শখের সাদা শাড়ি পর্ব-১৯+২০

0
365

#শখের সাদা শাড়ি
#ফাতেমা তুজ
পর্ব-১৯+২০

১৯.
অনুজের কথা টা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছেন মাহফুজ সাহেব সহ সকলে। সৌমেন এর সাথে ওর পি এ মাইশার যে দীর্ঘদিনের প্রণয়। মাইশার ব্যক্তিগত জীবনের জন্যই এই কথা টা সকলের অগোচরে ছিলো। এসব কথা শুধু মাত্র অনুজ ই জানে। স‍ৌমেন কোনো কথাই পেটে রাখতে পারে না। অনুজ কে বলা চাই ই চাই। অনুজ তার ওয়াইফ কে বলে কিছু ছবি পাঠাতে। যেখানে সৌমেন আর মাইশা খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে। ছবি গুলো দেখে মাহফুজ সাহেব তেমন কিছু বুঝেন না। তবে অনুজ গত এক সপ্তাহে অনেক কিছু বুঝে নিয়েছে। মাইশা যে লাপাত্তা হয়ে গেছে সেটা সকলের ই জানা। তবে বিষয় টা ঘাটায় নি কেউ। অনুজ প্রথমে সমস্ত সি সি টিভি ফুটেজ চেইক করেছে। ওর সন্দেহ টাই ঠিক ঠেকে। কোনো ফুটেজ ছিলো না। মাইশা কায়দা করে সরিয়ে ফেলেছে সব। অনুজ তারপর ই খোঁজ করেছিল অফিসের আর কেউ লাপাত্তা কি না তখন জানতে পারে কল্লোল নাকি কিছু দিন যাবত টানা আসছে না অফিসে। সন্দেহ জাগে খুব। সমস্ত ফাইল ঘেটে তথ্য গুলো চেইক করে অনুজ। ফলাফল দেখায় শূন্য। কারণ এখানে মাইশা আর কল্লোল এর সব ডিটেলস ভুয়া। মাইশা বলেছিল সে এতিম। সেই জন্যেই বোধহয় কোনো কিছু চেইক করে নি সৌমেন। আর কল্লোল এর ডিটেলস চেইক করেছে মাইশা। সেই জন্য ধরা পরার ও চান্স নেই। খুব সুন্দর করে গেইম খেলেছে এরা। তবে এদের উপর মহল টা খুব প্রভাবশালী বোঝা যায়। ধরা মুশকিল। অনুজ শেষ চেষ্টা করে একবার। সৌমেন বুদ্ধিমান ছিলো। সব সি সি টিভি ফুটেজ এর বাহিরে ও গোপন কিছু ছোট ক্যামেরা লাগানো থাকতো। অনুজ মনে মনে প্রার্থনা করে যাতে করে এই বিষয় টা মাইশার না জানা থাকে। বই এর ভেতর থেকে ক্যামেরা বের করে অনুজ। ল্যাপটপ এ পেনড্রাইভ লাগিয়ে চেইক করে। সবাই এখন নীরব দৃষ্টি তে। সমীর এর অসুস্থ হওয়ার দিনের ফুটেজ দেখে অনুজ। স্পষ্ট দেখা গেল মাইশা কে। মাইশা সি সি টিভি এর কাছে এসে ফিক করে হাসলো। আর তারপর পর ই বলল
” কি প্রয়োজন বল তো তোর? এই যে তোকে টাকা দিয়ে লাগিয়ে রেখেছে। তুই তো কোনো কাজেই এলিই না। তোকে তো আমি অফ করেই রোজ কাজ করি তাই না। ”

মাইশা এবার হাসতে হাসতে স‍ৌমেন এর লাঞ্চ এ একটা তরল মিশালো। তারপর বাটি টা উপরে তুলে বলল
” প্রিয় সৌমেন। আজকের খেলা টা খুব মজার হবে। ”

খাবার রেখে মাইশা ফিচেল হাসলো। তারপর লকার গুলো থেকে কিছু ফাইল আর নগদ টাকা বের করে নিয়ে বেরিয়ে পরলো। ধীরে ধীরে আগের ফুটেজ গুলো ও দেখলো সবাই। কিছু অপ্রত্যাশিত দৃশ্য সামনে এলো। সৌমেন এর অগোচরে মাইশা আর কল্লোল কেবিনে এসে নোংরা সব কান্ড করতো। এখানে বুঝাই যায় এদের মাঝে সম্পর্ক রয়েছে। উর্মির চোখে ভাসে রিসোর্ট এ মাইশা আর কল্লোল কে চুম্বনে লিপ্ত হতে দেখেছে। তারপর সেদিন সৌমেন ও ফিরে এসেছিল। উর্মি বুঝতে পারে মাইশা আর সৌমেন এর এক সাথে যাওয়ার কথা ছিলো। তবে মাইশা মাঝে ফ্যাসাদ করে বসে। সেই কারনেই কষ্ট পেয়ে ফিরে আসে সৌমেন। উর্মির এখন নিজের চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছে হয়। কেন সে এসব আগে বুঝতে পারলো না। কোনো মতে যদি স‍ৌমেন কে বলা যেতো মাইশার কথা টা। তাহলে সৌমেন এর এই অবস্থা হতো না। উর্মি কেবল ভাবে আর ভাবে। ওর ভাবনার শেষ নেই আজ।

দীর্ঘ সময় নীরব থেকে সমীর বলল
” সত্যি বলতে মাইশার সাথে আমার তেমন যোগযোগ ছিলো না। কেন যেন ভালো লাগে নি ওকে। অনেক গুলো মাস সৌমেন ভাই এর সাথে কাজ করছি অথচ অচিরে ও বুঝি নি এই মাইশা একজন আততায়ী। সৌমেন ভাই এর জন্য খারাপ লাগছে। ”

” হুম সেটাই। আমি ও খুব একটা শান্তি পাচ্ছি না। স্যার এর অবস্থা দেখলেই গলা ধরে আসে। ”

” তবে উর্মি এটা আমি মানতে পারছি না সৌমেন ভাই এর মতো বিচক্ষণ মানুষ কে ঐ দু পয়সার মাইশা গোল খাইয়ে দিলো। এটা আমার মাথায় ক্যাচ করছে না। ”

” ভালোবাসায় অন্ধ হয়েছিলেন সৌমেন স্যার। হয়তো এটাই ছিলো ভাগ্য। ”

” সেই। ভাগ্যের বেশি কে দিবে। এখন বলো তো বাবুর কি নাম রাখলে। ”

” বাবুর নাম তো রাখা হয় নি এখনো। ”

” একটা কথা রাখবে? ”

” হ্যাঁ বলো না। ”

” বাবুর নাম আমি রাখবো প্লিজ। ”

হেসে ফেললো উর্মি। বেডের সাথে উবু হয়ে শুয়ে বলল
” এই কথায় আবার অনুমতি চাচ্ছো? ”

” উহু। আপু কে বলার জন্য বলেছি। আপু যদি পারমিশন দেয় তবেই নাম রাখবো। ”

” আপু দিবে পারমিশন। এতো ভেবো না তো। ”

” হুম। খেয়েছো? ”

” না। খাবো খাবো বলে খাওয়াই হলো না।”

” কি কথা উর্মি! এখন রাত এগারো টা বাজে। এখনি যাবে। ”

” না পরে। এখন আমি তোমার সাথে গল্প করবো। ”

উর্মির কন্ঠে দুষ্টুমি। হাসে সমীর। পরক্ষণেই বলে
” হচ্ছে না মিস। এখন আপনি খেয়ে দেয়ে ঘুম দিবেন। শরীর এর প্রতি যে যত্ন। ”

” কথা বলবো আমি। ”

” লক্ষী মেয়ে। এখন খেয়ে ঘুমাও প্লিজ। কাল কে তো আপা আর বাবু কে নিয়ে ক্লিনিকে যাবে। ”

” ও হ্যাঁ তাই তো। একদম ই খেয়াল ছিল না। আসলে সৌমেন স্যার এর ঘটনা টা এতো টাই আবেগী করে তুলেছিল যে ”

” হয়েছে মিস। এখন আপনি প্লিজ খাবার শেষ করেন। না হলে কিন্তু খুব বকা খেতে হবে। ”

হাসলো উর্মি। কল কাঁটার পূর্বে শব্দ করে চুমু খেল মেয়েটি। আর তারপর ই টুট টুট শব্দ শোনা গেল। সমীর নিশ্চল দেহ টা কে বেডে এলিয়ে দেয়। এদিকের ঝামেলা টা যেন ওকে চেঁপে ধরেছে। কিছু তেই কুল কিনারা পাচ্ছে না।

প্রবীণ এর সাথে কথা বলছিল উর্মি। কেস নিয়ে ছেলেটা নানা ভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে। উর্মি প্রথম দিকে হতাশ হয়েছিল। তার ই সাথে নিজের ভুলের জন্য নিজেকে দোষারোপ করছিল। তবে প্রবীণ জানায় তুলি আর নয়ন এর ঘনিষ্ঠতার প্রমানে তেমন কিছুই প্রুভ করা যেতো না। এতে অবশ্য উর্মির মন খারাপ কমে নি। সে যে ভুল করেছে এটাই সত্য। নয়ন আর তুলি সেদিন খুব রেগে গিয়েছিল তার ই সাথে থ্রেট করেছে। এসবে হয়তো যায় আসে না উর্মির। তবু ও আপা আর বাচ্চা টি কে নিয়ে ভয় পায় সে। পাশের টেবিলে মেঘনা আর বাবু কে দেখে বুক ভারী হয়। অশান্ত হয়ে উঠে উর্মির নারী সুলভ মন। মাতৃত্ব জাগে অন্তকর্নে। বাচ্চা টি কে কোলে তুলে নেয়। তুলতুলে নরম ছানা টির দিকে এক রাশ মায়া নিয়ে চেয়ে থাকে। এক পর্যায়ে অশ্রু সিক্ত নয়নে বলে
” পৃথিবী উল্টে গেলে ও তোর ক্ষতি হতে দিবো না বাবু। তোকে আমি সবার থেকে আড়ালে রাখবো। ”

মেঘনার চোখ থেকে দু ফোঁটা অশ্রু নেমে পরে। উর্মির হাত চেপে ধরে বলে
” আমার সাথে আমার মেয়ের ও মা হয়ে উঠেছিস বোন। তোর ঋণ কি করে শোধ করবো বল? ”

” আপা! এমন কথা বলে আমাকে ঋণী করিস না প্লিজ। আমি ওর মা না হলে ও মায়ের চেয়ে কম কি। ”

দু বোনের মাঝে মৌন ঝরে। কেউ উত্তর করতে পারে না। প্রবীণ সব দেখে ভাবে এদের কে সর্বোচ্চ সাহায্য করবে।

চোখ মুছে উর্মি। প্রবীণ এর নিকটে এসে বলে ” স্যরি। আমরা আসলে হুটহাট আবেগে জড়িয়ে যাই। ”

সামান্য হাসে প্রবীণ। হাটতে হাটতে উত্তর করে
” আবেগ ছাড়া মানুষ আছে? আর এটা তো গর্বের কথা। তোমরা দুই বোন হচ্ছো শক্তি। রুখে দাঁড়িয়েছো অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সেটার জয় পরাজয় পরের কথা তবে তোমরা নারী হিসেবে জয়ী। ”

শ্রদ্ধায় ছেয়ে গেল উর্মির হৃদয়। আপা বাচ্চা টি কে নিয়ে আবার বসে পরেছে। বাচ্চার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন কলিজা খুলে চোখ বুলায়। উর্মি মনে মনে স্থির হয়। তার আপার বাচ্চা কে সব থেকে বেশি ভালোবাসা দিয়ে বড় করবে। ভাবনার অতলে যখন বুদ উর্মি তখন চট জলদি প্রবীণ বলল
” আমি তাহলে যাচ্ছি আজ। তোমরা দেখে শুনে বাসায় যেও। ”

” আচ্ছা। সমীর ফোন করলে জানাবেন আমি বাবু কে নিয়ে চেকাপ করাতে যাচ্ছি। ”

” হুম। নিজেদের খেয়াল রেখো। ”

মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানায় উর্মি। প্রবীণ এর চোখে কিছু একটা লক্ষ্য করেছে সে। এতো টা স্বচ্ছ ছিলো চোখের মনি যা ওকে ভেতর থেকে সম্মান জাগাতে বাধ্য করে। সমীর এর সাথে নিয়মিত কথা বলার সুযোগ হয় না আজকাল। কাজের প্রেসার কম দেখালে ও মূলত কাজ বেড়েছে বহু গুন। যা পুরোপুরি জুড়ে বসেছে উর্মির ঘাড়ে। না জানি সৌমেন স্যার কি করে সামাল দিতেন।

চলবে…….

#শখের_সাদা_শাড়ি
২০.
সৌমেন এর পাগলামি বেড়েছে। সে কাউ কেই নিতে পারছে না। উর্মি এসেছিল কিছু ফাইল চেইক করাতে। তবে তাকে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলো। মাইশা কে উর্মির সাথে গুলিয়ে ফেলেছে সৌমেন। সে জন্য সমস্ত রাগ ঝারছে ওর উপর। উর্মির চোখ দিয়ে পানি নেমে এলো। সৌমেন এর বকা গুলো কেন যেন ওকে দুঃখ দিচ্ছে। শুধু উর্মিই নয় আশে পাশের আরও কিছু মেয়ে কে মাইশা ভাবছে সে। আর তখনি তাদের উপর এট্রার্ক কিংবা বকা চালাচ্ছে অবিরতভাবে। মাহফুজ সাহেব যেন এবার পাগল ই হয়ে যাবেন। ছেলের সাথে সাথে ছেলের মায়ের ও পাগলামি শুরু। লতিফা বেগম সেই যে কান্না শুরু করেছেন আর থামার নাম ই নেই। উর্মি কেমন ভীত চোখ দিয়ে সব টা দেখছে। আচানাক পেছন থেকে জাপটে ধরে সৌমেন সে যে কি ভয়ংকর এক রূপ। সাথে তীক্ষ্ম কিছু চিৎকার
” বলেছিলাম আমায় ছেড়ে না যেতে, কেন চলে গেলে তুমি। কেন আমায় ছেড়ে যাচ্ছো। আই লাভ ইউ মাইশা আই লাভ ইউ। আমি আর কখনো বকা দিবো না, সত্যি আর বকবো না তোমাকে। আর কখনো কাজ নিয়ে টু শব্দ অব্দি করবো না। প্লিজ ব্যাক। ”

কথা শেষ করতে পারে নি সৌমেন। তার পূর্বেই মাথা চেপে ধরে আবার ছুট লাগায় এদিক থেকে সেদিক। মাহফুজ সাহেব এক চুল ও নড়লেন না নিজের স্থান থেকে। তবে এক বুক কষ্ট নিয়ে তাকিয়ে রইলেন। উর্মি ঢকঢক করে পানি খেল। হাঁপিয়ে উঠেছে মেয়েটি। সৌমেন করছে ছুটোছুটি। উর্মি ব্যগ্র হয়ে বলল
” স্যার সৌমেন স্যার এর ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। ”

” ট্রিটমেন্ট তো চলছেই উর্মি। বাট আমার ছেলেটা সুস্থ হচ্ছে না। ”

” কি বলবো আমি বুঝতে পারছি না। ”

” আমার সৌমেন এর ভাগ্য টাই খারাপ। জানি না কোন পাপের সাজা পাচ্ছে আমার সন্তান। ”

ভদ্রলোক গুমোট কান্নায় ভেঙে পরলেন। উর্মির ও ভীষণ কান্না পাচ্ছে। হঠাৎ ই কাচ ভাঙার শব্দ শোনা গেল। হতচকিয়ে উঠলো উর্মি সহ সকলেই। মাহফুজ সাহেব ছুটে গেলেন ছেলের রুমে। গিয়ে দেখলেন লাল তরলের বন্যা বয়ে গেছে। সৌমেন এর পা থেকে ঝরছে সেই তরল। তিনি ছুটে এলেন তবে সৌমেন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। উর্মি গেলে উর্মি কে ও ধাক্কা দেয়। তবে সামলে নেয় উর্মি। একটু পর সৌমেন পুরো পুরি চেতনা হারিয়ে ফেলে। মাহফুজ সাহেব মেঝে তে বসেই অশ্রু ঝরাচ্ছিলেন। উর্মির চিৎকারে ধরমরিয়ে উঠেন। ছেলে কে বুকে জড়িয় ধরেন ” আমার সন্তান। বাবা কি হলো তোর। ”

” সৌমেন স্যার কে হসপিটালে নিতে হবে স্যার। অতিরিক্ত ব্লিডিং হচ্ছে। ”

উর্মি ঝটপট এক টা কাপড় এনে সৌমেন এর পা বেঁধে ফেলে। তবে র’ক্তের থামার নাম ই নেই। একদম ভেঙে পরেন বাড়ির কঠোর ব্যক্তি মাহফুজ সাহেব। উর্মি কল করে অনুজ কে। ছেলেটা শহর থেকে অনেক টা দূরে। সে জানায় এখনি আসছে আর উর্মি যেন সৌমেন কে হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। উর্মি সেটাই করে। হসপিটালে নিয়ে আসা হয় সৌমেন কে। ডাক্তার সাহেব জানান রক্ত নিয়ে আসতে। ব্লাড ব্যাংক এর কাছে আসে উর্মি। হাত পা শীতল হওয়ার জোগাড়।
” উর্মি দাড়াও। ”

রক্ত নিয়ে যাচ্ছিল উর্মি। ঠিক তখনি নয়ন এর কন্ঠে থেমে যায়। পেছন ঘুরে দেখে নয়ন এর সাথে তুলি ও আছে। চোয়াল ভারী হয় মেয়েটির।
” কি প্রয়োজন? ”

” টাকার। ”

” কিসের টাকা হা? ”

রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে উর্মি। তুলি এক দলা হেসে বলে ” আমার দেন মোহর এর টাকা। কোর্ট কিন্তু রায় দিতে বাধ্য। কবে টাকা দিবে তোমার ভাই। ”

” নষ্টা মেয়ে মানুষ। বাঁধলো না ননদের স্বামীর সাথে পরকীয়া করতে। ”

” সাবধানে কথা বলো উর্মি। ”

” কিসের সাবধানে হা। অসভ্য একটা। ”

উর্মির গায়ে হাত তুলতে যায় তুলি। নয়ন বাঁধা দেয়।
” কি করছো জান! শুধু শুধু নিজের হাত নোংরা? এর থেকে ভালো একটু রস মিশিয়ে শোধ নেই। ”

গা দুলিয়ে হাসলো তুলি। ঘৃনা হচ্ছিল উর্মির। সে যেতে চাইতেই নয়ন হাত তালি বাজালো। বিস্ফোরণ নিয়ে ঘুরে তাকায় উর্মি। নয়ন খুব যত্ন নিয়ে আগায় গুনে গুনে নয় পা
” রাইট নাও আমি এখন আগের অবস্থান থেকে নয় পা এগিয়ে। এটাই বিষয়। তুলি আর আমি নয় বছর ধরে প্রেমে হাবুডুবু খাই। সৌজন্যের সাথে তো সবে পাঁচ ছয় বছর এর পরিচয়। বিবাহিত জীবনের চার বছর। হা বিবাহিত কেন বলছি এটা তো ছিল কেবল নাটক। ”

না বুঝার মতো করে তাকিয়ে আছে উর্মি। নয়ন একটু হাসলো। তুলির শরীরে হাত রেখে বলল ” আমাদের জীবন টা রঙিন ছিল কী বলো। ”

” ছিলো না এখনো রঙিন আছে। অলোয়েজ ই রঙিন থাকবে বেবি। ”

” এসব ফাউ কথা বলা শোনা কোনো টাই আমি জরুরি মনে করছি না। আমি এসব জানতে চাই না। ”

ওদের কে উপেক্ষা করে চলে আসে উর্মি। এই নষ্টালজিক মানুষদের সাথে আর কোনো কথাই নয়। ছুটে আসে এক প্রকার। ব্লাড দেওয়ার সাথে সাথে অনুজ এর দেখা মিলে। ছেলেটা এমন চিন্তিত!
” সৌমেন এর কি অবস্থা? ”

” জানি না। ”

” স্টুপিট এর মতো কথা বলো না উর্মি। ডাক্তার কি বললেন। ”

” এখনো বের হয় নি। ”

বিরক্তি ফুটে অনুজ এর কপালে। সে চট জলদি এগিয়ে আসে। মাহফুজ সাহেব এর পাশে বসে।
” ভাববেন না আঙ্কেল। সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

” কিচ্ছু ঠিক হবে না। ”

” আপনি বল হারিয়ে ফেলেছেন। একটু ধীর চিত্তে বসুন। ”

উর্মি এদিক টা আসার সময় হঠাৎ ই মনে পরলো আসার পথে বাবুর জন্য বেবি ফুড নেওয়ার কথা। ঘড়িতে অনেক টা টাইম চলে গেছে। উর্মি কোনো মতে বেরিয়ে এলো। এতো সব চিন্তা আর মাথায় যাচ্ছে না।
.

মেঘনার মেয়ের নাম সাগরিকা। অনেক কষ্ট করে এই নাম টা খুঁজে বের করেছে সমীর। প্রথমত সে চেয়েছিল বাচ্চা টার নামের সাথে নিজের নাম টা জড়িয়ে দিতে। তবে সেটা মিলাতে পারছিল না। এখানে আবার উর্মি আর মেঘনার নাম থাকা ও জরুরী। অবেশেষ সাগরিকা নাম টি বের করেছে সে। তার নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে মিলিয়ে উর্মি আর মেঘনার মিশ্রনে মোটামুটি মিল করে রাখলো নাম টি। সবাই বেশ পছন্দ করেছে। উর্মি বেবি ফুড নিয়ে এসে দেখলো সৌজন্য সব খাবার আগেই এনে রেখেছে।
” ভাইয়া টাকা পেলে কোথায়? ”

” সামনেই একটা কাজ পেয়েছিলাম। নর্মাল কাজ। হাজার টাকার কিছু বেশি দিয়েছিল। সেটা দিয়েই সাগরিকার জন্য খাবার নিয়ে আসলাম।”

” ওও আচ্ছা। ”

হাজার টাকার কিছু নোট বের করে সৌজন্য কে দিলো উর্মি। আলতো হেসে সৌজন্য বলল
” কি দিনকাল এলো। ভাই তার বোনদের খাওয়া বে সেটা না করে বোন ভাই কে খাওয়াচ্ছে। ”

” এসব কথা বলিও না প্লিজ। ”

” কষ্ট হয় রে বোন। ”

” রাখো সেসব কথা। এখন টাকা টা রাখো, তোমার ও হাত খরচ লাগবে। ”

” লাগে না আমার। ”

” আমি জানি সেটা। তবু ও। ”

” রেখে দে তোর কাছে। প্রয়োজন হলে নিবো। ”

উর্মি জানে টাকা টা নিবে না তার ভাই। এক রাশ হতাশার শ্বাস ফেলে ফ্রেস হয়ে আসে। বড় ভাবী খাবার দিয়ে যায়। অন্তু আগে থেকেই খাচ্ছিল।
” এক্সাম কবে? ”

” সামনের মাসে। ”

” ওও ঠিক আছে। বেতন বাকি আছে তাই না? ”

” হ্যাঁ ছোট ফুপি। ”

” বলতে পারবি কত মাসের? ”

” চার মাসের টা। সাথে কিছু এক্সাম না দেওয়ার কারনে জরিমানা ও হয়েছে। ”

” কত টাকা হয়েছে সব মিলিয়ে। ”

” ম্যাম বলেছে সাড়ে ছয় হাজার টাকা। ”

” ওও। ”

নীরবে খেয়ে চলে এলো উর্মি। বড় ভাইয়া যে এখন বেতন হীনভাবে বসে আছে সেটা জানে উর্মি। এতো বড় ফ্যামিলি চালানো কোনো ছেলের পক্ষে ও চারটি কথা নয় সেখানে ও মেয়ে হয়ে কতো টা চিন্তিত!

মেঘনা মাথার কাছ টায় বালিশ রেখে বলল
” তুই আর সৌমেন স্যার এর বাসায় যাস নে। ”

” কেন রে আপা। ”

” আমার মনে হচ্ছে তোর কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে। ”

” কিছুই হবে না। এই টুকু চোট দেখেই তুই কি সব ভাবিস বল তো। ”

” এইটুকু এটা?”

ইষৎ হাসলো উর্মি। মনে মনে সে ও বেশ ভরকে আছে। তবে উপরে উপরে শক্ত রইলো। আবরণে ঢেকে রাখা শরীর টা কে এগিয়ে নিয়ে সমীর কে কল করলো। আজ সমীর কে বেশ ব্যস্ত শোনালো। উর্মি নিচু কন্ঠে শুধালো
” তুমি কি ব্যস্ত আছো সমীর? ”

” না জাস্ট একটু প্রবলেম এ আর কি। ”

” সেকি! ”

” ব্যস্ত হইয়ো না। আমি ঠিক আছি। ঐ দিকে কি অবস্থা? ”

” সব ঠিক ই আছে। ডাক্তার বাবু আর আপা কে কিছু টেস্ট করাতে দিয়েছেন। ”

” সাগরিকার ঠান্ডা কমেছে? ”

” উহু। সেটা নিয়েই ভাবাছি। ”

” ভালো করে চেকাপ করাও। ”

” হুম। ”

” আর শোনো। ”

” হ্যাঁ। ”

” নিজের যত্ন নিও। তুমি সব কিছু সামাল দিতে গিয়ে নিজের অযত্ন করে যাচ্ছো। সব কিছুর সাথে সাথে নিজেকে ও তো গুরুত্ব দিতে হবে তাই না। আর একদম বলবে না যত্ন নিচ্ছো নিজের। আমি জানি সব টা। যদি কাছাকাছি থাকতাম ধরে বেঁধে নিয়ে আসতাম। একদম ফাকিবাজি না ওকে। ফিরে এসে আমার উর্মি কে বউ করে নিবো। বুঝেছো মেয়ে আমার শখের বউ। ”

চলবে….