শুধু তোমারই জন্য পর্ব-০৩

0
429

শুধু তোমারই জন্য- ৩

কয়েকটা দিন ভীষণ ব্যস্ত কাটলো আবিরের। নীলির কথা কয়েকবার মনে হলো না তা নয়, কিন্তু এখনো মনে দাগ কাটার মতো কিছু হয়নি। নীলি মাঝে মাঝে ভাবে ফোন করবে, কিন্তু আবার চিন্তা করে, থাক, কি দরকার ফোন করার। এই হঠাৎ হওয়া বিয়ে ওদের দুজনকে একটা অদৃশ্য সুতায় বাঁধলেও এখনো জোর তৈরি হয়নি।
আবিরের মা প্রতিদিন বলে নীলিকে ফোন করতে, তিনি নিজে এখনো ফোন করেন না। মাঝে মাঝে নীলির মায়ের সাথে কথা হয়, নীলির মায়ের এক কথা, নীলির পরীক্ষা তো সামনে, তাই পড়াশোনা করছে। আচ্ছা তবে পরীক্ষা দিক, তারপরই কথা বলবেন না হয়।
দু তিনদিন পরে একদিন নীলিকে ফোন করলো আবির।
-নীলি, কেমন আছো?
-জি ভালো।
-পড়াশোনা কেমন চলছে, ক্লাশ হয়?
– জি।
আর কি কথা বলবে আবির খুঁজে পেলো না, একদিন দেখা তো করেছে, আবার দেখা করতে চাইবে, না থাক।
আবিরের অফ ডে আলাদাভাবে নেই, মাঝে মাঝে অফিস থেকে নিজেই ছুটি নিয়ে নেয়। পরের সপ্তাহে শুক্রবারে কয়েকজন বন্ধু মিলে দেখা করার প্ল্যান করলো অনেকদিন একসাথে বসা হয় না সবার। সবাই আড্ডা দেবে আর সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখবে। অদ্ভুতভাবে নীলিরও বন্ধুদের সাথে ওইদিন মুভি দেখতে যাওয়া হলো। আবির দূর থেকে নীলিকে দেখলো মনে হয়।
প্রথমে মনে হলো, ধূর, কি সব ভুলভাল দেখছে, মাথায় মেয়েটা ঢুকে আছে বলে এমন হচ্ছে!
তারপর আরেকবার তাকিয়ে দেখলো, সত্যিই নীলি!
সাদা স্কার্ফ জড়ানো মাথায়, আরো কম বয়েসী লাগছিলো!
বন্ধুদের বসিয়ে রেখে আবির নীলিকে ফোন করলো এক পাশে গিয়ে, নীলি ফোন দেখলো আবির, এখনি ফোন দিতে হলো, ও রিসিভ করলো না, আবির আরো একবার ফোন করলো, এবার ফোন তুললো নীলি,
-নীলি, কেমন আছো?
-জি ভালো, আপনি?
-হু ভালো, ব্যস্ত? ফোন ধরছিলে না?
– জি, বাইরে আছি!
-বাইরে থাকলে বুঝি ফোন ধরা যায় না!
– যাবে না কেন, কথা বোঝা যায় না তো, তাই, পরে ফোন ব্যাক করতাম!
-কোথায় এসেছো?
-বসুন্ধরা সিটি।
আবির দেখলো, নীলি সত্যি বলছে, আচ্ছা নীলির সাথে দেখা করবে, কেন জানি খুব নীলির কাছে গিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে!
-আমাকে বলতে, আমি নিয়ে যেতাম!
নীলি কোন উত্তর দিলো না। আশ্চর্য তো, নীলি কি বলবে, আমি মুভি দেখবো নিয়ে যান আমাকে!
-শপিং করবে?
-না, মুভি দেখবো।
-আচ্ছা, মুভি শেষ হলে আমাকে ফোন করো তাহলে?
-আপনি কিছু বলবেন? বলুননা…
আবিরের কি যেন মনে হল হঠাৎ , ও হাঁটতে হাঁটতে নীলির একদম পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, হ্যালো!
নীলি চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখে আবির! আচ্ছা, এখানে আসছো বললেই হয়, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করা আমি কই, মিথ্যা বলি কিনা দেখে,হুহ!
-আপনি এখানে?
-তুমি আসতে পারলে আমি আসতে পারবো না!
-হু পারেন তো! তারপর একটু থেমে বললো, আমি জানতাম না আপনি এখানে আসবেন।
– আমিও তো জানিনা তুমি আসবে, আমি তো জানি তোমার পরীক্ষা সামনে, তুমি ব্যস্ত, তাই তোমাকে ফোন করিনি।
নীলি উত্তর দিলো না। নীলির বন্ধুরা ডাকছে, নীলি আয় তো!
আবিরের হঠাৎ কি মনে হলো, ও বললো, নীলি তোমার বন্ধুদের বলো, তুমি এখন মুভি দেখবে না। আমার সাথে থাকবে, আমরা একটু খাওয়া দাওয়া করি, তারপর কিছু শপিং করবো তারপর মুভি দেখবো।
নীলি বললো, আচ্ছা আজ থাক, আজ তো ওদের সাথে এসেছি, ওদের সাথে যাই।
আবির বললো, না, আজকে আমার সাথে দেখা হয়ে গেলো যখন, আমার সাথেই থাকো। তোমার বন্ধুদের বলে দাও।
নীলির বন্ধু মিতুল দেখলো, নীলি কারো সাথে কথা বলছে, ও কাছে এসে নীলির হাত টেনে বলল, চল না! আবিরের মেজাজ খারাপ হতে শুরু করলো, যদিও এর কোন কারণ নেই, নীলিই স্বাভাবিক আছে।
আবির বললো, হ্যালো, কি নাম তোমার?
-প্রীতি ! নীলি কে উনি, তোর পরিচিত?
নীলি অস্বস্তিতে পড়ে গেলো, আবিরের বন্ধুরা ফোন করছে, আবির ফোন পিক করে বললো, একটু পরে আসবে। তারপর নীলিকে জিজ্ঞেস করলো , কি করবে?
নীলি সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, হুট করে ওদের বলবে, আমার বিয়ে হয়ে গেছে, কি ভাববে সবাই!
আবির বললো, আচ্ছা, যাও তাহলে!
নীলি চলে গেল।
এবার আবিরের খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগতে লাগলো, মেজাজ খারাপ হতে লাগলো। অবশ্য নীলির সাথে তার এমন কোন সম্পর্ক তৈরি হয়নি, যেখানে আবির জোর খাটাতে পারবে। আবিরদের মুভি দেখার কথা পরের শো এ। আগে আড্ডাবাজি চলবে।
মিনিট বিশেক পরে নীলি বের হয়ে এসে, আবিরকে ফোন করলো। আবির দেখলো, নীলি ফোন করছে, ও আবার উঠে গেলো।
-হ্যালো।
– আপনি কি চলে গেছেন?
-কেন?
-না, এমনিতেই!
-তুমি আসবে?
নীলি উত্তর দিলো না, আবির একটু চুপ করে থেকে বললো, তুমি কোথায় দাঁড়িয়েছো বলো, আমি আসছি।
নীলি লোকেশন বললো।আবির বন্ধুদের বলে এলো , খুবই জরুরি একটা কাজে তাকে যেতে হচ্ছে। নীলির সাথে এখনি আলাপ করানোর দরকার নেই।আরো কয়েকটা দিন যাক না হয়।
নীলিকে দেখে আবিরের ভীষণ ভালো লাগলো।নীলি তাহলে তাকে উপেক্ষা করতে পারেনি। কোথাও কি অদৃশ্য কোন জোর তৈরি হয়েছে?এমন কি কারো হয়? নীলি আবিরের বউ, অথচ নীলি কাউকে বলছে না, আবিরও বললো না। কিন্তু কেন বলছে না!
আবিরের এটা মনে হতেই, বললো, নীলি, আমার বন্ধুদের সাথে আলাপ করবে?
– নাহ, আজ থাক!
-আচ্ছা থাক তাহলে!
– এখানেই থাকবে, নাকি বাইরে কোথাও বসবে?
নীলি কিছু বলল না।
-চলো বাইরেই যাই।
নীলি মাথা নেড়ে সায় দিলো
বসুন্ধরা সিটির পার্কিং থেকে গাড়ি নিয়ে বের হলো আবির।
নীলি অপেক্ষা করছিল এটিম বুথের সামনে।
আবিরকে দেখেনি, তাই আবির কাঁচ নামিয়ে ডাকলো নীলি, এসো। নীলি উঠে এলো।
আবির জিজ্ঞেস করলো, কোথায় যাবে বলো?
-চলুন কোথাও আশেপাশে।
নীলি বের হয়ে এসেছে বলে আবিরের খুব ভালো লাগছে, আগে একটু রাগ হচ্ছিল।
-নীলি, বন্ধুদের কি বললে?
গাড়ি কাওরানবাজার সিগনালে দাঁড়িয়ে। জ্যাম আছে ভালোই।
-কিছু বলিনি
-কিছু না বলে বের হলে?
-ওহ, সেটা? বলেছি মাথা ব্যাথা করছে, সাউন্ড শুনতে পারছি না।
-বাহ, তুমি তো ভালো মিথ্যে কথা বলতে পারো!
নীলি রাগী চোখে তাকালো!আবির হাসিহাসি চোখে নীলিকে দেখলো।পটের বিবির আবার রাগও হচ্ছে দেখি!
-বের হলে কেন নীলি? না করে দিয়েছিলে তো!
-দেখলাম আপনি রেগে গেছেন, তাই!
-আমি রাগলে তোমার কি বলো!
নীলির মেজাজ খারাপ হচ্ছে, লোকটা অযথা দুষ্টুমি করার চেষ্টা করছে। এত ঢং করার কি আছে।
-কিছু না।
-কিছু না বলছো! তবে আমি খুব খুশি যে তুমি এসেছো।
তখন আসলেই রাগ হচ্ছিল, আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা। বন্ধুদের রেখে আসলে, মন খারাপ লাগছে নাকি?
-না, আপনিও তো বন্ধুদের রেখে এসেছেন, আপনি কি বললেন?
-বলেছি জরুরি কাজ আছে!
-আপনিও বলেননি বিয়ের কথা! -নীলি হাসলো।
-না, বলেছি, তবে এত সাধারণ ভাবে আমার বউ দেখাবো না কাউকে। গ্রান্ড রিসিপশনের ব্যবস্থা করবো!
নীলি কোন কথা বললো না। “আমার বউ” শব্দটা কানে লাগলো। মানুষটা রাগী এবং অহংকারী। নিজের কথা অন্যকে শুনতে বাধ্য করে।
–নীলি, সামনেই সোনারগাঁ, ওখানে যাবে?
–না না, ওখানে যাবো না!
–আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে কিছু সময় আমাদের একসাথে কাটানো উচিত।
–না, ওখানে এখন যাবো না, পরে।
নীলির কথা শুনে হেসে ফেললো আবির।
– নীলি ভুল বুঝছো আমাকে, আমরা একসাথে একঘন্টাও কথা বলিনি, অথচ আমরা বিবাহিত। চলো একদিন ঢাকার আশেপাশে কোথাও থেকে ঘুরে।আসি। আমি চেষ্টা করছি যেন আমাদের সম্পর্কটা একটু নরমাল হয়।
-ওহ আচ্ছা, কিন্তু আপনি কই চেষ্টা করছেন?
আপনার সাথে সেদিন দেখা হওয়ার পরে তো আপনি আর যোগাযোগই করেননি সেভাবে, দায়সারা ভাবে একটা ফোন করেছিলেন। আজও আমার সাথে দেখা হওয়ার কথা না কিন্তু, হঠাৎ দেখা হয়ে গেলো বলে…..
আবির চুপ করে গেলো, নীলি চুপচাপ না, কথার পিঠে কথা বলতে জানে ভালোই।
-তুমি কি চাও আমি তোমাকে ফোন করি?
-আমি সেটা বলিনি, বলেছি আপনি যে বললেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন সেটা বলেছি।
–আচ্ছা মেনে নিলাম আমি চেষ্টা করিনি।
আবির এত সহজে কারো কথা মেনেছে বলে মনে পড়ছে না।
–তুমি চেষ্টা করেছো?তুমিও তো ফোন করোনি?
নীলি উত্তর দিলো না।
-নীলি কোথাও বেড়াতে যাবে? কক্সবাজার বা অন্য কোথাও? দেশের বাইরে যাবে? তোমার পাসপোর্ট করা আছে?
–না নেই, আর পরীক্ষার পরে আমরা কক্সবাজার ট্যুরে যাবো।ক্লাশের সবাই।
–ক্লাশের সবাই আর আমি এক? চলো, আমরা ঘুরে আসি?
-এক জায়গায় দুবার যাবো?
-কক্সবাজারে আমি অসংখ্যবার গিয়েছি। শহরের বাইরে সুন্দর সুন্দর রিসোর্ট আছে, সমুদ্রের তীর ঘেষা, গিয়েছো কখনো?
নীলি মাথা নাড়লো, কখনো যায়নি।
-যাবে?
-এখন না, পরে যাবো!
-তোমার কি মনে হয়না আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করা উচিত? মা তোমার সাথে কথা বলছেন না, কারন তোমার মা বলেছেন, তোমার পরীক্ষা! তাই দেরী হবে, বিষয়টা অদ্ভুত। যেভাবেই হোক, আমাদের বিয়েটা তো হয়েছে।
দু পরিবারের উচিত সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে সাহায্য করা।
-সম্পর্ক অস্বাভাবিক কোথায়?
-অস্বাভাবিক না?
-না!
–আচ্ছা তাহলে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাও তো!
নীলির কান গরম হয়ে গেলো, ফর্সা গাল টুকটুকে লাল হয়ে গেলো, কি বলে এই লোক! মাথায় তাহলে এই চিন্তা!
নীলি মুখ নিচু করে ফেললো।
-বাহ, এটুকু কথা নিতে পারছো না, আর আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক! আমরা নাকি ম্যারেড কাপল।
-নীলি বললো, আমি বাসায় ফিরবো।
-ফিরবে তো, আমি দিয়ে আসবো, একটু নরমাল হও, আমি এমন কিছু বলিনি। চলো একটা জায়গা থেকে ঘুরে আসি, তোমার ভালো লাগবে।
নীলি চুপ করে রইলো। গাড়ি এয়ারপোর্ট রোড ধরে ছুটতে লাগলো।


আবির তিনশ ফিট রোডের কিছু দূরে গিয়ে একটা ফাঁকা মাঠের মতো জায়গায় থামলো। মাঠের পরে ঢালু জায়গাটা সবুজ ঘাস। আবির নেমে নীলিকে দরজা খুলে নামতে বললো। নীলি নেমে দেখলো জায়গাটা বেশ নির্জন, আশেপাশে কেউ নেই।
ওর একটু ভয় ভয় লাগছে, আবিরকে বিশ্বাসও করতে পারছে না, অবিশ্বাসও করতে পারছে না।
আবির বললো, চলো একটু সামনে যাই।
নীলি হাঁটতে লাগলো আবিরের পেছন পেছন। জায়গাটা সুন্দর!
ঢালু জায়গার নিচে একটা পানা পুকুরের মতো, ধানক্ষেত শুরু হয়েছে তারপর। ধানক্ষেতে অবশ্য ধান নেই। তবে পুকুরটা ভরা কচুরিপানার ফুল।
আবির বলল, নিচে নামবে?
নীলি ঘাড় নাড়লো, এখন অবশ্য ভালোই লাগছে। নীলি ফোনে দেখলো চারটা বাজে। মুভি শেষ, ওরা এখন পুরান ঢাকায় যাবে। কিছুটা নেমে আবির বসলো। নীলি একটু গ্যাপ রেখে বসলো।
আবির বলল, তোমার কি অস্বস্তি লাগছে?
নীলি বলল, না।
তবে অস্বস্তি লাগছিলো, আবিরের ওই কথাটা শোনার পর থেকেই।
আবির বললো, সরি, তোমাকে হয়ত হার্ট করেছি, কিন্তু তুমি আমার কথাটা বুঝতে পারোনি।
নীলি বললো, বুঝেছি।
-না বোঝোনি, বুঝলে রিএ্যাক্ট করতে না।
ঢাকা থেকে যাওয়ার সময়ও আমি জানতাম না যে বিয়ে করতে হবে। তুমি যতোটা অবাক হয়েছো, তার চাইতে অনেক বেশি অবাক আমি হয়েছি।
তাছাড়া সত্যি বলতে তুমি আমার থেকে বেশ খানিকটা ছোট। এখনকার সময়ে এত এজ ডিফারেন্স এ বিয়ে করে না সাধারণত। তোমার পছন্দ অপছন্দ আমি বুঝবো না, আমারটাও তুমি বুঝবে না। কিন্তু বিয়েটা হয়ে গেছে যেহেতু, আমাদের তো একে অন্যকে জানার চেষ্টা করা উচিত। তাই না? এই যে তুমি বলেছো, আমি ফোন করিনি বা দায়সারা ভাবে করেছি, তুমি বলোতো ফোন করে কি কথা বলতাম তোমার সাথে? খেয়েছো বা ঘুমিয়েছো এই ন্যাকামি করার বয়স আমার নেই, এসব আমাকে দিয়ে হবে না।
নীলির মনে হলো, একে যতোটা বাজে মনে হয়েছে, সে ততোটা খারাপ না।নীলির ফোন বাজছে।
-কে ফোন করেছে? পিক করো!
-মা, এখন থাক।
-না, পিক করো!
নীলি ফোন তুললো, বলল, একটু বাইরে মা। হ্যা ফিরতে সন্ধ্যা হবে। না বেশিক্ষণ বাইরে থাকবো না!
ফোন রেখে নীলি বলল, সন্ধ্যায় বাইরে থাকা মা পছন্দ করে না।
আবির বললো, বাহ, ভালো! কিন্তু বললে না কেন আমার সাথে?
– পরে বলবো, এখন বুঝবে না। চেঁচামেচি করবে!
-কি আশ্চর্য, কেন! সে তোমার বিয়েতে রাজী না, তাহলে বিয়ে দিলো কেন?
-মায়ের কথা কেউ শোনেনি, দাদু ভাই এত অসুস্থ, তার শেষ ইচ্ছে মনে করে বাবা, কাকা, ফুপু সবাই জোর করেছে।
-আর তুমি?
-আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি, দিলে রাজী হতাম না।
আবিরের কথাটা ভালো লাগলো না। এটা কোন ভাবে ওকে ইনসাল্ট করা মনে হলো। তাই অন্যদিকে তাকালো।
তাও ভাল, সত্যি কথা বলছে নীলি।
-তো বিয়ে তো করে ফেলেছো, এখন কি করবে?
নীলি আসলেই বুঝতে পারছে না। আবিরকে এখন খুব একটা খারাপ লাগছে না, কিন্তু মা শুনলেই রেগে যাবেন।
বলবেন, পড়াশোনা শিকেয় তুলে ঘোরাঘুরি করো এখন!
কি অদ্ভুত দোটানা!
নীলি অন্যদিকে ফিরে বললো, জানিনা!
আবির বললো, আমার মায়ের কিন্তু তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে, রাতে ফিরলেই জিজ্ঞেস করবে তোমার সাথে কথা হয়েছে কিনা।
নীলি কিছু বললো না!
আবির বললো, শোনো, তুমি হয়তো ভেবেছো আমি তোমাকে রিসোর্ট বা কক্সবাজারের কথা বলেছি ফিজিক্যাল এটাচমেন্টের কথা ভেবে, এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা, একজন মানুষকে জানতে তার কাছাকাছি যাওয়া মানেই এটা বোঝায় না! বাকি কথাটা আমি রেগে গিয়ে বলেছি!
নীলি এবার একটু নরমাল হয়ে বললো, আপনি এরকম রেগে যান?
-হু, তোমার সাথে মাথা ঠান্ডা রেখে কথা বলার চেষ্টা করছি, আমি সাধারণত এত কুল থাকি না।নানা ঝামেলায় মাথা গরম থাকে!–আবির হাসলো!
নীলি বললো, আচ্ছা, কবে যেতে চান? আমার পরীক্ষা এ মাসের শেষে,ছাব্বিশ বা আটাশ তারিখ থেকে, ফাইনাল হয়নি।
–আচ্ছা, তাহলে একদিনের জন্য আশেপাশে কোথাও চলো, কক্সবাজার পরে যাবো।
–আচ্ছা, বাসায় কি বলবো?
আবির অবাক হলো, বাসায় বলবে না কেন! না বলার তো কিছু নেই!
নীলি বললো, আচ্ছা আমি একটু নিচে নামি।
-নিচে নামতে গেলে পড়ে যেতে পারো।
-পড়বো না, আমি অভ্যস্ত এভাবে নামতে।
নীলি নেমে যাচ্ছে পুকুরের পাড় বেয়ে, হাঁটু সমান পানিতে একটা নীলচে শাপলা ভাসছে, আবিরের ভয় করছে, নীলির যদি পা পিছলে যায়। পুকুর পাড় নতুন মাটি দিয়ে বাঁধিয়ে উঁচু করা হয়েছে। যতোই অভ্যস্ত হোক, আবিরের কিছুতেই উচিৎ হয়নি নীলিকে পুকুরে নামতে দেওয়া।
এখন তো থামানো যাবে না, আবির কি নীলিকে ডাকবে?
নাকি নিজেই নেমে যাবে!
নীলি জুতা খুলে নেমে হাত বাড়িয়ে ফুলটা তুলে আনলো।
উঠে আসতে কষ্ট হলো কিন্তু আবির হাত বাড়িয়ে দিলো।
নীলির কষ্ট হচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো পড়ে যাবে। তাই আবিরের বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরে উঠে এলো। আবিরের হাত ধরে মনে হলো পড়বে না।আবির পড়তে দেবে না।
অনেক ভরসা নিয়ে আবিরের হাতটা আকড়ে ধরলো নীলি।

চলবে

শানজানা আলম