শত ডানার প্রজাপতি পর্ব-৪০+৪১

0
5260

শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৪০

ইদানীং গা গুলানো টা খুব বেড়ে যাচ্ছে । মাথাটাও ভনভন করে ঘুরে । সেদিন নিশিতের কথায় তেমন গুরুত্ব না দিলেও । এখন আমার নিজের থেকেই সন্দেহ হচ্ছে । সত্যি প্রেগন্যান্ট কি ?
অগ্নি কে কিছু জানাই নি ।নিজের থেকে যতক্ষণ নিশ্চিত না হবো কাউকে জানাবো না । আজ অগ্নি সকাল সকাল বেরিয়েছে । রাতেই জানিয়েছে আজ তার মিটিং আছে । অগ্নি অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাবার পর পর ই সুযোগ বুঝে আমি হসপিটালে জন্য রওনা দেই
। ডক্টর আন্টি মামীর ক্লাসমেট । খুব ভালো সম্পর্ক মামীর সাথে ।আন্টি চেকআপ করে কিছু টেস্ট করতে বলেন ।দেড় ঘন্টার মাঝে ঘন্টার মাঝে সব টেস্ট বাড়ির জন্য রওনা হই । বাড়িতে পৌছিয়ে দুপুরের লাঞ্চ রেডি করতে হবে । তারপর বিকেলে আবার আপুর সাথে দেখা করতে মামা বাড়িতে যেতে হবে । আমি রিকশা তে বসে বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি । অলরেডি এগারো টা বাজে । কখন বাসায় যাবো আর কখন লাঞ্চ রেডি করবো ?
উফফ তার উপর এই ঢাকা শহরের জ্যাম ! আমি বিরক্তি নিয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছি । হঠাৎ ই আমার চোখ আটকায় এক গাড়িতে । গাড়িটা আর কারো না অগ্নির । রিকশার হুডিটা উঠিয়ে মাথায় ভালো করে ঘুমটা টেনে নিলাম । অগ্নি দেখলে এখনি ঝামেলা শুরু করবে । এমনিতেই না বলে বেরিয়েছি । তার উপর আবার একা সাথে গাড়ি নেই । নিশ্চিত রেগে যাবে । যা মাথা গরম লোক । জ্যাম কিছুটা ছাড়তেই গাড়ি সামনের দিকে আসে । এরপর আমি যা দেখলাম তা দেখার জন্য মটেও প্রস্তুত ছিলাম না । আমার মাথায় যেন আসমান ভেঙে পরে ।চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পড়ছে । অগ্নির পাশের সিটে সুপ্তি বসে । সিটে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে । আমি রিকশা থেকে নেমে অগ্নির গাড়ির দিকে পা বাড়াই । এমন সময়ই জ্যাম ছেড়ে দেয় । গাড়ি চলে যায় । আমি রাস্তায় স্থব্দ হয়ে দাড়িয়ে থাকি । চোখ থেকে এখনো পানি পরছে ।আমি যেন এই দুনিয়াতে নেই । অন্যকোন দুনিয়ায় আছি । আশেপাশের কোনো কিছুই আমার কানে আসছে না । থম মেরে সেখানেই দাড়িয়ে আছি । হ্ঠাৎ কেউ আমাকে টান দিয়ে রাস্তার একপাশে নিয়ে যায় । এক মধ্যবয়সী মহিলা । তিনি ধমকের স্বরে বললেন ,

– “এই মেয়ে কি করছিলে! এখনি তো গাড়ির নিচে পড়তে । দেখে তো ভালো ঘরের মেয়ে মনে হচ্ছে । এভাবে রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলে কেন ? ”

আমি তখনো ভাসা চোখে তাকিয়ে আছি মহিলাটির দিকে । কোনো কিছু আমার মাথায় ডুকছে না । আমি ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছি । মহিলা আমাকে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন ,

– “এই মেয়ে শুনছো ? ”

ঝাঁকুনি তে আমার হুস ফিরে । চোখ মুখ মুছে বড়বড় শ্বাস নিচ্ছি । নিচের থেকে ব্যাগ হাতে তুলে তাড়াতাড়ি রিকশায় চড়ে বাড়িতে চলে আসি ।
বাড়িতে এসে এখনো আমার মাথা ঘুরছে । ওয়াশরুমে ডুকে বমি করি । ভিতর থেকে কেমন জানো অস্থির লাগছে । কান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।। আমি শাওয়ার ছেড়ে এর নিচে বসে পড়ি । অস্থিরতা কমানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি ।কিন্তু কোনো ভাবেই তা কমছে না ।বার বার অগ্নির সাথে সুপ্তি সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠে । আর অস্থিরতা বাড়তে থাকে । কোন প্রকার চেষ্টা চালিয়ে নিজের মনে অস্থিরতা কমাতে পারছিনা বার বার চোখ ভরে আসছে । হৃদপিন্ডটা চাপ ধরে আছে । মনের আগুন কি বাহিরের এই ঠান্ডা পানিতে নেভে ?

দুপুরের লাঞ্চ তৈরি করছি । কোনো কাজে মন বসাতে পারছিনা । বার বার সেই দৃশ্য চোখে ভাসছে ।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে । আমি কোনো রকম ঠোঁট চেপে নিজের কান্না আটকাচ্ছি । অগ্নির সাথে সুপ্তিকে দেখে আমার মনে ভয় চেপে বসেছে । প্রচুর ভয় । বার বার মনে হচ্ছে সুপ্তি আমার কাছ থেকে আমার অগ্নিকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে । ভিতরে ঈর্ষায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে । যদি আমি অগ্নিকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলি ? কেন সুপ্তি ফিরে এসেছে ? কি চাই তার ? মনে হাজারো প্রশ্ন কিন্তু কোনো উত্তর নেই । আমি অন্যমনস্ক হয়েই চুলার দিকে হাত বাড়াই । এমন সময়ই গরম কড়াই লেগে হাত পুড়ে যায় ।চম্পা আমার চিৎকারে কিচেনে আসে ।ঠান্ডা পানিতে হাত ভিজায় । কিন্তু তাতে তেমন কোনো কাজ হয় না । তার আগেই হাতে ফুষ্কা পড়ে গেছে । প্রচন্ড হাত জ্বালা পোড়া করছে । কিন্তু এরচেয়ে বেশি জ্বলছে মনে । রাগ জেদ আর অনেক বেশি অভিমান বুকে জমে আছে । বাকি রান্না চম্পা শেষ করে । চম্পা অগ্নিকে ফোন করে জানাতে চাইলো । আমি না করে দেই । বিকেল দিকে অগ্নি বাড়ি ফিরে । আমি তখন বারান্ধায় বসে আকাশের পানে তাকিয়ে বিকেলের শেষ প্রহরের বিদায় দেখছি । দুপুরের লাঞ্চ ও করিনি ।কেমন জানো গা গুলিয়ে আসছে । শরীরটাও কেমন জানো মচমচ করছে । গাঁয়ের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক । জ্বর- ট্বর আসবে কি ?
আসুক তাতে কি যেখানে মনের অসুস্থতায় তিল তিল শেষ হচ্ছি । সেখানে শরীরের অসুস্থতায় আর তেমন কি হবে !
অগ্নি ড্রেস চেঞ্জ না করেই সরাসরি আমার কাছে আসে । আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অস্থির চঞ্চল চোখে আমার হাত দেখছে । ঝলসানো ডান হাতটি দেখে অস্থির গলায় প্রশ্ন করে ,

– ” এতো খানি হাত পোড়লো কি করে ? আর আমাকে ফোন করে কিছু জানাও নি কেন ? ”

অগ্নির চেয়ারায় অস্থিরতা কষ্ট ভেসে আছে ।যেন ব্যথা আমি না অগ্নি পেয়েছে । আমি ঝাপসা চোখে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছি । কেন এই কষ্ট ? আমার জন্য ? যদি তাই হয় তাহলে সুপ্তির সাথে কেন ছিলো । অগ্নি আবার ধমকের স্বরে বললেন ,

– “কি হলো ? বলো কি করে হয়েছে ? ”

– “অন্যমনস্ক হয়ে হাতে লেগে গেছে ”

– “আমাকে ফোন করে কেন জানাও নি ? ”

– “আজ কাল আপনি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত । তাই আর আপনাকে ডিস্টার্ব করিনি । ”

– “তোমার থেকে কোনো কিছু বেশি ইম্পরট্যান্ট না ”

তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলি ,

– “সত্যি কি তাই ? ”

– “অবশ্যই ! ”

– “যাক ,জেনে ভালো লাগলো । ”

– “হুর এমন ভাবে কথা বলছো কেন ? কিছু কি হয়েছে ? ”

– “কি হবে? কিছু কি হওয়ার আছে । ”

অগ্নি আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে ছোট এক নিশ্বাস নেয় । তার পর বললো ,

– “লাঞ্চ করেছো ? ”

– “না ”

– “কেন করোনি! চল আমার সাথে লাঞ্চ করবে । ”

আমার বাম হাত ধরতেই আমি অগ্নির থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেই । অগ্নি আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে । আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বলি ,

– “আমি খাবো না । আমার খিদে নেই । ”

অগ্নি আমাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কোলে তুলে নেয় । বাড়িতে চম্পা ছাড়া কেউ নেই । চম্পা নিজের রুমে । অগ্নি আমার করে নিয়েই ডাইনিং রুমে আসে । নিজের কোলে নিয়েই চেয়ারে বসে । আমি অগ্নি থেকে ছাড়া পাবার চেষ্টা চালাচ্ছি কিন্তু অগ্নি শক্ত করে আমার কমোড় জড়িয়ে ধরে আছে । অন্যহাতে খাবার সার্ভ করে । সামনে নেয় আমি অগ্নির সাথে না পেরে একসময় থেমে যাই । পুরুষ মানুষের শক্তির সামনে পারা যায় না । আমি প্রচন্ড বিরক্তি দিয়ে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছি । এসব আহ্লাদী আমার খুব বিরক্ত লাগছে । উনি এই আহ্লাদী করছে কেন ? আমার গাঁ জ্বলছে ।
তার উপর খাবারের গন্ধে শরীর শিরশির করছে । ভিতরে পাক বেঁধে সব গুলিয়ে আসছে ।
অগ্নি আমার মুখের সামনে খাবার ধরতেই আমি ঝারি দিয়ে খাবার প্লেট ফেলে দেই ।অগ্নি আমার দিকে হতভম্ব চোখে তাকিয়ে আছে । আমি সেই সুযোগে অগ্নির কোল থেকে উঠে পরি । রেগে বলি ,

– “কি সমস্যা আপনার ? আমি বলছি তো আমার খুদা নেই । তারপর ও বার বার এই আহ্লাদীপানা কেন করছেন ? ”

অগ্নি চেয়ার ছেড়ে উঠে আমার পাশে এসে দাড়ায় । স্ফটলি বলে,

– “হুর কি হয়েছে এমন বিহেভ করছো কেন ? কিছু কি হয়েছে ? আমাকে বলো ! ”

– “কি হতে বলছেন? বলছিতো আমি ঠিক আছি । কেন আমাকে সবকিছু তে জোর করছেন ? কি চান ? দুনিয়া আপনার মন মত চলুক! সবাই আপনার হাতের পুতুল হয়ে থাকুক ? ”

বলেই বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি । অগ্নি শান্ত স্বরে বলে,

– “ওকে রিলেক্স ! গাঁ টা দেখলাম হাল্কা গরম । অসুস্থ? খুব খারাপ লাগছে কি ? ”

আমি উনার কোনো প্রশ্নের জবাব দিলাম না । দ্রুত পায়ে উপরে রুমে চলে আসলাম । রুমে এসেই বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ চেপে কিছুক্ষণ কান্না করলাম । জানি অগ্নি কষ্ট পেয়েছে । আমি অগ্নিকে কষ্ট দিতে চাইনি । কিন্তু ভিতরের রাগ ক্ষবে হুট করে এসব বলে দিয়েছি । পারছিলাম না নিজের কষ্ট চেপে রাখতে রাগের মাথায় বলে ফেলেছি ।
মিনিট পাঁচেজ পর অগ্নি আসে । আমার পাশে শুয়ে পরে আমি ইচ্ছে করে চোখ চেপে বন্ধ করে আছি । আমি চোখ বন্ধ রেখে ও বলতে পারছি অগ্নি আমার দিকে তাকিয়ে আছে । তাও খুব গভীর ভাবে !

চলবে…..❤️

শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৪১

পাশ ফিরে শুয়ে আছি । চোখ থেকে অনবরত পানি ঝড়ছে । ফুপিয়ে কান্না করছি । অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে আমি চাইনি অগ্নির সাথে ঐ রকম ব্যবহার করতে । কিন্তু কি করবো ? আমি যে হেল্পলেস ছিলাম ।নিজেকে শান্ত করতে পারছিলাম না । আমি না পারছি সহ্য করতে ,না পারছি অগ্নিকে জিগ্যেস করতে !
কি জিগ্যেস করবো ? আমার কাছে তো কোনো প্রমাণ নেই । যদি অগ্নি চোখের ভুল বলে কাটিয়ে দেয় ?

অগ্নি আমার কাছে ঘেষে শুয়ে পরে । আমার চুল গুলো বিলি কেটে দিচ্ছে । আমি কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া করছি না আগের মতই চোখ বুঝে শুয়ে আছি । কোনো সাড়াশব্দ করছি না । অগ্নির ঘনঘন নিশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছে । আমি তখনো চোখ বুঝে । কিছুক্ষণ পর অগ্নি পিছন থেকে আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে । আমার খোলা চুলে মুখ ডুবায় । অগ্নির গরম নিশ্বাস গুলো এবার আমার ডান ঘাঁড়ে পড়ছে । অগ্নি নাক টানছে ,তবে অগ্নি কাঁদছে ? আমি চোখ খুলে পেছনে ফিরার চেষ্টা করি । কিন্তু তা পারি না । কারণ অগ্নি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে । অগ্নি পিছন থেকে ভাঙা গলায় বলে ,

– “জানি না তোমার কি হয়েছে ! তুমি যদি না বলতে চাও ঠিক আছে ,আমিও জিগ্যেস করে তোমাকে কষ্ট দিবো না । কিন্তু প্লিজ আমার সাথে একটু কথা বলো । তোমার রাগ জেদ অভিমান সবকিছু আমি সহ্য করতে পারবো । আমাকে যে শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে মেনে নিবো ।
শুধু আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করো না ! অনেক ভালোবাসি । অনেক বেশি ভালোবাসি ।আমার দুনিয়াটা শুধুই তোমাকে ঘিরে । তুমিই যদি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেও আমি কি করে থাকবো ? বলো ? ”

অগ্নি থামলেন । আমিও চুপ । অগ্নি আবার বলতে শুরু করলেন ,

– “হুর ! প্লিজ এভাবে আমাকে এড়িয়ে চলো না । আমার কষ্ট হয় তো । তোমার ইগ্নোর আমাকে ক্ষণে ক্ষণে আমাকে দগ্ধ করে । আমি নিজের মধ্যে থাকি না । আমার পুরো দুনিয়া অগোছালো হয়ে যায় । ”

ভালোবাসার মানুষ যত বড় অপরাধই করুক না কেন । সেই মানুষটার কান্না ভেজা কন্ঠ শুনলে যে কেউ দুর্বল হয়ে পড়বে । শক্ত হিম শীতল হৃদয়টাও মোমের মত গলতে শুরু করে । অগ্নির কথা গুলো আমাকে দুর্বল করে দিচ্ছিলো । আমার সাথেও তাই হচ্ছিলো কিছুক্ষণের জন্য আমার মাথা ব্লাংক হয়ে যায় । আমি অন্যকোন কিছু ভাবতে পারছিলাম না ।ততক্ষনে অগ্নির হাতের বাঁধন হাল্কা হয়ে গিয়েছে । হুট করে পিছনে ফিরে অগ্নির বুকে মাথা রেখে জোরে শব্দ করে কান্না করতে লাগি । ভিতরের সব কষ্ট গুলো চোখে পানির সাথে বেরিয়ে আসছিলো । অগ্নি আমার কান্না দেখে কিছুক্ষন থম মেরে ছিলো । নিজেকে সামলিয়ে আমার মাথায় হাত রাখে । আমাকে শান্ত করা চেষ্টা করে ।

রাতে অগ্নি নিজ হাতে আমাকে খায়িয়ে দিলেন । আমি যতক্ষণ অগ্নির সাথে ছিলাম এক ঘোরে ছিলাম । অগ্নি খুব যত্ন করে আমার হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিলেন ।আমি পুরোটা সময় অগ্নির দিকে তাকিয়ে ছিলাম আর ভেবে যাচ্ছিলাম , এই মানুষটা কি আমাকে ধোকা দিতে পারে ? এই নিষ্পাপ চোখ জোড়া কি আমার সাথে বেঈমানি করে অন্য কারো দিকে তাকাতে পারে ?
আদৌ কি তা সম্ভব ?

পরের দিন সকালে অগ্নি কোনো এক কাজের জন্য ঢাকার বাহিরে চিটাগাং যাচ্ছে । কিন্তু আমি যতটুকু জানি চিটাগাং এ এখন কোনো অফিসিয়াল কাজ নেই !
তাহলে অগ্নি কেন যাচ্ছে ? বরাবর ই আমার মাথায় নানা রকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে । অগ্নি কেন আমার সাথে এমন লুকোচুরি খেলছে ? কি করছে ? আর কি করতে চাইছে ?

সকালের আলো ফুটেছে অনেকক্ষন । অগ্নি একটু পরই বাড়ি থেকে বের হবে । আমি নাস্তা রেডি করতে কিচেনের দিকে পা বাড়ালে অগ্নি কড়া নির্দেশে মানা করে দেয় । কড়া করে নিষেধাজ্ঞা দেয় । সারাদিন বিছানায় রেস্ট নিতে বলে । আমি বিছানায় হেলান দিয়ে বসে অগ্নির দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছি । অগ্নির প্রত্যেকটা কাজ খুব মন দিয়ে দেখছি । অগ্নি হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে আমার সামনে এসে বসে । আমি কিছুটা নড়েচড়ে বসি । আমার চোখে একরাশ অভিযোগ । অগ্নি আমার গালে আদুরে হাত ছুঁয়িয়ে বললেন ,

– “আমার যাওয়াটা খুব ইম্পরট্যান্ট । যদি জরুরী কাজ না হতো আমি কখনোই যেতাম না ।রাগ করোনা লক্ষিটি । আমি কাল রাতের মধ্যেই ফিরে আসবো ।ফিরে এসে তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে ।অনেক কিছু তোমার অজানা তা জানানোর আছে । দোয়া করো আমি যেই কাজের উদ্দেশ্য যাচ্ছি তা যেন সঠিক ভাবে হয় । ”

অগ্নির কথা গুলো আমার মাথায় ডুকছে না । অগ্নি ঠিক কি ব্যাপারে বলছে ? কি জানানোর আছে তার ! আমি শুধু অগ্নির দিকে ড্যাবড্যাব চোখ করে তাকিয়ে আছি । অগ্নি আমার কাছে এসে আমার কপালে খুব দাবিয়ে চুমু খেয়ে কিছুক্ষণ নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে । আমি তখনো ভাবলেশহীন ভাবে আছি । অগ্নি আমার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন ,

– “একদম হেলামি করবে না । কেমন ? নিজের খেয়াল রাখবে । টাইমমত খাবার খাবে আর মেডিসিন নিবে । আমি চম্পা কে বলে যাচ্ছি ।আর কোনো প্রব্লেম হলে অবশ্যই আমাকে জানাবে ।
আমি এখন আসি ! ”

আমি আগের ভঙ্গি তে বসে ধীর আওয়াজে বলি,

– “আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন ।পৌছিয়ে জানাবেন । ”

– “ঠিক আছে । ফ্লাইটের টাইম হয়ে যাচ্ছে ,আমি এখন আসি । ”

অগ্নি আমার কপালে নিজের ওষ্ঠ স্পর্শ করে ।বিছানা ছাড়ে উঠে । আমি অগ্নির চলে যাচ্ছে । আমি অগ্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি । কেমন জানো বুকটা চিনচিনিয়ে ব্যথা করে উঠছে । মনে হচ্ছে এই দেখাই শেষ দেখা । অগ্নি দরজার সামনে যেয়ে আমার দিকে একবার ফিরে তাকায় । আমি ঝাপসা চোখে অগ্নিকে বিদায় দিচ্ছি । অগ্নি মলিন হেসে চলে যায় । আমি ঠায় অগ্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি !

দুপুরের পর ডক্টর দেখিয়ে বনানীর ফ্লাটে যাচ্ছি । হাতে প্রেগন্যান্সির পজিটিভ রিপোর্ট । বনানীতে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো সুপ্তির সাথে দেখা করা । অগ্নি সুপ্তিকে সেই ফ্লাটে রেখেছে।কেয়ার টেকার থেকে ফোন করে সব জানতে পেরেছি ।
রাগে জিদে আমার শরীর কাঁপছে । শেফা সাথে আছে । শেফা আমাকে বার বার শান্ত করার চেষ্টা করছে । আমি কোনো ভাবেই নিজের রাগ ঠান্ডা করতে পারছি না । অগ্নি আমার সাথে কি করে এমন করতে পারে ? অগ্নি সুপ্তি কে নিজের ফ্লাটে উঠিয়েছে ? কেন সুপ্তির সাথে অগ্নির কিসের সম্পর্ক ? কিসের এতো সহঅনুভূতি ?
সুপ্তি তো অগ্নির প্রাক্তন । অগ্নিকে বিয়ের সাপ্তাখানিক আগে তাকে ছেড়ে চলে গেছে । তার প্রতি এতো দয়া কেন ? যদি সুপ্তির প্রতি এতোই ভালোবাসা তাহলে আমাকে কেন নিজের জীবনের সাথে জড়িয়েছে ?

কিছুক্ষণের ভিতর বনানীতে চলে আসি । শেফা ভাড়া মিটাচ্ছে । আমি সোজা ফ্লাটের সামনে চলে যাই । কয়েকবার ডোর বেল চাপি কোনো সাড়াশব্দ নেই । আমার হাত পা রাগে কিটকিটা হয়ে আছে । শেষের বার বেল বাজাতেই সুপ্তি এসে দরজা খুলে । সুপ্তি দরজা খুলতেই আমি সজোরে কয়েকটা থাপ্পড় মারি । সুপ্তি ছিটকে যেয়ে সোফার উপর পরে । আমি আউট অফ মাইন্ড হয়ে গেছি ।এই মুহূর্তে কোনো কিছুই আমার চোখে পড়ছে না । আমি সুপ্তির কাছে যেয়ে ওর গাল চেপে ধরে কান্না করতে করতে বলি ,

– “কেন ফিরে এসেছিস ? আমার সংসার ভাঙতে ? কেন আমার সাজানো সংসারে আগুন লাগাতে এসেছি ? কি চাই তোর টাকা ? সম্পদ ? বাড়ি? গাড়ি? তোর যা চাই তুই নিয়ে নে । কিন্তু আল্লাহ্‌ র দোহাই লাগে আমার স্বামী কে ছেড়ে দে । আমাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ডুকিস না । ”

আমি রাগে জিদে কান্না করছি আর বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছি । এই মুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে হেল্পলেস মানুষ আমি ।নিজের সংসার বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি । ভিতরে প্রতি মুহূর্তে পুড়ছি । মাথায় হাজারো টেনশন । দুদিন ধরে ডিপ্রেশনে ভুলছি । প্রতিটা সেকেন্ড নিজের স্বামী সংসার হারানোর ভয় আমাকে খেয়ে যাচ্ছে । সুপ্তি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কিন্তু এই মুহূর্তে যেই সুপ্তি আমার সামনে আছে সে আমার স্বামীর প্রাক্তন ।
পৃথিবীর কোনো স্ত্রী তার স্বামী প্রাক্তন কে মেনে নিতে পারবে না । সে প্রাক্তন যেই হোক না কেন ?
ছোট থেকে আপনজন বলতে কেউ ছিলো না । না মা ,না বাবা । না ছিলো কোন পরিবার । মামা মামীর আশ্রিতা ছিলাম । অনেক আদরে বড় হলেও মা বাবার আদর ভালোবাসা থেকে সর্বদাই বঞ্চিত ছিলাম । বিয়ের পর প্রথমে স্বামীর থেকে অবহেলা পেয়েছি । আপন বলতে শাশুড়ি রুপে মা পেয়েছি । তারপর আস্তে আস্তে আমার জীবন গোছাতে লাগলো । স্বামীর আদর সোহাগ ভালোবাসা অর্জন করলাম । আমারও একটা পরিবার হলো ।আচানকই মাকে হারালাম । মাকে হারিয়ে ভেঙে পড়লেও আমার সাহস জুটিয়ে উঠে দাড়ালাম । কিন্তু এর মাঝেই স্বামী অতীত ফিরে এসে যদি সামনে দাড়ায় । নিজের গোছানো সাজানো সংসারটা ধমকা হাওয়ার ভেঙে যে দেই কি করে ? জীবনে সবকিছু কি শুধু হারিয়েই যাবো ? আমার জীবনে সুখ নেই !
এতো হারানোর পর যদি নিজের সংসারটা জলে ভেসে যেতে দেখি তাতে কি আমার রাগ জেদ কষ্ট হবে না ?
আমি সুপ্তির দিকে আবার তেড়ে গেলে শেফা আমাকে আটকায় । শেফা আমাকে সোফায় বসিয়ে দেয় । আমার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে,

– “কি করছিস তুই । পাগল হয়ে গেছিস ? শান্ত হ ! ”

– “শান্ত হবো ? কি করে ? নিজের স্বামীর প্রাক্তনকে তারই ফ্লাটে দেখে কি করে শান্ত হবো আমি ? ”

– “হুর সুপ্তি প্রেগন্যান্ট । ”

আমি এতোক্ষন লক্ষ করিনি । ভালো করে খেয়াল করে দেখি সুপ্তি সত্যি প্রেগন্যান্ট । দেখে মনে হচ্ছে আট মাসের অন্তসত্তা । আমি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করি । সুপ্তির দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলি,

– “কি চাই তোর ? কেন অগ্নির জীবনে ফিরেছিস ? ”

সুপ্তি আমার দিকে বাঁকা রাগী চোখে তাকিয়ে উত্তর দেয় ,

– “অগ্নি আমার ।আমি আমার অগ্নির জীবনে ফিরেছি ।
তোর অগ্নির উপর যতটা অধিকার আমারো ঠিক ততটাই অধিকার । বরং তোর চেয়ে বেশি আমার অধিকার ! ”

– “তোর অধিকার মানে! তোর কিসের অধিকার ? আমি অগ্নির বিবাহিত স্ত্রী । ”

– “আর আমি অগ্নির বাচ্চার মা হবো । ”

সুপ্তির কথা শুনে আমি থম মেরে আছি । কি বলছে ও এই সব ? অগ্নির বাচ্চার মা মানে ?
আমি সুপ্তির উপর হাত উঠিয়েও নামিয়ে দেই । রেগে গর্জন করে বলি,

– ” ফালতু কথা বন্ধ কর সুপ্তি । কার বাচ্চা অগ্নির ঘাঁড়ে চাপাচ্ছিস ? ”

– “আমার গর্ভের সন্তান অগ্নির ”

– “আমি মানিনা । অগ্নি আর যাই করুক কখনো এ কাজ করবে না । নিশ্চিত তুই অগ্নিকে কোনো ট্যাপে ফেলেছিস । আমি এখনি অগ্নি কে ফোন করবো । অগ্নি এখনি সবটা ক্লিয়ার করবে । তার পর তোর ঘাঁড় ধাক্কা দিয়ে বের করবে । ”

ব্যাগ থেকে ফোনটা হাতে নিতেই সুপ্তি আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয় । আমি ফোন নিতে গেলেই সুপ্তি চেঁচিয়ে বলে,

– “কি শুনতে চাস অগ্নি থেকে এই বাচ্চা কি করে হলো ? এই বাচ্চা আমার আর অগ্নির ভালোবাসার চিহ্ন । তোর বিয়ের আগে আমি আর অগ্নি কাছাকাছি ছিলাম । আর এই বাচ্চা আমাদের সেই বিশেষ মুহূর্তের চিহ্ন । তুই আমাদের মাঝে এসেছিস । আমার আর অগ্নির মাঝে ।”

– “এতোই যখন তোদের ভালোবাসা তাহলে বিয়ে আগে পালিয়েছিস কেন ? ”

সুপ্তি আমতা আমতা করে উত্তর দেয় ,

– “আমি আদ্রিতা আন্টির ভয়ে পালিয়েছি । বিয়ের সাপ্তাহ আগে জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট । খুব ভয়ে ছিলাম এমনিতেই আদ্রিতা আন্টি আমাকে পছন্দ করে না । এই বাচ্চা যদি মেনে না নেয় । আর অগ্নিও যদি তার মায়ের কথায় তাল মিলিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয় । এই ভয়ে পালিয়েছি । ”

আমার সুপ্তির কথায় কেমন যেন সন্দেহ হলো । আমি সুপ্তির দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলি ,
– “অগ্নির সন্তান হলে অগ্নি কেন মেনে নিবে না ? তোর মনে হচ্ছেনা তুই মিথ্যা ভিত্তিহীন কথা বলছিস ?তুই যা বলছিস তা কি আদৌ যুক্তিপূর্ণ ? ”

– “হুর ,তুই মেনে নে আর না নে এটাই সত্যি । এটা অগ্নির বাচ্চা । সত্যি বলতে তুই মানতে চাইছিস না । বুঝতে পেরেছি অগ্নির টাকা লোভে পড়েছি । তাই না ?
এই আরাম আয়েশের জীবন ছাড়তে চাইছিস না । তাই তো ? ”

– ” মুখ সামলে কথা বল সুপ্তি ! গোল্ডডিগার আমি না তুই । যদি অগ্নি এতোই তোকে ভালোবাসে তাহলে আমাকে এসব কেন জানায়নি ? তোকে বাড়িতে তুলেনি কেন ?আমার এখন যা জানার আমি সব অগ্নির থেকেই জানবো । অগ্নিই সব বলবে । ”

আমি ছোঁ মেয়ে সুপ্তির হাত থেকে ফোনটা নেই । অগ্নি কে ফোন দিবো এমন সময়ই সুপ্তি বলে ,

– “কি জানবি অগ্নি থেকে ? অগ্নি তো তোকে এখনো এটাই বলে নি যে অগ্নি ই অরন্য ! ”

সুপ্তির কথায় আমার হাত থেকে ফোন পরে যায় । আমি থম মেরে বসে আছি । সুপ্তির কথা আমার কানে বাজছে । মাথাটা ঝিমঝিম করছে ।আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসতে নেয় । জোর করে খুলি । সুপ্তি আবার বললো ,

– “হ্যা । অগ্নিই অরন্য । সেদিন পহেলা বৈশাখের ফাংশনে অগ্নি এসেছিলো । দূর থেকে যখন তোকে দেখে অগ্নি তখন ফিরে যায় । অগ্নির তোকে পছন্দ হয়নি । সত্যি বলতে তুই অনাথ তাই তোকে পছন্দ করেনি ।অগ্নির তোর মত মিডেল ক্লাস মেয়ে চাইনা । তাই তোর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় । তারপর আমার সাথে পরিচয় হয় অগ্নির। আস্তে আস্তে আমরা একে অপরের প্রেমে পরি ।আমাদের সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে । আমি নিজের বোকামির বসে অগ্নিকে ছেড়ে চলে যাই । আর তোর অগ্নির সাথে বিয়ে হয় । কিন্তু প্রথমে অগ্নি তোকে মেনে নিতে পারেনি । পরে আস্তে আস্তে তোর মোহতে পড়েছে । শত হোক পুরুষ মানুষ তো এক ছাদের নিচে থাকতে দুর্বল হয়ে গেছে । কিন্তু তোকে কখনো ভালোবাসেনি । তোর মায়ায় পড়েছে । তোকে দয়া করেছে ।
অগ্নি আজও আমাকে ভালোবাসে । তাই তো আমাকে নিজের ফ্লাটে উঠিয়েছে । হসপিটালে সব জায়গায় নিজের স্ত্রীর পরিচয় দিয়েছে । বিশ্বাস হয় না তো ? ওয়েট ! ”

সুপ্তি ভিতরের রুম থেকে ওর মেডিকেল ফাইল এনে আমার সামনে রাখে । যেখানে লিখা সুপ্তির নামের শেষে অগ্নির নাম । ফাইলে অগ্নির সাইন আছে । সব দেখে আমি থম মেরে বসে আছি ।আমি কার এতোদিন সংসার সাজালাম ? কাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসলাম ? একটা প্রতারক কে ! যে একবার না বার বার আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমার সাথে ঠকিয়েছে । আমি তাকেই আবার অন্ধের মত বিশ্বাস করলাম ।কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত আমার প্রচেষ্টা ছিলো আমি এই সংসার বাঁচাবো । যে কোনো মূল্যেই হোক অগ্নিকে নিজের থেকে দূরে যেতে দিবো না । কিন্তু এখন আমার অগ্নির চেহারা দেখার ইচ্ছা নেই । পৃথিবী তে সবচেয়ে ভয়ংকর অস্র হলো বিশ্বাসঘাতকতা । এই অস্র যে কোনো মানুষকে তিলে তিলে খুন করার জন্য যথেষ্ট । আমি সেই ভয়ংকর অস্রে ঘায়েল হয়েছি । এই প্রতারক কে ঘৃণা করি । সে অগ্নি বা অরন্য যাই হোক না কেন আমি তাকে ঘৃণা করি । শুধুই ঘৃনা ।

আমি আর টু শব্দ পর্যন্ত করিনা । চুপচাপ ফ্লাট থেকে বেরিয়ে আসি । শেফা সারারাস্তা আমাকে বোঝায় কিন্তু শেফার কোনো কথা আমার কান পর্যন্ত আসেনা । কষ্ট পাথর হয়ে গিয়েছিলাম । আর হবো নাই বা কেন ? আঘাত তো আর কম পাইনি ।
শেফা আমার রাতে বাড়ি পৌছিয়ে দেয় । রাতে আমার সাথে থাকতে চাইলে আমি না করি । সাথে কড়া করে নিষেধ করি আজ যা হয়েছে তা যেন কাউকে না জানায় ।
সারারাত নিদ্রাহীন ভাবে কাটাই । বাড়ির প্রত্যেকটি দেয়াল ছুঁয়ে দেই । এই ছয়টা মাসে এই বাড়ির মায়ায় পড়ে গেছি । বাড়ির প্রত্যেকটা দেয়াল যেন আমার আপন হয়ে উঠেছে ।মায়ের রুমে গিয়ে মায়ে ছবিটায় একবার হাত বুলিয়ে আসি । এই ছয়টা মাসের প্রত্যেক জিনিস মিথ্যা হলেও মায়ের সাথে আমার সম্পর্কটা ছিলো সত্যি । মনের সম্পর্ক । সেখানে কোনো মিথ্যার ছায়া ছিলো না । আমি নিজের রুমে এসে ব্যাগ গুছিয়ে নেই । রাতে চম্পা এসে জানায় অগ্নি আমার ফোন বন্ধ পেয়ে চম্পার কাছে কয়েকবার ফোন করেছে । আমার খবর নিয়েছে । কাল বিকেলে অগ্নি ঢাকায় ফিরবে । আমি চম্পার কথায় শুধু দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ি ।

“”এই শহরের প্রত্যেকটা অলিগলি যেন তার প্রতারণার সাক্ষী । এই শহর আমার জন্মভূমি হলেও আজ এই চেনা শহর প্রতারকের । এখানে প্রান ভরে নিশ্বাস নেওয়া দুষ্কর ।প্রত্যেক টা নিশ্বাস যেন বিষাক্ত । যে শহরে বেঈমানির ছায়া রয়েছে সেই শহর পরিত্যাগ করাই উত্তম । “”

এতটুকু লিখেই “শত ডানার প্রজাপতি ” বন্ধ করে ব্যাগে রাখি । সকাল আটটা আমি ট্রেনে জানালার পাশে বসে আছি । কিছুক্ষণের মাঝেই ট্রেন ছাড়বে । ভাঙাচুরা ফোনটা হাতে নিয়ে অন করি । ফোন খুলতেই শতশত মেসেজ অগ্নির নাম্বার থেকে । আমি কোনো টেক্সট পড়ি না । ছোট্ট একটা টেক্সট পাঠাই ,

– ” আমি আমার কথা রাখছি ,আপনার জীবন থেকে সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছি । আমাকে খোঁজার চেষ্টা করবেন না । দিন শেষে প্রতারক গুলো ভালো থাকে । আপনাদের নতুন জীবন সুখের হোক । ”

ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে । চলতি ট্রেন থেকে ফোনটা জানালার বাহিরে ছুঁড়ে মারি । সিটে গাঁ এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে পেটে হাত রেখে বলি ,

– “আমার দুনিয়া শুধু তোকে নিয়ে । তোর উপর কোনো প্রতারকের ছায়া পড়তে দিবো না ।আমিই তোর মা আর আমিই তোর বাবা হবো ! ”

চলবে…..❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জনাবেন । ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ।