শুধু তোমারই জন্য পর্ব-০৪

0
455

শুধু তোমারই জন্য-৪

নুরুজ্জামান সাহেবের বয়স সত্তরের কাছাকাছি।প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন, রিটায়ার করেছেনও অনেক বছর। স্ত্রী গত হয়েছেন বছর পাঁচেক আগে। নিজের শরীর তারপর থেকে ভেঙে গেছে।এই গল্পে তার ভূমিকা অল্প হলেও উল্লেখযোগ্য। তিনি নীলির দাদুভাই।
আবিরের নানাভাই মোফাজ্জল সাহেব তার বাল্যবন্ধু, সেই ছোটবেলায় একসাথে খেলাধূলা করেছেন। যৌবনে কথা দিয়েছিলেন নিজেদের নাতি নাতনি বিয়ে দিয়ে সম্পর্ক পাকাপোক্ত করবেন, তবে সময়ের কারণে হয়ে ওঠেনি।
এত গুরুত্বপূর্ণও মনে করেননি কেউ। কিন্তু অসুস্থতার সময় কেন যেন মোফাজ্জল সাহেবকে দেখে সেই বিষয়টাই মূখ্য হয়ে উঠলো, এটা হয়ত কোন অদৃশ্য শক্তির ইচ্ছে ছিল। তার বাড়াবাড়ি অসুস্থতায় মোফাজ্জল সাহেব নিজের নাতি আবিরকে নিয়ে এসে নীলির সাথে কলেমা পড়িয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিলেন।
মনে অদ্ভুত শান্তি লেগেছিলো, ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে বোঝেননি আবার চোখ মেলতে পারবেন। কিন্তু আল্লাহ হায়াত রাখলে মারবে কে, তিনি মোটামুটি সুস্থ হয়ে খুলনা থেকে ফিরলেন।
নীলির মা নীলুফার তার সেবাযত্নে কোন ত্রুটি করেনি কখনো। কিন্তু আসার পর থেকে দেখছেন, নীলুফার তার ঘরে কম আসছে। তিনি জানেন কেন। বউমা নীলির বিয়েতে রাজি ছিল না। আজ ঢুকলো ওষুধ দিতে।
তিনি ডাকলেন, বৌমা, একটু বসো!
নীলির মা বসলেন।
তিনি বললেন, মা গো আমি জানি তুমি আমার উপর রাগ করে আছো, তোমার বুড়ো ছেলের উপর রাগ করোনা মা।
নীলুফাট কথা বললেন না।
নুরুজ্জামান সাহেব বললেন, ছেলেটা তো খারাপ না মা!
কোন দিক দিয়া কম বলোতো?
নীলির মা বললেন, আব্বা, ছেলে খারাপ তো বলি নাই, আমার একটা মেয়ে, তার বিয়ে আপনি এইভাবে দিলেন।
এখন কি আগের দিন আছে?মেয়েটা কিছু বোঝার আগেই বিয়ে হয়ে গেলো, ওর তো পছন্দ থাকতে পারে।আর পড়াশোনার কত ক্ষতি হবে আব্বা, বিয়ের পরে কি আর শ্বশুরবাড়িতে ভালো করে পড়া হয়?আমার মেয়েটা ভাল ছাত্রী।কত ইচ্ছে ছিল মেয়েটা পড়া শেষ করে, নিজে সরকারি চাকরি করবে।এখন পড়া শেষ করতে পারে কিনা কে জানে!
-মা গো, ওদের পরিবার ও ভালো, পড়াবে তো নীলিকে!
-আর পড়াশোনা আব্বা। এখন বিয়ে হইছে, সামনে উঠায়ে নিবে, তখন নানা বিষয়ে কি যে হবে! আপনে যে কেন জেদ করলেন!
— আমি কিছুনা মা, আমি উছিলা মাত্র!
নীলির মা উঠলেন। তার শ্বশুর নিজেও অপরাধবোধে ভুগছেন। যদি নীলির বাবা বুঝতো তাও হতো!
পাশের ঘরে শুনেছেন, দুই ননদ বলাবলি করছে, , মেয়ে সুন্দরী, বিয়া হইছে ভালো হইছে, এমন কি আর পড়াশোনায়, মেডিকেলে তো চান্স পায় নাই, টাকা দিয়া পড়াইতেছে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। ভালো হইছে,এখন খরচ জামাই দিবে, বড় ভাইজানে আসান হইলো! বড়লোক জামাই!
নীলির মা দরজা ঠেলে ঢুকে বললেন, কি ভালো হইছে আল্লাহই জানে, আমি তো এখন দোয়া ছাড়া আর কিছু করতে পারবো না, কিন্তু আমার মেয়ের পড়ার খরচ আমরাই দিবো, জামাইর টাকা লাগবে না। বলে তিনি চলে গেলেন রান্নাঘরে। দুই ননদ ফুসুরফুসুর করতে লাগলো।
নীলুফারের অনেক কষ্ট, মেয়েটা পড়াশোনায় ভালো।
সরকারি কোথাও চান্স পায়নি, কিন্তু এত সহজও তো না। দুই বছরে রেজাল্ট ভাল করছে, সেমিস্টার ফি অর্ধেক হয়ে গেছে। এখন কি করবে আল্লাহই জানে। সংসারে ঢুকলে অনেক জ্বালা। এখন বুঝতেছে না, একটা বাচ্চা কাচ্চা হলে তো কথাই নাই।
আবার একটা কথা মাথাশ আসে, আল্লাহর ইচ্ছে হুকুম সব। নাইলে এই ছেলে নানাবাড়িতে তো আসেও না, হুট করে মা ডাকলো আর চলে আসছে! কে জানে ভালোও হতে পারে। আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কিছু করার নাই।
নিজে চাকরি করতে পারেন নাই। ইচ্ছে ছিলো মেয়েটা ভালো কিছু করবে।
নীলির মা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন একা একা।আর মেয়ের জন্য দোয়া করেন, মেয়েটা যাতে ভালো থাকে। সবকিছু যেন ভালো হয়।

নীলিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলো আবির, তখন আটটা বেজে গেছে। ডিনার করা হয়নি, নীলি বলল, অনেক সময় বাইরে আছে, মাথা ব্যাথা করছে। জ্যাম ছিলো প্রচন্ড।
আবির বলছিলো, আচ্ছা পার্সেল করে খাবার নিয়ে যাও।
তাও নীলি রাজি হলো না। জানালো মেসে মিল দেওয়া আছে।নীলি চলে গেলো। আবিরও ফিরে যেতে লাগলো উত্তরা। টুকটাক গল্প করতে করতে নীলি অনেকটা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছিলো।আবিরের বেশ ভালো লাগছিলো। জরুরি টপিক ছাড়াও হালকা বিষয়ে এভাবে অনেক দিন কথা বলা হয়না কারো সাথে। নীলি একেবারে লাজুকলতা ধরনের নয়। আবিরের সব কথা মেনে নিচ্ছিলো এমন না, তাই কথা বলতে ভালো লাগছিলো।
জাহাঙ্গীরগেট সিগনালে দাঁড়িয়ে আবির হঠাৎ খেয়াল করলো নীলি শাপলা ফুলটা ফেলে গেছে, অতোটা তাজা নেই এখন আর। হাতে ফুলটা নিয়ে আবিরের খুব ভালো লাগলো। একটা নীলচে ফুলে নীলির আবেশটা রেখে গেছে।
কি আশ্চর্য, এটা কি ঐশ্বরিক কিছু?
হয়তোবা!
আবির ফিরেছে বেশ কিছু সময় হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিলো। মিতুল রাতের খাবারের জন্য ডাকলো। খেতে খেতে আবিরের মা জিজ্ঞেস করলেন, নীলির সাথে কথা হয়েছে? আবির মুখ না তুলেই বললো, আজ দেখা হয়েছিলো, বসুন্ধরা সিটিতে
মিতুল বললো, ইস আগে বলিস নাই কেন! আমি তো দেখতেই পারলাম না। মা একটা ছবি নিয়ে আসছে, বয়স আরো কম দেখায়।কলেজে পড়ার সময়কার।
-এমনিতেও স্লিম , খুব বেশি বড় হয়নি, ফেসবুকে দেখিস, নীলি নাহরিন।তোর সাথেও কথা হয়নি?
-না রে, নীলির মা তো বললো, ওর পরীক্ষাটা শেষ হোক,
তারপর সবার সাথে আলাপ হবে!
আবিরের ভীষণ বিরক্ত লাগছে, এই সমস্যাটা এত হালকা না, দীর্ঘস্থায়ী হবে। ব্যবসা করলে আর কিছু না শিখলেও মানুষের প্রকৃতি সহজে চিনতে শেখা যায়।
আবিরের মা বললেন, হু, আমি শপিং শুরু করি, গয়নাগাটি কিনে রাখি। পরীক্ষা দিক, ওখানে একদিন একটা অনুষ্ঠান করে নিয়ে আসবো ঢাকায়। তারপর তুই একটা বাসা নিয়ে নিস ধানমন্ডির দিকে।
আবির বলল , মা বাসা নিতে হবে কেন? এই বাসায় কি সমস্যা?
-ও এত দূর থেকে ক্লাশ করবে? গাড়ি তো তোর কাছে থাকে, মিতুলও রেগুলার পায় না।
-উত্তরা থেকে ধানমন্ডি ক্লাশ করে অনেকেই, কষ্ট হলে ও যেখানে আছে থাকবে, সপ্তাহের শেষে আসবে। আর নীলির মায়ের যেমন আচরণ, মনে হচ্ছে না বাসা নিলে উনি খুশি হবেন।
-এটা কেমন কথা?
–আর দুটো বাসা মেইনটেইন করাও আমার জন্য কষ্ট হয়ে যাবে মা! আর আমার কাজ কর্ম বনানী উত্তরা গাজীপুর কেন্দ্রিক। ধানমন্ডির দিকে তেমন কাজ নেই।
-কি এমন খরচ বাড়বে? বিয়ে করে বউয়ের থেকে আলাদা থাকবি!
-ধানমন্ডির দিকে বাসা ভাড়া অনেক, সাধারণ একটা বাসা নিলেও ষাট হাজার টাকার উপরে মান্থলি কস্ট আসবে। আর লিভিং স্ট্যান্ডার্ড নামানো যায় না। এই বাসা ওই বাসা মিলে দেড় লাখ টাকা মাসে লাগবে, এটা সম্ভব না এখনি। যদি নিতে হয়, তাহলে ফ্ল্যাট বুক করার প্ল্যানটা বাদ দিতে হবে।
আবিরের মায়ের এত বাস্তবভিত্তিক কথা ভালো লাগলো না। সে চায় তার ছেলে আর বউ একত্রে থাক।
-ভাইয়া, আজকে কি আসতে বলেছিস আগে থেকেই ?
মিতুল জিজ্ঞেস করলো।
-না, হুট করে দেখা হয়ে গেলো, আমি টুটুল, রাকিনদের সাথে গিয়েছিলাম।
– ওহ, ওদের সাথে তাহলে দেখা হয়েছে?
– না, দেখা করাইনি, একবারে প্রোগ্রাম এ দেখবে, আগে কি দরকার দেখা করার!
আবির খাওয়া শেষ করলো। রুমে গিয়ে চোখে পড়লো নীলির ফুলটা। আবির নিয়ে এসেছে হাতে করে, বেখেয়ালেই। মেয়েটা এখনো ভীষণ ছেলেমানুষ। আবির ফুলটা নিয়ে একটা আর্ট পেপারে ভাজ করে রেখে দিলো, এখন আর পানিতে রাখার অবস্থা নেই।
আশ্চর্য, নীলির কথা খুব মনে পড়ছে, মেয়েটার মধ্যে একটা মায়া মায়া ভাব আছে, আবিরের পরিচিত মহলের মেয়েদের মতো মেকি ভাবটা নেই ওর মধ্যে। আবির ভাবলো, নীলিকে একটা গ্রুমিং করাতে হবে, কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো, না, কোন কিছু পাল্টে দেওয়ার দরকার নেই, পটের বিবি এরকমই থাকুক না, ক্ষতি কী!
রাত বাড়ছে, আবিরের কিছু কাজ আছে, শেষ করতে হবে।
হঠাৎ ফোন ভাইব্রেট করলো, নীলি! আশ্চর্য তো, ফোন করেছে! আবির ভাবেনি ফোন করবে।
নীলি অনেকক্ষণ ভেবেছে ফোন কি করবো না করবো না!
কয়েকটা কাগজের টুকরোতে “ইয়েস-নো” লিখে তোলার চেষ্টা করেছে, নো উঠছিল বারবার, তারপর সেগুলো ফেলে দিয়েছে। কিছুক্ষণ ফোন হাতে নেয়, আবার রেখে দেয়, এমন করে অনেক সময় পার করে তারপর ফোন করলো। একটু খোঁজ নেওয়া উচিত, এটা ভদ্রতা।
নীলির সাথে এত সময় ছিলো, নীলিকে পৌছে দিয়ে গেলো।
-হ্যা নীলি, বলো! এতো রাতে ফোন করলে?
-পৌছেছেন ঠিক ভাবে?
-হ্যা, না পৌছানোর কোন কারণ নেই তো!
-হু, তাও ঠিক! আচ্ছা রাখি তাহলে।
-তুমি কি এটা জিজ্ঞেস করতে ফোন করেছ?
-হ্যা! এটা তো একটা কার্টেসী!
-আচ্ছা, তুমি তাহলে বেশ কার্টেসী মেইনটেইন করো দেখছি।
নীলি উত্তর দিলো না। সারা বিকেল এত গল্প করলো, এখন কেমন রুক্ষ ভাবে কথা বলছে। ফোন করাটা ঠিক হয়নি!
-তুমি কি করছ ? মাথা ব্যাথা কমেছে?
-হু কমেছে, কিছু করছি না। কিছু নোটস লিখতে হবে।
একটা প্রেজেন্টেশন রেডি করতে হবে, সেটার টুকটাক কাজ আছে।
-আচ্ছা কাজ শেষ করো তাহলে, রাখছি।
নীলি ঠিক করে ফেলল, আর একবারো ফোন করবে না। ফোন কেটে দিলো। আবির হাতের কাজগুলি শেষ করে দেখে পোণে একটা বাজে। নীলি ঘুমিয়েছে হয়ত।
কি যে মনে হলো, হোয়াটসঅ্যাপে নীলিকে একটা টেক্সট করলো, ঘুমিয়েছ?
নীলি সিন করে রেখে দিলো, উত্তর দেবেই না। সিন দেখে আবির ফোন করল, নীলি পিক করবে না ভেবেও ফোন পিক করে ফেললো।
-নীলি তোমার কাজ শেষ হয়নি?
-হ্যা হয়েছে।
-তুমি কি রাত জাগো? ঘুমাবে না?
-ঘুমাবো!
-তোমার মাকে বলেছো যে আমার সাথে দেখা হয়েছে?
-না কথা হয়নি তারপর।
-নীলি তুমি রেগে রেগে কথা বলছো!
-না তো, আপনি যে প্রশ্ন করছেন তার উত্তর দিচ্ছি শুধু!
-শোন, আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম, হাতে বেশ কিছু কাজ ছিল, আমি প্রচন্ড ব্যস্ত থাকি।
-আচ্ছা।
-আচ্ছা কাল বাসায় বলো যে তুমি আমার সাথে ঢাকার আশেপাশে কোথাও যাবে।
-আচ্ছা, এটা না বললে হয় না?
-এটা কেমন কথা, কেন বলবে না বলো!তুমি তো চুরি করছো না!
-না মানে পরীক্ষার আগেই যাই যদি, তাহলে না বলি!
আবির চুপ করে থেকে বলল , পরে তো জানবে, তখন?
-আপনি না বললে তো জানবে না!
-আমাকেও বলতে না করছো! আশ্চর্য তো!
-আচ্ছা কবে যেতে চান জানান আগে, আমি বাসায় জানাবো তারপরে।
-সেটাই সমস্যা। এই সপ্তাহটা আমি খুব ব্যস্ত! তারপরের সপ্তাহে চিটাগং যেতে হতে পারে। এর ফাঁকে সময় পেলে যাবো।
-আচ্ছা, জানাবেন আমাকে তাহলে, রাখছি এখন, অনেক রাত হয়েছে!
আসলেও দেড়টা বাজে, আবিরের হঠাৎ মনে হলো, ফোন রাখতে ইচ্ছে করছে না।আর একটু কথা বলতে ইচ্ছে করছে! কিন্তু কি বলা যায়!
-নীলি, কাল ক্লাশ কখন তোমার?
-দুপুরে, সাড়ে বারোটায়।
-শেষ হবে কখন?
-তিনটা বাজবে, আপনি আসবেন এদিকে?
-না, এমনিই জিজ্ঞেস করেছি।
– কাল থেকে আমি কয়েকটা দিন ভীষণ ব্যস্ত, ঢাকা, সাভার, গাজীপুর আপ ডাউনের উপর থাকবো!
-ওহ আচ্ছা।
-সময় পেলে জানাবো তোমাকে।
-আচ্ছা।
-আচ্ছা রাখছি তাহলে! ভালো থেকো।
বাই।
-বাই।
মজার বিষয় হচ্ছে নীলিরও ফোনটা রাখতে ইচ্ছে করছিলো না। তবুও রাত বাড়ছে, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, ফোন রাখতেই হবে এখন। নীলি ফোনটা হাতে নিয়ে বসে রইলো আরো কিছুটা সময়।
১০
গত কয়েকদিনে নীলির সাথে আবিরের কথা হচ্ছে খুব কম, আবির খুব ব্যস্ত ছিলো। রাতে ফিরে টুকটাক ” হাই- হ্যালো” করার অভ্যাসটা হয়েছে শুধু।
আবির তো আগেই বলেছে, খেয়েছো, ঘুমিয়েছো এসব ন্যাকামি সে পছন্দ করেনা। নীলির আর তাই ফোন করা হয় না। তবে নীলি রাতে অপেক্ষা করে অবচেতন মনে।
আবির একদম ফ্রি হয়ে একবার ফোন করবে, ক্লান্ত থাকলেও বলবে, নীলি টায়ার্ড অনেক, ঘুমিয়ে যাচ্ছি!
তবু নীলিকে না বলে একদিনও দিন শেষ হয়নি আবিরের।
এটা যেন অভ্যাস হয়ে গেলো, নীলির কথা শোনার মতো সময় ব্যস্ত আবির পায় না।
সপ্তাহ ঘুরে এলো।
একদিন আবিরের একটা ক্লায়েন্ট মিটিং পড়লো ঢাকার বাইরে। ওর ক্লায়েন্টের একটা রিসোর্ট আছে, আবিরকে তারা বললো, আপনি আসুন, আমরা ডিটেল আলাপ করি, মিটিংও হবে, বেড়ানোও হবে।
আবির জিজ্ঞেস করলো, ওখানে কাপল রুম রেন্ট দেওয়া হয় কিনা, তাহলে আবির তার মিসেসকে নিয়ে আসতে চায়। কাজটা ছিলো আবিরের কাছে, তাই ওরা সানন্দেই আবিরকে একটা কটেজে উঠতে বললো।
আবির একটু কনফিউজড, নতুন একটা জায়গা, নীলিকে নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে, তারপর অনেক ভেবে রাজী হয়ে গেলো। নীলি মাত্র ক্লাশ থেকে ফিরেছে, আবির হঠাৎ নীলিকে ফোন করলো, একদম দুপুর বেলায়, নীলি, আজ বিকেলে তোমাকে নিয়ে যাবো। একদম সময় পাইনা, হঠাৎ একটা কাজে রিসোর্ট পেয়ে গেলাম।
নীলির একটা অদ্ভুত শিরশিরে অনুভূতি হলো। আবিরের সাথে ওর বিয়ে হয়ে গেছে। আবিরের সাথে বাইরে যাওয়া মানে নতুন কোন অচেনা সম্পর্ক তৈরি হবে, এটাই স্বাভাবিক। আর আবির যতোই বলুক, মেন্টাল ম্যাচিং এর কথা, বিয়ে করা বউ নিরিবিলি জায়গায় পেলে, সে কি কোন কিছু করতে চাইবে না! যেভাবে কথা বললো সেদিন!
যদিও পরে আর কিছুই বলেনি আর, পরে সরিও বলেছিলো। তবুও সে তো সাধু সন্ন্যাসী না।
“সবটাই বুঝতে পারছি, কিন্তু প্যাচে পড়ছি, কিচ্ছু করার নাই”- নীলি একা একা ভাবে। আবার আবিরের সাথে দেখা হোক, মনে মনে এটাও চাইছে। আবির যে একটু কথা বলে, মন ভরে না কখনো, ফোন রাখার সময় মনে হয় নীলি জিজ্ঞেস করে, কোথায় গিয়েছিলেন, লাঞ্চ কোথায় করেছেন! বাসায় ফিরে কি করলেন?
এগুলো নাকি ন্যাকামি মনে হয় আবিরের! তাহলে আর কি কথা বলবে নীলি! কথা শেষ হয়ে যায়। সমস্যা হচ্ছে বাসায় বলা যাবে না। মা কিছুতেই যেতে দিবে না। বলবে উঠিয়ে নিয়ে যাক, তারপর যেও, এখন যেতে হবে না।
নীলি মনস্থির করে ফেললো যে, আবিরের সাথে কোথাও গেলে, অদ্ভুত কিছু ঘটবে, সে সিনক্রিয়েট না করে সবটা মেনে নেবে, কিন্তু বাসায় জানাবে না। আবিরকে তো দায়িত্ববান মনে হয়, নিজের যে কোন কাজের রিস্ক সে নিতে পারবে।
এসব ভেবে নীলি লজ্জা পেয়ে গেলো। ধূর ধূর, এত আজেবাজে চিন্তা কেন করছি আমি!
আবির ভাবছে, নীলির জন্য টুকটাক কেনাকাটা করা দরকার। পরের দিনটা ওখানে থাকলে, সেদিনকার মতো দুয়েকটা জামাকাপড় প্রয়োজন। মেয়েটা বেশি সিম্পল, মাথায় ইরানিদের মতো স্কার্ফ জড়ায়, সেটা হিজাব হয় না, সামনে থেকে চুলগুলি দেখা যায়, যদিও ফর্সা মুখটা মিষ্টি লাগে দেখতে। আবির নীলির জন্য অল্পসল্প শপিং করে ফেললো, নিজের জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে এলো নীলিকে পিক করতে।
নীলি উঠে বসতেই আবির জিজ্ঞেস করলো, বাসায় বলেছো,মাকে?
-না, আপনিও প্লিজ বলবেন না!
-কি আশ্চর্য, আমি কি অন্য কাউকে নিয়ে যাচ্ছি!
তারপর একটু সময় চুপ করে থেকে আবির বললো, নীলি ভয় করছে না?
-না তো!
-একটা সই করেছো বলে ভয় নেই??
-ঠিক তা না, আপনার সাথে তো কয়েকদিন কথা বলছি, ভয় এজন্যই করছে না।
নীলি কথার পিঠে কথা বললে আবিরের ভালোই লাগে।
ওরা যখন রিসোর্টে পৌছালো, তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আবিরের কটেজে ম্যানেজার পৌছে দিয়ে এলো, আবির ব্যাগপত্র রেখে বললো, নীলি তুমি একটু রেস্ট নাও, টিভি দেখো, আমার একটা মিটিং আছে হলরুমে।
ভয় করলে চলে এসো, ফোন দিও।
নীলি মনে মনে ভাবলো, মানে কি, এখানে কি মিটিং করতে আসছে?
–আমি একা থাকবো!
–কেন ভয় করবে?
নীলি ঘাড় নাড়লো, ভয় করবে।
– আচ্ছা তাহলে তুমিও চলো। এই ব্যাগে তোমার জন্য শপিং করা আছে, চেঞ্জ করে নিয়ে চলো।
নীলি একবার বলতে চাইলো, ও তো একটা এক্সট্রা ড্রেস নিয়ে এসেছে, কিন্তু বললো না। সময় কম, তর্ক করা যাবে না এখন।
নীলি তাড়াতাড়ি করে তৈরি হয়ে আবিরের সাথে বের হলো। আশ্চর্য, দু সপ্তাহ আগে যে পুরোপুরি অচেনা ছিল, তাকেই ভরসা করছে এখন। আবির ক্লায়েন্টদের সাথে নীলির পরিচয় করিয়ে দিলো, মিসেস আবির আহসান হিসেবে। নীলির একটু লজ্জা লাগলেও সামলে নিলো সহজেই।
আবির কাজ করছিলো, নীলি হলরুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো, ফাঁকে ফাঁকে আবিরকেও দেখছিলো, লোকটা অনেক ব্যস্ত থাকে, এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে একমনে কাগজপত্র দেখছে। ব্যস্ত হলেও দেখতে ভালো লাগছে।
সীগ্রীন কালারের একরঙা ফুল শার্টের হাতা গোটানো।
সামনের চুলগুলো কপালে পড়েছে।
হলরুমের ওয়ালে অনেক পেইন্টিং, টেরাকোটার কাজ করা। বেশ বড়, পঞ্চাশ ষাট জন সহজে লম্বা টেবিলটায় বসতে পারে। আবিরেরা এক মাথায় কাজ করছে, ওখানে পর্যাপ্ত আলো, বাকি রুমটা ফাঁকা ফাঁকা আলো।
আবিরের কাজ শেষ হতে রাত দশটা বেজে গেলো। ডিনার সার্ভ করে দিয়েছিলো। ওয়েটার নীলির প্লেটে বড় চিংড়িমাছ তুলে দিতে যেতেই নীলি নিষেধ করলো, সে চিংড়িমাছ খায় না।
ওরা খেয়ে রুমে ফিরলো বেশ রাত হয়ে গিয়েছে। বিশাল রুম, দুপাশে দুটো বিছানা। একটা বিছানায় ব্যাগগুলো রাখা ছিলো। নীলি ব্যাগগুলো আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখলো।
আবির একটু ফ্রেশ হয়ে বের হলো ওয়াশরুম থেকে। নীলি বসেছিলো, আবির একটা টাওয়েল পেচিয়ে বের হয়েছে, নীলি আড়চোখে দেখলো, আবিরের বুকভরা কোকরানো পশম, ভীষণ সুন্দর, নীলি লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। আচ্ছা আবির আর সে একত্রে থাকবে রাতে, আবির শুরুটা কিভাবে করবে! নীলির চিন্তার শেষ নেই!
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আবির খেয়াল করল কম্ফোর্টার একটা দিয়েছে। অবশ্য ওদের সমস্যা না। ওরা তো আর জানে না, নীলি প্রথমবার এসেছে আবিরের সাথে। রুম সার্ভিসের ফোন করে জানাবে, কি অস্বস্তিকর বিষয়।
নীলি অবশ্য খেয়াল করেনি মনে হয়।
-নীলি ঘুম পাচ্ছে?
-না, আপনার ঘুম পাচ্ছে?
-তা একটু পাচ্ছে!
নীলি হাসলো একটু।
আবির বিছানার বসতে বসতে বলল,
-আচ্ছা তোমার কথা বলো, পড়াশোনা কেমন হচ্ছে?
-হচ্ছে মোটামুটি, এবার মনে হয় ভাল হবে না।
আগের দুবার ভালো ছিলো।
-হবে, কনফিডেন্স হারিয়ো না।
আর কি কথা বলবে, আবির খুঁজে পায়না। নীলিও চুপ করে যায়।একটু পরে নীলি জিজ্ঞেস করলো, এখানে কিসের মিটিং ছিলো?
আবিব বললো, ওদের কাছে আমরা কিছু কাজ করাবো, তাই স্যম্পল, ম্যাটেরিয়াল দেখলাম।
-কাজ হবে?
-হু হবে, ভালো কাজ। প্রাইসও ঠিক আছে।
-কি কাজ করান?
-এগুলো আসলে তুমি বুঝবে না, আমাদের একটা ফ্যাক্টরী আছে, বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের প্যান্ট তৈরি হয়। কাপড়টা ওদের কাছ থেকে কিনে নিতে হয়। আমরা ডিজাইন দিয়ে দেই।
-আচ্ছা, না বোঝার কি আছে!
-সেটা বলিনি, বুঝতে আরো একটু বড় হতে হবে, এটলিস্ট গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে হবে!
-ওহ, বুঝলাম এখন বুঝবো না, কিন্তু না বোঝার কিছু নেই!
আবির হেসে ফেললো। প্রায় বারোটা বাজছে।
-নীলি সামনে যাবে? বসি চলো?
-আপনার ঘুম পাচ্ছে বললেন না?
-তোমাকে ইনভাইট করে নিয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়লে বিষয়টা কেমন অভদ্রতা হয়!
-আমরা কি কাল সকালেই চলে যাবো?
-না, কাল বিকেলে যাবো, কাল আমার কাজ নেই, পুরো দিন ফ্রি রেখেছি।
-আমার অবশ্য ক্লাশ ছিলো!
-তুমি আগে যেতে চাও?
-নাহ, থাক, দেখি, ভালো না লাগলে চলে যাবো?
নীলি যেন জানে, ওর ভালো না লাগলে আবির থাকবে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে! তুমি শুয়ে পড়ো তাহলে, লাইট নেভাব?
আবির পাশের বেডে বালিশ ঠিক করলো!
-কম্বল তো একটা দিয়েছে, আপনি কি গায়ে দিবেন? নীলি জিজ্ঞেস করল।
-সমস্যা নেই, আমি সোয়েটার পরে নিয়েছি! তুমি ঘুমাও!
লাইট জ্বলবে?
-জ্বলুক!
-ওকে, গুড নাইট!
নীলি কি করবে বুঝতে পারছে না। সবকিছু এত নাটকীয়তা ছাড়া হবে, কল্পনাও করেনি!
আবির খুব সাধারণ একটা কথা ভেবেছে, নীলি ওর বউ, জোর করা যায় না এমন না, কিন্তু নীলি জোর করার মতো কেউ না। একটু সময় দিলে নিজেই কাছে আসবে, অহেতুক ভয় ঢুকানোর দরকার কি! তাছাড়া মেয়েটা হয়তো এত কিছু ভাবেও নি, সহজভাবে আসতে রাজী হয়েছে!
নীলি নিজেই লজ্জা পাচ্ছে, কত কিছু ভেবে ফেলেছিলো, কিছুই হয়নি! ভারী অদ্ভুত লোক তো! ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি?
নীলি উঁকি দিয়ে দেখলো, হু, ঘুম! বালিশ নিয়ে গুটিশুটি মেরে আছে, সোয়েটারে কি ঠান্ডা কমবে!কি করবে নীলি!
নীলি আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো, আবির গভীর ঘুমে। তারপর নিজে উঠে লাইট নিভিয়ে আবিরের পাশে শুয়ে পড়লো। কম্ফোর্টার ডাবল, সমস্যা হবে না। বাইরে থেকে আলো এসে বারান্দায় পড়ছে।
নীলিও একসময় ঘুমিয়ে পড়লো, নিজেও টের পেলো না।
১১

– নীলির কি এই ছেলে পছন্দ হইছে?
খিলিপান মুখে দিতে দিতে যিনি কথা বলছেন, তিনি নীলির বড় মামা। নীলির মা বাবা তাকে খুব মানে। তবে তিনও সহজ মানুষ না। নীলির বিয়ের আকস্মিকতায় তাকে ডাকা হয়নি বলে তিনি রাগ করেছিলেন। নীলির বাবা তাকে বাজার থেকে আজ ধরে এনেছেন বাড়িতে। সাথে নীলির খালু খালাও এসেছেন।
-নাহ ভাইজান, মেয়েটাকে কিছু বলার সুযোগই দেয় নাই। ওর আব্বা আর চাচা ফুপুরা একরকম চেপে ধরে সই করিয়েছে। কবুল বলতে বাধ্য করছে।কানতে কানতে মেয়েটা শেষ!
-নীলির মা তুমি বাড়িয়ে বইলো না।নীলি তার পরদিন স্বাভাবিক ছিল– নীলির বাবা বললেন।
-স্বাভাবিক ছিলো, তার কারণ বিয়ের কাহিনী আগায় নাই, পাত্রপক্ষ চলে গেছে। ভাবো তো, যদি নীলিকে নিয়ে যেত বা ছেলেটা থাকতো!নীলুফার বললেন!
-শোনো নজরুল, নীলির বাবাকে ওর বড় মামা বললেন, তুমি এখন আর কথা বইলো না। তোমার আবেগ বুঝছি আমি।
তালইজান মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন, একটা আবদার করছে ফেলতে পারো নাই। মাইয়াটাও তো তোমার, কাইটা ভাসাইয়া দিবা তাই বইলা, ওই ছেলে নীলির সাথে যোগাযোগ করছে?
-করছে ভাইজান, একদিন অনেক গিফট দিয়ে আসছে!
আর তো কিছু বলল না, নীলি তো আমারে সব বলে!।
-ওহ, গিফট দেওয়া-দেওয়ি হইছে, কাবিনের কি অবস্থা?
হুড়োহুড়ির মধ্যে কিছু উসুল হইছে?
-ভাইজান, ছেলের মা একভরি সোনার চেইন দিয়ে গেছে, আরো আসতে চাইছিলো, আমি বলছি মেয়ের পরীক্ষা শেষ হোক। আর ওনারা ভালো পরিবার, সেটা তো সমস্যা না, সমস্যা হইছে, এমনে কেন বিয়ে হবে জোর করে! আর ছেলেটা নীলির চাইতে নয় বছরের বড়। সবাই বলে নীলির বয়স কম হয় নাই, কিন্তু ভাইজান ও না এত কিছু বোঝে না এখনো! ছেলে ব্যবসা করে এইটাও সমস্যা, ব্যবসার কোন ভবিষ্যত আছে, দেখেন নাই আব্বার কি অবস্থা হইলো একবার! ভয় লাগে, মেয়েটার পড়াশোনাও হবে না আর।–
নীলির মা বললো কথা গুলো!
-হু, এত চিন্তা করিস না, সই দিয়া বিয়া হইছে তো, নীলি পরীক্ষা দিক, আমরা কথা বলব, যে এমনে মেয়ের মত ছাড়া বিয়া হয় না। সইয়েরই তো কারবার। তার বড়লোক, তাগোর সমস্যা হবে না। নীলি আরেকটা সই দিয়ে দিবে।
ওরও আপত্তি থাকবে না। পরে পড়াশোনা শেষ করুক, আমরা দেখেশুনে পছন্দমত ওর বিয়ে দিবো!
-ভাইজান এইটা কি বলেন? হওয়া বিয়া ভাঙবেন, কি দরকার।মেয়েটা ভালো থাকবে? – নীলির বাবা জিজ্ঞেস করলেন।
নীলির মামা শক্তভাবে বললেন, মেয়ের মত ছাড়া বিয়ে হয় না।
ঘন্টা কয়েক ঘুমানোর পরে আবিরের নাকে সুড়সুড়ি লাগলো, একটা অচেনা মিষ্টি সুবাস আশেপাশে। আবির হাত দিয়ে দেখলো, নরম চুল বাজছে, চোখ মেলে দেখলো নীলির চুল আবিরের মুখে পড়েছে। লাইট নেভানো, নীলি শীতে কম্ফোর্টার টেনে কাছে চলে এসেছে।
নীলির চুলে একটা কেমন যেন ঘ্রাণ, আবির নিজের মধ্যে অস্থিরতা অনুভব করলো। অদ্ভুত একটা তাড়া শরীরের মধ্যে, রক্তপ্রবাহের মধ্যে অন্য কোন চাওয়া ভীড় করতে শুরু করেছে। মেয়েটা মনে হয় আবিরের শীত লাগছে দেখে কাছে এসে গায়ে দিয়ে দিয়েছে, এত কাছে এসে শুয়ে পড়লো, অস্বস্তি লাগেনি?
আবির ডাকলো, নীলি, এই নীলি! নীলি আরো একটু এগিয়ে ঘুমুতে লাগলো। আবির আঙুল দিয়ে নীলি চুলগুলো সরিয়ে ঠিক করে দিলো কতক্ষণ। টের পাচ্ছে না।
চুলগুলিতে আঙুল ছোঁয়াতে বেশ ভালো লাগছে, নাকের উপর থেকে আঙুল টেনে ঠোঁট স্পর্শ করে যায় আবির।
বউ মানে কি, শুধু শরীরের টান তো না, কিছুটা দুষ্টমি, অনেকটা ভালোবাসা, কিছু দায়িত্ব আর অধিকারবোধ। আবিরের ভালো লাগছে, নীলি যখন কাছে থাকবে এভাবে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দেওয়া যাবে।
আবির আবার ডাকলো ফিসফিস করে, নীলি, এই নীলি! কাছে আসবে!
নীলি ঘুমের মধ্যে উত্তর দিলো, হু!
আবির আবার জিজ্ঞেস করল, সত্যি বলছো তো?
-হু!
পুরোপুরি ঘুমিয়ে কাঁদা মেয়েটা।
আবির নীলিকে কাছে টেনে নেয়, প্রথমে কপালে চুমু খেয়ে তারপর ঠোঁটের কাছে ঠোঁট স্পর্শ করে আলতো করে নিজের উষ্ণতা পৌছে দেয়। নীলি চোখ মেলে তাকায়!
আবিরের পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আবির তাই নীলিকে কাছে টেনে নেয়।অদ্ভুতভাবে নীলি কোন বাঁধা দিলো না। সে মানসিক ভাবে তৈরি ছিল, তবে খুব লজ্জা লাগল, নিজেই কাছে এগিয়েছে ভেবে।
-নীলি ভয় পাচ্ছো?
নীলি মাথা নাড়ল, ভয় পাচ্ছে না! তবে চোখ নিচু করে রাখল। আবির নীলির সম্মতি পেয়ে আরো কাছে এগিয়ে যায়।
শেষরাতের দিকে একটা নতুন অচেনা সম্পর্কে জড়িয়ে গেল আবির আর নীলি ।

চলবে

শানজানা আলম