লালগোলাপ❤
Part-26
Writer-Moon Hossain
সকাল টা খুব সুন্দর কারণ রাত টা খুব ভালো ছিলো। সকালের ঝলমলে আলোটা শীতলের চোখে মুখে পড়েছে। শীতল নড়েচড়ে উঠলো।
-ছাড় আমাকে!
-না।
-আহা! সকাল হয়েছে।অফিস যেতে হবে।
-একদিন না গেলে কিছু হবেনা।
-এমন করেনা। বোঝার চেষ্টা করো।
ঝটকা দিয়ে শীতলের কাছ থেকে রাজ সরে উঠে বসলো।
শীতল কিশোরী মেয়েদের মতো রিনরিনে গলায় বলে উঠলো-না না না। এখন না।
-যেতে হবে।
-আরেকটু।
-নো।
-ইয়েস।
-রাতে তো ধরেই রাখলে এখন আরেকটু আরেকটু করছো কেন? কি আজব!
শীতল এমন খোঁচা দেওয়া কথা শুনে এক ধাক্কা মেরে রাজকে বিছানা থেকে ফেলে দিলো।
-গেট আউট ফর্ম হেয়ার। আউট!
রাজ হতভম্ব!
শীতল চোখ বন্ধ করে কিছু ছক কষে রাখলো।
শীতল নিজের পেটে হাত রেখে বলল-দেখেছো বাবা কেমন হয়েছে? আগে ছিলো গর্দভ পাগল আর এখন চালাক পাগল।
তোমার আমার কথা একটুও ভাবছেনা। আমাদের ছাড়া একাই থাকতে চান।
এটা কি আমরা মেনে নেব?
শীতল শাওয়ার সেরে বের হতেই ফুলিকে দেখতে পেলো।
নাশতা সাজাচ্ছে বেড সাইডে।
-সাহেব কোথায়?
-জ্বি, নিচে।
-নাশতা করেছেন?
ফুলি যদি এখন বলে হ্যাঁ তবে শীতলের হৃদয় রাজ্য ভেঙে যাবে। রাজ কখনো শীতলের আগে খেতে চায়না, শীতলও না। সব সময় খাওয়ার সময় শীতলকে সামনে থাকতে হতো রাজের। তবেই রাজ খেতো, একটু পর পর শীতলের মুখেও বুদ্ধি করে খাবার তুলে দিতো রাজ। এই হলো তাদের স্বামী-স্ত্রীর খাওয়া-দাওয়া।
-জ্বি না।
-নাশতা নিয়ে যাও।
আমি নিচে খাব, উনার সাথে।
-সাহেব আপনাকে নিচে যেতে মানা করেছে। আপনার কষ্ট হবে।
শীতল শুনলো না।
সে নিচে গেলো।
চাঁচি, শাকিলা খাচ্ছেন। একপাশে রাফিয়া মুখ কালো করে মাথা নিচু করে খাচ্ছে। যেন সে অন্য জগতে নিজের মতো করে বেঁচে আছে।
রাজ মুখে খাবার তুলে নেওয়ার প্রিপ্রারেশন করছে। বোধহয় মনে মনে শীতলের জন্য সে ওয়েট করছিলো।
শীতল খুশি হলো।
যাক,এতোটুকু ফরমালিটি করতে ভুলেনি রাজ।
রাজ সামনে না তাকিয়ে একের পর এক নাশতা মুখে তুলে নিচ্ছে।
এটা দেখে শীতলের মন ভেঙে গেলো। রাজ কখনো নিজের হাতে খেতো না। সবসময় শীতলের হাতে খেতো। আর আজ কি করছে! কিছুদিন ধরে না হয় রাজ একটু নিজের মতো করে গুছিয়ে নিচ্ছিলো তাই একাই খেয়েছে শীতলকে ছাড়া।
আজ তো শীতল কত আশা করে ছিলো।
রাফিয়া বলল-ভাবি এসো।জয়েন দাও।
শাকিলা আর চাঁচি শুকনো হাসি দিলো।
রাজ পেপারে চোখ বুলাচ্ছে।
শীতল বসলো না।
রাজ বলল-ফুলি!
-জ্বি সাহেব!
-ম্যাডাম নাশতা করেছেন?
-না।
-কেন?
-বলেছেন নিচে খাবেন।
-আমি কি বলেছি?
-ম্যাডামকে নিচে না নামতে দিতে।
-আর?
-উপরে সবসময় খাবার দিতে।
-তুমি যদি তোমার দায়িত্ব পালন না করো তবে তোমাদের রেখে কি লাভ?
ফুলি মাথা নিচু করে শীতলের দিকে তাকালো।
-ম্যাডাম উপরে চলুন। আমার চাকরিটা প্রয়োজন। চাকরি না থাকলে ময়মনসিংহ শহরে বাবা মা কে নিয়ে কি করে থাকব।
ফুলি নাশতা আবার নতুন করে তৈরি করে দিলো। রাজের নির্দেশ ঠান্ডা খাবার খাওয়ানো যাবেনা শীতলকে।
শীতল একটা খেজুর নিয়ে মুখে দিলো খানিকটা।
-সাহেব চলে গিয়েছেন?
-জ্বি ম্যাডাম।
-তুমি যাও।
-ম্যাডাম খেয়ে নেবেন পুরো নাশতা। সাহেবের আদেশ। নইলে রাগ করবেন।
শীতল মাথা নাড়ালো।
শীতলের নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এতো অসহায় লাগছে কেন নিজেকে!
-দেখো বাবা, আমারা কত অসহায়।বাবা আমাদের কথা ভাবেই না।
শীতলকে তার শশুর সাহেব এই সংসারের চাবির গোছা দিয়েছিলো।
এতো দুঃখের মধ্যে চাবির কথা মনে ছিলো না।
আজ একটা কাজে চাবির কথা মনে হলো।
কোথাও চাবির নাম নিশানা নেই। বাহির থেকে চোর আশা অসম্ভব! শীতল আনমনে চাবির কথা মনে করে হাসলো।
শাকিলা আর চাঁচি কি যেন ফুসুরফুসুর করতে লাগলো ।
শীতলকে দেখে চুপ হয়ে গেলো। শীতল নাশতা দিয়ে মিষ্টি করে হাসলো।
চাঁচি বলল-হাসলে যে?
শাকিলা বলল-তোমার দিন শেষ এই বাড়িতে। এখন আমার দিন শুরু হবে। আমাদের রাজত্ব শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।
শীতল হেঁসে বলল- আমার মহান আল্লাহ তায়ালার উপর আমি আমার জীবন ছেড়ে দিয়েছি। তিনি আমার ভালো বুঝবেন। আমার জন্য যেটা ঠিক সেটাই করবেন।
-এতো দুঃখ তোমার তবুও হাসি লেগেই থাকে ঠোঁটে?
-মহানবী (সাঃ) এর জীবনে কত দুঃখ ছিলো তবুও তিনি হাসিখুশি থাকতেন। সেই তুলনায় আমার দুঃখ তিল পরিমাণ।
একটা জানেন কি?
-কি?
– সরাসরি বলবো না।
একটা হাদিস বলছি। স্পষ্ট হাদিস।
একটি_শিক্ষানিয়_পোস্ট
এক ব্যক্তি হযরত ঈসা (আঃ)-এর
সাথে সফরে রওয়ানা হলো।
হযরত ঈসা (আঃ)-এর সাথে তিনটি
রুটি ছিল। একটা নদীর তীরে পৌছে
তিনি আহার করলেন এবং পানি পান
করার জন্যে নদীতে গেলেন। ফিরে
এসে দেখেন অবশিষ্ট রুটিটি নেই।
তিনি সে লোকটিকে জিজ্ঞেস
করলেন, “রুটি কে নিয়েছে?”
লোকটি বললো, “আমি জানিনা।”
হযরত ঈসা (আঃ) লোকটিকে নিয়ে
আবার রওয়ানা হলেন। রাস্তা চলতে
চলতে যখন ক্ষুধার উদ্যেক হলো তখন
তিনি দূরে একটি হরিণী দেখলেন।
হরিণীর সঙ্গে দুটি বাচ্ছা ছিল।
তিনি একটি বাচ্ছাকে ডাকলেন।
বাচ্ছাটি কাছে আসলো। তিনি
বাচ্ছাটিকে জবাই করলেন এবং
গোশত ভূনা করে সে লোকটিকে
নিয়ে আহার করলেন। অতঃপর
বললেন, “আলালহর হুকুমে জীবিত
হয়ে যাও।” সঙ্গে সঙ্গে হরিণের
বাচ্ছা জীবিত হয়ে চলে গেল।
হযরত ঈসা (আঃ) লোকটিকে বললেন,
“এ হরিণের বাচ্ছা জীবিত হয়ে
যাওয়ার মোজেযা যিনি দেখালেন
তাঁর কসম দিয়ে বলছি, তুমি বল
রুটিটি কে নিয়েছে?।
লোকটি বললো, “আমি জানি না।”
হযরত ঈসা (আঃ) লোকটিকে নিয়ে
আবার রওয়ানা হলেন। পাহাড় থেকে
ঝর্না হয়ে নেমে আসা একটি নদী
সামনে পড়লো। তিনি লোকটির হাত
ধরে পানির উপর হেঁটে নদী পার
হলেন।
অতঃপর তিনি বললেন, “যিনি বিনা
নৌকায় নদী পার হওয়ার এ মোজেযা
দেখালেন তার কসম দিয়ে বলছি,
তুমি বল রুটি কে নিয়েছে?”
লোকটি আগের এ জবাব দিল, “আমি
জানিনা।”
হযরত ঈসা (আঃ) এক জঙ্গলের কাছে
পৌঁছে বালি জমা করলেন।
যখন এক বিরাট বালির স্তূপ হয়ে গেল
তখন সে স্তূপ কে লক্ষ্য করে বললেন,
“আল্লাহর হুকুমে সোনা হয়ে যাও।”
তখনই বালির স্তূপ টি সোনায়
পরিণত হয়ে গেল।
হুযরত ঈসা (আঃ) সে সোনাকে তিন
ভাগ করলেন এবং লোকটিকে লক্ষ্য
করে বললেন,
“এ তিন ভাগ সোনার মধ্যে এক অংশ
আমার, আর এক অংশ তোমার এবং
অপর অংশটি যে রুটি নিয়েছে তার।”
একথা শুনে লোকটি বলে উঠলো, “রুটি
তো আমিই নিয়েছিলাম।”
হযরত ঈসা (আঃ) বললেন, তাহলে সব
সোনাই তোমাকে দিলাম; এ বলে
লোকতা থেকে পৃথক হয়ে চলে
গেলেন।
লোকটি তিন ভাগ সোনার সবগুলোর
মালিক হয়ে মনের আনন্দে জঙ্গলের
ধারেই অবস্থান করতে লাগলো। এমন
সময় দুই ব্যক্তি এসে তার সোনা
ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যে তাকে হত্যা
করতে উদ্যত হলো।
লোকটি বললো, “লড়াই করলে হেরে
যাওয়ার ভয় সবারই আছে।
তাই লারাই না করে এসো আমরা এ
সোনা সমান তিন ভাগ করে নেই।
তোমরা একজন বাজারে গিয়ে কিছু
খাবার নিয়ে এসো। ক্ষুধা নিবৃত্তি
করার সোনা ভাগ করব ।”
সুতরাং লোকটির প্রস্তাবে তারা
রাজি হলো এবং সে দুজনের মধ্যে
একজন খাবার আনতে বাজারে গেল
এবং মনে মনে ভাবলো, খাবারের
মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিলে এ দুজন
মারা যাবে সমস্ত সোনা আমার
হয়ে যাবে। এ ভেবে সে খাবারের
মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিল।
এদিক এরা দুজনে পরামর্শ করলো, এ
তৃতীয় ব্যক্তিটিকে যদি মেরে ফেলা
হয় তবে সমস্ত সোনা তাদের দুই
জনের ভাগে বেশী করে পড়বে।
তাই লোকটি বাজার থেকে ফিরে
আসতেই তাকে মেরে ফেলতে হবে।
সুতরাং লোকটি যখন খাবার নিয়ে
ফিরে আসলো তখন দুজন মিলে তাকে
হত্যা করলো এবং মনের আনন্দে
খাবার খেতে লাগলো। খাবার
খাওয়া শেষ হতে না হতেই বিষের
প্রতিক্রিয়ায় দুজন সেখানে মৃত্যুবরণ
করলো।
সোনার তিনটি স্তূপই সেখানে পড়ে
রইল। কেউ না পেল না। তিন জনের
লাশই সোনার স্তূপের পাশে ছড়িয়ে
ছিটিয়ে পড়ে রইলো।
ঘটনা ক্রমে হযরত ঈসা (আঃ) আবার
সে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি
এ দৃশ্য দেখে সবাইকে ডেকে বললেন,
“দেখ সম্পদের হাকীকত এই।
এর লোভ থেকে নিজেকে বাঁচাও ”
.
বারান্দায় গিয়ে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলো। রাজের ইজি চেয়ারে বসে দোল খেলো।
একটু ক্লান্ত লাগছে শীতলের।
নাশতা ঠান্ডা হয়েছে। একটুও খাইনি। ছুঁয়েও দেখেনি সে।
আজ না খেয়ে থাকবে শীতল।
শীতলের সবসময় অজু থাকে। চট করেই কোরআন নিয়ে পশ্চিম দিকে বসে তেলওয়াত করতে থাকলো। বসে কিছুটা কষ্ট হলো, কিন্তু খুব ভালো লাগা শুরু হয়েছে একধরনের। কোরআন তেলওয়াত করলে মনে যে শান্তি পাওয়া যায় যার কোন সীমা থাকেনা৷ কোরআন পড়তে পড়তেই একসময় শীতল ঘুমিয়ে পড়লো বসে বসেই।
কারও ঠান্ডা স্পর্শে ঘুম ভাঙলো শীতলের।
চোখ খুলেই রাজকে দেখতে পেয়ে মনটা খুশিতে ভরে গেলো।
রাজ কোরআন শরিফ নির্দিষ্ট স্থানে রেখে শীতলের কাছে গেলো।
আবারও গলায় হাত দিয়ে বলল- শরীর গরম।
জ্বর জ্বর লাগছে?
বিকেলে ডক্টর আসবে।
-ডক্টর লাগবেনা। ঘরেই ডক্টর আছে।
-কোথায়?
শীতল চোখ দিয়ে ইশারা করলো।
-আপনি এসেছেন আমি ভালো হয়ে গিয়েছি। আপনার স্পর্শ পেলে কোন অসুখ আমাকে ছুঁতে পারবেনা।
-এসব পাগলামি ছাড়। কেউ কারও ডক্টর হতে পারেনা কিংবা ছুঁয়ে দিলে অসুখ ছুঁতে পারবেনা এমন হয়না।
-আমাদের হয় কিন্তু।
-আমার হয়না, তোমার হলে হতে পারে বাট এসব কাব্যিক কথা ।
-এসব ইসলামিক কথাও। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা সব পারে।
-ঠিক। স্বামী-স্ত্রী। এসব এই সম্পর্কের মাঝে হয়। আমাদের মাস-দুই পর এই সম্পর্ক থাকবেনা।
শীতল বেলকুনিতে বসে বসে টপ টপ করে চোখের পানি ফেলছে।
পেটে হাত দিয়ে বলে-দেখেছো? তেমার বাবা কত নিষ্ঠুর! অবলীলায় বলে দিলো নির্মম কথা। যেটা আমি সপ্নেও ভাবতে পারিনা। খুব ভয় লাগে আমার।
তোমার বাবা আমাদের দূরে ঠেলে দিচ্ছেন।
এটা কি হবে বলো?
শীতল নাশতার ট্রে টা বেড সাইডের একপাশে রেখে দিলো। ফুলির খেয়াল নেই। সে দুপুরের খাবার সাজিয়ে দিলো সোফার মাঝারি কাঁচের টেবিলে।
শীতল বলল-ফুলি তুমি যাও।
-আচ্ছা, খাবার খেয়ে নিন। গরম গরম খেতে বলেছে সাহেব।
রাজ খাচ্ছে আয়েশ করে। শাকিলা রাজের প্লেটে মাছের পেটি তুলে দিলো চাঁচির ইশারায়।
-থ্যাংকস।
-এটা তো ওর রেসপন্সিবিলিটি। ও তো বাড়ির মেয়ে আর তুমি বাড়ির ছেলে। পরের বাড়ির মেয়ে উড় এসে জুড়ে বসলে তো আর হবেনা৷
বাড়ির মেয়ে বাড়ির ছেলে কে খাবার তুলে দেবে এটা ন্যাচারাল।
শাকিলা রাজের দিকে মিষ্টি হাসি দিলো।
রাজ মাথা নাড়ালো।
শীতল চেয়ার টেনে বসলো।
রাজ একবার শীতলের দিকে তাকালো।
-একা খেতে ভালো লাগেনা। আমি এখানে খাব সবার সাথে।
শীতল আজ খাবেনা ঠিক করেছে শুধু রাজের খাওয়া দেখবে বলে এসে বসেছে।
শুধু বসে থাকলে হবেনা কি একটা মুখে দিতে হবে নয়ত মিথ্যে বলা হবে। অবশ্য মনে এক, মুখে আরেক কথা মিথ্যের কাছাকাছি। এটাকে বলে কপটতা। মনে মনে আল্লাহর কাছে মাফ চাচ্ছে শীতল কপটতা করার জন্য নিজের অজান্তে।
আল্লাহ তায়ালা যদি শীতলের কষ্ট না বুঝে তবে কে বুঝবে?.
শীতলকে ফুলি একটা প্লেটে ভাত দিলো। শীতল একবার রাজের দিকে তাকালো।
দুজন কি কখনো দুই প্লেটে আজ পর্যন্ত খেয়েছে?
সেটা মনে করার চেষ্টা করলো বাট পারলোনা। রাজের সাথে,রাজের প্লেটে খেতে ইচ্ছে করছে খুব। একবার কি বলে দেখবে?
রাজ কি সুন্দর নিজ হাতে টপাটপ খাচ্ছে। নিজ হাতে তরকারির নিয়ে লোকমা করে মুখে ঢোকাচ্ছে।
খুব ইচ্ছে করছে লোকমা তুলে দিতে শীতলের রাজকে।
মাঝে মাঝে চাঁচির ইশারায় এটা ওটা তুলে দিচ্ছে শাকিলা রাজের প্লেটে।
রাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।
ইশশ,কি আদিক্ষেতা।
শীতল ভাত খেলো না। একটু মাছ মুখে নিলো। অমনি বমি করে দিলো গড় গড় করে।
ওয়াক ওয়াক করতে করতে শীতল হাপিয়ে উঠেছে।
-এটা তুমি কি করছো?
নোংরা মেয়েছেলে। সুন্দর খাবারের পরিবেশটাই নষ্ট করে দিলো।
শাকিলা ঘৃণার দৃষ্টিতে শীতলের দিকে তাকালো।
চাঁচি বলল- তোমাকে উপরে খাবার দেওয়া হয়েছে। তুমি উপরে খাওনা বাবা। এখানে আমার ছেলে মেয়েদের খাওয়া নষ্ট করে দিলে কেন?
আহারে! ছেলেটা না খেয়ে তাকিয়ে আছে কেমন করে দেখো।
রাজ বলল- তুমি কি কথা শুনতে চাওনা?
নিজে যেটা ঠিক করবে সেটাই করবে?
বার বার সিড়ি দিয়ে নিচে কেন নামো?
পড়ে গেলে কি ভয়ংকর কান্ড ঘটবে তা জানো?
-আমার একা খেতে ভালো লাগেনা। কি করব আমি?
-তুমি তোমার ভালো লাগায় দেখলে?
অন্য কারও না ভালো লাগুক সেটা৷
শীতল রাজের চোখের দিকে শুধু তাকিয়ে রইলো। এটা কি রাজ? যে শীতলের হাতে ছাড়া খেতো না৷ তুলকালাম কান্ড ঘটাতো যখন শীতল সামনে থেকে এক সেকেন্ডের জন্য হলেও থামতো।
রাজ মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
শীতলের যে বমি করে ক্লান্ত লাগছে। পেটে ব্যাথা শুরু হয়েছে। এগুলো কি একবারও রাজের মাথায় আসছেনা।
কি আছে রাজের মাথায়? কি চলছে সেই মাথায়?
চাঁচি বলল- আহারে! ছেলেটা আমার খাওয়া ছেড়ে উঠে গিয়েছে।
শীতল আছরের নামাজ পড়ে নিলো। তারপর বিছানায় বসে ঝিমতে লাগলো। একটু ক্লান্ত লাগছিলো।
রাজ নীল পাঞ্জাবি পড়েছে। শীতলের খুব রাগ হলো।
মহানবী (সাঃ) এর প্রিয় রং সবুজ। রাজ এটা জানার পর থেকে সবুজ পাঞ্জাবি পড়তো।
আর আজ কিনা!
আয়নায় নিজেকে ঘুরেফিরে দেখছে রাজ।
-বাহ! বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে আমায়।
– ইংরেজদের নীল ক্ষেতের নীল চারাগাছের মতো দেখাচ্ছে।
-ওআচ্ছা।
-মনে হচ্ছে আস্তো একটা নীল। আমার ইচ্ছে করছে কাপড়ে ঘষে ঘষে লাগিয়ে দিই।
রাজ মুচকি হাসলো।
কপালে চুমু না দিয়েই রাজ চলে যাচ্ছে।
-আমার চুমু…….
শীতলের রঙিন মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
নামাজে যাওয়ার আগে শীতলের কপালে চুমু দিয়ে যেত। সবকিছু ভুলে যেত তবুও আদর করা সুন্নাতটা ভুলতো না।
শীতলকে কখনো মনে করিয়ে দিতে হতো না।
রাজ হঠাৎ ফিরে আসলো।
এই তো রাজ সুন্নাতের কথা মনে পড়েছে।
শীতলের মুখে হাসি ফুটলো।
-কিছু ভুলে গিয়েছিলেন?
রাজ হাসলো।
শীতলও হাসলো।
-টুপি নিতে ভুলে গিয়েছিলাম।
-ও।
সাবধানে যাবেন।
শীতল আড়মোড়া হয়ে চোখ খুলল। ঘুমের মধ্যে মনে হলো কেউ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
খুব ভয় আর আতংক লাগছিলো।
রাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নাশতার ট্রে আর দুপুরে খাবার ট্রে হাতে নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।
-হোয়াট ইজ দিস?
কথা বলছো না কেন ইউ ইডিয়ট!ননসেন্স!
হাউ ডেয়ার ইউ ব্লাডি ফুল!
শীতল এই ভয় পাচ্ছিলো।
সত্যি হলো। শীতল মাথা নিচু করে আছে। খোলা চুল গুলো সামনে এসে পড়ে শীতলের মুখ লুকাতে সাহায্য করছে।
টপ টপ করে ফর্সা গাল বেয়ে পানি পড়ছে শাড়িতে।
রাজের রক্তবর্ণ চোখে তাকানোর সাহস নেই।
-স্পিক আপ! আন্স মি!
শীতল মাথা তুলে তাকাচ্ছে না।
-তোমার শরীর খারাপ করবে, আমার বেবির সুস্থ্যতায় বিঘ্ন ঘটবে। এদিকে তোমার খেয়াল নেই? তোমাকে এক মণ ভাত খাওয়াতে পারলে আমার শরীরের সব রাগ মিটে যেত।
কথা বলো?
শীতল আরও ভয়ে চুপসে গেলো।
রাজ ট্রে গুলো ছূরে মারলো। বিকট আওয়াজ। অনেক্ক্ষণ ধরে বাজলো।
-তোমার মুখে পাঁচ মণ ভাত খাওয়াবো এখন আমি। তাতে যদি শিক্ষা হয়।
ইচ্ছে করছে এখনই ডিভোর্স দিয়ে দিই। ইউ ইডিয়ট!
.
❤মহান আল্লাহর তায়ালার দুটি নাম (আরবি, বাংলা)
৩৫. ﺍﻟﺸَّﻜُﻮﺭُ আশ-শাকূর সুবিবেচক
৩৬. ﺍﻟْﻌَﻠِﻲُّ আল-’আলিই মহীয়ান❤
.
চলবে………..