শত ডানার প্রজাপতি পর্ব-১২+১৩+১৪

0
5160

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১২

গেটের সামনে মহিলা পুরুষ বাচ্চা ও কাজের লোক সহ পঁচিশ- ত্রিশ জন দাড়ানো । সবার মাঝে একজন বয়স্ক সুন্দরী মহিলা দাড়ানো । আমি হা হয়ে দেখছি । আমরা কোথায় এসেছি । এরা কারা কোন টাই আমার জানা নেই ।হ্ঠাই অগ্নি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললেন ,

– “আমরা নানু বাড়িতে পৌছিয়ে গেছি । বাহিরে নানু সহ পুরো পরিবার দাড়িয়ে আছেন । ”

উনার কথায় আমার মাথার টনকনড়া দেয় । যদি আমার অনুমান ভুল না হয় ! তার মানে উনারা অগ্নির মামা মামী আর কাজিন আর মাঝের সুন্দরী বৃদ্ধা মহিলাটি হলো উনার নানীজান ।
আমি কাচুমচু হয়ে হয়ে গাড়ি থেকে নামি । আমি গাড়ী থেকে নামার আগেই ভাইয়া আপু আর অগ্নি নেমে গেছে । আমি সবার পিছনে দাড়িয়ে । প্রচন্ড রকম নার্ভাস । বৃদ্ধা মহিলাটা অগ্নিকে জরিয়ে ধরে কান্না জড়িত গলায় বললেন,

– “এতদিনে মনে পড়লো নানীর কথা? আমাকে তো একদম ভুলে গিয়েছিস? না ফোন দিস না কোনো খবর নিস ? ”

অগ্নি আদুরে গলায় বললেন,

– “ওহহ ,নানুজান ! তুমি তো জানোই আমি কত ব্যস্ত থাকি । তাই আর কি …”

উনি অগ্নির কথা শেষ করে দিলেন না তার আগেই বললেন ,

– “হয়েছে আর বলতে হবে না । বুঝি বুঝি সবই বুঝি এখন যে ঘরে বউ এসেছে তাই নানীর কথা মনে পরে না !
তোর বউ কই দেখি তারে একবার । যার জন্য তুই আমারে ভুইলা গেছোস ? ”

এতসময় উনাদের কথাবার্তায় আমার কাছে এটা স্পষ্ট যে উনিই নানুজান । আমার আনুমানিক একদম ঠি ক ছিলো । উনিই নানুজান । আমি একপা দুপা করে নানুজানের সামনে দাড়াই । অগ্নি দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখি মিটমিট করে হাসছে। আমি নানুজান কে সালাম দিয়ে আবার মাথা নিচু করে ফেলি । নানুজান আমার থুতনি তে হাত রেখে মাথা তুলে মিষ্টি স্বরে বললেন ,

– “বাহ্ ! ভারী মিষ্টি ঠিক যেন চাঁদের টুকরা । এই মমের পুতুলকে কোথা থেকে খুঁজে এনেছিস নানুভাই ? ”

অগ্নি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন ,

– “চাঁদের টুকরো কে চাঁদের দেশ থেকে নিয়ে এসেছি নানুজান । কিন্তু যাই বলো তোমার থেকে বেশি সুন্দরী নয় । ”

– “হয়েছে আমার মন রাখতে আর মিথ্যা বলতে হবে না । তোর বউ আমার থেকে বেশি সুন্দরী একদম হুরপরী । ”

নানুজান আমার মাথায় হাত রেখে বললেন ,

– “নাম কি তোর দিদিভাই ? ”

আমি মৃদু স্বরে উত্তর দেই ,

– “জি নানুজান আমার নাম হুর । হামিয়া হুর । ”

– “বা্হ খুব সুন্দর নাম । কে দিয়েছে এই নাম ? ”

– “জি নানুজান বড় মামা ”

নার্ভাসনেসে আমার হাত পা ঘামছে । নানু আমাকে হাল্কা ভাবে জড়িয়ে ধরে বললেন ,

– “আরে দিদিভাই নার্ভাস হচ্ছিস কেন ? আমরা কি তোর দূরের কেউ নাকি ! রিলেক্স”

পিছন থেকেই একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা বললেন,

– “মা সব কথা কি বাহিরেই শেষ করবেন । বাচ্চারা কতটা পথ অতিক্রম করে এসেছে । কতটা টায়ার্ড ! ”

নানু বললেন,
– “ঠিক বলেছো বউমা । আমি এক্সাইডমেন্টে খেয়ালই করিনি । ”

আমরা ভিতরে চলে যাই । ড্রইংরুমে বসতেই সবাই আমাদের ঘিরে বসে । উনাদের বিরাট বড় পরিবার । অগ্নির তিন মামা মামী দুই খালা খালু । আর উনাদের সন্তান সব মিলিয়ে আটাশ জনের পরিবার । সকলেই উপস্থিত । আমাকে আর হিয়া আপুকে সবার মাঝে বসিয়েছে । আমরা দুজনই নতুন বউ । আমাদের এটা ঐটা বিভিন্ন প্রশ্ন করছে । আমি আর আপু বাধ্য মেয়ের মত সবার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি ।সবার সাথে পরিচয় হচ্ছি । সবাই বেশ ভালো আর ফ্রিমাইন্ডেড । কিন্তু ছোট মামী আর উনার মেয়ে আভরিন একটু অন্যরকম উনার বোধয় আমাকে খুব একটা ভালো লাগেনি । কেমন জানো ঝাঁঝালো কথা রাগী দৃষ্টি সব মিলিয়ে একটু না পুরোটাই অন্যরকম । আমি তাতে তেমন ধ্যান দেই না । সবার সাথে আড্ডায় মগ্ন হয়ে যাই ।

___________________________

রুমে ডুকতেই বিছানায় গা এলিয়ে দেই । খুব ক্লান্ত পুরো শরীর চিনচিনিয়ে ব্যথা করছে । আমি বিছানায় গা এলিয়েই পুরো রুমে চোখ বুলাই । পুরো রুম বিভিন্ন রাজকীয় জিনিসে সাজানো ।দেখলে মনে হয় কোন রাজপ্রসাদে আছি । সবকিছুর সাজসজ্জা একদম অন্যরকম সৌন্দর্যে ভরপুর । আমি চোখজোড়া বুজে ফেলি । চোখে ঘুম ভর করছে । লেগে আসছে । এমন সময়ই খটখট আওয়াজে আমার ঘুমে বুজে আসা চোখ গুলো খুলে যায় । আমি আদো আদো চোখে সামনে তাকাই । অগ্নি এসেছে । আমার ঘুম ঘুম চোখ দেখে অগ্নি আমার কাছে এসে পাশে বসে । চুল গুলো কপাল থেকে সরিয়ে শান্ত গলায় জিগ্যেস করলেন,

– “ঘুম ধরেছে নাকি মাথা ব্যথা ? ”

জানিনা আমার কি হলো । হুট করে উনার কোলে নিজের মাথা রাখি । কিন্তু তা কেন করলাম নিজেরও জানা নেই । উনার একটুখানি স্পর্শ পাওয়ার লোভে ? নাকি নিজের অধিকার মনে করে ? সে যেই কারণেই হোক না কেন ! আমার এই মুহূর্তে উনার কাছে এভাবে থাকতে খুব ভালো ভালো লাগছে । আমি শক্ত করে উনার কমোড় জরিয়ে ধরি । কেন জানি উনিও আমাকে বাঁধা দিলেন না । উল্টো অবাক করে দিয়ে আমার চুলে হাত বুলাতে লাগলেন । উনি আদুরে গলায় বললেন ,

– “সুন্দরীইই খুব খারাপ লাগছে কি? ”

আমি উনার কোলে মাথা রেখে দু সাইডে হাল্কা মাথা দুলাই । যার অর্থ “না ” । ধীর আওয়াজে বলি ,

– “একটু ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে ”

উনি আমার কথা শুনে বালিশ ঠিক করে আমার মাথা বালিশে রাখে । ঘুমাতে বললেন । যেই উনি বিছানা থেকে উঠে সামনের দিকে পা বাড়ায় । পিছন থেকে আমি উনার হাত টেনে ধরি । হাল্কা আওয়াজে বলি,

– “আপনার কোলে মাথা রেখে ঘুমালে কি আপনার খুব বেশি অসুবিধে হবে ? ”

কথাটা বলার সময় কোথা থেকে জানো একবুক সাহস জমা হয় । লজ্জাশরম কিন্তুপরন্তু সব ভুলে কি ভাবে জানো বলে ফেলি । কিন্তু কথাটা শেষ করে মনে এক অজানা ভয় কাজ করে । উনি আমার কথা রাখবে কি ? যদি না রাখে তবে নিজের কাছেই লজ্জায় পরে যাবো । বাজে এক পরিস্থীতি সৃষ্টি হবে । উনার সামনে আসতে লজ্জা করবে । আমি কি উনার থেকে বেশি কিছু এক্সপেক্ট করে ফেলেছি ?
কিন্তু এবারো অগ্নি আমাকে অবাক করে দিয়ে । আমার পাশে এসে বসে । আমার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে মুচকি হেসে বললেন ,

– “একদম অসুবিধে হবে না । তোমার যতক্ষণ ইচ্ছে মাথা রেখে ঘুমাতে পারো । আমি এখানেই আছি । ”

অগ্নি আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । আমি উনার কমোড় আবার জড়িয়ে ধরি । পরম আয়েশে মুচকি হেসে চোখ বুজে ফেলি । আহ! কি শান্তি । উনার কোলে মাথা রাখার কারণে এত শান্তি লাগছে ? নাকি স্বামীর কোল বলে এত শান্তি ?
কারণ যাই হোক না কেন সারাজীবন এভাবে উনাকে জড়িয়ে ধরে উনার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই । আমি আস্তে আস্তে ঘুমের দেশে তলিয়ে যাই ।

_____________________

রাতে ডিনার শেষে ছাদে পুল সাইডে অগ্নির সব কাজিনদের সাথে আমি আর হিয়া আপু আড্ডা দিচ্ছি । অগ্নি ,আবির ভাইয়া আর বড় মামার বড় দুই ছেলে নিচে বাগানে বসে আড্ডা দিচ্ছে । তারা সবাই প্রায় সমবয়সী । যদিও আবির ভাইয়া বড় কিন্তু তাদের সবার খুব ভালো বন্ডিং ।
আমরা ইয়াসা আপুর বিয়েতে এসেছি । উনি অগ্নির বয়সী । ইয়াশা আপু খুব বেশি মিশুক আর চঞ্চল । আপু আমার গাল টেনে বললেন ,

– “মেয়ে তুমি খুব বেশি সুন্দরী । আমার ভাই যে তোমাকে কি করে পেলো ।”

পাশ থেকেই মেজো মামার ছোট ছেলে নিসাত বললেন,

– “অগ্নি ভাইয়ার তো চাঁদকপাল । ভাবী তোমার কোনো ছোট বোন আছে কি ? ”

আমি লজ্জাজনক হাসি দিয়ে না বোধক মাথা নাড়ালাম ।

ইয়াশা আপুর ছোট বোন বললেন,

– “আমি যদি ছেলে হোতাম তাহলে অগ্নি ভাইয়ার থেকে হুর ভাবী কে ছিনিয়ে নিজের করতাম । ”

ইয়াশা আপু বললেন,

– “হ্যা অগ্নি মনে হয় তোকে ছেড়ে দিতো ? অগ্নি তার সুন্দরীর উপর খুব বেশি পসেসিভ। তাই তো চোখে হারায় না । এখনো বাগান থেকে বার বার উপরে তাকাচ্ছে । আহা কি প্রেম ! ”

ইয়াশা আপু কথা শেষ করতেই পুরো ছাদে হাসির রোল পরে যায় । আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি । সবাই হাসছে শুধু আভরিন ছাড়া। সে ফোন টিপাতে ব্যস্ত । তাকে যেন কেউ জোর করে বসিয়ে রেখেছে । আমার দিকে রাগী চোখে তাকাচ্ছে বার বার । যেন আমি তার খুব বড় কোনো ক্ষতি করে ফেলেছি । কিন্তু এর কারণ কি ? আমি তো কখনো দেখিনি পর্যন্ত তাহলে এত রাগ জেদ কেন ???

চলবে ….❤️

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১৩

ঘড়িতে ছয়টা বাজতে চলছে । অগ্নি এখনো গভীর ঘুমে । আমি ফ্রেশ হয়ে উনার পাশে বসে ফোন চালাচ্ছি । হ্ঠাৎ ই উনি উপুড় হয়ে আমার কমোড় জড়িয়ে ধরে । উনার এমন আচমকা স্পর্শে আমি কেঁপে উঠি । অগ্নির দিকে তাকিয়ে দেখি উনি এখনো ঘুমে । জেগে থাকলে নিশ্চিত নিজের থেকে আমার এতোটা কাছে আসতো না !
জীবন যেহেতু এমন একটা সুযোগ দিয়েছে তবে আমি কেন হাত ছাড়া করবো ? আমি হাল্কা নিচু হয়ে উনার মাথায় বেশ কয়েকবার নিজের ঠোঁট ছোঁয়াই । আলতো আদুরে হাত তার চুলে বোলাতে লাগি ।
ঘড়ির কাটা আট টায় আসতেই আমি উনাকে ডাকতে শুরু করি । বেশ বেলা হয়েছে । সবাই হয়তো উঠে পড়েছে । উনি আমার ডাকে চোখমুখ খিচে নেয় ।
অগ্নি ঘুমের মাঝে বেশ আদুরে গলায় ডাকলেন,

– “পরীজান । আর একটু ঘুমাতে দেও প্লিজজজ ! ”

আমি উনার কথা শুনে থম মেরে থাকি । উনার এই ডাক কলিজা কামড়ে ধরেছে । এই নাম এই ডাক উনি কি করে জানলেন ? এই নামে তো আমাকে সে ডাকতো । কিন্তু তা উনি কি করে জানেন ? তবে অগ্নিই কি উনি ? না না তা কি করে হয় । যদি তাই হতো তাহলে কেন নিজের পরিচয় লুকাতো ? আর তা ছাড়া উনি সুপ্তিকে ভালোবাসতেন ।কিন্তু অগ্নি এই নাম কি করে জানলেন । আমার ডাইরি থেকে ? নাকি এটা জাস্ট একটা কো- ইন্সিডেন্ট ?
তাড়াতাড়ি করে নিজেকে উনার থেকে ছাড়িয়ে দূরে সরে যাই । আমার অতীত আমাকে খুব বেশি পুড়ায়। এই নামটা পুরানো জখম তাজা করে দিয়েছে । চোখ থেকে গলগল করে পানি ঝড়ছে । তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে ডুকে পড়ি চোখে মুখে পানির ছিটে দেই । আমি অতীত মনে করতে চাই না । আমাকে ভুলতেই হবে আমার সেই অতীত ।অগ্রসর হতে হবে সামনের দিকে !

________________________

সকালের নাস্তা সেরে রুমের বারান্দায় বসে আছি এমন সময়ই রুমে কারো উপস্থিতির আবাশ পেয়ে রুমের দিকে যাই । রুমে ডুকতেই দেখি নানুজান একগাল হাসি নিয়ে দাড়িয়ে । হাতে একটা কাঠের বক্স । নানুজান আমার হাত টেনে বিছানায় বসিয়ে বললেন ,

– “রাতে ভালো ঘুম হয়েছে? কোনো সমস্যা হয়নি তো ? ”

আমি মাথা নত করে ধীর গলায় উত্তর দেই ,

– “জি নানুজান কোনো সমস্যা হয়নি । ভালো ঘুম হয়েছে । ”

নানুজান আমার গালে হাত রেখে বললেন ,

– “দিদিভাই তুই কি এখানে আনইজি ফিল করছিস? আনইজি ফিল করতে এটা তোর ও বাড়ি ।আর আমরা সবাই তোর আপনজন । নিজের মত ইজিলি চলাচল কর । ”

আমি উত্তরে মৃদু হাসলাম । নানুজান আবার বললেন,

– “এসব কথা ছাড় । শুন তোর জন্য কিছু এনেছি । ”

আমি কৌতূহল দৃষ্টি তে নানুজানের দিকে তাকাই । নানুজান কাঠের বক্স থেকে একজোড়া বালা আমার হাতে পড়িয়ে দেয় । ডায়মন্ড নোসপিন বের করে আমাকে পড়িয়ে দিতে দিতে মুচকি হেসে বললেন,

– “এগুলো আমাকে তোর নানাজান দিয়েছিল । স্বামীর মৃত্যুর পর তার নিশানি গাঁয়ে রাখতে নেই । তাই উনি মারা যাবার পর সব খুলে সযত্নে রেখে দিয়েছিলাম । বড় নাতবউ কে উপহার দিবো বলে। জানি একটু ওল্ড মডেল কিন্তু আমার মনের খুব কাছের এই গহনা গুলো । তোকে খুব মানাবে ।তোর পছন্দ হয়েছে ? ”

নানুর কথা শুনে স্থব্দ হয়ে যাই এতো ভালোবাসা আমার মত পোড়াকপালির ভাগ্যে ছিলো? চোখে জল চিকচিক করছে । নানুজানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি ,

– “নানুজান খুব খুব খুব পছন্দ হয়েছে । কিন্তু এসবের কি প্রয়োজন ছিলো । আপনার ভালোবাসা আর দোয়াই আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার । ”

নানুজান আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন ,

– “কে বলেছে দরকার নেই ? এসব কিছুর উপর তোর অধিকার ।এসব কখনো নিজের থেকে আলাদা করবি না এগুলো বিবাহিত মেয়েদের চিহ্ন ।

আমি নানুজানের কথায় বাধ্য মেয়েদের মত মাথা নাড়িয়ে বলি ,

– “জি নানুজান আমি খুব যত্নে এসব কিছু সামলিয়ে রাখবো । কখনো নিজের থেকে আলাদা করবো না । ”

নানুজান আমার কপালে চুমু দিয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন,

– “আমার হুর বুড়িটা ”

_______________________

দুপুরে লাঞ্চ করে সবাই বের হয়েছি । আজ নানুজানের বাগানবাড়ী তে সবাই থাকবো ।ছোটখাটো গেট টুগেদারের আয়োজন করা হয়েছে । ছোটরা সবাই যাচ্ছি । অগ্নির সব কাজিনরা তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলকে ইনভাইট করেছে । অগ্নির কাজিনদের ফ্রেন্ড সার্কেল অগ্নি আর আবির ভাইয়ার পরিচীত হলেও আমার আর হিয়া আপুর জন্য সবাই একদমই অচেনা ।
দুতলা এক বাগানবাড়ির সামনে গাড়ি থামে । সবাই ভিতরের দিকে অগ্রসর হই ।সাদাবাড়ি সাইডেই বিরাট বড় পুকুর পাড়ে একটা সুন্দর নৌকা থামানো । আমরা ভিতরে যেতেই দেখি অগ্নির কাজিনের ফ্রেন্ডরা আগের থেকেই পৌছিয়ে গেছে । আমাকে আর হিয়ার আপুকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় । আমরা সবার সাথে কুশল বিনিময় করি । বড় মামার বড় ছেলের বন্ধু ইশানের সাথে পরিচয় হবার সময় অগ্নি বেশ রাগী দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন । কিন্তু কেন তা আমার জানা নেই । আর জানার চেষ্টাও করিনা । দোতলায় সব মেয়েরা আড্ডা নিচ্ছে আর নিচ তলায় ছেলেরা । আমি সাইডে দাড়িয়ে আছি । হ্ঠাই কেউ আমাকে পিছন থেকে ডাকে । আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি ইশান ভাইয়া দাড়িয়ে আছে । মুখে একগাল হাসি । উনি আমার দিকে চিকেন শাসলিকের ডিশটা এগিয়ে দিয়ে বললেন ,

– “তুমি দেখি কিছুই খাচ্ছো না । এই নাও এটা ট্রায় করো । ”

আমি উনার এমন কাজে বেশ অবাক হয় । এই তো একটু আগেই পরিচয় হয়েছি । এই অল্প সময়ে এত আন্তরিকতা কিসের ? নিশ্চিত ব্যাটার কোনো মতলব আছে । কিন্তু কি ? সে যাই হোক আমার কি আমি তো দূরেই থাকবো । আমার মনে এতো সংকোচের যুদ্ধ চলছে কিন্তু তা চেয়ারায় প্রকাশ করলাম না । আমি সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বললাম,

– “না ভাইয়া আমি খাবো না । ”

– “আরে লজ্জা পাচ্ছো কেন ? লজ্জা পাবার কিছুনেই আমরা আমরাই তো । ”

উনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি উনার কত জনমের চেনা । কত আগের সম্পর্ক উনার সাথে । উফফ একদম উটকো ঝামেলা । আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন,

– “তুমি কি কথা কম বলো নাকি আমার সাথেই বলতে চাইছো না ? বায় দ্যা ওয়ে তুমি এবার কোন ক্লাসে ? ”

আমি আমতা আমতা করে বলি ,

– “জি ভাইয়া আমি এবার অনার্স ফাস্ট ইয়ারে । ”

উনি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন ,

– “কি বলো তুমি অনার্সে পড়ো ? দেখতে তা মনে হয় না । দেখলে মনে হয় নাইন টেনে পড়ো! ”

– “ভাইয়া আপনার মনে হচ্ছেনা আপনি একটু বেশি আমাকে ফুলিয়ে দিচ্ছেন? ”

– “আরে না । সত্যি তুমি একদম বাচ্চাদের মত দেখতে । বায় দ্যা ওয়ে তুমি অনেক বেশি সুন্দরী । ”

আমি এই লোকের কান্ড দেখে শুধু অবাক হচ্ছি । এই লোক কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছে । আর প্রতিটা কথা এতো জোরে শব্দ করে কেন বলছে ? মাথার তার গুলো কি সব ছিড়া নাকি ?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই কেউ ঝড়গতি তে এসে তুফানের গতিতে আমাকে টানতে টানতে নিয়ে যায় । আমি বেকুব হয়ে যাই । কোনো কিছু ভাবার মত সময়ও পাই নি । আমাকে নিয়ে অন্ধকার এক রুমের সামনে দাড় করায়। হাত গুলো তখনো শক্ত করে চেপে ধরে আছে । আমার প্রচন্ড ব্যথা করছে । আমি যতই ছাড়ানোর চেষ্টা করছি ততই শক্ত করে চেপে ধরছে । আমি কিছু বলবো তার আগেই সামনের লোকটা গর্জন করে উঠে । ধমক দিয়ে বললেন,

– “তুমি ইশানের সাথে কেন কথা বলছিলে ? ওর সাথে এত কিসের তোমার হাসা হাসি ডলাডলি ? খুব মজা লাগছিলো ওর সাথে কথা বলতে ? ”

কন্ঠ শুনে এটা স্পষ্ট যে এটা অগ্নি । আমি কি করে ভুলে যাই আমার জীবনে অগ্নি দোষ লেগে আছে । মানুষের লাগে শনি দোষ আমার লেগেছে অগ্নি দোষ । হায়! আমার বেচারা কপাল । ওই মুহূর্তে আমার ভয় থেকে বেশি রাগ হচ্ছে । প্রচুর রাগ । উনি কি করে আমাকে এসব বলছে ? উনি কি কানার ভাই অন্ধ হয়ে গেছে নাকি ? উনি চোখে কি চোখে দেখেনি যে ইশান আমার কাছে এসেছিলো । আমি রাগী গলায় বলি ,

– “আমি কথা বললে আপনার কি সমস্যা? আপনার লাগছে কেন? ”

– “আমার সমস্যা আছে আমার লাগছে । ”

– “কিন্তু তা কে লাগছে ? ”

উনি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললেন,

– “তার কারণ বলতে আমি বাধ্য নই ”

উনার কথা শুনে আমার রাগ বেড়ে যায় । আমি বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বলি ,

– “অকে ফাইন ! আমিও আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই । আমার ইশান ভাইয়ের সাথে কথা বলায় আপনার সমস্যা হয় তাই না।? আমি এখন থেকে উনার সাথে বেশি বেশি কথা বলবো একশোবার বলবো হাজার বার বলবো । ”

কথাটা বলে আমি পাশ কেটে যেতে নেই এমন সময়ই উনি আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ফেলে । একটু জোরে টান দেওয়ায় মাথায় ব্যথা পাই । চোখ গুলো বন্ধ করে ফেলি ।উনি আমার গাল চেপে ধরে মুখ উঁচু করে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন ,

– “একদম জানে মেরে ফেলবো ।আমি ইশানের সাথে কথা বলতে না করেছি মানে কথা বলবে না । ব্যসসস । আর একটাও টু শব্দ শুনতে চাই না । ”

আমি চোখ খুলে উনার চোখের দিকে তাকাই । এই চোখে কি ছিলো রাগ ? ভয় ? নাকি অন্যকিছু …..

চলবে…❤️

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১৪

আমি পলকহীন চোখে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছি । কি চায় এই লোক ? আমাকে নিজের স্ত্রী মানে না ,আমার কোনো কিছুতেই উনার আসে যায় না । তবে কেন এই জেলাসি ? আমার চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পরে আমি তখনো অগ্নির দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছি । অগ্নির চোখজোড়াও আমার চোখের মাঝে ডুবে । হ্ঠাৎ ই অগ্নি রাগে পাশে দেয়ালে জোরে আঘাত করে চলে যায় । আমি ঠায় দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছি । খুব বেশি যন্ত্রনা করছে বুকটায় । সব ভেঙে চিৎকার করে কান্না আসছে । আমি জানি অগ্নি তার অতীতের পিছুটানের কথা মনে করে বার বার আমার কাছে এসেও সরে যায় । এতে আমি উনাকে দোষ দিতে পারিনা । ভালোবাসা তো আর খানিকেই ভুলা যায় না। এটা যে এক কঠিন ব্যথী । এর জখমে মানুষের অন্তর সারাজীবন পোড়ায়।নিজের ভাগ্যের উপর খুব বেশি আফসোস হচ্ছে আর সুপ্তির উপর খুব বেশি ঈর্ষা । কেন আমার জীবনে অগ্নি আরো আগে এলো না ? কেন সুপ্তির প্রতি অগ্নির ভালোবাসা আমার ভাগে হলোনা ? আমার ঈর্ষা হওয়াটা কি স্বাভাবিক না ? আমার স্বামী যাকে আমি ভালোবাসি । তার সাথে এক ছাদের নিচে এক বিছানায় থেকে তার মনে আমার জায়গা নেই । সেখানে অন্যকারো বসবাস । আমিও তো মাটির তৈরি মানুষ ,কোনো দেবী নই !
শ্বাস আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসছে । আমার এখন খুব কান্নার প্রয়োজন । খুবই বেশি । না হয় বুকের ভারী বোজ কমবে না ।
ছাদে চলে যাই । পুরো বাড়ি ভরা মানুষ কারো চোখে পড়লে বিভিন্ন প্রশ্ন করবে । তার চেয়ে বরং আকাশ আর তার বুকে চাঁদ তারাকে স্বাক্ষর রেখে খোলা আকাশের নিচে নিজের অশ্রু জল বিসর্জন দেই ।
ছাদে দাড়াতেই অপর পাশ থেকে কোনো মেয়ের কান্নাজড়িত ফিসফিস আওয়াজ পাই । পুরো ছাদ অন্ধকারে ঘেরা । দূর থেকে কিছু বুঝা যাচ্ছে না । আমি স্পষ্ট ভাবে দেখার জন্য সেদিকে অগ্রসর হই । কিন্তু সেখানে যেয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মটেও প্রস্তুত ছিলাম না । মুহূর্তেই আমার পুরো দুনিয়া ঘুরে যায় । অগ্নির বুকে মাথা ঠেকিয়ে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে আভরিন ।কান্না করতে করতে বলছে ,

– “অগ্নি ভাইয়া তুমি হুর কে ছেড়ে দেও আমাকে বিয়ে করে নেও । আই প্রমিজ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসবো । তোমার খুব খেয়াল রাখবো । আর ,আর সব সময় তোমার সাথে এভাবে জড়িয়ে থাকবো । আমাকে বিয়ে করে নেও না প্লিজ আমাকে বিয়ে করে নেও । ”

বলেই আভরিন কান্না করতে লাগে । অগ্নি চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে ।আভরিন অগ্নির কোনো উত্তর না পেয়ে আবার বলতে শুরু করে,

– “আচ্ছা ঠি ক আছে বিয়ে করতে হবে না । আমাকে শুধু একবার নিজের করে নেও । হুর তোমার বউ হয়ে ঘরে থাকবে আর আমি বাহিরে কখনো তোমার থেকে কোনো অধিকার চাইবো না শুধু নিজের করে নেও ..”

আর শুনার মত শক্তি আর সাহস আমার মাঝে নেই। আর একটু কিছু শুনলে হয়তো আমি শ্বাস আটকিয়ে মরে যাবো । চোখ থেকে গলগল করে অশ্রু ঝড়ছে । আমি তাড়াতাড়ি করে সরে যাই। আভরিনের প্রত্যেকটা কথা আর বিহেভিয়ার দেখে মনে হচ্ছিলো ও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ না । তার সাইকো বিহেভিয়ারে তা স্পষ্ট বলে দিচ্ছিলো যে সে বিগড়ে যাওয়া মস্তিষ্কের একটা সাইকো পেশেন্ট ।

___________________

আমি বাগানের সাইডে পুকুরের পাড়ে দাড়িয়ে । এক মনে পুকুরের দিকে তাকিয়ে আছি । পুকুর পাড়ের হাল্কা লাইটের আলোতে অনেকটাই স্পষ্ট । কিছুতেই নিজের চোখের জল থামাতে পারছিনা । কেন আমার সাথেই এমন হয় ? আমি যে পারছিনা অগ্নির সাথে অন্যকাউকে সয্য করতে ! আমার ভিতরে যে সব কিছু জ্বলে পুড়ে যায় । আমি জানি আভরিন যা করেছে তাতে অগ্নির কোনো দোষ নেই কিন্তু কেন জানো খুব রাগ হচ্ছে । আমার স্বামীর বুকে কেন ঐ আভরিন মাথা রাখবে ? ঐ জায়গা তো আমার তাই না ! যেখানে আমি আজ পর্যন্ত আমি মাথা রাখতে পারিনি আর ঐ আভরিন আমার আগেই সেই জায়গায় মাথা রেখে ফেলল? আমার রাগ জেদ কান্না সব একসাথে আসছে ।
এসব মনে করেই আমার কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায় ।
এমন সময়ই হ্ঠাৎ কেউ পিছন থেকে আমার হাত মুচড়িয়ে ধরে । সাথে সাথে হাতের চুড়ি গুলো মটমট করে ভেঙে হাতে ডুকে যায় । আমি প্রচন্ড ব্যথায় আহ করে চিৎকার দিয়ে উঠি ।পিছনের মানুষটা একজন মেয়ে । আর তা যে আভরিন ই আমি নিশ্চিত । এখানে আমার প্রতি এত রাগ ,ক্ষোভ শুধু একজনেরই তা হলো আভরিনের ।
আমার থেকে লম্বা আর স্বাস্থ্যবান হওয়ায় আমি নিজেকে তার থেকে ছাড়াতে পারছি না ।ঘাড় পিছনের দিকে ফিরিয়ে আভরিনের দিকে তাকিয়ে বলি,

– “এসব তুমি কি করছো তোমার মাথা ঠিক আছে তো ?”

আভরিন আমার হাত আরো জোরে পেচিয়ে বলে ,

– “একদম ঠিক আছে । আমি নিজের রাস্তা ক্লিয়ার করছি । তুমি আছো বলেই অগ্নি আমাকে মেনে নেয় না তুমি না থাকলে ঠিক মেনে নিবে । ”

-“আভরিন প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো । ভালোবাসা জোর করে হয় না । আর আমি থাকি আর থাকি তুমি অগ্নিকে কখনো নিজের করে পাবেনা । প্লিজ এসব পাগলামী করোনা । ”

আভরিনের চোখে মুখে কেমন জানো অস্থিরতা পাগলামো ।চোখে কাজল লেপ্টামো । মুখে কেমন জানো হিংস্রতার ছায়া ।আশেপাশে তাকিয়ে বাজে ভাবে হাসি দিয়ে বলল ,

– “তোমাকে বলতে হবেনা আমি কি করবো না করবো । আমি আমার ভালো বুঝি । আমি জানি কি করে আমার পথের কাটা সড়াতে হয় । তুমি বিকেলে বলেছিলেনা তুমি পানিকে খুব ভয় পাও । সাঁতার জানোনা ? তোমার মৃত্যু এই পানিতেই হবে । অগ্নি যদি আমার না হয় আমি তাকে তোমারও থাকতে দিবো না । ”

আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আভরিন আমাকে জোরে পানিতে ধাক্কা মারে । আমি পানির গভীরে পড়ি । আমি উঠার সর্বস্ব চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না । বার বার তলিয়ে যাচ্ছি । বাঁচার জন্য চিৎকার করছি কিন্তু কেউ নেই আসে পাশে । আভরিন ধাক্কা দিয়ে পালিয়েছে । আমি বেশ পানি খেয়ে ফেলেছি । আস্তে আস্তে চোখজোড়া বন্ধ হয়ে আসে গভীর পানিতে তলিয়ে যেতে লাগি । শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার । এটাই হয়তো আমার শেষ সময় আর কোনো দিন অগ্নির সাথে দেখা হবেনা । আস্তে আস্তে আমার ক্লান্ত শরীর পানির গভীরে তলিয়ে যায় ।

__________________________

জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হসপিটালের বিছানায় পাই । হাতে ক্যানোলা করা । অসয্য মাথা ব্যথা আর শরীর ব্যথা । হাত পা নাড়াতে পাড়ছি না ।
হ্ঠাৎ ই রাতের কথা মনে পরে যায় । আমি তো পানিতে ছিলাম এখানে কি করে আসলাম ? কে নিয়ে এসেছে ? মনে হাজারো প্রশ্ন জাগছে । আশেপাশে চোখ বুলাতেই দেখতে পাই অগ্নি আমার হাতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে । চোখ গুলো ফুলে আছে । আমি হাত নাড়া দিতেই উনার ঘুম ভেঙে যায় ।ধরফর করে উঠে বসে । অস্থির হয়ে আমার গালে হাত রেখে একের পর এক প্রশ্ন করতে শুরু করলেন,

– “এখন কেমন লাগছে ? খুব খারাপ লাগছে কি ? কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলো ! ওয়েট আমি এখনি ডাক্টার কে ডেকে আনছি । ”

কথা শেষ করেই যেতে নেয় । আমি পিছন থেকে উনার হাত আটকিয়ে ফেলি । উনাকে খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে এই যে এই বুকে খুব ব্যথা করছে । আর এই ব্যথা আপনার ভালোবাসায় সেরে যাবে । কিন্তু তা বলতে পারিনা লজ্জা ভয় গলা চেপে ধরে ।
আমি কষ্ট করে ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বলি ,

– “যেতে হবে না আমি একদম ঠিক আছি । ”

উনি সস্থির নিশ্বাস ফেলে আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে পরে । আমার হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে মাথা নত করে তা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে । আমি তার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে।উনি কিছু না বললেও । উনার নিরবতা অনেক কিছু বলছে ।
অগ্নির চোখ মুখ কালো মেঘে ভার হয়ে আছে । মনে হচ্ছে এইতো মাত্রই চোখজোড়া থেকে বৃষ্টি ঝড়বে ।টুপ করে এক ফোটা জল আমার হাতে উপর পরে । আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যায় ।
এই চোখের জল কেন ছিলো ? হারানোর ভয়ের ? নাকি ভালোবাসার অনুভূতির ?
আমার ভাবনায় ছেদ পরে সবার আগমনে ।এক এক করে বাহির থেকে সবাই রুমে ডুকছে । নানুজান সহ সবাই এসেছে । হিয়া আপু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয় । এই সময়ে এমন কান্নাকাটি আপুর জন্য একদম ভালো না । তাই অনেক কষ্টে আপুকে শান্ত করি ।
সবাই আমার হাল জিগ্যেস করছে । সবার সাথে আভরিনও এসেছে । এককোনায় দাড়িয়ে আছে । কিছুসময় পর অগ্নি কেবিনে আসে ।চোখ ভয়ংকর লাল হয়ে আছে ।
নানুজান আমার পাশে বসে আমার হাতে উপর হাত রেখে বললেন,

– “এখন কেমন লাগছে হুরবুড়ি ? ”

– “জি নানুজান ভালো । ”

– “এমন কি করে হলো ? পানিতে কি করে পরে গেলি ?আর এত রাতে কেন পুকুরপাড়ে গিয়েছিলি ? ”

– “আসলে নানুজান ইয়ে মা ..মানে ”

আমি কিছু বলতে পারছিনা । কি বলবো আভরিন আমাকে মারার চেষ্টা করেছে? মানবে সবাই আমার কথা ? যদি বাড়িতে বড় কোনো ঝামেলা হয়।তাহলে ? আমি তো চাইনা পরিবারে কোনো রকমের ফাটল ধরুক ।আর অন্তত আমার জন্য তো কখনোই না । আমি কিছু বলবো তার আগেই আভরীন বলে ,

– “দাদীজান আর কেন ইশান ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছে। আমি নিজ চোখে দেখেছি ইশান ভাইয়া আর হুর কে পুকুরপাড়ে । একে অপরের খুব কাছাকাছি । তারা তো পুরো পার্টিতেও এক সাথে ছিলো সবাই দেখেছে ! ”

আমি আভরীনের কথায় যেন আকাশ থেকে পড়ি । এই মেয়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমার উপর এতো বড় অপবাদ দিতে পারলো ? এতো নিচ কেউ কি করে হয় ? আমি কান্না করতে লাগি । পাশ থেকে ইশান ভাইয়া রাগে চেঁচিয়ে বললেন ,

– “আভরিন কেন শুধু শুধু মিথ্যা বানিয়ে বলছো ? আমি পুকুরপাড়ে কখন ছিলাম? ”

আভরিন আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে বলল,

– “ছিঃ ভাইয়া আপনি মিথ্যা কেন বলছেন । আমি নিজ চোখে দেখেছি আপনি হুর কে জড়িয়ে ধরে আছেন । ”

আমি কান্না করতে করতে বলি,

– “এসব কিছু মিথ্যা । বিশ্বাস করুন আমার সাথে ইশান ভাইয়া ছিলোনা ।আমার কথাটা একবার শুনুন ”

ছোট মামী আমাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলে ।সবার সামনে চেঁচিয়ে বললেন,

– “তোমার মত মিডেল ক্লাস মেয়েদের ন্যাচার সম্পর্কে জানা আছে ভালো করে । বড়লোক ছেলে দেখলেই রংঢং করে ফাসিয়ে ফেলো ! ”

মামীর কথা আমার কান্না আরো বেড়ে যায় । অগ্নির দিকে তাকিয়ে দেখি রাগে চোখ মুখ শক্ত করে আছে । তবে কি উনিও তাই মনে করে আমি ইশান ভাইয়ার সাথে ছিলাম । রাগ লজ্জায় আমি মাথা নত করে চোখের জল ফেলি ।
হ্ঠাৎ ই ঘর কাঁপিয়ে ঠাসস করে থাপ্পড়ের আওয়াজ কানে আসে । আমি সঙে সঙে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি । আভরিন নিচে পরে আছে । অগ্নি ভয়ংকর রেগে । উনার চোখ থেকে আগুনের ফুলকা বের হচ্ছে । অগ্নি আভরিনের কাছে যেয়ে আবার তার চুল টেনে উঠিয়ে আরেকটা থাপ্পড় মারে । কেবিনের কেউ অগ্নিকে আটকাতে পারছেনা । আমি হতবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে আছি ।

চলবে …….❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন । ভুল ত্রুটি ক্ষমা চোখে দেখবেন । 😊😊😊