শিশিরে ভেজা আলতা পর্ব-০৩

0
479

ধারাবাহিক গল্প
#শিশিরে_ভেজা_আলতা
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
পর্ব-৩

আবহাওয়া আজ ভারী শীতল; কাল রাত থেকে তেজ বর্ষনে প্রকৃতি ঝকঝকে পরিষ্কার হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু হয়নি। বরং আজ সকালে আরো ঘন অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে ধরণী। নকশির গায়ে জ্বর আর গালের ফোলাটাও কমেনি। শিফা সকালে এসে দেখে গেছে তার অবস্থা। মেয়েটার অবস্থা তার রাত থেকেই খারাপ ঠেকছিলো কিন্তু আরও বেগতিক হয়েছে। আহসানুল্লাহ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকা মানুষ সে হঠাৎ আসা ঝামেলায় একটা দিন স্কুল কামাই করেছেন। আজ নিশ্চয়ই আর কামাই দিবেন না ভেবেই শিফা তাকে কিছু জানালো না। কাল যখন রাতে আহসানুল্লাহ খোঁজ নিয়ে জানালো নকশির গ্রামের খবর, তার বাপ- ভাইয়ের খবরও। এলাকায় ছড়িয়ে গেছে নকশি কোন ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। মেয়েটার বিপদ শ্বশুর বাড়ি, বাপের বাড়ি সবদিকেই। তখন থেকেই শিফা আর তার জা খুব চিন্তিত। বলা হয়নি, আহসানুল্লাহ’র বড় ভাই মারা গেছে বছর দুই আগে। তার ভাইয়ের দুই ছেলে-মেয়ে শরত আর শিউলি। বয়স পঁয়ত্রিশ এর কাছাকাছি জয়তুন বেগম কিছুতেই সন্তানদের রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করতে রাজি হননি। আহসানুল্লাহর বাবা- মা বেঁচে নেই ভাইয়ের মৃত্যুর পর নিজেই সংসারের সব দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু জয়তুনের আত্মসম্মানে বাঁধে দেবরের থেকে খরচ নিতে। আর দেবরও অনেক টাকাপয়সা কামায় না আর তাই তার স্বামীর বাজারের মুদি দোকানটা ভাড়া দিয়েছে। নিজেও বাড়িতে অনেক হাস মুরগি আর শাক-সবজি করেন। ছেলে মেয়ে দুটোই পড়াশোনা করে তাদের খরচও চালান নিজেই সেলাই কাজ করে। যদিও পাড়ায় এতোটাও কাজ পাওয়া যায় না। তবুও ভালোই চলছে। আট বছরের শরত এখনি মায়ের খুব সহযোগী হয়ে উঠেছে। জয়তুনের মনে হয় শরতটা বড় হয়ে গেলেই তার আর কোন দুঃখ থাকবে না। বাড়িতে নকশির কথা শিফা আর জয়তুন দুজনকেই বলেছে আহসানুল্লাহ। দুই জা মিলে খেয়াল রাখছে নকশির। আহসানুল্লাহ আজ স্কুলে গেলেন৷ যাওয়ার আগে শিফাকে বলে গেলেন, ‘মেয়েটির দিকে নজর রেখো আজ বাড়ি ফিরেই একটা ব্যবস্থা করতে হবে।’

মেঘলা দিনে সারাটাক্ষন শিশির আজ বসে রইলো নকশির পাশে। শরত, শিউলিও বারবার এসে এসে ঘুরে গেছে সেখানে। নকশির অবস্থা ভালো নয় বেশি। দুপুরে পাতলা খিচুড়ি করে এনেছে শিফা সে মুখে দিতেই হরহর করে বমি করে ভাসালো বিছানা। শরতের মা এসে কিছুক্ষণ নকশিকে দেখে জিজ্ঞেস করলো কেমন লাগছে তার! সে কোন জবাবই দিতে পারলো না। বিকেল হতেই গা কাঁপিয়ে জ্বর উঠতেই শিফা ভয় পেয়ে শিশিরের বাবাকে খবর পাঠালেন। স্কুল ছুটি হবে সাড়ে চারটায় কিন্তু জরুরি তলবে তিনি চারটা বাজেই এসে হাজির হলেন। ঝড় বাদলের দিন ভ্যানে করে হাসপাতাল যাওয়াটাও সহজসাধ্য নয়। তবুও গেলেন আহসানুল্লাহ সাথে গেলেন জয়তুন বেগম৷ শিফাকে রেখে গেলেন ছেলে মেয়েদের সাথে বাড়িতে।

এক রাত হাসপাতালে রেখে পরের দিন বাড়ি আনা হলো নকশিকে। কোন বন্ধন, সম্পর্ক ছাড়াই বড় এক ঝামেলা কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছে আহসানুল্লাহ। আর এতখানি সম্ভব হয়েছে তার পরিবারের দুই নারীর মানসিক সাহসিকতায়। নকশির মত অপরুপ সুন্দরী কমবয়সী একটা মেয়েকে বাড়ি এনে তার পেছনে সময় ব্যয় সমাজ আর পরিবার দুদিকেই প্রশ্নবোধক হওয়ার ছিলো। কিন্তু শিফা সহজ সরল এবং স্বামীভক্ত নারী তার পক্ষে গভীর কোন ভাবনা সৃষ্টি হয়নি। আহসানুল্লাহর ভাবীও নরম মনের মানুষ। নকশি বাড়ি আনার পর আবারও বসতে হলো নতুন সিদ্ধান্তের জন্য। হাসপাতালে নেওয়ার পরই আহসানুল্লাহ আর জয়তুন বেগম ঝটকা খেয়েছিলেন ডাক্তারের কথা শুনে। নকশি গর্ভবতী এবং তার শরীরে যে অবস্থা গর্ভপাতের ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ কারণেই নির্দয়তার পরিচয় না দিয়ে আহসানুল্লাহ নকশি সবটা জানিয়ে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যেতে চায় সে? বাপের বাড়ি নাকি শ্বশুর বাড়ি! কিছুটা সময় নিরব এবং তারপরই নকশি কান্নায় ভেঙে পড়লো। বয়সটা তার কম হলে বুঝ জ্ঞান এখন আর একেবারে কম নয়। তিন দিন আগে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর আর সে কিছুতেই যেন অবুঝ নয়। বাবা-মা সমাজের ভয়ে তাকে মরে যেতেই বলবে আর শ্বশুরবাড়িতে যেখানে স্বামীই নেই সেখানে কে শুনবে তার কথা! আহসানুল্লাহ খুব করিয়ে বুঝিয়ে তাকে তার স্বামী আওলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলল। ফোন নাম্বার নিয়ে আহসানুল্লাহ নিজেই প্রথমে কথা বললেন আওলাদের সাথে নকশির আত্মীয়ের পরিচয়ে। বিধিবাম, নারীর ভাগ্য বড্ড নরম আর পরমুখো। অন্যের মুখের বাণীতেই ভাগ্য বদলে যায় তাদের। আওলাদের কান পর্যন্ত ঘটনা গিয়েছে। সেই ঘটনায় নকশী একজন পরকিয়া করা বেশ্যা। মন থেকে মৃত্যু কামনা করে আওলাদ তার সুন্দরী স্ত্রীর। আহসানুল্লাহ যথাসম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করলো নকশি কিছু অন্যায় করেনি এমনকি তার সন্তানের মা হতে চলেছে। শীতের ঝরা পাতার মতই নকশি নামটা ঝরে গেছে আওলাদের মন থেকে৷ কতোটা ঠুনকো ছিল তার স্ত্রী প্রতি প্রেম তা আর বুঝতে বাকি ছিলো না পদ্মদিঘির মাস্টার বাড়ির মানুষগুলোর। শিফা আর জয়তুন বেগমের অনুমতি নিয়েই আহসানুল্লাহ বাড়িতে রেখে দিলেন নকশিকে নিজের বোনের পরিচয়ে। গ্রামের মানুষ হাজারটা কথা ছড়াবে ভেবে নকশির পরিচয় হলো আহসানুল্লার খালাতো বোন হিসেবে। স্বামীহীনা বোন ঘর সংসারে ঠাঁই নেই বলে সে নিজ বাড়িতে জায়গা দিয়েছে। গল্পটা এখানেই শেষ হয়নি৷ জীবন সহজ পথে চলে না কারো নকশিরও চলল না৷ মাস্টারি আর মুদি দোকানের আয় দিয়ে পরিবারের বাইরে বাড়তি একজনের খরচ চালানো সহজ সাধ্য নয়। পড়ার ঘরটা নকশিকে দেওয়া হলো সেই সাথে বলা হলো বড় ভাবীর মত শাকসবজি, হাসমুরগি পুষতে। বাড়ির তিনজন ছেলেমেয়েকে পড়ানোর দ্বায়িত্ব পড়লো নকশির ওপর। গর্ভবতী নকশির চাহিদাও কম নয় ভেবে আহসানুল্লাহ পাড়ার কিছু ছাত্রছাত্রীও দেখিয়ে দিলো পড়ানোর জন্য৷ দূর্ভাগ্য সর্বকালের সঙ্গী হলেও বিপদ ঠিকই কেটে যায় একটা সময়৷ নকশিরও তাই হলো। বাবা-মা, শ্বশুরবাড়ি সব জায়গায় বিতাড়িত হয়েও থেমে নেই তার জীবন। থেমে ছিলো না তার পড়াশোনাও৷ নিজের ছোট বোনের মত করেই নকশির দিকে খেয়াল রাখলো। এক্সিডেন্টের সময় নকশির হাতে মোড়া যে পলিথিন ছিলো তা সে সাথে করে নিয়ে এসেছিলো। নকশিকে কলেজ ভর্তি করিয়ে দিলো নকশির টাকায়। পড়াশোনা চালানোর দ্বায়িত্বও নকশি নিজেই নিলো। তবুও খরচে আটকে গেলেই সাহায্য করেছে ভাই হয়ে পাশে থাকা আহসানুল্লাহ। বাড়ি দুই মহিলাও তাকে আগলে নিয়েছে বোনের মত। তবুও দিন শেষে তার দীর্ঘশ্বাস ছিলো স্বামীর জন্য। নকশির প্রথম বছরের পরীক্ষার সময় পেট ভারী হলো৷ বাচ্চার সময়ও ঘনিয়ে আসছিলো সেই সাথে তার দূর্বল শরীর নিয়ে ভয়। কিন্তু ওপরওয়ালা একদিক থেকে কেড়ে নিলে অনেক দিক থেকেই ফিরিয়েও দেন। নয় মাস পূর্ণ করে কোন এক শিশিরে ভেজা ভোরে নকশির কোল জুড়ে এলো তার কন্যা সন্তান। স্নিগ্ধ ভোরের মতোই স্নিগ্ধতায় পরিপূর্ণ এক ছোট্ট বাচ্চা। মাস্টার বাড়িতে নতুন শিশুটির আগমনে উৎসবের আমেজ এলো। এলাকায় সবাই জানলো মাস্টারের বোনের মেয়ে হয়েছে। পদ্মাদিঘি গ্রামে জন্ম নিলো আওলাদের উত্তরসুরী যার খোঁজ আওলাদ আর তার বাড়ির কেউই জানলো না। খুব একটা কষ্ট হয়নি নকশির এ গ্রামে থাকতে শুধু পড়াশোনার খরচের বেলাতেই যা সংকোচ আর লজ্জায় পড়ে যেত সে হাত পাততে। তবুও ওপরওয়ালার দয়ায় পড়াশোনা চালিয়েও মেয়ের জন্ম দিতে পারলো। আতুরঘরেই দাঈ মহিলা বাচ্চাকে দেখেই বলল, ‘এই মাইয়া তো দেহি মা’র রুপ কাইরা আনছে।’

দুধে আলতা গায়ের রঙে টানা টানা চোখের ছোট্ট শিশুটি সবার নজরে লেগে গেল। শিফা তো খুশিতে কেঁদেই ফেলল বাচ্চাকে দেখে। মাস্টার বাড়িতে জন্ম নিলো নকশির রাজকন্যা সেই সাথে বাড়ির সকল সদস্যের মুখের হাসি হয়ে উঠলো শিশুটি শুধু ছোট্ট শিশিরের রাগের কারণ হলো। নকশির মেয়ের সাত দিনেই আকীকার ব্যবস্থা করলো আহসানুল্লাহ। নামকরণের জন্য মসজিদের মৌলভী এলো। তার নাম রাখা হলো আয়শা। বাড়ির বাচ্চাদের মধ্যে শরত আর শিউলি দু ভাইবোন খুব আদর করে বাচ্চাটাকে শুধু চক্ষুশুল হয়ে রইলো শিশিরের। শিফা দিনের প্রায় বেশিরভাগটা সময়ই আয়শাকে নিজের কাছে কাছে রাখে আর তাতেই ছোট্ট শিশিরের মন বিষিয়ে ওঠে বাচ্চাটার প্রতি। তার ধারণা ওই বাচ্চাটা অনেক সুন্দর হয়েছে বলে আম্মা এখন তাকে আদর করে বেশি। আকীকার পরদিন সকালে শিশির ঘুম থেকে উঠে চুপি চুপি ঢোকে নকশির ঘরে। বিছানায় লেপ মুড়িয়ে রাখা ছোট্ট আলতাকে অনাবৃত করে সারা গায়ে কাজল মেখে দেয়। নকশি তখন নিজের জন্য ভাত রান্না করতে রান্নাঘরে যায়। শিফা রান্না বসিয়েছিলো নকশিকে দেখতেই প্রশ্ন করলো, ‘আয়শা ঘুমাইছে?’

‘হ ভাবী। রাতে অনেক কান্নাকাটি করছে পড়ে আবার ঘুম দিছে। একটু আগে খাওয়ানোর পর আবার ঘুমাইতাছে।’

নকশি ভাত বসিয়ে আবার ঘরে গেল দুটো আলু আর পেঁয়াজ আনতে। সকালের নাশতায় ভর্তা করলেই হবে তার। ঘরে ঢুকতেই চিৎকার করে উঠে নকশি। তার চিৎকারে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে শিফা, জয়তুন বেগম আর শরত- শিউলিও। আহসানুল্লাহ তখনো ঘুমে ছিলো সেও তড়িঘড়ি বেরিয়ে আসে। নকশির ঘরে ঢুকে সবাই চমকে যায়। বিছানায় লেপের ওপর দুটো চোখের সাদা অংশ ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। কালো মিচমিচে গা এমনকি নখগুলো। সবাই অবাক হয়ে আয়শাকে দেখছে। শরতই প্রথম জিজ্ঞেস করলো, ‘ফুপুআম্মা, আয়শার বাবু এমন কালো হইলো কি কইরা?’

নকশির দমবন্ধ অবস্থা। সে ভয় পেয়েছে ঘরে ঢুকে মেয়েকে এমন দেখে। আহসানুল্লাহ সামনে এসে আয়শাকে কোলে তুলে নিলো। তার গালে মুখে ধরতেই দেখলো হাত পিছলায় সাথে কালি উঠছে। ঘরের মেঝেতে কাজলদানিটা দেখলেন জয়তুন বেগম। তার বুঝতে বাকি নেই আয়শার শরীরে কাজল লাগানো কিন্তু কে লাগিয়েছে! চোখ রাঙিয়ে শরত আর শিশিরকে প্রশ্ন করতেই তারা বলল, ‘এ ঘরে তো মাত্রই আসলাম আমরা।’

নকশির কপালে চিন্তার ভাজ। সে চাল নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছে দশ মিনিটের মত হবে। এতটুক সময়ে বাইরের কেউ বাড়ি ঢোকেনি। এ বাড়িতে মাস কয়েক হলো টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে একটা গেইট রাখা হয়েছে। শরত হঠাৎ বলল, ‘শিশিরে করছে মনে হয় কাকা। সেই তো আয়শারে সহ্য করতে পারে না।’

বড়রা সবাই অবাক হয়ে তাকালো শরতের দিকে। আহসানুল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই কথা কে বলছে তোমারে?’

‘শিশিরই তো বলে আয়শার জন্য আম্মায় আমারে কম আদর করে। ফুপু আম্মাও শুধু আয়শারে কোলে নেয় আমারে এখন আর কাছে ডাকে না।’

শরতের কথা শুনে সবারই যেন এবার টনক নড়লো। সত্যিই তো, আয়শার জন্মের আজ আটদিন চলে আর এই আট দিনে নকশি সত্যিই একবারো শিশিরকে নিজের কাছে ডাকা হয়নি। শিফাও খুব একটা আলাদাভাবে ছেলেকে আদর করেনি। বরং গত এক সপ্তাহে সে বার কয়েক বকাবকিও করেছে বিভিন্ন কারণে। আর তাই শিশিরের ছোট্ট মনে ধারণা জন্মেছে এই বাচ্চাটার জন্য তার আদর কমে গেছে।’

সারা সকাল শিশির আর বাড়ি এলো না, স্কুল কামাই দিলো। দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরতেই নকশি তাকে কাছে ডাকলো। সে গেল না, শিফাও আদর করে কাছে ডেকে মুখে তুলে ভাত খাওয়ালো। বিকেল থেকে ভর সন্ধ্যা পর্যন্ত চেপে ধরে রাখলো নিজের কাছে। সন্ধ্যার পরই শিশিরকে পড়তে বসিয়ে কোন এক কারণে আবার খুব বকাঝকা করলো শিফা। বিকেলের শীতে উষ্ণ চাদরের মত ফুরফুরে হওয়া মনটা শিশিরের আবারও বিষয়ে উঠলো। আর সেই বিষ ঘুরেফিরে পড়লো আট দিনের আয়শার ওপরই। রাতটা সে কারো সাথে কথা না বলেই বাবার বুকে মুখ গুঁজে কাটিয়ে দিলো। খুব ভোরে বাবা যখন ঘুম থেকে উঠে মাকে ডাকছিলো নামাজের জন্য তখন শিশিরও জেগে গেল। মা নামাজে দাঁড়াতেই সে চুপ করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। ভেবেছিলো আজও বাড়িতে থাকবে না সে পালিয়ে যাবে কোথাও। পরক্ষণেই তার মন বদলে গেল। খুব ভোরেই আজ নকশি রান্না বসিয়েছে। সময় করে সে মেয়েকে নিয়েই কলেজে যাবে এই ভেবে। শিশির দেখলো ফুপুআম্মা শাক কাটছেন বসে বসে। অতি সন্তর্পণে সে পা বাড়ালো নকশির ঘরে। ঘুমন্ত আয়শাকে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেল ঘরের পেছন দিকে। নকশি যে ঘরে থাকে সে ঘরের পেছনে পেয়ারা গাছ আর অনেকটা জায়গা জুড়ে সবুজ ঘাস। খালি পড়ে আছে জায়গাটুকুতে একপাশে নকশি লাউয়ের মাচা বেঁধেছিলো। শিশির এসে আয়শাকে শিশিরে ভেজা সবুজ ঘাসের ওপর রেখে দিলো চুপচাপ। আর বিড়বিড় করে বলতে থাকলো, ‘ এখানেই পড়ে থাক তুই শয়তান মেয়ে। আমার আম্মার কোলে ওঠার খুব শখ তাই না রে! এবার দেখি কি করে উঠিস তুই। আমার আম্মা, আমার ফুপুআম্মা সবাইর কোলে ওঠা বের করবো তোর দাঁড়া।’ বলেই আবার শিশির ঘরের পেছনে আয়শাকে ফেলে নিজেদের ঘরে এলো। আলনার পাশে একটা আলতার বোতল আছে তার মায়ের। সেই আলতাটা নিয়ে আবার ফিরে গেল শিশির নকশির ঘরের পিছনে। বোতলের সবটুকু আলতা হাতে নিয়ে আয়শার মুখ ভিজিয়ে দিলো। মুহূর্তেই ফর্সা রঙের আয়শার মুখ আলতায় মিশে লালচে গোলাপি রঙ হয়ে উঠলো। শিশিরে ভিজে গায়ের কাঁথার ঠান্ডায় ঘুম ভেঙে গেছে আয়শার। সে হাত দুটো নেড়ে নেড়ে ঠোঁট ভেঙাচ্ছে। এই বুঝি সে গলা ফাটিয়ে কান্না করে দিবে। তার ভেঙানো মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে শিশির হঠাৎ অস্পষ্ট শব্দে উচ্চারণ করলো, ‘আলতা!’

চলবে
(রিচেক করা হয়নি ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)