#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৪৪
#Ornisha_Sathi
এর মাঝে দেড়টা মাস কেটে গিয়েছে। আনিতার থেকে ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে সেদিনই। আনিতা বা আহিয়ান কেউ-ই কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। আনিতা ফার্স্ট সেমিস্টার এক্সাম দিয়েছে কিন্তু তবুও আহিয়ানের সাথে দেখা তো দূরে থাক কথা অব্দি বলতে পারেনি। পরিক্ষার কদিন আনিতা তুষারদের বাসায় থেকেছে। সাথে আনিতার চাচ্চুও। আনিতার ছোট চাচ্চু প্রতিদিন আনিতাকে এক্সাম দিতে নিয়ে যায় আবার নিয়ে আসে। সারাটা সময় ওর চাচ্চু হলের বাইরেই থাকে। তাই আহিয়ানের সাথে কথা বলা দেখা করাটা হয়ে উঠেনি। আহিয়ান এসেছিলো চারদিন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। লাস্ট এক্সাম আজ। আজ আনিতা সবার শেষে বের হয়। নাহিয়ানের ফোন দিয়ে আহিয়ানের সাথে কথা বলবে বলে। কিন্তু আহিয়ানের নাম্বার ওয়েটিংয়ে ছিলো। ক্ষানিকটা বাদে আহিয়ান কলব্যাক করে কিন্তু ততক্ষণে আনিতা ক্লাসরুম থেকে বের হয় যায়। নাহিয়ান সাথে সাথেই পিয়নকে পাঠায় আনিতাকে ডেকে পাঠাতে। বিল্ডিং থেকে বের হয়ে আনিতারা প্রায় মাঠের অর্ধেকটা চলে এসেছে পিয়ন কয়েক হাত দূর থেকে আনিতাকে ডেকে উঠে। আনিতা আর ওর ছোট চাচ্চু পিয়নের ডাকে পিছু ফিরে তাকায়। পিয়ন আনিতার সামনে এসে বলে,
–“ইংলিশ স্যার তোমাকে ডাকছে।”
কথাটা বলেই পিয়ন চলে গেলো। আনিতা ওর ছোট চাচ্চুর দিকে তাকাতেই ওর ছোট চাচ্চু বলে,
–“যাও। আমি এখানেই আছি।”
আনিতা মাথা নেড়ে উলটো হাঁটা দেয় নাহিয়ানের কেবিনে যাওয়ার জন্য। আনিতা ভেবে পাচ্ছে না হুট করে নাহিয়ান কেন ডাকছে ওকে? এসব চিন্তা ভাবনার মাঝেই আনিতা নাহিয়ানের কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজা খুলে বলে,
–“মে আই কাম___”
–“ইয়েস কাম।”
আনিতা পুরো কথা বলার আগেই নাহিয়ান বলে। আনিতা কেবিনে গিয়ে নাহিয়ানের বরাবর দাঁড়ায়। আনিতা কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নাহিয়ান হেসে বলে,
–“বসো।”
আনিতা নিঃশব্দে চেয়ার টেনে নাহিয়ানের সামনে বসে। আনিতা ইতস্তত করে বলে,
–“স্যার পিয়ন আংকেল বলল আমায় ডেকেছিলেন।”
–“হুম ডেকেছি। তবে তোমায় না বলেছি ক্লাসরুমের বাইরে আমায় ভাইয়া ডাকতে।”
–“নেক্সট টাইম থেকে ডাকবো।”
–“গুড। কি খাবে বলো? চা কফি? নাকি ঠান্ডা কিছু খাবে?”
–“কিছু লাগবে না ভাইয়া। বাইরে চাচ্চু অপেক্ষা___”
–“আহিয়ানকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?”
আনিতা কিছু না বলে মাথা নিচু করে নিলো। নাহিয়ান চেয়ার থেকে উঠে এসে আনিতার পাশেই টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
–“জানো আমার ভাইটাও বেশ কষ্ট পাচ্ছে৷ কতদিন হলো তোমায় দেখে না তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারে না।”
কিছু না বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো আনিতা। নাহিয়ান আনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
–“আর কয়েকটা দিন দুজনে একটু কষ্ট করে নাও। আমি আম্মুকে ম্যানেজ করে আম্মু আর আমি অতি শীঘ্রই তোমাদের বাসায় যাচ্ছি।”
–“হুম। এখন তাহলে আসছি?”
–“আর একটু বসো।”
–“কিন্তু___”
–“আহিয়ান আসছে।”
আহিয়ানের কথা মনে হতে আরো কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আহিয়ান আসবে? ও দেখবে আজ আহিয়ানকে। কতদিন পর ও আহিয়ানকে দেখবে। স্পর্শ করতে পারবে। ভাবতেই আনিতার খুউব খুশি খুশি লাগছে। মিনিট দুয়েকের মাথায় আহিয়ান দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে। আনিতা গিয়ে আহিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। নাহিয়ান এগিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিলো। কখন কে এসে পড়ে বলা তো যায় না।
আনিতা আহিয়ানের বুকে মাথা রেখে হেঁচকি তুলে কাঁদছে। এতদিনে আহিয়ানেরও বেশ শান্তি লাগছে ভিতরটায়। কতদিন পর ওর পিচ্চিপাখি টাকে বুকে আগলে নিলো। শক্ত করে দুজন দুজনে আঁকড়ে ধরে আছে। একটু ছাড়া পেলেই যেন একজন আরেক জনের থেকে হারিয়ে যাবে। মিনিট চারেক পর আনিতা আহিয়ানকে ছেড়ে দাঁড়ালো। আনিতা জিজ্ঞেস করলো,
–“কেমন আছেন?”
–“এই যে আমার পিচ্চিটার দেখা পেয়ে গেছি এখন খুব ভালো আছি।”
–“চোখমুখের এই অবস্থা কেন? খাওয়া-দাওয়া করেন না ঠিকভাবে? শুনুন খাওয়া-দাওয়ার কোনো অনিয়ম চলবে না এই বলে দিলাম। আমি ছিলাম আমি আছি এবং আমি আপনারই থাকবো।”
–“হুম জানি তো। আমাকে তো বলা হচ্ছে খুব। তাহলে আপনার এই হাল কেন? এই ক’দিনে কম হলেও দশ কেজি ওজন কমেছে আপনার। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। কারন কি হুম? আমি কি মরে গিয়ে___”
–“চুপ একদম চুপ। এমন বললে কিন্তু আমি আপনার সাথে আর কক্ষনো কথা বলবো না।”
–“এই রে ভুল কথা বলে ফেলেছি মনে হচ্ছে। এই যে কানে ধরলাম আর এমন বলবো না।”
হঠাৎই দরজায় নক হলো। নাহিয়ান গিয়ে দরজা হালকা খুলে দেখে পিয়ন দাঁড়িয়ে আছে। নাহিয়ানকে দেখেই পিয়ন বলে,
–“স্যার আনিতার চাচ্চু এদিকেই আসছে।”
–“আচ্ছা তুমি যাও।”
নাহিয়ান আবার দরজা আটকে ওদের কাছে গিয়ে বলে,
–“আনিতার চাচ্চু এদিকেই আসছে। ওকে এখন যেতে হবে।”
আহিয়ান পকেট থেকে একটা ফোন বের করে আনিতার দিকে এগিয়ে দিলো। আনিতা প্রথমে নিতে না চাইলেও আহিয়ান জোর করেই ওর হাতে ফোন দেয়। আনিতা ফোন হাতে নিয়ে উলটে পালটে দেখে বলে,
–“এটা তো আপনার ফোন।”
–“আমার কাছে আর একটা আছে। এটা তোমার কাছেই রাখো। আর হ্যাঁ ফোনটা সবসময় অফ রাখবে। যখন সময় সুযোগ পাবে তখন অন করে আমায় ফোন করো। কথা বলা শেষে আবার অফ করে রাখবে। আর সিমও আছে এটাতে। কেউ যেন বুঝতে না পারে তোমার কাছে ফোন আছে। বি কেয়ারফুল।”
–“আচ্ছা।”
আহিয়ান আর একবার আনিতাকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু দিয়ে ওকে ছেড়ে দিলো। আনিতা বের হওয়ার আগে আহিয়ান কতগুলা নোট’স দিলো ওর হাতে। আনিতা ফোনটা ভালো ভাবে ব্যাগের ভিতরে বইয়ের ভাজে রেখে দিলো। তারপর নোট’স গুলো হাতে নিয়ে আর একবার আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।
আনিতা দোতালায় নাহিয়ানের কেবিন থেকে বের হয়ে কড়িডোর শেষে দু সিড়ি নামতেই ওর ছোট চাচ্চু এলো। আনিতার চাচ্চু বলে,
–“এত সময় লাগলো কেন? কেন ডেকেছিলো?”
–“এই নোট’স গুলো দিতে। এক্সাম হলে স্যারকে বলেছিলাম আমি ক্লাস না করে শুধু এক্সাম দিবো। আর বাসায় পড়াশুনা করবো। তাই তিনি আমাকে এই নোট’স গুলো দিলেন।”
–“আচ্ছা এখন চল।”
আনিতা আর কথা না বাড়িয়ে ওর চাচ্চুর পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলো। ভার্সিটি থেকে বের হয়ে একটা রিকশা ডেকে দুজনে রিকশায় চড়ে বসলো।
–
বিকেলে আনিতার চাচ্চু আর তুষারের আব্বু বের হয় বাসা থেকে। আজকেই আনিতারা চলে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু সবার জোরাজোরিতে আজকের রাত থাকতে বাধ্য হয়। আনিতার চাচ্চু বাসা থেকে বের হওয়ার কিছু সময় বাদেই ও ড্রয়িংরুম ছেড়ে উঠে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। তুষাররা পাচঁ তলায় থাকে। আনিতা দরজা লাগিয়ে দিয়ে ব্যালকোনিতে চলে যায়। নিচে তাকিয়ে দেখে ওর চাচ্চু আর তুষারের আব্বু রিকশায় উঠে পড়েছেন। রিকশাটা চোখের আড়াল হতেই আনিতা ফোন অন করে। ওয়ালপেপারে ওর ছবি। আনিতার মনে পড়লো, ওর চাচ্চুর বিয়েতে হলুদের দিন রাতে দুজনে ছাদে বসেছিলো। আনিতা একা একাই বকবক করছিলো তখনই ছবিটা তুলেছে আহিয়ান। মুচকি হাসলো আনিতা। কল লিষ্টে গিয়ে আহিয়ানের নাম্বার তুলে ডায়াল করলো। একবার রিং হতেই আহিয়ান ফোন রিসিভ করে কানে নিয়ে বলে,
–“হুম আনিতা বলো? আশেপাশে আবার কেউ নেই তো? ধরা পড়ার কোনো চান্স নেই তো আবার।”
–“উঁহু একদমই ধরা পড়ার চান্স নেই। চাচ্চু বাসায় না বের হয়েছে আংকেলের সাথে।”
–“আংকেল?”
–“তুষার ভাইয়ার আব্বু।”
–“কোথায় আছো তোমরা?”
–“তুষার ভাইয়াদের বাসায়। এখানে থেকেই এক্সাম দিয়েছি। আজই চলে যাওয়ার কথা ছিলো আন্টি যেতে দেয়নি। কাল চলে যাবো।”
–“তুষারের থেকে দূরে থাকবে কিন্তু।”
–“হুম।”
–“কি করছো?”
–“ব্যালকোনিতে বসে আছি।”
–“একটু বাদেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে রুমে যাও।”
–“থাকি না কিছুক্ষণ। ভালোই লাগছে।”
–“ওকে আপনার যেমন মর্জি।”
–“আচ্ছা রুমেই যাচ্ছি।”
আহিয়ান জানতো এই কথাটা বললেই আনিতা রুমে চলে যাবে৷ আর হলোও তাই। আহিয়ান নিঃশব্দে ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসলো। বিছানায় শুয়ে শুয়ে আনিতা ফোনে কথা বলছিলো। কখন যে সময় কেটে যায় বুঝতেই পারে না ও। সন্ধ্যা পার হয়েছে বেশ কিছুটা সময়। হঠাৎ করে দরজায় নক হওয়াতে আনিতা ধরফরিয়ে উঠে বসে। আহিয়ানকে বলে,
–“কেউ দরজায় নক করছে। রাখছি আহিয়ান।”
–“হুম। এত রিস্ক নিয়ে ফোন করার আর দরকার নেই। পরে সময় বুঝে ফোন দিও।”
–“আচ্ছা রাখছি।”
–“ভালোবাসি।”
–“আমিও ভালোবাসি আপনাকে।”
আনিতা এইটুকু বলেই ফোন কেটে দিলো। ফোন অফ করে ব্যাগে রেখে দিলো। তারপর উড়না গায়ে জড়িয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজার ওপাশে তুষার দাঁড়িয়ে আছে। তুষার একগাল হেসে বলে,
–“এত সময় লাগলো যে দরজা খুলতে।”
–“ঘু্ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম একটু।”
–“আচ্ছা। ভিতরে আসবো? নাকি বাইরেই দাঁড় করিয়ে রাখবো।”
–“না না আসুন। আপনাদের বাসা। আমি কেন আপনাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবো।”
তুষার ভিতরে গিয়ে বিছানায় পা তুলে আয়েশ করে বসে। তারপর বিড়বিড় করে বলে,
–“হ্যাঁ আমাদের বাসা। তবে তোমার বাসা হতেও বেশি সময় লাগবে না। আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা।”
–“কিছু বললেন?”
–“কই না তো।”
–“আমার মনে হলো আপনি কিছু বলছিলেন।”
–“তুমি ভুল শুনেছো হয়তো। এখন বলো এক্সাম কেমন হলো?”
–“ভালো।”
এইটুকু বলে আনিতা চুপ করে গেলো। একটু আগে তুষারের বলা কথাটা আনিতাকে বেশ ভাবাচ্ছে। তুষার বিড়বিড় করে যা বলেছে সবটাই আনিতা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে। তুষারের কথার মানে বুঝতে পেরে আনিতার বুকটা ধক করে উঠলো। যদি সত্যি এমন কিছু হয় তাহলে? না না এমন কিছু হতে পারে না। এমনটা ওর ফ্যামিলি ওর সাথে কিছুতেই করতে পারে না।
আনিতার এসব ভাবনার মাঝেই তুষারের ছোট বোন এসে ওদের দুজনকে ড্রয়িংরুমে ডাকে। আনিতা আগেই উঠে চলে গেলো। আনিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তুষারও ড্রয়িংরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
আনিতা ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখে ওর ছোট চাচ্চু এসে পড়েছে। আংকেল আন্টির সাথে বসে গল্প করছেন। আনিতাকে দেখতে পেয়ে ওর চাচ্চু আনিতাকে ইশারায় ডেকে উনার পাশে বসতে বললেন। আনিতাও মাথা নিচু করে নিঃশব্দে ওর ছোট চাচ্চুর পাশে গিয়ে বসলেন। মিনিট দুয়েকের মাথায় তুষারের আম্মু উঠে কিচেনে চলে গেলেন। কিছুক্ষণের মাঝেই তিনি ট্রেতে করে সন্ধ্যার নাস্তা নিয়ে হাজির হলেন। কয়েক ধরনের খাবার এনেছেন এখানে। কেটলিতে করে চা, বিস্কুট সমুচা, চিকেন রোল আর নডুলস। সবাই খেতে শুরু করলো। আনিতা বসে ছিলো দেখে ওকে খাওয়ার জন্য বললে ও একটা সমুচা নিয়ে খেতে শুরু করে। তারপর এক বাটি নডুলস খায়। এই দুটো খাবারই ওর বড্ড পছন্দের। খাওয়া শেষে আরো কিছুক্ষণ সবার সাথে বসে আড্ড দিলো। তারপর ওঠে রুমে চলে এলো। আসার আগে বলে এলো ও ঘুমোবে আর রাতে খাবে না তাই কেউ যাতে না ডাকে।
রুমে এসে আনিতা আগে দরজা লক করে দিলো। সত্যিই ঘুমোবে ও এখন। সেদিনের পর থেকে ওর আর রাতে ঘুম হয়নি। কান্নাকাটি করতে করতেই রাত শেষ হয়েছে। আর আজ আহিয়ানের দেখা পেয়েছে ও। আহিয়ানকে স্পর্শ করতে পেরেছে ওর বুকে মাথা রাখতে পেরেছে। ওর মন এখন একদম ঠিকঠাক আছে। চোখ মেলে তাকাতে পারছে না আর। অনেকদিন যাবত না ঘুমানোর ফলে এই অবস্থা। আজ আহিয়ানের সাথে কথা হয়েছে। আজ ঘুমটা ভালো হবে। তাই লাইট অফ করে দিয়ে শুয়ে পড়লো আনিতা।
।
।
।
চলবে।
#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৪৫
#Ornisha_Sathi
পনেরো দিনে পরের কথা। সন্ধ্যায় আনিতা নডুলস রান্না করছিলো। নডুলস রান্না শেষে নিজের জন্য কিছুটা নডুলস একটা ছোট বাটিতে নিয়ে বাকীটা একটা বড় বাটিতে ঢেলে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখলো। সোফায় দু পা তুলে আসাম দিয়ে বসে বসে টিভি দেখছে আর নডুলস খাচ্ছে ও। তখনই তুষার তুষারের আব্বু আম্মু চার পাঁচ প্যাকেট মিষ্টি আর ফলমূল নিয়ে হাজির হয়। আনিতার মেজ কাকিমা সেগুলো নিয়ে কিচেনে রাখেন। অনিমা গিয়ে ওর আব্বু আর চাচ্চুকে ডেকে আনেন। সোফায় বসে সবাই গল্প করছে। তুষার গিয়ে আনিতার পাশে সোফায় বসে। কথা বলতে চায় আনিতার সাথে। আনিতাও সৌজন্যতার খাতিরে দু/একটা কথা বলেন। আনিতা জারাফকে ডেকে ওর আর তুষারের মাঝে বসালো। জারাফ চিপস্ এর প্যাকেট খুলে চিপস্ খাচ্ছে। আর আনিতা এখনো নডুলস খাচ্ছে বসে বসে। তুষার আরো কথা বলতে চাইছিলো ওর সাথে। কিন্তু আনিতা এমন একটা ভাব নিয়ে বসে ছিলো যে ও টিভি দেখায় প্রচুর ব্যস্ত তাই আর কথা বাড়ায়নি তুষার।
আনিতার আম্মু আর কাকিমা ট্রে তে করে নানান রকমের নাস্তা মিষ্টি ফলমূল এনে রাখলো টি-টেবিলে। তা দেখে তুষারের আম্মু বলে,
–“এতসব ঝামেলার আবার কি দরকার ছিলো?”
–“ঝামেলার কি আছে? কতদিন পর এসেছেন এইটুকু তো কিছুই না। আজ আপনাদের কিছুতেই ছাড়ছি না।”
আনিতার আম্মু কথাগুলো বলে ট্রে থেকে সব নামিয়ে রেখে খালি ট্রে নিয়ে আবার কিচেনে চলে গেলেন। রাতের জন্য রান্না বসাতে হবে তার। সন্ধ্যার নাস্তা শেষে তুষারের আব্বু বলেন,
–“বাড়ির সকলকে এখানে ডাকলে একটু ভালো হতো। কিছু কথা ছিলো।”
অনিমা উঠে গিয়ে সবাইকে ডেকে আনলো। আনিতা তখনো বসে বসে টিভি দেখছে। তুষারের আব্বু কথা বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। আনিতার আব্বু তখন আনিতাকে বলে,
–“আনিতা অনিমা জারাফকে নিয়ে ভিতরে যাও তোমরা।”
ওরা উঠতে নিচ্ছিলো তখনই তুষারের আব্বু বলে,
–“থাকুক সমস্যা নেই। তোমরা বসো মামুনি।”
বাধ্য মেয়ের মতো ওরা আবার বসে পড়লো। আনিতা টিভির দিকে চোখ রাখলেও এখানে সবাই কি নিয়ে কথা বলবে সেটা শোনার জন্য বসে আছে ও। তুষারের আব্বু বলে,
–“আসলে আজকে এখানে আসার পিছনে আমাদের একটা কারন আছে।”
–“কারন আছে? কি কারন?”
–“আসলে আমরা আনিতার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে আসছিলাম।”
–“মানে?”
–“আমরা আনিতাকে আমাদের তুষারের বউ করে নিয়ে যেতে চাই যদি তোদের কোনো আপত্তি না থাকে।”
কথাগুলো শুনে থমকে গেলো আনিতা। ওর আব্বু কি বলবে? রাজি হয়ে যাবে না তো এই বিয়েতে? এই ভেবে আনিতার হাত পা অবস হয়ে এলো। এতক্ষন আনিতার আব্বু আর তুষারের আব্বুই কথা বলছিলো আর বাকী সবাই নিরব দর্শকের মতো সবটা শুনে যাচ্ছিলো। আনিতার ছোট চাচ্চু বলে,
–“কিন্তু___”
–“তুষার আনিতাকে অনেক ছোট থেকেই পছন্দ করে। বিষয়টা আমাদের জানিয়েছে ও অনেক আগেই। আমরা চেয়েছিলাম আনিতা আরো বড় হোক তারপর এই নিয়ে কথা বলবো তোদের সাথে। আর আনিতা তো এখন ছোট নেই।”
–“কিন্তু এভাবে হুট করেই তো কিছু সম্ভব না।”
আনিতার চাচ্চুর কথায় তুষারের আম্মু বলে,
–“কেন সম্ভব না? ছেলে তোমাদের জানাশোনা আর আনিতাকেও আমরা খুব ভালো করে চিনি। তাহলে সমস্যা কি আর?”
–“আমাদের কথাতেই তো আর হবে না। মেয়ে বড় হয়েছে ওর তো একটা মতামত আছে। সবচেয়ে বড় কথা এটা ওর লাইফের সবথেকে বড় একটা ডিসিশন এভাবে আমরা হুট করে কোনো কিছু করতে পারি না।”
আনিতার আব্বু কথাগুলো বলে আনিতার দিকে তাকালো। আনিতার টলমলে চোখে ওর আব্বুর দিকেই তাকিয়ে আছে। এই মূহুর্তে আনিতা খুব করে চাইছে ওর আব্বু যেন ওর চোখ দেখে সবটা বুঝতে পারে। ওর আব্বু যাতে বুঝতে পারে এখানে ও ভালো থাকতে চাইলেও ভালো থাকতে পারবে না। ও যে আহিয়ানকে ভালোবাসে। আনিতা খুব করে চাইছে ওর আব্বু যাতে ওকে আজ একটু হলেও বুঝে। তুষারের আম্মু বলে,
–“আনিতা তো এখানেই আছে। ওকে জিজ্ঞেস করুন না। আমার মনে হয় না ও কোনো আপত্তি করবে।”
–“আজ এসব থাক। এসব নিয়ে আমরা না হয় পড়ে আলোচনা করে আপনাদের জানাবো।”
আনিতার চাচ্চু কথাগুলো বলল। আনিতার চাচ্চুর কথায় সবাই সহমত জানায়। তুষারের পরিবারের কেউ-ও আর এ নিয়ে কথা বাড়ায়নি। আনিতা ওর চাচ্চুর দিকে কৃতজ্ঞতার চোখে তাকায়। আনিতার চাচ্চু আনিতার দিকে এক পলক তাকিয়ে ওখান থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। সেদিন রাতে তুষার ওরা ডিনার করে তারপর নিজেদের বাড়ি যায়। আর বলে যায় বিয়ের ব্যাপারে কথা বলে ওদের জানাতে।
–
দুই দিন পর। তুষারের পরিবার থেকে বারবার ফোন করা হচ্ছে আনিতার আর ওদের সকলের মত জানার জন্য। আনিতার আব্বু তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই সন্ধার পর সবাইকে ড্রয়িংরুমে থাকতে বললেন। আনিতাকেও থাকতে বললেন সেখানে।
সন্ধ্যার পর সকলে উপস্থিত হয় বসার রুমে। গুটিগুটি পায়ে আনিতাও হাজির হয়। আনিতার আব্বু তখনও আসেনি। সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আনিতার আব্বুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখনই ফাইয়াজ আসে। আনিতাকে ডেকে বলে,
–“কেমন আছিস বুড়ি? কতদিন পর দেখলাম তোকে।”
–“ভালো ভাইয়া। তুমি কখন এলে?”
–“এইতো ফ্রেশ হয়েই তোকে দেখতে চলে এলাম।”
আনিতা কিছু না বলে ফাইয়াজকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলো। নিজের রুমে গিয়ে আনিতা দরজা লাগিয়ে দিলো। ফাইয়াজ বিছানায় বসেছে। আনিতা ওর সামনে দাঁড়িয়ে ২ দিন আগের সব কথা জানায় ওকে। আর এটাও বলে ওর মতামতের জন্য আজকে সবাই জড়ো হয়েছে ড্রয়িংরুমে। ফাইয়াজ সবটা শুনে চুপচাপ বসে থাকে কিছু সময়। ওর চোখের সামনে ওরই আদরের ছোট বোন আর প্রানপ্রিয় বন্ধু কষ্ট পাচ্ছে। অথচ ও কিছুই করতে পারছে না। ফাইয়াজ দু হাতে নিজের চুল খামচে ধরলো। আনিতা ফাইয়াজের হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে,
–“ভাইয়া তুমি কিছু করো না প্লিজ। তুমি তো জানো উনি আমাকে কতটা ভালোবাসে। আমরা কেউ কাউকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবো না। একসময় হয়তো বা বাস্তবতা মেনে নিয়ে দুজনেই সবটা অন্যের সাথে গুছিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু দিনশেষে এতে আমরা কেউ-ই ভালো থাকবো না।”
–“আমি বুঝি বুড়ি। কিন্তু মামাদের বুঝাবো কি করে বল?”
আনিতা আর ফাইয়াজ কথা বলছিলো। আর দরজার বাইরে থেকে আনিতার আব্বু সবটা শুনে। তিনি সেখানে আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে ড্রয়িংরুমে সোফায় গিয়ে বসেন। আর অনিমাকে বলেন আনিতা আর ফাইয়াজকে ডেকে আনতে। অনিমা গিয়ে ওদের দুজনকে জানালো আব্বু ডাকছে। তাই দরজা খুলে দুজনেই বের হয়ে চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসলো। আনিতার আব্বু প্রথমেই আনিতার ছোট চাচ্চুকে জিজ্ঞেস করলেন,
–“তুষারের সাথে আনিতার বিয়ে নিয়ে তোর মতামত কি?”
–“এখানে আমার বা অন্যকারো মতামতের আগে আনিতার মতামত জেনে নেওয়া বেশি প্রয়োজন। তার থেকে ভালো ওকেই জিজ্ঞেস করুন ও কি চায়?”
আনিতার আব্বু আনিতার দিকে তাকায়। আনিতা মাথা নিচু করে ছিলো। আনিতার আব্বু আনিতাকে বলে,
–“কি চাও তুমি? তুমি যদি মত দাও তাহলে আমরা এখানে কথা বলবো। তোমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে___”
চোখ বন্ধ করে আনিতা কিছুটা সাহস জুগিয়ে নিলো। পরপর দুটো শ্বাস নিয়ে আনিতা ওর আব্বুকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে বলে,
–“আ্ আমার কিছু বলার নেই আব্বু। যা বলার আমি ছোট চাচ্চুকে বলেছিলাম। তিনি সাথে সাথেই না করে দিয়েছিলেন। এর বাইরে আর কিচ্ছু বলার নেই আমার। আমি জানি তোমরা কখনো আমার খারাপ চাইবে না। এখন তোমরা আমাকে যা বলবে আমি তাই করবো। তোমরা অবশ্যই চাইবে না আমি খারাপ থাকি। তাই এখানে আমার মতামতের কিছু নেই। তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করতে পারো। তোমাদের সিদ্ধান্তেই আমি রাজি।”
কথাগুলো বলে আনিতা উঠে যাচ্ছিলো। যেতে যেতে আবছা আবছা শুনতে পাচ্ছিলো, ওর আব্বু ওর চাচ্চুকে ওর আর আহিয়ানের ব্যাপারে বলছেন। এটাও বললেন একটু আগে আনিতা আর ফাইয়াজ কি কথা বলছিলো সবটাই উনি শুনেছেন। এসব শুনতে পেয়ে আনিতা ওর রুমের দরজার পর্দার আড়ালে লুকালো বাকী কথাগুলো শুনার জন্য। আনিতার আব্বু আর চাচ্চু দুজনে এ নিয়ে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে। আনিতার আব্বু ফোন বের করে বলে,
–“তাহলে তুষারের আব্বুকে না করে দিচ্ছি?”
–“হ্যাঁ তাই করুন।”
আনিতার আব্বু ফোন কানে নিয়ে সেখান থেকে উঠে গেলেন। আনিতা রুমের ভিতর ঢুকে রুম লক করে ইচ্ছেমতো লাফাচ্ছে। তুষারদের প্রপোজালে না করে দিয়েছে মানে ওদের সম্পর্কটা মেনে নেওয়ার একটু হলেও চান্স আছে। আনিতা দরজা ধাক্কানোর শব্দে লাফালাফি থামিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো৷ আনিতার চাচ্চু বাইরে থেকেই বলে,
–“তুষারের ফ্যামিলিকে বারন করে দেওয়া হয়েছে বলে এই না যে তোমার আর আহিয়ানের সম্পর্ক মেনে নেওয়া হয়েছে। এত লাফালাফির কিচ্ছু নেই।”
আনিতা মাথা নিচু করে কথাগুলো হজম করে নিলো। আনিতার চাচ্চু কথাগুলো বলে আর এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে চলে গেলেন ওখান থেকে।
–
খাবার টেবিলে একসাথে রাতের খাবার খেতে বসেছেন আহিয়ান আর ওর পরিবার। নুজাইরাহকে আগেই খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। খাবার টেবিলে পিনপতন নীরবতা চলছে। সকলেই চুপচাপ নিজেদের মতো খাবার নিয়ে খাচ্ছেন। আহিয়ান পা দিয়ে ওর ভাই নাহিয়ানকে ডাকলো। নাহিয়ান খাওয়া থামিয়ে আহিয়ানের দিকে তাকাতেই আহিয়ান ইশারা করে ওর আম্মুকে দেখালো। নাহিয়ান বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান ওর ভাইয়ের দিকে কিছুটা ঝুকে ফিসফিস করে বলে,
–“আম্মুকে বলো না আনিতা আর আমার কথা।”
–“ওহ আচ্ছা। দাঁড়া খেয়ে নেই তারপর বলছি।”
–“নাহ এক্ষুনি বলো।”
নাহিয়ান কিছু বলবে তার আগেই ওর আম্মু বলে,
–“খাওয়ার সময় দুই ভাই কি নিয়ে এত কথা বলছিস? খাওয়ার শেষে কথা বলা যাবে না? আর আহিয়ান? তুই তো কিছুই খাচ্ছিস না কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নে।”
–“আচ্ছা আম্মু।”
এই কথাটা বলে আহিয়ান এক লোকমা নিজের মুখে দিলো। কয়েক মূহুর্ত পর আবার নাহিয়ানের দিকে তাকালো ও। নাহিয়ান চোখের ইশারায় বললো,
–“বলছি।”
আহিয়ান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। নাহিয়ান খেতে খেতেই ওর আম্মুকে বলল,
–“আম্মু কিছু বলার ছিলো তোমাকে।”
–“কোন বিষয়ে?”
–“আহিয়ানের বিয়ে ব্যাপারে।”
–“সেটা নিয়ে কারো ভাবার দরকার নেই। ওর জন্য আমি আগে থেকেই মেয়ে ঠিক করে রেখেছি।”
আহিয়ানের আম্মুর কথা শুনে সকলে অবাক হয়ে যায়। আহিয়ান চোখ বড়বড় করে ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক কন্ঠেই আহিয়ান বলে,
–“মানে? কি বলছো আম্মু?”
–“এভাবে অবাক হওয়ার কি আছে?”
–“না মানে আম্মু তুমি আমার জন্য মেয়ে ঠিক করে রেখেছো আর আমি জানিই না? আমাকে না জানিয়ে___”
–“তোদের বিষয়ে কিছু করতে হলে আজকাল তোদের জানিয়ে করতে হবে জানতাম না তো।”
–“আম্মু আমি সেভাবে বলিনি। তুমি ভুল ভাবছো।”
আহিয়ানের আম্মু আহিয়ানের কথা আমলে নিলেন না। তিনি নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
–“তুমি কি বলছিলে বলো।”
–“আম্মু আহিয়ান একটা মেয়েকে ভালোবাসে। আর মেয়েটাও ওকে ভালোবাসে।”
–“যেটা হবে না সেটা নিয়ে কথা না বলাই কি ভালো না?”
–“আমাদের সবার আনিতাকে খুব পছন্দ এমন কি নুজাইরাহ-রও। আম্মু মেয়েটাকে দেখলে তোমারও খুব ভালো লাগবে বিশ্বাস করো।”
–“জান্নাতের আম্মুকে আমি কথা দিয়ে ফেলেছি। আহিয়ানের বিয়েটা জান্নাতের সাথেই হবে।”
–“কিন্তু আম্মু ওকে আমি সেভাবে কখনো দেখিনি। বোন হয় তো আমার।”
–“খালাতো বোন। আপন না।”
–“আম্মু একটু বুঝো আমি অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসি। এখানে জান্নাতকে বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না। এই বিয়েতে কেউ ভালো থাকাবো না।”
–“জান্নাতে আম্মুকে কথা দেওয়ার আগে আমি তোকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আহিয়ান।”
–“কোন বিষয়ে?”
–“তোর কাউকে পছন্দ কিনা। কিন্তু তুই না বলেছিলি বলেই আমি ওদেরকে কথা দিয়েছি।”
–“কিন্তু আম্মু তুমি আমাকে তখন একবারো জানাওনি। আর তখন পছন্দ ছিলো না কিন্তু এখন আছে।”
–“ভুলে যা।”
–“আম্মু।”
আহিয়ানের আম্মু আর কোনো কথা না শুনে খাবার খেয়ে উঠে যান টেবিল থেকে। সেদিন ভালোভাবে আর কারোরই খাওয়া হলো না।
—
সপ্তাহ ক্ষানেক পরের কথা। আহিয়ানের আম্মু নাহিয়ান আর রুহিকে ডেকে পাঠায় নিজের রুমে। নাহিয়ান যেতেই তিনি ওকে বসার জন্য ইশারা করলেন। নিঃশব্দে দুজনে খাটের দু পাশে বসলো। নাহিয়ানের আম্মু ভালো করে বসে বললেন,
–“মেয়েটার ছবি আছে তোদের কাছে?”
–“কোন মেয়েটা?”
–“তোর ভাই যাকে ভালোবাসে।”
–“আনিতার কথা বলছো? এক মিনিট দেখাচ্ছি।”
নাহিয়ান পকেট থেকে ওর ফোন বের করে গ্যালারি তে গেলো। আনিতার একটা ছবি বের করে ও ফোনটা ওর আম্মুর দিকে এগিয়ে দিলো। ওর আম্মু ফোন হাতে নিয়ে বেশ ভালোভাবে কিছুক্ষণ আনিতার ছবি দেখলো। তারপর নাহিয়ানের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
–“ভালোই। তবে এভাবে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ওদের বাসায় জানিয়ে দিস কালকে ওকে দেখতে যাচ্ছি আমরা।”
–“ঠিক শুনলাম তো আম্মু?”
–“হ্যাঁ।”
রুহি ওর শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–“তারমানে তুমি রাজি মা?”
–“হ্যাঁ রে। আমি রাজি। আমি তো আর আমার ছেলেকে আমার চোখের সামনে কষ্ট পেতে দেখতে পারি না। তবে হ্যাঁ ওকে এখন জানাস না। সারপ্রাইজ থাকুক ওর জন্য।”
–“ওকে আম্মু তুমি যা বলবে।”
খুশিতে রুহি আর নাহিয়ান দুপাশ থেকে ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে। নাহিয়ানের আম্মু দুহাতে দুজনকে জড়িয়ে ধরে পর পর দুজনের মাথায় দুটো চুমু খায়।
।
।
।
চলবে।
#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৪৬
#Ornisha_Sathi
পরদিন থেকে নানান ধরনের রান্নার আয়োজন চলছে আনিতাদের বাড়িতে। তাদের অতি আদরের বড় মেয়েকে দেখতে আসবে বলে কথা। বাড়ির সকলেই প্রচুর ব্যস্ত। আনিতার তো খুশিতে রীতিমতো লাফাতে ইচ্ছে করছে। ও ভাবতে পারছে না দুই ফ্যামিলি এত সহজেই মেনে যাবে সবটা। দুপুরের পরে আনিতা গুনগুন করে গান গাইছিলো আর সারা ড্রয়িংরুম জুড়ে লাফাচ্ছিলো। তখনই ওর ছোট চাচ্চু জুম্মার নামায শেষে সবেমাত্র ড্রয়িংরুমে এসেছে। আনিতা লাফাতে লাফাতে ওর চাচ্চুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। আনিতার চাচ্চু ভ্রু জোড়া কুঁচকে আনিতার দিকে তাকাতেই আনিতা দৌড়ে রুমে চলে যায়। আনিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ওর চাচ্চু মৃদু হাসেন।
রুমে গিয়ে নিজেকে নিজেই বকে যাচ্ছে আনিতা। এক্সাইটমেন্টে সবকিছু প্রায় ভুলে যাচ্ছে ও। ওকে দেখতে আসবে আজ আর ও কিনা এভাবে সারা বাড়ি খুশিতে লাফিয়ে যাচ্ছে? ভাবা যায় এসব? ইশ্ লোকে কি বলবে? এসব ভেবে কিছুটা শান্ত হয় আনিতা। কিন্তু আবার পরমূহুর্তেই ভাবে,
–“এতদিনে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পেতে যাচ্ছি। আমি খুশি হবো না তো কে হবে? যার যা ইচ্ছে বলুক। যার যা ইচ্ছে ভাবুক তাতে আমার কি?”
একা একা এসব বিড়বিড় করে আবারো লাফাতে শুরু করে ও। তখনই দরজায় নক পড়ে। আনিতা নিজেকে সামলে নিয়ে দরজা খুলে দেয়। আনিতার আম্মু আনিতার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,
–“এখনো গোসল করিসনি? তাড়াতাড়ি গোসল সেরে খেতে আয়।”
এইটুকু বলে আনিতার আম্মু চলে গেলো। আনিতা আবারো দরজা আটকে কাবার্ড থেকে জামা বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়। আধ ঘন্টার মাঝেই গোসল শেষ করে বের হয় আনিতা। মাথায় ভেজা টাওয়াল পেঁচিয়েই ডাইনিংয়ে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে ও। দুপুরের খাবার খেয়ে রুমে চলে যায় ঘুমাতে।
অন্যদিকে আহিয়ান জুম্মার নামায শেষ করে দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে ঘন্টা খানেক হবে। মাত্রই বিছানা ছেড়ে উঠলো আহিয়ান। বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। বিছানায় শোয়ার সময় পাঞ্জাবি খুলে রেখেছিলো ও। আবার সেই পাঞ্জাবিটাই হাতে নিলো পড়ার জন্য। আজ শুক্রবার। জুম্মার দিন। এই দিনে আহিয়ান প্রায় সময়ই বিকেলে বা সন্ধ্যায় কোথাও বের হলে পাঞ্জাবি পড়েই বের হয়। তাই আজকেও তার কোনো ব্যাতিক্রম হলো না। পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়ে নিলো।
আনিতা নিজে পছন্দ করে আহিয়ানকে পাঞ্জাবিটা কিনে দিয়েছিলো। মেয়েটার নাকি এই পাঞ্জাবিটা বেশ ভালো লেগেছিলো। আহিয়ানের সাইজের পায়নি প্রথমে। শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তাই আহিয়ান বলেছিলো অন্য একটা চুজ করে দিতে। কিন্তু আনিতা নাছোড়বান্দা ওর এটা চুজ হয়েছে মানে এটাই লাগবে। তাই আহিয়ান বাধ্য হয়েই পাঞ্জাবিটা অর্ডার দিয়েছিলো। তিনদিনের মাথায় দোকানী আহিয়ানের সাইজের সেম একটা পাঞ্জাবি এনে দেয়।
পাঞ্জাবিটা গায়ে জড়িয়ে এসবই ভাবছিলো আহিয়ান। আনিতার পছন্দ আছে বলতে হবে। আহিয়ানেরও খুব পছন্দের পাঞ্জাবি এটা। এ্যাশ কালার পাঞ্জাবিটাতে শুধু কলার আর হাতায় কিছুটা সুতোর কাজ করা। আনমনেই আনিতার কথা ভেবে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসির রেখা দেখা যায়। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে বাইকের চাবিটা আর ওয়ালেট বের করে হাতে নিয়েই রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজা অব্দি আসে আহিয়ান। তখনই রুমে রুহি আর নাহিয়ান এসে উপস্থিত হয়। রুহি আহিয়ানের হাত ধরে কিছুটা পিছে নিয়ে গিয়ে ওকে আগাগোড়া স্ক্যান করে বলে,
–“বাহ! একদম রেডি দেখছি। তা এভাবে সেজেগুজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?”
–“কোথায় আর যাবো? তন্ময় ওদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।”
–“কিন্তু আজ যে তোর কোথাও যাওয়া হচ্ছে না আহিয়ান।”
নাহিয়ানের কথা শুনে আহিয়ান কপাল কুঁচকে তাকায় ওর দিকে। রুহি আর অদ্রি মুখ টিপে হাসছে। আহিয়ানের কোনো কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। আহিয়ান কপাল কুঁচকেই জিজ্ঞেস করে,
–“মানে কি?”
রুহি আহিয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে বলে,
–“মানে আমরা এখন মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।”
–“কার জন্য? ভাইয়াকে আবার বিয়ে করাবা নাকি ভাবী?”
–“আজ্ঞে না দেবরজি তোমার ভাইয়ার জন্য না। তোমার জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি আমরা।”
–“হুয়াট? কি বলছো মাথা ঠিক আছে তো?”
–“আমাদের মাথা একদম ঠিকই আছে ভাইয়া। তোর জন্যই আমরা মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। এখন চল তো আমাদের সাথে।”
এই বলে রুহি আর অদ্রি দুজনে আহিয়ানকে ধরে বসার রুমে নিয়ে যায়। আহিয়ান ঝারা মেরে নিজেকে ওদের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
–“আমি কোনো মেয়ে-টেয়ে দেখতে যাচ্ছি না। তোমাদের দেখার হলে তোমরা যাও। আর হ্যাঁ আমি আগেই বলে দিচ্ছি এই বিয়ে আমি করবো না। আমার যদি বিয়ে করারই হয় তাহলে শুধু মাত্র আনিতাকেই বিয়ে করবো। অন্য কাউকে না।”
–“সে না হয় তুই আনিতাকেই বিয়ে করে নিস। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আগে চল তো। মেয়ে দেখতে যেতে তো আর সমস্যা নেই। যাবো দেখবো চলে আসবো। তোর পছন্দ না হলে তুই বলে দিবি ব্যাস। এমন তো নয় যে আজই আমরা একেবারে তোকে বিয়ে করিয়ে বউ সাথে করে নিয়ে আসবো।”
নাহিয়ান বলল কথাগুলো। কিন্তু আহিয়ান সেদিকে পাত্তা দিলো না। আহিয়ান বলে,
–“আমি যাবো না।”
আহিয়ানের আম্মু রেডি হয়ে বাইরে এসে সব কথাই শুনতে পায়। উনি আহিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
–“যেতে হবে তোকে।”
–“কিন্তু আম্মু।”
–“কোনো কথা শুনতে চাই না। বাইরে গাড়ি অপেক্ষা করছে তাড়াতাড়ি এসো সবাই।”
এই বলে আহিয়ানের আম্মু বাইরে চলে গেলেন। রুহি আর অদ্রি দুজনে টেনে আহিয়ানকে বাইরে নিয়ে গেলো। সবার শেষে নাহিয়ান বাসা থেকে বের হয়ে বাসা লক করে চাবি পকেটে রেখে দিলো। তারপর লিফটে করে সবার সাথে নিচে নেমে গাড়িতে বসলো।
বেশ ক্ষানিকটা রাস্তা গাড়ি চলার পর শহরের রাস্তা ছেড়ে গাড়ি গ্রামের রাস্তার দিকে ঢুকলো। আহিয়ান অবাক হলো বেশ। গ্রামের দিকে যাচ্ছে? কিন্তু কোথায়? আহিয়ান কৌতূহল মেটানোর জন্য জিজ্ঞেস করে,
–“এটা তো গ্রামের রাস্তা এদিক দিয়ে কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
–“আমরা তো গ্রামেই যাচ্ছি তোর জন্য মেয়ে দেখতে।”
নাহিয়ানের কথার জবাবে আহিয়ান আর কিচ্ছু বলল না। চুপচাপ বসে ফোন টিপায় মনোযোগ দিলো। আহিয়ান ফোন টিপায় এতটাই ব্যস্ত ছিলো যে আশেপাশের কোনো কিছুই আর খেয়াল করলো না। হঠাৎ আহিয়ানের চোখে বাইরে দিকে যেতেই ও খেয়াল করলো আনিতাদের বাসায় যাওয়ার রাস্তায় গাড়িটা ঢুকেছে। কোনোকিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না। আহিয়ান বলে,
–“এটা তো আনিতাদের বাসায় যাওয়ার রাস্তা।”
–“হ্যাঁ আনিতাদের বাসার ওদিকেই খুব সুন্দর একটা মেয়ে আছে। যাকে আম্মুর খুব পছন্দ হয়েছে।”
–“গাড়ি থামাতে বলো।”
–“কেন?”
–“এতকিছু জেনে লাভ নেই। গাড়ি থামাতে বলো। আমি কোথাও যাচ্ছি না।”
আনিতাদের বাসার সামনে এসেই ড্রাইভার গাড়ি থামালো। আহিয়ান গাড়ি থেকে নেমে উল্টো পথে হাঁটা ধরে। রুহি তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে আহিয়ানের পথ আটকে দাঁড়ায়। তারপর আহিয়ানের হাত টেনে ধরে বলে,
–“এতদূর এলে আর মেয়ে না দেখেই চলে যাবে? এটা তো হয় না।”
–“মানে?”
–“মানে ভিতরে গেলেই সব বুঝতে পারবে চলো।”
এই বলে রুহি ওকে টেনে আনিতাদের বাসার ভিতরে যায়। ফাইয়াজ এগিয়ে এসে সবার সাথে কথা বলে সবাইকে নিয়ে আনিতাদের বাসার ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসায়। আহিয়ান অবাক চোখে দেখছে সবটা। আহিয়ান ওর আম্মুর দিকে তাকাতেই ওর আম্মু মুচকি হাসলো। এই হাসিতেই আহিয়ানের কাছে সবটা একদম পানির মতো স্বচ্ছ হয়ে গেলো। ও ভাবতে পারছে না ওর আম্মু এতটা সহজে সবটা মেনে নিবেন। ওকে কেউ কিচ্ছু জানালো না? আগে থেকে যদি জানাতো তাহলে কি আর এভাবে ধরে বেঁধে নিয়ে আসতে হতো? ও তো নিজেই নাচতে নাচতে চলে আসতো মেয়ে দেখতে। আহিয়ান মনে মনে ভাবছে,
–“ভাইয়া ভাবী অদ্রি এমনকি ফাইয়াজও জানে? তারমানে আনিতাও নিশ্চয়ই জানে। আর এদিকে আমাকে না জানিয়ে ধরে বেধে নিয়ে আসছে। একবার বের হই এখান থেকে তারপর সবগুলাকে দেখে নিচ্ছি আমি।”
ফাইয়াজ এসে বসলো আহিয়ানের পাশে। আনিতার আব্বু চাচ্চু আহিয়ানের আম্মুর সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষণ বাদেই মাগরিবের আজান দিয়ে দিলো। আহিয়ানের আম্মু আনিতার আম্মুর সাথে অন্যরুমে চলে গেলো নামায পড়তে। আনিতার আব্বু চাচ্চু আর নাহিয়ান ওরাও বাসা থেকে বের হলো মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। রুহি, নুজাইরাহ আর অদ্রি আনিতার রুমে আছে ওর সাথে। নাহিয়ান ওরা বের হওয়ার পরপরই আহিয়ান আর ফাইয়াজ বের হলো।
নামায শেষে সবাই আবার ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হলো। নানান ধরনের হালকা খাবার দেওয়া হয়েছে ওদের সামনে। সবাই মিলে হালকা নাস্তা করে নিলো। আহিয়ানের আম্মু এবারে আনিতাকে নিয়ে আসতে বলল। আনিতার দুই কাকি মিলে ওকে রুম থেকে নিয়ে এলো। কালো জামদানী পড়েছে আনিতা। ফর্সা গায়ে কালো রংটা একেবারে ফুটে উঠেছে। আহিয়ানের দেওয়া ঝুমকো আর চুড়ি পড়েছে। আহিয়ানের আম্মু আনিতাকে নিজের পাশে বসিয়ে ওর থুতনি ধরে ওর মুখ দেখলো। নুজাইরাহ গিয়ে “কাকিয়া” বলে আনিতার কোলে বসেছে। আনিতাও দুহাতে ধরে আছে ওকে। আহিয়ানের আম্মু আনিতাকে দেখে বলে,
–“মাশাল্লাহ। আমার আহিয়ানের পছন্দ আছে দেখছি।”
উনার কথায় আনিতা লজ্জা পেয়ে যায়। ফাইয়াজ আহিয়ানের পাশে বসে ওকে খুঁচিয়ে যাচ্ছে। আহিয়ান সইতেও পারছে না আবার কিছু বলতেও পারছে না। মাঝে দু/এক বার ফাইয়াজের দিকে রাগী চোখে তাকাচ্ছে। এতে ফাইয়াজ আরো বেশি করে মজা নিচ্ছে। আহিয়ানের আম্মু আনিতার হাতে এক হাজার টাকার কয়েকটা নোট গুজে দিয়ে বলে,
–“ভিতরে যাও তুমি।”
অজ্ঞতা আনিতা উঠে নিজের রুমে চলে যায়। আরোহী ছিলো আনিতার রুমে। আনিতা গিয়ে বসতেই আরোহী ওকে নানান কথা বলে লজ্জায় ফেলে। আহিয়ানের আম্মু আনিতার আব্বুকে বলে,
–“আনিতা আর আহিয়ান ওরা দুজন দুজনকে যখন ভালোবাসে তাহলে এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমারও ওকে বেশ পছন্দ হয়েছে। এখন আপনাদের যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে এই বিষয়ে আমরা কথা আগাতে পারি?”
–“আমাদের কোনোরকম আপত্তি থাকলে আমরা শুরুতেই আপনাদের বারন করে দিতাম। মেয়ে বড় হয়েছে ওর মতামতেরও একটা গুরুত্ব আছে আমাদের কাছে। আর ও যেহেতু আহিয়ানকে ভালোবাসে এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। প্রথমে রাজি না হলেও পড়ে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই বিষয়টা মেনে নিয়েছি। আমরা চাই ও সবসময় ভালো থাকুক। আমাদের একটাই চাওয়া যেখানেই থাকুক আমাদের মেয়েটা ভালো থাকুক। আর যদি সেটা আহিয়ানের সাথে হয় তাহলে তাই হবে।”
–“আমাদের বা আহিয়ানের বিষয়ে যদি আপনাদের কোনো খোঁজখবর নেওয়ার থাকে তাহলে____”
আহিয়ানের আম্মুকে মাঝপথেই থামিয়ে আনিতার চাচ্চু বলে,
–“আহিয়ান ফাইয়াজের বন্ধু। কিছুটা হলেও চিনি ওকে আমরা। আর ফাইয়াজও আপনাদের সম্পর্কে সবটাই বলেছে আমাদের। ছেলে হিসেবে আহিয়ান খারাপ না সেটা আমরা জানি। আলাদা করে আমাদের আর কোনো খোঁজখবর নেওয়ার দরকার নেই।”
–“তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ।”
এতক্ষণে যেন আহিয়ানের বুক থেকে একটা বড়সড় পাথর নেমে গেলো। ভালোই ভালোই সবটা মিটে গিয়েছে এখন আহিয়ানের বেশ শান্তি লাগছে। আহিয়ানের আম্মু বলে,
–“আমরা চাচ্ছিলাম আজকেই ওদের কাবিনটা করে ফেলতে। আপনাদের কোনো সমস্যা না থাকলে___”
–“এটা তো ভালো কথা।”
আনিতার আব্বু এইটুকু বলে আনিতার চাচ্চুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“কাজী নিয়ে এসো।”
আনিতার চাচ্চু ওঠে চলে যায় কাজীকে নিয়ে আসতে। ফাইয়াজ আহিয়ানকে নিয়ে উঠে পড়লো ছাদে যাওয়ার জন্য। ছাদে দাঁড়িয়ে আছে ওরা দুজন মিনিট পাঁচেক হবে। ওকে ডেকে এনে ফাইয়াজ এখন তাসকিয়ার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে আছে। আহিয়ানের বেশ রাগ হচ্ছে। ও নিচে নেমে গেলো। আনিতার রুমে উঁকি দিতেই রুহি আর আরোহী ওকে দেখে ফেলে। দুজনে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। আরোহী কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
–“কি চাই এখানে?”
–“আনিতার সাথে একটু কথা ছিলো।”
–“এখন কোনো কথা বলা লাগবে না। দেখা করতে দিচ্ছি না আমরা। তুমি বাইরে গিয়েই বসো। সবুর করো দেবরজি। সবুরে মেওয়া ফলে।”
–“ভাবী তুমিও আমাকে ছেড়ে ওদের দলে চলে গেলে?”
–“বাহ রে! একটু বাদেই আনিতা আমার ছোট জা হবে। এখন থেকেই তো ভাব জমাতে হবে তাই না?”
–“তুমি ওকে জিজ্ঞেস করে দেখো ভাবী তোমার ছোট জা-ও আমার সাথে কথা বলতে চায়।”
–“হবে না জিজু। এখন এখানে আপনার কোনো কাজ নেই। আপনি আসতে পারেন।”
পিছন থেকে রোদেলা কথাটা বলল। আহিয়ান পিছন ঘুরে দেখে রোদেলা তাসকিয়া শুভ জেরিন ওরা সকলেই উপস্থিত। এমনকি তন্ময় আর রাতুলও আছে। আহিয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে তন্ময় রাতুল শুভ আর রোদেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“তোরা না ঢাকায় ছিলিস? তাহলে এখানে কিভাবে?”
–“আমরা সবাই সবটা জানতাম ওকে? আর নাহিয়ান ভাইয়া আমাদের আগেই জানিয়ে রাখে আজকেই তোদের কাবিন হবে। সেরকম প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিস এখানে। তাই আমরাও আর দেরী না করে চলে এলাম।”
তন্ময়ের কথায় আহিয়ান একপলক সবার দিকে তাকায়। আহিয়ান একহাত কোমড়ে দিয়ে বলে,
–“বাহ! সবাই আগে থেকে সব কিছু জানে। শুধুমাত্র আমিই এখানে এসে জানলাম।”
আহিয়ানের কথা বলার ধরন দেখে সবাই হেসে দেয়। রোদেলা ওরা সকলেই আনিতার রুমে ঢুকে যায়। আর তন্ময় রাতুল ওরা আহিয়ানকে নিয়ে এসে সোফায় বসে। আহিয়ান আনিতার আব্বুর সাথে টুকিটাকি কথা বলছিলো।
কিছুক্ষণের মাঝেই আনিতার ছোট চাচ্চু আর নাহিয়ান কাজীকে নিয়ে এলো। দুই পরিবারে সবাই মিলে দেনমোহর আর বিয়ের যাবতীয় সবকিছু ঠিক করে নেয়। নাহিয়ান ওরা আনিতার জন্য বেবি পিংক কালারের লেহেঙ্গা ম্যাচিং অর্নামেন্টস সবকিছুই নিয়ে আসে। রুহি সেগুলো আনিতাকে পড়িয়ে আবার একটু সাজিয়ে গুছিয়ে আনিতাকে এনে সোফায় আহিয়ানের পাশে বসায়। কাজী কাবিননামায় সবকিছু লিখে প্রথমে আহিয়ানের দিকে এগিয়ে দিলো সেটা। আহিয়ান সাইন করে আনিতার দিকে দিলে আনিতাও কিছুটা সময় নিয়ে সাইন করে দেয়। ঘরোয়া ভাবেই আনিতা আর আহিয়ানের বিয়েটা সম্পন্ন হয়।
।
।
।
চলবে।
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]