#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৩৫
#Ornisha_Sathi
দুপুরের খাওয়া শেষে বিকেলের দিকে ওরা সবাই মিলে ছোট ইটের রাস্তার পাশের মাঠে চেয়ার সাজিয়ে গোল করে বসে আড্ডায় মেতে উঠে। হঠাৎই রোদেলার চোখ ফারদিনের উপর পড়ে। ওদের থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটা আইসক্রিম ভ্যানের সামনে ফারদিন আর ইশফা দাঁড়িয়ে আছে। ইশফার হাতে আইসক্রিম। ফারদিন টিস্যু দিয়ে ইশফার ঠোঁটের পাশটা মুছে দিলো। দৃশ্যটা দেখে রোদেলা বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো।
–“বেশ ভালোই মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে দুজন দুজনকে। কিন্তু মানুষটা তো আজ আমার হওয়ার কথা ছিলো। তাহলে সে আজ অন্যের কেন? কেন সে আমার হলো না? না না এসব আমি কি ভাবছি? যে আমার হওয়ার না সে কেন আমার হবে? উনাকে তো আল্লাহ ইশফার জন্যই লিখে রেখেছিলেন। তাহলে আমার কি করে হবে?”
মনে মনে এইরকম হাজারটা কথা ভেবে ওদের থেকে চোখ সরিয়ে নেয় রোদেলা। হঠাৎই ইশফা “রোদেলা আপি” বলে ডেকে উঠে। চোখের কোনে জমা পানিটুকু মুছে রোদেলা হাসিমুখে তাকায় ইশফার দিকে। ইশফা ছুটে আসে রোদেলার কাছে। ফারদিন আগের জায়গাতেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কতদিন পর এই চেনামুখটা দেখলো ও। কতবার রোদেলার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছে ফারদিন কিন্তু রোদেলা দেখা করেনি। এই একটা মুখ দেখার জন্য এই একটা মাস কতই না ছটফট করেছে ও কিন্তু দেখা পায়নি। অবশেষে আজ দেখা মিললো এই অতি পরিচিত মায়া মাখানো মুখটার। এতদিন পর রোদেলাকে দেখে ফারদিনের চোখ দুটো টলমল করে উঠে। বড্ড ভালোবেসেছিলো কিনা মেয়েটাকে। কিন্তু কে জানতো হঠাৎই একটা আচমকা ঝড়ো হাওয়া সবকিছু এলোমেলো করে দিবে।
*
দুইদিন আগেই বিয়ে শেষ হয়ে যায়। আনিতাদের বাসা এখন পুরোপুরি ফাঁকা। মেহমানরা সবাই অনুষ্ঠানের পর চলে গিয়েছে। দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমোচ্ছিলো আনিতা। এমনিতেই আনিতা প্রচন্ড ঘুম পাগলী। তার উপর এ কদিন ভালো করে ঘুম হয়নি। চোখ মেলে তাকাতে পারছিলো না আর। তাই কিছুটা খেয়ে রুমে এসেই ঘুমিয়েছে ও। বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ ফোনের রিংটোনে আনিতার ঘুম ভাঙে। ফোন রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে বলে,
–“পিচ্চিপাখি?”
–“হুম বলুন।”
আনিতার ঘুম কাতুরে কন্ঠ শুনে আহিয়ান কিছু সময় থমকে যায়। আনিতার ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলা, “হুম বলুন” কথাটা যেন আহিয়ানের কাছে নেশার মতো লাগছে। আহিয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
–“ম্যডাম কি আরো ঘুমাবেন?”
–“কেন বলুন তো?”
–“আপনার ঘুম ভাঙলে একটু ছাদে আসেন প্লিজ।”
–“আসছি।”
এইটুকু বলেই আনিতা ফোন কেটে দিলো। কয়েক সেকেন্ড বিছানায় গড়াগড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। হাই তুলতে তুলতে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো আনিতা। চুলগুলো হাতখোপা করে ওড়না গায়ে জড়িয়ে ছাদের দিকে হাঁটা ধরলো। মুখ ধুয়ে এসে মুখের পানিটুকু মুছে নি আনিতা। মুখের উপর ফোঁটা ফোঁটা পানি রয়েছে। আনিতা ছাদে গিয়ে দাঁড়ালো কিছুটা সময়। আহিয়ানকে দেখতে পেলো না। তাই ফোন হাতে নিয়ে আহিয়ানকে ম্যাসেজ করার আগেই আহিয়ান ফাইয়াজদের ছাদ থেকে বলল,
–“এই ছাদে এসো।”
আনিতা কিছু না বলে ফাইয়াজদের ছাদে চলে গেলো। ফাইয়াজদের ছাদে গিয়ে আহিয়ানের পাশে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালো আনিতা। সদ্য ঘুম থেকে উঠা আনিতাকে দেখে আহিয়ানের হার্টবিট মিস হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আনিতার চোখ দুটোতে এখনো ঘুম ভর করে আছে। মাত্রই ঘুম থেকে উঠার ফলে চোখ মুখ ফোলা ফোলা লাগছে। তারউপর চোখমুখে ফোঁটা ফোঁটা পানি জমে আছে। এতে যেন আনিতাকে আরো বেশি স্নিগ্ধ লাগছে। আহিয়ানকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আনিতা বলে,
–“কি দেখছেন ওভাবে?”
–“তোমাকে।”
–“আমাকে দেখার কি আছে?”
–“জানো এই মূহুর্তে তোমাকে ঠিক কতটা সুন্দর আর স্নিগ্ধ লাগছে।”
–“এখন জানলাম।”
*
আহিয়ান আনিতার হাত ধরে টেনে চিলেকোঠার ওখানে নিয়ে গেলো। চিলেকোঠার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আনিতা। আর ওর ঠিক সামনেই আনিতার কাঁধ বরাবর এক হাত দিয়ে আহিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আহিয়ানের এমন নেশা জড়ানো দৃষ্টি দেখে আনিতা মাথা নিচু করে নিলো। আহিয়ান আলতো করে আনিতার মাথায় একটা চুমু খেলো। ক্ষানিকটা কেঁপে উঠলো আনিতা। আহিয়ান আনিতার থুতনি ধরে আনিতার মাথা উঁচু করলো।
–“আনি__”
–“ব্ বলুন।”
–“তাকাও আমার দিকে।”
আনিতা তাকালো না। চোখ নামিয়ে নিলো। লজ্জায় গাল আর নাক লাল টকটকে হয়ে আছে। চোখ মুখে স্পষ্ট লজ্জার ছাপ। আহিয়ান দু হাতে আনিতার গাল ধরে আনিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
–“লজ্জায় যখন তোমার মুখ লাল হয়ে যায় তখন তোমায় দেখতে দারুণ লাগে। সেটা কি তুমি জানো?”
আনিতা কিছু বলল না। আহিয়ান বাঁকা হেসে আনিতার দিকে কিছুটা ঝুকে বলে,
–“জানো তোমার গাল দুটি এখন লাল টমেটোর মতো হয়ে আছে। ঠোঁট জোড়াও লাল টকটকে আর রসালো হয়ে আছে। ইচ্ছে তো করছে এখুনি কামড়ে কুমড়ে খেয়ে ফেলি।”
আহিয়ানের এই “কামড়ে কুমড়ে খেয়ে ফেলি” কথাটাই যথেষ্ট ছিলো আনিতাকে লজ্জায় আরো রাঙা করে তুলতে। আহিয়ানের এসব কথা শুনে আনিতার ঘুম ঘুম ভাব সেই কোন কালেই কেটে গিয়েছে। আনিতার এখন মনে হচ্ছে এখানে না এলেই বুঝি ভালো হতো৷ আহিয়ান আনিতার কোমড় চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতেই আনিতা আহিয়ানের চোখে চোখ রাখে। আনিতা আহিয়ানের চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। চোখ নামিয়ে নিয়ে আনিতা ইতস্তত করেই বলে,
–“ছ্ ছাড়ু___”
আনিতা পুরো কথা বলার আগেই আহিয়ান আনিতার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দেয়৷ আনিতার ঠোঁটে আঙুল রেখেই আহিয়ান ফিসফিস করে বলে,
–“চুপ একদম কথা বলবে না। একটু দেখতে দাও তো ভালো করে।”
এই বলে আহিয়ান আনিতার ঠোঁট থেকে আঙুল সরিয়ে নিলো। অপলক দৃষ্টিতে বেশ ক্ষানিকটা সময় আনিতার দিকে তাকিয়ে রইলো আহিয়ান। আনিতা লজ্জায় মাথা উঁচু করতে পারছে না। আজ হয়েছে কি ছেলেটার? পুরোই যেন পাংখা পাংখা মুডে আছে। হঠাৎ করেই আহিয়ান আনিতার দুগাল ধরে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আনিতার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসে। আনিতা পুরো থ হয়ে যায়। এই ছেলে আজ এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ কেন করছে?
*
ক্ষানিক বাদে চিলেকোঠার দেয়াল ঘেঁষে দুজনেই ছাদে বসে পড়লো। আনিতা আহিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান আনিতার হাতের আঙুল গুলো উলটে পালটে দেখতে দেখতে বলে,
–“চলে যাচ্ছি সন্ধ্যার পর।”
আহিয়ানের কথা শুনে থমকালো আনিতা। বুকটাও যেন ভারী হয়ে এলো। চোখদুটো মূহুর্তেই ছলছল করে উঠলো। আহিয়ানের থেকে ক্ষানিকটা সরে বসলো আনিতা।
–“এক সপ্তাহও হয়নি এসেছেন।”
–“অফিস বন্ধ যাচ্ছে অনেক। এমন হলে তো চলবে না।”
–“আর কিছুদিন প্লিজ।”
–“আপনি আমার জীবনে আসার পর থেকে অফিস প্রচুর মিস হচ্ছে। আর মিস দেওয়া যাবে না। নয়তো বস আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিবে। আর আপনার আব্বু নিশ্চয়ই আপনাকে কোনো বেকার ছেলের হাতে তুলে দিবেন না।”
আনিতা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। এই একটা সময় আনিতার বড্ড খারাপ লাগে। আহিয়ান এখানের আসার পর ঢাকায় যাওয়ার সময় হলে আনিতার মুখের দিকে আর তাকানো যায় না। আহিয়ান মৃদু হেসে বলে,
–“আনিতা শুনো না।”
_____
–“কথা বলবে না আমার সাথে?”
_____
–“ওকে তুমি যখন কথা বলবেই না তাহলে আমি এখনই চলে যাচ্ছি।”
আহিয়ান উঠে চলে যেতে নিলেই আনিতা ওর শার্টের হাতা খামচে ধরে। আহিয়ান আবারো আগের জায়গায় বসে পড়ে৷ আনিতা আহিয়ানের বুকে মুখ গুজে অভিমানী কন্ঠে বলে,
–“যেতেই হবে?”
–“যেতে না হলে অবশ্যই যেতাম না।”
–“আপনি আর এখানে আসবেন না বলে দিলাম।”
–“কেন?”
–“আপনার চলে যাওয়ার সময় হলে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো কষ্ট হয়। কোনো কিচ্ছু ভালো লাগে না। প্রচন্ডরকম কান্না পায় আমার।”
এই বলেই আনিতা কেঁদে দিলো। আনিতার কান্না শুনে আহিয়ান অপ্রস্তুত হয়ে যায়। আহিয়ান আনিতাকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে আনিতার চোখের পানি মুছে দিয়ে দু হাতে গাল ধরে বলে,
–“আরেহ পাগলী কাঁদছো কেন? তুমি কাঁদলে আমার সহ্য হয় না তো।”
–“আপনি ভালো না। খারাপ আপনি। খুব খুব খুউউব খারাপ।”
–“তাই?”
–“হ্যাঁ তো।”
–“তো ম্যাডাম আমি খারাপের কি করলাম?”
–“এই যে আপনি আমাদের এখানে আসেন। কিছুদিন থেকে মায়া বাড়িয়ে আবার আমাকে ছেড়ে চলে যান। কষ্ট হয় তো আমার।”
–“আর কয়েকটা মাস কষ্ট করে নাও? আর দেড় মাস বাদেই তো তোমার এইচএসসি এক্সাম। এক্সাম টা আগে শেষ হতে দাও তারপরই আমি আমাদের কথা বাসায় জানিয়ে আম্মু, ভাইয়া আর ভাবীকে পাঠাবো।”
–“আপনার আম্মু মানবেন এই সম্পর্কটা?”
–“না মানলেও আমার ভাইয়া আর ভাবী তো আছেই আম্মুকে রাজি করানোর জন্য।”
–“ভাইয়া আর ভাবীও যদি রাজি না হয়?”
–“ভাবী তো শুরু থেকেই সবটা জানে। আর ভাবী রাজি মানে ভাবী ভাইয়াকেও ঠিক রাজি করিয়ে নিবে।”
আনিতা আবারো জড়িয়ে ধরলো আহিয়ানকে। আহিয়ানও দুহাতে জড়িয়ে নেয় ওকে। আহিয়ানের বুকে বেশ ক্ষানিকটা সময় চুপ করে পড়ে থাকে আনিতা। আহিয়ানের সাথে একদম মিশে ওর হার্টবিট শুনতে থাকে। বেশ কিছুটা সময় দুজনেই নিরব থাকে। আনিতা আরো শক্ত করে আহিয়ানকে জাপটে ধরে বলে,
–“আপনি কোনোদিনও আমাকে ছেড়ে যাবেন না তো?”
–“তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো?”
–“আপনি আমায় ছেড়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যাবো বিশ্বাস করুন। বড্ড বেশি ভালোবাসি আমি আপনাকে। প্লিজ আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেন না।”
–“যাবো না পাগলী। আমি শুধু আমার এই পিচ্চি-পাখি টারই থাকবো।”
–“মনে থাকে যেন।”
–“আলবাত মনে থাকবে। মনে না থাকলে রক্ষা আছে আমার? এমনিতেই তুমি তো পুরাই ধানী লঙ্কা। আমি যদি তোমার না থাকি তাহলে তো তুমি আমাকে একদম খুন করে ফেলবে।”
–“হ্যাঁ খুন করবো তো। অবশ্যই খুন করবো আপনাকে। আপনি আমার ছাড়া অন্যকারো হতে পারবেন না।”
–“তুমি কি আমাকে থ্রেট করছো?”
–“হ্যাঁ করছি। তাতে আপনার কোনো সমস্যা?”
–“নাহ একদমই না।”
*
এভাবেই কথা বলতে বলতে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটায় দুজনে। মাগরিবের আজান দিয়েছে মিনিট দশেক হলো। আহিয়ান আর আনিতা দুজনে এখন ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরই আহিয়ান ওরা ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়বে। আহিয়ানের যাওয়ার সময় যত ঘনিয়ে আসছে আনিতার মন ততই অন্ধকারাচ্ছন্ন হচ্ছে। আহিয়ানের ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। আহিয়ান ফোন বের করে দেখে তন্ময়ের ম্যাসেজ। আহিয়ান ম্যাসেজ ওপেন করে,
–“ডিস্টার্ব করতে চাইছিলাম না। তবুও করতে হলো। ডিস্টার্ব যদি না করতাম তাহলে আপনারা দুজনে সারারাত পার করে দিবেন বুঝা গিয়েছে। সবার প্যাকিং শেষ। তোরটাও গুছিয়ে নিয়েছি। এবার বেরুতে হবে কিন্তু। তাড়াতাড়ি নিচে আয়।”
তন্ময়ের ম্যাসেজটা পড়ে আহিয়ান শুধু “আসছি” এতটুকু লিখেই তন্ময়ের নাম্বারে সেন্ড করলো। আহিয়ান আনিতার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে,
–“যেতে হবে এবার।”
–“সত্যি চলে যাবেন?”
–“যেতে তো হবেই। আবার দেখা হবে তো। মন খারাপ করো না প্লিজ।”
আনিতা কিছু বলল না। আনিতার চোখ দুটো ছলছল করছে। আহিয়ান আনিতার দু গাল ধরে বলে,
–“দেড় মাস পরেই কিন্তু তোমার এইচএসসি এক্সাম। এতদিন তো বিয়ের হই হুল্লোড়ে পড়াশুনো একেবারে লাটে উঠিয়ে ফেলছো। এখন থেকে এ কদিন ভালো করে পড়াশুনা করতে হবে কিন্তু। পড়া নিয়ে ফাঁকিবাজি একদম চলবে না। ভালো রেজাল্ট করতে হবে।”
–“হুম।”
–“মনে থাকবে তো?”
–“হুম।”
–“কি হুম হুম করছো?”
–“তো আর কি বলবো? আপনি তো চলেই যাচ্ছেন।”
–“আবার আসবো তো।”
এই বলেই আহিয়ান আনিতাকে জড়িয়ে ধরলো। আহিয়ান আনিতার শার্ট খামচে ধরে নিঃশব্দে কান্না করছে। আহিয়ান আনিতাকে ছেড়ে দিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,
–“আসছি। নিজের খেয়াল রেখো কেমন?”
–“আপনিও ভালোভাবে থাকবেন। আর বাসায় পৌঁছে আমায় জানাবেন।”
–“যথা আজ্ঞা মহারানী।”
আনিতা আর কিছু বলল না। আহিয়ানের থেকে ক্ষানিকটা দূরে সরে দাঁড়ালো। আহিয়ান ধীর পায়ে আনিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে দুহাতে আনিতার গাল ধরে গভীর ভাবে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো। আনিতা শক্ত করে এক হাত দিয়ে আহিয়ানের শার্ট খামচে ধরে রেখেছে। আর অন্যহাতে আহিয়ানের ঘাড় আঁকড়ে ধরেছে। আহিয়ানের গভীর স্পর্শে বার বার কেঁপে উঠছে আনিতা। মিনিট দুয়েক এর মতো আনিতার ঠোঁটে গভীর ভাবে চুমু খেয়ে ছেড়ে দিলো আনিতাকে। আনিতা কিছুটা দূরে সরে দাঁড়িয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আহিয়ান এক পা এগিয়ে আনিতার গাল ধরে বলে,
–“ভালোবাসি।”
–“আমিও ভালোবাসি আপনাকে।”
–“আসছি তাহলে?”
–“সাবধানে যাবেন।”
আহিয়ান আনিতার কপালে চুমু দিয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো৷ আনিতাও ওদের ছাদে গিয়ে নিচে নেমে এলো। মেইন ডোরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আনিতা। ফাইয়াজও চলে যাবে আজ। আহিয়ান ফাইয়াজ তন্ময় রাতুল আরহান সকলেই ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হলো। আহিয়ান যাওয়ার আগে আর একবার আনিতার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় “আসছি” বলে। আনিতাও চোখ দিয়ে সায় দিতেই আহিয়ান ওদের সাথে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে। আনিতা ছলছলে চোখে আহিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান ওরা অন্ধকারে মিলিয়ে যেতেই আনিতা নিজের রুমে চলে যায়।
।
।
।
চলবে।
#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৩৬
#Ornisha_Sathi
এর মাঝে আনিতাদের এইচএসসি এক্সাম শেষ হয়ে গিয়েছে। আজ দুপুর দুইটা বাজে আনিতাদের রেজাল্ট বের হবে। তা নিয়ে প্রচুর চিন্তায় আছে আনিতা। যদিওবা আনিতা মোটামুটি সিউর ভালো রেজাল্ট না হলেও পাশ করবে। কিন্তু আহিয়ানের এক কথা, পাশ করলেই হবে না ভালো রেজাল্টও করতে হবে। এ কয়েক মাসে আহিয়ান আনিতার সাথে তিনবার দেখা করেছিলো। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে আনিতা। আর রেজাল্টের জন্য চিন্তা করছে। সাথে ভয়ও হচ্ছে কিছুটা। ঘড়ির কাটায় শব্দ হতেই আনিতা লাফ দিয়ে উঠে বসে। দুটো বেজে গিয়েছে। কিছুক্ষণের মাঝেই রেজাল্ট পাবলিশ হবে। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আনিতার। হঠাৎ করেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠে। আনিতা ফোন হাতে নিয়ে দেখে আহিয়ানের কল। আনিতা ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আহিয়ান বলে,
–“কেমন আছো?”
–“আলহামদুলিল্লাহ…আপনি?”
–“হুম ভালো। রেজাল্টের জন্য টেনশন হচ্ছে না?”
–“হচ্ছে তো।”
–“চিন্তার কিছু নেই। ইনশাআল্লাহ রেজাল্ট ভালোই আসবে। অযথা চিন্তা করো না।”
–“হুম।”
–“আচ্ছা তোমার রোল আর রেজিষ্ট্রেশন নাম্বারটা বলো তো।”
–“কেন?”
–“আচ্ছা এক কাজ করো রোল আর রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার দিতে হবে না। তোমার এডমিট কার্ডের একটা ছবি তুলে দাও। ছবিটা যাতে স্পষ্ট আসে।”
–“ক্ কেন?”
–“রেজাল্ট দেখবো।”
–“আপনার দেখতে হবে না৷ আমিই দেখে নিবো।”
–“হুম দেখবা সমস্যা কি? কিন্তু আমিও দেখবো। তাড়াতাড়ি ছবিটা দাও।”
–“ন্ নাহ।”
–“দিতে বলছি না? চুপচাপ দিবা এত কথা বলো কেন?”
আহিয়ান কিছুটা ধমকেই কথাটা বলল। আহিয়ানের ধমকে কিছুটা কেঁপে উঠলো আনিতা। সাথে রাগ আর অভিমানও হলো বেশ। এভাবে ধমকে বলার কি আছে? মুখ গোমড়া করেই আনিতা বলে,
–“দিচ্ছি।”
এই বলে ফোন কেটে দেয় আনিতা। ফাইল থেকে এডমিট কার্ড বের করে একটা ছবি তুলে আহিয়ানকে সেন্ড করে দেয় ও। সাথে সাথেই আহিয়ান পিকটা সিন করে নেয়। আনিতা আর কিছু না বলে ফোন বিছানায় ছুড়ে মারলো। এবার আরো বেশি চিন্তা হচ্ছে। রেজাল্ট খারাপ হলে তো মান সম্মান আর কিছু থাকবে না। ও নিজে দেখলে একটা কথা ছিলো। কিন্তু এখন তো আহিয়ান রেজাল্ট চেইক করছে।
–“আল্লাহ! একটু দয়া করো তোমার ওই অধম বান্দাকে। টেনেটুনে কোনোভাবে পাশ মার্কটা যাতে উঠে। নয়তো আহিয়ানের সামনে মান সম্মান বলতে আর কিচ্ছু থাকবে না।”
এসব ভাবতে ভাবতেই আনিতার ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। আনিতা ম্যাসেজ চেইক করে দেখলো না। কিছুক্ষণ বাদে আবার ফোনের রিংটোন বেজে উঠে। আনিতা কিছুটা ঝুকে দেখে আহিয়ানের ফোন। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আনিতার। আহিয়ান ফোন করেছে মানে রেজাল্ট দেখা শেষ। যদি রেজাল্ট খারাপ হয়ে থাকে? কি হবে এবার? এই চিন্তায় আনিতা ফোন রিসিভ করলো না। প্রথমবারের মতো ফোন কেটে গিয়ে আবার দ্বিতীয় বার নতুন উদ্যমে ফোন বাজতে শুরু করে৷ আনিতা এবার কিছুটা কাঁপা কাঁপা হাতেই ফোন রিসিভ করে কানে নেয়। আনিতা ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ধমকের সুরে আহিয়ান বলে,
–“ফোন রিসিভ করতে এত সময় লাগে? কোথায় ছিলে ফোন রেখে?”
আহিয়ানের এভাবে ধমকের সুরে কথা শুনে আনিতা তো ভেবেই নিলো ও পাশ করে নি। যদি পাশ করতো তাহলে কি আহিয়ান শুরুতেই এভাবে কথা বলতো? এমনি সময় তো ফোন দিয়ে কি মিষ্টি মধুর কথা বলে। আর আজ? কেমন উচ্ছের মতো তেতো তেতো কথা বলছে। শুরুতেই ধমক দিলো। আনিতা আমতা আমতা করে বলে,
–“না মানে___”
–“ছবি দিয়েছি একটা দেখেছো?”
–“কি্ কিসের ছবি?”
–“তোমার রেজাল্টের।”
–“দে্ দেখছি।”
–“এখন আর দেখতে হবে না। ৪.১৯ পেয়েছো।”
–“কিই? এ গ্রেড আসছে?”
–“হ্যাঁ ম্যাডাম।”
আহিয়ানের কথায় লাফিয়ে উঠে আনিতা। ফোন হাতেই দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে সবাইকে রেজাল্টের কথা জানায়। আনিতা বা আহিয়ান কেউই লাইন কাটেনি এখনো। আনিতা খুশিতে ভুলেই গিয়েছে যে আহিয়ান লাইনে আছে। আর অন্যদিকে আহিয়ান ইচ্ছে করেই ফোন কাটেনি। এপাশে আনিতা খুশিতে লাফাচ্ছে দৌড়ঝাঁপ করছে আর অন্যদিকে আহিয়ান আনিতার এসব ইমাজিন করছে আর মুচকি হাসছে।
*
মিনিট পনেরো বাদে আনিতা ফোন হাতে নিয়ে রোদেলাকে ফোন করতে গেলেই দেখে আহিয়ান এখনো লাইনে। অবাক হয় আনিতা। এই ছেলেটা কি পাগল? এরকম কেউ করে? তড়িঘড়ি করে আনিতা রুমে এসে ফোন কানে নিয়ে বলে,
–“আপনি এখনো লাইনে আছেন? ফোন কেটে দিলেই তো পারতেন।”
–“পারতাম বাট কাটতে ইচ্ছে করলো না।”
–“কেন?”
–“সচক্ষে তো আর তোমার আনন্দে দিশেহারা অবস্থা লাফালাফি দৌড়ঝাঁপ দেখতে পারছি না। তাই তোমার হাসির শব্দেই সেসব ইমাজিন করছিলাম।”
–“ফোনে ব্যালেন্স তো বেশি হয়ে গিয়েছে এজন্য এভাবে উড়াচ্ছেন।”
–“নিজের টাকাই তো। আর তুমি আমার একমাত্র ফিউচার বউ তোমার পিছনে টাকা উড়াবো না তো কার পিছনে উড়াবো?”
–“আপনার সাথে কথা বলাই বেকার। কখনোই কথায় পেরে উঠিনা আপনার সাথে।”
–“তাহলে বলো না আর।”
–“ওকে।”
–“এই একদম না। কথা বলবে না মানে?”
–“আপনিই তো বারন করলেন।”
–“তাই বলে কথা বলা অফ করে দিবে? তুমি জানো না তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারি না।”
–“একটু আগেই বললেন কথা বলো না। এখন আবার বলছেন আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারেন না। আপনি আসলেই একটা পাগল।”
–“হ্যাঁ পাগলই তো। আমি তো পাগল #শুধু_তোমারই_জন্য বুঝলে?”
–“হ্যাঁ জানি তো আপনি শুধুমাত্র আমারই পাগল। আপনি ভালো হলেও আমার আর পাগল হলেও আমারই।”
–“এই পিচ্চি শুনো___”
–“শুনছি তো।”
–“ভালোবাসি তোমাকে।”
–“হ্যাঁ জানি।”
–“শুধু জানলেই হবে?”
–“তাছাড়া আর কি করতে হবে বলুন।”
–“আমি একা ভালোবাসলেই হবে? আপনাকেও তো ভালোবাসতে হবে। নিজে থেকে মুখ ফুটে ভালোবাসি বলতে হবে।”
–“আচ্ছা এরপর থেকে বলবো।”
–“না এখনই বলতে হবে।”
–“পরে বলি?”
–“নাহ এখন মানে এখনই।”
–“আ্ আই লাভ ইউ।”
–“আই লাভ ইউ টু। বাট এভাবে হবে না। বাংলায় ভালোবাসি বলতে হবে।”
–“একবার বললাম তো।”
–“আবারো বলতে হবে। নাম ধরে বাংলায় বলতে হবে।”
–“পারবো না।”
–“তাহলে ফোন রেখে দিলাম।”
–“আচ্ছা রেখে দিন।”
–“সত্যিই কিন্তু রেখে দিবো।”
–“আহিয়ান আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
সেকেন্ড টাইম আহিয়ান সিরিয়াস ভাবেই বলেছিলো ফোন কেটে দেওয়ার কথা। তাই চোখ বন্ধ করে এক নাগাড়ে আনিতা ভালোবাসি কথাটা বলে ফেলল। ঠোঁট কামড়ে ধরে নিঃশব্দে হাসলো আহিয়ান। মেয়েটা আসলেই পাগলী। এভাবে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয় ওরা। আনিতা ওর বন্ধুদের ফোন দিয়ে সকলের রেজাল্টের খবর নেয়। ওরা সবাই মোটামুটি ভালো রেজাল্টই করেছে।
*
আনিতার রেজাল্ট শোনার পর আনিতার আব্বু সকল আত্নীয় স্বজনের বাড়ি মিষ্টি পাঠিয়েছে। এলাকায়ও মিষ্টি বিলানো হয়েছে। আনিতা রুমে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছিলো। এতদিন ভালোই শান্তিতে দিন কাটিয়েছে এখন আবার এডমিশন টেষ্টের জন্য প্রিপারেশন নিতে হবে। কোন ভার্সিটিতে ভর্তি হবে সেটা এখনো ঠিক করেনি ওরা। তবে ওদের ইচ্ছে ওরা সকলে একই ভার্সিটিতে ভর্তি হবে। অনিমা এসে আনিতার দিকে এর আব্বু ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে,
–“তুষার ভাইয়া কথা বলবে তোর সাথে।”
একটু অবাক হলো আনিতা। হঠাৎ করে তুষার কেন কথা বলতে চাইবে? আনিতার একদমই ইচ্ছে নেই তুষারের সাথে কথা বলার। এভাবে মুখের উপর কথা বলবে না বললেও খারাপ দেখায়। তাই কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে আনিতা ফোন কানে নিয়ে সালাম দিলো। ওপাশ থেকে তুষার সালামের উত্তর নিয়ে বলে,
–“ভালো আছো জানি। তাই আর অযথাই কেমন আছো জিজ্ঞেস করলাম না। কি করা হচ্ছে এখন?”
–“তেমন কিছুই না।”
–“মানে ফ্রি আছো তাহলে?”
–“হ্যাঁ আপাতত ফ্রি-ই আছি।”
–“কংগ্রেস আনিতা।”
–“কেন?”
–“রেজাল্টের জন্য।”
–“থ্যাংকস।”
–“আনিতা একটা কথা বলবো?”
–“হ্যা বলুন।”
–“আপাতত তো ফ্রি আছো তুমি। তাহলে কি আমার সাথে একটু ঘুরতে বের হতে পারবে?”
–“না মানে__আ আমার বন্ধুরা আসবে। যেতে পারবো না আমি।”
–“প্লিজ একটা বিকেলেরই তো ব্যাপার।”
–“আজ না। আজ যেতে পারবো না আমি।”
–“আমি আসছি তোমাকে নিতে। আংকেলকে আমি রাজি করাবো চিন্তা করো না। রেডি হও তুমি।”
–“আরে আমার কথাটা____”
তুষার আনিতার পুরো কথা না শুনেই ফোন কেটে দিলো। আনিতার এবার রাগ হচ্ছে বেশ। এখন মনে হচ্ছে তখন মুখের উপর “কথা বলবো না” বলে দিলেই ভালো হতো। ধুর! কি মসিবত রে বাবা!
আনিতা উঠে গিয়ে ওর আব্বুকে গিয়ে ফোন দিয়ে এলো। রুমে এসে আনিতা আবার ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আনিতা শুয়ে শুয়ে ঘুমানোর প্ল্যানিং করছে। আর যাই হোক একজন ঘুমন্ত মানুষকে তো আর ডেকে তুলে ঘুরতে নিয়ে যাবে না। আনিতা বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশই করে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না ওর। মনে মনে বেশ বিরক্ত হলো আনিতা। একা একাই বিড়বিড় করেছে আনিতা,
–“যখন ঘুমোতে চাই না তখন বেঘোরে ঘুমাই। আর এখন যখন ঘুমোতে চাচ্ছি এখন ঘুম আসছে না? আজ ঘুমেও আমার সাথে বেইমানি করছে। শালার ঘুম! ঘুমের মাইরে আব্বা!”
একা একা এসব বিড়বিড় করার সময়ই ড্রয়িংরুম থেকে আনিতার ডাক পড়লো৷ আনিতার আব্বু ডাকছে ওকে। আনিতা উঠে ওড়না গায়ে জড়িয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়ালো। আনিতার অবুঝ মন একবারো ভাবলো না যে তুষার আসতে পারে। ড্রয়িংরুমে যেতেই আনিতার চোখ কপালে উঠে গেলো। তুষার বসে আছে। মনে মনে আনিতা নিজেকে হাজারটা গালি দিলো। যার সাথে ঘুরতে যাবে না বলে ঘুমানোর পন করলো। ভাবলো কিছুতেই তুষারের সামনে আসবে না। ঘুম না আসলেও ঘুমের ভাণ ধরে শুয়ে থাকবে। কিন্তু হলো কি? সেই তুষারের সামনেই পড়তে হলো। আনিতার এখন নিজের কপাল নিজেরই চাপড়াতে ইচ্ছে করছে। আনিতার আব্বু আনিতাকে ডেকে নিজের পাশে বসালেন। আনিতার আম্মু হালকা নাশতা দিয়ে গেলেন তুষারকে। তুষার কিছুটা খেলো আর বাকীসব ওভাবেই আছে। আনিতার আব্বু আনিতার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“গিয়ে রেডি হয়ে নাও তুষারের সাথে বের হবে।”
–“কিন্তু কেন আব্বু?”
–“কিছু কেনাকাটা করবে। তোমার আন্টির জন্য শাড়ি চুজ করার জন্যই তোমাকে ওর সাথে যেতে বলছে।”
–“আমি যাবো না আব্বু। ভালো লাগছে না আমার।”
–“ঘুরে আসো ভালো লাগবে।”
–“আব্বু___”
–“যাও বললাম না?”
আনিতা আর কিছু না বলে কাঁদো কাঁদো ফেস করে ওখান থেকে উঠে এলো। রুমে গিয়ে দরজা লক করে আহিয়ানের নাম্বারে ডায়াল করলো। বেশ কয়েকবার ফোন করার পরও আহিয়ান ফোন রিসিভ করলো না। আহিয়ান আনিতাকে বলেছিলো তুষারের আশেপাশে না যেতে। কিন্তু এখন তো কিছু করার নেই। আনিতার আব্বু বলেছে সুতরাং যেতেই হবে। কিন্তু আহিয়ানকে জানাতে তো হবে। মেজাজ খারাপ হচ্ছে এখন আনিতার। এইসময়-ই ফোন না ধরতে হলো? আনিতা আরো কয়েকবার ফোন দিলো। কিন্তু এবারেও ফলাফল শূন্য আহিয়ান রিসিভ করেনি। লাস্ট টাইম ফোন কেটে দিলো আহিয়ান। বিরক্ত হলো বেশ আনিতা। হঠাৎই ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। আনিতা ফোন হাতে নিয়ে দেখে আহিয়ানের ম্যাসেজ। আনিতা ম্যাসেজ ওপেন করে,
–“আনি অফিসে আছি। প্রচুর কাজের চাপ। শ্বাস নেওয়ার সময় অব্দি পাচ্ছি না। ফ্রি হয়ে রাতে কথা বলি? রাখছি। ভালোবাসি পিচ্চি।”
আনিতা আর রিপ্লাই করলো না। সত্যিই মনে হয় কাজের অনেক চাপ। নয়তো এমন কখনো হয়নি আনিতা ফোন করেছে আর আহিয়ান রিসিভ বা কল ব্যাক করেনি। আনিতা ভাবলো পরে যখন আহিয়ানের সাথে কথা হবে তখন জানিয়ে দিবে এই ব্যাপারটা। তুষারের উপর বড্ড রাগ হচ্ছে আনিতার। এত করে বারন করার পরও শুনলো না। সেই চলে এলো। আনিতা আর কোনো উপায় না পেয়ে বোরখা হিজাব মুখে মাস্ক পড়ে রেডি হয়ে নিলো। আনিতা রেডি হয়ে বের হতেই তুষার বের হলো বাসা থেকে। আনিতাও পিছু পিছু গেলো। বাইরে গিয়ে মেজাজ আরো বেশিই খারাপ হয়ে গেলো। বাইক নিয়ে এসেছে। উফস আল্লাহ!
আনিতা নিজের রাগ সংবরণ করে তুষারের বাইকের পিছনে চেপে বসলো। আনিতা আর তুষারের মাঝে বেশ কিছুটা দূরত্ব আছে। যতটা সম্ভব দূরত্ব রেখে বসা যায় আনিতা সেভাবেই বসেছে। আনিতা বসতেই তুষার বাইক চালাতে শুরু করে। কিছুদূর যাওয়ার পর তুষার বলে,
–“ধরে বসো। নয়তো পরে যাবে।”
–“এভাবেই ঠিক আছি আমি।”
।
।
।
চলবে।
#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৩৭
#Ornisha_Sathi
বেশ কিছু দিন চলে যায় এর মাঝে। সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে আনিতা আহিয়ানকে সবটা বলে। আহিয়ান তেমন কিছু একটা বলেনি। নেহাৎ আনিতার আব্বু যেতে বলেছিলো বলেই গিয়েছিলোও আনিতা। আর তাছাড়া আহিয়ানকে জানানোর চেষ্টা করেছিলো কিন্তু আহিয়ানই বিজি থাকায় ফোন রিসিভ করতে পারেনি। তাই এখানে আনিতার উপর রেগে যাওয়াটা ঠিক মানায় না।
ভার্সিটিতে ভর্তির প্রিপারেশন চলছে। সবাই মিলে ঠিক করেছিলো ওদের কলেজেরই ভার্সিটিতে ভর্তি হবে। কিন্তু মাঝখান থেকে বেঁকে বসলো রোদেলা। ও প্রয়োজনে পড়াশুনা ছেড়ে দিবে। তবুও নাকি এই ভার্সিটিতে ভর্তি হবেনা। আর তার একটাই কারন, ফারদিন সেই ভার্সিটির প্রফেসর। কিছু মাস আগেই ফারদিন পড়াশুনার পাট চুকিয়ে এই ভার্সিটির প্রফেসর হিসেবে জয়েন করে। ফারদিনকে দেখলে নাকি রোদেলার কষ্ট হবে। ফারদিনকে হারানোর যন্ত্রণাটা নাকি ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। ও চোখের সামনে সবসময় ফারদিনকে দেখতে পারবে না। তাই রোদেলা কিছুতেই এই ভার্সিটিতে ভর্তি হবে না। রোদেলা আর ফারদিনের সামনে পড়তে চায় না। তাই ও ঠিক করেছে ঢাকার কোনো একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে হোস্টেলে থেকেই পড়াশুনা করবে। আর এতে রোদেলার বাসার সবাইও রাজি। কারন, রোদেলার বাসার প্রতিটা সদস্য জানে রোদেলা ফারদিনকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। আর ফারদিন ইশফাকে বিয়ে করার পর রোদেলা কতটা ভেঙে পড়েছে। তাই রোদেলার কথায় আর কেউ দ্বিমত করেনি। এখান থেকে দূরে সরে মেয়েটা যদি একটু ভালো থাকে তো থাকুক না। ক্ষতি কি?
রোদেলা হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করবে শুনে আনিতার মনে একটু আশার আলো দেখা দিলো। আনিতারও ছোট থেকে ইচ্ছে ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করার। কিন্তু বাসায় থেকে রাজি হবে না বিধায় কাউকে বলার সাহস করে উঠতে পারেনি ও। এবার যখন রোদেলা ঢাকায় ভর্তি হবে তখন আনিতা মনে কিছুটা সাহস সঞ্চার করে ওর আম্মুকে গিয়ে বলে,
–“আম্মু রোদেলা না ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করবে।”
–“হ্যাঁ তো?”
–“দু/এক দিনের মাঝেই ঢাকা চলে যাচ্ছে ও।”
–“ভালো তো।”
আনিতার আম্মু কাজ করতে করতেই কথা গুলো শুনছিলো আর উত্তর দিচ্ছিলো। আনিতা এক হাত দিয়ে নিজের অন্যহাত ডলছে। ওর আম্মুকে বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না। আনিতা মনে কিছুটা সাহস জুগিয়ে ভয়ে ভয়ে বলল,
–“আ্ আমিও ঢা্ ঢাকায় থেকে পড়াশুনা করতে চাই আম্মু।”
এতক্ষনে আনিতার আম্মু হাতের কাজ ছেড়ে তীক্ষ্ণ চোখে আনিতার দিকে তাকালো। আনিতা ততক্ষণে মাথা নিচু করে নিয়েছে।
–“যতদূর পড়াশুনা করার ইচ্ছে হয় কর। কিন্তু এখানে থেকে। ঢাকায় হোস্টেলে থেকে পড়াশুনার নাম ভুলেও মুখে আনবি না। তোকে একা কোথাও ছাড়ছি না আমরা।”
–“একা কোথায় আম্মু? রোদেলাও তো আছে।”
–“থাকুক। ওকে একা ওর ফ্যামিলি ছাড়লে ছাড়ুক। আমি ছাড়বো না।”
–“প্লিজ আম্মু। কিছু হবে না। রাজি হয়ে যাও না। প্লিজ।”
আনিতার আম্মু আনিতার কোনো কথাই কানে তুলছে না। আনিতা ওর আম্মুর পিছু পিছু ঘুরছে আর একই কথা বলে যাচ্ছে। শেষে ওর আম্মু বিরক্ত হয়ে বলে,
–“বিরক্ত করিস না যা এখান থেকে।”
–“প্লিজ আম্মু। এমন করো না। প্লিজ আমি ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করতে চাই। প্লিজ রাজি হয়ে যাও তুমি।”
–“তোর আব্বু রাজি হলে যা। আমি এতে কিছু বলতে বা করতে পারবো না।”
*
পুরো তিনদিন লাগিয়ে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাসার সবাইকে রাজি করায় আনিতা। বেশ খুশি লাগছে আনিতার। ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করবে ওরা দুজন। তারউপর আহিয়ানকে যখন তখন চাইলেই দেখতে পাবে ও। ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করার কথাটা আনিতা এখনো আহিয়ানকে জানায়নি। ভেবেছে একেবারে ঢাকায় গিয়েই সারপ্রাইজ দিবে। ফাইয়াজকেও বারন করে দিয়েছে কথাটা জানাতে। আনিতা ওরা ভেবেছিলো হোস্টেলে গিয়ে উঠবে। কিন্তু আনিতার ফুপ্পি তাতে বাধা দেয়। তিনি জানান, ফাইয়াজ তো একাই একটা ফ্ল্যাটে থাকে। ওরা ফাইয়াজের ওখানে গিয়েই উঠবে৷ ওদের একা থাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। দেখে রাখার জন্য ফাইয়াজ তো থাকবেই। আনিতা আর রোদেলাও দ্বিমত করেনি। রোদেলার তো প্রথমে বেশ মন খারাপ করছিলো ঢাকায় গিয়ে একা থাকতে হবে বলে। কিন্তু আনিতা যখন জানালো ও নিজেও যাচ্ছে রোদেলার সাথে তখন রোদেলার খুশি দেখে কে। কিছুক্ষণ আগে শুভ ফোন করে জানায় ও ওদের সাথে একই ভার্সিটিতে ভর্তি হবে। তিন বন্ধু মিলে একসাথে থাকবে। ওদের যেন আনন্দের কোনো শেষ নেই। কিন্তু কষ্ট কিছুটা থেকেই গেলো। এত করে বলার পরও তাসকিয়ার আব্বু রাজি হয়নি তাসকিয়াকে ঢাকা পাঠাতে। তাসকিয়ার আব্বুর একই কথা, ফারদিনের এখানে বিয়ে ঠিক হয়ে থাকার পরও ঢাকায় থেকে এক মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে বাড়ি ফিরলো। তাসকিয়াও যে এমন কিছু করবে না তার কি গ্যারান্টি? একবার মান সম্মান হারিয়েছেন। ছেলেকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন পড়াশুনার জন্য আর ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে। তাই তিনি দ্বিতীয় বারও একই ভুল করতে চান না। তার মতে, পরিবারের সবার শাসন ভালোবাসা ছেড়ে হোস্টেলে থেকে যারা পড়াশুনা করেন তাদের অধিকাংশই খারাপ ছেলে মেয়ে বা বাজে বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে বেপথে পা দেয়। সবাই মিলে বোঝানোর পরও তিনি বুঝতে নারাজ। তাই সকলেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তাসকিয়ারও যেমন ওদের সকলে ছেড়ে থাকবে বলে মন খারাপ তেমনি ওদের তিনজনেরও ভীষণ রকমের মন খারাপ তাসকিয়াকে ছেড়ে যাবে বলে।
রাত নয়টা বেজে একচল্লিশ মিনিট। ফাইয়াজ এসেছে আজ সন্ধায়। আনিতা ওদেরকে নিয়ে যেতে। কাল সকালেই বের হবে ঢাকার উদ্দেশ্যে। সকালে প্যাকিং করার সময় পাবে না বলে এখনই জামা কাপড় সহ আনিতার সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে আনিতা। খুব মনোযোগ সহকারে আনিতা নিজের জিনিসপত্র গুছাচ্ছে। ফাইয়াজ আনিতার রুমে এসে আনিতার বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়লো। মাথার উপরে চলন্ত ফ্যানের দিকে ক্ষানিকটা সময় তাকিয়ে থেকে ফাইয়াজ বলে,
–“হঠাৎ করে ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করার ভূত মাথায় চাপলো কেন?”
আনিতা ব্যাগ গুছানো বাদ দিয়ে ফাইয়াজের দিকে তাকালো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারো ব্যাগ গুছানোতে মনোনিবেশ করে বলে,
–“ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করার ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। বলার সাহস হয়নি কখনো।”
–“হঠাৎ এতো সাহস এলো কোত্থেকে?”
–“জানি না। রোদেলা ঢাকায় গিয়ে পড়াশুনা করবে। তাই আমিও ভাবলাম একটা বার অন্তত বলে তো দেখি। রাজি হওয়া বা না হওয়াটা পরের বিষয়।”
–“হুম বুঝলাম। টিকিট কাটলি আর অমনি লটারি লেগে গেলো তাই না?”
–“হুম অনেকটা সেরকমই। তবুও রাজি করানোর জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আমার জানো? আমি তো ভেবেছিলাম রাজি হবেই না। কিন্তু অবশেষে রাজি হলো সবাই।”
দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। আনিতা হাসি থামিয়ে আবারো ব্যাগ গুছানোয় মনোযোগ দিলো। ফাইয়াজ কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলে,
–“তোরা সবাই যাচ্ছিস। তাহলে তাসকিয়া কেন যাচ্ছে না?”
–“তোমার হবু শশুড়জি যেতে দিবে না।”
–“কেন?”
–“তার ধারনা ঢাকায় গিয়ে তার ছেলে বেপথে পা দিয়ে বাড়ির পছন্দ করা মেয়েকে বাদ দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে বাড়ির মান সম্মান ডুবিয়েছে। এখন যদি মেয়েকেও ঢাকায় পাঠান তাহলে তার বাকী যেটুকু মান সম্মান অবশিষ্ট আছে সেটুকুও শেষ হয়ে যাবে।”
কথাগুলো শুনে ফাইয়াজ ফোঁস করে একটা শ্বাস ছাড়লো। ইশ্ বেচারা! কোথায় ভেবেছিলো আনিতা ওদের সাথে তাসকিয়াও যাবে৷ তাসকিয়াকে দেখার জন্য আর ছটফট করতে হবে না। সবসময় চোখের সামনে থাকবে। কিন্তু হলো পুরো উল্টোটা।
*
রাতের খাবার খেয়ে আনিতা মাত্রই বিছানা ঠিক করে শুয়েছে। হঠাৎ করেই আনিতার ফোন বেজে উঠে। বালিশের পাশ থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার। রিসিভ করবে না ভেবেও আবার কি মনে করে ফোন রিসিভ করে কানে নিলো। আনিতা সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–“কে বলছেন?”
–“তুষার বলছি।”
আনিতার এবার বেশ রাগ হলো নিজের উপর। যার থেকে দূরে থাকতে চায় বার বার সেই কেনো সামনে চলে আসে? ফোন রিসিভ করার জন্য আনিতার এবার বেশ মেজাজ খারাপ হলো। প্রথমে ভেবেছিলো ধরবে না। না ধরলেই ভালো হতো। আনিতার এসব ভাবনার মাঝেই ওপাশ থেকে তুষার বলে,
–“বিরক্ত করলাম কি?”
–“নাহ বলুন কি বলবেন।”
–“কাল নাকি ঢাকায় চলে যাচ্ছো?”
–“হ্যাঁ তো?”
–“নাহ এমনি। কোথায় উঠছো?”
–“ফাইয়াজ ভাইয়ার ফ্ল্যাটে উঠবো।”
–“ওহ আমাদের বাসা থেকে দুটো গলি পড়েই। তাহলে রোজ দেখা হচ্ছে।”
–“রাখছি। ঘুমোবো।”
তুষারকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আনিতা লাইন কেটে দিলো। আনিতা ফোন কানে থেকে নামাতেই দেখে দুটো মিসড কল উঠে আছে। আনিতা কল লিষ্টে গিয়ে দেখে আহিয়ান দুবার ফোন করেছিলো। আনিতা তাড়াতাড়ি করেই আহিয়ানের নাম্বারে ডায়াল করে৷ দু/তিন বার রিং হওয়ার পরই আহিয়ান ফোন রিসিভ করে।
–“আ’ম সরি আহিয়ান। আসলে অন্য একটা ফোন এসছিলো তাই___”
–“ইট’স ওকে আনি। এতো এক্সপ্লেইন করতে হবে না। ফোন আসতেই পারে। আমারো তো কত ফোন আসে। বাদ দাও সেসব কথা। কি করছো?”
–“কিছু না শুয়ে আছি। আপনি?”
–“আমিও৷”
–“জানতে চাইবেন না এসময় কে ফোন করেছিলো? বা কার সাথে কথা বলতে পারি?”
–“জানার প্রয়োজনবোধ করছি না। কয আমি জানি যে, আমার পিচ্চি-পাখি শুধু আমারই।”
–“তারপরও আপনার জানা উচিত না? অন্য কেউ হলে তো এতক্ষণে ঝগড়াঝাটি বাধিয়ে ফেলতো। আর তাছাড়া আমি আপনার থেকে কিছু লুকোতে চাই না। আমি ভালো খারাপ যাই করি না কেন? আমি চাই সেটা আপনি আমার থেকেই শুনুন। কেননা, আপনি পরে সেটা অন্য কারো থেকে জানলে আঘাতটা একটু বেশিই পাবেন।”
–“আমি বিশ্বাস করি তোমাকে।”
–“তবুও__”
–“আচ্ছা তুমি যেহেতু বলতে চাইছো তাহলে বলো।”
–“তুষার ভাইয়া ফোন করেছিলো।”
তুষারের নাম শুনেই আহিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। রাগে পুরো শরীর রি রি করছে। সব কিছু সহ্য করতে পারে ও। শুধুমাত্র এই একটা নাম। এই একটা মানুষকে ছাড়া। কেন জানি শুরু থেকেই আহিয়ানের তুষারকে একদম পছন্দ না। আহিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
–“ও ফোন দিলো আর তুমিও রিসিভ করে নিলে? বলেছিলাম না তোমাকে ওর থেকে দূরে থাকতে আর ওর সাথে কথা না বলতে।”
–“আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছিলো ভেবেছিলাম আপনি হতে পারেন। তাই রিসিভ করেছিলাম। আমি জানিতাম না ওটা তুষার ভাইয়ার নাম্বার।”
আহিয়ান দু আঙুলে কপাল ঘঁষে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। পরপর জোরে কয়েকটা বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো ক্ষানিকটা।
–“আহিয়ান শুনছেন?”
–“হুম বলো।”
–“সরি আর এমন হবে না।”
–“বাদ দাও এসব কথা।”
–“আচ্ছা।”
–“আচ্ছা ফাইয়াজ আজকে হুট করেই বাসায় ফিরলো কেন? সবাই ঠিক আছে তো?”
–“হ্যাঁ না মানে__”
–“আমতা আমতা করছো কেন এভাবে? ওদিকে সব ঠিকঠাক আছে তো?”
–“হ্যাঁ হ্যাঁ স্ সব ঠিকই আছে। আসলে হ্ হয়েছে কি ফুপ্পি ফোন করে বলেছিলো ভাইয়াকে বাসায় আসতে। ত্ তাই এসেছে।”
–“হুম ঠিকাছে। এই কথাটা বলতে এত তোতলাচ্ছো কেন?”
–“কই না তো। আম্ আমি তো ঠিকই আছি।”
–“হুম বুঝলাম।”
–“ঘুমাবেন কখন আপনি? সকালে আবার অফিস আছে না? কটা বাজে খেয়াল আছে?”
আনিতার কথায় আহিয়ান কান থেকে ফোন নামিয়ে সময় দেখে নিলো একবার। পৌনে বারোটা বাজে। আনিতার মুখ থেকে ঘুমানোর কথা শুনে বেশ অবাক হলো আহিয়ান। ফোন কানে নিয়ে বলল,
–“আমি ঠিক শুনলাম তো? নাকি ভুল শুনেছি?”
–“কেন ঠিকই শুনেছেন। ভুল শুনবেন কেন?”
–“না মানে যে কিনা ভোর হয়ে গেলেও বলে আর একটু কথা বলি। সারারাত কথা বলেও যার মন ভরে না। সেই কিনা আজ পৌনে বারোটায় আমাকে ঘুমোতে বলছে? তুমি ঠিক আছো তো আনিতা? জ্বর-টর হয়নি তো আবার?”
–“ফাজলামো করেন আমার সাথে? ওকে আজ আর ফোন রাখছি না আমি। সকাল হয়ে গেলেও না। অনেক অনেক কথা বলবো। তখন ঘুমোতে চাইলে কিন্তু ফোনের ভিতর দিয়েই ঢুকে আপনাকে একেবারে জানে মেরে ফেলবো।”
–“হয়েছে বুঝছি।”
–“কি?”
–“ঘুমাও। কাল কথা হবে।”
–“নাহ। আমি ফোন রাখবো না। কথা বলবো।”
–“কাল বলবো তো।”
–“বললাম না এখন বলবো।”
–“সারাদিন খুব চাপে ছিলাম ঘুম আসছে আমার। সকালে আবার অফিস আছে।”
–“কেন তখন আমি এই কথাটা বলিনি? আপনিই তো উলটো হাসলেন আমার কথায়। তাহলে এখন ফোন রাখার কথা বলছেন কেন? হুয়াই? রাখবো না আমি ফোন।”
–“আনি জেদ করে না।”
কিছুটা ধমকের সুরেই কথা বলল আহিয়ান। তাই আনিতা একেবারে চুপ হয়ে গিয়েছে। আহিয়ান বুঝতে পারলো আনিতার অভিমান হয়েছে। কিন্তু ও সেটা ভাঙালো না। আনিতার অভিমান হয়েছে বুঝতে পেরে আহিয়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে নিঃশব্দে হাসলো। এখনো পুরো বাচ্চা মেয়েটা। এই মেয়েটার রাগ অভিমান দেখলে কে বলবে ও এবার ভার্সিটিতে ভর্তি হবে? রাগে অভিমানে যখন গাল ফুলিয়ে বসে থাকে তখন আনিতাকে দেখতে পুরো বাচ্চা বাচ্চা-ই লাগে।
–“পিচ্চি-পাখি।”
–“বলুন।”
–“কথা বলবে না? চুপ করে আছো কেন?”
–“ঘুমাবো।”
–“সত্যি?”
–“হ্যাঁ।”
–“ভালোবাসি আমার পিচ্চি-পাখিটাকে।”
–“হুম ভালোবাসি। রাখছি।”
আহিয়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আনিতা ফোন কেটে দিলো। আনিতার বাচ্চামোতে আহিয়ান আপনমনেই ক্ষানিকটা সময় হাসলো। তারপর শুয়ে পড়লো। অন্যদিকে আনিতাও গাল ফুলিয়ে কিছুটা সময় বসে থেকে কাঁথা মুড়িয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
।
।
।
চলবে।
[ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]