রৌদ্র মেঘের আলাপন পর্ব – ০৫ (খ)

0
393

#রৌদ্র মেঘের আলাপন
#পর্ব-৫.খ(বাকি অংশ)
#WriterঃMousumi Akter

রাত বারোটায় গাড়ি এসে পৌছালো রৌদ্রের বাড়ির গেটে।রৌদ্র দু’ ঘন্টা আগেই বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলো সে আজ বউ নিয়ে ফিরবে।আনোয়ার হোসেন এবং সেলিনা বেগম ভীষণ ভাবে হতভম্ব তাদের ছেলের ফোন কলে।তাদের তো এমন ছেলেনা যে তাদের মান সম্মান নষ্ট করবে।আজ পর্যন্ত এমন কিছুই করে নি যাতে মা বাবা অখুশি হন।ছোট বেলা থেকেই মা বাবার বাধ্য ছেলে রৌদ্র।বাড়িতে মা ‘বাবা আর দাদু অপেক্ষা করছে রৌদ্রর জন্য।রৌদ্রর বাবা মা এটাই ভেবে পাচ্ছে না তাদের ছেলে তাদের পছন্দের মেয়েকে এইভাবে রিজেক্ট করলো কেনো?মেয়েটার মাঝে কি সমস্যা ছিলো।বিয়ে যখন করলোই তাহলে মাহিকে কেনো বিয়ে করলো না।হুট করে দু’ঘন্টার মাঝে মেয়ে পেলো কোথায়?রৌদ্রের মা বাবার মনে হাজার টা প্রশ্ন তাদের ছেলেকে নিয়ে।বাড়ির গেটে গাড়ির হর্ন শুনে দ্রুত ছুটে এলো রৌদ্রের মা বাবা সহ দাদু সবাই।গাড়ি থেকে ছেলের বউ হিসাবে মেঘ কে দেখে পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার মতো অবস্হা রৌদ্রের মা বাবার।এ মেয়েকে তারা খুব ভাল ভাবেই চিনে।ও বাড়িতে যখন মাহিকে দেখতে গেছিলো তখন ই তারা মেঘ কে দেখেছিলো।এটা তো মাহির ভাবি।ভূমিকম্পন এর মতো পায়ের নিচের মাটি কাঁপছে রৌদ্রের মা বাবার।রৌদ্র বেশ বুঝতে পারলো তার মা বাবা এই মুহুর্তে ঠিক কি ভাবছে।

–রৌদ্র বললো,মা বাবা আমি জানি তোমরা মেঘ কে চিনতে পেরেছো?বেশ অবাক হচ্ছো এটাও জানি,অবাক হবার ই কথা।তবে এখন যেটা দেখছো এটাই সত্য মেঘ ই তোমাদের পুত্রবধূ।দাদু আমার বউ দেখতে চেয়েছিলে না।আমার বউ দেখো চাঁদের মতো সুন্দর।তোমার কি পছন্দ হয়েছে দাদু।

রৌদ্রের দাদু নাতবউ এর চাঁদের মতো মুখ দেখে আনন্দে হেসে উঠলো।তার মুখভঙ্গী দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে নাতবউ তার কতটা পছন্দ হয়েছে।

–রৌদ্রের বাবা বললো,এসব কি রৌদ্র।মানে তুমি কি সত্যি মেয়েটাকে বিয়ে করেছো।এটা কিভাবে সম্ভব হলো তুমি তো ওকে চিনতেই না।ও বাড়িতে মাহি কে দেখতে গিয়ে প্রথম মেয়েটিকে দেখলে তুমি।দুই দিনের মাঝে কিভাবে মেয়েটির এত ক্লোজ হলে আর বিয়েই বা কিভাবে হলো।

–বাবা যেটা জানতে চাও সব জানতে পারবে।এখন মেঘ অনেক ক্লান্ত অনেক রাত হয়েছে আগে ওকে ভেতরে নিতে হবে।

–দাঁড়াও রৌদ্র এইভাবে তুমি ওকে ভেতরে নিতে পারোনা।আগে আমাদের বলো আমাদের মান সম্মান এইভাবে নষ্ট করলে কেনো?মাহির বাবা মা জানলে তারা কি ভাববেন।আমি কি উত্তর দিবো।আমার নাক কান এভাবে কেটে দিলে তুমি?

–বাবা মাহি বা ওর ফ্যামিলির সাথে এখন তোমার কোনো রিলেশন নেই।মেঘ ই এখন তোমার বউমা।ফ্যামিলি পারসন।সো ভাবতে হলে মেঘ কে নিয়ে ভাবো।এই ফ্যামিলিতে মেঘের যদি কোনো অসম্মান হয় আমি কোনো ঝামেলা না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো।

–আনোয়ার হোসেন বেশ বুঝতে পারলেন,তার ছেলে ভীষণ সিরিয়াস মুডে আছে।তাছাড়া বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।বিয়ের বয়স অতিক্রম হওয়ার পরও বিয়ে করে নি তার ছেলে।তাছাড়া তার ছেলে আর পাঁচজনের মতো না ভেবে চিন্তে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না।নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করেছে কিছু তো কাহিনী আছেই।এই মুহুর্তে কিছুই বলা ঠিক হবে না।সেলিনা বেগম নিশ্চুপ আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না।

–রৌদ্রের দাদা বললো,কই দেখি আমার নাতবউ তো ভারী মিষ্টি হয়েছে।আয় দিদি এদিকে আয়।তোর জন্য ওই ফাজিল টার বউ দেখার সৌভাগ্য হলো।মেঘ লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না।সবাই কি ভাবছে তার চরিত্র নিয়ে।যে নিজের ননদের জন্য বরাদ্দ পাত্রকে সে বিয়ে করেছে।লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে মেঘের।চোখে মুখে পানি ছলছল করছে।মেঘের মুখটা ভীষণ মায়াবী লাগছে খুব মায়া হলো সেলিনা বেগমের।এটা ভেবে খুশি যে তার ছেলে বিয়ে করেছে সেই সাথে নিজের বউকে ভীষণ গুরুত্ব ও দিচ্ছে।

–রৌদ্রের দাদা ফিসফিস করে ছেলেকে বললো,বেশী বাড়াবাড়ি করোনা।চুপচাপ মেনে নাও।যেটা করার সেটা তো করেই ফেলেছে। এখন তোমার মানা না মানায় কিচ্ছুই যাবে আসবে না।তোমার ছেলেকে কি তুমি চিনো না।আমার মনে হচ্ছে পূর্ব পরিচিত এই মেয়েটি।অনেক আগে থেকে চেনা জানা না থাকলে কি আর কেউ বিয়ে করে।যা আলোচনা করার ভেতরে গিয়ে করবে।তোমার ছেলে না ভেবে কখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয় নি।

–আনোয়ার হোসেন বললেন,তৃধার মা ওদের ভেতরে নিয়ে এসো।

–সেলিনা বেগম বললেন, ভেতরে এসো মা।এক নিমিষেই মেঘের মায়ায় পড়ে গেলেন সেলিনা বেগম।

–রৌদ্রের দাদা বললেন,একি নতুন বউ কি হেঁটে আসবে নাকি।কোলে করে ঘরে তুলতে হবে।আয় তো দিদি কোমরে বল নেই তবুও চেষ্টা করি।পড়ি তো দুজনেই পড়বো।

–সেলিনা বেগম বললেন,বাবা আপনি পারবেন না।

–রৌদ্র বললো,আমার বউ আমি ই কোলে তুলছি।রৌদ্র মেঘের দিকে তাকাতেই মেঘ মুখ ঘুরিয়ে নিলো অন্যদিকে।ঘৃনা লাগছে মেঘের তার অনিচ্ছায় একটা পরিবারের সাথে জুড়ে গিয়েছে তার জীবন।মেঘের ভাব ভঙ্গির তোয়াক্কা না করে মেঘ কে পাজা কোলে তুলে ঘরে নিয়ে গেলো রৌদ্র।নিজের ঘরে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,মা বাবা দাদা ড্র‍য়িং রুমে আসো কথা আছে সবার সাথে।

চলবে,,