লালগোলাপ❤ Part-46-47

0
3030

লালগোলাপ❤
Part-46-47
Writer-Moon Hossain

অফিসের সবাই শীতলের প্রতি একটু বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।শীতলকে সন্তুষ্ট করায় সবাই ব্যস্ত। শীতল অফিসে আসতেই এক প্রকার লাইন লেগে যায় তার কেবিনের সামনে। সবাই শীতলের ফাইফরমাশ খাটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে।শীতলের টুকটাক খেয়াল রাখে।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শীতলকে ম্যাডাম ম্যাডাম করে অস্থির করে তোলে। শীতলের জন্য বেশ অস্বস্তিকর সিচুয়েশন ক্রিয়েট করে দিয়েছে রাজ। কি দরকার ছিলো সবার সাথে ওয়াইফ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার৷
পিয়ন এসে দরজায় নক করলো।
-আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম!
স্যার আপনাকে স্বরণ করেছেন।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
শীতল সব সময় দরজা নক করে রাজের কেবিনে ঢুকে।
আজ নক করলো না।
রাজের দিকে তীব্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো শীতল। ।
রাজ এমন ব্যবহারে খুব অবাক হয়েছে এরকম ভাব করলো।
চোখে সানগ্লাস পড়ে বলল- হাউ ডেয়ার ইউ!
আপনার এতো বড় সাহস হলো কি করে?
নক না করে কেবিনে ঢোকার স্পর্ধা করলেন কি করে?
আপনার জব এখুনি খেয়ে ফেলতে পারি। আন্স মিঃ
শীতল হাতে থাকা এক গাদা ফাইল টেবিলে বেশ আওয়াজ করে রাখলো। বিকট আওয়াজ হলো ফাইল রাখাতে।
রাজের চশমাটা আওয়াজের সাথে সাথে খুলে নিচে পড়ে গেলো।
রাজ এক সেকেন্ড শীতলের দিকে তাকিয়ে সেক্রেটারিকে কল করলো।
রাজ চেয়ারে বসলো, সেক্রেটারি এসে সানগ্লাসটা তুলে টেবিলে রাখলো।
রাজ সানগ্লাসটা পড়ে বলল-নাউ ইউ ক্যান গো।
শীতল বলল- এসব লোক দেখানো বড়লোকি শেষ হলে কিছু কথা বলতে পারি?
রাজ বসের মতো হাত দিয়ে ইশারা করলো শীতলকে বসতে।
শীতল দাড়িয়ে থেকে বলল- আপনি এটা কিভাবে করলেন?
– আজ তো তোমার সাথে কিছুই করলাম না। দেখাই তো হলো মাত্র।
-কথা ঘোরাবেন না।
ঐ দিন কেন সবাইকে বললেন আমি আপনার ওয়াইফ?
-আগে আমার একটা কথার আন্স দাও!
– জ্বি!
-তুমি কি আমার জিএফ?
-নাউজুবিল্লাহ!
-তুমি আমার ওয়াইফ?
-অবশ্যই। কেন ভুলে গিয়েছেন?
-ওয়াইফ কে ওয়াইফ বলব নাতো জিএফ বলব?
তুমি কি আমার জিএফ? তুমি আমার ওয়াইফ।
শীতলকে নানান ভাবে রাজ কনফিউজড করে দিলো।
রাজ সেই সুযোগে বলল- কাজে ফাঁকি শুধু? ওয়াইফ বলে অফিসে কাজ করবে না তা হবেনা। রাজ সবাইকে এক সমান দেখে। ওয়াইফ বলে পার পাবে না। যাও গিয়ে কাজ করো। গ্যাট আউট ফর্ম হেয়ার।
শীতল কি বলবে না বলবে তা ভেবে পেলো না।
শীতলকে অফিসের স্টাফরা যেখানেই দেখছে সেখানেই ম্যাডাম ম্যাডাম বলে ফাইফরমাশ করছে।
নীচু গলায় স্টাফরা গোপন কথাও সেরে ফেলে মাঝে মাঝে।
গলার স্বর নীচু করে এক স্টাফ বলে – ম্যাডাম আমার নিজের ফার্মের নিজের পোষা মুরগির গোশত নিজ হাতে রেঁধে এনেছি আপনার জন্য!
-শীতল অবাক হয়ে বলে -জ্বী!
– জ্বী ম্যাডাম। খেয়ে দেখুন টেস্ট ভালো।আসলে ছোট ফার্ম।বড় করতে পাচ্ছিনা।
যদি আপনি একটু নজর দিতেন তাহলে বড় হতো।
-জ্বী নজর?
-জ্বী নজর।
-কি বলছেন কিছু বুঝতে পাচ্ছিনা। দয়া করে সহজ ভাষায় বলুন।
-মানে বলছিলাম বিষয়টা ওভাবে নেবেন না। স্যার কে যদি আমার বিষয়ে ভালো কিছু বলেন তাহলে প্রমোশন হতে পারে। আমার ফার্মটাও বড় হতে পারতো।
শীতল ফাইল রেখে আহত চোখে তাকালো।
এই হলো ঘটনা!

রাজ অফিসে এসে সোফায় ঘুমুচ্ছিলো।
শীতল বলল- এসব কি হচ্ছে?
রাজ ঘুমু ঘুমু চোখে অস্ফুটে কন্ঠে বলল- ঘুমানো হচ্ছে।
-কথা ঘোরাবেন না।
আমার জীবন অতিষ্ঠ বানিয়ে ফেলেছেন অফিস স্টাফরা।
এরজন্য আপনি দায়ী!
রাজ হাই তুলতে তুলতে বলল- কাজে ফাঁকি একদম অপছন্দ! যাও গিয়ে কাজ করো!
-আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি। উওর না নিয়ে যাব না। বলুন?
এগুলোর অন্ত কোথায়?
-বসের কথা অমান্য করছেন আপনি? এতো বড় স্পর্ধা আপনার? আপনার জব ডিসমিস করতে আমার দু’মিনিটও লাগবেনা।
-বাজে কথা রাখুন।
দয়া করে সমস্যা সমাধান করুন।
– তোমার পছন্দ হবেনা সমাধান।
-সেটা আমি দেখব।
রাজ সহজ ভাষায় একরাশ ভালোবাসা নিয়ে স্বামী হিসেবে শীতলের দিকে তাকালো।
-তুমি আমার কাছে চলে এসো, তোমার সংসারে।
তোমাকে আমি চিনি, তুমি আমার কাছে থাকলে অলওয়েজ আমাকে নিয়েই থাকবে। অন্যকিছু নিয়ে নয়।
তোমার সংসারে বিজি থাকবে। অফিসের জব তো করবে না। তোমার অফিস হলো আমাদের সংসার, তোমার জব হলো আমার খেয়াল রাখা, তোমার ডিউটি হলো আমি মানে তোমার স্বামীর সেবা করা , তোমার স্যালারি আমার ভালোবাসা এবং আদর-সোহাগ।
শীতল রাজের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো বরাবরের মতোই।
রাজ আবার বলল-এখুনি অফিস ছেড়ে তোমার সংসারে ফিরে যাও, তোমার স্বামীর কাছে।তোমার আশেপাশে তোমার স্বামী ছাড়া কাউকে দেখতে পাবেনা। সব প্রবলেম সল্ভ।
– কোন মুখে এসব কথা বলছেন? আপনাকে খুব ভালো করে চিনি।
আপনি একটা স্বার্থপর স্বামী।
যতটা সহজ ভাবে সবকিছু বলেছেন ততটা সহজ নয়।
কোন সংসারের কথা বলছেন? যে সংসার শুধু আমি করেছি?
আপনি কোথাও ছিলেন না সংসারে। সংসার মানে কি সেটাও বুঝতেন না।
আমার সংসারে যারা ছিলো তারা কেউ নেই।
সবচেয়ে বড় কথা যে সংসারে আমার ছেলে থাকতে পারেনি সে সংসারে আমি কি করে থাকব? অসম্ভব!!!
শীতল চলে যাচ্ছিলো।
রাজ বলল- শ্রেয়সী আমি অনুতপ্ত। তুমি জানো আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো। আমার মাথা ঠিক নেই। সমাজের সবাই আমাকে ভুল বুঝলে তুমিও আমাকে ভুল বুঝবে?
-আমি বাকি সবার মতোই একজন। আমি সমাজে বাস করি। অন্যদের থেকে আলাদা নয়।
-একটা কথা বলব শুধু! তোমার সংসারে কোথায় কি আমি ছিলাম না? আমাকে কেন্দ্র করেই তো তোমার সংসার তৈরি হয়েছিলো।
শীতল শান্ত ভাবে বলল- না আপনি আমার সংসারে কোথাও ছিলেন না এবং থাকবেন না। সংসার স্ত্রী হিসেবে আমি একা করেছি।
শীতল দুই দিন অফিসে এলো না। গলা ব্যথা। অসুস্থ বেচারি।
শিশির জোর করে ডক্টর দেখাতে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলো কিন্তু শীতল বেঁকে বসে।
রাজ শীতলকে না দেখে থাকতে পারেনি। পরের দিন বাংলোতে চলে এলো।
এসে শিশিরের কাছে সবকিছু শুনে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সে এমন ভাবে শীতলের গলায় কামড় দিয়েছিলো যার জন্য এই অবস্থা, সেই সাথে গলাও চেপে ধরেছিলো।
শীতলের গলা সপ্তাহখানেক ধরে ফোলা। এতোদিন ততটা ব্যথা লাগেনি যতটা দুই দিন ধরে লাগছে।
রাজ শোনা মাত্রই লেডি ডক্টরকে ফোন করলো।
ম্যাসেজ এর মাধ্যমে বাংলোর ঠিকানা দিলো।
শীতল সোফায় বসে আছে চোখ বন্ধ রেখে। গলায় মাফলার। রাজ রুমের জানালার পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে আছে। ওখান থেকেই শীতলের মলিন চেহেরাটা দেখছে। ইচ্ছে করছে নিজের গলা নিজেই চেপে ধরতে, কামড় দিতে। দেয়ালে মাথা ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
শীতলের সামনে গেলেই শীতল সিনক্রিয়েট করবে। তার আনা ডক্টর দেখাবে না।
এতে শীতলের ব্যথা আরও বাড়বে। এই অবস্থায় রাজ আর শীতলের সামনে এসে কষ্ট দিতে চায়না।
ডক্টর শীতলকে চ্যাকআপ করে প্রেসক্রিপশন দিয়ে গেলো। শিশির প্রেসক্রিপশনটা রাজকে দিলো। রাজ কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঔষধ এনে দিলো।
ঔষধ খাওয়ার সময় শীতল শিশিরকে বলল- উনি কোথায়?
শিশির ভ্যাবাচেকা খেলো।
-শোন, উনি যে কোথাও লুকিয়ে রয়েছে তা আমি জানি। ডক্টর আসা, ঔষধ নিয়ে আসার পেছনে উনি আছেন। শিশির শীতলের ভয়ে আরকিছু বললো না।
রাজ পর্দার আড়ালে সবকিছু শুনলো।
রাজ শীতলের রুমের জানালায় আসতেই শীতল চোখ মেলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো।
শীতল রাজের আসাটা অনুভব করেছিলো।
শীতলের চোখ রাজকে না দেখলেও মন ঠিক রাজকে খুঁজে দেখে নিয়েছে।
শীতল সাফ বলে দিলো- উনি যতক্ষণ না বাংলো থেকে যাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি ঔষধ খাব না। আমাকে মেরে এখন আবার ভালো করার নাটক করেছে। যখন আমার ছেলেকে গর্ভে ধারণ করেছিলাম তখন এতো খেয়াল কোথায় ছিলো?
মানুষিক ভাবে এতোটা আঘাত দেওয়া হয়েছে আমাকে যার কারণে আমার ছেলেটা অকালে চলে গেলো চিরতরে৷ শীতল দুই হাতে মুখ ঢেকে আমার ছেলে বলে বলে কান্না জুড়ে দিলো।
রাজ কি করবে ভেবে পেলো না। কান্নারত স্ত্রীকে একটু সান্ত্বনাও দিতে পাচ্ছেনা। হাত বাড়িয়ে শীতলকে ডাকতে গিয়ে হাত নামিয়ে নিলো।
রাজ নিজেকে হত্যাকারী ভাবলো। নিজের ছেলের হত্যাকারী। সংসার ভালোবাসা সবকিছু নিজ হাতে হত্যা করেছে সে না বুঝে। তখ যে মাথায় কি হয়েছিলো সেটা রাজও জানে না৷
রাজ মাথায় দুই হাত দিয়ে এক ছুটে বাংলো থেকে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।।
রাজ ফ্লোরে শুয়ে আছে মৃতের মতো। সারা গায়ের রক্ত যেন প্রচন্ড গতিতে ছটফট করছে। ফোন নিয়ে বাংলোর ল্যান্ড লাইনে একটা ফোন করা হলো।
– ও কোথায়? কি সিচুয়েশন? ঔষধ খেয়ে কিছু মুখে তুলেছে? কি করছে ও?
-শান্ত হন স্যার। শীতল ঘুমুচ্ছে। ঔষধ খাইয়েছি জোর করে। এক টুকরো আপেল খেয়েছে জাস্ট।
-মিস শিশির ওর খেয়াল রাখবেন দয়া করে।
রাজ লাইন কেটে দিলো।
সে দুইদিন ধরে কিছু মুখে দেয়নি। এখন আবার বেরিয়ে পড়লো বাংলোর উদ্দেশ্যে। শীতলের রুমের জানালার নিচে দাড়িয়ে রাত কাটানো তার প্ল্যান।
এছাড়া রাজের উপায় নেই। আল্লাহর এবাদতের পর বাকি সময়টুকু জুড়ে শুধু শীতল আর শীতল। দূরে থাকা সম্ভব নয় শীতল থেকে রাজের।
অন্তত শীতল যেখানে আছে সেখানে রাজ থাকতে পারলেই শান্তি। আর কি চায়!
সকালে অফিসে না গিয়ে সে নিরুদ্দেশ হয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো। একবার শিশিরের কাছ থেকে ফোন করে শীতলের খবরও নিয়েছিলো।
ঝড়ের বেগে ড্রাইভ করছে।
দূরে একটা মাঠে এসে থামলো। মাঠের মধ্যে দাড়িয়ে জোরে একটা চিৎকার করলো। রাজের মাথা যন্ত্রণা করছে খুব। তার জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থায় পরিণত হলো।বুকে ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে যেন হৃদয় বেড়িয়ে আসবে রক্তাক্ত হয়ে।
আবছা আবছা তার সৃতিতে শীতলের চেহেরাটা ভেসে উঠলো। এখন শান্তি লাগছে। আহা! কি যে শান্তি! বিশাল মরুভূমিতে শীতল হলো স্নিগ্ধতার শান্তির স্পর্শ!
শীতল অফিসে ঢুকতেই তাকে সবাই দাড়িয়ে সালাম দিলো।
শীতল সালামের উওর দিয়ে বলল- আমি এখানে আপনাদের মতোই কাজ করি। আমি আপনাদের একজন। আমাকে সালাম দিতেই পারেন মুসলিম হিসেবে তবে সেটা এমডির ওয়াইফ হিসেবে নয়।
অনেকে আছেন যারা আপনার উর্ধতন কর্মকর্তা। আমি অনেকের অধীনে। তাই আমি আপনাদের স্যার,ম্যাডাম বলে ডাকব। আপনারা নাম ধরে ডাকবেন আমাকে।তখনই রাজের এন্ট্রি হলো। সবাই রাজকে সালাম দিলো। রাজ শুধু সালামের উওর নিয়ে সোজা নিজের ক্যাবিনে ঢুকলো।
শীতলের দিকে একবারও তাকালো না।
শীতল এখন সুস্থ মোটামুটি।
শীতল যতটা সময় পারে আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকে। সে অজু অবস্থায় থাকে সব সময়।অজু ভাঙা মাত্রই আবার অজু না করা পর্যন্ত সে নিশ্বাস নিতে পারেনা। ঠোঁটে সবসময় কোন না কোন সূরা থাকে। মহানবী (সাঃ) যখন যখন যেই সূরা, দোয়া, আমল সমূহ করতেন সে গুলো করার আপ্রাণ চেষ্টায় থাকে সে।
ফজরের পরে সূরা ইয়াসীন,
যোহরের পর সূরা ফাতিহা,
আসরের পর সূরা নাবা,
মাগরিবের পর সূরা ওয়াক্কিয়া,
ঈশার পর সূরা মূলক ও সূরা আস-সেজদা তেলাওয়াত করার ফজিলত সম্পর্ক! (অনেকেই নির্দিষ্ট করে এসব সূরা বলার কথা বলে, তাদের জন্য নিচের হাদিস গুলো দেওয়া হলো)
এক…….. ফজরের পরে নির্দিষ্ট কোনো সূরা পাঠের কথা স্পষ্টভাবে কোনো হাদিসে নেই। তবে হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
.
مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ؛ تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّة
.
যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতের সঙ্গে পড়ে। তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকির করে। তারপর দুই রাকাত নামায পড়ে। সেই ব্যক্তির একটি হজ ও একটি উমরার সাওয়াব লাভ হয়। পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ। (তিরমযি ৫৮৬)
.
আর কোরআন তেলাওয়াত সর্বোত্তম যিকির এবং সূরা ইয়াসিন কোরআনের রূহ। সুতরাং দিনের শুরুটা যদি সূরা ইয়াসিন দিয়ে করা হয় তাহলে তা অবশ্যই বরকতপূর্ণ হবে। এজন্য বিশিষ্ট তাবিঈ ইয়াহইয়া ইবন কাসীর রহ বলেন,
.
من قرأ ” يس ” إذا أصبح لم يزل في فرح حتى يمسي ، ومن قرأها إذا أمسى لم يزل في فرح حتى يصبح . قال : وأنبأنا مَن جرَّبَ ذلك
.
যে ব্যক্তি সকালে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে। তিনি আরো বলেন, আমাকে এ বিষয়টি এমন এক ব্যক্তি বলেছেন, যিনি এর বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। (বর্ণনাকারী ইবন যুরাইস, ফাযায়েলুল কুরআন, বর্ণনা নং ২১৮ পৃষ্ঠা ১০১)
.
দুই…… জোহরের পরেও নির্দিষ্ট কোনো সূরা পাঠের কথা হাদিসে নেই। তবে যেহেতু সূরা ফাতহ কোরআনের একটি ফজিলতময় সূরা, তাই এটি তেলাওয়াত করতে পারেন। এই সুরার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ওমর রাযি.-কে বলেছেন,
.
لَقَدْ أُنْزِلَتْ عَلَيَّ اللَّيْلَةَ سُورَةٌ لَهِيَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ ، ثُمَّ قَرَأَ : إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا
.
আজ রাতে আমার উপর এমন একটি সূরা নাযিল হয়েছে, যা আমার কাছে সূর্যালোকিত সকল স্থান হতে উত্তম। এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ পাঠ করলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।’ (বুখারি ৪১৭৭)
.
তিন…….. আসরের পরেও নির্দিষ্ট কোনো সূরা পাঠের কথা হাদিসে নেই। তবে সূরা নাবা’র ফজিলত সম্পর্কে একটি দুর্বল হাদিসে এসেছে,
.
مَنْ قَرَأَ سُورَةَ عَمَّ يَتَسَاءَلُونَ سَقَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ بَرْدَ الشَّرَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
.
যে ব্যক্তি সূরা নাবা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন ঠাণ্ডা পানীয় দ্বারা তৃপ্ত করবেন। (তাফসিরে কাশশাফ ৬/৩০৩)
.
চার…….. মাগরিবের পরে বা রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ সম্পর্কে বিভিন্ন তাফসিরের কিতাবে অন্তিম রোগশয্যায় আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি.-এর শিক্ষাপ্রদ কথোপকথন এসেছে, ইবন কাসীর ইবন আসাকিরের বরাত দিয়ে এই ঘটনা বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. যখন অন্তিম রোগশয্যায় শায়িত ছিলেন, তখন আমীরুল মু’মিনীন ওসমান রাযি. তাঁকে দেখতে যান৷
.
তখন তাঁদের মধ্যে শিক্ষাপ্রদ যে কথোপকথন হয় তা নিম্নরুপ:

— হযরত ওসমান: مَا تَشْتَكِي؟ আপনার অসুখটা কি?
.
—হযরত ইবনে মাসউদ: ذُنُوبِي আমার পাপসমূহই আমার অসুখ৷

.
— হযরত ওসমান: فَمَا تَشْتَهِي؟ আপনার বাসনা কি?

—হযরত ইবনে মাসউদ: رَحْمَةَ رَبِّي আমার পালনকর্তার রহমত কামনা করি৷
.
— হযরত ওসমান: أَلَا آمُرُ لَكَ بِطَبِيبٍ؟ আমি আপনার জন্যে কোন চিকিৎসক ডাকব কি?
—হযরত ইবনে মাসউদ: الطَّبِيبُ أَمْرَضَنِي চিকিৎসকই আমাকে রোগাক্রান্ত করেছেন৷

— হযরত ওসমান: أَلَا آمُرُ لَكَ بِعَطَاءٍ؟ আমি আপনার জন্যে সরকারী বায়তুল মাল থেকে কোন উপঢৌকন পাঠিয়ে দেব কি?
.
—হযরত ইবনে মাসউদ: لَا حَاجَةَ لِي فِيهِ এর কোনো প্রয়োজন নেই৷
.
— হযরত ওসমান:يَكُونُ لِبَنَاتِكَ مِنْ بَعْدِكَ؟ উপঢৌকন গ্রহণ করুন৷ তা আপনার পর আপনার কন্যাদের উপকারে আসবে৷
.
—হযরত ইবনে মাসউদ:
.
أَتَخْشَى عَلَى بَنَاتِي الْفَقْرَ؟ إِنِّي أَمَرْتُ بَنَاتِي يَقْرَأْنَ كُلَّ لَيْلَةٍ سُورَةَ الْوَاقِعَةِ
.
আপনি চিন্তা করছেন যে, আমার কন্যারা দারিদ্র ও উপবাসে পতিত হবে৷ আমি তো আমার কন্যাদেরকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছি যে, তারা যেন প্রতিরাত্রে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করে৷
.
এরপর তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি,
.
مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْوَاقِعَةِ كُلَّ لَيْلَةٍ ، لَمْ تُصِبْهُ فَاقَةٌ أَبَدًا
.
যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে, সে কখনও উপবাস করবে না৷ (তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন ৮/১০৬ সাফয়াতুত তাফাসীর ৩/৩০৪ ইবন কাসীর ৪/২৮১ তারিখে দামিশক ৩৬/৪৪৪ বাইহাকি ৪/১১৯
.
পাঁচ……. ইশার পরে বা রাতে সূরা মুলক পাঠ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
.
من قَرَأَ ( تبَارك الَّذِي بِيَدِهِ الْملك ) كل لَيْلَة مَنعه الله بهَا من عَذَاب الْقَبْر ، وَكُنَّا فِي عهد رَسُول الله ﷺ نسميها الْمَانِعَة ، وَإِنَّهَا فِي كتاب الله سُورَة من قَرَأَ بهَا فِي كل لَيْلَة فقد أَكثر وأطاب
.
যে ব্যক্তি প্রতি রাতে তাবারাকাল্লাযী বি ইয়াদিহিল মুলকু.. পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন,) আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর যুগে সূরাটিকে মানেআ’ বা বাধাদানকারী সূরা বলে আখ্যা দিতাম। এটি আল্লাহ তাআলার কিতাবের মাঝে এমন একটি সূরা, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে পাঠ করবে সে অধিক ও উৎকৃষ্ট আমল করবে। (নাসাঈ ১০৫৪৭)
.
জাবির রাযি. বলেন,

أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ لَا يَنَامُ حَتَّى يَقْرَأَ الم تَنْزِيلُ ، وَتَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ المُلْكُ
.
রাসূলুল্লাহ ﷺ সূরা সাজদাহ ও সূরা মুলক তেলাওয়াত করা ব্যতিরেকে ঘুমাতেন না। (তিরমিযি ২৮৯২)
.
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুক। আমিন
.
শীতল লক্ষ্য করলো রাজের পরিবর্তন। আজ কয়েক দিন হলো রাজ শীতলকে পিয়ন দিয়ে ঢেকে পাঠায়নি।
পিয়ন এখন আর বলেনা – আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম! স্যার আপনাকে স্বরণ করেছেন।
শীতলের সব কাজ ম্যানেজার চ্যাক করেন। রাজের সাথে তার কোন কাজ পড়েনা৷ রাজ একবারও সামনে পড়েনা।
তবে রাজ কি শীতলকে ভুলে গেল? শীতলের অভিমান কি ভাঙাবে না?
.
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের একটি নাম (আরবি,বাংলা)
৯২ﺍﻟﻨُّﻮﺭُ আন-নূর আলোক ❤
.
চলবে…….
.
.
.
#লালগোলাপ❤
Writer-Moon Hossain
Part-47
হল রুমে সবাই বসে আছে। আজ কয়েক দিন ধরে মিটিংয়ের জন্য প্রিপ্রারেশন নিয়ে আছে।অথচ রাজের দেখা নেই।
আজ রাজ এসেছে তবে এসেই চুপচাপ চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েছে।
সবাই অপেক্ষা করছে রাজ কখন ঘুম থেকে উঠবে।
রাজের ঘুম ভাঙলেই মিটিং শুরু হবে।।
শিশির শীতলের দিকে তাকিয়ে আছে।
শীতল বলল- আমার দিকে ওভাবে তাকানোর কিছু নেই।
এসব নাটক উনার প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য নাটকের কিছু অংশ।
-একদম ঠিক। তাই তো ব্যাবস-পাতি সব লাঠে উঠে পড়েছে। এপর্যন্ত দুটো লস দেখতে হয়েছে আমাদের। পরে না জানি কত লস হয়।
শীতল এশারের নামাজ পড়ে বারান্দায় দাঁড়ালো।
এরকম সময়ের হাওয়া তার ভালো লাগে।
আবছা আবছা কাকে যেন দেখা যাচ্ছে।
শীতলের চিনতে অসুবিধা হলো না। ওটা রাজ।
প্রতি রাতেই এভাবে রাজ দাড়িয়ে থাকে শিশির তাকে বলেছে।
শীতল বারান্দা থেকে সোজা নিচে সোফায় এসে বসলো।
টেলিফোন বাজছে।
শিশির রান্নাঘর থেকে বলল- রিসিভ কর মহারাণীর মতো বসে না থেকে।
শীতল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে উঠলো। রাজের আওয়াজ।
রাজ কি কাঁদছে?
রাজ মাঝরাতে বাড়ি ফিরেছে। যদিও বাড়ি বলতে আপনজনদের সাথে বাস করা জায়গা বোঝায়, রাজ এটা কে বাড়ি বলেনা। সে ছাড়া আপনজন বলতে কেউ নেই বাড়ি নামক বিশাল অট্টালিকায়।
ডক্টর রাজকে কিছু ঔষধ দিয়েছিলো মাথা যন্ত্রণার কারণে। ঔষধ খেয়েও যন্ত্রণা যাচ্ছে না। রাজ এরা ডক্টরকে বলেনি। কারও সাথে শেয়ার করেনি।
রাতের খাবার বলতে ঘুমের ঔষধ খেলো। কয়েকটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে সে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
বিছানায় শীতল যে পাশে ঘুমুতো সেখানে হাত বুলাতে বুলাতে তার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো।

যদি দিনের শুরুটা নামাজ দিয়ে শুরু হয় তবে সারাদিনটা যতই খারাপ থাক মনে একটা শান্তি বয়ে যায়।
ফজরের নামাজ সবাই পড়তে পারেনা ঘুমের জন্য। শয়তান সব সময় মানুষের সাথে মিশে থাকে। আল্লাহর এবাদতে বাঁধা দেয়। যারা আল্লাহর নেক বান্দা, মহানবী (সাঃ) এর উম্মত তারা শয়তানের সব প্ররোচনা উপেক্ষা করে মহান আল্লাহর এবাদত করতে সক্ষম হয়। তেমনি-ই ফজরের নামাজ পড়তে পারে শুধু শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেরিয়ে আসা আল্লাহর নেক বান্দারা!
শীতলের জীবনে যতই বাঁধা আসুক। সে কখনো নামাজ কাযা করেনা।যত রাতেই ঘুমুতে যাক না কেন,যত গভীর ঘুম হোক না কেন ফজরের আজানে ঠিক চোখ খুলে যায়। তেমনি রাজও নামাজে অবহেলা করেনা যখন থেকে সে আল্লাহর পথে এসেছে।
এতো গুলো ঘুমের ঔষধ খেয়ে রাজের দুপুরে ঘুম থেকে উঠার কথা। কিন্তু ফজরের আজান কানে আসতেই সে উঠে বসলো বিছানায়। তারপর সোজা শাওয়ার নিয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
শীতলকে একটা ম্যাসেজও করে দিলো যেতে যেতে।
“মসজিদে যাওয়ার আগে স্ত্রীর কপালে চুমু খাওয়া সুন্নত। আমার দূর্ভাগ্য স্ত্রী থাকতেও এই সুন্নত পালন করতে পারিনা। দুঃখজনক।
ফজরের নামাজের ১০ উপকারিতা!
.
.
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
.
أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَّلاةُ ، فَإِنْ صَلَحَتْ صَلَحَ لَهُ سَائِرُ عَمَلِهِ ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ
.
কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে। যদি নামাজ ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি নামাজ বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। (তাবরানি ১৯২৯)
.
মূলত নামাজ এমন ইবাদত যা সারা বছর দৈনিক পাঁচ বার আদায় করতে হয়। মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অবস্থাতেই নামাজ মাফ হয় না। এমনকি মৃত্যুশয্যাতেও নামাজ হতে বিরত থাকার কোনো বিধান নেই।
.
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজর নামাজের গুরুত্ব আরো বেশি। হাদিসে এর এত বেশি গুরুত্ব এসেছে যে, যদি একজন মুমিন তন্মধ্য থেকে মাত্র একটিও মনে রাখে তাহলেও এক্ষেত্রে তার গাফলতি অনায়াসে দূর হয়ে যাবে।
.
তার হিম্মত বেড়ে যাবে। ঘুম ও অলসতা কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম হবে। নব প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে সে ফজরের জামাতে শরিক হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টায় ব্রতী হবে—ইনশা আল্লাহ।
.
এ লক্ষে ফজরের নামাজ আদায়ে বিশেষ ১০ টি উপকারী দিক পাঠকের জন্য নিচে তুলে ধরা হলো।
.
১. ফজরের নামাজে দাঁড়ানো, সারা রাত দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সমান। উসমান ইবন আফফান রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
.
مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ ، وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ
.
যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ঈশার নামাজ আদায় করলো, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়লো, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়লো। (মুসলিম ১০৯৬)
.
২. ওই দিনের পুরোটা আল্লাহর জিম্মায় থাকার দুর্লভ সৌভাগ্য। ফজরের নামাজ পড়লেই শুধু এ-ঈর্ষণীয় সৌভাগ্য লাভ করা যাবে। যুনদব ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সুফইয়ান আলবাজালি রাযি. বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
.
مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللَّهِ فَلَا يُتْبِعَنَّكُمُ اللَّهُ بِشَيْءٍ مِنْ ذِمَّتِهِ
.
যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল। অতএব আল্লাহ যেন তার জিম্মার বিষয়ে তোমাদেরকে কোনোরূপ অভিযুক্ত না করেন। (তিরমিযি ২১৮৪)
.
৩. ফজরের নামাজ কেয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দেবে। বুরাইদা আলআসলামি রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
.
بَشِّرِ الْمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
.
যারা আঁধারে (ফজর নামাযে) মসজিদের দিকে হেঁটে যায়, তাদের কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও। (আবু দাউদ ৪৯৪)
.
৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত প্রাপ্তির সুসংবাদ। আবূ যুহাইর ‘উমারাহ ইবনে রুআইবাহ রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে,
.
لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا» يعني: الفَجْرَ والعَصْرَ
.
যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামাজ) আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম ৬৩৪, নাসায়ি ৪৭১, ৪৮৭, আবু দাউদ ৪২৭, আহমদ ১৬৭৬৯, ১৭৮৩৩)
.
৫.মুনাফেকি থেকে মুক্তি পাবে। আবূ হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
.
لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى المُنَافِقِينَ مِنْ صَلاَةِ الفَجْرِ وَالعِشَاءِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْواً
.
মুনাফিকদের উপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত। (বুখারি ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১)
.
৬. সরাসরি আল্লাহর দরবারে নিজের নাম আলোচিত হবে। আবূ হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
.
يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلاَئِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلاَئِكَةٌ بِالنَّهَارِ ، وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلاَةِ الفَجْرِ وَصَلاَةِ العَصْرِ ، ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ ، فَيَسْأَلُهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ : كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي ؟ فَيَقُولُونَ : تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ ، وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ
.
তোমাদের কাছে পালাক্রমে দিনে ও রাতে ফেরেশতারা আসে। তারা আসর ও ফজরের সময় একত্রিত হয়। যারা রাতের কর্তব্যে ছিল তারা ওপরে উঠে যায়। আল্লাহ তো সব জানেন, তবুও ফিরিশতাদেরকে প্রশ্ন করেন, আমার বান্দাদেরকে কেমন রেখে এলে? ফেরেশতারা বলে, আমরা তাদেরকে নামাজরত রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম, তখনো তারা নামাজরত ছিল। (বুখারি ৫৪০)
.
৭. দুনিয়া আখেরাতের সেরা বস্তু অর্জিত হয়ে যাবে। আয়েশা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
.
رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا
.
ফজরের দুই রাকাত দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, সবকিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। (মুসলিম ১২৪০)
.
৮. পরিপূর্ণ এক হজ্জ ও ওমরার সওয়াব পাবে, যদি সে সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকে। আনাস ইবন মালিক রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
.
مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ ، كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ ، وَعُمْرَةٍ ، تَامَّةٍ ، تَامَّةٍ ، تَامَّةٍ
.
যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায়ান্তে বসে আল্লাহর যিকিরে মশগুল থেকে সূর্য উদয় হওয়ার পর দুই রাকাত নফল নামাজ (ইশরাক) আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ এক হজ্জ ও ওমরার সওয়াব পাবে। ‘পরিপূর্ণ’ এ শব্দটি তিনি তিনবার বলেছেন। (তিরমিযি ৫৮৬)
.
৯. তুলনাহীন গণিমত লাভ করবে। উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ নাজদের দিকে এক অভিযানে একটি সেনাদল পাঠান। তারা প্রচুর গণিমতের সম্পদ অর্জন করে এবং তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। তাদের সাথে যায় নি এমন এক লোক বলল, অল্প সময়ের মধ্যে এত পরিমাণে উত্তম গণিমত নিয়ে এদের চেয়ে তাড়াতাড়ি আর কোন সেনাদলকে আমরা ফিরে আসতে দেখি নি। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
.
أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى قَوْمٍ أَفْضَلُ غَنِيمَةً وَأَسْرَعُ رَجْعَةً ؟ قَوْمٌ شَهِدُوا صَلَاةَ الصُّبْحِ ثُمَّ جَلَسُوا يَذْكُرُونَ اللَّهَ حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأُولَئِكَ أَسْرَعُ رَجْعَةً وَأَفْضَلُ غَنِيمَةً
.
আমি কি তোমাদেরকে এমন এক দলের কথা বলব না যারা এদের চেয়ে তাড়াতাড়ি উত্তম গণিমত নিয়ে ফিরে আসে? যারা ফজরের নামাজের জামা’আতে হাযির হয়, (নামাজ শেষে) সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহ্ তা’আলার যিকির করতে থাকে, তারাই অল্প সময়ের মধ্যে উত্তম গণিমতসহ প্রত্যাবর্তনকারী। (তিরমিযি ৩৬৪১)
.
১০. কেয়ামতের দিন সরাসরি আল্লাহকে দেখার সৌভাগ্য লাভ। আর এটি হচ্ছে সর্বোত্তম পুরস্কার। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ আল বাজলী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
.
أَمَا إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا، لاَ تُضَامُّونَ ـ أَوْ لاَ تُضَاهُونَ ـ فِي رُؤْيَتِهِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لاَ تُغْلَبُوا عَلَى صَلاَةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ، وَقَبْلَ غُرُوبِهَا فَافْعَلُوا ‏”‏‏.‏ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا
.
শোন! নিশ্চয় তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে, যেমন স্পষ্ট ঐ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমরা কোনো ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই তোমরা যদি সূর্য উঠার আগের নামাজ ও সূর্য ডুবার আগের নামাজ আদায়ে সমর্থ হও, তাহলে তাই কর। তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন, “সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্ পাঠ করুন।” (বুখারি ৫৭৩)
.
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথা নিয়মে জামাআতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে উল্লেখিত ফজিলত, মর্যাদা ও উপকারিতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
.
শীতল অনেকক্ষণ ধরে সিএনজির জন্য দাড়িয়ে ছিলো শিশির কে নিয়ে। অফিস টাইম প্রায় হয়ে এলো।
কিছুই পাওয়া যাচ্ছেনা আজ। দাড়িয়ে না থেকে সে শিশির কে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।
হঠাৎ দেখলো সামনে একটা ভীড়।
লোকজনের উপেক্ষা করে ভীড়ের মাঝখানে ঢুকে পড়লো শীতল। তার মন কেমন যেন করছিলো আজ। হতে পারে ভীড়ের সাথে কোন সংযোগ রয়েছে।
রাজ গাড়ির মধ্যে সেন্স লেস অবস্থায় পড়ে আছে।
শীতলের বুক কেঁপে উঠলো।
রাজের কাছে গিয়ে রাজকে কয়েক বার ডাকলো।
কোন সাড়া নেই।
সবাই বলাবলি করছে রাজ স্টক করেছে।
ক্লিনিকে নেওয়া হলো রাজকে।
শীতল দাড়িয়ে আছে অটির সামনে।
ডক্টর আশংকা করছে রাজের ব্রেইন স্টক হয়েছে।
শিশির বলল- শীতল এখানে বস। তুই কাঁপছিস । শীতল জায়নামাজে বসে অনবরত চোখের পানি ফেললো।
রাজের জ্ঞান ফিরেছে।
তার চোখে সানগ্লাস।
জুতো জোড়া বুকের উপর নিয়ে রেখেছে। যে জুতো নিতে আসে তাকেই সে কামড় দেয়। সে কাউকে চিনতে পাচ্ছেনা।
শুধু বলছে – আমি কোথায়? আমি কোথায়? এটা কোন জায়গা? আপনারা কারা? দুটো ডক্টরকে কামড়ও মেরেছে সে।
শীতল যখন সামনে আসলো তখন কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
শীতল বলল- বলুন তো আমি কে?
রাজ বলল- বোরখা পরা আপা আপনি? আমার থেকে দূরে যান। আমার পাপ লাগবে। আমি একজন পরহেজগার আনম্যারিড ছেলে।
বেগানা নারীদের থেকে দূরে থাকি। দয়া করে বের হন কেবিন থেকে।
শীতল হতভম্ব!!
তাকে রাজ চিনতে পাচ্ছেনাা।
রাজ নিজেকেও নিজে চিনতে পারলো না।
ডক্টররা বলল- মিসেস রাজ ওই আর সরি। আপনার হাসব্যান্ড সৃতি হারিয়েছে।
শীতল বিশ্বাস করলো না কিছু। আবার রাজের আচরণ দেখে বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছে রাজের সৃতি নেই।
রাজ কেমন শিশুসুলভ আচরণ করছে আগের মতোই।
তবে কি রাজ আগের মতোই!
না না শীতল আরকিছু ভাবতে পারলো না।
শীতল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রাজের কর্মকাণ্ড দেখছে।
সাতদিন ধরে রাজ ক্লিনিকে আছে। সে কিছুতেই থাকতে চাচ্ছে না।বের হতে চাচ্ছে ক্লিনিক থেকে। সে যতক্ষণ জেগে থাকে ততক্ষণ বলে- এটা কি? ওটা কি? আমি কে? আপনি কে? আমার বাসা কোথায়? আমি কোথায়?
কোন মেয়েকে দেখলেই সে বলে – বেগানা নরীরা আমার থেকে দূরে থাকুন।
শীতলকে দেখলে সে আপা বলে বলে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। শীতলও রাজের সাথে ক্লিনিকে আছে।।
নামাজ পড়ে দোয়া করছে রাজের জন্য।
এরমধ্যে রাজ ক্লিনিকে থাকতেই চাঁচি আর শাকিলা হাজির হলো।
চাঁচি বলল- খবর শুনে লেট করিনি। টিকিট কেটে সোজা লন্ডন থেকে চলে এলাম। তাছাড়া দেশের বাহিরে ভাইরাসের ছড়াছড়ি।
আহারে! আমাদের ছেলেটাকে ভালো রেখে গিয়েছিলাম। কিছুদিন ছিলাম না বলেই আজ এই অবস্থা! বাবা আমার।
শীতল বলল- চাঁচি নিজেকে সামলান। উনার তেমন কিছু হয়নি। শারীরিক ভাবে সুস্থ।
-চুপ করো। তুমি কি ডক্টর?
অমন ভালো ছেলেটা এমন অবস্থায় আছে তোমার জন্য।
শীতল চাঁচির পাশে বসলো।
-চাঁচি! দেশে এসেছেন। দেশে লোক বলতে শুধু উনি আছেন আপনাদের।
উনার বাড়িতে আপনি মেহমান। মেহমান কে সম্মান দিতে হয় এটা আমার বাবার শিক্ষা।
আপনি বসুন আমি শাকিলা আপাকে দেখে আসি।
শাকিলা রাজের সামনে দাড়িয়ে আছে।
শীতল আসতেই শাকিলা রক্তগরম চোখে শীতলের দিকে তাকালো।
-আপা এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই।
কেমন আছেন?
– হোয়াট ডু ইউ মিন?
-ওহ সরি, আপনি আবার বাংলা সেভাবে বুঝেন না। হাউ আর ইউ?
-ড্রামা করছো? ভেরি গুড।
-ড্রামা করা আমার কাজ নয়।
যাইহোক, এবার কতদিন থাকবেন?
-সেটা তোমায় বলব? হু আর ইউ?
-অবশ্য কতদিন থাকবেন সেটা আপনার হাতে কখনো থাকেনা।
আপনার প্রাণের ভাইয়া ডিসাইড করে।
উনি আপনাকে সেবারও লন্ডনে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।
এবারও নিশ্চয়ই পাঠাবে।
আপনাদের এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবেনা। কয়েক দিনের জন্য এসেছেন, থাকুন,খান, ঘুরুন। টিকিটটা না হয় সুস্থ হয়ে উনি কেটে দেবেন!
শাকিলা রেগে শীতলের দিকে হাত উঠাতেই নামিয়ে নিলো।
শীতল হাসলো।
রাজ শাকিলার দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁচি আশাবাদী খুব।
চাঁচি বলল- আমাদের চিনতে পারবে। আমরা ওর নিজের লোক। বাহিরের লোকদের রাজ বাবা চিনতে পারেনা।
শাকিলা বলল- রাজ কেমন আছিস? আমরা দেশে এসেছি আজ। আমি এসেছি শুধু তোর জন্য?
রাজ ড্যাঁপ ড্যাঁপ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল- আপা আপনাকে চেনা চেনা লাগছে। সরি তবুও চিনতে পারলাম না।
-আমি তোর আপা? কি বলছিস? আমি তোর খেলার সাথী। যাকে বউ বানাবি ছোট বেলায় বলেছিলি। আমরা ছোটবেলায় বর-বউ খেলাম।
– আমি ছোটো বেলায় কখনো কোন বেগানা মেয়ের সাথে খেলিনি। সব মিথ্যে। আমি অজু করব।
এই বেহায়া স্টাইলিশ মেয়েকে দেখে আমার অজু হালকা হয়ে গিয়েছে।অজু নেই মেবি। একে সরাও আমার কেবিন থেকে কেউ।
এসব কি ড্রেস!
চাঁচি আর শাকিলা দুজন হতভম্ব!!
রাজকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।
রাজের সাথে শীতলও বাড়িতে গেলো। শাকিলা আর চাঁচি অনেক আগেই বাড়িতে উঠেছে। নিজেদের মতো থাকতে শুরু করেছে।
রাজের সাথে বাড়ি যাওয়ার সময় শিশির অনেক গুলো কড়া কথা শোনায় শীতলকে।
-তোর জন্য এসব হয়েছে।
একেবারে পাগল করে ছাড়লি লোক টাকে। এতো চাপ নিতে পারেনি লোক টার ব্রেইন।
এখন খুশি হয়েছিস তো?
বেচারা স্যার!
শীতল কিছু বললো না শুধু দু’ফোটা চোখের পানি গাল বেয়ে পড়লো।
রাজ ঘুমিয়ে আছে। তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।
শীতল অনেক দিন পর বাড়িটা দেখছে। সবকিছু কত চেনা। আগের মতোই আছে যেভাবে সে রেখে গিয়েছিলো। কিছুই পরিবর্তন হয়নি।
এক রকম সাজানো গোছানো যেভাবে শীতল সাজিয়ে ছিলো।
বেডরুমে এসে ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেললো শীতল।
বেডরুম টাও আগের মতোই।
বেড সিড, জানালার নীল সাদা ফুলের পর্দা।
রাজ গভীর ঘুমে আছন্ন। গুটিশুটি মেরে সে ঘুমুচ্ছো।
শীতল বারান্দায় গেলো। গোলাপের সুগন্ধি চারদিকে।
অজস্র গোলাপ ফুটে আছে।
বারান্দায় জোড়ে হাওয়া বইছে।শীতলের স্কার্ফ উড়ছে।
বোরখা টা খুলে রাজের কাছে গেলো শীতল।
রাজ কি যেন বির বির করছে। শীতল রাজের কপালে হাত রাখলো।
লম্বা চুল হয়ে চেহেরাটার কি যে অবস্থা! শীতল এতোদিনে রাজের মুখের দিকে তাকিয়েছে।সংসার ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে আজ প্রথম লক্ষ্য করলো।
বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে। শীতল রাজের মুখের কাছে গিয়ে শুনতে চেষ্টা করলো কি বলছে সে।ঘুমের মধ্যে আচমকা শীতলকে জরিয়ে ধরে নিচে ফেলে দিলে রাজ।
রাজ শীতলের গলায় মুখ গুজে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে। শীতল অনেক দিন পর রাজের এতো কাছে এলো। নিজেদের বেডরুমে নিজেদের বেডে শুয়ে আছে সে রাজের সাথে। কয়েকবার ছাড়ানোর চেষ্টা করলো রাজকে। লাভ হলো না। বরং আরও শক্ত করে ধরলো।
রাজের মুখের সাথে কয়েকবার শীতলের মুখের স্পর্শ হলো। রাজের নিশ্বাস সরাসরি শীতলের মুখে পড়ছে।শীতল রাজের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। অনুভব করলো তাকে। কয়েক মূহুর্তের জন্য কোথায় যেন হারিয়ে গেলো সে।
শীতলের হার্টবিট বাড়ছে ক্রমশ। যেন হার্ট শরীর থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে!

.
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের একটি নাম (আরবি, বাংলা)
৯৩. ﺍﻟْﻬَﺎﺩِﻱ আল-হাদী পথপ্রদর্শক❤
.
চলবে……….