শহর জুড়ে আলোর মেলা পর্ব-২১

0
479

#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:২১

শীতের শুরু, আবহাওয়া হঠাৎ পরিবর্তন হয়েছে। দিনে গ্রীষ্মের প্রখর গরম আর শেষ রাতে গা হিম করা শীত পড়ছে। জায়গা পরিবর্তনের জন্য বা নিয়মকানুন বিঘ্নিত হওয়াতে ইশার প্রচণ্ড জ্বর এসেছে। তুলি সকালের ট্রেনে হোস্টেলে ফিরে গেছে। ইকবাল মাহমুদের গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং ছিল উনি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছেন বিকেলে। আগামী দুইদিন তাকে পাওয়া কঠিন। বাড়িতে শুধুমাত্র লিমা বেগম ছিলেন। আলো শ্রাবণে সঙ্গে আছে উনি সেটা জানেন। ইশাকে নিয়ে সমস্যা ছিল না হঠাৎ জরের জন্য সবটা উল্টোপাল্টা গেলো। ওষুধে কমছে না। হাসপাতালে নিতে হবে। নিজেদের ক্লিনিকে যে শিশু ডাক্তার ছিলেন উনি অন্য ক্লিনিকের ভিজিটে আছে। তাছাড়া ইকবাল সাহেবের ফোন বন্ধ। বাধ্য হয়ে শ্রাবণকে ফোন করতে হলো। বিপদের উপরে বিপদ না আসলে তাকে বিপদ বলে না। শ্রাবণ আলোকে নিয়ে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরলো। ইশা জ্বরের ঘোরে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। লিমা বেগম কান্নাকাটি করছেন। উনার হাই পেসার, অতিরিক্ত উত্তেজনা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। শ্রাবণ তাড়াতাড়ি গিয়ে ইশাকে কোলে তুলে নিলো। অন্য হাতে ফোন বের করে ক্লিনিকে ফোন করে খোঁজ কররো কোনো শিশু ডাক্তার আছে কিনা। ফলাফল শূণ্য তবে আশা ছাড়েনি। শ্রাবণ চলতে চলতে কথা বলছে। আলোর ওর পিছু ছুটলো। লিমা বেগমকে বলে দিলো চিন্তা না করতে। শ্রাবণের পরিচিত একটা ক্লিনিক আছে সেদিকে গাড়ি ঘোরালো। অপেক্ষা করার সময় নেই। ভীষণ রাগ হলো বাবার উপরে। এভাবে কেউ ডাক্তার রাখে? প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না।ভাড়া করে আনতে হয়। আলো কান্নাকাটি করছে। বোনের শেষ চিহ্ন। ওর কিছু হলে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না। শ্রাবণ মাঝেমাঝে ধমক দিচ্ছে চুপ করতে। হাসপাতালে পৌঁছাতে ওদের পনেরো মিনিট লাগলো। চেনাশোনা জায়গা তাছাড়া শ্রাবণকে চিনেনা এখানে এমন কেউ এখানে নেই। লিখন দৌঁড়ে আসলো বন্ধুর ফোন পেয়ে। তাড়াতাড়ি ইশাকে নিয়ে ইমারজেন্সির দিকে ছুঁটলো। কথায় বলে অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়। তেমনি পরিস্থিতি। শিশু ওয়াডের ডাক্তার কুহেলী চৌধুরী। কিছু করার নেই। শ্রাবণ আর আলো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। টেনশনে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আলো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। থরথর করে কাঁপছে। মেয়েটা এসব নিতে পারেনা। প্যানিক এ্যাটাকের সমস্যা আছে। শ্রাবণ গিয়ে ওকে ধরলো। পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলল,

> ইশু ঠিক হয়ে উঠবে চিন্তা করোনা। বিপদের সময় ধৈর্য্য ধরতে হয়। শান্ত থাকো।

আলোর ভয় লাগছে প্রচুর।সেবার বোনকে জীবিত এনে লা*শ নিয়ে ফিরেছিলো। বুক ধড়ফড় করছে। শ্রাবণ অশান্ত এলোমেলো আলোর মুখের দিকে চেয়ে বারবার থমকে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে যেই মেয়ে রণাঙ্গনে যু*দ্ধ করে ফেরার মতো একজন যুবককে কি*ডন্যা*প করে পিটাতে পারে,সেই মেয়ে পরিস্থিতি আর সময়ের পরিবর্তনে নিজের প্রিয়জন হারানোর বেদনাতে ভেঙে পড়ছে। ভাবা যায় না। নারী বুঝি এমনকি হয়। তার এক চোখে স্বামী সন্তান প্রিয়জন অন্যচোখে জাগতিক বিষয় । এক হস্তে সবটা সামলাতে দক্ষ। শ্রাবণ নিজেও অশান্ত হয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে লিখন বের হলো। কোনোরকমে ওষ্টে হাসি টেনে বলল,

> চিন্তার কিছু নেই। কুহেলী দেখছে। জ্বর কমে যাবে কিন্তু আপাতত এখানে থাকতে হবে। সেলাইন দিয়েছি। ওকে কেবিনে নিয়েছি। থাকতে অসুবিধা হবে নাতো?

শ্রাবণ বিরক্ত হলো। থাকতে পারবে না এটা কেমন কথা? তাছাড়া অন্য কারণে ওর অস্বস্তি লাগছে। শ্রাবণ কথা চেপে রাখতে পারলোনা। বলে দিলো,

> তোর এখানে অন্য ডাক্তার ছিলো না? শেষমেশ আমার মেয়ের চিকিৎসা কুহেলীর হাতে ছাড়তে হলো? যদি কিছু হয়েছে আমি কিন্তু তোর ক্লিনিকের উপরে বো*ম ফেলবো।

লিখন মুখটা কুঁচকে ফেললো। শ্রাবণের দ্বারা এমন কাজ হতেই পারে। অস্বভাবিক কিছু না। চাপা কণ্ঠে বলল,

> ডাক্তার হিসাবে ও খারাপ না। বিদেশ ফেরত ডাক্তারের বাংলাদেশে কেমন চাহিদা জানিস না? ওকে পেয়ে জনগণ হামলে পড়েছে। বেচারী কতটা যত্ন নিয়ে মেয়েটাকে দেখছে জানিস? হুদাই তুই ওরে দোষারোপ করিস।

> এতোই যখন চাহিদা ওকে বিয়ে করে নে না।আমি সিউর ও আমার মেয়ের ডিএনএ টেষ্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করার পাইতারা করছে। ওরে হাড়ে হাড়ে চিনি আমি। এতোটা দর‍দ আমার মেয়ের জন্য ভাবতে পারছি না। আমি কেবিনে যাচ্ছি। কেমন সন্দেহ হচ্ছে।

শ্রাবণ অপেক্ষা করলো না। আলো আগেই চলে গেছে। লিখন হতাশ হলো। একবার কারো বিশ্বাস ভাঙলে সত্যি পরবর্তীকালে আর বিশ্বাস অর্জন করা মুশকিল হয়ে যায়।
*********
ইশার জ্বর সামান্য কমেছে সেই সঙ্গে মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে। আলো ওকে কোলের মধ্যে ধরে বসে আছে। নড়াচড়া করলে সেলাইনের সুচ ফুঁটে যাবে। শ্রাবণ বাইরে থেকে ওষুধ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে থমকে গেলো। ইশা বমি করে অস্থির করে তুলেছে। শ্রাবণ আবার ছুঁটলো লিখনের নিকট। আলোর সারা কাপড় নোংরা হয়ে গেছে। তবুও মেয়েটা সেদিকে পাত্তা দিচ্ছে না। ইশার মাথায় পানি দিচ্ছে। শ্রাবণ ফিরে এসে ইশাকে ধরলো। লিখন ওর সঙ্গে এসেছে। ইশার কাপড় কিছু এনেছিলো আলো। সেটা পরিবর্তন করে দিলো। লিখন বলল,

> জ্বরের জন্য বমি হচ্ছে। এখুনি ঘুমিয়ে পড়বে। জ্বর হলে বাচ্চারা এমন করে।
শ্রাবণ ধমক দিলো,

> তোরা ডাক্তাররা হচ্ছিস কসাই।ম*রা মানুষকে জীবিত হওয়ার আশ্বাস দিতে দু’বার ভাবিস না। আবারও চেক কর। কিসের ওষুধ দিয়েছিস জ্বর কমেনি উল্টো শরীর খারাপ হচ্ছে। সময় থাকতে এখুনি বল আমি অন্য ডাক্তার ডাকি।

লিখন মুখটা করুণ করে চাইলো। জ্বর পড়তে সময় লাগবে। ওষুধ দিলেই কি রোগ সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়? কোনোরকমে বুঝিয়ে শুনিয়ে বলল,

> দোস্ত মাথা ঠান্ডা কর। ভাবি কান্নাকাটি করে অস্থির করছে তুই হুমকি দিয়ে আমাকে অস্থির করছিস। কথা দিচ্ছি ইশু মায়ের কিছু হবে না। জাষ্ট আজকের রাতটুকু। নতুন বাবা মা হয়েছিস তাই বুঝতে পারছিস না। পরবর্তীকালে ঠিক হয়ে যাবে।

শ্রাবণ চোখ রাঙিয়ে ওকে কেবিন থেকে বের করে দিলো। রাহিকে ফোন করলো তাড়াতাড়ি বাইরে থেকে আলোর জন্য কাপড় আনতে। ওকে থানায় যেতে হয়েছিলো। রাত একটা বেজে চল্লিশ মিনিট। কাপড়ের দোকান বন্ধ। রাহিন সারাদিন দৌঁড়াদৌড়ি করে ক্লান্ত। কিছুতেই রাজি হলোনা আসতে। বরং একটা ভয়ানক কুবুদ্ধি দিয়ে ফোন রেখে দিলো। শ্রাবণ নিরুপায় হয়ে নিজের শার্ট খুঁলে আলোর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

> চেঞ্জ করে আসো। রাতটুকু এটাই সম্বল। সকালে পোশাক পেয়ে যাবে। বাসা থেকে আনতে গেলে সময় লগবে। মেয়েটাকে এভাবে রেখে যেতে ভরসা পাচ্ছি না। আমি গেলে তুমি সামলাতে পারবে না।

আলো মাথা জানিয়ে দিলো পারবে না। একা থাকতে ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে যদি কিছু হয়ে যায়? বোনের মুখটা চোখের সামনে ভাসছে। শ্রাবণের থেকে শার্ট নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লো। শ্রাবণ ততক্ষণে ইশারকে কোলে নিয়ে বসে আছে। বাচ্চাটা এতো হাসিখুশি আর কিউট যেকোনো মানুষ দেখলে আদর করতে বাধ্য। শ্রাবণ অভ্যাস অনুযায়ী ইশার গালে কয়েকবার চুমু বসিয়ে দিলো। বাবাদের যে অনেক দায়িত্ব। তাছাড়া যার ভবিষ্যতের চিন্তা করে নিজের জীবনের বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল তাকেই যদি অবহেলা করা হয় তাহলে কেমন হয়? শ্রাবণ ভাবতে ভাবতে আলো বের হলো। দেখতে কেমন কিংবদন্তি লাগছে। শ্রাবণ কিছু বলতে চাইলো তখনই দরজায় নক পড়লো। কুহেলী রাউন্ড শেষ করে ইশাকে দেখতে এসে থমকে গেলো।মনে হচ্ছে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ক্লিনিকের এই ছোট কেবিনটা জুড়ে সুখী একটা পরিবার নিজেদের বসতি গড়ে তুলেছে।দেখে বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো। দুঃখ যত ছিল সব হানা দিলো মনের মধ্যে। শ্রাবণের গায়ে সাদা রঙের টিশার্ট আছে। সেদিকে চেয়ে আরেকবার আলোর দিকে চেয়ে মলিন হেসে বলল,

> আমাকে বলতে,আমি ওর ড্রেসের ব্যবস্থা করতাম। তুমিতো এমন ছিলে না শ্রাবণ? নিজের ব্যবহৃত কোনো কিছু অন্য কাউকে সেয়ার করতে বরাবর অপছন্দ ছিল তোমার।

শ্রাবণ ইশাকে খানিকটা নিজের কোলের মধ্যে টেনে নিয়ে বলল,

> আগে কি আমার দশটা বউ ছিল? অদ্ভুত কথাবার্তা বলতে তুই এখানে এসেছিস? গোটা আমিটাই যখন আমার নেই সেখানে সামান্য শার্টে আর কি এমন হচ্ছে? ভংচং ছেড়ে আমার মেয়েকে পারলে সুস্থ করার চেষ্টা কর। কৃতজ্ঞ থাকবো।

কুহেলী এগিয়ে আসলো। ইশার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে জ্বর চেক করে বলল,

> মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসিস? তোর এই অমূল পরিবর্তন দেখবো কখনও ভাবিনি। বারবার ভাবি আমি নিজেকে আর তোর নিকট সস্তা করতে আসবো না। কিন্তু বিশ্বাস কর ভালোবাসলে বুঝি বেহায়া হয়ে উঠে মানুষ। নিজের মনের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি। বাবার শরীর ঠিক নেই তাই আর ফিরে যায়নি।ভাবছি এখানে সেটেল হবো।

শ্রাবণ ইশাকে আলোর নিকট দিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। এই যে কুহেলী এসেছে এতো সহজে যাবে বলে মনে হচ্ছে না। রাহিনের উপরে অযথা মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আজ হয়তো ধকল বেশি গেছে। শ্রাবণ ওকে দৌঁড়ের উপরে রাখে। এখন এই কুহেলীকে ঘর থেকে বের করা আর যুদ্ধ জয় করা সমান মনে হচ্ছে। শ্রাবণ কিছু একটা ভেবে বলল,

> তুই লিখনকে নিয়ে ভাবতে পারিস। বেচারা আজন্ম সিঙ্গেল। তোকে পছন্দ করে। হয়তো লজ্জায় বলতে পারছে না। এক সঙ্গে আছিস কথাবার্তা বল আশাকরি ভালো লাগবে। ভালোবাসা একটা অভ্যাসের নাম। আমাকে ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু কর। বউ বাচ্চা ফেলে আবার বিয়ে করবো বা পরকিয়া করবো ওসব আমার দিয়ে হবে না। সোজাসাপ্টা বলতে আমার পছন্দ।

কুহেলী চোখের পানি মুছে বেডের একপাশে বসে পড়লো। আলো মহা বিরক্ত। একেতো মেয়ে অসুস্থ তারমধ্যে বউয়ের সামনে এরা প্রেম পিরিতি নিয়ে আলোচনা করছে। আলো আড়চোখে তাঁকিয়ে শ্রাবণকে দেখে নিলো। এমনিতেও লজ্জা লাগছে। শার্টের হাতা অতিরিক্ত লম্বা।মনে হচ্ছে এর মধ্যে আরেকজন চলে আসবে এমন ঢিলেঢালা। কেউ দেখলে রাস্তার ফকির বলতে দুবার ভাববে না। শ্রাবণের সেদিকে খেয়াল থাকলে তো। এসব ওর কাছে ভীষণ নরমাল। আলোর মাঝে মাঝে ওকে রোবট মনে হয়। কুহেলীর আচরণে মনে হচ্ছে আলো কোনো বাইরের লোক। স্ত্রীর সামনে তার বরকে ভালোবাসার কথা বলাটা কোন লেভেলের বেহায়ার কাজ আল্লাহ মালুম। আলো ভ্রু কুঁচকে বলল,

> আপু উনাকে নিয়ে আপনি বরং বাইরে গিয়ে আলোচনা করুন। আমার বাচ্চার ঘুমের অসুবিধা হচ্ছে। বিষয়টা কেমন জানি দৃষ্টিকটু লাগছে। গালিগালাজ আর অপমানজনক কথা শোনার পরেও যখন আপনার হৃদয়ে এতো ভালোবাসা রয়েছে। আমার মনে হয় কেসটা খুব জটিল। আমার বর না সেতো আবার বর্বর।

শ্রাবণ ঠোঁট চেপে হাসলো। আলোর মুখটা লাল হয়ে আছে। মেয়েটা অনেক ক্লান্ত সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। হয়তো সারাদিনে দানা পানি কিছু পেটে পড়েনি। মুখটা চিটচিটে হয়ে আছে। ইশার জন্য এসি বন্ধ আছে। ফ্যানের বাতাসে গরম বেশি লাগছে। শেষ রাতে ঠান্ডা পড়বে। শ্রাবণ বিষয়টা ভেবে নিয়ে বলল,

> কুহেলী তুই বাইরে যা আমি কিছুক্ষণ পরে দেখা করব। ইশু ঘুমাচ্ছে এই সুযোগে আলোর বিশ্রাম করা জরুরি।

কুহেলী খুশী হলো। শ্রাবণ দেখা করবে ভেবে আহ্লাদে আটখান। মেয়েটার বোধ বুদ্ধি সত্যি কমে গেছে। ডাক্তার হিসেবে খারাপ না। বেশ ভালো। মানুষের মন কখন যে কোথায় গিয়ে আটকে যায় বলা কঠিন। ওকে যেতে দেখে শ্রাবণ উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো। পাশের জানালা খুঁলে দিয়ে বলল,

> আমি বর্বর বিষয়টা জানলে কিভাবে? অত্যাচার করেছি?থাপ্পড় দিয়েছি?নাকি জবরদস্তি করে অনধিকার চর্চা করেছি? কিছুই করিনি। এখনো পযর্ন্ত কাছাকাছিও আসিনি। মানে কি ভাই? কিছু না করে যদি আমি অত্যাচারী হয়ে যায় তাহলে করাই ভালো। এইযে এলোমেলো পোশাকে আমার সম্মুখে বসে আছো আমি ভালো ছেলের মতো নজর পযর্ন্ত দিচ্ছি না। বিষয়টা ভালো লাগছে না? নাকি আমাকে পুরুষ মনে হচ্ছে না? আমিতো আর মহাপুরুষ সন্যাসী না। চোখ আছে, জানা মতে হরমোনের কোনো গণ্ডগোল নেই। শ্রাবণ মাহমুদ একবার হৃদয় ভাঙার হাহাকার সহ্য করেছে। আর কখনও করবে না প্রতিজ্ঞা করেছে। জাষ্ট এই কারণে তুমি ছাড় পাচ্ছো। তাও জানিনা কতদিন পাবে।

শ্রাবণের এলোমেলো একরোখা কথা শুনে আলোর চোখ কপালে। এর মধ্যে দরজায় পূণরায় ঠকঠক আওয়াজ হলো। শ্রাবণ আলোর উত্তর শোনার অপেক্ষা করলোনা। দরজা থেকে সামান্য উঁকি দিয়ে বলল,

> বা*লের ক্লিনিক এসে জানের জ্বাল হয়ে গেলো। বউয়ের সঙ্গে যে একটু কথাবার্তা বলবো তারও উপায় নেই ।

রাহিন এসেছে পোশাক আর খাবার নিয়ে। রাত অনুমানিক তিনটা পার হতে চলেছে। শ্রাবণের কথা শুনে দাঁত বের করে বোকার মতো হেসে বলল,

> ভাই এটা হাসপাতাল। এখানে ওসব করলে আল্লাহ পাপ দেয়।

শ্রাবণ সোজা বেরিয়ে গিয়ে ধমক দিলো। ওর হাত থেকে পোশাক নিয়ে আলোর নিকট দিয়ে গেলো। চেঞ্জ করা অতি জরুরি। বারবার লোকজন আসছে। রাহিন বুঝিয়ে বললো। একটা পযর্ন্ত থানায় ছিল। আরাফের বাবা আর চাচা ছেলেকে ছাড়িয়ে নেয়ার বহু চেষ্টা করেছে। বিশ লাক টাকা অফার করেছিলো কিন্তু পুলিশ ছাড়েনি। থানা সেক্রেটারির ভাতিজার দ্বারা এমন কাজ হয়েছে সকাল হতে হতে এলাকা ছড়িয়ে পড়বে। সম্মান যাবে । শ্রাবণ বুঝতে পারলো রাহিনের অবস্থা তাই ছেড়ে দিলো। ও নিজেও এখান থেকে বাইরে গিয়ে আনতে পারতো কিন্তু কুহেলীর প্রতি বিশ্বাস নেই। শ্রাবণকে না পেয়ে যদি পাগলামি করে ইশার কিছু করে তখন?
***************
থম মেরে বসে আছে রতন। যা কখনও কল্পনা করতে পারেনি সেটাই হয়েছে। রাকা ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়েছে। সঙ্গে থানায় নারী নির্যাতনের মামলা দিয়েছে।স্বামী সংসার ছেড়ে সামান্য কারণে কোনো মেয়ে এভাবে চলে যেতে পারে বলে ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। নিজে যে অপরাধ করেছে সে খেয়াল নেই। ভাবছে রাকার চরিত্রের সমস্যা আছে। অথচ সেই মেয়েটার সঙ্গে এতগুলো দিন সংসার করেছে।ভাবে মেয়ে মানুষের আবার মন আছে নাকি? যখন যেটুকু প্রয়োজন স্ত্রীর থেকে সেটুকু পেলেই খুশী। রাকা ভালো বউ হওয়ার সবরকমের চেষ্টা করেছে দিনশেষে ভালো বউয়ের সার্টিফিকেট পেয়েছে ঠিকই কিন্তু নিজের উপরে করেছে চরম অবিচার। দাঁতে দাঁত চেপে এই বাড়ির প্রতিটা মানুষের মন যুগিয়ে চলেছে। কোনো বিষয়ে মতামত দেবার স্বাধীনতা ছিল না। না ছিলো স্বামীর ভালো খারাপ নিয়ে কথা বলার সাহস। রতন বেশ রাত করে বাড়িতে ফিরে। মাঝে মাঝে লোকের সঙ্গে ঝামেলা করে। এসব বলতে গেলে রাকাকে মা*র*পিট করতে ছাড়ে না। ঘর বন্ধ করে পি*টিয়ে হু*মকি ধামকী দিয়ে বিষয়টা ধামাচাপা দিয়ে এতোদিন চলে এসেছে। স্ত্রী কি স্বামীদের দাসি? যদি এমনিই মনেহয় তবে টাকা দিয়ে আগেকার দিনের মতো কৃতদাসি ক্রয় করে আনলেই হয়। বরং মুড অনুযায়ী বছর বছর পরিবর্তন করা যাবে। রাকার সিদ্ধান্তে বাড়ির বাকীরা চটে আছে। ছেলের ভুল কেউ ধরছে না। উনারা রাকার দোষারোপে ব্যস্ত। অনেকে রাকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছে। রতনের বড় চাচি হুঙ্কার ছাড়লেন,

> বউ গেছে ভালো কথা আমাদের ছেলেমেয়ে দুটোকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমি আবারও ধুমধাম করে আমার ছেলেকে বিয়ে দিব। সামান্য কারণে তারা এতোবড় সিদ্ধান্ত নিতে পারলো আমি চুপ থাকবোনা।

রতন চাচির কথায় ফুলে উঠলো। বউ চলে গেলে কি পুরুষের বিশেষ অসুবিধা হয়? হয়না বরং ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করতে পারবে। কিন্তু দুই বাচ্চার মাকে কোন পুরুষে বিয়ে করবে? যদিওবা করে সে নিশ্চয়ই রতনের মতো সুপুরুষ হবে না? গর্বে রতনের বুকের ছাতি ফুঁলে ডাবল হলো। রাকাকে দেখিয়ে দিবে ওর রতনের যোগ্য ছিল না। আসলেও কি পারবে দেখাতে?

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।