রৌদ্র মেঘের আলাপন পর্ব – ৫ (ক)

0
384

#রৌদ্র মেঘের আলাপন
#পর্ব-৫.ক
#WriterঃMousumi Akter

–মেঘ চুপচাপ এই কাবিননামায় সাক্ষর করে মেহেভিন বিনতে মেঘ থেকে মিসেস রাফিন সাইফ রৌদ্র হয়ে যাও। হ্যাঁ মেঘ এটাই তোমার ভবিতব্য ছিলো কিন্তু তোমার জেদ আর তোমার ভিলেন বাবার জন্য সেটা একটু দেরিতে হলো।

–মেঘ বিরক্ত হয়ে রৌদ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,আপনি এসব কি বলছেন কি?আপনি জানেন না আমি বিবাহিত।

–বিবাহিত ছিলে এখন তুমি বিধবা মেঘ।এত অবাক হবার কিছু নেই মেঘ।তুমিই প্রথম নারী নও যে বিধবা হবার পর বিয়ে করছো।কোথায় লেখা নেই বিধবা হয়ে বাকিজীবন কাটিয়ে দিতে হবে।তোমার পরনে এসব কি সাদা থান কেনো?কে দিয়েছে তোমাকে এসব নিয়ম।এই টুকু বয়সে নিজের জীবন কোথায় নিয়ে গিয়েছো তুমি?

–আপনি আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপারে কেনো কথা বলছেন।আমি সাদা শাড়ি পরি কারণ আমি বিধবা তাই?

–তোমাকে বিয়ে করলে নিশ্চয়ই তোমার ব্যাপারে কথা বলতে পারবো?

–আমি কখনোই আপনাকে বিয়ে করবো না মিষ্টার রৌদ্র।আমি আমার স্বামিকে ভীষণ ভালবাসি,ওর জায়গা কাউকে আমি দিতে পারবো না।

–ভালবাসতে নিষেধ করেছে কে?তুমি শুধু চুপচাপ বিয়েটা করে নাও।ভাল যাকে ইচ্ছা তাকে বাসো।

–ইম্পসিবল।

–যদি এখন বিয়ে না করো আমার একটা ইশারায় কয়েকটা লা*শ পড়বে মেঘ।তোমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি ননদ তোমার বাবা কেউ রেহায় পাবে না।আমাকে অনেক বেশী ভয়ংকর হতে বাধ্য করো না।আমি কি পারি আর না পারি সব তুমি জানো।আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করোনা।আমি তেমন কিছুই করতে চাইছিনা।আজ যেটা করছি সেটা যদি অনেকদিন আগেই করতাম তাহলে তোমার জীবন টা এভাবে কাটতো না।আমি যদি মারাও যেতাম তোমার জন্য এত কিছু করে যেতাম বাকি জীবনে কেউ বাড়ির ঝি এর মতো বিহেভ করার সাহস পেতো না।

–আপনি আমার সাথে আর কি কি করতে চান মিষ্টার রৌদ্র।অভিশাপের মতো আমার জীবনে এসেছেন আপনি।আর কি কি করলে শান্ত হবেন আপনি।আমার শ্বশুর বাড়িতে আমাকে কলঙ্কিনী করেছেন আপনি।আমাকে তারা ভুল বুঝে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।আমার বাবা ও আমাকে ভুল বুঝেছে।আপনি কি জানেন আমার মা নেই,এই দুনিয়াতে আমাকে ভালবাসার মতো কেউ নেই। মায়ের মৃত্যুর সাথে সব ভালবাসা ফুরিয়ে গিয়েছে আমার জীবন থেকে।কিন্তু আমার স্বামি আমাকে ভালবেসেছিলো, ভীষণ ভাল বেসেছিলো।সেও অকালে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।তার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে ছিলাম সেটাও আপনার সহ্য হয়নি তাইনা?আমাকে বিয়ে করে এখন আমার মৃত স্বামির কাছে এটা বোঝাতে চান যে,আমি তাকে ছেড়ে নতুন সংসার শুরু করেছি।

–লিসেন মেঘ আমি কাউকে কথা দিয়েছিলাম তার ভাল থাকার দিনে বিরক্ত না করলেও তার খারাপ থাকার দিনে আমি আসবোই।আমার ভালবাসার প্রমিজ আমি রক্ষা করবোই।

–দেখুন,,,

–টেবিলে রাখা কাগজের দিকে চোখের ইশারা দেখালো রৌদ্র।আর কথা বাড়িও না।সাক্ষর করবে নাকি আমি ফোন দিবো।

–মেঘ কোনো উপায় না পেয়ে সাক্ষর করে দিলো।

আপনাকে আমি ঘৃণা করি, ভীষণ ঘৃণা করি শুনেছেন আপনি।এই জীবনে কোনদিন আপনাকে আমি মেনে নিবো না।বিয়ের আগে আপনার অতি বাড়াবাড়িতে বাবা গ্রাজুয়েশন শেষ হবার আগেই আমার বিয়ে দিয়েছিলো।সেই অভিশাপ আজ ও আমার জীবনে থেকে গিয়েছে।আমার পুরো জীবন টা আপনি একাই শেষ করেছেন।আই হেট ইউ।

রৌদ্রর মাঝে কোনো হেলদোল প্রকাশ পেলো না।ঘরের দরজা খুলতেই ভেতরে একজন হুজুর সহ পার্লারের মহিলারা প্রবেশ করলো।গায়ের সাদা থান খুলে মেঘের শরীরে বেনারসী পরানো হলো।কাবিন,কালেমা দুটোই হয়ে গেলো।অপূর্ব সুন্দর লাগছে আজ মেঘ কে।এমনিতেও মেঘ দেখতে কোনো পরীর থেকে কম নয়।রৌদ্র মুগ্ধ নয়নে দেখছে তার মেঘ কে।আজ যেনো বহুকালের প্রতিক্ষার অবসান ঘটলো।পার্লারের মহিলা বললো,স্যারের পাশে দাঁড়ান ম্যাম আপনাদের কাপল পিকচার উঠাই।মেঘ খানিক টা সরে দাঁড়ালো।রৌদ্র মেঘের হাত চেপে ধরে বললো,চুপচাপ পিকচার তুলো না হলে একদিন আফসোস করবে এই দিনটার জন্য তাও ভীষণ আফসোস।মেঘ দাঁত কিড়মিড় করে বললো,আফসোস তো সারাজীবন ই আমাকে করতে হবে।রৌদ্র মেঘের হাত চেপে ধরে বললো,এক্সকিউজ মি পিক উঠান কুইক।কয়েক টা পিকচার উঠানোর পরে বাইরে গাড়িতে নিয়ে গেলো মেঘ কে।

মেঘ গাড়িতে বসে বললো,আমাকে এখন কোথায় যেতে হবে।

–রৌদ্র গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বললো শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছো তোমার?

–আমার সাথে আর কি কি করবেন আপনি?জোর করে বিয়ে করে কি সুখ পাবেন আপনি।আপনার মা বাবাকেও তো আমি মেনে নিতে পারবো না।

–প্লিজ মেঘ,আমার মা বাবা অনেক ভাল মানুষ। তুমি তো রাগ করে চলেই যাচ্ছিলে ধরে নাও আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছো।মা বাবার সাথে কয়েক দিন মিশেই দেখো তুমি।তুমি তাদের ভাল না বেসে পারবে না।আমার জন্য তাদের সাথে খারাপ বিহ্যাভ করোনা প্লিজ।

–আমাকে অভিনয় করতে বলছেন?

–কিছুদিন না হয় তাই ই করো।তাছাড়াও তুমি এখন আমার বউ মেঘ এটা কিন্তু আর মিথ্যা হয়ে যাবেনা।

–আমি আপনার মা বাবাকে সব সত্য বলে দিবো।

–তুমি পারবে না বলতে।

চলবে,,