লাল নীল সংসার পর্ব-০৩

0
181

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_৩_

শিশির অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েছে। বাসায় যাওয়ার আগে রুহিদের বাসা থেকে সাঝকে নিয়ে যাবে। সাঝের সাথে কথা বলে নিয়েছে। সাঝও বাড়ি যাবে বললে, শিশির জানায় সে আসছে নিতে। শিশির এগিয়ে গিয়ে বাসের জন্য দাড়িয়ে আছে। আরও অনেকেই বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ শিশির পাশে তাকিয়ে দেখে তার পাশ ঘেসে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে, আর মেয়েটির মুখে স্পষ্ট বিরক্তি আর অসোয়াস্তির ছাপ মেশানো। শিশির মেয়েটির ঐপাশে লক্ষ্য করতেই দেখে এক পঞ্চাশ পেরোনো ব্যক্তি মেয়েটার সাথে এক প্রকার মিশেই রয়েছে। শিশির হালকা একটু পেছনে এসে খেয়াল করতেই দেখে লোকটি মেয়েটিকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছে, আর যার জন্য মেয়েটি বিরক্ত বোধ করছে। ঘটনাটি বুঝতেই শিশিরের মেজাজ গরম হয়ে যায়। মেয়েদের এই উত্যাক্ত করার ব্যাপার টাহ ও একদমই বর্দাস্ত করতে পারে না। শিশির মেয়েটির পাশে দাড়িয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম!”

মেয়েটি চমকে শিশিরের দিকে তাকায়। শিশির তার কাছে অপরিচিত, তাই হঠাৎ এরকম সালাম পেয়ে মেয়েটাহ বেশ চমকে গেছে। তাও নিজেকে সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম!”

মেয়েটি হয়তো আর কিছু বলবে তার আগেই শিশির বলে ওঠে,
–” আপনি চাইলে আমার এই পাশে এসে দাড়াতে পারেন। হয়তো আপনার উপকার হবে।”

মেয়েটি একবার পেছনে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে আবার শিশিরের দিকে তাকাতেই শিশির নিজের পাশে জায়গা করে দিলে মেয়েটি সেখানে এসে দাড়ায়। এখন ঐ লোকটি আর মেয়েটির মাঝে শিশির দাড়িয়ে আছে। শিশির আবার লোকটির দিকে তাকাতে লোকটি শিশিরকে একটা রাগী লুক দিয়ে অন্যদিকে ফিরে তাকায়। মেয়েটি শিশিরের দিকে তাকাতেই শিশিরও মেয়েটির দিকে তাকায়। মেয়েটি একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” ধন্যবাদ!”

শিশির প্রতিত্তুরে একটু হাসে। এর মাঝে বাস আসতেই মেয়েটি, শিশির এমনকি সবাই বাসে উঠতে থাকে। মেয়েটি বাসে উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখে শিশির দাড়িয়ে আছে আর শিশিরের পেছনে সেই লোকটি। মেয়েটি শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি এই জানালার পাশের সিটে বসছি। আপনার যদি কোনো সমস্যা নাহ হয়, তাহলে আমার পাশে বসতে পারেন।”

শিশির একবার পেছনে তাকিয়ে লোকটিকে দেখে নিয়ে আবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার কোনো সমস্যা নেই।”

শিশিরের কথায় মেয়েটি হাসি দিয়ে জানালার পাশে বসলে শিশিরও মেয়েটির পাশে বসে। বাসের সিটে যতটা দুরত্ব রেখে বসা সম্ভব, ততটা দুরত্বে বসে শিশির। ব্যপার টাহ মেয়েটার কাছে খুব ভালো লাগলো। মেয়েটি কিছু সময় পর শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি ছোয়া! আপনি?”

শিশির মেয়েটির কথা শুনে তার দিকে মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। শিশিরও মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” আমি শিশির!”

ছোয়া বলে ওঠে,
–” ওহ! কোথা থেকে আসছেন এখন?”

–” অফিস থেকে।”

ছোয়া মাথা নাড়িয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই শিশির বলে ওঠে,
–” যদি কিছু মনে নাহ করেন, তাহলে কি একটা কথা বলতে পারি?”

ছোয়া শিশিরের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ওঠে,
–” অবশ্যই! কেন নয়?”

শিশির কিছুটাহ আমতা আমতা করে বলে ওঠে,
–” আপনি এই রাতের বেলা একা একটা মেয়ে এইভাবে চলাফেরা কেন করছেন? আজকাল এইভাবে একটা মেয়ের চলাচল তো খুব একটা সেফ নাহ।”

শিশিরের কথায় ছোয়ার মুখটাহ কিছুটাহ মলিন হয়ে যায়। তারপর শিশিরের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলে ওঠে,
–” আসলে, উপায়ও ছিলো নাহ। আমার বাড়িতে পুরুষ মানুষ বলতে আমার ছোট ভাই। এইবার ক্লাস সেভেনে উঠেছে। আমার বাবা নেই। মায়ের বয়স হয়েছে। তাই কোনো সমস্যা হলে আমাকেই ছুটতে হয়।”

শিশির কিছুটা মলিন হয়ে বলে ওঠে,
–” ওহ! সরি আমি বুঝতে পারি নি।”

ছোয়া হেসে বলে ওঠে,
–” সমস্যা নেই।”

–” এখানে কোথাও চাকরি করেন বুঝি?”

ছোয়া নেতিবাচক মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” নাহ! আসলে আমি কোনো চাকরি করি নাহ। আমার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তানার পেনশিয়ানের টাকা দিয়েই আমাদের ভালোভাবে চলে যায়। আমি আসলে বাড়ির কিছু দলিলপত্রের কাজে এসেছিলাম। এখানে কাজ সারতে সারতে রাত হয়ে যাবে বুঝতে পারি নি।”

–” ওহ! কোথায় আপনার বাসা?”

–” এইতো ফার্মগেট থেকে একটু এগিয়ে।”

শিশির হেসে বলে ওঠে,
–” আমার বাসাও ফার্মগেটের কাছেই।”

ছোয়াও মিষ্টি হেসে বলে ওঠে,
–” ওহ! আপনার বাড়িতে কে কে আছে?”

শিশির সামনের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার বাবা-মা, আমি, আমার ছোট বোন আছে। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে আর আমার ছোট ভাই আছে, অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়াশোনা করে।

–” বাহ! খুব ভালো।”

শিশির ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আপনি কি করেন?”

–” আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করছি।”

–” বাহ! খুব ভালো।”

ছোয়া কিছু সময় চুপ থেকে বলে ওঠে,
–” আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।”

শিশির কিছুটাহ অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” কেন?”

–” ঐ লোকটার কাছের থেকে আমাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য।”

শিশির মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” কি বলছেন? এইটা মানুষ হিসাবে আমার দায়িত্ব ছিলো। আসলে, আপনি যখন আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছিলো খুব অসোয়াস্তি বোধ করছেন। তারপর ব্যপার টাহ আমার নজরে আসে। আর ঘটনাটি বোঝার পরই মেজাজ গরম হয়ে যায়। ইচ্ছে করছিলো, লোকটিকে ধরেই কয়েকটাহ থাপ্পড় দেয়। কিন্তু, সিনক্রিয়েট করতে চাই নি। তার উপর লোকটিকে দেখে মনে হচ্ছিলো পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে বয়স, সেখানে মেয়ের বয়সী একটা মেয়ের সাথে এরকম করছে, খুব বিরক্তিকর লাগছিলো। তাই আপনাকে ঐভাবে নিরাপত্তা দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম নাহ।”

ছোয়া একটু গম্ভীর হয়ে বলে ওঠে,
–” একটা ব্যপার আমি খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করেছি জানেন? দেখেন, আজকাল নিজেকে বাবার বয়সী লোকদের থেকে ইয়াং জেনারেশনের ছেলেদের পাশে নিজেকে নিরাপদ মনে হয় বেশি। এইযে দেখুন, ওনাকে দেখে পঞ্চাশ পেরোনো লোক মনে হচ্ছে, মানে আমার বাবার বয়সীই বলা যায় আর আপনি ত্রিশও হয় নি, বোঝায় যাচ্ছে। ওনি আমাকে বিরক্ত করলো আর আপনি আমাকে নিরাপত্তা প্রদান করলেন। অথচ ব্যাপার টাহ এরকম হওয়ার কথা ছিলো নাহ, তাই নাহ?”

ছোয়ার কথায় সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায় শিশির। তারপর বলে ওঠে,
–” আসলে এদের মতো কয়েকজন পুরুষের জন্য পুরো পুরুষ জাতি কেই মানুষ বাজে কথা শোনায়। এইসব লোকগুলো হয়তো ভুলে যায়, মা, বোন, স্ত্রী, চাচী, নানী, খালাদের কথা। তাই এরা এরকম করে। এদের জন্যই মেয়েরা রাস্তায় নিরাপদ নাহ। কেন যে এদের এতো নিচু মনমানসিকতা, আল্লাহই ভালো জানেন।”

ছোয়া কিছু বলবেই এর মাঝেই বাসের কন্ডাকটর “ফার্মগেট” বলে চেচিয়ে উঠে। ছোয়া আর শিশির দুইজনেই বাস থেকে নেমে যায়। ছোয়া শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভালো লাগলো আপনার মতো একজন মানুষের সাথে পরিচয় হয়ে।”

শিশির একটু হেসে বলে ওঠে,
–” আমারও। এখন কি আপনি হেঁটে বাসায় যাবেন? কতদুর আপনার বাসা?”

ছোয়া মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” নাহ! হেটে যাবো নাহ। রিকশায় দশ মিনিট লাগবে।”

–” ওহ! সাবধানে যাবেন। আল্লাহ হাফিজ!”

ছোয়া মিষ্টি হেসে বলে ওঠে,
–” আল্লাহ হাফিজ!”

ছোয়া এবং শিশির দুইদিকের রাস্তায় হাঁটা শুরু করে নিজ নিজ গন্তব্যে। শিশির রুহিদের বাসার সামনে এসে সাঝকে ফোন দিয়ে বের হতে বলে। সাঝ বেরিয়ে এলে বোন কে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয় শিশির।


আজিজ রহমান বিছানার উপর আধশোয়া হয়ে একটা হাদিসের বই পড়ছে। আহিয়া রহমান মাত্র সব কিছু গুছিয়ে নিজের রুমে এসে বিছানার উপর বসেন। তারপর আজিজ রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” শিশিরের বাপ, তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।”

আজিজ রহমান হাদিসের বইয়ের পাতা টাহ ভাজ করে বই বন্ধ করে পাশে রাখেন। তারপর বলে ওঠে,
–” বলো কি বলবা?”

–” আসলে, শিশিরের তো বিয়ের বয়স হইতেছে। ছেলেটাহ তো কখনো নিজের কথা ভাবেই নাহ। সব সময় এই সংসার, ভাইবোন এদের চিন্তায় পইড়ে থাকে। আজকাল পোলাপান গুলো প্রেম করে বিয়ে করে। তোমার যে বড় ছেলে, জীবনে তাও করতে পারবে নাহ। কিন্তু, আমরা বাপ মা, আমরা কি আর এমন ভাবে বইসে থাকতে পারি? ছেলেডার তো একটা গতি করা দরকার। তুমার কি মনে হয়?”

আজিজ রহমান চোখের চশমা খুলে আহিয়া রহমানের শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছতে মুছতে বলে ওঠে,
–” কথাটাহ খুব একটা যে ভুল বললা তা বলা যায় না। আসলেই শিশিরের তো, বিয়ের বয়স হইতেছে। তবে, আমিও বা কি বলবো বলো? ছেলেরে যে বিয়ে দিবা, তা বউ রাখবা কই? নিজেও তো কিছু করতে পারি নাহ। পুরো সংসারের খরচ পোলাডার কাঁধে। এইটুকু একটা ফ্লাটের জন্য মাস গেলে সাত হাজার টাকা দেওয়া লাগে। এর থেকে বড় ফ্লাট এই ঢাকা শহরের উপর নিতে গেলে, চোদ্দ পনেরো হাজার টাকা লাইগা যাবে। তার উপর জিনিসপত্রের দাম যা বাড়তাছে। বউ আনবো, কইলেই তো আর চলবে নাহ। বউ কে রাখার জন্যও সেরকম জায়গা তো লাগবে। কি যে করবো, মাঝে মাঝে সেইটাই বুঝি নাহ। আদনানের পড়ালেখা শেষ হয় নাই। টিউশনি করে কতো টাকায় বা হয়? সবই বুঝি, কিন্তু কিছু করার ক্ষমতা আমার নাই।”

আজিজ রহমানের কথায় আহিয়া রহমানের খারাপ লেগে উঠে। আজিজ রহমান ভুল কিছু বলে নি। আহিয়া রহমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে শোয়ার জন্য বিছানা ঠিক করতে শুরু করেন। আজিজ রহমানও বাথরুমে থেকে ঘুরে এসে শুয়ে পড়েন।


পরের দিন সকালে শিশির অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে মাঝের রুমে এসে দেখে আহিয়া রহমান রান্নাঘর থেকে টেবিলে খাবার এনে রাখতেছে। আজিজ রহমান সোফার উপর বসে টিভি দেখতেছেন। শিশির এগিয়ে গিয়ে বাবার পাশে সোফায় বসে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, আব্বু!”

আজিজ রহমান শিশিরের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম। অফিস যাবি?”

–” জি আব্বু!”

আজিজ রহমান আবার টিভি দেখতে থাকেন। শিশির একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে আহিয়া রহমান টেবিলে বসে বসে প্লেট গুলো একটা কাপড় দিয়ে মুছে মুছে রাখছে। শিশির আবার আজিজ রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আব্বু, আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।”

শিশিরের কথায় আজিজ রহমান ও আহিয়া রহমান দুইজনেই শিশিরের দিকে তাকায়। শিশিরকে খুব সিরিয়াস মনে হচ্ছে। আজিজ রহমান রিমোট দিয়ে টিভি বন্ধ করে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি বলবি বল।”

শিশির আর একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে আহিয়া রহমান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। শিশির আবার আজিজ রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আব্বু! আপনি যদি আমাকে কাকার টাকার ব্যাপরে একটু খোলসা করে বলতেন, ভালো হতো।”

আজিজ রহমান একপলক আহিয়া রহমানের দিকে তাকিয়ে আবার শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি জানতে চাস?”

শিশির একটু নড়েচড়ে বসে বলে ওঠে,
–” আসলে, আব্বু! আমি শুধু জানি, কাকা আপনার কাছে টাকা পাবে৷ কিন্তু, কত টাকা পাবে, কি কারনে টাকাটা পাবে আমি কিছুই জানি নাহ। আমি আপনার কাছে কৈফিয়ত চাচ্ছি নাজ আব্বু। কিন্তু, কাকাকে টাকা গুলো দিতে হবে, এইটা যখন প্রথম দিকে শুনেছিলাম, তখন অতোটা মাথায় নেয় নি। আর সংসারের চিন্তায় পরে আর মনেও ছিলো নাহ। মা, যখন সেইদিন আমাকে কাকার টাকার কথা গুলো বললো, তখন আবার খেয়ালে আসলো ব্যাপার টাহ। ওরা এতোদুর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যে, এমন প্রস্তাব দিচ্ছে। এরকম প্রস্তাব আসুক আমি আর চাই নাহ। তাই টাকা গুলো যতো দ্রুত সম্ভব দিয়ে দিতে চাই।”

আজিজ রহমান অন্যদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি যখন ব্যবসা করতাম, তখন আমার ব্যবসায় বেশ কিছু টাকা লস হয়ে গেলো। তখন সেই লস মেটাতে তোর কাকার কাছের থেকে ষাট হাজার টাকা নিয়েছিলাম। প্রতি মাসে তার জন্য সুদও দিতাম। কিন্তু, ব্যবসা লাভজনক হচ্ছিলো নাহ। তার উপর আবার অসুস্থ হয়ে গেলাম। ব্যবসা বন্ধ করে দিলাম। তোর কাকাকে বলেছিলাম, আমি আর কোনো সুদ দিতে পারবো নাহ, সাথে কিছু সময় চেয়ে নিয়েছিলাম যে পরবর্তীতে সব টাকা দিয়ে দিবো। তোর উপর সংসারের দায়িত্ব হঠাৎ করে এসে পড়লো, তাই তোকেও কিছু বলি নি। তোর কাকা মাঝে মাঝেই ফোন দিতো টাকার জন্য। আমার কাছে হাজার দশেকের মতো ছিলো। দুইবার পাঁচ, পাঁচ হাজার করে দিয়েছিলাম। তারপর থেকেই আর দিতে পারি নি। তোর কাকা সুদ চাচ্ছে নাহ, শুধু আসল টাকাটা চাচ্ছে। কিন্তু এতোগুলো টাকা এখন আমি কোথায় পাবো? তোকে যে বলবো, সেই মুখ টাহও আমার নেই। সংসারের পেছনে সব সময় খেটে খেটে মরছিস। আবার নতুন ঝামেলা। কিন্তু, শেষবার ফোন দিয়ে তোর কাকা এমন একটা প্রস্তাব রাখলো যে আমি নিজেই হতভম্ব হয়ে গেছি।”

শিশির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আজিজ রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আব্বু আপনি কিছু চিন্তা করবেন নাহ। আমি দেখছি কি করা যায়। কাকার টাকা আমি সম্পূর্ণ ফেরত দিয়ে দিবো। শুধু একটু সময় লাগবে। তাও তাড়াতাড়িই দিয়ে দিবো।”

আজিজ রহমান শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এতোগুলো টাকা তুই কোথা থেকে দিবি?”

শিশির বাবাকে আশ্বাসের সুরে বলে ওঠে,
–” আমি ঠিক ম্যানেজ করবো আব্বু। আপনি চিন্তা করবেন নাহ। এতে আপনার শরীর খারাপ করবে। আর কাকা যদি আপনাকে ফোন দেয় তাহলে বলবেন, আমার সাথে কথা বলতে। আপনি আর কাকার সাথে এই টাকা নিয়ে কথা বলবেন নাহ।”

আহিয়া রহমান চুপ করে এতো সময় ওদের কথা শুনছিলেন। এখন উঠে এসে শিশিরের পাশে সোফায় বসে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” শিশির!”

শিশির মায়ের দিকে ফিরে তাকাতেই আহিয়া রহমান বলে ওঠে,
–” আমার বেশ কিছু গয়না আছে। আমার মনে হয়, বন্দক রাখলে তোর কাকার টাকা গুলো দেওয়া হয়ে যাবে।”

শিশির মায়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
–” মা! তুমি এইসব কি বলছো? এতোটাহ করুন সময়ও তোমার ছেলের হয় নি। আমি ঠিক কিছু একটা ব্যবস্থা করে ফেলবো। একটু সময় দাও। দরকার হলে আমি নিজেই কাকার সাথে কথা বলে, সময় চেয়ে নিবো। এগুলো আর বইলো নাহ দয়া করে।”

–” কিন্তু…..”

শিশির আহিয়া রহমানকে বাঁধা দিয়ে বলে ওঠে,
–” দয়া করো মা। আমি ঠিক সব সামলিয়ে নিবো। একটু ভরসা রাখো। এখন আমাকে খেতে দাও। অফিস যেতে হবে।”

আহিয়া রহমান আর কোনো কথা নাহ বলে শিশিরকে খাবার বেড়ে দেয়। শিশিরও খাওয়া সেরে অফিস চলে যায়। কিছুসময় পর আদনান আর সাঝ বেরিয়ে এসে খাবার খেতে থাকে। সাঝ মায়ের সাথে কথা বলছে। কিন্তু আদনান চুপচাপ নিজের খাবার খেয়ে নিচ্ছে। অন্যদিন ছেলেটাহ অনেক কথা বলে, সাঝের পেছন লাগে কিন্তু আজ এমন কিছুই করছে নাহ দেখে আহিয়া রহমান ছেলের দিকে তাকায়। আদনান এক মনে মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছে। আহিয়া রহমান আদনানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আদনান! বাবা, কি হয়েছে? মন খারাপ কেন বাপ?”

মায়ের কথায় সাঝও আদনানের দিকে তাকায়। আদনান মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নাহ মা! কই মন খারাপ না তো।”

–” তাহলে, আজ চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিস যে, কোনো কথায় তো বলছিস নাহ। কিছু হয়েছে?”

আদনান মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” নাহ মা! কিছু হয় নি। এমনিই ঘুম থেকে কিছু সময় আগে উঠলাম তো, তাই কথা বলতে ইচ্ছে করছে নাহ। আচ্ছা! আমার খাওয়া শেষ। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে মা। আমি গেলাম। আল্লাহ হাফিজ!”

আদনান বেরিয়ে যায়। সাঝও খাওয়া শেষ করে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। আজিজ রহমান একটু পর খাবেন। তাই আহিয়া রহমান আজিজ রহমানের খাবার বেড়ে রেখে টেবিল গুছিয়ে নেন।

#_চলবে…………🌹

{{ ভুল, ত্রুটি সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি!!!!🥰 }}