শত ডানার প্রজাপতি বোনাস পার্ট

0
3640

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

🦋বোনাস পার্ট🦋

“আজ দুমাস পাঁচ দিন ।সেই চেনা শহর ছেড়ে এসেছি । খুব অল্প সময় হলেও আমার জীবনের বিরাট পরিবর্তন এসেছে । ঋতু পরিবর্তন হয়েছে ।জীবন নতুন করে শুরু করেছি । কিন্তু পুরানো স্মৃতি আজো পিছু ছাড়েননি । সারাদিন হাসি খেলে পাড় করলেও রাতটা কাটে নিদ্রাহীন । শরীর আস্তে আস্তে বাড়ছে । শরীরটাও দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ।আমার গর্ভে নতুন প্রাণ বেড়ে উঠছে । ”

এতোটুকু লিখেই ডাইরি টা বন্ধ করলাম । হ্ঠাৎ ই তানিন আমার পাশে এসে বসে জড়িয়ে ধরে । মিষ্টি হেসে তার দিকে তাকাতেই তানিন বলে ,

– “ফুপিমনি !!!! ”

– “হুম বাবাই ”

– “তোমার পেট টা এতো বড় কেন ? ”

– “এখানে একটা ছোট্ট বাবু আছে তাই ”

তানিন ভীতু গলায় বলে,

– “ও মাই গড । তুমি বাবু খেয়ে ফেলেছো ? ”

আমি তানিনের কথায় গাঁ কাঁপিয়ে হেসে দেই ।

– “না বাবাই ”

– “তাহলে বাবু পেটে কি করে গেল ? ”

– “এটা তো অনেক কঠিকপ্রশ্ন ! উমমমম,আল্লাহ্‌ দিয়েছে । ”

তানিন কিছুক্ষণ ভেবে বলে ,

– “তাই! বাবু হলে কি যখন আসবে তখন কি তুমি আর আমাকে আদর করবে না ? ”

– “অবশ্যই! আমার বাবাইকে তখনো এতো গুলো আদর করবো । ”

বলেই তানিনের গালে চুমু খাই । কিন্তু তানিন তখনো ভাবনায় বিলিন । কিছুক্ষণ পর আবার প্রশ্ন করলো,

– “তখনো আমার সাথে কি এভাবে খেলবে ? ”

– “হুম । তখন আরো বেশি খেলবো । আমি তুমি আর বাবু একসাথে খেলবো । কেমন ? ”

তানিন বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বলে,

– “তাহলে তো অনেক মজা হবে । আমরা একসাথে অনেক গেম খেলবো ।ঠিক আছে ফুপিমনি ? ”

-“ঠিক আছে বাবাই । কিন্তু এখন তো আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে । লেট হলে মাম্মাম খুব রেগে যাবে ! ”

তানিন বেঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে উঠে দাড়ায় । আমার দিকে তার ছোট হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে ,

– “মাম্মাম বলেছে তোমার খেয়াল রাখতে । আমার হাতটা ধরো আমি তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো । ”

আমি মুচকি হেসে তানিনের হাত ধরি দাড়াই । মিষ্টি করে বলি,

– “ইস ,আমার বাবাইটা না থাকলে আমার কি যে হতো !
কে খেয়াল রাখতো আমার !”

তানিন আমার কথায় আরো খুশি হয়ে যায় । আমার হাত আরো শক্ত করে ধরে বুক ফুলিয়ে সামনের দিকে বড় বড় পা ফেলে । খুব দায়িত্ব সহকারে মায়ের আদেশ পালন করছেন । তার ভাবভঙ্গি এমন যেন বড় মানুষটা ! কে বলবে এই ছেলের বয়স পাঁচ বছর !

দুজন কথা বলতে বলতে বাড়ি চলে আসি । বাড়িতে ডুকতেই দেখি ড্রইং রুমে কয়েকজন লোক । ভাইয়ার সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে ।সিলেটে নাম করা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আমার চাচা ছিলেন একজন । উনার মৃত্যুর পর ভাইয়াই সবটা সামলিয়েছে । চাচা অনেক চেয়েছে আমাকে নিজের কাছে রাখতে কিন্তু মামা দেয় নি । মামার একটাই কথা ছিলো “নিজের বোনের শেষ চিহ্ন নিজের থেকে দূর করবেনা ” ।
ভাইয়া আমাকে আর তানিনকে দেখে হেসে বলেন,

– “আরে তোমরা এসে গেছো ! তো কেমন কাটলো তোমাদের দিন ? ”

আমি মুচকি হেসে বলি,

– “জি ভাইয়া ভালো । আমি আর তানিন আজ খুব খেলেছি । তাই না তানিন? ”

– “ইয়া ফুপিমনি । জানো পাপ্পা আমি ফুপিমনির খুব খেয়াল রেখেছি । ”

ভাইয়া খুশি হয়ে বলে,

– “বাহ ! আমার বাবাটা তো অনেক বড় হয়ে গেছে ।”

তানিন ভাইয়ার কথায় বড়দের মত ভঙ্গি করে দাড়ায় । আমি ভাইয়া কে জিগ্যেস করি,

– “ভাইয়া ,ভাবী কোথায় ? ”

– “আশা কিচেনে আছে । তোমাদেরই অপেক্ষা করছে । ”

আমি আর তানিন কিচেনের দিকে যাই । হ্ঠাই আমি লক্ষ করি ভাইয়ার সাথে বসে থাকা একটা লোক আমার দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে । আমি ভ্রু কুঁচকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেই । এই লোকটা কে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে।কোথায় যেন দেখেছি ঠিক মনে পড়ছে না !

ভাবী কিচেনে নাস্তা রেডি করছে । আমি আর তানিন যেতেই ভাবী আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে ,

– “কি খবর আপনাদের ফিরতে এতো লেট হলো যে ? ”

– “এইতো ভাবী খেলতে খেলতে লেট হয়ে গেছে । ”

– “সত্যি হুর ,তুমি এখনো বাচ্চা রয়ে গেছো । তবে যাই বলো এই দু মাসে তোমার আর তানিনের ভালো বন্ডিং হয়েছে । তানিন তো কারো সাথে মিশতেই চায়না । কিন্তু ফুপিমনি বলতেই অজ্ঞান ! ”

আমি ভাবীর কথায় মুচকি হাসি । ভাবী বিকালের নাস্তা রেডি করছে । আমি ভাবী কে বলি,

– “ভাবী তুমি সরে দাড়াও । আমি চা করছি । ”

– “হ্যা ,তুমিই করো ।এই দুমাসে খুব বাজে অভ্যাস করে দিয়েছো তোমার চা না খেলে বিকেল কাটে না । অন্যরকম এক স্বাদ আছে । ”

– “মামাও আমার হাতের চা খুব পছন্দ করতো । প্রতিদিন বিকেলে বাড়ি ফিরেই আমার হাতের চা চাই মামার । কিন্তু এখন মামা থেকে কতটা দূরে আছি । ”

হ্ঠাৎ ই মনটা খারাপ হয়ে যায় । ভাবী আমার কাঁধে হাত রেখে বলে,

– “একবার মামার সাথে কথা বলে নিলেই পারো ”

– “না ভাবী তা হয়না । মামার সাথে যোগাযোগ করলে ঠিক ঐ লোকটার কানে পৌছাবে । আমি নতুন করে কোনো ঝামেলা চাইনা । ঐ লোক তার নতুন জীবন নিয়ে ভালো থাকুক । ”

আমার মন খারাপ দেখে ভাবী বললেন,

– “আচ্ছা এসব ছাড়ো । কাল তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছো তো ? ”

– “কোথায় ভাবী ? ”

– “ওমা ভুলে গেছো ? কাল না পহেলা বৈশাখ । এখানে এক ভার্সিটিতে বড় করে আয়োজন করা হবে । তুমি কিন্তু আমাদের সাথে যাচ্ছো ! ”

– “এই পাঁচ মাসের পেট নিয়ে ? ”

– “তাতে কি ? আমি তো তানিনের সময় কতো ঘুরাঘুরি করেছি । কিছু হবে না । তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছো মানে যাচ্ছো । অনেক মজা হবে । তানিন ও খুব খুশি হবে । ”

আমি আর ভাবী কে না করতে পারিনা । পহেলা বৈশাখ নাম শুনেই বুকে ভয় চেপে বসে । এক পহেলা বৈশাখের ঝড় আমার জীবন তছনছ করে দিয়েছে । না জানি কাল কি হয় । যাই হোক কিন্তু দু মাস আগে ফেলে আসা সেই অতীতের সম্মখীন যেন কোনো ভাবে না হই !

চলবে …..❤️