শহর জুড়ে আলোর মেলা পর্ব-২২

0
251

#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২২

বাচ্চা যখন জন্ম গ্রহণ করে তখন সে থাকে পবিত্র। পরিবেশ আর পরিবার তাকে যেভাবে তৈরী করে সে সেভাবে বড় হয়ে উঠে। মানুষ জন্ম থেকে পাপি হয়না। শ্রাবণ বড় মায়ের ফোন পেয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো। সারারাত ঘুম হয়নি। আলো ভোররাতে ঘুমিয়েছে। এতো সকালে ওকে বিরক্ত করার মানে হয়না। শ্রাবণ নিজেও ঘুমিয়ে পড়েছিলো। কপাল ভালো ডাবল বেড ছিল। তবুও ইশা শ্রাবণের কাছে ছিল। শ্রাবণ ঠিকঠাক বাড়িতে থাকতে পরেনা তবুও মেয়েটা ওকে কিভাবে জানি চিনে গেছে। কাছাকাছি থাকার জন্য অকুল হয়ে উঠে। কিসের টান কে জানে। বাচ্চারাও ভালোবাসা বুঝতে পারে। শ্রাবণ বাইরে এসে ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলল,

> কিছু বলবে বড়মা? এতো সকালে ফোন করলে?

ভদ্রমহিলা ঘুম থেকে উঠেই হয়তো ফোন করেছে। কণ্ঠ কেমন কেঁপে যাচ্ছে। গলা ঝেড়ে বলল,

> বাবা ঝামেলা হয়ে গেছে। তোমার রাকা ভাবি ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়েছে। রতনের নামে নারী নির্যাতন কেস করেছে। তুমি পারবে কিছু করতে?

কথাগুলো শুনে শ্রাবণের কাপালে ভাজ পড়লো। বিষয়টা বুঝতে অসুবিধা হলো না। তাই ভনিতা ছাড়া উত্তর করলো,

> অপরাধ না করলে নিশ্চয়ই কিছু করতে পারতাম বড়মা। এই ঝামেলায় আমাকে জড়িয়ে তোমার লাভের লাভ কিছু হবে না। আমি রতন ভাইয়ের বিপক্ষে সাক্ষী দিবো। একজন মেয়েকে দিনের পর দিন অত্যা*চার করে অর্ধেক মা*র্ডা*র করে ফেলেছো। সেখানে আমি কি করতে পারি? আমিতো চাই পৃথিবীর সব মেয়েরা নিজেদের অধিকারটা সঠিকভাবে বুঝে নিক। জানোতো বড়মা অধিক ভালোবাসা সন্তানের ভালোর চাইতে খারাপটা বয়ে আনে। তুমি রতন,লিজা আর মিতুকে দায়িত্ব নিয়ে বড় করেছো। দেখেছো তিনটাই কেমন বিগড়ে গেছে? আমি বলছি না তোমার স্নেহ বা ভালোবাসাতে খাদ আছে। আমি জাষ্ট বলছি ওদেরকে এতোটা সাহস আর স্বাধীনতা দিয়ে তুমি ঠিক করোনি। ভাবি ওকে শাস্তি দিতে চাইছে দিয়ে দিক। তুমিতো পারলে না ওকে সঠিক পথে আনতে যদি অন্যকেও পারে।

ভদ্রমহিলার রাগ হচ্ছে। উনার সন্তান নেই। দেবরের ছেলেমেয়েগুলোকে আদর যত্ন নিয়ে মানুষ করেছেন। এখন তাকে যদি বলা হয় অতিরিক্ত ভালোবাসা দিয়ে তাদের ক্ষতি করা হয়েছে তাহলে কেমন লাগে? উনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

> তুমি কি বলতে চাইছো শ্রাবণ? তোমার বড় মা সন্তান পালনে অক্ষম? রাকা যে সামান্য কারণে স্বামীর ঘর ছেড়ে তাকে অপবাদ দিচ্ছে তার কিছুই না? রতন কি এমন করেছে? স্ত্রী অন্যায় করলে তাকে শাসন করা যাবে না?

> শাসন করা আর নির্যা*তন করা কি এক? আমাদের চাচ্চু কি কখনও তোমাকে কোনো বিষয়ে অহেতুক জোর জবরদস্তি করেছে? নাকি তোমার অনুমতি ছাড়া পরিবারের জন্য কিছু করেছে? তুমি যেটুকু বলো চাচ্চু অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। বরং তোমাকে কখনও চোখের আড়াল করেনা। অথচ রতন ভাইয়া সেসবের তোয়াক্কা করেনা। ভাবিকে সামান্যতম সম্মান পযর্ন্ত দিতে পারোনা তাহলে কিসে জন্য বেচারী তোমাদের পরিবারে বছরের পর বছর পড়ে থাকবে? তুমি নিজেতো একজন স্ত্রী তবে অন্য একজন স্ত্রীর প্রতি অবিচার কেনো?

শ্রাবণের কথা শুনে ভদ্রমহিলা রেগে গেলেন। থমথমে মুখ করে বললেন,

> তোমার চাচ্চু আমার কথা শুনতে বাধ্য হয়েছে শ্রাবণ। তুমি সম্পর্কে আমার ছেলে তবুও সেই গোপন সত্যি আর লজ্জাজনক কথাটা তোমাকে বলতে হচ্ছে। আমাদের বাচ্চা না হওয়ার পেছনে তোমার চাচ্চু দোষী। সে বাচ্চা দানে অক্ষম পুরুষ। একজন অক্ষম পুরুষ স্ত্রীকে হাতে রাখতে তার কথা অনুযায়ী চলে সহজ হিসাব।। শুনো আমি রতনের আবার বিয়ে দিবো। মেয়ে আমার পছন্দের। আমার বোনের মেয়ে। মেয়ে সুন্দরী শিক্ষিতা। দোষের মধ্যে ডিভোর্সী। তবে বাচ্চা হয়নি।

চাচির কথা শুনে শ্রাবণ থমকে গেলো। এখনো ডিভোর্স হয়নি অথচ আবার বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। শ্রাবণ বলে ফেললো,

> সন্তান পালনে মায়ের ভূমিকা অপরিহার্য বড়মা। আমার মা কেমন সে তুমি জানো। উনিও যেমন অন্যায় সহ্য করেনা আমরা তিনভাইবোও তেমন অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করিনা। আমাকে ক্ষমা করো। রতন ভাইয়ের জন্য আমি কিছু করতে পারবো না। বরং রাকা ভাবি যদি বলে উনার উপকার করতে হবে সেটা আমি বেশ আনন্দের সহিত করে ফেলবো। শ্রাবণ আত্মীয় বিবেচনা করে নিজের ন্যায়নিষ্ঠতা প্রয়োগ করেনা। তোমার সোনার চাঁদের কপালে অনেক দুঃখ আছে। তোমার বোনের মেয়ের ইতিহাস সেতো কারো অজানা নেই। আমি ব্যস্ত আছি। পরে কথা হবে। ভালো থেকো।

শ্রাবণ নিজের মতো কথা বলে ফোন রাখলো। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। রতনের আবারও বিয়ে দিবে কেমন লাগে? ভেবেছিলো রাকাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ক্ষমা চেয়ে ফিরিয়ে আনবে। বড় মায়ের বোনের মেয়ে সেতো জাদরেল মহিলা। কি এক ঝামেলা নিয়ে স্বামীর কপালে ফুলদানি মে*রে মাথা ফাঁ*টিয়ে বাবার বাড়ি পালিয়ে এসেছিলো। শ্রাবণ ভাবতে পারছে না। এক মেয়ে ভালো তো অন্য মেয়ে উল্টো। আসলে এই মেয়েরা মেয়েদের শ*ত্রু। ওরা যদি একে অন্যকে বুঝতে পারতো তাহলে জটিলতা অনেক কমে যেতো। শ্রাবণ কেবিনে ফিরে আসার পথে কুহেলীর সঙ্গে দেখা হলো। বেচারী আজ হাসপাতাল থেকে যায়নি। ভেবেছিল শ্রাবণের সঙ্গে কথা হবে কিন্তু তেমন কিছুই হলোনা। শ্রাবণ কেবিনের দরজা খুঁলেনি। রাহিন আর লিখন বাইরে বসে খোশমেজাজে সারারাত গল্প করে এখনো লম্বা হয়ে বেঞ্চে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। অথচ ওদের জন্য আলাদা কক্ষ আছে। কুহেলী সেগুলো ভেবে শ্রাবণকে আটকালো,

> সারারাত অপেক্ষায় ছিলাম তুমি আসবে বলেছিলে কিন্তু আসোনি।

শ্রাবণের মেজাজ আগে থেকে খারাপ ছিলো এখন আরও খারাপ হলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

> ছ্যাঁচড়ামি আমার মোটেও পছন্দ না সেটা কি তুই বুঝতে পারিসনা? এখন আবার আহ্লাদ করে তুমি বলা হচ্ছে। কু*ত্তার মতো পেছনে পড়ে আছিস কেনো? নিজের সম্মান নিজে নষ্ট করছিস। ঠাটিয়ে একটা থা*প্পড় দিলে বদ বুদ্ধি চলে যাবে। বাড়ি গিয়ে ঘুমা। কিভাবে বোঝালে তুই বুঝবি বলতো? পাগল হয়ে যাচ্ছি তোদের যন্ত্রণায়। এমন করলে বউ বাচ্চা নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো দেখে নিস। একবারতো চেষ্টা কর আমার পেছন ছাড়ার।

শ্রাবণ তেতে আছে বোঝা যাচ্ছে। কুহেলীর চোখে পূণরায় পানি ছাপিয়ে পড়লো। কিভাবে শ্রাবণকে ভুলে থাকবে সেটা মাথায় আসছে না। তবে এবার নিশ্চয়ই চেষ্টা করবে। তারজন্য যা কিছু প্রয়োজন হয় কুহেলী তাই করবে। তবুও আর এভাবে ছোট হবে না। কষ্ট হলে মনের মধ্যে চেপে রাখবে। কুহেলী উত্তর করলোনা। উদাস হয়ে যেভাবে এসেছিল ফিরে গেলো। শ্রাবণ হতাশ হলো। এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লো। খুব আফসোস হচ্ছে। জীবন এতো জটিল না হলেও পারতো।
**********
অন্ধকার কক্ষে বসে আছে রাকা। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। কতদিনের সংসার এক নিমিষে শেষ। সারাদিন রতনের আশায় পথ চেয়ে ছিলো। ভেবেছিলো নিশ্চয়ই রতন আসবে আর ক্ষমা চেয়ে ওকে ফিরিয়ে নিবে। বাচ্চা দুটো বাড়িতে যেতে চাইছে। অথচ রতন আসলোনা। কিভাবে বড় ভাইয়ের কাছে বলবে ও নিজের সংসারে যেতে চাইছে? তাছাড়া রতন ভালো কথার মানুষ না। এবার ফিরে গেলে আস্ত রাখবে না। ভাইয়ের উপরের রাগ ওর উপরে ঝেড়ে তবে শান্ত হবে। মাঝেমাঝে রতনকে ওর স্বাভাবিক লাগে না। নে*শা করে বলে তেমন রেকর্ড নেই। আবার পর নারীতে আসক্তিও নেই। সমস্যা একটাই সে স্ত্রীকে মারাত্মক অবহেলা করে। ভাবে স্ত্রীরা হচ্ছে ঘরের শোপিস। নিজের বংশ গৌরবে আর বড় মায়ের অতিরিক্ত স্নেহে বিগড়ে যাওয়া অহংকারী পুরুষ। গায়ে অসুরের মতো শক্তি। যখন মা*রতে থাকে মনে হয় দানব। রাকা প্রচণ্ড ভয়ে থাকে। আলোর দেখাদেখি কিছুটা সাহস পেয়ে খানিকটা প্রতিবাদী হয়েছিলো। হঠাৎ ঘরে লাইট জ্বলে উঠলো। রাসেল ভেতরে প্রবেশ করে বোনের পাশে বসে পড়লো। রাকা উঠে বসলো। মলিন মুখে বলল,

> কিছু বলবে ভাইয়া?

রাসেল বোনের শুকনো মুখ দেখে দুঃখ পাচ্ছে। কিছু একটা ভেবে নিয়ে বললো,

> তুই কি রতনের ঘরে ফিরে যেতে চাইছিস? যদি যাস তবে আমি বাধা দিবোনা। ওর থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবো। চিরকাল ভাইয়েরা তার বোনের শশুর বাড়িতে ছোট হয়ে মাথা নত করে এসেছে। আমিও নাহলে তোর জন্য করলাম। কিন্তু তুই ভালো থাকবিতো?

রাকা অবাক নয়নে চাইলো। ভ্রু কুটি করে বলল,

> কি বলছো তুমি? আমি যেতে চাইনা ভাইয়া। ফিরে গেলে আমাকে তোমরা আর জীবিত পাবে না। শরীরে ওর মা*র সহ্য হয়না ভাইয়া। মাসে অন্ততপক্ষে চারবার ও আমার গায়ে হাত তুলে। বারবার ভেবেছি চলে আসবো কিন্তু বাচ্চাদের কথা ভেবে তোমাদের সম্মানের দিকে চেয়ে কখনও আর ফিরতে পারিনি। ওখানে ফিরলে শরীরের চেয়ে মনের কষ্ট বেশি হবে। খোটা দিতে দিতে আমাকে অতিষ্ঠ করে তুলবে।

> তাহলে মন খারাপ করে আসিস কেনো? আমি চাইছি না তুই আর কখনও কাঁদিস। তোর যে সুখটাকে বাবা ছিঁনিয়ে নিয়েছিলো আমি সেটা তোকে ফিরিয়ে দিতে চাইছি। হাছিব ফিরে এসেছে। তোদের দায়িত্ব নিতে রাজি আছে। চিন্তা করিস না ও তোদেরকে এখানে রাখবে না। নিজের কাছে নিয়ে যাবে। হাছিবের সমস্যা আছে সেই জন্যই বাবা রাজি ছিলো না কিন্তু এখন তো অসুবিধা নেই?

রাকা থমকে গেলো। ভয়ে ঢোক গিললো। কিভাবে সম্ভব সেটা? হাচিব ওর দূর সম্পর্কের মামাতো ভাই। বিয়ে আগে রাকা ওকে ভীষণ রকমের পছন্দ করতো তবে এটা একান্তই নিজে মনে মনে।শুধুমাত্র সমস্যার জন্য ওর বাবা হাসিবকে জামাই হিসেবে মানেনি। ওদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলো। ছেলেটা সেই দুঃখে বাংলাদেশের ছেড়েছিলো। এখন পুরোপুরি অষ্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। রাকা দূত মাথা নাড়িয়ে বলল,

> না না ভাইয়া সে আর হয়না। আমি পারবোনা পূণরায় বিয়ে করতে। আমার বাচ্চাদের সম্মুখে ছোট হতে বলোনা। আমাদের বংশের মেয়েদের কখনও কি দুবার বিয়ে হয়েছে? কি লজ্জার কথা।

রাকার এলোমেলো কথা শুনে রাসেল ধমক দিলো।

> নাটক সিনেমা না যে তুই নিজ হাতে বাচ্চাদের দায়িত্ব নিয়ে বড় করবি। আমি যথেষ্ট চেষ্টা করবো তোদের দেখাশোনা করতে তবুও কথা একটা থেকে যায়। বোন আমি তোর ভালো চাইছি। হাছিব ভালো ছেলে। তোকে ভালো রাখবে। ওর বাচ্চা হবে না এতে কি সমস্যা? বরং ভালো হবে। তোর বাচ্চাদের ও নিজের ভেবে পালন করবে। আর তুই এভাবে ঘরে বসে ঘরকুনো হয়ে থাকবি না। মেয়েরা এখন কতটা এগিয়ে জানিস? হাছিবের সঙ্গে কথা হলো। তোকে প্রতিষ্ঠিত করতে যা যা প্রয়োজন তাই করবো আমরা। শেষ বারের মতো আমার কথা শোন। নিজেকে প্রস্তুত কর। রতনের কথা ভুলে যা। ও দেখ আবার বিয়ে করার জন্য নাচানাচি করছে। ওর একটা উচিত শিক্ষা দিতে আমি সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছি।

রাসেল থামলো। রাকা গভীর চিন্তাই মগ্ন। ভাঙা মন নিয়ে আবার নতুন করে কিভাবে শুরু করবে? রাকা আনমনে বলল,

> আমাকে সময় দাও ভাইয়া। তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিওনা। স্বামী সংসারের উপর থেকে আমার মন পুরোপুরি উঠে গেছে। ভালোবাসা বলতে কিছু আছে সে এখন আর আমার বিশ্বাস হয়না। এক ঘরে থেকে তার বাচ্চাদের মা হয়েও যখন ভালোবাসা পাইনি তাহলে অন্যকেও কিভাবে আমাকে ভালোবাসবে?

রাসেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

> সময় নে যতটা পারিস কিন্তু আমাকে হতাশ করিস না। বলেছিনা সবটা ঠিক করে দিবো? হাসিখুশি থাকার চেষ্টা কর। বাচ্চাদের সঙ্গে ভালো সময় কাটা।

রাকা মারা নাড়লো। রাসেল বোনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাইরে আসলো। বিয়ের জন্য রতন লাফালাফি করছে অথচ রাকা হাজারবার ভাবছে। বাচ্চাদের চিন্তা করছে। রতনের মতো মানুষ আমাদের সমাজে কতশত রয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত রাকাদের জীবন অতিষ্ঠ করতে দক্ষ।
***************
ইশার জ্বর কমে এসেছে। শরীর মোটামুটি সুস্থ। ঠান্ডা ছিলো সেটাও কমে গেছে। রাতে এখানে না আনলে কি যে হতো আলো সেটাই ভাবছে। ইশার জর চেক করে উঠে বসলো। মেয়েটা শ্রাবণের নিকট ছিল। হয়তো উঠে যাওয়ার সময় আলোর কাছে রেখে গেছে। লোকটা কেবিনে নেই। আলো ফ্রেস হয়ে বাইরে আসলো। শ্রাবণ তখনই খাবার নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো। গতকাল অতিরিক্ত কান্নাকাটি আর জেগে থাকার দরুন মেয়েটার চোখমুখ ফুঁলে আছে। শ্রাবণ ওর পা হতে মাথা অবধি স্ক্যান করে নিলো। দেখতে বেশ শুভ্র লাগছে। রাহিন আনাড়িপনা করে লাল কটকটে রঙের ড্রেস নিয়ে এসেছে। লাল রঙের পোশাকে আলোকে নেহায়েত মন্দ না বরং সুন্দর লাগছে। শ্রাবণ ওকে দেখে নিয়ে বলল,

> ফিরতে হবে। তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।

আলো মুখটা ভার করে বলল,

> বাড়িতে গিয়ে খাবো। আম্মা ফোন করেছিলো না? বাড়িতে চলুন।

শ্রাবণ বিরক্ত হলো। রাহিন উস্তাদি করে খাবার নিয়ে এসেছে। সেটা পাশে রেখে বলল,

> সামান্য হলেও খেয়ে নাও। রাহিন বেচারা আহ্লাদ করে এনেছে কষ্ট পাবে। মা রান্না করছে ফোন করেছিলাম। এবার থেকে মেয়েটার একটু যত্নে করো। তোমার যা অবস্থা আমার একটা বাচ্চা পালতে হিমশিম খাচ্ছো আবার আরও চারটা?আমার স্বপ্ন পূরণে বাঁধা আমি সহ্য করবোনা। আমার ছেলেমেয়েরা এই শহর কাঁপিয়ে তুলবে। এক শ্রাবণের থেকে আরও চারটা শ্রাবণ তৈরি হবে।

আলোর মুখটা দেখার মতো হলো। শ্রাবণ গম্ভীর মুখে রসিকতা করছে তেমন না। লোকটা কি সিরিয়াস? আলো ভয়ে ভয়ে বলল,

> কিসব বলছেন? মাথা ঠিক আছে? আমার উপরে আপনি অবিচার করবেন আমি মানবো নাকি? যাইহোক কেএফসিতে আমার বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করেছিলেন মনে আছে?

শ্রাবণ ইশার পাশে বসতে বসতে মাথা নাড়িয়ে বলল,

> মনে আছে তবে দিনটা চেঞ্জ করেছি। ওদের জানিয়েছি আজ যাওয়া হচ্ছে না। আমার কাজ আছে। তোমাদের বাড়িতে রেখে আমি বাইরে যাবো। হয়তো রাতে ফিরবো না।

শ্রাবণ হঠাৎ চুপ করে গেলো। চ্যানেলের জনপ্রিয়তা এমনি এমনি আসেনি বরং কঠোর পরিশ্রম আর সাহসীকতার জন্য এইটুকু হয়েছে। শ্রাবণ সমাজের অনাচার আর অন্যায়গুলো মানুষের সম্মুখে তুলে ধরতে ওই চ্যানেল খুঁলেছিলো। আমাদের সমাজে শুধুমাত্র নারীদের উপরে নির্যাতন হয়না। স্থান কাল ভেদে নারী পুরুষ উভয়ের উপরে অন্যায় হচ্ছে। শ্রাবণকে ভাবতে দেখে আলো বলে উঠলো,

> একজন নারী যদি একটা পুরুষের উপরে অবিচার করে তাহলে সমাজের লোকজন হৈচৈ করে বিষয়টা অতিরিক্ত করে ফেলে। অথচ কতশত নারী আছে যারা অবহেলিত। স্বামী সংসারে তার জায়গা দাসির মতো। আপনার চ্যানেলের জানিনা আমার আপার মতো মেয়েদের খবর প্রকাশ পেয়ে মেয়েরা কতটা লাভবান হয়। তবে এই শহর একদিন আলোয় আলোয় ভরে উঠবে। অন্ধকার কেটে নতুন সূর্য উদয় হবে। আমার এই শহর যেখানে আমি আমার বুবুর লা*শ নিয়ে কেঁদেছিলাম সেই শহরে আর কোনো নী*রার লাশ নিয়ে কোনো আলোকে কাঁদতে হবে না। আমরা সকলে বাঁচার মতো বাঁচবো।

শ্রাবণ তন্ময় হয়ে শুনলো আলোর কথা। শ্রাবণ শুধুমাত্র অন্যায়ের প্রতিবাদ করে কিন্তু কখনও কি এসব মেয়েদের জন্য কিছু করেছে? রাকা দিনের পর দিন কষ্টে ছিল তার জন্য ও কি কিছু করতে পেরেছে? আজ রাকা নিজে প্রতিবাদ করেছে যদি না করতো? শ্রাবণ অস্থির হয়ে উঠলো। ভাবলো ওর জন্য কিছু করা কি উচিত ছিল না?

চলবে