শুধু তোমারই জন্য পর্ব-০৯

0
469

শুধু তোমারই জন্য-৯

অফিসে সবার সাথে আলাপ শেষ করে বের হতে সাতটা বেজে গেল। আবিরের খুব মাথা ব্যাথা করছে।
মনে হচ্ছে জ্বর আসবে, নীলিকে নিয়ে আজ বাইরে থাকার প্ল্যান করা কি ঠিক হবে! আবিরের জ্বর হয় ভালুক জ্বরের মতো, আকাশ পাতাল জ্বর, আবার কমে যায়।
মেয়েটা ভয় পাবে। তার চাইতে কথা বলে দেখা যাক, ওকে ধানমন্ডি পৌছে বাসায় যাওয়া যায় কিনা।
-নীলি, ক্লান্তি লাগছে?
–না তো, কেন?
-ঘুমিয়ে পড়েছিলে যে!
-বসে থেকে থেকে ঝিমুনি চলে এসেছে।
-আচ্ছা, বাসায় চলে যাবে, দিয়ে আসবো?
নীলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো আবিরের দিকে, আবিরের সাথে থাকার কথা বলেছিলো।
-আমার মাথা ব্যাথা করছে প্রচন্ড, জ্বর আসবে, তোমাকে নিয়ে কোথাও গেলে তুমি ঝামেলায় পড়বে।
নীলি ভাবল, আমাকে নিয়ে গেলে ঝামেলা হবে! কেন, আমি কি করব ! তাছাড়া বনানী থেকে ধানমন্ডি তারপর আবার উত্তরা, এতটা দূর জ্বর নিয়ে ড্রাইভ করবে!
নীলি শক্ত ভাবে বলল, আমি এখন বাসায় যাবো না।
আবির অবাক হয়ে নীলির দিকে তাকালো। তারপর কিছুক্ষণ কথা হলো না।
একটু পরে আবির জিজ্ঞেস করলো, তোমার কিছু লাগবে, সাথে তো জামাকাপড় কিছু নিয়ে আসোনি, সোয়েটার এনেছো?
– হু, শপিং ব্যাগে আছে।
-আচ্ছা, রাতে কি শাড়ি পরে ঘুমাবে?
-হু, হু বললেও বিষয়টা নিয়ে ভাবেনি নীলি।
যাই হোক, আবির নীলিকে নিয়ে বুক করা রুমে পৌছাল। একটু ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল আবির, জ্বর আসছে আবার। নীলি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আবির শুয়ে পড়েছে।
নীলি আবিরের মাথার কাছে বসল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো নিজে থেকেই, জ্বর আসেনি, এতক্ষণ কাজ করেছে, তাই মাথা ভার ভার লাগছে।
– নীলি
-বলুন,
-আপনিটা কতদিন চলবে? তুমি বলবে না?
-বলি, আস্তে আস্তে!
-তুমি বলার আগেই যদি চলে যাও!
-কি সব কথা! কোথায় যাবো!
আবির একটু স্থির হল, উল্টোপাল্টা বকা শুরু করেছে।
আবির একটা কথা ভাবছে, নীলিকে বলবে না, নীলি সই করো না, নীলিকে ভালোবেসে বেঁধে রাখবে, নীলি ওকে ছাড়তেই পারবে না। অবশ্য নীলি ওকে ছাড়তেও পারবে না।
খুব আশ্চর্য ভাবে আবিরের আগে কোন ছেলের প্রেমে পড়েনি নীলি। এটা বলে দিতে হয় না। আবির বুঝতে পারে। এটা নিয়ে ওর একটা চাপা অহংকারও আছে।
-নীলি কি খাবে? রুম সার্ভিসকে ডাকি?
-আমি ডাকছি!
-তুমি পারবে?
-হু,
-আচ্ছা!
নীলি ইন্টারকমে অর্ডার করে দিলো।
-নীলি চেইঞ্জ করবে?
-আমার সাথে সকালের ড্রেসটা আছে, ওটা কাল সকালে পড়ব! এখন আর থাক!
আমার ব্যাগে দেখো, তোমার জন্য টপস কিনেছিলাম।
আবির মাঝে মাঝেই নীলির জন্য শপিং করে ফেলে।
নীলি দেখলো, একট ধবধবে সাদা হট নাইটি ধরণের কিছু।
নীলি রেখে দিলো, অত্যন্ত বদ লোক। জ্বর তবু সমানে দুষ্টুমি করে যাচ্ছে। নীলি এসে বসলো আবিরের পাশে।
আবির বললো, কি, পছন্দ হয়নি?
নীলি বলল, হু।
-তাহলে চেইঞ্জ করে এসো
-না, এখন দরকার নেই!
নীলির গাল লাল হয়ে গেছে, আবির এটাই দেখতে চেয়েছে।
-আচ্ছা মাথায় হাত দিয়ে দাও তো।
আবিরের কপালে পড়া চুলগুলো ভীষন পছন্দ নীলির।
রুম সার্ভিস থেকে ডিনার দিয়ে গেলো।
আবির রিসিভ করে বললো
–নীলি, তুমি অরেঞ্জ জুস অর্ডার করেছো?
–হু, নরমাল দিতে বলেছিলাম, আপনার ভালো লাগবে, জ্বর মুখে, রুচি আসবে।
তারপর বলল, আমার জ্বর হলে মা কমলার রস বা লেবুর টক সরবত করে দেয়!
নীলির মায়ের কথা শুনে আবিরের একটা নিঃশ্বাস ফেলল, আগে বিরক্ত লাগত! এখন লাগে না।
নীলিকে এত মিষ্টি করে বড় করায় তার একটা বড় অবদান আছে। নীলি এখনো ইচ্ছে মতো বেপরোয়া হয় না, এটা পারিবারিক শিক্ষার গুন। তবে কি সন্তান বড় হলে, সব সময় তাকে নিজের মত চালানো যায়না।
তারা নীলির বিয়েটা দিয়েও ঠিক করেনি, ডিভোর্সের কথা ভেবেও ঠিক করছে না। অন্তত নীলিকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল। আবিরের আসলেই ভালো লাগছে জুসটা।
নীলি স্যুপ অর্ডার করেছে, আর রাইস আছে।
মেয়েটাকে মনে হয় কিছুই পারবে না, কিন্তু আসলে সবই পারে। আবিরের সাথে পরিচিত হওয়ার আগে পর্যন্ত একা একাই তো সব করেছে। আবিরের মধ্যে মুগ্ধতা বাড়ছে, কারনে অকারণেই নীলিকে ভালো লাগছে। নীলি অনেক সময় নিয়ে আবিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। জ্বর আসেনি আর।
ক্লান্তি থেকে ঘুমিয়ে পড়ল আবির।
নীলিরও ঘুম পাচ্ছে, আজ বাসায় গেলে ঘুম হতো না।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় আবিরের। আবার সেই নরম স্পর্শ। নীলি আবিরকে এক হাতে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।
নীলির চুলের স্পর্শে আবির নিজেকে হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। হৃৎস্পন্দনের শব্দ রাত্রির নিস্তব্ধতায় আরো স্পষ্ট হয়।
আবির চুল সরিয়ে নীলির তুলতুলে পাতলা ঠোঁট স্পর্শ করে নিজের উষ্ণতা পৌঁছে দিতে। খুব পরিচিত স্পর্শে নীলি জেগে ওঠে। এই স্পর্শের জন্য অবচেতন মনে সে অপেক্ষা করছিল !
জনবহুল নগরীর গভীরে জন্ম নেয় আরেকটি সুগন্ধি, শুচি, শুভ্র রজনী।

২৫
রাতে তৃতীয় প্রহরও শেষের দিকে। আবির নীলি দুজনেই জেগে আছে। কালবৈশাখী ঝড়ের পরে প্রকৃতি একটা শান্ত স্নিগ্ধ রূপে ফিরে আসে, আবির আর নীলিও এখন অনেকটা তেমন। নীলি আবিরের হাতের উপরে শুয়ে আছে, আঙুল দিয়ে আবিরের অনাবৃত বুকে আঁকিবুঁকি করছে।আবির নীলির রেশমের মতো চুলে নাক গুঁজে মিষ্টি সুবাসটা বারবার নেওয়ার চেষ্টা করছে।
নীলিকে দেখলে আবিরের কখনো দুবৃত্ত কামনা জাগে না। নীলিকে নিয়ে শারিরীক চাহিদার কথাও মনে হয় না। নীলিকে আদর করতে ইচ্ছে করে, বারবার নীলিকে জিতিয়ে দিয়ে হেরে যেতে ইচ্ছে করে।
এমন নয় যে আবির আগে কোন মেয়েকে চুমু খায়নি, কিন্তু নীলির মতো কারো সাথে ডুবে যাওয়া হয়নি। একটা রুটিন ওয়ার্কের মতো এক্সফ্যাক্টর যুক্ত চুমু!নীলির মতো গভীরে কেউ টানতে পারেনি! নীলি না জেনেই এক সমুদ্রের গভীরে আবিরকে ডুবিয়ে দিয়েছে। আবিরের জ্বর ছেড়েছে, মাথা হালকা হালকা লাগছে, বোধহয় চুল ঘামিয়েছেও।
নীলি ডিনারের পরে প্যারাসিটামল খাইয়ে দিয়েছিল।
আবিরের একটা কথা মনে হচ্ছে, আজ একটু বেশি ছেলেমানুষি হয়ে গেলো, জ্বর নিয়ে আজ নীলির সাথে না থাকলেও হতো! মেয়েটার সামনে পরীক্ষা।
পড়াশোনায় তো মন নেই মনে হয়।
সারাক্ষণ আমার জন্য উতলা হয়ে আছে, আবির হাসলো মনে মনে। একটা বিজয়ীর হাসি। সত্যি সে কিছুই জয় করতে চায়নি, অথচ সবকিছু পেয়ে বসে আছে।
-নীলিবুড়ি!
-হু,
-ঘুমুবে না?
-হু,
-কখন?
-এইতো!
-শোনো কাল থেকে একটু পড়াশোনা কোরো!
-আমি পড়ি না আপনি জানেন?
-দেখলাম না তো! সারাক্ষণই তো আমার সাথে লেগে আছো!
-আপনাকে কি পাওয়া যায় নাকি, এত্ত ব্যস্ত!
-গত দু সপ্তাহে আমি তোমাকে যে সময় দিয়েছি, গত নয় বছরে আমি এত সময় নিজেকেও দেইনি!
-ওহ আচ্ছা! আমি তো তাহলে লাকি বলা যায়!
– হু, তুমি আমার লাকি কুইন, আমার সম্রাজ্ঞী।
নীলি একটু হাসলো!
-সকালে খুব চিন্তা হচ্ছিল?
-হু
-কত্ত চিন্তা?
-অনেক, বোঝাতে পারব না। মনে হয়েছিল দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবির নীলিকে জড়িয়ে ধরল!
-নীলি কয়েকটা কথা বলি, আমাকে তুমি যা বোঝো, আমি তাই, অন্য কারো কথায় আমাকে বুঝতে যেওনা।
আর নিজের মনের কথা শোনো। নিজের মনটা যা চায়, ঠিক তাই করো।আর আর কাল থেকে প্রেম ট্রেম বাদ, পরীক্ষা শেষ হলে আমরা ঘুরতে যাব।
একদম সমুদ্রের পাড় ঘেষে একটা রিসোর্টে থাকব। তোমাকে নিয়ে বীচে হাঁটব। এর মধ্যে আমার কাজগুলো গুছিয়ে নিব আমি, ওকে?
-ওক্কে।
নীলি উঠে বসলো, রেশমের মত চুলগুলো অনাবৃত কাঁধ বেয়ে নিয়ে নেমছে।
আবিরও উঠে নীলিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো, চুল সরিয়ে কাঁধে চুমু খেলো।
নীলি পেছন ফিরে আবিরের ঠোঁটে চুমু খেলো নিজে থেকে।
আবিরের হঠাৎ মনে হলে, নীলি কোন কিছুর বিনিময়েই আবিরকে ছেড়ে যাবে না।

নীলিকে নামিয়ে দিয়ে আবির উত্তরার দিকে যাচ্ছিল। অদ্ভুত, শরীর মন নীলি নীলি হয়ে আছে, আজ থেকে প্রচন্ড কাজের চাপ। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অফিসে, সেখান থেকে গাজীপুরে যেতে হবে। আবিরের ফোন ভাইব্রেট করছে, নানাভাই ফোন করেছেন?
-ওহে সৌম্যদর্শন বৃদ্ধ, তুমি কি তোমার দৌহিত্রকে বিস্মৃত হইয়াছো?
-না হে সুদর্শন যুবক, শুনেছি তিনি কিঞ্চিৎ ব্যস্ত, তথাপি তাহাকে বিরক্ত না করাই উত্তম বলিয়া ভাবিয়াছি, তা শুনলাম, তিনি অসুস্থ, কি হয়েছে তার?
-তেমন কিছু নয়, সিজনাল ফিভার বোধহয়।
-আসলে তোমাকে ফোন করতে অস্বস্তি লাগছিল, ভাই।
আমার জন্যই একটা বাড়তি ঝামেলা হল তোমার!
-আমি তো ভাবছিলাম, তোমাকে একটা থ্যাংকস দিবো, যে ষোড়শীকে জোগাড় করিয়াছ, তিনি মধুর মতোই মিষ্টি।
মোফাজ্জল সাহেব ভাবলেন, আবির কি জানে না কি হতে যাচ্ছে! তিনি এবার সিরিয়াস হয়ে বললেন, মায়ের সাথে কথা হয়নি তোমার?
-হয়েছে তো!
-তাহলে?
-তাহলে কি নানাভাই, সবকিছু কি ছেলেখেলা নাকি!
আমি তো বলেছি, নীলি আমার সামনে বসে নিজে সই করে দিলে আমি কিছু বলবো না।
-নানু, নীলিকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি, ও পরিবারের সাথে খুব জড়িত, ওর মা কলেজেও ওকে নিয়ে যেত আসতো, একা একা কোথাও বের হয়নি, দেখলে না, না দেখেই কেমন বিয়ে হয়ে গেল!
-সে তো আমাকেও দেখতে দিলে না!
-তুমি কি ভাবছো বলো তো নানু?
-নানু, নীলি কাল রাতেও আমার কাছে ছিলো, ওর পরিবার জানেই না যে ওর সাথে আমার একটা যোগাযোগ আছে, তাই তারা যা খুশি করছে। কিছু হবে না, চিন্তা করো না।
-আমি একথা ওদের জানাবো?
-দরকার নেই, দেখি না কি করে তোমার সুন্দরী নাতবৌ।
-তুমি তো মনে হয় খুব মজে আছো বৌ নিয়ে!
-তা একটু বলতে পারো, ভীষণ মিষ্টি বৌ আমার, তোমাকে এত্ত গুলি থ্যাংকস!
-নানু, আমার কাছে এসেছিলো নীলির মামা, লোকটা ভালো না, জমিজমা নিয়ে ক্যাচাল করতে করতে একদম ভেজাল পাবলিক বলে জানে সবাই, তাই টেনশন হচ্ছে।
-তুমি টেনশন করো না। নীলির দাদুর খবর নিয়েছো!
-ও বেচারা মরমে মরে আছে, আমার সাথে লজ্জায় কথা -বলছে না। বাড়িতে বৌমাও ভালো ব্যবহার করছে না।
আর হয়ত দিন কয়েক বাঁচবে, এখন এই অবস্থা, দেখে খারাপ লাগে!
-তুমি যাও আজকে, গিয়ে আমাকে ফোনে ধরিয়ে দিও।
আর নয়তো বলবে, আবির কোন হেলা ফেলা কেউ না যে ওকে যা বললাম, ও মেনে নিলো! সব কিছু খুব স্বাভাবিক থাকবে, কিচ্ছু হবেনা।
আবিরের কথায় নানাভাই ভরসা পেলেন, কিন্তু চিন্তা হচ্ছে। নীলির মামা ছেলেপেলেদের টাকা পয়সা দিয়ে হাতেও রাখে, তার কখন কোন ভেজাল করতে হয়!
কি যে হবে কে জানে।
তবে তিনি দেখা করতে গেলেন নীলির দাদুর সাথে।
নীলির মা যার পর নাই যত্ন করলেন, ভুলেও বিয়ের কথার আসেপাশেও গেলো না। বুদ্ধি আছে মেয়েটার।
নীলির দাদুর চোখে পানি এলো! কথাও জড়িয়ে যাচ্ছে আজকাল।
আবিরের নানু বলে এলেন, নুরু ভাই, এত চিন্তা কইরো না তো, আমার আবিরও খুব সহজ না।তোমার নাতনীকে তার মনে ধরছে। সে ছাড়বে না নীলিকে।
নুরুজ্জামান সাহেব একটু শান্তি পেলেন।

২৭

আবিরের নানা এসেছেন, নীলির মা খুব যত্ন আত্তি করলেন তাকে।বোঝানোর চেষ্টা, সব আগের মতোই আছে, বিয়েটা যেন হয়ই নি। এই মুহুর্তে সবাইকে স্বাভাবিক রাখা খুব দরকার। ভালোয় ভালোয় সই স্বাক্ষর হয়ে গেলেই হয়।
আবিরের নানাভাই কোন ধরা দিলেন না, চা খেলেন, পিঠা খেলেন। তারপর চলে এলেন।
নীলির মায়ের চিন্তা কমছে, ঝামেলা হবে না আশা করা যাচ্ছে। চাচা তো কিছু বললেনই না। তেমন হলে এসে ঝামেলা করতেন নিশ্চয়ই।

নীলি বাসায় ফিরে অনেকটা সময় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে রইল।ভীষণ মন খারাপ লাগছে, আবিরের সাথে কিছুসময় থেকে চলে এলে এমন ফাঁকা লাগে, খুব কান্না পাচ্ছে!
অথচ কাল দুপুর থেকে আজ এই নয়টা দশটা পর্যন্ত আবিরের সাথেই ছিলো! আবিরের স্পর্শ, আবিরের চুমু খাওয়া, নীলিকে অনেক যত্নে কাছে টেনে নেওয়া সব মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার। আসলেই অমনোযোগী হয়েছে নীলি, কিছুতেই মাথা থেকে আবিরকে সরানো যাচ্ছে না।
পরীক্ষার কথা মনে হচ্ছে না, মনে হচ্ছে পরীক্ষার পরে আবিরের সাথে কিছুটা সময় থাকা যাবে। সেটা কক্সবাজার হতে হবে এমন নয়, আবির যেখানে থাকবে, সেখানেই নীলির ভালো লাগবে, সেটা আবির যখন ক্লায়েন্ট মিটিং করে, বা মন ডুবিয়ে কাজ করে! নীলি শুধু ওর আশেপাশে থাকবে।
ফোন বাজছে, কে করলো, মা!
আচ্ছা এখন থাক, পরে কথা বলি, ভাল্লাগছে না, নীলি মনে মনে ভাবে।
সারাটা শরীর মন জুড়ে এক অদ্ভুত তৃষ্ণা, হাহাকার।
আবির কেমন তৃষ্ণা তৈরি করে, একজীবন জড়িয়ে থাকলেও সে তৃষ্ণা মেটার নয়।
২৮
আবিরের মা সকাল সকাল মটরশুঁটির খোসা ছাড়াতে বসেছেন। আবির মিতুল দুজনেই সব তরকারিতে মটরশুঁটি পছন্দ করে, মাথায় অনেক চিন্তা। তিনি প্রকাশ না করলেও নীলির বাসায় চলে আসাটা তার পছন্দ হয়নি, মেয়েটা ভোলাভালা চেহারা কিন্তু সাহস আছে, বিয়ে হয়েছে দু সপ্তাহ হয়নি এখনো, জামাইয়ের সাথে রিসোর্টে চলে গেল। তা আবার বাসায় জানায়নি।
মেয়ের বাসায় জানে মেয়ে ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না কিন্তু মেয়ে তো চালাক। আবির আবার বউ নিয়ে আদিখ্যেতার চূড়ান্ত করছে, কি বলে চিংড়ি মাছে এলার্জি, সেটাও খেয়াল আছে।
তিনি অবশ্যই চান তার ছেলে বউ নিয়ে ভালো থাকুক কিন্তু এত আহ্লাদ কারো ভালো লাগে না। কাল শরীরটা ভালো না, বউ নিয়ে চলে গেলো, বলল কী, রাতে ফিরবে না!
তিনি খুব ভালো করে জানেন, বউয়ের সাথেই থাকছে। এটা বাড়াবাড়ি না?
নীলি এতই সোজা হলে আবিরকে বাসায় পাঠিয়ে দিত।
পুরুষ মানুষ নতুন বিয়ে করলে বউয়ের আসে পাশে থাকতে চায়। মেয়েদের উচিত সামলে থাকা। তা না, জামাই ফোন ধরে না, বাসায় চলে আসছে। এত ভালোবাসা তৈরি হয়েছে, সেই মেয়েকে ছাড়ানোর জন্য তার পরিবার উঠে পরে লাগছে।
আবিরের মা নীলির মাকে একটা ফোন করলেন।আবির নিষেধ করেছে নীলির কথা বলতে। তবু দেখেন, ঝামেলাটা যদি মেটানো যায়। তারা তো মেয়ের কীর্তি জানে না।
-হ্যালো আপা, আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম, বাবা আজকে দেখি মধুর মত গলা নীলির মায়ের।
-আপা কেমন আছেন?
-হু আলহামদুলিল্লাহ, তারপর কি ভাবলেন আপা, নীলির সাথে কথা বলছেন?
-আপা আপনাকে তো বলছি, মেয়েটা বিয়েটা করতে চায়নি, সবাই জোর করছে!
-সেটা তো আগের কথা, পরের কথা কি?
-পরের কথা কিছু নাই আপা, আমরা কাগজপত্র রেডি করছি।
-নীলিকে বলছেন?
-না আপা, ওর তো পরীক্ষা শুরু হবে, মেয়েটা খুব সেনসেটিভ আপা, একটা কিছু নিয়ে চিন্তা শুরু করলে আর বের হতে পারে না। বিয়েটাই একটা ধাক্কা ওর জন্য!
আহারে মেয়ের মা কিচ্ছু জানেনা মেয়েকে। তোমার মেয়ে সেয়ান কম না, এটা কিভাবে বলবেন, আবির রাগ করবে খুব।
–আচ্ছা আপা, আবিরকে নিয়ে সমস্যা কি আপনাদের, একটা বিয়ে হইছে, সেটা ভাঙা কি দরকার?
আপনার মেয়ে তো আমরা দেখিও নাই, নূর চাচার নাতনি শুনেই রাজি হইছি, আমার ছেলেও দেখতে চায়নি।
–আবিরকে নিয়ে কোন সমস্যা নাই আপা, মেয়েটা মানতে পারে না, পড়াশোনা হবে না আর তাই, পরীক্ষা দিয়ে আসলেই কথা বলবো!
–আগে কথা বলে নিতেন আপা।
–আপা ওই যে তাইলে আবার কি না কি বোঝে, কাছে আসলে বলা এক কথা আর ফোনে বলা আরেক কথা।
–ঠিক আছে আপা, রাখি, ভালো থাকেন, আল্লাহ হাফেজ।
মেয়েকে না জানিয়ে কিছু কইরেন না আপা। আপনার মেয়ের কিন্তু বয়স বিশ বছরের বেশি হইছে। সে তো নাও চাইতে পারে।
-আমার মেয়েকে আমি জানি আপা। তাও ওরে না বলে তো কিছু হবে না।
-আসসালামু আলাইকুম- বলে আবিরের মা ফোন রাখলেন।
তিনি তো চাইতেনই ছেলে বিয়ে করে ভালো থাক।
কিন্তু এই মেয়ে কেমন, তার পরিবার কেমন!
কাল তার অসুস্থ ছেলে বাসায় ফিরলো না এই বউয়ের জন্য, এটা তার ভালো লাগছে না।
এই বউ আবিরকে হাত করে রাখবে, রাখবে কি রাখছে অলরেডি।
নয়তো যে ছেলে সেদিন বললো, বউয়ের ধানমন্ডি থাকার দরকার নাই, সে কালকে বউ নিয়ে বাইরে থাকলো!
এজন্যই তিনি নীলির মায়ের সাথে কথা বলেছেন। আবিরকে সরাসরি কিছু বলবেন।
আবির বাসায় ঢুকেছে, আবিরের মা জিজ্ঞেস করলেন, আব্বা শরীর কেমন এখন, জ্বর কমছে?
-হু মা কমছে, তুমি নাস্তা দাও তো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি!
-কই ছিলি রাত্রে? নীলিকে দিয়ে আসছো?
মায়ের কথার টোনের ধরণটা আলাদা, আবির তাও বলল, মা আমার সাথেই ছিলো, সকালে দিয়ে আসছি।
-এই শরীরে কাল বাইরে থাকার দরকার কি ছিল??
-কেন মা, বলে গেলাম তো!
আবিরের মা কথা বললেন না, ছেলের জন্য নাস্তা তেরি করতে গেলেন।
আবির ফ্রেশ ওয়াশরুমে ঢুকল।
হাত চোখ মুখ নীলি নীলি হয়ে আছে, আবির ওয়াশরুমের আয়নায় তাকিয়ে হাসল, নীলি বড় হয়ে যাচ্ছে, এ কদিনে অনেকটা পরিণত সে। ভালোই লাগছে আবিরের।
খেতে বসলে মা বললেন, অফিসে গিয়েছিলি?
-হু
-কাজ হয়েছে?
-হু, হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ পজেটিভ।
-হুম ভালো, নীলি কই ছিল?
-অফিসেই বসে ছিলো! এই দু-সপ্তাহ ওর পরীক্ষা, আমারও কাজ আছে, তারপর একটা ছুটি নিয়ে নীলিকে নিয়ে কক্সবাজার যাবো।
-কেন? কক্সবাজার কেন আবার? ঝামেলাটা মিটুক আগে! বিয়ের প্রোগ্রাম হোক, এর পর যা।
-ঝামেলা মিটবে মা, ওকে বলেছি যাবো! প্রোগ্রামের পরে ব্যাংকক যেতে পারি।
-ওকে বললেই যেতে হবে! তোর কোন কিছু আমি বাঁধা দেইনা, কিন্তু নীলিকে নিয়ে একটু বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে না?? ওর বাসায় কথা বললাম, তারা ডিভোর্স এর জন্য রেডি, আর তুই কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবছ!
আবির ভীষণ অবাক হল, কাল মা কেমন ছিল, আজই বা কেমন! বোঝার চেষ্টা করলো সমস্যাটা কি!
-আবির তোর নীলিকে নিয়ে রিসোর্টে থাকা ঠিক হয়নি, ঠিক হতো যদি সবাইকে জানাতি। তারপর কাল ও বাসায় চলে এল, কতবড় স্পর্ধা তার! এটা ভালো লাগেনি আমার। সব কিছুর সিস্টেম আছে। তোর শরীর অসুস্থ, তোকে নিয়ে বাইরে চলে গেল!
আবির চুপ করে রইলো, খেতে ইচ্ছে করছে না।
মা রাগ করবে সত্যি কিন্তু এত সরাসরি বলবে, আবির আশা করেনি। একটু নাড়াচাড়া করে উঠলো আবির।
-কিছুই তো খাস নি!
-মুখে ভালো লাগছে না মা।
-কেন ভালো লাগছে না বুঝতে পারছি, আমার কথা গুলো চিন্তা করিস।
আবির উঠতে উঠতে বলল, আমার মতো এমন অদ্ভুত সমস্যা কারো হয় কিনা জানি না মা, আমার বিয়ে করা বউ নিয়ে আমি কোথায় থাকব, সেটা তো আমার বিষয়! তাতে তো অন্যকারো সমস্যা থাকার কথা নয়! নীলির পরিবারের উপর রাগ তুমি আমাদের দেখাচ্ছো!
যাই হোক, সরি মা।নীলিকে আমি বলে দিব , আমি নিয়ে না আসা পর্যন্ত ও আর আসবে না। আর ও আমাকে ফোনে না পেয়ে অস্থির হয়ে চলে এসেছে। অস্থিরতা বাইরের কারো জন্য না, ওর স্বামীর জন্য।
আবির নিজের রুমে চলে গেলো, কি অদ্ভুত সমস্যা।
জীবন এমন কেন!
আবির বিছানায় বসলো একটু, বের হতে হবে।
নীলির কথা মনে হচ্ছে। নীলি তো নিজে থেকে আগায়নি, আবিরের ডাকে সাড়া দিয়েছে। চোখ বন্ধ করলে নীলির উষ্ণতা অনুভব করতে পারে আবির।
আবির মনে মনে বলল, তোমাকে খুব মিস করছি নীলি, খুব ভালোবাসি তোমাকে, তুমি প্লিজ ভুল বুঝো না কখনো!
আবির অফিসে এসেছে। গাজীপুর যেতে হবে, তার আগে কিছু দরকারি কাজ সারতে হবে।
সকালে খাওয়া হয়নি, একটু মাথা ব্যাথা করছে।
মায়ের জায়গায় সে ঠিক আছে, কাল আসলে বাইরে থাকা ঠিক হয়নি। মা নীলিকে ভুল বুঝছে। যাক সেটা তাকে পরে বোঝানো যাবে।
নীলির কথা মনে হতেই মনে হলো একবার খোঁজ নিই, পড়াশোনা করছে কিনা।
আবির নীলিকে ফোন করল। নীলি তখনো শুয়ে আছে, একবার উঠে খেয়েছে শুধু। আবিরের ফোন দেখে উঠে বসল।
-নীলি কি করছ!
-কিছু না!
-পড়তে বসোনি?
-বসছি, একটু পরে, আপনি অফিসে?
-হু, এরপর ব্যস্ত হয়ে যাব, তাই একটু ফোন করলাম তোমায়।
-ব্রেকফাস্ট করে এসেছেন?
-হু,
নীলির মনে হলো আবির মিথ্যে বলছে তাই জিজ্ঞেস করে ফেললো, আমার মনে হচ্ছে আপনি ব্রেকফাস্ট করেননি!
-করিনি ঠিক না, নিয়ে বসেছিলাম, খেতে ভালো লাগেনি।
-তাহলে ওষুধটা!
-ঠিকই ধরেছো! খাওয়া হয়নি!
-আচ্ছা একটু পরেই মাথা ব্যাথা করবে, আপনি কিছু খেয়ে নিন প্লিজ, ন্যাকামী করছি না, সারাদিন বাইরে থাকবেন, কষ্ট হবে!
নীলিকে একবার বলেছিল খেয়েছ ঘুমিয়েছোল এগুলো ন্যাকামী ধরনের কথা!
আবির বললো, আচ্ছা!
আবিরের সাড়া শুনে নীলি আরেকটু সাহসী হলো,
বললো, আপনি অর্ডার করলে অনেক সময় লাগবে, আপনার অফিসের কিচেনে ডিম আনা আছে, আমি দেখেছি, আপনি সগীর ভাইকে ডেকে ডিম মামলেট করে দিতে বলেন, তার পাউরুটি টোস্ট করে দিতে বলেন। এখনি বলেন।
নীলির এই বলাটা আবিরের ন্যাকামী মনে হলো না, বরং মনে হলো সত্যিই একজন মানুষ দরকার, যে সবকিছু খেয়াল রাখবে।
আবির সগীরকে ডেকে বলে দিলো ডিম আর পাউরুটি দিতে, তারপর নীলিকে বললো, এবার খুশি, নাকি ছবি পাঠাতে হবে তোমাকে!
-উম ছবি পাঠাতে হবে না, খাওয়া হলে আমাকে একটু জানাবেন। এটাই!
আবিরের হঠাৎ মনে হলো, মা যেভাবে রেগে আছেন, এখন কক্সবাজার না যাওয়াই ভালো।
পরে যাওয়া যাবে, নীলিকে আশায় না রেখে জানিয়ে দেই যে কাজ থাকবে!
-নীলি তোমাকে কক্সবাজার যাওয়ার কথা বলেছিলাম না, মনে হয় যাওয়া হবে না!
-কেন, ছুটি পাবেন না!
-ছুটি তো ইস্যু না, ঢাকায় থাকতে হবে….
আবির কথা শেষ করার আগেই নীলি বললো, কক্সবাজারে যেতে হবে এমন তো না, জায়গাটা ইস্যু না।আপনি কোথাও নিয়ে গেলেই হবে, আপনি থাকলেই হবে! বিষয়টা হচ্ছে আপনি।
আবির চমকে উঠলো। এত চমৎকার কথাটা নীলি বলে ফেলল! নীলির কাছে জায়গাটার চাইতে আবিরের সাথে সময়টা গুরুত্বপূর্ণ! আবির মনে মনে ঠিক করে ফেললো, নীলি তোমাকে নিয়ে সমুদ্রেই যাবো, পৃথিবীর যে কয়টা সমুদ্র আমার সাধ্যে সম্ভব, সব জায়গায় তোমাকে নিয়ে যাবো। তুমি কিছু চাওনি, কিন্তু আমার পৃথিবীর সব ঐশ্বর্য এনে তোমার পায়ে রাখতে ইচ্ছে করছে।
মানুষ হিসেবে আমার ক্ষমতা কত সীমিত !
আবির বললো, আচ্ছা, আমি দেখছি, এখনো তো কয়েকটা দিন সামনে আছে নীলিবুড়ি।
এখন রাখছি।
আবির ফোন রাখল।
সগীরের বেশি সময় লাগল না।
আবির এবার খেয়ে নিলো, খাওয়া শেষে মাথাটা একটু হালকা লাগল! খিদে লেগেছিল প্রচন্ড!
গাজীপুরের দিকে বের হতে হবে, আবির কাজগুলো সেরে নিলো দ্রুত।
২৯
কক্সবাজারের বাসে উঠে আবির বললো, নীলি বুড়ি, তোমার জন্য ছয়সিটে সিট পাইনি! বি লাইন চলবে তো!
আর পাশে কোন মহিলাও নেই, একজন ইয়াং হ্যান্ডসাম ভদ্রলোক বসবেন।
উফফ, এত ব্যস্ততায়ও কিভাবে মাথায় এত দুষ্ট বুদ্ধি থাকতে পারে, নীলি চোখ গোল গোল করে তাকায় আবিরের দিকে। আবিরের ভীষণ ভালো লাগে, নীলি রেগে গেলেই গাল লাল হয়ে চোখ গোল গোল হয়ে যায়।
আবির বললো, জানলার পাশে বসো।
-না, আপনি ভেতরে বসুন!
-সেকী, মেয়েরা তো ওই সিটটা ছাড়া বসে না!
-জ্বী না, আমি না পারতে ওপাশে বসি না, বাতাসে কান বন্ধ হয়ে যায়!!
-আচ্ছা তুমি বসো, আমি নিচে যাই, পানি নিয়ে আসি, এটুকু পানিতে হবে না।
আবির নিচে চলে গেলো। নীলি ভাবতে লাগলো এই দ্বিতীয়বার আবিরের সাথে বাসে, তবে আগের বার অবশ্য একই বাসে ছিলো, সেটা কাকতালীয় ব্যাপার, মজার বিষয় হলো, তখনও আবিরকে চোখে পড়েছিলো, একবারো মনে হয়নি এই মানুষটা জীবনের সাথে এভাবে জুড়ে যেতে চলেছে। আজই ভাইভা শেষ হয়েছে।
আবির আগে থেকেই টিকিট বুক করে রেখেছিলো, কাল পরশু থেকে ফিরবে, তারপরে বাদামহাটি যাবে কয়েকদিনের জন্য। প্রোগ্রামের বিষয়ে কিছু কথা হয়নি এখনো। তবে তাড়াতাড়ি হয়ে গেলেই ভালো হয়। আবিরকে রেখে দূরে থাকা খুব কষ্টকর। এমন কেন হলো নীলি জানে না ঠিক। আবিরেরও কি এমন লাগে, নীলি বোঝে না এমন নয়, আবির নীলির সব কথা শোনে, আর সারাক্ষণ দুষ্টুমি করে। কখনো জোর করে না নীলিকে, নীলিকে বুকের ভেতর নিয়ে আদরে ভাসিয়ে দেয়।
কি অদ্ভুত, লজ্জায় নীলির কান গরম হয়ে যাচ্ছে! অথচ ও নিজেও অবচেতন মনে অপেক্ষা করে থাকে আবিরের উষ্ণ স্পর্শের।
“আবির, আপনাকে অনেক ভালোবাসি, আমি ভাবতাম, আমার বাবা মা ছাড়া কেউ এত আপন হতে পারবে না।
কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, বুকের ভেতর একটা জায়গা ফাঁকা ছিলো, শুধু আপনার জন্যই, ওখানে আর কেউ আসতে পারে না।”
বাস ছেড়ে দিচ্ছে, আবির আসেনি, নীলি উঠে দাঁড়ালো,বলতে যে একজন আসেনি এখনো! তখনি আবির উঠে পড়ল!
-উফফ, এত দেরী করে কেউ!
-কি ভাবছিলে, আমাকে রেখেই বাস চলে যাবে?
নীলি প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, আচ্ছা শামীম এন্টারপ্রাইজে আপনার শেয়ার আছে?
আবির বলল, আছে কিছু, তেমন বেশি কিছু নয়। ওটার মালিক শামীম আমার বন্ধু, ওর বাবা মালিকানার কিছু অংশ বিক্রি করলেন, আমরা তিনজন আমি নুহাশ আর রিশাদ কিনে নিয়েছি।
-আচ্ছা! বিয়ে ঠিক হবার পরে বাবা বলেছিলেন।
কক্সবাজার থেকে ফিরে আমি খুব ব্যস্ত হয়ে যাবো নীলি, আমার থাই ক্লায়েন্ট আসবে। হয়ত রাত ছাড়া কথাও হবে না।
নীলি বললো, রাত ছাড়া আপনি আমার সাথে কথা বলেন নাকি! তাও দুয়েক মিনিট।
আবির হাসলো, নীলির পরীক্ষা ছিলো, ইচ্ছে করে কম ফোন করেছে। ফোন করলে নীলি ছাড়তে চায় না আবিরেরও রাখতে ইচ্ছে করেনা। মায়ের সাথে নীলির বিষয়ে আর কথা বার্তা হয়নি। একটা বিষয় সিওর, যে নীলি কোথাও যাচ্ছে না।যেতে পারবে না। সেটুকু বিশ্বাস আবিরের আছে। নীলি কম্বল নিয়ে নাও তো, ঠান্ডা লাগবে।
-না, লাগবে না।
আবির নিজেই জড়িয়ে নিয়ে বসলো নীলিকে। এই প্রথমবার যাচ্ছে না নীলির সাথে, আগেও দেখা হয়েছিলো। তখনো ঢাকা থেকে বাইরে যাচ্ছিলো। কি যেন বলেছিলো, আপনার সিটটাও খুব একটা সুবিধাজনক নয়। কে জানতো সেই নীলিবুড়িকে বুকে করে তার পরের জার্নিটা করা হবে! বাসায় মায়ের কাছে সত্যি বলেনি আবির।
বলেছে চিটাগং যাচ্ছে, আবিরের মাঝে মাঝেই যেতে হয়, তাই অবিশ্বাস করেনি মা।
বিষয়টা কেমন অদ্ভুত, নিজের বউয়ের সাথে লুকিয়ে প্রেম করতে যাচ্ছে, আবির ভাবতেই হেসে ফেললো, অথচ সত্যি সত্যি কখনো এমন করে মিথ্যে বলতে হয়নি।

চলবে
শানজানা আলম