাবা মেঘ কে বললো,

“মেঘ আসবে নাকি পুলিশ ডাকতে হবে।”

“তোমার যা ইচ্ছা করো আমি যাবোনা।”

মেঘের বাবা আর মাহির পরিবার আগে থেকে পুলিশে ইনফর্ম করেই এসছে।এরই মাঝে পুলিশ এসে উপস্হিত।মেঘের বাবা ইশারা করে দেখালো রৌদ্রুপ কে।পুলিশ কে বুঝালো রৌদ্রকে এরেস্ট করার জন্য।

পুলিশ রৌদ্রকে বললো,

“মিষ্টার রৌদ্রুপ সাইফ রৌদ্র আপনার বিরুদ্ধে মেহেভীন বিনতে মেঘের বাবা অভিযোগ তুলেছে।আপনি তার মেয়েকে জোর জবরদস্হি বিয়ে করেছেন।এটা একটা ক্রাইম জানেন।তাই আপনাকে এরেস্ট করা হচ্ছে।”

হাত কড়া লাগানোর আগে মেঘ বললো,

“দাঁড়ান অফিসার।আপনার কাছে কোনো সাক্ষী আছে।”

“আপনার বাবা নিজে অভিযোগ করেছেন।”

“আমার ১৮+ বয়স।তাই নিজের ডিসিশন নিজেই নিতে পারি।আমি নিজের ইচ্ছায় উনাকে বিয়ে করেছি।”

“কিন্তু কেনো?”

“কারণ উনাকে আমি ভালবাসি তাই।উনি আর আমি দুজন দুজন কে ভালবাসি।ভীষণ ভালবসি আমি আমার হাজবেন্ড কে।আমার নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারি।”

অফিসার মেঘের বাবাকে খানিক টা ধমকে বেরিয়ে গেলো।মেঘের বাবা বললো,

“মেঘ মনে রাখিস সে তোকে বিধবা করেছে তার সাথেই সংসার করছিস।একদিন পস্তাবি।”

বাসা থেকে বেরোনোর সময় মাহির মা শাষিয়ে গেলো,

“উপযুক্ত প্রমান নিয়ে রৌদ্র তোকে শাস্তি দিবোই।”

সবাই চলে গেলে মেঘ এক দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে সুয়ে কাঁদছে।কেনো তার জীবন টা এমন অগোছালো হলো।মেঘ যখন ভীষণ কাঁন্নায় ভেঙে পড়েছে ঠিক তখন ই দরজায় কেউ কড়া নাড়লো।মেঘ কোনো উত্তর না দেওয়ায় রৌদ্র ভেতরে প্রবেশ করলো।মেঘ কি তবে রৌদ্রকে ঘাতক ভেবে কাঁদছে।রৌদ্রর মনের মাঝে অশান্তি হচ্ছে।কোনদিন কি মেঘের ভালবাসা পাবেনা।

রৌদ্র মাথা নিচু করছে বলছে,

“মেঘ,তুমি কাঁদছো কেনো?”

মেঘ রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,

“জানিনা আমি।আমার ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে
ভীষণ খারাপ লাগছে।মিসিং সামওয়ান।”

“আই নো মেঘ তোমার মাহিমের জন্য খারাপ লাগছে।আমি জানি মাহিম ই তোমার ভালবাসার মানুষ। আমাকে তুমি কোনদিন মেনে নিতে পারবে না।জানো মেঘ তুমি আমায় মেনে নিতে পারবে না জেনেও কেনো বিয়ে করেছি।শুধু মাত্র তোমাকে ওই অশান্তির জীবন থেকে বের করতে।বাট
মেঘ বিলিভ মি আমি মাহিম কে মারি নি।আমি মারি নি।আমি মাহিম কে চিনি না।জেনে শুনে তোমার স্বামি কে আমি মারতে পারিনা মেঘ।এতটা খারাপ আমি না মেঘ।”

মেঘ ছুটে এসে রৌদ্রকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বললো,

“আমার আপনার জন্য খারাপ লাগছে।কেনো খারাপ লাগছে জানিনা।জানিনা মনে হচ্ছে আমি আপনাকে মিস করছি।আপনি যে কাউকে মারেন নি আমি জানি।এই মুহুর্তে আপনি ছাড়া কারো চিন্তা আমার মাথায় নেই।কেনো ভালবাসলাম না সেদিন আপনাকে।”

“আমার এই জীবন ধন্য মেঘ তোমার স্পর্শতে।তুমি আমাকে মিস করেছো।আমাকে ভরসা করতে পেরেছো।”

“আমার এই ভয়নাক অতীত জীবন ছেড়ে আমাকে দূরে কোথাও নিয়ে যাবেন প্লিজ।বড্ড বিষন্ন লাগছে আমার।”

রৌদ্র মেঘকে জড়িয়ে ধরে জীবনে প্রথমবার ভালবাসাময় সুখ অনুভব করলো।এভাবে রোজ তাদের ভাল লাগা বাড়ছে, কাছে আসা বাড়ছে মেঘ এবার ভয়ানক ভাবে প্রেমে পড়লো রৌদ্রর।

সেদিন রাত বারোটায় মেঘ জানালা খুলে বাইরে তাকিয়ে আছে।ভাবছে তার বাবার বলে যাওয়া কথাগুলো।রৌদ্র ও মালায়েশিয়াতে গেছিলো আবার মাহিম ও মালায়েশিয়াতে গেছিলো।আদেও কি কোনো যুগসূত্র আছে।মাহিমের শত্রুতা কার সাথে ছিলো।কেউ একজন হুমকি দিতো তবে সেই ভয়েজ তো রৌদ্রের ছিলো না।রৌদ্র কিছুতেই এমন করতে পারেনা।আমি ভালবেসে ফেলেছি রৌদ্রকে।এখন যদি ওর নামে খারাপ কিছু শুনি আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবোনা।রৌদ্র অজান্তে আমার মনের গহীনে প্রবেশ করেছে।এমন সময় রৌদ্র এদে দাঁড়ালো।মেঘ রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে,রৌদ্রের চেহারায় প্রচন্ড রকমের মায়া। এ মায়াবী চেহারার মানুষ কাউকে মারতেই পারেনা।

রৌদ্র বললো,ঘুমোবেনা মেঘ।

–আমার ভয় করছে আজ খুব।

-কিসের ভয় ভূ*তের ভয়।

–তাও জানিনা।

–আমি আছিতো মেঘ।

–সেদিন কি ভয় মাত্রই বাহানা ছিলো নাকি রৌদ্রকে কাছে পাওয়ার বাহানা ছিলো।

————————————————
তিনমাস পর…………

সময় টা ফাগুন মাস।আজ পহেলা ফাগুন।ফাগুন হাওয়ায় ভাষছিলো মেঘ -রৌদ্রের মন।বিগত ছয় মাসে দুজন-দুজনের অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে।আজ মেঘ ভালবেসে ফেলেছে রৌদ্রকে।প্রচন্ড রকমের ভালবেসে ফেলেছে।জীবনের প্রথমবার সত্যিকারের ভালবাসা অনুভব করতে শিখেছে মেঘ।এই শ্যামবর্ণের ছেলেটা মেঘের মনে বসবাস করছে এখন।মেঘ আজ হলুদ শাড়ি লাল ব্লাউজ পেটিকোট মাথায় ফুল দিয়ে সেজেছে। মেঘের এমনিতেই ভুবন ভোলানো রুপে অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে।রুদ্রর খু*ন হওয়ার জন্য মেঘের এ রুপ ই যথেষ্ট ছিলো।বিগত ১৫ দিন শহর ছেড়ে পাহাড়ী এলাকায় এসে বসবাস করছে মেঘ-রৌদ্র।এখানে তারা ঘুরতেই এসেছে।ঝরনার প্রবল ধারার সাথেই মেঘ প্রেমে পড়েছে রৌদ্রর।ঝরণার প্রবাহমান ধারার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ।ঝরণার পানি দু’হাতে মুঠোয় করে এদিক ওদিক ছেটাচ্ছে।ভীষণ হাসছে মেঘ।আজ মনের কথা জানাবে সে রৌদ্রকে।

চলবে,,