লীলাবালি পর্ব-২২+২৩+২৪

0
313

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_২২
আফনান লারা
.
স্টেজের সামনে চটের বস্তার উপরে বসে আছে বেশিরভাগ মানুষ।সবার হাতে একটা করে হাতিয়ার।স্টেজটা নামেই মনে হয় স্টেজ।ফুল দিয়ে তো সাজিয়েছে ভেতরে যাবার গেটটা।স্টেজে শুধু রঙ বেরঙের বেলুন লাগানো।সেখানে বসে আছে তিনজন।একটা ছোট্ট বাচ্চা ছেলে লুঙ্গি পরা,সে বেলুন হাতে পাশের জনের সঙ্গে কিসব বলছে।পাশের জন হলো কিশোর বয়সী একটা ছেলে।সেও একই বেশে।তাদের ঠিক পেছনে একজন বসে আছে।মাথায় বরের টুপি না পরলে অর্ণব জানতোইনা এটা বর।দেখে ডাকাত ছাড়া কিছু মনে হচ্ছিলো না প্রথমে। কিন্তু টুপিটা বলে দিচ্ছে হ্যাঁ এটা বর।তুমি ভুল ভাবছো এতক্ষণ।
অর্ণবকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসা লোকটা ওকে ধরে একটা কাঠের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললেন,’জানি না কি জন্যে আইলা এহানে।তয় তোমারে যাইতে দেয়া যায়না।বিয়া অই গেলে যাইও।কে জানে তুমি আবার যদি পুলিশে খবর দিয়া আমাগো বিয়ার আসর খারাপ করো?’

অর্ণব চুপ করে বসে রইলো।সেই মেয়েগুলোর দল থেকে একটা মেয়ে হাতে করে মিষ্টি একটা আর সন্দেশ একটার বাটি অর্ণবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে হেসে চলে গেছে আবার।অর্ণবের গলা দিয়ে তার নিজের ঢোক যাচ্ছেনা, এই মিষ্টি তো লাঠি দিয়ে ঠেলা মারলেও গলা দিয়ে যাবেনা।বাটি হাতে বসে সে শুধু সেই বরকে দেখছে।আশ্চর্যের বিষয় হলো বর নিজেও একটা বড়সড় হাতিয়ার নিয়ে বসে আছে।ডাকাত নাকি দস্যু তাই ভাবছিল সে ঠিক সেইমূহুর্তে ওর সামনে দিয়ে গেলো তিনজন বয়স্ক দস্যু।তারা ঐ বালক দুটোকে স্টেজ থেকে উঠিয়ে বরের পাশে বসলেন ঠেসেঠুসে।
অর্ণব এবার তাদের দেখছে।তাদের মাঝে একজন জোর গলায় বললেন,’কনে তৈরি তো নিয়ে আসোনা এদিকে।পর্দা টাঙানো হচ্ছে।এত দেরি করা যাইবোনা।পুলিশ আসতে কতক্ষণ? ‘

দুটো ছেলে ভেতর থেকে লাল রঙের শাড়ী একটা এনে স্টেজের পাশে লম্বা করে টাঙিয়ে দিলো।তারা চলে যাবার পর ভেতর থেকে লীলাবালি গানটা আরও জোরে ঘাড়ো করে শোনা যাচ্ছিল।সবাই এদিকেই আসছে এখন।
অর্ণব কৌতূহল নিয়ে লাল শাড়ীটার দিকে তাকিয়ে আছে।বিয়েতে আসলে সবার আকর্ষণ থাকে বর আর বধুর প্রতি।অর্ণবের ও হয়েছে ঠিক তাই।
একজন হুজুর ও এসেছেন।তার চেহারা দেখে মনে হলো তাকে জোর করে এনে বসিয়ে রেখেছে ঠিক কোণায়।তিনি বারবার অর্ণবকে দেখছিলেন।তার চোখ যেন বলছে, বাবা আমারে বাঁচাও!

কনে কে শাড়ীর ওপাশে এনে বসানো হয়েছে।সে আসার দশ সেকেন্ডের ভেতর গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বললো,’আমি এই বিয়ে করবোনা।আপনারা আমায় মেরে ফেলুন তাও আমি বিয়ে করবোনা’

এই দুটো লাইন শুনে অর্ণবের চোখ গেলো সেদিকে।কণ্ঠটা অনেক চেনা লাগলো।এতই চেনা যে দেখে নিশ্চিত হবার সময় হয়ে দাঁড়ালো এখন।আওয়াজটা পেয়েই সে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে।সোজা শাড়ীটার কাছাকাছি যাওয়া ধরতেই দু একটা ছেলে এসে ওর বুকে হাত ধরে থামিয়ে চুপ করে থাকলো।অর্ণব শাড়ীটার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।

হুজুর দোয়া করে বরবেশে যে বসে আছে তাকে কবুল বলতে বললেন। সে কবুল বলার পর্ব শেষ করার পর এবার কনের পালা আসলো।
ওপারের মেয়েটা আবার চেঁচামেচি করে বললো,’সে মরে গেলেও তাকে যেটা বলতে বলেছে সেটা সে বলবেনা’

এবার বরবেশে যে বসে ছিল সেই ডাকাতের মতন দেখতে ছেলেটা স্টেজ থেকে নেমে দাঁড়ালো।হাতিয়ারটা এক পাশে রেখে পর্দাটা টান দিয়ে সরিয়ে নিচু হয়ে বসে থাকা কনের গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,”তুই বিয়ে করবিনা?? তোর……!!!বল কবুল।নাহলে তুই আজ মরবি!!”

অর্ণব ছেলেটার পিঠের কারণে মেয়েটাকে দেখছেইনা।ঐছেলেগুলোর চোখের আড়াল হয়ে পা টিপে টিপে কাছে গিয়ে দাঁড়ালো সে।যাকে নিচে বসে থাকতে দেখলো কনের বেশে তাকে দেখে মাথাটা ঘুরে গেছে ওর।
এ যে কুসুম!!
লাল রঙের সুতির শাড়ী পরা মাথায় সোনালী রঙের ঘোমটা।চোখের পানি তার বাঁধ মানছিলনা।গালে হাত দিয়ে ভয়ার্ত চেখে সামনের ছেলেটাকে দেখছিল সে’

অর্ণবের আর বুঝতে বাকি নেই যে ওকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে এখানে।আশেপাশে ওর পরিবারের একটা মানুষকে সেও দেখলোনা,তারমানে এটাই নিশ্চিত!
কুসুম গাল থেকে হাত সরিয়ে রাখালের পাশে তাকাতেই অর্ণবকে দেখে ওর কান্না বন্ধ হয়ে গেলো মূহুর্তেই।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার।এই মানুষটা এখানে কেন?উনার তো ঢাকায় থাকার কথা।এই জায়গায় তো তার ভুলেও আসার কথা নয়।
রাখাল হনহনিয়ে গিয়ে বাহিরে থেকে একটা চিকন গাছের ঢাল ভেঙ্গে এনে বললো,’বল কবুল বল!!’

কুসুম কাঁপছে ভয়ে।কিন্তু চোখ তার অর্ণবের দিকে এখনও।
ওকে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে প্রতিটা মানুষ।মুন্নি তিয়াজি কুসুমের মুখ টিপে ধরে ঘুরিয়ে বললো,’পরপুরুষকে এমন করে দেখে কেউ? বেহায়া মাইয়া!!চিনস নাকি এরে?তোর কিছু হয়?’

কুসুম কাঁপা ঠোঁটে জবাব দিলো,’আমি এনাকে চিনিনা’

রাখাল ততক্ষণে ঢাল দিয়ে একটা ঘা বসিয়ে দিয়েছে কুসুমের হাতে।বললো,’শেষবার কইতাছি কবুল বল।নাহলে আজ তোরে মাইরা আমি জেলে যামু গা’

অর্ণবের প্রচুর রাগ হলো।রাখালের হাত থেকে ছোঁ মেরে ঢালটা নিয়ে সেটাকে ফেলে পাশেই সাজিয়ে রাখা মোটা গাছের একটা ঢাল তুলে ছুঁড়ে মারলো রাখালের গায়ে বরাবর।এরপর চেঁচিয়ে বললো,’কাপুরুষ! ‘

সবাই হাতিয়ার তাক করে ধরলো অর্ণবের দিকে।রাখাল মাটিয়ে পড়ে তাকিয়ে আছে।সেখানে পড়ে থেকে বললো,’এরে কে এনেছে এখানে?মেরে বিদায় করো এখান থেকে।আমার বিয়েতে আমি কোনো জুটঝামেলা চাইনা!’

অর্ণবকে একসাথে তিনজন মিলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
অর্ণব কুসুমের দিকে তাকিয়ে বললো,”কুসুম কিছু তো বলো!’

আমির তিয়াজি থামতে বললেন ঐ তিনজনকে।তারপর কুসুমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন অর্ণবকে ও চেনে কিনা।কারণ অর্ণব তার নাম জানলো এটা তো স্বাভাবিক না।
কুসুম আবারও বললো সে অর্ণবকে চেনেনা।
আমির তিয়াজি রাখালকে নিচ থেকে তুলে দাঁড় করিয়ে বললেন,’চুপচাপ ওখানে বোসো।মেয়ের মুখ থেকে কবুল কেমনে বাহির করতে অয় সেইটা আমাগো নারীদের জানা আছে’

রাখাল রাগের চোখে কুসুমকে দেখতে দেখতে বসলো।একটা মেয়ে এসে ওকে বাতাস করা শুরু করে দিছে।সে হলো কূর্নি।
অর্ণব কুসুমের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।এমন একটা ছেলের সঙ্গে বিয়ে হলে কুসুম একদিন ও বাঁচবেনা।যে বিয়ের আগে এমন অমানবিক আচরণ করে সে তো বিয়ের পরে আরও বেশি!!
আর ও কি আমায় বাঁচাতে মিথ্যা বলছে?’

অর্ণব নিজের গা থেকে ঐ তিনজনের হাত ছুটাতেই পারছেনা।ওর চাহনি দেখে কুসুম বুঝতে পেরেছে এখন সে গন্ডগোল করে বসবে, আর এটাতে ওর মৃত্যু নিশ্চিত।তাই অর্ণবকে বাঁচাতে সে কবুল বলতে মুখ খুলতেই অর্ণব তার আগেই চিৎকার করে বললো,’ও আমার স্ত্রী’

সবাই চোখ বড় করে অর্ণবের দিকে তাকালো।রাখাল উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
আমির তিয়াজি এগিয়ে এসে বললো,’কি কইলা তুমি??’

-“হ্যাঁ।আমরা বিবাহিত।কুসুম আমার বিয়ে করা বউ’

সবাই আবার কুসুমের দিকে তাকালো।কুসুম অর্ণবকে বাঁচাতে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘না।উনি মিথ্যা বলছেন।আমরা বিবাহিত নই’

আমির তিয়াজির ইশারায় অর্ণবের হাত ছেড়ে দিয়েছে ঐ তিনজন।অর্ণব এগিয়ে এসে বললো,’কি বললে?তোমার মাথা ঠিক আছে?তুমি জানো এখানে কি হচ্ছে?সজ্ঞানে আছো তুমি?আমাকে আমার কথা বলতে দাও’

আমির তিয়াজি অর্ণবের হাত টেনে ধরে কুসুমের সামনে থেকে সরিয়ে এনে বললেন,’আমাগো ঘরের হবু বউ মিছা ক্যান কইবে??তুমি কোথা থেকে উড়ে আসছো মিছা কথা রটাইতে??কিসের বিয়ে হইছে তোমাদের??তাহলে সেটা কুসুম অস্বীকার কেন করছে?’
.
অর্ণবের মাথা কাজ করছেনা।সে কুসুমকে বাঁচাতে কথাগুলো বলছে আর কুসুম কিনা একের পর এক ভুলভাল বলে সব কিছুতে পানি ঢেলে দিচ্ছে। এমন সিচুয়েশনে ফেললো যে সবাইকে বিশ্বাস করানো কঠিন হয়ে যাবে।অর্ণব নিজের কপাল টিপে ধরে বললো,’আমি আমার বউয়ের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চাই।ও আসলে আমার সাথে রাগ করে আছে তাই এসব বলছে’

-‘কিসের একান্তে কথা?তুমি যে ওর জামাই তা আমরা কি করে বিশ্বাস করতাম?যা বলার আমাদের সামনে বলো’

-‘না সামনে বলা যাবেনা।আচ্ছা ঐ জায়গায় বলি?আপনারা দেখেন’

অর্ণব কুসুমের হাত খপ করে ধরে একটু দূরে নিয়ে আসলো।তারপর ফিসফিস করে বললো,’তোমার মাথা গেছে?আমি তোমাকে বাঁচাতে চাইছি আর তুমি সব কিছু অস্বীকার কেন করছো?’

রাখাল এগিয়ে যাওয়া ধরলো সেদিকে।আমির তিয়াজি ওকে থামালেন।
কুসুম সবার দিকে একবার তাকিয়ে অর্ণবের দিকে ফিরে বললো,’এত বড় মিথ্যা কেন বলবেন?আপনি জানেন উনারা কত মারাত্মক?উনারা দস্যু!আপনি ভালোই ভালোই চলে যান’

-‘আমি যাচ্ছিনা’

রাখাল আমির তিয়াজির হাত সরিয়ে ওদের দুজনের মাঝখানে এসে বললো’কুসু? তুই ওর বউ?’

কুসুম আবার বললো আমি উনাকে চিনিনা।উনাকে আপনারা চলে যেতে বলেন।
অর্ণব মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে আছে।রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার।
শেষে বাধ্য হয়ে কুসুমের গালে চড় একটা বসিয়ে দিয়ে হাত টেনে ধরে ধমকিয়ে বললো,’আমারে চিনো না তুমি?এক বছর আগে আমারে বিয়া করো নাই তুমি?সব ভুলে গেছো??আবার মনে করিয়ে দিতাম?হুমমম?আর বলবা মিথ্যা??আরও কয়েকটা মারবো??’

কুসুম গালে হাত দিয়ে চুপ করে তাকিয়ে আছে।চড় খেয়ে জন্মের মিথ্যা বলবার স্বাদ মিটে গেছে।

রাখাল রেগেমেগে অর্ণবকে ঝাঁকিয়ে বললো,”তোর এত বড় সাহস তুই আমার বউরে মারস!’

অর্ণব রাখালকে ধাক্কা মেরে আবারও মাটিতে ফেলে দিয়ে বললো,’তোর এত বড় সাহস তুই আমার বউরে বিয়ে করার আগেই মারছস!’
চলবে♥

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_২৩
আফনান লারা
.
রাখালের গায়ে পরপর কয়েকবার মার পড়ায় আমির তিয়াজির লোকেরা প্রচণ্ড রেগে গিয়ে অর্ণবের উপর আক্রমণ করলো।কুসুম তাদের সবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে বাধা দিয়ে।ভয়ে কিছু বলছেনা।আমির তিয়াজি কাছে এসে বললেন,’তোমার সঙ্গে এই ছেলের বিয়ে হয়েছে?শেষবার জিজ্ঞেস করছি’

কুসুম অর্ণবের ভয়ে বললো,’হুম”

আমির তিয়াজি পেছনে তাকালেন সবার দিকে।তারপর সোজা গিয়ে স্টেজে বসলেন।মুন্নি ছুটে এসে বললো,’ তাহলে আমাদের কানে এতদিন এই খবর কেন আসলোনা?’

ভেতর থেকে একজন বললো,’হয়ত বিয়ে পড়িয়ে রেখেছে যাতে আমরা তুলে আনলেও বিয়ে না করাতে পারি’

সবাই বললো, ঠিক ঠিক।
আবার কিছু মানুষ বলা ধরলো,’আমাদের বংশের কেউ বিবাহিত মেয়ে বিয়ে করেনা।’

অর্ণব হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।কুুসুমকে নিজের কাছে এনে দাঁড় করিয়ে বললো,’তাহলে এই বিয়ের কোনো মানে হয়না।আমরা আসি।ভালো থাকবেন’

আমির তিয়াজি ওদের দাঁড়াতে বললেন।এরপর অর্ণবের দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে থেকে বললেন,’তোমার আর ওর বিয়ে হয়েছে তার কি প্রমাণ? হতে পারে তুমি কুসুমকে বাঁচাতে মিথ্যে বলছো।আর বিয়ে হলে তো আমরা কারোর না কারো মুখে নিশ্চয় শুনতাম।বিয়ে তো চাপা থাকার মতন বিষয় না’

অর্ণব কুুসমের কানে ফিসফিস করে বললো,’তোমার পিঠে কোনো তিল আছে?’

কুসুম আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইলো।পিঠের তিল দিয়ে এ সময়ে অর্ণবের কি কাজ তা ভাবতে গিয়ে সে অবাক হয়ে গেছে।অর্ণব ওকে খোঁচা দিয়ে বললো,’যা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দাও!’

-‘ননননননেই’

রাখাল তার হাতিয়ারটা অর্ণবের দিকে তাক করে বললো,’আমি জানি ওরা বিবাহিত না।কেউ বিশ্বাস করবানা ওদের কথা’

অর্ণব এগিয়ে গিয়ে আমির তিয়াজির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,’আমার বউয়ের পিঠে একটা তিল ও নেই।আমি নিশ্চিত।এই আন্টিকে দিয়ে চেক করিয়ে নিতে পারেন’

আমির তিয়াজি রেগে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছেন।কুসুম বুঝে গেছে অর্ণব কানে কানে ঠিক কি বলেছে তাকে।ভয় বাদ দিয়ে লজ্জায় লাক টুকটুকে হয়ে গেলো সে।
ভেতর থেকে আবার কজনের আওয়াজ শোনা গেলো।আমির তিয়াজি স্পষ্ট শুনার জন্য ভেতরে চলে গেলেন।রাখাল কুসুমকে ভাল করে দেখছে ঘুরে ঘুরে।অর্ণব সেটা দেখে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
—–
-‘কি বলো তোমরা?কি করতাম এখন?যদি সত্যি বিবাহিত হয় তো এই বিয়ে তো হবেনা’

আমির তিয়াজির কথা শুনে তার আম্মা বললেন,’এটাও হইতে পারে তারা মিথ্যা কইতাছে।এক কাজ করো।ঐ হুজুররে কও ওদের বিয়া পড়ানোর কথা তুলতে।যদি ওরা বিয়েটা করে নেয় তাহলে আমরা বুঝবো ওদের আগেও বিয়ে হয়ছে।আর যদি আমতা আমতা করে তাহলে তো ধরেই নিবা যে বিয়ে হয়নাই।এতক্ষণ সব মিছা কইছিল!’

-‘আম্মা একদম ঠিক কইছেন’

আমির তিয়াজি বাহিরে এসে বললেন,’শোনো, তোমরা তো বলছো তোমাদের আগেই বিয়ে হয়েছে,তাহলে আজ আবার বিয়ে হবে তোমাদের।তৈরি হও’

অর্ণব যেন আকাশ থেকে নিচে ধপাস করে পড়লো।কুসুম
মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে।তার ধারণা ছিল এমন কিছুই হবে।রাখাল চটে গিয়ে বললো,’এটা কেমন কথা নানাজান?এরা যদি বিবাহিত না হয়ে থাকে তবে??? তবে তো সত্যিকারের বিয়ে হয়ে যাবে ‘

-‘না হবেনা।এত সাহস নাই ওদের।আমরা শুধু দেখতে চাই মিথ্যা বললো নাকি সত্যি’

কুসুম অর্ণবের অবস্থা দেখে বললো,’এখনও সময় আছে।চলে যান আপনি।এত বড় ভুল করবেন না।আমি চাইনা আপনার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আপনার স্ত্রী হতে। চলে যান দয়া করে।আমার ভাগ্যে এটাই ছিল।দয়া করে চলে যান আপনি।
আপনার জীবনটা আমার কারণে নষ্ট করবেন না’

-‘কি রে ব্যাটা?? কথা কস না ক্যান?তার মানে কি তোর বউ না কুসুুম?এতক্ষণ আমাদের মিথ্যা কইছিলি?’

আমির তিয়াজির মায়ের কথা শুনে অর্ণব ঘোর থেকে বের হলো।জুথির ছবি ভাসছিল চোখের সামনে।
কিন্তু নাহ!
কুসুম তার দায়িত্ব। আজ যদি কুসুমকে এমন হিংস্র স্বভাবের একটা ছেলের কাছে আমি ফেলে চলে যাই নিজ স্বার্থের কথা চিন্তা করে তাহলে এটার অভিশাপে আমি কখনওই সুখী হবোনা।অমানবিকতা হবে এটা।বাবা ঠিক বলেছিলেন….
কুসুম আমার ভাগ্যে থাকলে পৃথিবীর যে কোণায় গিয়ে লুকাইনা কেন তার সাথেই আমার বিয়ে হতো।আজ সেটাই হবে, তা নাহলে আমি এখন বাসায় থাকার কথা।
না জুথি জেদ করে জঙ্গলের দিকে ছুটতো, না আমি জঙলে পথ হারাতাম, আর না আমি মেলা ভেবে এদিকে আসতাম।
না পালিয়ে যাবার সময় পাঞ্জাবি পেরেকে আটকাতো।সব ভাগ্যের লিখন।’

-“আপনি কথা বলছেননা কেন?বেশি দেরি করবেননা।চলে যান!আপনি পালালে ওরা আপনাকে ধরতে যাবেনা।যান আপনি!!’

অর্ণব মাথা উঁচু করে বললো,’হুম।আমি কুসুমকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে রাজি।আপনারা ব্যবস্থা করুন’

কুসুম চমকে ওর মুখের দিকে তাকিয়েছে।

অর্ণবের মাথায় রাখালের টুপিটা বসিয়ে দেওয়া হলো।রাখাল চোরের মতন এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।পর্দা ছাড়াই বিয়ের সব কার্যাদি শুরু হয়ে গেলো।অর্ণবের কবুল বলা শেষে যখন কুসুমের বেলা আসলো তখন আমির তিয়াজি থামিয়ে দিলেন।
কুসুম আর অর্ণব দুজনই অবাক।আমির তিয়াজি বললেন,’হয়ত সত্যি সত্যি আগে তোমাদের বিয়ে হয়েছে।আমি পরীক্ষা করবার জন্য এমনটা করেছি।বিবাহিতের জোর করে দ্বিতীয় বার বিয়ে করালে আবার কি হয় না হয় বলতে পারিনা।পাপ হতে পারে আবার মঙ্গল ও হতে পারে।কিন্তু আমি সংশয়ে থাকতে চাইনা।
তার চেয়ে বরং তুমি তোমার বউরে নিয়ে চলে যাও এখান থেকে।আমাদের যা বিশ্বাস হবার তা হয়েছে।আর বিশ্বাসের দরকার নাই।’

আমির তিয়াজি চলে গেলেন আসর ছেড়ে।কুসুম দম ফেললো।মনে মনে খুশি হলো অনেক।
কিন্তু অর্ণবের মুখে কোনো হাসি দেখলেনা সে।এক এক করে সবাই চলে যাচ্ছে।রাখাল রাগের কারণে কোথায় যেন চলে গেছে হনহনিয়ে।
অর্ণব উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’চলেন’

কুসুম ওর পিছু পিছু আসতে আসতে বললো,’যাক আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন।না হয় আর একটুর জন্য আমাদের সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে যেতো।উফ!!বাঁচলাম।’

অর্ণব তার ব্যাগটা খুঁজে হাতে নিয়ে বললো,’এই জায়গা চেনেন আপনি?’

-‘উহু।এটা তো আমাদের গ্রাম না।উনাদের ও না মনে হয়।আমাকে তারা তুলে অনেকদূরে নিয়ে এসেছে শুনলাম’

-“ওহ’

অর্ণব আর কিছু বললোনা।কুসুমকে সাথে নিয়ে চললো।কুসুম বললো সে কাল ভারত চলে যাবে তার পা এখন কিছুটা ভালো আছে।অর্ণব তার কোনো কথারই জবাব দিচ্ছেনা।
কুসুম আবার বললো,’ভেবেছিলাম জোর করে আমাদের বিয়েটা দিয়ে দিবে।আপনি বাধ্য হবেন একটা সম্পর্কে জুড়তে।এখন সেটা হলোনা, জানেন?আমি অনেক খুশি।আচ্ছা আপনি কিছু বলছেননা কেন?আমি যে তখন মিথ্যে বললাম সে কারণে রেগে আছেন?’

অর্ণব তাও চুপ।হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে তারা মেইন রোডের সন্ধান পেলো।কুসুম শাড়ী একটু উঠিয়ে ওর সঙ্গে হাঁটছিল।একটা সিএনজি থামিয়ে উঠলো দুজন সেটাতে।
কুসুম বললো,’আমার বাড়ি যাবেননা?বাবা মা নিশ্চয় অনেক চিন্তা করছে’

অর্ণব যেন মুখে তালা মেরেছে।একটা শব্দ ও সে উচ্চারণ করছেনা।শীতে গা কাঁপছে কুসুমের।শীতে অর্ণবের ব্যাগটা ওর থেকে কেড়ে নিয়ে বললো,’এটা আমি আমার কাছে রাখি?’

অর্ণব সামনে তাকিয়ে ছিল।কুসুমের কথা শুনে বললো,’ভেতরে আমার একটা শাল আছে।ওটা বের করে পরে নেন।শীত অনেক’

কুসুম দেরি না করে শালটা বের করে গায়ে দিয়ে নিলো।এখন একটু উষ্ণ লাগছে শরীরটা।আল্লাহর কাছে কত দোয়া করেছিল যেন বাধ্য হয়ে এই বিয়েটা না হয়।এখন শান্তিতে কি যে করতে ইচ্ছে করছে।অন্তত মনটাকে বুঝাতে পারবে তার কারণে অর্ণবের জীবন নষ্ট হয়নি।’

পুরোটা সময়ে অর্ণব কুসুমকে একটামাত্র প্রশ্ন করেছিল।আর সেটা হলো,’আসলেই আমাদের বিয়ে হয়নি তখন?’

জবাবে কুসুম শুধু তাকিয়ে ছিল শালটাকে মুঠো করে ধরে।
দুই ঘন্টা লাগলো অর্ণবদের বাড়িতে আসতে।ওর ফোন অফ হয়ে গেছিলো ব্যাটারি ডাউনে।মা বাবা কতবার যে ফোন করেছিলেন।কুসুম পথে ঘুমিয়ে পড়েছিল।সিএনজি ড্রাইভার না বললে অর্ণব খেয়াল করতো না ওর হাত একটা বাহিরে বেরিয়ে ছিল।নিজেকে তখন কি করতে ইচ্ছে করছিল তার।অহেতুক চিন্তায় একটা এক্সিডেন্ট হয়ে বসতো।
কুসুম ঘুম ঘুম চোখে ওর পিছু পিছু যাচ্ছে মাটির পথটা ধরে।রাত তখন নয়টা বাজে।অর্ণব তার সেই টর্চ জ্বালিয়ে চলছে।
বাড়িতে ঢোকার সময় বাইরে বাবাকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখলো সে।বাবা ওকে দেখে মুখটা ফুলিয়ে বললেন,’এত সময় লাগে?আমাাদের চিন্তা হয়না??ফোন অফ করে রেখেছিলি কেন?’

তিনি আরও কিছু বলতে চাইলেন।কিন্তু ওর পেছনে কুসুমকে আসতে দেখে তার কথা একেবারে বন্ধ হয়ে গেলো।মা আর মিশু ভাবীও ছুটে আসলেন অর্ণবের নাম শুনে।
সবাই অবাক হয়ে কুসুমকে দেখছে এখন।বেশি অবাক হলেন বিয়ের সাজে দেখে।
অর্ণব নিজের ব্যাগটা কুসুমের হাত থেকে নিয়ে ঘরে যেতে যেতে বললো,’বিয়ের বন্দোবস্ত করো।আমি ওকে বিয়ে করবো এখন’
চলবে♥

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_২৪
আফনান লারা
.
-‘মানেহ?কি বলে গেলো ও?’

বাবা অর্ণবের কথার কোনো মানে মতলব বুঝতে পারলেননা।ওসব বাদ দিয়ে কুসুমের দিকে ফিরে বললেন,’কি গো মা তুমি এখানে?এই বেশে?আমার তো কিছু ঠিক লাগছেনা’

কুসুম অর্ণবের শেষে বলা কথাটা শুনে ঝটকা খেয়ে চুপ করে আছে।মা পিছু হটে অর্ণবের কাছে গেলেন।সে ফোনে চার্জ দিয়ে টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসে পানি খাচ্ছে শুধু।মা কাছে এসে বললেন,’কিরে?কিছু তো বলবি।আমরা তো কিছুই বুঝতেছিনা’

-“কুসুমের বাবা মাকে আসতে বলো।বললাম না বিয়ের আয়োজন করতে?’

বাবা ভেতরে এসে বললেন,’বিয়ের আয়োজন মানে?তোর শরীর ঠিক আছে তো?এসব কি বলছিস?আমাদের খোলসা করে কিছু না বলেই শুধু বিয়ে বিয়ে করছিস।বিয়ে তো পালিয়ে যাচ্ছেনা।আগে বল কুসুম এখানে কেন?আর তোর আসতে এত দেরি বা হলো কেন?’

অর্ণব কুসুমের দিকে তাকালো।কুসুম ও ওর দিকে তাকিয়ে আছে।এখনও ঘরে ঢোকেনি।অর্ণব গ্লাস রেখে বললো,’হ্যাঁ বিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।কাল ঈদ।তাই আমি আজ বিয়ে করবো।বন্দবস্ত করো।কাহিনী শুনতে পাঁচ মিনিট ও লাগবেনা’

বাবা অর্ণবের এমন বদলে যাওয়া দেখে যতটা না অবাক হলেন তার চেয়ে বেশি খুশি হলেন কুসুমকে বিয়ের ব্যাপারে ওর এত তড়িগড়ি করা দেখে।মাকে ইশারা করে তিনি বেরিয়ে গেলেন মসজিদের দিকে।তার পাশেই কাজীর বাসা।কাজী আর ইমাম দুই ভাই।তাদের সঙ্গে করে আনবেন।অর্ণবের মা কুসুমের হাত ধরে সোফায় বসিয়ে বললেন,’কিরে মা?আমাকে তো বল কি হয়েছে?চিন্তা তো আর মাথায় আঁটছেনা।তোর না ভারতে চলে যাবার কথা ছিল?তবে তুই এখানে কি করে এলি?পথ হারিয়ে ফেলেছিস?তাহলে বিয়ের বেশে কেন তুই?’

অর্ণব চুপ করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।মিশু ভাবী বাড়ির ফোন থেকে কুসুমের বাবা মাকে ফোন করে বললেন তারা যেন জলদি এখানে চলে আসে।কুসুম এখানে।
তারা অনেক চিন্তায় ছিলেন।পুলিশের কাছেও গিয়েছিলেন।এখন কুসুমের খবর পেয়ে হাঁপ ছেড়ে রওনা হলেন অর্ণবদের বাসার উদ্দেশ্যে।কুসুম আস্তে করে বললো,’আমি আসলে জানিনা ওরা কারা।সকালের দিকে কূর্নি নামের একটা মেয়ে আমাকে জঙ্গলের গ্রাম দেখাবে বলে নিয়ে যাচ্ছিলো।বাবা মা বাধা দিয়ে আর যেতে দেয়নি আমায়।এরপর রাতে কতগুলো লোকের দল আমাদের ঘরে জোরজবরদস্তি ঢুকে বাবা মাকে তলোয়ারের ভয় দেখিয়ে আমাকে নিয়ে আসে অনেক দূর।
আমি জায়গাটা চিনি নাই।কখনও দেখিনি।এরপর আমাকে কতগুলো মহিলা মিলে জোর করে বধূ সাজিয়ে দিয়েছিল রাখাল নামের একটা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবে বলে ঠিক তখনই উনি আসেন। জানিনা কি করে এসেছেন ওখানে।এরপর উনি আমাকে বাঁচিয়ে এখানে নিয়ে আসলেন’

মা মুখে হাত দিয়ে আশ্চর্য হয়ে চেয়ে রইলেন।মিশু ভাবী কুসুমের পাশে বসে বললো,’তা না হয় বুঝলাম।কিন্তু অর্ণব তুমি হঠাৎ ওকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত কেন নিলে?তুমি তো এই বিয়েতে রাজি ছিলেনা’

অর্ণব উঠে চলে গেলো তার ঘরে।প্রশ্নটার উত্তর দিতেও তার রাগ হচ্ছে প্রচুর।
মা কুসুমের মুখটা তুলে ধরে বললেন,’তুই জানিস ও কি কারণে বিয়ে করতে রাজি হলো??’

-“জানিনা।তবে আমার জানা উচিত’

শালটা খুলে কুসুম ছুটে গেলো অর্ণবের রুমের দিকে।বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে অর্ণব দাঁড়িয়ে ছিল।কুসুম ওর থেকে একটু দূরত্বে দাঁড়িয়ে বললো,’আমি জানতে চাই আপনি কেন আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন যেখানে আপনি আমায় কখনও বিয়ে করতে চাননি? ‘

অর্ণব বললো,’চলো যাও এখন।আমার মেজাজ ঠিক নেই ‘

-‘আমি জানতে চাই।আমার অধিকার আছে এটা জানার’

অর্ণব পেছনে ঘুরে তাকালো এবার।কুসুম ওর চাহনি দেখে ভয়ে নড়ে উঠেছে।অর্ণব এগিয়ে এসে বললো,’জানতে চাইতেছো কেন বিয়ে করতে চাচ্ছি?
বলো… বিয়ে তো হয়ে গেছে তাও আবার কেন বিয়ে করছি?
পরিবারের মানুষ যাতে এই বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন না তুলে সে কারণে’

কুসুম থতমত খেয়ে বললো,’কিসের বিয়ে?’

-“কিসের বিয়ে?কুসুম তুমি সবটা জানো।তখন আমাদের বিয়ে পড়ানোর সময় আমি কবুল বলার পর তুমি বলার সেসময়ে ঐ দস্যু তোমায় থামিয়ে দিয়েছিল ঠিক,তবে তুমি কি ভেবেছো?উনার মানা করার পরেও তুমি যে তিনটি বার কবুল বলেছিলে তা আমি শুনতে পাইনি??শুধু আমি কেন!!পাশে বসে থাকা হুজুর ও শুনতে পেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন তৎক্ষনাৎ।’

অর্ণব আরও এগিয়ে গিয়ে কুসুমকে ঝাপটে ধরে বললো,’কেন কুসুম?কেন তুমি কবুল বললে তখন?কেন তুমি এমনটা করলে??’

কুসুমের চোখে পানি দেখে ওর হাত মূহুর্তেই ছেড়ে দিলো অর্ণব।রেগে আবার বারান্দায় গিয়ে গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়ালো।কুসুম কান্না থামিয়ে বললো,’আমি আপনার স্ত্রী হয়ে ভারতে চিরজীবনের জন্য চলে যেতে চেয়েছিলাম।আমি কখনও আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাইতে আসতাম না।শুধু এই ভেবে বাকি জীবন পার করতাম যে আমাদের বিয়েটা হয়েছে।আমি বিবাহিতা।’

-‘বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়।যাও তুমি রুম থেকে।আমাকে একা থাকতে দাও’

কুসুম রুম থেকে বের হয়ে গেলো।ভেবেছিল বিয়েতে কবুল বলার কথা হয়ত সে ছাড়া আর দ্বিতীয় কেউ জানেনা অথচ যার জানলে আগুন বাঁধবে সে জেনে বসে আছে।
এতটাই রেগে আছেন যে আপনি বলা ছেড়ে তুমিতে চলে আসলেন তাঁর সেদিকে খেয়াল নেই।অথচ উনি কাউকে তুমি করে বলেননা।’

-‘কিরে কাঁদছিস কেন?অর্ণব কি বলেছে তোকে?’

-“কিছুনা’

হুজুর আর ইমাম হাসানকে আসতে দেখে মা কুসুমের হাত ধরে তার রুমে নিয়ে আসলেন।অর্ণব তাদের সাড়া পেয়ে চলে আসলো সোফার রুমে।কুসুমের বাবা মায়ের আসতে দেরি হবে। তাই অপেক্ষা করতে লাগলেন তারা।কুসুম খাটে বসে এক দৃষ্টিতে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে ছিল।
নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।আচ্ছা কারোর স্ত্রী হয়ে থাকা কি অপরাধ?
আমি কি স্বার্থপরায়ণ?কিন্তু এই বিয়েটাকে আমি আমার নিজের জীবনের জন্য স্বীকৃতি দিয়েছিলাম।তিনি জানুক তা ভেবে আমি কবুল বলিনি।আমি চাইনি তিনি জেনে যাক তখন আমাদের বিয়ে হয়েছে।আমি তো….’

মিশু পাউডার আর লিপস্টিক নিয়ে বসে কুসুমকে সাজাতে লাগলো।একটা ছোটবোনের অনেক শখ তার।আছেও।তবে সেই ছোটবোনটা অনেকদূরে থাকে।কুসুমকে দেখলে ছোটবোনটার কথা মনে পড়ে যায়।
বিয়ের কথা শুনে আশেপাশের দশ বিশজন পাড়া প্রতিবেশী এসে হাজির হয়েছে।
বিয়ের মহল মনে হচ্ছে এখন।অর্ণব মাথার যন্ত্রনায় একবার এক পাশ করে বসছে।সবাই অপেক্ষা করছেন কুসুমের বাবা আসার।কুসুম সেজেগুজে বসেছিল এতক্ষণ ।
তার চোখে ঘুম নেমে এসেছে আবারও।অর্ণবের মায়ের রুমের বিছানার এক কেণায় দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে ঘুমাচ্ছে সে।
ওর বাবা মা আসতেই হুজুর দোয়া শুরু করলেন।
কুসুমের বাবা কিছুই বুঝলেননা।শেষে অর্ণবের বাবা মায়ের থেকে সবটা শুনে বুঝতে পারলেন পরিষ্কার।কুসুমকে জাগাতে আসলো কলি।কলি ওকে দেখে কি খুশি যে হলো।চুমু তে ভরিয়ে দিলো বোনকে।কুসুম হাসতে চেয়েও পারছেনা।অপরাধ বোধের চোটে তার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেছে।
অর্ণবের মা এসে কুসুমের গলায় একটা চেইন পরিয়ে দিয়ে ঘোমটা বড় করে টেনে দিলেন।
অল্প সময়ের ব্যবধানে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলো।কুসুম ভয়ে অর্ণবের মায়ের রুম থেকে নড়ছেনা।শেষে মিশু ভাবী জোরাজুরি করে ওকে অর্ণবের সাথে সাথে রুমে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।অর্ণব সবেমাত্র ঢুকেছিল।কুসুম ধাক্কা খেয়ে সোজা ওর পিঠের সাথে লেগে পড়লো।অর্ণব পেছনে তাকাতেই ও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো আবার।মিশু ভাবী দরজা টানতে টানতে বললেন,’ভাই দরজা লাগাও’

কুসুম ঘোমটা টেনে বালিশ একটা নিয়ে এসে বললো,’আমি ঐ যে মেহমানের ঘর আছেনা?ওখানে যাই।আপনি ঘুমান’

-‘দাঁড়াও।!আমি তোমায় বলছি যেতে?বাবাকে দিয়ে আমায় ঝাড়ি দেওয়াতে চাও?তোমাকে বলছিনা আমার মেজাজ খারাপ এখন??চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়ো।’
চলবে♥