শুধু তোমারই জন্য পর্ব-০৬

0
397

শুধু তোমারই জন্য- ৬

আবির ডাইনিং থেকে রুমে চলে এলো! মায়ের সাথে যত জোর দেখিয়ে কথা বলেছে, মনটা ততো দুর্বল হয়ে গেছে।
নীলি ভালো মেয়ে। হাজবেন্ড বলে আবিরকে উপেক্ষা করতে পারেনি। বাবা মা কে কি উপেক্ষা করতে পারবে?
গত মাসেও মেয়েটাকে চিনতো না। হুট করে বিয়ে হয়ে গেলো। তারপর গত দুদিনে মেয়েটা এত বেশি জড়িয়ে গেলো আবিরের সাথে! কি হতো এত কাছে না এলে, আবির তো ওকে জোর করতো না। এমনকি নীলিকে চুমু খাওয়ারও কোনো প্ল্যান করেনি আবির।
নিজে থেকে কাছে এসে নিজেকে জড়িয়ে ফেললো আবিরের সাথে।
নীলির চুলগুলো কি নরম, এটাকে বোধহয় রেশমের মতো চুল বলে। একদম সাধারণ, কালোচুল, কোন কৃত্রিমতা নেই। এমনকি সাজতে পারে বলেও মনে হলো না।
ব্যাংকক থেকে আবির অনেক মেকাপ কিটস এনেছিল, সেগুলো তো নিয়ে আসেনি, আবির খেয়াল করেছে, একটু কাজল দিয়ে কি একটা ক্রিম লাগালো, তারপর বলল, রেডি, চলেন!
আবিরের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
আবিরের কোন মেয়েবন্ধু এত সাধারণ ছিল না, অসংখ্য সুযোগ থাকার পরেও কাউকে নিয়ে নিরিবিলি সময় কাটানোর কথা মাথায় আসেনি। অথচ এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে, রোজ রাতে বাসায় ফিরে আবির নীলিকে দেখতে চাইবে। নীলির চুলে মুখ গুঁজে ঘ্রাণ নিতে চাইবে। নীলি যদি সত্যি সই করে দেয়, তাহলে?
কারো জন্য জীবন থেমে থাকবে না, আবিরের কি অন্য কাউকে এত ভালো লাগবে কখনো! গত দু রাতে মেয়েটা আবিরের ডানহাতে ঘুমিয়েছে, আজ সেটা মনে হতে শুয়ে পড়তেই ইচ্ছে করছে না আবিরের।
হয়ত ওই কথাগুলো না শুনলে এত খারাপ লাগতো না।
আবির বারান্দার গ্লাস টেনে সেই ফুলটা নিয়ে এলো, আর্ট পেপারে মুড়ে রোদে রেখেছিল, শুকিয়ে স্মৃতি হয়ে থাকবে!
এখন কি এভাবে ছেলেমানুষি মানায় আবিরকে! সকালে নীলিকে রেখে আসার আগে ওকে অসংখ্য চুমু খাওয়ার মতো ছেলেমানুষি করেছে আবির। নীলিও বাঁধা দেয়নি।
আবিরকে সায় দিয়েছে বারবার।
আবির ভাবলো, আজ সকালেও আবিরের বুকে একটা হাত জড়িয়ে ঘুমিয়েছিল, আবির ডেকে ঘুম ভাঙিয়েছে।
যদি ও আলাদা হয়ে যায়, অন্য কারো বুকে এভাবেই ঘুমাবে! অসম্ভব, আবিরের চোখের কোণ চিক চিক করে ওঠে।
নিজেকে সামলে ফোন করে নীলিকে।
-নীলি, ঘুমিয়েছো?
-হু, ঘুমিয়েছিলাম। আপনি ঘুমাননি কেন?
-ঘুম আসছে না, নীলিবুড়ি কে খুব মিস করছি, মনে হচ্ছে নীলিবুড়ি আমার অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছে, তাকে হাতের উপরে না রেখে, চুলের গন্ধ না নিলে আমার ঘুম আসবে না!
নীলি উঠে বসল , আবির তো এভাবে কথা বলে না! কি হয়েছে আবিরের!
-নীলি, একটু অনস্ক্রীণে আসবে?
-আমার রুমে আরো চারজন আছে, লাইট জ্বালানো যাবে না।
-টেবিল ল্যাম্প বা ল্যাপটপ অন করো!
নীলি ছোট্ট টর্চ টা মাথার কাছে রেখে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কলে এলো।
আবির বললো, নীলি তুমি বের হতে পারবে এখন?
আমি আসি?
-এখন আসতে চান? না, এখন আসতে হবে না।
এখন অনেক রাত, আমি বের হতে পারবো না তো!
-আচ্ছা, ওকে। নীলি তোমার মায়ের আমাকে নিয়ে কি সমস্যা?
-কোন সমস্যা নেই তো!
-কিচ্ছু লুকাবে না!
-আসলে মায়ের কথা না শুনে আমার বিয়েটা হয়েছে, এটাই মা মানতে পারছেন না।আমার জন্য চিন্তা করছেন।
-তুমি বলো, আমার সাথে তোমার কোন অসুবিধা নেই!
-বলেছি তো!
আবির বুঝলো, আবির যেটুকু জানে, নীলি সেটুকু জানে না এখনো।
-আপনার সকালে অফিস আছে না?
-হু আছে
-এখন তাহলে ঘুমিয়ে যাওয়া উচিৎ! ফোন রাখি?
-আচ্ছা রাখো
নীলি রাখলো না, আবির বলল, নীলি?
নীলি উত্তর দিলো, বলুন!
-না কিছু না, ঘুমাও তুমি!
ফোন রাখলো আবির। তারপর নীলিকে লিখলো, নীলি, তোমাকে অনেক ভালোবাসি, কিন্তু পাঠালো না।
নীলি কি মনে করে আবিরকে লিখে পাঠালো, আমিও আপনাকে খুব মিস করছি, খুব!
আবির শুধু লিখলো, “নীলি, ভালোবাসি!”
আর কেউ কিছু লিখলো না, তবে জেগে রইলো দুজনই অনেকক্ষণ।

১৭
পরদিন আবির ব্যস্ত হয়ে যায় নিজের কাজে।তবে মাথায় একটা টেনশন থেকেই যাচ্ছে। মায়ের কাছে শুনে এবং নীলির সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে, নীলি কিছুই জানেনা এখনো, আর পরীক্ষার জন্য হয়ত ওকে কিছু বলবেও না।
আবির সময় পাচ্ছে না, নীলির সাথে বসে একটু বোঝালে হতো। আবার নিজের কাছে খারাপ লাগে, নীলিকে বোঝাতে হবে কেন! নীলি ওকে ভালোবাসলে নিজেই সই করবে না। আর আবির একটা বিষয়ে অটল থাকবে, নীলিকে সই করতে হবে আবিরের সামনে। নীলিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিৎ, হঠাৎ করে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, সেটার কোন প্রস্তুতি দুজনের কারোই ছিলো না!
ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব দরকার। তিন চার দিন পরে আবির সময় পেলো, কিন্তু সন্ধ্যার পরে। রাত হয়ে যাবে ডাক্তারের চেম্বার থেকে ফিরতে ফিরতে। আবির নীলিকে বললো, আজ আর ফিরতে হবে না বাসায়, আবির একটা রুম বুক করে ফেললো। নীলির সাথে রোজই কথা হচ্ছে, অনস্ক্রীনে দেখাও হচ্ছে, তবুও আবিরের একটা অস্থিরতা কাজ করছে, নীলির সাথে দেখা হবে। একই অনুভূতি হয়তো নীলির মধ্যেও, সে বিকেল থেকে গোছানো শুরু করেছে। আবির আসতেই নীলি বের হলো বাসা থেকে।
ডাক্তারের চেম্বারে খুব বেশিক্ষণ সময় লাগলো না, তবে কিছু রুটিন টেস্ট করতে দিয়েছে। নীলি খুব লজ্জা পেয়ে যাচ্ছিলো, আবিরের দেখতে খুব ভালো লাগছিলো। তবে আবির দেরী করলো না। টেস্ট করাতে দিয়ে এলো।
আবার আবিরের সাথে একসাথে থাকা হবে, কয়েকটা দিন নীলিও যেন অপেক্ষা করছিল, বাইরে দেখা করার সময় আবির পায় না একদম। আবিরের চোখ দেখে নীলির মনে হলো, আজ আবিরকে কি ক্লান্ত লাগছে!
নিজেই জিজ্ঞেস করলো, আপনার কি ক্লান্ত লাগছে?
-না, আসলে ঘুম হচ্ছে না।
-ওহ, এত কাজ করলে ঘুমটা কিন্তু খুব দরকার!
-ঘুম না এলে কি করবো বলো?
-আচ্ছা আজ ঘুমান!
– হু, তুমি ঘুমুবে না?
-হ্যা ঘুমাবো তো!
-আজও কি আমার হাতে ঘুমুবে?
-ইশ, আপনার যে কষ্ট হয়, সেটা তো আমাকে বলেননি?
– না তো, অভ্যাস নষ্ট করে দিয়েছো একদম।
নীলি খুব লজ্জা পেয়ে যায়।
-নীলি বাসায় বলেছো, আমার সাথে দেখা করেছো?
নীলি ঘাড় নাড়লো, বলেনি।
-বলছো না কেন!
-বলা হয়নি, আসলে আমার ফাইনালের পরে তো মনে হয় প্রোগ্রাম হওয়ার কথা তাই না?
আহা, নীলি তুমি জানো না, প্রোগ্রাম নয়, অন্য কিছু ভাবা হচ্ছে, আবির মনে মনে ভাবলো।
-নীলি মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তো।
নীলি আবিরের চুল এলোমেলো করে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। আবির চোখ বন্ধ করে থাকে কিছুক্ষণ ।
একসময় আবির হাত ধরে নীলিকে কাছে টানলো, নীলি, তোমাকে ছাড়া আমার আসলেই চলবে না। তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি আমার কাছে নিয়ে আসবো, তখন তোমার এই ভয় ভয় ভাবটা থাকবে না।
-আচ্ছা নীলি, যদি তোমাকে বলা হয়, আমাকে ছেড়ে যেতে? তুমি কি করবে? ছেড়ে চলে যাবে আমাকে?
নীলি ঘাড় নাড়লো, সে যাবে না।
-সত্যি বলছো তো?
-হু!
– আমাকে তো একমাস আগেও চিনতে না!
-আপনিও আমাকে চিনতেন না!
-শুধু কি বিয়ে হয়েছে বলে ভরসা করতে পারো?
-এটা আপনি আগেও জিজ্ঞেস করেছেন, বিয়েটা তো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু আপনিও গুরুত্বপূর্ণ।
-বাহ, তুমি তো বেশ বড়দের মতো করে বলছো!
-আমি তো বড়ই, আপনার থেকে ছোট!
আবির হা হা করে হেসে ফেললো, হু, তুমি অনেক বড়। অনেক সুন্দরী! আর?
-আর কি?
-নাহ, বাকিটা বলবো না! আসো কাছে আসো, রাত পেরিয়ে গেলেও তোমার সাথে গল্প শেষ হবে না আমার।
নীলি আবিরের প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে ভাবে, যা আমি চাইতামই না, সেটাই এখন সবচাইতে বেশি চাই।
পাবো কিনা, কে জানে!
আবিরের মনে হয়, নীলির পরীক্ষা আরো দূরে যাক, সেই সময়টা না আসুক, যেদিন আবিরকে নীলির মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে!

১৮
নীলির মামা করিৎকর্মা মানুষ, মোটামুটি সব ম্যানেজ করে ফেলেছেন। কাগজপত্র তৈরি করতে তার টাকা লেগেছে হাজার পঞ্চাশ। আসলে আরো বেশি লাগার কথা ছিলো, জায়গা জমির জন্য মামলা মোকদ্দমা করতে করতে এসব কাজ তার বাঁহাতের বিষয়। তিনি সব কাগজপত্র নিয়ে নীলির বাড়িতে এসেছেন। নীলির দাদার শরীর বেশ খারাপ, একদিন ভাল থাকলে বাকি দুদিন খারাপ থাকে।
নীলির মায়ের এখন একটু নিশ্চিন্ত লাগছে, তিনি আবিরের মায়ের সাথে কথা বলেছেন। অদ্ভুত একটা শর্ত দিয়েছে তারা।সইটা দুজনের সামনাসামনি বসে করতে হবে।
এটা কেমন কথা! সংসার করলো না, ঝামেলা নাই, কাইজা ফ্যাসাদও হয় নাই যে এমন সালিশি বৈঠক বসাতে হবে।
তবু নীলির মা রাজি হয়েছেন। সমস্যা নাই, আসুক, সই করে দিয়ে চলে যাক।
নীলির বাবার কাছে এসে নীলির মা কাগজগুলো দিলেন।
নীলির বাবা কোন কথা বললেন না।
-নীলির আব্বু তুমি শুধু শুধুই ভাবে আছো, একবার আমার মেয়ের কথা চিন্তা করতেছো না! ভাইবোনের পাল্লায় পরে নীলির বিয়ে দিয়ে দিলে ।
নীলির বাবা বললেন, তুমি মনে হয় একমাত্র মা, যে মেয়ের তালাক দেওয়ানোর জন্য এত কষ্ট করতেছো! কিন্তু তুমি ভুল করতেছো। ওই সময় মোফাজ্জল চাচারা কিন্তু আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
নীলির মা বুঝলেন, এ অন্যমতের লোক। তাকে হয়ত বাঁধা দিচ্ছে না, কিন্তু সে চায় না মেয়ের ডিভোর্স হোক।
-আমাদের সমাজে একবার তালাক হলে মেয়েটার গায়ে কালি লাগে, ছেলের কিন্তু কিচ্ছু হবে না।
নীলির মা কথা বললেন না।
-তুমি ভালো করে ভাবো, ভাইজান রে টাকা দিয়ে দাও, নিষেধ করো, বলো এসব লাগবে না।
-এই কথা বলা যাবে না, ছেলের পরিবারের সাথে কথা হয়ে গেছে। তাদের সমস্যা নাই, তোমাদের মতো তারাও হুট করে বিয়ে মানবে না।
এটা নীলির মা এমনিতেই বললেন।
-ওহ, তাদের সাথেও কথা বলে ফেলছে। ভাইজানরে আমি খুব ভাল জানতাম, সম্মান শ্রদ্ধা করতাম, কিন্তু তোমরা যা করলা, এর খেসারত দিতে হবে আমার মেয়েটার।
নীলুফার ফোঁস করে বললেন, নীলির কেজি স্কুল থেকে প্রতিটা দিন আমি ওরে পড়াইছি। সবার বিরুদ্ধে যাইয়া প্রাইভেটে ভর্তি করছি, সেইটা কি এইরকম বিয়া দেওয়ার জন্য! তুমি আর তোমার ভাইবোন আমার সাথে শত্রুতা শুরু করছো। এইটা নিয়ে আর কোন কথা হবে না।
নীলি আসবে পরীক্ষা দিয়ে, চুপচাপ সই করা হবে, চা-নাস্তার ব্যবস্থা থাকবে, অল্প ঝামেলার মধ্যে সব শেষ।
আর এইটা নিয়া কথা বললে, ভাইজানরে বলব, আরো একটা কাগজ কইরা আনতে। সারাজীবন তোমার সংসারে খাটলাম, আর আমার কথার কোন দাম নাই!
-তোমার জিদ হচ্ছে নীলির মা , আর কিছু না। নীলি কি বলেছে, ওর সমস্যা হচ্ছে?
নীলির মা থামলেন, ইদানিং নীলিকে যদি বলেন, আবির ফোন টোন করেছে, নীলি কেমন এড়িয়ে যায়। বিষয়টা তার চোখে পড়েছে। হয়ত নীলি আবিরের কথা শুনতেই চায়না। কিন্তু তাও বিষয়টা তার নজর এড়ায়নি, একটু পাল্টে গেছে মেয়েটা। আগে সারাদিন কি করছে, কি খাইছে সব বলতো, এখন সে ফোন না করলে ফোন করেও না। এইসব কিছুর জন্য এই বিয়েটা দায়ী। তার মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এসব আর কোন ঝামেলা থাকবে না।
সব ঠিক হয়ে যাবে।
নীলির মাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন তার বড় ননদ, নীলির ফুপুআম্মা।
তিনি বললেন, বড় বৌ, আমাদের উপর জিদ দেখিয়ে এই কাজ কইরো না। তালাক খুব খারাপ, আল্লাহ নারাজ হবে, দেখোনা তালাকের পর সেই স্বামীর সাথে বিয়ে কত কঠিন নিয়ম করা ইসলামে! তালাক হইতেছে নিকৃষ্টতম হালাল।
কত কঠিন নিয়ম করা হইছে।
-আমাকে ইসলাম চিনানো লাগবে না আপা।আপনারা কেউ চাননা আমার নীলি ভাল কিছু করুক!
-বড় বৌ, এইটা তুমি বলতে পারলা? নীলিকে হাতের তারায় বড় করি নাই আমরা?
-করছেন, কিন্তু ওর ভাল চাইলে হুট করে বিয়েতে মত দিতেন না।
– বিয়ে শাদি কিন্তু হুট করেই হয় বৌ! সগীর চাচার মেয়ের বিয়ে কেমনে হইলো মনে আছে? পাশের বাড়ি বিয়ের অনুষ্ঠান, সাজানো গুছানো সবকিছু। এর মধ্যে পাত্রপক্ষ এর সাথে বেয়াদবি করলো মেয়ের চাচা। পাত্রের বাপ ওইখান থেকে বের হলেন। তারপর গ্রামের ভাল মেয়ে কে আছে, দশ মিনিটে সগীর চাচারে খুঁজে এক ঘণ্টার নোটিশে বিয়ে পড়াইয়া মেয়ে নিয়ে চলে গেলেন। সেই মেয়ে এখন কাতার থাকে, কত্ত সুখে আছে। টাকা পয়সা, গয়নাগাটি কী নাই তার!
– খালি টাকাপয়সা আর গয়ন দেখলেন, , শিক্ষার গুরুত্ব কি বোঝার চেষ্টা করেন আপা।
নীলির ফুপুআম্মা বুঝলেন, বৌ একটা অশান্তি না করে থামবে না। সাথে ফু দিতেছে তার ভাই আর বোন। এজন্য বেশি সাহস পাইছে। যাই হোক, নীলিকে ফুপুআম্মা খুব আদর করে, বড়ভাইয়ের একটাই মেয়ে, প্রথম নাতনী বাড়ির। ওর কিছু খারাপ না হোক, এটা ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার নাই।
১৯
নীলি দাঁড়িয়ে আছে উত্তরা, সেক্টর ৬, এত গলির মাঝে খুঁজে খুঁজে আবিরের বাসা বের করেছে। এটাই সাল্লাহ টাওয়ার। ফ্ল্যাট নং-৮ বি, নয়তলায় বাসা। আবিরের ফোন বন্ধ পাচ্ছে সকাল থেকে। আবিরের কার্ডটা খুঁজে অফিসে ফোন করেছিলো। অফিসে আজ আসেনি। ঢাকার বাইরেও তো থাকতে পারে, কিন্তু এরকম কোন শিডিউল বলেনি গতকাল রাতে।
শরীর ভালো লাগছিলো না বলে, নীলি ঘুমাতে বললো, তারপর সকাল দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ফোন করলো না আবির। নীলি চেষ্টা করে দেখে ফোন বন্ধ, নিশ্চয়ই বেশি অসুস্থ। এভাবে চলে এসেছে, কি জানি কি মনে করবে সবাই। তাও নীলি চলে এলো, মন টিকলো না। এখন বাজে সাড়ে বারোটা, রাস্তা ফাঁকাই ছিলো।
নীলি গেটে বললো, আবির আহসান সাহেবের বাসায় যাবো, ৮বি । গেটে আটকালো না। দরজা খুলে অবাক হয়ে গেলো আবিরের মা, নীলি এসেছে!
আবির তো বলেনি নীলি আসবে। ছেলেটার জ্বর এসেছে রাতে। সকালে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু মুখেও দিতে পারেনি কিছু, ঢাকার জ্বর মানে এখন অন্য চিন্তা। ডেঙ্গু হচ্ছে চারদিকে। নীলিকে কখন ডাকলো, আর মেয়েটাইবা কেমন! শ্বশুরবাড়ি চলে এলো!
অদ্ভুত তো! ওর মা করতেছে তালাকের চিন্তা, আর ও চলে এসেছে এখানে! অবশ্য এজন্য তার ছেলেও দায়ী।
বউ নিয়ে সে ঘোরাঘুরি করেছে, আরো হয়ত দেখা হয়েছে, নয়তো বাসায় চলে আসতো না। যাই হোক, বিরক্ত হলেও প্রকাশ করা যাবে না। ছেলের শখের বউ, কমবয়েসী বউ নিয়ে এমনিই তার আহ্লাদের শেষ নাই!
পরেই ভাবলেন, ধূর কিসব ভাবছেন, মেয়ের মায়ের রাগ মেয়ের উপর দেখানোর তো কোন মানে নাই। নীলি পা ছুঁয়ে সালাম করলো আবিরের মাকে।তারপরে জানালো, আবিরের ফোন বন্ধ রাত থেকেই! টেনশন হচ্ছিলো, তাই চলে এসেছে! নীলিকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব বিব্রত, হুট করে এসে পড়েছে বলে।আবিরের মা নীলিকে ড্রয়িংরুমে বসালেন। মিতুল বাসায় নেই।
ইশ, মেয়েটাকে একটু মিষ্টি মুখে দিতেই হবে, তাড়াতাড়ি হাতের কাছে চিনির কৌটা পেয়ে একটা হাফপ্লেটে করে চিনি নিয়ে এলেন। তারপর বললেন, নীলি মা, একটু চিনি মুখে দাও, তারপর আসো, আবির রুমেই আছে। ঘুমাচ্ছে মনে হয়।
নীলি লজ্জা পেয়ে গেলো খুব আবিরের মা এক চামচ চিনি খাইয়ে নীলিকে আবিরের ঘর দেখিয়ে দিলেন।কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে ফোন বন্ধ করে। নীলি পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, আবিরের চুলগুলি বের হয়ে আছে, নীলি মেঝেতে বসে আবিরের মাথায় হাত দিলো!
পরিচিত নরম স্পর্শ, আবির চোখ মেলে দেখলো নীলি বসে আছে পাশে। আবার কম্বল মুড়ি দিয়ে ফেললো, জ্বর বেশি আসছে মনে হয়, ভুল ভাল দেখছে। সকাল থেকে নীলি নীলি করেছে মনটা। ফোন অন করলে রাজ্যের মেইল রিপ্লাই করতে হবে। নীলি আবার আস্তে আস্তে আবিরের কপালে হাত দিলো।
অনেক জ্বর!
এবারে আবির উঠে বসলো, নীলি তুমি!
নীলি একটু বোকা বোকা হাসল, মিষ্টি করে।

চলবে

শানজানা আলম