শত ডানার প্রজাপতি পর্ব-১৭+১৮

0
5233

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১৭

দুইদিন কেটে যায় । আজ অনেকটাই সুস্থ । সেদিনের পর থেকে অগ্নির সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছি । অগ্নি নিজ থেকে বেশ খোঁচাখুঁচি করে যেন উনার সাথে কথা বলি কিন্তু আমি নিজের থেকেই ইচ্ছে করে উনার কোনো কথায় কোনোরকম রিয়েক্ট করিনা ।
আজ সবাই একসাথে শপিং এ যাচ্ছি । ইয়াশা আপুর হবু বর অনয় ভাইয়াও আসছে । শপিং এর বাহানায় মিট করাও হয়ে যাবে ।
সকালে ব্রেকফাস্ট করে সবাই শপিং এর উদ্দেশ্যে রওনা হই । গাড়িতে ইচ্ছে করে ইয়াশা আপুর সাথে বসি ।যেন অগ্নির পাশে না বসতে হয় । ত্রিশ মিনিটের মাঝে শপিং মলে এসে পৌছিয়ে যাই । অনয় ভাইয়া আমাদের পৌছনোর আগেই এসেছে । ইয়াশা আপু ভাইয়াকে দেখেই লজ্জায় লজ্জাবতী হয়ে যাচ্ছে ।ভাইয়ার সাথে আমাদের সবার পরিচয় হয় । ভাইয়া স্টাডি শেষ করে নিজেদের ফেমিলি বিজনেস দেখাশোনা করছে । অনয় ভাইয়া খুব ফ্রি মাইন্ডেড আর স্মার্ট । ইয়াশা আপুর সাথে খুব মানিয়েছে ।
ইয়াশা আপু লজ্জায় বার বার আমাদের পিছনে লুকাচ্ছে । বিয়ের আগের অনুভূতি গুলো হয়তো এমন হয় । তাই না ?
নিজের হবু স্বামী কে দেখে লজ্জায় লাল হওয়া ,বিয়ে নিয়ে হাজারো কল্পনা জল্পনা সাজানো ,হাজারো স্বপ্ন গড়া । কিন্তু সবার ভাগ্যে কি আর তা জুটে ? এই যে আমার ভাগ্যেতেই তো নেই । কোনো জল্পনা কল্পনা স্বপ্ন ছাড়াই বিয়ের পিড়িতে বসেছিলাম । মনে ছিলো আতংক আর ভয়। বিয়ের পর না পেয়েছি স্বামীর সোহাগ । না কপালে আছে স্বামীর ভালোবাসা । এসব ভেবে বড় এক চাপা নিশ্বাস ছাড়ি ।
সবাই যার যার মত শপিং এ ব্যস্ত । আমার তেমন কিছু কেনাকাটার নেই ।আশেপাশে ঘুরে দেখছিলাম । জুইলারী শপের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎই একটা ছোট ফটোফ্রেম টাইপ হার্ট পেনডেন্ট দিকে চোখ আটকায় । অসম্ভব সুন্দর । হার্ট শেপের পেনডেন্টের চার দিকে ছোট ছোট হোয়াইট স্টোন সেট করা । আমি চোখ ফিয়িয়ে অন্যদিকে তাকাই । এটা আমার জন্য নয় । এইসব তো মেমোরি পেনডেন্ট । এই পেনডেন্টে নিজেদের প্রিয়জনের ছবি রাখে । কিন্তু আমার প্রিয়জনের প্রতি তো কোনো অধিকারই নেই ।সেখানে ছবি আর স্মৃতি তো অনেক দূর !

______________________

গাড়ি চলছে পতেঙ্গা সিবিজের উদ্দেশ্যে । দুপুরের শেষ ভাগ । সূর্যমামা পশ্চিমা আকাশে আস্তে আস্তে ডলে পড়ছে । দ্রুত বেগে গাড়ি চলায় আশেপাশের সবকিছু চোখের পলকেই হারিয়ে যাচ্ছে । বেশকিছু সময় পর গাড়ি পতেঙ্গা সিবিজে পৌছায় । গাড়ি থেকে নামতেই স্নিগ্ধ শীতল হাওয়া ছুঁয়ে যায় ।সমুদ্রের ঢেউয়ের শো শো আওয়াজ আর বিশাল জলরাশির মিলন দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় । জল আর স্থলের এক অপরূপ সমাবেশ । এর শুরু তো দেখা যাচ্ছে কিন্তু শেষ ? অজানা ! এর গভীরতা আমাকে খুব গভীর ভাবে আকর্ষন করছিলো । আস্তে আস্তে সামনের দিকে নিজের পা বাড়াই । চারিদিকে শতশত লোকের আলাপন । যে যার মত ব্যস্ত । ব্রিজের পাশেই বিভিন্ন রং এর বসার সিট বানানো।নীল ,আকাশী ,সবুজ আরো অনেক রংয়ের । স্থানীয় লোকেরা ঘোড়া নিয়ে ঘুরছে । অনেক পর্যটক ঘোড়ার পিঠে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ।
ব্রিজের উপরের দিক থেকে নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পাই বড় বড় ঢেউ গুলো কংক্রিটের ব্লগ গুলোতে আচড়ে পড়ছে । মনে বেশ লোভ জাগছে এই সমুদ্রের ঢেউ এ নিজের পা ভেজানোর । তাই সেদিকে এগিয়ে যাই ।হ্ঠাৎই অগ্নি কোথা থেকে এসে জানো আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরে । আমি ঘাড় উঁচু করে উনার দিকে জিগীষু দৃষ্টি তে তাকাই । কিন্তু তার কোনো পাত্তাই নেই !
এটিটিউড নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করেছে । আমার দৃষ্টি অগ্নির দিকে । গভীর ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি । ইশশশ ! এতো সুন্দর কেন এই লোক ? পাগল করা সুন্দর । এই লোক কি বুঝে উনার প্রত্যেকটা চাহনি প্রত্যেকটা কথা আমার বুকে যেয়ে তীরের মত আঘাত করে । উনি আমাকে নিয়ে সমুদ্রে পা ভেজানোর জন্য নিচের দিকে আসে । আমি তখনো উনার দিকে তাকিয়ে । আশেপাশের লোকজন কি বলবে না বলবে আমার তাতে কোনো কিছু যায় আসেনা । মাথায় কোনো কিছু কাজ করছে না । পুরো মাথা অগ্নি আর অগ্নিতেই হ্যাং হয়ে আছে । এই মুহূর্তে আমি অগ্নিকে গভীর ভাবে দেখতে ব্যস্ত । পড়নে ব্লাক শার্ট হাতাটা ফোল্ড করা ।উনাকে বেশ মানিয়েছে । ফর্সা গায়ে একদম ফুটে আছে । চুল গুলো পিছনের দিকে ব্রাশ করা । ঠোঁটের নিচের তিলটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে । আর উনার সমুদ্রের মত গভীর চোখজোড়া সামনে সমুদ্রের মাঝে ডুবে । আর উনার এটিটিউড ? তা আর নাই বলি ।এই এটিটিউড যেই কোনো মেয়েকে ফিদা করতে যথেষ্ট ।
আমি শুধু উনার মাঝে ডুবে আছি । এমন মানুষের সাথে কি আদো রেগে থাকা যায় ? উনার স্পর্শের সাথে সাথেই রাগ গায়েব হয়ে গিয়েছিলো ।
উনি গম্ভির আওয়াজে বললেন ,

– “আমাকে না হয় বাড়িতে ফিরে মন ভরে দেখ ! আপাদত্ত যা দেখতে এসেছো তা দেখ । ”

আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেই । ইশশ ! কি লজ্জা ,লজ্জা ।
এভাবে না ধরে খেলেও হতো । উনি তো সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলো তাহলে উনি কি করে জানলো আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি! ম্যাজিক ? হয়তো ।
আশে পাশে চোখ যেতেই দেখতে পাই জায়গায় জায়গায় কপত কপতি গভীর ভাবে জড়িয়ে আছে । সমুদ্রের এই অপরুপ সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করছে । আমি চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তা দেখছি । আচমকাই অনুভব করলাম অগ্নি আমার কমোড় টেনে মাঝের গ্যাপ পূর্ন করেছে ।আমি উনার দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি উনি খুব স্বাভাবিক ভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে । আমিও নিজের থেকে একটু দুর্সাহস দেখিয়ে অগ্নির হাতের আঙ্গুলের ভাজে নিজের আঙুল গুজে দেই । উনার কাঁধে নিজের মাথা রাখি । উনি কি এতে রেগে গেছেন ? রাগলে রাগুক তাতে কি! এই মুহূর্তে আমি নিজের মনকে কোনো প্রকার বাঁধা দিতে চাই না । এই মুহূর্তে আমি নিজের মত করে উনার সাথে সময় কাটাতে চাই । এই সময়টায় অগ্নি আমার । শুধুই আমার । উনার উপর এই সময়টার উপর শুধু আমার অধিকার ।
বিকেলের শেষ প্রহর পশ্চিমা আকাশে সূর্য ডলে পড়ছে । সমুদ্রের জলরাশি তখন আগুন রাঙা হলদেটে রঙ ধারণ করেছে । মনে হচ্ছে পৃথিবী কে আদার করে সূর্য সমুদ্রের মাঝে সমাধি নিচ্ছে । সমুদ্রের ঢেউ আমাদের পা ছুয়ে দিচ্ছে । নিজের ভালোবাসার মানুষের কাঁধে মাথা রেখে এই অপরূপ দৃশ্যকে চোখের পাতায় বন্ধি করি ।

________________________

আজ ইয়াশা আপুর হলুদ । পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। একদম নতুন বউয়ের মত । বাহারি রঙের আলো আর ফুলে খুব সুন্দর ভাবে সাজানো । আজকের ফাংশনে সবার ড্রেসকোড কাঁচা হলুদ আর সাদা। সেই সুবাদে হলুদ আর সাদা কম্বিনেশন লেহেঙ্গা পড়েছি । চুল গুলো মিডল কার্লি করে ছেড়ে দিয়েছি । আর্টিফিশিয়াল ফ্লাওয়ারের টিকলি আর কানে দুল পড়েছি। হাতে হলুদ সাদা মিক্সড কাচের মধ্যে স্টোন বসানো চুড়ি । সিম্পল মেকআপ লুক করেছি । সবশেষে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নেই । না খারাপ লাগছে না । বেশ ভালোই লাগছে । অগ্নির পছন্দ হবে তো ?
এমন সময়ই হিয়া আপুর ডাক পরে । চলে যাই বাগানের দিকে সেখানেই সব আয়োজন করেছে । ছেলেপক্ষের লোকজন এসে গেছে । কিন্তু অগ্নি কই ? আমি অগ্নিকে খুঁজে যাচ্ছি । যার জন্য এতো সাজগোজ সে কোথায় ? তার কোনো দেখাই নেই !
পিছন থেকে খুব চেনা স্বর ভেসে আসে । তাকিয়ে দেখি উৎস ভাইয়া একগাল হাসি নিয়ে দাড়িয়ে । আমি উনাকে এখানে দেখে খুব অবাক হয় । উনি এখানে কি করে ?
উৎস ভাইয়া আমার কাছে এসে বললেন ,

– “আরে হুর তুমি? এখানে কি করে ? ”

– “আগে এটা বলুন আপনি এখানে কি করে ? ”

উনি মুচকি হেসে বললেন,

– “আমি বর পক্ষ থেকে এসেছি । অনয় আর আমি সেম ব্যাচ একসাথে ঢাকা ইউনিভারসিটি তে স্টাডি করেছি । ”

– “ও আচ্ছা । আমি কনেপক্ষ । অগ্নির কাজিন ইয়াশা আপু। ”

– “তো বলো কেমন আছো ? ”

– “এই তো ভাইয়া ভালো । আপনি কেমন আছেন? ”

– “এই তো যেমন তুমি দেখছো ।বায় দ্যা ওয়ে ইউ লুকিং গর্জিয়াস । ইয়ালো তে হলদে পরী লাগছে । ”

আমি লাজুক হেসে উত্তর দেই ,

– “ধন্যবাদ ভাইয়া । ”

উৎস ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম এমন সময়ই চোখ যায় স্টেজের দিকে । অগ্নি আমার দিকে নিজের অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে । মনে হচ্ছে এই দৃষ্টি তে আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিবে । ইয়া আল্লাহ এবারের মত বাঁচিয়ে দিও । আমি এতো তাড়াতাড়ি এই দুনিয়া ত্যাগ করতে চাই না।উনাকে রাক্ষসরাজ থেকে চকলেট বয় অগ্নি করে দেও । প্লিজ প্লিজ ।

চলবে ….❤️

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১৮

স্টেজের দিকে যাচ্ছিলাম হ্ঠাৎ ই আমার হাতে টান পরে । কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে অন্ধকারে টেনে নিয়ে যায় । আমার বুঝতে বাকি রইলো না এটা কে ! অগ্নি ছাড়া অন্যকেউ হতেই পারে না । আমাকে অন্ধকারে স্টেজের পিছনে নিয়ে যায় । পাশের গেস্ট হাউসের দেয়ালের সাথে আটকায় । আমি নড়চড় করতে পারছিনা । উনার শক্তির সাথে পেরে উঠা অসম্ভব ।
আমি রেগে বলি ,

– “কি করছেন আপনি? এমন বিহেভ কেন করছেন ? ”

উনি আমার চেয়ে দ্বিগুণ রেগে উত্তর দেয় ,

– “কেন আমার স্পর্শ ভালো লাগছে না ? আমার কাছাকাছি থাকা ভালো লাগছে না ? ”

– “কি যাতা বলছেন ছাড়ুন আমাকে ? ”

– “ওহ !! আমার স্পর্শ ,আমার কাছে থাকা এসব ভালো লাগছে না ? একটু আগে তো খুব হেসে হেলেদুলে উৎসের সাথে কথা বলছিলে । তখন তো তোমার চেহারায় এমন বিরক্তি দেখা যায়নি । এখন কেন ? ”

-” আপনি কি পাগল হয়ে গিয়েছেন ? এসব কি বলছেন? আর তাছাড়া আমি যদি এমন কিছু করেও থাকি তাহলে আপনার সমস্যাটা কোথায় ? ”

উনি পাশের দেয়ালে জোরে ঘুষি মেরে রেগে বললেন,

– “আমার সমস্যা কোথায় মানে ? আমার সমস্যা আছে । একশোবার আছে । তুমি কেন উৎসের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে ? ”

– “তো রেগে কথা বলতে বলছেন ? বায় দ্যা ওয়ে আপনি কি জেলাস ? কিন্তু কেন ? আপনি তো আমাকে নিজের স্ত্রী মানেন না ! না আমাকে ভালোবাসেন । তো আমি অন্যকারো সাথে থাকা না থাকায় আপনার কি আসে যায় ? ”

– “আমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই । তুমি উৎসের সাথে কথা বলবে না ব্যসসস ! ”

– “উৎস ভাইয়ার সাথে কথা বলবো না ,ইশান ভাইয়ার সাথে কথা বলবো । আসলে আপনি কি চান বলুন তো ? কেন আমার উপর বার বার এমন অধিকারবোধ দেখান ? আপনার নিজের উপর আমার কতটুকু অধিকার খাটাতে দেন ? আপনি যখন কথায় কথা সুপ্তি সুপ্তি করেন তখন আমার কেমন লাগে তা একবার বুঝার চেষ্টা করেছেন? আমার কতটা জ্বলে তা কি একবার বুঝেছেন ?
যদি নিজের উপর আমার অধিকার না দিতে পারেন তাহলে আমার উপরও অধিকার খাটানোর অধিকার আপনার নেই । ”

আমি নিজের কথা শেষ করে অন্যদিকে মুখ করে বড় বড় শ্বাস নেই । চোখে অশ্রুকনার ভিড় জমেছে । রাগ দুঃখ কষ্ট সব একত্রে মিশ্রিত হয়ে কান্না আসছে । উনি আমার কাছে আসে শুধু আমাকে কষ্ট দিতে । উনার সাথে আমার হৃদয়ের থেকে বেশি কষ্টের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে । আমি যতবার উনার দিকে ভালোবাসার আশায় পা বাড়াই । উনি ফলসরূপ আমাকে আঘাত আর কষ্ট দেয় । উনি অনেক আগেই হাতের বাঁধন হাল্কা করে দিয়েছে ।আমি উনার বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে উনাকে সামনের থেকে সরিয়ে দেই । সেখান থেকে বড় বড় পা ফেলে বেড়িয়ে আসি । উনার সাথে থাকলে আমি এই মুহুর্তে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবো ।

_______________________

ইয়াশা আপুকে হলুদ ছোঁয়াই । সবাই গ্রুপ ডান্স করছে কেউ কেউ আবার কাপল ডান্স করছে । আভরিন এসেছিলো কিন্তু সবার তেমন এক পাত্তা না পেয়ে চলে যায়। আভরিনের উপর এখনো সবাই রেগে আছে । নানুজান তো আভরিনের চেহারা দেখতেও নারাজ ।অনয় ভাইয়ার বাড়ির লোকেরা যাওয়ার পর অনয় ভাইয়া আসে । সবাই একসাথে ডি জে গানে ডান্স করে । একসময় ইয়াশা আপু আমাকে টেনে তাদের মাঝে নিয়ে যায় । অনেক মানুষের ভিড় আর ধাক্কাধাক্কি । আমি কিছুতেই বের হতে পারছি না । আচমকাই অগ্নি কোথা থেকে যেন আমার সামনে এসে দাড়ায় । দুহাত দিয়ে আমাকে নিজের বেড়াজাল আটকায় । যেন কেউ আমার কাছে ঘেষতে না পারে । আমি উনার দিকে রাগী দৃষ্টি তে তাকাই কিন্তু উনি সে দিকে কোনো তেক্কার করে না । উনি আমার দিকে গাঢ় দৃষ্টি তে তাকিয়ে । আমি উনার চোখে চোখ রেখে উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছি । দুজনের চোখে চোখে যুদ্ধ হচ্ছে । এক সময় পিছন থেকে কারো ধাক্কায় উনার বুকে এসে পড়ি । উনিও আমাকে আলতো করে জরিয়ে ধরে । সরে আসার চেষ্টা করলে উনি হাতের বাধন আরো শক্ত করে ধরে ।

__________________________

কিছুক্ষণ পূর্বেই ফাংশন শেষ হয়েছে । অগ্নির সব মেয়ে কাজিন গুলো কি জানো ফিসফিস করছে । উনাদের নাকি আলাদা পার্টি আছে ।নিশিত ,আতিফা ,আনায়া ,আদিবা এমনকি ইয়াশা আপুও আছে তাদের দলে । হিয়া আপু অনেক আগেই নিজের রুমে চলে গেছে । আমি যেতে চাইলে যেতে দেয় না । ইয়াশা আপুর নির্দেশ যাওয়া যাবেনা । ছাদের কাচের রুমে সবাই গোল করে বসে । মাঝে দুইটা জুসের বতলের মত কিছু রাখা । আর কয়েকটা গ্লাস । এক এক করে সবাই গ্লাসে জুস নেয় ।ইয়াশা আপু আমার হাতেও ধরিয়ে দেয় এক গ্লাস । আমি ছোট ছোট করে সবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি ,

– “আপু এগুলো কি ? ”

আনায়া দাঁত বের করে হেসে বলে ,

– ” বিদেশি অরেঞ্জ জুস ভাবী ! ”

– “তোমরা পেলে কি করে ? ”

নিশিত বলল,

– “ভাইয়ারা এনেছে তাদের থেকে চুরি করেছি ! ”

– “ও মাই গড চুরি করেছো! যদি জানতে বহুত রেগে যাবে । ”

ইয়াশা আপু আমার পিঠে চাপড় মেরে বললেন ,

– “আরে মাইয়া চিল মারো । কিছু টের পাবে না ! ”

সবাই গ্লাসে নিয়ে গিলে ফেলে । আমিও ভয়ে ভয়ে গ্লাসটা হাতে নিয়ে জুসটা মুখে দেই । মুখে ছোঁয়াতেই কেমন জানো অরেঞ্জ ফ্লেবার মিষ্টি তিক্ত স্বাদ পাই ।শরীর কেমন জানো গরম ভাব । গলা দিয়ে নামার সময় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিলো ।
কিছুক্ষণের মাঝেই শরীর কেমন জানো হাল্কা হাল্কা লাগছিলো । সব কিছু ডাবল দেখছিলাম । টেষ্ট যেমনি হোক না কেন ভালো লাগছিলো । নিজেকে কেমন জানো মুক্ত স্বাধীন লাগছিলো । আবার আরেক গ্লাস জুস নিয়ে গিলে ফেলি । কিছুক্ষণের মাঝেই নেশা হয়ে যায় । আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই কেমন জানো পাগলামো করছে । আমার কেন জানো শুধু হাসি আসছে । মনে হচ্ছে মনের সব ফিলিংক্স যেন উপড়ে বের হয়ে আসছে । আমি দু হাত মেলে ঘুরতে লাগি । হঠাৎ ই বড় এক থাম্বার সাথে আটকিয়ে যাই । মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি সামনে দুইটা অগ্নি দাড়িয়ে আছে । পাশেই অনয় ভাইয়া ,নিহাদ ভাইয়া ,অভয় ভাইয়াকেও দুটো করে দেখা যাচ্ছে । আমি ফিক করে হেসে দেই । ঘাঁড় বাঁকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে দুলতে দুলতে প্রশ্ন করি ,

– “আপনারা সবাই কি টুইন ? এই যে এখানে একজন ঐখানে একজন । ওয়াও !! ”

আমার কথায় ফিক করে অনয় ভাইয়া হেসে দেয় । আমি সেদিকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে অগ্নির কাছে চলে যাই । উনার গলায় নিজের হাত পেঁচিয়ে কপাল কুঁচকিয়ে উনার দিকে তাকাই । অগ্নি আমার দিকে নিজের ভয়ংকর অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে । হু কেয়ার্স ? আমি আদো আদো গলায় জিগ্যেস করি ,

– “এই যে রাক্ষসরাজ সব সময় কেন এমন অগ্নিরুপ ধারণ করেন বলেন তো ? নাম অগ্নি বলে কি সব সময় অগ্নিরুপ ধারণ করতে হবে ? বলুন বলুন ? ”

উনি দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দেয় ,

– “তুমি কি চুপ করবে ? ”

– “না না আমি একদম চুপ করবো না । আমি তো এখন গান গাইবো । আপনি শুনবেন ? ”

পিছন থেকে নিশিত ,আতিফা ,আনায়া ,আদিবা এসে একত্রে সুর তুলে বললেন ,

– “বলো ভাবী বলো আমরা শুনবো ”

আমি অগ্নির দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে জোরে গান ধরি ,

“বন্ধুর দুইটা চোখ ,আরে বন্ধুর দুইটা চোখখখ ”

বন্ধুর দুইটা চোখ যেন দুই নালা বন্ধুক ”

“আরে গুল্লি পাইরা ”

ডিস্কাও~~~~ডিস্কাও

“আরে গুল্লি মাইয়া ভাঙলো আমার মনেরই সিন্দুক রে মনেরই সিন্দুক ”

আমি এতোটুকু গাইতেই দেখি ইয়াশা আপু নিশিত ,আতিফা ,আনায়া ,আদিবা সবাই নাচতে শুরু করেছে । অগ্নি রেগে আমার হাত টেনে নিজের সামনে দাঁড় করায় । ভাইয়ারা হাসতে হাসতে পরে যাচ্ছে । আমি পিটপিট চোখে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছি । আমার মুখে শয়তানি হাসি । অগ্নি আমাদের সবাই কে ইচ্ছে মত ঝেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকায় । ধমক দিয়ে বললেন ,

– “যা তামাশা করার করেছো । এবার রুমে চলো । ”

– “না আমি যাবো না । ”

– “হুর আমি বলেছি রুমে চলো । ”

– “আমি বলেছি তো আমি যাবো না । ”

উনি রেগে গর্জন করে বললেন,

– “হুররররর !”

– “আচ্ছা আমি যাবো কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে ”

উনি ভ্রু কুঁচকিয়ে বললেন ,

– “কি?? ”

– “আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে । ”

উনি রেগে ছোট্ট একটা শ্বাস ছাড়ে । আমাকে কোলে তুলে নেয় । আমি উনার বুকে মাথা রেখে আদো আদো চোখে উনার দিকে তাকাই । উনি আমাকে কোলে করে সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে ।

চলবে…….❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন । ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন😊😊😊 ।