লালগোলাপ?
Part_34_35
Writer_Moon Hossain
রাজ এক ঘন্টা যাবৎ বসে আছে টেবিলে।
একসাথে নাশতা করবে।
শীতলের আসার নাম নেই।
রাজ শীতলের কথা ভেবে যতটা সম্ভব কম যাচ্ছে সামনে।
কয়েক দফায় লোক পাঠানো হয়েছে শীতলকে নিচে নিয়ে আসতে।
শীতল এলো না।
রাজ হাল ছাড়েনি।
সে অপেক্ষা করছে।
ফুলি এসে চুপচাপ দাঁড়ালো।
-কি ব্যাপার?
ফুলি চুপ।
-রাজরানীর কি নিউজ?
উনার নাশতা করার মোড হয়েছে?
নাকি আরও ওয়েট করতে হবে?
– ম্যাডাম বলেছে….
-হোয়াট?
-নাশতা করবেনা।
রাজ উঠে দাঁড়ালো।
সোজা বেডরুমে চলে এলো। রাগে তার প্রচন্ড রকম মুখ লাল হয়ে গেলো।
শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ভাবলো আজ এই মেয়েকে নাশতা না করার শিক্ষা দেবে।
রাজের সাথে অভিমান করেছে, তার সাথে নাশতার কি সম্পর্ক।
কামরায় এসে রাজের রাগ উবে গেলো।
শীতল কোরআন তেলওয়াত করছে।অনেক দিন পর সে শীতলের কন্ঠে সুরেলা কোরআন তেলওয়াত শুনছে।
আহা! সে যে কি পরম শান্তি। কোরআন তেলওয়াত অবস্থায় শীতলকে আগের থেকে বেশি পাক-পবিত্র দেখাচ্ছে।
রাজ এসে শীতলের পাশে বসলো।
শীতল নিজের মনে কোরআন তেলওয়াত করছে।
কোরআন তেলওয়াত করলে আশেপাশে কি হয় তা লক্ষ্য করা হয়না। মনে হয় অন্য এক দুনিয়ায় চলে গিয়েছে সমস্ত ধ্যান।
কোরআন তেলওয়াত শুনতে শুনতে রাজের চোখ বুঝে আসছে, সকাল ৮টা থেকে তেলওয়াত শুরু হয়েছে, এখন বাজে দেড়টা।
রাজ অনেক্ক্ষণ আগে ১২ টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েছে শীতলের কাধে।
ঘুমের মধ্যেই সে কোরআন তেলওয়াত শুনতে পাচ্ছে।
ঠোঁটে মুচকি মুচকি হাসি দেখা যাচ্ছে।
রাজ পানির আওয়াজে চোখ মেলে তাকালো।
শীতল কোথায় গেল! জায়নামাজ কোথায় গেলো! আল কোরআন কোথায়!
শীতল তো তেলওয়াত করছিলো।
রাজ নিজকে ফ্লোরে আবিষ্কার করলো।
উপুড় হয়ে সে ফ্লোরে পড়ে পড়ে বেঘোরে ঘুমুচ্ছিলো।
ফুলি সহ আরও দুজন কাজের লোক তাদের বেডরুম পরিষ্কার করছিলো। সব ময়লা রাজের কাছে জমেছে।
কাজের লোকেরা ভয়ে রাজ কে ডেকে তুলেনি। যদি রাজ কামড়ে দেয় আগের মতো।
কাজের লোকেরা রাজের সামনে বড় বড় চোখ করে দাড়িয়ে আছে।
রাজ উঠলেই ময়লা তুলে পরিষ্কার করা হবে।
রাজ হতভম্ব!
রাজ নামাজ পড়তে যাবে। গোসলের জন্য সেই দেড়টা থেকে ওয়াশরুমের সামনে দাড়িয়ে আছে।
কতবার নক করলো।
ভেতর থেকে শুধু পানির আওয়াজ পাওয়া গেলো।
এখন আড়াইটার উপর বাজে।
রাজ নক করতে করতে, অপেক্ষা করতে করতে ওয়াশরুমের ডোরের সামনে হেলান দিয়ে বসে পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
রাজদের বাড়িতে অনেক গুলো ওয়াশরুম আছে।
শীতল যে ওয়াশরুমে গোসল করতে যাবে তাকেও সেখানে গোসল করতে হবে। এটাই তার জন্য নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে।
রাজের ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বাথটাবে আবিষ্কার করলো।
সে সহ জামাকাপড় সবকিছু ভিজে টুপটুপ হয়ে আছে।
কার এতো বড় দুঃসাহস! কে করলো এমন কাজ!
রাজ হতভম্ব!
শীতল সারাক্ষণ ঘুমিয়ে কাটায়। কি যেন ভাবে।
রাজের সাথে কথা বলেনা।
কিছু জিজ্ঞেস করলে এমন ভাব করে যেন কিছু শুনতে পায়নি।
শীতলকে বোরখা পরিয়ে রাজ বাহিরে নিয়ে গেলো।
আগে যেমন রাজকে শীতল পোশাক পরিয়ে গুছিয়ে নিয়ে যেত।
ঠিক এমন ভাবে রাজও শীতলকে গুছিয়ে, সাজিয়ে, বোরখা পরিয়ে নিয়ে গেলো।
শীতল রাজী হয়নি, দূর্বল থাকায় সে পেরে উঠলো না।
গাড়িতে শীতল এক কোণে বসে রইলো।
রাজ শীতলের সাথে ঘেঁষে বসলো।
শীতল কিছু বললো না। কিন্তু গা ঘেঁষে বসাতে কেমন যেন উশখুশ করলো।
পুরো রাস্তা শীতলের সাথে রাজ প্রচুর কথা বললো।
সবই আগের কথা।
শীতলকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য পুনরায় বলা হচ্ছে।
শীতল এসব কিছু শুনলো না।
সে জানালা দিয়ে বাহিরের পরিবেশ দেখছে।
নির্মল বাতাস বইছে।
কোলাহল মুক্ত যানজট পরিবেশ।
শীতল নেকাব খুলে চোখ বন্ধ করে বাহিরের বাতাস অনুভব করতে থাকলো।
রাজ কথা থামিয়ে শীতলকে দেখলো।
বোরখা পরিধানের পর নেকাব খোলা শীতলের মুখ দেখতে বড় ভালো লাগে তার।
অন্য রকম একটা লোভ জাগে শীতলকে ছুঁয়ে দেওয়ার।
রাজ শীতলের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল- এভাবে লোভ জাগিও না। আল্লাহ তায়ালা জানে এখন আমার মনে কি চলছে, এন্ড কি চাইছে।
শীতল চোখ মেলে রাজের দিকে তাকালো।
রাজ শীতলের গোলাপি ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।
ডাগরডোগর গোলাপিনেশা যুক্ত চোখে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
শীতল রাজকে অবাক করে দিয়ে মুখে নেকাব লাগিয়ে নিলো।
-উফফ, এটা কি করলে তুমি?
নেকাব তো অন্য লোকেদের জন্য। নিজের স্বামীর সামনে নেকাব কেউ লাগায়না।
ভালো করে আজ পর্যন্ত একটু দেখতেও দাওনি আমায় তোমাকে।
মেন্টাল থাকার সময়ও দেখতাম এতো লম্বা ঘোমটা দিয়ে রাখতে।
উঁকিঝুঁকি দিয়ে একটু একটু করে তোমার মুখশ্রী দেখতাম লুকিয়ে লুকিয়ে।
ধরা খেলে যা রাগী লুকে বড় বড় চোখ দিয়ে তাকাতে।
ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে ফেলতাম।
তাই বলে দমে যেতাম না।
একটু পর ঠিকই আমি তোমাকে আগের মতো উঁকিঝুঁকি দিয়ে লুকিয়ে দেখতে থাকতাম। হা!হা!হা!।
আমি এতো বক বক করছি, তুমি কোন কথায় বলছো না কেন?
বলো কিছু?. তোমার কথা শোনার জন্য অস্থির হয়ে আছি।
আগে কত কথা বলতে। আমি শুধু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে শুনতাম। কি কথা বলছো সেটা না বুঝলেও শুনতাম। আসল কথা হলো তুমি কথা বলছো। সেটাই আমার কাছে মধুর মতো লাগতো।
রাজ রেস্টুরেন্ট পৌঁছাতেই সমস্ত রেস্টুরেন্ট ফাঁকা হয়ে গেলো।
আজ শুধু সে আর তার শ্রেয়সী থাকবে। আর কেউ না।
-হ্যালো স্যার৷ হাউ কেন আই হেল্প ইউ?
-আসসালামু আলাইকুম!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম!
-তোমাদের ম্যাডাম পরহেজগার মেয়ে।
তাকে নিয়ে কিছুটা সময় কাটাতে চাই নিরিবিলি তে।
এই রেস্টুরেন্টে টা তোমাদের ম্যাডাম এর খুব লাইক।
আমার তোমাদের ম্যাডাম কে লাইক।
-ইয়েস স্যার, আই কেন আন্ডারস্ট্যান্ড।
আমরা এখুনি রেস্টুরেন্ট ফাঁকা করে দিচ্ছি।
রেস্টুরেন্টর ম্যানাজার পাঁচ মিনিটে রেস্টুরেন্ট খালি করে দিলো।
রাজ একটা চ্যাকে সিগনেচার করে দিলো।
-ইচ্ছে মতো টাকার অংক টা বসিয়ে নেবেন।
নাউ ইউ কেন গো।
ম্যানেজার শীতলকে দেখলো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত কালো কুচকুচে বোরখা হিজাব মোজা দিয়ে ঢাকা।
৫০ বছর না ২০ বছরের মেয়ে বোরখার মধ্যে এটা বোঝার ক্ষমতা নেই।
-তোমার পছন্দ অপছন্দ এতোটা জানা নেই।
তাই সব কিছু অর্ডার দিলাম।
তোমার যেটা ইচ্ছে সেটা খাবে। তাই বলে নিজের হাতে নয়।
আমি তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেব।
শীতল একবার টেবিলে তাকালো।
তার কোন ভাবান্তর হলো না।
-কি? কিছু কম পড়েছে? আরও অর্ডার দেব?
শীতলের নেকাব খুলে দিলো রাজ৷
শীতল এখনো ভাবনায় ডুবে আছে।
-কি এতো ভাবছো?
আমাদের নেক্সট টাইমে গার্লস না বয় হবে সেটাই তো? জানতাম এটাই ভাববে।
শোন, আমি মেয়ে চাই। অনেক গুলো মেয়ে। তাদের তুমি ধার্মিক শিক্ষায় শিক্ষিত করবে। আমরা দুজন মিলে তাদের বড় করব। একসময় দ্বীনদার পাত্র দেখে বিয়ে দেব।
আমরা প্রতি তিন দিন পর পর একেক মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাব।
ওদের জন্য মন খারাপ হবেই না।
রাজ শীতলের মুখে বীফ বার্গার, স্যান্ডউইচ একটু একটু করে তুলে দিচ্ছে।
শীতল চুপচাপ খাচ্ছে।
রাজের মাথা৯৯.৯৯ % সুস্থ হয়েছে। বাকি % টুকু অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে।
তাই হয়ত কিছুটা পাগলাটে স্বভাব তার মধ্যে থেকে গিয়েছে।
সে শীতলের একেবারে চুপচাপ থাকাটা তেমন কিছু মনে করছে না।
নিজের মনে নিজের কাজ গুলো করছে আর গড়গড় করে অনর্গল কথা চালিয়েই যাচ্ছে।
শীতলের গালে কিছুটা ঝোল ইচ্ছে করে লাগিয়ে দিয়ে রাজ হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছে।
রাজ একটা টিস্যু নিয়ে শীতলের মুখ পরিষ্কার করতে গিয়ে একটু মুচকি হাসলো।
টিস্যু টা জায়গায় রেখে দিলো।
শীতলের গালে, ঠোঁটে,ঠোঁটের আশেপাশে লেগে থাকা ঝোল টুকু রাজ নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে মুছে দিলো।
শীতলের নাকে নাক ঘষে ঘষে বললো – তুমি এসব ছোট ছোট মজা করতে আমার সাথে।আমি বুঝতে পারতাম না। গর্দভের মতো শুধু তোমার পানে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আরকিছুই বুঝতাম না। পাগল ছিলাম তো।আজ থেকে আমি করব মজা তোমার সাথে।
ঠেলা সামলাও এবার!
রাজ শীতলের গা ঘেঁষে বসে বসে প্রচুর কথা চালাতে লাগলো। আবার টুকটুক করে শীতলকে খাওয়াচ্ছে।
– তুমি তো কোন কথায় বলছো না। শুধু আমার মতো করে কথা শুনছো।
আমিও আগে তোমার মতো করে শুধু তোমার কথা শুনতাম।
তুমি হাদিসের কথা আমাকে গল্পের মাধ্যমে শুনাতে।
এবার আমার পালা।
শোন, বিশ্বনবী (সাঃ) একদিন বাহির থেকে এসে তাঁর নাতি হাসান
এবং হোসাইনকে আদর
করছিলেন। হঠাৎ হোসাইন (রাঃ)
জিজ্ঞেস
করলেন, বলেনতো নানা আপনি বড়
নাকি আমি বড়?
রাসূল(সাঃ)
হেসে বললেন,
“দুনিয়ার সকল মানুষের নেতা আমি।
সেজন্য
আমিতো অবশ্যই বড়”
কিন্তু
ছোট্ট হোসাইন বললেন,
না নানা,
আমি আপনার চেয়ে বড়। রাসূল(সাঃ)
বললেন, “তুমি আমার
চেয়ে বড়, এটার যুক্তি দেখাও
তো?”
ছোট্ট হোসাইন বললেন,
দেখি আপনার বাবার নাম
কি বলেন? রাসূল (সাঃ) বললেন
আবদুল্লাহ।
হোসাইন বললেন, শুধুই
আবদুল্লাহ। আগেও কিছু নাই,
পরেও কিছু নাই। আমার বাবার নাম
কি জানেন?
আমার বাবার নাম আসাদুল্লাহিল
গালিব, আলী ইবনে আবি তালিব,
সারা দুনিয়ার কাফিরদের যম।
আপনি এমন এক আব্বা পেয়েছেন
কি?
তাহলে তো আমিই আপনার
চেয়ে বড়। রাসুল (সাঃ) অবাক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন
হোসাইনের দিকে।
.
হোসাইন (রাঃ) বললেন,
নানা এখানেই শেষ নয়।
দেখি আপনার আম্মার নাম
কি বলেন।
রাসূল (সাঃ) বললেন,
আমিনা।
হোসাইন বললেন, শুধুই আমিনা।
আর আমার আম্মার নাম কি জানেন?
আমার আম্মার নাম হলো,
ফাতিমাতুজ জাহরা, জান্নাতের
সর্দারীনী। এরকম
একটি আম্মা কি আপনি পেয়েছেন?
তাহলেতো এদিক দিয়েও,
আমি আপনার চেয়ে বড়।
রাসূল (সাঃ) আবারো অবাক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
হোসাইন আবার বললেন,
নানা এখানেই শেষ নয়
আরো আছে। দেখি বলুনতো আপনার
নানির নাম
কি?
রাসুল (সাঃ) তাঁর নানির বললেন।
এবার হোসাইন বললেন, “আমার
নানির নাম কি জানেন?
আমার নানির নাম হলো, খাদিজাতুল
কোবরা,
জান্নাতে প্রথম
মহিলা হিসেবে প্রবেশ করবেন।
এরকম নানি কি আপনি পেয়েছেন?
তাহলে তো এখান দিয়েও
আমি আপনার বড়” . রাসূল (সাঃ)
নিজের চোখের
পানি ছেড়ে দিলেন।
.
হোসাইন বললেন,
নানা আরো আছে আরো আছে।
বলুনতো আপনার নানার নাম কি??
রাসূল (সাঃ) উনার নানার নাম
বললেন।
এবার হোসাইন বললেন, আমার
নানার নাম কি জানেন?
আমার নানার নাম
হলো রহমাতুল্লিল আ’লামিন,
বিশ্বনবী মোস্তফা হযরত
মুহাম্মদ (সাঃ)
এই রকম একজন
নানা কি আপনি পেয়েছেন???
তাহলে আপনি নিজেই বলুন,
কে বড়? আপনি বড় নাকি আমি বড়?
.
রাসূল (সাঃ) হোসাইনকে শক্ত
করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
হ্যাঁ হোসাইন। আল্লাহ আজ
তোমাকে আমার চেয়ে বড়
বানিয়ে দিয়েছেন।
.
আল্লাহু আকবার।
রাজ শীতকে নানা ধরনের কথা শুনাচ্ছে, হাসি, কান্না, বেদনা, হাদিস ইত্যাদি।
শীতলের ধ্যান তখন রেস্টুরেন্টের বাহিরে ছোট একটা ফুটফুটে শিশুর দিকে।
গোলগাল মিষ্টি কি ফুটফুটে মুখখানা। আচ্ছা মেয়ে না ছেলে হবে ফুফুটে বাবুটা!
রাজ শীতলের গালে নাক ঘষে বলল- খুব শান্তি লাগছে। আজ তোমাকে নিয়ে প্রথমবার এলাম রেস্টুরেন্টে। বাহিরে কিছুটা সময় কাটাচ্ছি নিরিবিলিতে।
এই স্যুপ টুকু খেয়ে নাও। গায়ে এনার্জি হবে। তুমি খুব দূর্বল। এটা স্বাস্থ্যসম্মত স্যুপ।
হা করো শ্রেয়সী।
শীতল মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
-আহা!হা করো।
একটু খাও।
টেস্ট ভালো।
তোমার গায়ে এনার্জি আসবে।
শীতল বার বার মুখ এদিক ওদিক ঘুরানোর ফলে স্যুপের বাটি টুপ করে উল্টে রাজের গায়ে পড়লো।
মাথা থেকে হাটু পর্যন্ত স্যুপে লেপ্টে গেলো।
পুরো মুখে স্যুপের মাখামাখি।
রাজ জিহ্বা দিয়ে একটু চেটে বলল- স্যুপটা এতোটা ভালো না। টেস্ট বাজে।
পড়ে গিয়ে ভালো হয়েছে।
শীতলের গালে হাত বুলিয়ে বলল- একটু ওয়েট করো শ্রেয়সী। এই যাব। এই আসব।
একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।
তোমার জন্য ফ্রেশ হব। তোমার বোরখায় লাগতে পারে।
রাজ এক ঘন্টার কাজ পাঁচ মিনিটে সারলো।
ফিরে এসে হতবাক হয়ে গেলো।
শীতল কোথাও নেই।
রেস্টুরেন্টের সব জায়গায় খোঁজা হয়েছে। কোথায়ও নেই।
কোথায় গেলো অসুস্থ শরীরে। হাতটেও পারেনা ঠিক মতো।
-আমরা ঠিক বলতে পারবনা। পুরো রেস্টুরেন্ট ফাঁকা। আপনি বলেছেন যেন ধারেকাছেও না ঘেঁষতে দেখা যায় আমাদের আপনাদের।
তাই সবাই মিলে ভেতরে আড্ডা দিচ্ছিলাম সিকিউরিটি গার্ডস সহ।
-সব কটা কে পুলিশে দেব। কিভাবে ময়মনসিংহে এই রেস্টুরেন্ট বিজনেস করেন সেটাই দেখব। কাস্টমারদের সিকিউরিটি দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।
আমার ওয়াইফের কিছু হলে ১৩টার নিউজ হবে সবখানে।
.
.
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের তিনটি নাম(আরবি,বাংলা)
৫৬. ﺍﻟْﺤَﻤِﻴﺪُ আল-হ়ামীদ সকল প্রশংসার দাবীদার, প্রশংসনীয়
৫৭. ﺍﻟْﻤُﺤْﺼِﻲ আল-মুহ়সী বর্ণনাকারী, গণনাকারী
৫৮. ﺍﻟْﻤُﺒْﺪِﺉُ আল-মুব্দি’ অগ্রণী, প্রথম প্রবর্তক, সৃজনকর্তা❤
.
চলবে……….
.
.
.
#লালগোলাপ?
Writer-Moon Hossain
Part-35
রাজের ভেতর আর্তনাদ শুরু হয়েছে। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। তার জীবন হারিয়ে ফেলেছে সে।
শীতল আগের মতো কোথাও চলে গেলো নাতো! না না।
হতে পারেনা। ওকে ফেলে কোথাও যেতে পারেনা ও।
অসুস্থ শরীরে কোথায় চলে গেলো!
রাজ বাহিরে গিয়ে এদিকে ওদিক পাগলের মতো খুজতে লাগলো তার জীবন কে।
কোথায় তুমি শ্রেয়সী।
আমার বউ! হয়ার আর ইউ?
রাজ কোর্ট খুলে ইতিমধ্যেই রাস্তার মধ্যে বসে থাকা লোকেক কে দিয়ে দিলো।
টাই খুলে ফেলে দিলো।
মাথার চুল গুলো টেনেটুনে এলোমেলো করে ফেললো।
তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে একটা পাগল। সদ্য ছাড়া পেয়েছে পাগলাগারদ থেকে।
নিজের গাড়িতে নিজেই লাথি দিতে শুরু করলো সে।।
অনেকে দাড়িয়ে সদ্য ভালো হওয়া পাগলের কান্ডকারখানা দেখছে।
হঠাৎ রাজ কিছু চেচামেচি শুনতে পেলো।
রাজ সেখানে গিয়ে শুনলো, বাচ্চা চোর বলে সবাই একজনকে ধরেছে৷
-আসসালামু আলাইকুম ভাই সাহেব!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাইজান!
-কি হয়েছে ভাই ওখানে?
-আর বলবেন না ভাইজান। বোরখা পরা এক মেয়েমানুষ, দেখে মনে হচ্ছে পরহেজগার মেয়ে। এমন মেয়ে বাচ্চা চুরি, চুরি বললে ভুল হবে। বাচ্চা ছিনতাই করে সেখানে দাড়িয়েই আদর করছিলো।
আল্লাহর দুনিয়ায় আর কত কিছু যে দেখতে হবে।
মেয়েটির বর্ণনা শুনে রাজের প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
-আমার শ্রেয়সী! বলেই দৌড়ে ঘটনা স্থলে গেলো রাজ।
কিছু মহিলা শীতলের কাছ থেকে বাচ্চা নেওয়ার জন্য জোরজবরদস্তি করছে।
শীতল শক্ত করে বুকে আগলে ধরেছে শিশু বাচ্চাটি কে। যেন নিজের বাচ্চা।
বেশ লোক জোরও হয়েছে। সবাই বাচ্চা চোর বলে চেঁচাচ্ছে।
ঘটনা মারাত্মক ভয়াবহ।
রাজ গিয়ে ঘটনা সামলে নিলো।
আমার বউ, আমার বউ বলে সে কিছু ক্ষণ চেঁচাল।
-আমাদের কিছু দিন আগে মরা বাচ্চা হয়েছে। এই শোকে আমার বউ পাথরে পরিণত হয়েছে।
ও কি করছে কিছু বুঝতে পাচ্ছেনা। শিশুটি কে দেখে ওর নিজের শিশুর কথা মনে পড়েছিলো হয়ত। তাই কোলে নিয়ে আদর করছে।
-না।
– না, মানে?
-না। ওকে বাসায় নিয়ে যাব। ও আমার সন্তান।
আমার মেয়ে। আমি ওর মা।
শীতলের কথায় রাজ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অসহায় ভাবে।
শীতল পরম আদরে শিশুটি কে জরিয়ে ধরে আছে বুকে।
বুকের মাঝে রেখেই সে আদর করছে বার বার।
অসহায় সন্তান হারানো অসুস্থ মায়ের অবস্থা সবাই বুঝলো।
এখনো আল্লাহর দুনিয়ায় মায়া মমতা আছে।
কেউ কিছু বললো না। বাচ্চাটির পরিবারও না।
ভীড় কমতে থাকলো।
অনেকে তাকিয়ে দেখলো কিভাবে সন্তান হারা মা টি আদর করছে নিজের সন্তান ভেবে।
রাজ শীতলের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলাচ্ছে।
-আল্লাহ দয়া করলে এরকম বেবি আমাদের হবে।
যদি তুমি চাও অবশ্যই আমরা আবার বাবা মা হওয়ার সপ্ন পূরণ করতে পারি।
আল্লাহ তায়ালার নামে বলছি, এবার কোন পাগলামি করব না। আমি সঠিক টা বুঝেছি লেট করে হলেও।
চুল পরিমাণ কষ্ট তোমাকে দেব না৷ খুব যত্ন করব। বুক থেকে নামাব না।
রাজের চোখে পানি চলে এলো। পুরুষ মানুষ বলেই সে দ্রুত লুকাতে পারলো কান্না।
দুই-তিন ঘন্টা আদর করার পর তবেই ছাড়ানো গেলো শিশুটি কে।
শীতল কিছুতেই শিশু টি কে ছাড়বে না।
-ওকে ওর বাবা মায়ের কাছে যেতে দাও।
-আমরা-ই তো ওর বাবা মা।
ও আমাদের সাথে থাকবে।
আমাদের বাড়িতে।
রাজ কি বলবে সন্তান হারা অসহায় মা কে তা ভেবে পেলো না। চুপচাপ তাকিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
গাড়িতে করে শীতলকে নিয়ে বাড়িতে ফিরছে রাজ।
শীতল এতোকিছুর পর একটুও চোখের জল ফেলেনি।
ডক্টর বলে দিয়েছে যে কোন মূল্যে কাঁদাতে হবে।
কাঁদলে ভেতরের সব কষ্ট বের হবে। নইলে সারাজীবন সব কষ্ট বুকে চেপে রেখে পাথর হয়ে থাকবে।অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে৷
কি করবে কিছুই খেয়াল করতে পারবে না। কিছু বুঝতেও পারবেনা।
শীতল রাজের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।
রাজ মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
কিভাবে ওকে কাঁদিয়ে সব কষ্ট ভেতর থেকে বের করা যায় সেটাই ভাবছে ও।
আজ ও নিজের চোখে শীতলের যা অবস্থা দেখেছে তাতে যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে।
একেবারে মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলতে পারে।
বাড়িতে ফিরে রাজের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
বাড়িতে আপন বলতে কেউ নেই।
বাবা নেই, দুই বোনের মধ্যে কেউ নেই।
কয়েক মাসের মধ্যে তার বেবিটাও হামাগুড়ি দিয়ে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতো।
ভালোবাসার স্ত্রী থেকেও যেন নেই।
সে আছে নিজের ভুবনে।
তাকে নিয়ে আতংকের শেষ নেই রাজের।।
একটু চোখের আড়াল হলেই সর্বনাশ হয়ে যাবে।
শীতল ওর একমাত্র অবলম্বন।
মৃত্যু কি সেটা ও নিজের চোখে বার বার দেখেছে।
অনুভব করেছে।
মৃত্যুর কথা মনে হলেই ওর সারা শরীর কেঁপে উঠে৷
কলিজা শুকিয়ে যায়। আত্মা কেঁপে উঠলো রাজের।। শীতলের মুখ খানি দেখা মাত্রই একরাশ শান্তি পেলো সে। প্রশান্তিতে ভরে উঠলো মূহুর্তেই।
শীতল ওর জীবন। ওর সবকিছু। ও নিজের মাঝে নেই। কিভাবে যেন সবকিছু শীতলের মাঝে চলে গিয়েছে।
এক সেকেন্ডও সে চোখের আড়াল করবেনা ওর জীবনকে।
শীতলকে কোলে তুলে নিলো ঘুমুন্ত অবস্থায়।
বুকে আগলে রাখলো।
শক্ত করে চেপে ধরলো বুকে।
রাজ এশারের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলো। প্রত্যেক নামাজের জন্য দোয়া/ছানা পড়ার ফজিলতঃ
*নামাজে যে সানাটি পড়লে আসমানের দরজা গুলি খুলে দেয়া হয়?*
*দোয়া/ছানা: সালাতের শুরুতে দোয়াঃ
তিনবার বলবে,
اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرَاً، اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيراً، اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيراً، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيراً، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيراً، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيراً، وَسُبْحَانَ اللَّهِ بُكْرَةً وَأَصِيلاً
*আল্লাহ সবচেয়ে বড় অতীব বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড় অতীব বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড় অতীব বড়। আর আল্লাহ্র জন্যই অনেক ও অজস্র প্রশংসা, আল্লাহ্র জন্যই অনেক ও অজস্র প্রশংসা, আল্লাহ্র জন্যই অনেক ও অজস্র প্রশংসা। সকালে ও বিকালে আল্লাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি*
আল্লা-হু আকবার কাবীরান, আল্লা-হু আকবার কাবীরান, আল্লা-হু আকবার কাবীরান, ওয়ালহামদু লিল্লা-হি কাসীরান, ওয়ালহামদু লিল্লা-হি কাসীরান। ওয়ালহামদু লিল্লা-হি কাসী-রান ওয়াসুবহা-নাল্লাহি বুকরাতাঁও ওয়া আসীলা
অতঃপর বলবে,
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ مِنْ نَفْخِهِ، وَنَفْثِهِ، وَهَمْزِهِ،
*আমি শয়তান থেকে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় চাই। আশ্রয় চাই তার ফুঁ তথা দম্ভ-অহংকার থেকে, তার থুতু তথা কবিতা থেকে ও তার চাপ তথা পাগলামি থেকে*
আউযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়তানি, মিন নাফখিহী ওয়ানাফসিহী ওয়াহামযিহী
(আবূ দাউদ ১/২০৩, নং ৭৬৪; ইবন মাজাহ্ ১/২৬৫, ৮০৭; আহমাদ, আহমাদ ৪/৮৫ তাছাড়া ইমাম মুসলিম ইবন উমর থেকে অনুরূপ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন, তবে সেখানে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ১/৪২০, নং ৬০১।)
এশারের নামাজ পড়ে শীতল বেলকুনিতে দাড়িয়ে রইলো।
গোলাপ ফুল গুলো রাতের অন্ধকারেও সুন্দর দেখাচ্ছে।
শীতল একবার বেলকুনির নিচে তাকালো।
বেলকুনি থেকে পড়ে গেলে সোজা আল্লাহর তায়ালার কাছে।
কোমরে কারও স্পর্শ পেলো।
রাজ শীতলের ঘাড়ের চুল গুলো সরিয়ে নাক ঘষে দিলো।
কানে কানে ফিসফিস করে বলল- আজ তোমাকে অনেক আদর করব। অনেক, অনেক, অনেক।
সব দুঃখ, কষ্ট ভুলিয়ে দেব।
শীতল কে কোলে তুলে নিলো রাজ।
বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিলো।
চুলে বিলি কাটছে শীতলের আর চোখ দিয়ে এক ফোঁটা করে পানি পড়ছে রাজের।
শীতলের এই অবস্থার জন্য রাজ নিজেই দায়ী।
কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে মেয়েটাকে।
এর বিনিময়ে সে প্রায় সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে৷
নিজের সন্তান কে পর্যন্ত হারিয়ে এখন মানসিক ভারসম্য হারাচ্ছে।
রাজ সেদিন অনেক বেশি আদর করলো শীতলকে।
শীতলকে সব ভুলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নিজেও সবকিছু ভুলে যেতে চাইলো।
শীতল এখন অনেকটাই সুস্থ।
শারীরিক ভাবে সুস্থ হয়েছে বাট মানসিক ভাবে কতটা সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
নিজের ইচ্ছে হলেই শীতল, হ্যাঁ, না, জ্বি এরকম উওর দেয়।
আর শুধু নিজের মনে কি যেন ভাবে।
রাজ বিভিন্ন উপায়ে শীতলকে কাঁদানো ও হাঁসানোর চেষ্টা করে।
নানা রকম জোকস বলে নিজেই হেঁসে কুটিকুটি হয়।
কিংবা নিউজ পেপার পড়ে বিভিন্ন দূর্ঘটনার নিউজ গুলো পড়ে শোনায়।
নিউজ গুলো পড়লে যে কেউ কেঁদে বুক ভাসাবে।
রাজ নিউজ পড়ে আর শীতলের আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে থাকে।
যখন দেখে শীতল স্বাভাবিক ভাবে মুখ করে বসে আছে। যেন স্বাভাবিক থাকাই স্বাভাবিক।
রাজ নিজেই তখন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদে।
শীতলের কোন ভাবান্তর নেই।
সে নিজের মতো করেই কি যেন ভাবে সারাক্ষণ।
রাতে রাজ শীতলকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে।
হঠাৎ শীতল রাজের কাছ থেকে সরে যায়।
-এনি প্রবলেম?
-?
-ওয়াশরুমে যাবে?
-?
-আমি নিয়ে যাব? না মানে তুমি একবার পড়ে গিয়েছিলে। আচ্ছা
সাবধানে যাবে। দাড়াও আমি লাইট অন করে দিই ওয়াশরুমের।
রাজ ওয়াশরুমে গিয়ে লাইট অন করলো।
দরজা খুলে দিয়ে শীতলকে ঢুকতে বলল।
শীতল বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে যায়।
প্রায় দুই ঘন্টা পার হয়েছে।
শীতলের আসার নাম নেই।
ভেতর থেকে সারা শব্দ নেই।
রাজের ভেতর ভয় ঢুকে গেলো। কিছু হলো নাতো শীতলের?
রাজের ওয়াশরুমে রাজ ছোট একটা ফুটো করেছে বিশেষ ভাবে।
শীতলকে একা ছাড়া যাবেনা। কোথাও না। এমনকি ওয়াশরুমেও না।।
তাই লুকিয়ে সে এই ব্যাবস্থা করেছে। দেখা ঠিক হবে কিনা সেটাই ভাবছে।
তারপর ভাবলো, আমার নিজের বিয়ে করা বউ। অন্য কেউ তো না৷
রাজ ইতস্তত করে ফুটো দিয়ে দেখলো।
শীতল চুপচাপ ওয়াশরুমের শুকনো ফ্লোরে বসে আছে।
বসে আছে বললে ভুল হবে, সে কি যেন ভাবছে।
-আচ্ছা এই ভাবনা টা কি ওখানেই ভাবতে হবে?
বেডরুমে ভাবলে হতো না?
বেডে শুয়ে শুয়ে ভাবলে আরও ভালো ভাবনা ভাবতে পারতে।
ডোর ওপেন করো শ্রেয়সী।
অজস্র বার ধাক্কানোর পরেও শীতল দরজা খুললো না।
-ওয়াশরুমে ভাবতে তোমার কি ভালো লাগে?
আগে বলবে না? তাহলে ভাবার জন্য একটা বিশেষ ব্যবস্থা করতাম।
বুঝেছি ওয়াশরুমে ভাবার কোন বিশেষত্ব আছে।আমিও ভাববো তোমার সাথে বসে।
ডোর ওপেন করো।
দুজন একসাথে ভাববো।
শীতল একটি কথাও বললো না।
রাজ শীতলকে বোঝাতে বোঝাতে ঘুমিয়ে পড়লো ওয়াশরুমের দরজায় হেলান দিয়ে।
শীতল রাত আড়াইটার পর ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার জন্য ডোর ওপনে করলো।
রাজ সাথে সাথে হেলান দেওয়া অবস্থায় শীতলের পায়ের কাছে পড়ে গেলো।
সে রাজের উপর দিয়ে সোজা বিছানায় গিয়ে কাঁথা নিয়ে শুয়ে পড়লো।
ফজরের আজানের ধ্বনির আওয়াজে রাজের ঘুম ভাঙলো।
রাজ নিজেকে ওয়াশরুমের মেঝেতে আবিষ্কার করলো।
শীতল একাই হা পা ছড়িয়ে পুরো বিছানা দখল করে আয়েশে ঘুমুচ্ছো।
.
.
রাজ মসজিদে প্রতিদিন অজস্র চোখের জল ফেলে।
প্রতিটি দোয়াতে শীতলের সুস্থতার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানায়।
শীতল ছাড়া তার এই দুনিয়াতে কেউ নেই আল্লাহ তায়ালা ছাড়া।
মাঝরাতে রাজ হাত দিয়ে বিছানায় হাত বুলালো।
শীতলকে কোথাও তার হাত খুঁজে পেলো না।
ভয়ংকর আতংক নিয়ে সে চোখ মেলে তাকালো।
শীতল তার পাশেই ঘুমিয়ে ছিলো।
এখন নেই।
কখন গেলো ওকে ছেড়ে।
রাজ লাইট অন করলো।
বেলকুনির দরজায় শীতলের শাড়ি দেখতে পেলো।
রাজ শাড়িটা হাতে নিলো।
বেলকুনি থেকে শীতল কি লাফ দিয়েছে!
রাজের বুকে কোটি কোটি তীর বিধ্বস্ত হলো।
কাঁপা কাঁপা ভাবে সে বেলকুনিতে গেলো।
শীতল রেলিংয়ের উপর হাঁটছে।
রাজের বিস্ময়ের সীমা রইলো না।
এখান থেকে পড়লে স্পট ডেথ।
হাড়গোড় ভেঙে গুড়ো হয়ে যাবে৷
শীতল দূর্বল শরীরে রেলিংয়ের উপর দিয়ে হেঁটেই যাচ্ছে। অসাবধানতায় যেকোনো মূহুর্তে পড়ে যেতে পারে।
রাজ আলতো ভাবে বলল- হাত দাও তোমার?
আলতো করে হাতটা বাড়াও।
আমার খুব ভয় করছে।
নেমে এসো প্লিজ।
নেমে এসো।
শীতল একবার ঘুরে রাজের দিকে তাকালো।
-আমার ভয় করছে।
তুমি পড়ে যাবে।
অনেক ব্যথা পাবে।
কষ্ট হবে তোমার।
শীতল কোন কথা শুনছে না। সে দাড়িয়ে পড়লো হঠাৎ।
-তুমি হাত দাও।
হাত দাও প্লিজ।
আমাদের আবার সন্তান হবে। আমরা এক ডজন ছেলেমেয়ের বাবা মা হব।
তুমি কষ্ট পাচ্ছো বুঝতে পেরেছি। আমিও তো কষ্ট পাচ্ছি। আমি ওর বাবা ছিলাম।
হাত বাড়াও।
-আমি লাফ দেব।
আমার সন্তানের কাছে যাব।
ও আমাকে ডাকছে।
এখান থেকে লাফ দিলে সোজা ওর কাছে যেতে পারব।
রাজের আত্মা কেঁপে গেলো।
মূহুর্তের মধ্যে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো।
– তুমি কি আমার মতো পাগল হলে?
লাফ দিলে যদি ওর কাছে যাওয়া যেত তবে কখন আমি চলে যেতাম।
বোঝার চেষ্টা করো , হাত বাড়াও।
আমার কথা ভাবছো না কেন?
আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে?
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
তুমি বুঝতে পাচ্ছোনা?
হাত দাও?
রাজ এগুতেই শীতল বলল-
-খবরদার।
আমার কাছে আসলেই আমি লাফিয়ে পড়ব।
দূরে থাকুন।
রাজ থমকে দাড়ালো।
কি ভয়াবহ একটা পরিবেশ।
কি করে শীতলকে নিচে নামাবে সেটা মাথায় আসছেনা।
সব দোষ ওর।
ঘুমুনোর কি দরকার ছিলো!
শীতলকে দেখেশুনে রাখতে পারেনি ও।
ওর সাথে বিয়ে হবার পর থেকেই শীতল শুধু দুঃখ পেয়েছে। সব হারিয়েছে।
সংসার তছনছ হয়েছে।
কেউ বেঁচে নেই।
এতো কিছু হারানোর পর মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলেছে।
রাজ নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলো।
এতোকিছু মেয়েটা একাই সামাল দিয়েছে। স্বামী হয়ে পাশে দাঁড়ায়নি ওর।
বরং দূরে ঠেলে দিয়েছে। অপমান করেছে। কষ্ট দিয়েছে। এক পাহাড় সমান টেনশন মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে নিরীহ মেয়েটির নাথায়।
-আমার শ্রেয়সী।
অবুঝ আচরণ করোবা।
সুইসাইড করা মহাপাপ।
তুমি ধার্মিক মেয়ে হয়ে জেনেশুনে এমন কাজ করবে?
আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারবে? আমি তোমার স্বামি।
তুমি আমার স্ত্রী।
-আমাকে আপনি সুইসাইড করতে বাধ্য করছেন।
সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। বেঁচে থেকে কি করব? কার জন্য বাঁচবো?
আপনি একটা খুনী, হত্যাকারী।
ঘৃণা করি আপনাকে। একজন হত্যাকারীর স্ত্রী হয়ে বেঁচে থাকা টা অপমানের।
আমার সন্তান কে হত্যা করেছেন আপনি।
আমার সংসার হত্যা করেছেন আপনি।
আমার সংসারের প্রতিটি সদস্য কে হত্যা করেছেন আপনি।
আমার সুখ,আনন্দ,হাসি- খুশি হত্যা করেছেন আপনি।
আমি কি দোষ করেছিলাম?
গরীবের মেয়ে বলে এমন হলো।
গরীবের মেয়েদের ইচ্ছে মতো যখন খুশি তখন ব্যবহার করা যায়। যখন খুশি ছেড়ে দেওয়া যায়! গীরবদের কি কোন চাওয়া-পাওয়া নেই?
ইচ্ছে করে আমাকে জীবন্ত হত্যা করেছেন আপনি।
আমি বেঁচে থাকব কেন?
আমাকেও হত্যা করুন।
সবার মতো দুই দিন পরে হলেও আমাকে হত্যা করবেন আপনি।
তাহলে দেরি কেন?
আপনার একা থাকার খুব শখ। তাহলে একাই থাকবেন। কেউ আপনাকে বিরক্ত করবেনা। একা একা মহা সুখে থাকবেন আপনি।
আপনার কাজ সহজ করে দিচ্ছি। আমিই নিজেকে শেষ করে দেব। আমার সবকিছু হত্যাকারীর মুখ এক পলকও দেখতে চাইনা।
রাজ স্তব্ধ হয়ে গেলো।
শীতলের কথা গুলো কানে বাজতে লাগলো।
নিষ্প্রাণ দেহে রাজ শান্ত স্বরে বলল- আমি মহা পাপী।
তোমার সবকিছু হত্যা করেছি।
হাতটা দাও।
নিচে নেমে এসো।
এরপর আমাকে কঠোর শাস্তি দিও। আমি মাথা পেতে নেব৷
রাজ আল্লাহর নাম নিচ্ছে বার বার।
শীতল হঠাৎ মাথা ঘুরে জ্ঞান হারাতে লাগলো।
রাজ প্রাণপণে ছুটে এসে শীতলকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে ফেললো।
চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিলো।
খুব শক্ত করে জরিয়ে আগলে রাখলো বুকে।
যেন ফের দূরে যেতে না পারে তার শ্রেয়সী।
শীতলকে শাড়ি দিয়ে জরিয়ে শুইয়ে দিলো বিছানায়।
মাথায় পানি ঢেলে দিলো।
শীতলের চোখ খুলতেই রাজকে সে হত্যাকারী, খুনি বলে চেঁচাতে শুরু করলো।
রাজ নিরুপায় হয়ে শীতলের থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
আজ দুই দিন ধরে শীতল বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে। রাজকে দেখেই সে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
তারপর জ্ঞান হারায়।
রাজকে একেবারেই সহ্য করতে পাচ্ছেনা শীতল।
রাজ বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছে। চোখ ভর্তি পানি।
শীতল এই মাত্র আবার ওকে দেখে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছে। কান্নার আওয়াজ রাজের কানে বাজছে।
শীতল ওকে ঘৃণা করে।
.
.
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের তিনটি নাম (আরবি, বাংলা)
৫৯. ﺍﻟْﻤُﻌِﻴﺪُ আল-মু’ঈদ পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী, পুনরূদ্ধারকারি
৬০. ﺍﻟْﻤُﺤْﻴِﻲ আল-মুহ়ীই জীবনদানকারী
৬১. ﺍﻟْﻤُﻤِﻴﺖُ আল-মুমীত ধ্বংসকারী, মৃত্যু আনয়নকারী।
(#33 পার্টে মহান আল্লাহর নাম দিতে ভুলে গিয়েছিলাম এখন এই পার্ট গুলো লেখার সময় খেয়াল করলাম, আশা করি আল্লাহ তায়ালা আমাকে মাফ করবেন। আমি অনুতপ্ত। আরও সচেনতন হওয়ার উচিত ছিলো।
.
চলবে……….