শুধু তোমারই জন্য পর্ব-৪৭+৪৮+৪৯

0
982

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৪৭
#Ornisha_Sathi

সেই সন্ধ্যাতেই মসজিদের হুজুর ডেকে এনে কালেমা পড়িয়ে ইসলামের শরিয়ত মোতাবেক বিয়ের সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিছুদিন বাদেই আনিতার আব্বু চাচ্চু দুজনেই বাহিরে চলে যাবেন। বাহির থেকে আবার ঘুরে এসে তারপর অনুষ্ঠান করে আহিয়ানদের বাড়ি নিয়ে যাবে আনিতাকে। আপাতত এই বাড়িতেই থাকবেন। আহিয়ানের ইচ্ছে হলে মাঝে মধ্যে আসবেন। বিয়ের কাজ শেষ হতেই ফাইয়াজ আর তন্ময় বাইক নিয়ে বের হয়েছে ফুল আনতে। বাড়ির বড়রা যদিওবা এতে বারন করেছিলো। কিন্তু ছোটদের একটাই কথা,

–“আসল বিয়েতো আজকেই হলো। তাহলে বাসরটা কেন হবে না? বিয়ে যেহেতু হয়েছে বাসরও হবে। আজ ওদের বিয়ে হয়েছে হালাল সম্পর্কে আছে দুজন। তাহলে কেন আলাদা থাকবে? কেন দুজনকে এক হতে হলে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও মেইন অনুষ্ঠানের জন্য দু/তিন বছর আলাদা থাকতে হবে? আর সব থেকে বড় কথা হলো আহিয়ানের থেকে টাকা হাতানোর এত বড় সুযোগ ওরা কিছুতেই মিস করবে না।”

শেষে ছোটদের জেদের কাছে হার মেনে বড়রা সকলে পারমিশন দেয় ফুল আনার জন্য। অনুমতি পাওয়ার পর এক মূহুর্ত দেরী করেনি ফাইয়াজ আর তন্ময়। সঙ্গে সঙ্গেই বাইক নিয়ে বের হয়ে যায় ওরা।

বিয়ে পড়ানোর শেষে আশেপাশের বাড়িগুলো থেকে সবাই আসে জামাই দেখে যায় আর পান মিষ্টি খেয়ে যায়। সকলেই আহিয়ানের প্রশংশায় পঞ্চমুখ। কেউ কেউ বলছে, “আনিতা কপাল করে এমন রাজপুত্রের মতো বর পেয়েছে।” আবার কেউ কেউ আড়ালে গিয়ে বলছে, “এত রাতারাতি একদিনের মাঝেই বিয়ে হয়ে গেলো আগে থেকে নিশ্চয়ই দুজনের লাইন ছিলো। যখন এত ঘন ঘন ফাইয়াজের সাথে আসতো তখনই বুঝতে পেরেছিলাম কোনো ব্যাপার স্যাপার তো নিশ্চয়ই আছে।” একেক জনে একেক কথা বলে যাচ্ছে। বেশিরভাগ অবশ্য ভালোই বলে যাচ্ছে। অবশ্য সেসব কথা আনিতাদের বাড়ির কেউ-ই কানে তুলছে না।

রাত দশটা নাগাদ ফাইয়াজ আর তন্ময় ফুল নিয়ে চলে আসে। দুজনের হাত ভর্তি একগাদা ফুল। ওরা সেসব নিয়ে আনিতার রুমে রেখে দেয়। আনিতার আব্বু চাচ্চু আহিয়ানের আম্মু ফাইয়াজের আব্বু নাহিয়ান ওরা সকলেই খেতে বসেছে। আহিয়ানের আম্মু অবশ্য চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু জোর করেই রেখে দেওয়া হয় সবাইকে। বাড়ির বড়রা আগেই খেয়ে নিলো। তারপর আহিয়ান আনিতা আর ওদের বন্ধুরা সবাই একসাথে খেতে বসে।

খাওয়া-দাওয়া শেষে বড়রা মিলে সোফায় বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়। আনিতার আম্মু আর কাকিরা সবাই সব কিছু গুছিয়ে রাখে। তারপর আনিতার মেজো কাকি আহিয়ানের আম্মুকে নিয়ে উনার রুমে চলে যান ঘুমাতে। অদ্রি অনিমা আর ওর দাদুর সাথে ঘুমাবে। আনিতার ছোট চাচ্চু আর কাকিমা নিজেদের রুমে চলে যান। আর আনিতার আব্বু আম্মুও নিজেদের রুমে চলে যায়। আনিতার ফুপ্পি আর আংকেলও চলে যায় নিজদের বাসায়। এখানে ছোটরা মজা করছে করুক। ওদের সাথে উনারা তো আর বসে থাকতে পারে না৷ আনিতাদের বাসায় মোট ছয়টা রুম। চারটা অলরেডি বুকড এখন আনিতার রুম বাদে আর একটা রুম আছে ওটাতে নাহিয়ান আর রুহি থাকবে। আর রোদেলা তাসকিয়া জেরিন রাতুল তন্ময় শুভ ওরা ফাইয়াজদের বাড়িতে থাকবে।

আনিতার রুম তো সাজানোই হচ্ছে ফুল দিয়ে। তাই আনিতা আর আহিয়ানকে রুম থেকে বের করে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সাথে অনিমা অদ্রি নাহিয়ান রুহি ওরা আছে। আর আনিতার রুমে রোদেলা তাসকিয়া জেরিন রাতুল তন্ময় শুভ ফাইয়াজ আরোহী ওরা আটজনে মিলে বাসর সাজাচ্ছে। অবশ্য সাজানোর থেকে ওরা ওখানে রুম আটকে হাসাহাসি করছে মজাই করছে বেশি। আনিতা মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। লজ্জা লজ্জা লাগছে ওর বেশ। আর আহিয়ান বসে বসে আনিতার দিকে তাকিয়ে ভাবছে,

–“এসেছি পর থেকে একবারের জন্যও আমার পিচ্চিটাকে আলাদা করে পেলাম না। সবসময় কেউ না কেউ থাকছেই। ধুর! ভাল্লাগে এভাবে? নিজের বিয়ে করা বউ অথচ এদের সকলের জ্বালায় একটু আলাদা ভাবে কথা বলতে পারছি না।”

রুহি আহিয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে বলে,

–“কি দেবরজি? কি এত ভাবছো?”

–“ভাবছিলাম তোমরা সবসময় আমার আর ওর সাথে এমন আঠার মতো লেগে আছো কেন? একটুও আলাদা ভাবে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছো না। তোমাদের কোন বাড়া ভাতে আমি ছাই দিয়েছিলাম যে আমার সাথে এমন অন্যায় অবিচার করছো?”

–“আমরা মোটেও তোমাদের সাথে অন্যায় করছি না। তোমরা যে লুকিয়ে চুড়িয়ে তিনবছর যাবত প্রেম করলে তখন কি আমরা তোমাদের পিছু লেগে ছিলাম? ছিলাম না তো। আর গত তিনবছরে বহু সময় পেয়েছো তোমার পিচ্চির সাথে আলাদা ভাবে কথা বলার। একটু ধৈর্য্য ধরো আরো দু/আড়াই ঘন্টা বাদে আরো সময় পাবে। তখন একদম নিজের করে পাবে। ওই সময় আমরা কেউ আঠার মতো লাগতে যাবো না প্রমিস। কিন্তু আপাতত ছাড়ছি না।”

–“বাহ রে! আমরা তিনবছর প্রেম করেছি তুমি শুধু এটাই দেখলে। লাস্ট দু মাস যে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা ভোগ করেছি সেটা চোখে পড়েনি?”

–“দুটো মাসই তো বেশি না।”

–“তিনবছর প্রেম করে যতটা না সুখ পেয়েছি এই দুই মাসের বিচ্ছেদে তার থেকে হাজার গুন কষ্ট পেয়েছি। ভাইয়া তোমাকে ছাড়া একরাতও থাকেনি তো তাই বুঝো না তুমি।”

রুহি কিছু না বলে অন্যদিকে ঘুরে আনিতা অনিমা আর অদ্রির সাথে গল্পে মগ্ন হলো। আহিয়ান গোমড়া মুখে ওর ভাই নাহিয়ানের দিকে তাকালো। নাহিয়ান চোখের ইশারায় বুঝালো, “আমি কি করতে পারি?” আহিয়ান আগের তুলনায় আরো বেশি করুন চোখে তাকালো ওর দিকে। নাহিয়ান চোখ দিয়ে আস্বস্ত করে ইশারায় বুঝালো, “দেখছি কি করা যায়।” নাহিয়ান আর আহিয়ান দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। বেশ কিছুটা বাদে নাহিয়ান অনিমাকে বলে,

–“অনিমা তুমি অদ্রিকে নিয়ে আনিতার রুমে যাও তো। সব্বাইকে কড়া করে ইন্সট্রাকশন দাও। এভাবে ধীরে হাত চালালে আর আজকে ঘুমাতে হবে না কারো। সব্বাই এখানে বসে সারারাত জেগে মশা মারো।”

নাহিয়ানের কথায় অনিমা অদ্রিকে নিয়ে আনিতার রুমের দিকে পা বাড়ালো। ওরা যেতেই নাহিয়ান রুহিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–“রুহি সোনা একটু রুমে চলো না। কথা আছে।”

–“ইশ্! এত ঢং আসছে কোথায় থেকে? দেখছো না এখানে তোমার ছোট ভাই আর তার বউ বসা আছে।”

–“থাকুক। তাতে কি? ক’দিন পর ওরাও এভাবে কথা বলবে দেখে নিও।”

আনিতা ওর নিচু মাথা আরো নিচু করে নিলো লজ্জায়। ওরা পারেও বটে। সবসময় মেয়েটাকে লজ্জায় ফেলে যায়। নাহিয়ান আবারো রুহিকে বলে,

–“চলো তো। আমার সাথে৷ এখানে আর বসে থাকতে হবে না। আমরা বরং গিয়ে ঘুমাই। বাসর সাজানো হলে তন্ময় আমাকে ফোন করে জানিয়ে দিবে তখন চলে আসবো।”

এইটুকু বলে নাহিয়ান রুহির হাত ধরে টানতে টানতে ওদের যে রুমে থাকতে দিয়েছে সেই রুমে চলে গেলো। আহিয়ান এবার বেশ খুশি হলো। এই সুযোগটাই তো খুঁজছিলো ও। অবশেষে ও আনিতাকে একা পেলো। আহিয়ান উঠে আনিতার হাত ধরে ওকে দাঁড় করিয়ে বলে,

–“চলো।”

–“কোথায়?”

–“ছাদে।”

এই বলে আনিতাকে টেনে ছাদে নিয়ে গেলো। আনিতাও আর বাঁধা দেয় নি। চুপচাপ আহিয়ানের সাথে ছাদে চলে এসেছে৷ ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে দুজনে। আহিয়ান আনিতার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে রেখেছে। আনিতা আহিয়ানের কাঁধে মাথা রাখলো।

বেশ কিছুটা সময় কেটে যায় এভাবে। দুজনের কেউই কোনো কথা বলেনি আর। আহিয়ান আনিতার দিকে ঘুরে ওর দুই কাঁধে দু হাত দিয়ে নিজের হাতগুলো ধরলো৷ আনিতার কপালে কপাল ঠেকিয়ে আহিয়ান বলে,

–“ফাইনালি আমরা এক হলাম আজ। কি ম্যাডাম আপনি প্রস্তুত তো সম্পূর্ণ ভাবে এই আহিয়ান আদৃতের হওয়ার জন্য?”

আনিতা কিছু না বলে লজ্জায় আহিয়ানের বুকে মুখ লুকালো। আহিয়ানও দুহাতে আগলে নেয় ওর পিচ্চি পাখিটাকে। কিছুক্ষণ বাদে আহিয়ান আনিতাকে ছেড়ে দিয়ে আগের মতোই ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,

–“দু বছর আগে তো আপনি আমাকে বিশ্বাসই করতে চাইছিলেন না। ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন আমায়। হাজার বুঝিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এখন বিশ্বাস হলো তো আমি শুধু আপনাকেই ভালোবাসি? হ্যাঁ মানছি আমি আগে ছেলেটা বেশি ভালো ছিলাম না৷ অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়াতাম। কিন্তু আপনি আমার লাইফে আসার পর তো নিজেকে বদলে নিয়েছি আমি। আর কোনো ডাউট আছে আপনার? এই আহিয়ান আদৃত কিন্তু শুধুমাত্র আপনাতেই সীমাবদ্ধ। সেটা তিন বছর আগেও ছিলো আর আজকে আবার নতুন করে হলো।”

আনিতা আহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,

–“মনে করতে চাই না সেসব দিনগুলো। যেসব দিনে আপনি আমার লাইফে থাকা স্বত্ত্বেও আপনাকে ভুল বুঝে আপনাকে ছাড়া থাকতে হয়েছে। আর আমি এটা খুব ভালো করেই জানি যে এই রাগী জেদি পঁচা পাগলাটে ছেলেটা শুধুমাত্র আমারই।”

–“আপনারা দুজন কি সারারাত ছাদেই কাটানোর কথা চিন্তা করেছেন নাকি?”

কারো গলার স্বরে আহিয়ান আনিতাকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। ছাদের দরজার সামনে সকল বিচ্ছু বাহিনী দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মাঝ থেকে তন্ময়ই বলেছে উপরের কথাটা। আহিয়ান একগাল হেসে বলে,

–“আকাশে থালার মতো বড় চাঁদ উঠেছে। একটু পরপর মৃদু বাতাস এসে শরীর আর মনকে শীতল করে যাচ্ছে। এত সুন্দর একটা মনোরম পরিবেশে সারারাত বউকে নিয়ে ছাদে কাটানোটা মন্দ হবে না। গুড আইডিয়া। আজ আমি আর আনিতা এখানেই থাকছি।”

–“বাহ রে! এত কষ্ট করে যে আমরা ফুল এনে বাসর সাজালাম। তার কি হবে? আমাদের এত কষ্টের দাম কে দিবে শুনি?”

রোদেলার কথায় আহিয়ান বলে,

–“আমি কি বলেছিলাম তোমাদের ফুল কিনে আমাদের জন্য বাসর ঘর সাজাও।”

–“এই জন্যই বলে অন্ধকে ভালো রাস্তা দেখাতে নেই। আমরা তোকে হেল্প করলাম তোদের বিয়ের ফার্স্ট নাইট যাতে কোনো ভাবেই স্পয়েল না হয়। বাড়ির সবাইকে ম্যানেজ করে ফুল এনে বাসর সাজালাম আর তুই এখন এই কথা বলছিস?”

–“তো আমি কি করতে পারি এখন?”

রাতুলের কথায় আহিয়ান বলে। আনিতা ততক্ষণে অন্যপাশে সরে দাঁড়িয়েছে। ফাইয়াজ তন্ময়ের কাঁধে হাত রেখে বলে,

–“বুঝলি তন্ময়? যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।”

–“হ্যাঁ তাই তো দেখছি এখন।”

–“ওকে ওকে। সবাই এখন চুপ যাও। আহিয়ান নিচে চল। আনিতা চলো।”

এই বলে তন্ময় ওরা ওদের দুজনকে নিয়ে নিচে নেমে আসে। আহিয়ান আর আনিতাকে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে ওরা সকলে দরজা আটকে দাঁড়ায়। অবাক হয় আহিয়ান। সাথে আনিতাও। আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওদের দিকে। আহিয়ান ওদের দিকে ওভাবে তাকাতেই রাতুল ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,

–“কি হয়েছে? ওমন ভাবে কি দেখছিস?”

–“তোরা দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কত রাত হয়েছে দেখছিস? ঘুমোবো আমি সর সামনে থেকে।”

–“উঁহু দেবরজি এভাবে তো তোমাকে ছাড়ছি না।”

পিছন থেকে রুহি কথাটা বলে উঠে। আহিয়ান পিছন ঘুরে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে,

–“ভাবী এখনও তুমি ওদের সাপোর্ট করবে?”

–“অবশ্যই। আমরা সকলে মিলে এত কাঠখড় পুড়িয়ে বড়দের থেকে অনুমতি নিয়ে তোমাদের বাসরের ব্যবস্থা করে দিলাম আর তুমি আমাদের খুশি না করেই বউ নিয়ে সোজা বাসর ঘরে ঢুকে যাবে। এটা তো হয় না।”

–“কি করলে তোমরা খুশি হবে চটপট বলে আমাকে উদ্ধার করো।”

রোদেলা বলে,

–“বউ নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকতে হলে টাকা দিতে হবে আমাদের।”

–“রুমটা আমার বউয়ের আর বউটাও আমার। তাহলে আমার বউ নিয়ে আমি রুমে ঢুকবো। এতে তোমাদের কেন টাকা দিবো আমি?”

–“আমাদের টাকা না দিলে তুই বাসর করা তো দূরে থাক বউ অব্দি পাবি না।”

আহিয়ানের কথার জবাবে রাতুল বলল কথাটা। আহিয়ান ফোন বের করে একবার টাইম দেখে নিলো। রাত দুটো বাজে। এখন ওদের সাথে কথা পেঁচানোর একদম ইচ্ছে নেই ওর। তাই সরাসরি বলল,

–“কত টাকা লাগবে?”

জেরিন বলে,

–“আপাতত পনেরো হাজার দিলেই হবে। সামনের অনুষ্ঠানে আরো বেশি নিবো।”

–“টাকা তো গাছে ধরে তাই না? এখন পনেরো দিবো আবার সামনে অনুষ্ঠানেও টাকা দিবো।”

–“দিবিই তো। তা না হলে আমরা কিছুতেই ছাড়ছি না।”

–“ওকে ছাড়তে হবে না।”

এই বলে আহিয়ান চলে যাচ্ছিলো। এতক্ষনে আনিতা মুখ খোলার জন্য প্রস্তুত হলো। আহিয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

–“এত কিপটেমি করছেন কেন? পনেরো হাজারই তো চেয়েছে। দিয়ে দিন না।”

–“এই তুমিও এখন দল বদলাচ্ছো?”

–“আমি তো আগে থেকেই ওদের দলে। আপনি টাকাটা দিলেই তো আমরা সবাই মিলে পার্টি দিতে পারবো।”

–“মানে কি?”

তন্ময় আহিয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,

–“মানে খুব সহজ। এই টাকা নেওয়ার প্ল্যানটা আনিতারই আর টাকার এমাউন্টও আনিতাই ঠিক করেছে।”

–“তাহলে আনিতার থেকেই নে। আমি দিচ্ছি না।”

–“এই শুনুন আপনি যদি এখন টাকা না দেন তাহলে আমি কিন্তু রোদেলা ওদের সাথে গিয়ে ঘুমাবো। রোদেলা চল তো।”

কথাটা বলে আনিতা রোদেলার হাত ধরে এক পা এগোতেই আহিয়ান চট করে আনিতার হাত ধরে বলে,

–“এই না। আজকে আমাদের বিয়ের প্রথম রাত। তুমি আমার বউ না? তাহলে আমাকে ছেড়ে তোমার বন্ধুদের সাথে কেন ঘুমাবে? আমি টাকা দিচ্ছি।”

এই বলে আহিয়ান ওয়ালেট বের করে সেখান থেকে গুনে গুনে এক হাজার টাকার দশটা নোট বের করে রোদেলার হাত গুজে দেয়। রোদেলা ওরা নিতে চায় না প্রথমে। তখন আনিতাই বলে,

–“এতক্ষণ তোদের দলে ছিলাম। এখন আমি আমার জামাইর দলে। যা দিয়েছে তাই নিয়ে নে। নয়তো এটাও পাবি না।”

এই বলে আনিতা টাকাগুলো নিতে গেলেই রোদেলা টাকাগুলো সরিয়ে নেয়। রুহি এগিয়ে এসে বলে,

–“ওকে প্রবলেম নেই। এবারের মতো ছাড় দিলাম। নেক্সট টাইম রেডি থেকো। তখন একদম ছাড়াছাড়ি নেই।”

রুহির কথায় সকলে সহমত প্রকাশ করে। জেরিন তাসকিয়া ওরা সবাই দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়। আহিয়ান আনিতার হাত ধরে দরজা খুলে রুমে ঢুকে পড়ে। তারপর পিছন ঘুরে ওদের দিকে তাকিয়ে “গুড নাইট” বলে সবার মুখের উপর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। আহিয়ানের কান্ডে ওখানে উপস্থিত সকলে উচ্চস্বরে হেসে দেয়। আর আনিতা বেচারি লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে।



চলবে।

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৪৮
#Ornisha_Sathi

দুজনে মিলে ফ্রেস হয়ে নিলো আগে। আনিতা লেহেঙ্গা পালটে একটা লেডিস লং ফতুয়া আর প্লাজু পড়েছে। অবশ্য আহিয়ানই বলেছে যেটা পড়ে ও কম্ফোর্টাবেল সেটাই যেন পড়ে। তাই আনিতা ফতুয়া আর প্লাজু পড়েছে। ফ্রেশ হয়ে ওজু করে দুজনে একসাথে দু রাকাত নামায পড়ে নিলো। নামায শেষে আনিতা জায়নামাজ তুলে ভাজ করে কাবার্ডে রেখে দিলো। পিছন ঘুরার আগেই আহিয়ান আনিতাকে জড়িয়ে ধরে। ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো আনিতা। আহিয়ানের গরম নিঃশ্বাস আনিতার ঘাড়ে গিয়ে বারি খাচ্ছে। মৃদু কেঁপে উঠছে আনিতা।

আহিয়ান আনিতাকে ঘুড়িয়ে নিয়ে কোলে তুলে নিলো। আনিতাকে কোলে নিয়ে আহিয়ান বিছানার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আনিতা দুহাতে আহিয়ানের গলা জড়িয়ে আছে। আহিয়ান আনিতাকে আলতো ভাবে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে উঠে এসে লাইট অফ করে দিলো। তারপর ও নিজেও আনিতার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। টেবিলের উপর কয়েকটা বড় মোম জ্বালানো। মোমবাতির আলোয় সবটা আবছা আবছা বুঝা যাচ্ছে।

বেশ কিছুক্ষণ আনিতার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করেই আহিয়ান ফতুয়ার নিচ দিয়ে আনিতার পেটে হাত দেয়। এমন স্পর্শে কেঁপে উঠে আনিতা। আহিয়ান অনবরত আনিতার পেটে স্লাইড করে যাচ্ছে। তারপর হুট করেই উঠে গিয়ে ফতুয়া কিছুটা সরিয়ে আনিতার উম্মুক্ত পেটে শব্দ করে একটা চুমু খায়। আগের তুলনায় আরো গভীর ভাবে কেঁপে উঠে আনিতা। আহিয়ান আনিতার পাশে গিয়ে ওর ঘাড়ে মুখ ডুবালো। অন্যরকম শিহরণ জাগছে আনিতার মনে। পরম আবেশে আহিয়ানের মাথার চুল খামছে ধরে ও। আহিয়ান ধীরে ধীরে ঘাড়ে থেকে গলায় চলে আসে। আনিতার ভালো লাগার মূহুর্ত ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে। আনিতার গলায় মুখ ডুবানো অবস্থাতেই আহিয়ান ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে,

–“আনি__”

–“হু্ হুম।”

–“মে আই?”

আনিতা কিছু না বলে আহিয়ানের চুলগুলো আরো জোরে খামছে ধরলো। চেপে ধরলো আহিয়ানের মাথা ওর গলায়। আহিয়ানের আর বুঝতে বাকী নেই। আনিতার উত্তর পেয়ে গিয়েছে ও। তাই আহিয়ান এবার গলা ছেড়ে আনিতার ঠোঁটজোড়া নিজের ঠোঁটের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। আহিয়ানের ডান হাত এবার আনিতার পেট ছেড়ে ফতুয়ার বোতামের দিকে অগ্রসর হলো। ধীরে ধীরে দুজন মানুষ সম্পূর্ণ রুপে এক হয়ে যাচ্ছে। এক হয়ে যাচ্ছে দুজনার শরীর এক হয়ে যাচ্ছে দুজনার মন। তাদের তিন বছরের ভালোবাসা আজ সম্পূর্ণ রুপে পূর্ণতা পেলো। দুজন হয়ে গেলো সারাজীবনের জন্য দুজনার। আইনত ভাবে দৈহিক ভাবে সম্পূর্ণ ভাবে দুটো মানুষ আজ দুজনার হয়ে গেলো৷ দুজনের অস্তিত্ব মিশে এক হয়ে গেলো। আজ দুজনে এক অন্যরকম ভালোলাগার জগতে, ভালোবাসার সাগরে ডুব দিয়েছে।

সকাল আটটা নাগাদ এলার্ম-ঘড়ির শব্দে আনিতার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমিয়েছে চার ঘন্টাও হয়নি আর এখনি এলার্মের শব্দে কাচা ঘুমটা ভেঙে গেলো। কাচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বেশ বিরক্ত হলো ও। বেশ কিছুক্ষণ ওভাবেই বিছানায় পড়ে থেকে উঠে বসলো ও। পাশ ফিরে আহিয়ানের দিকে তাকালো একবার। ঘুমন্ত আহিয়ানকে দেখতে বেশ লাগছে ওর। উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। সিল্কি চুলগুলো কপালে উপচে পড়েছে। ফর্সা পিঠে ওর নখের দাগ দেখে আতকে উঠলো আনিতা। আহিয়ানের গায়ে চাদড় টেনে দিয়ে কাবার্ড থেকে লং কূর্তি আর জিন্স নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আনিতা।

বেশ ক্ষানিকটা বাদে গোসল শেষ করে বের হলো ও। ভেজা জামাগুলো বারান্দায় নিয়ে মেলে রাখলো শুকানোর জন্য। চুল থেকে টাওয়াল খুলে চুল গুলো মুছতে মুছতে বিছানায় শুয়ে থাকা আহিয়ানের দিকে পা বাড়ালো। আহিয়ানের পাশে বসে ওর পিঠে হাত রেখে আনিতা বলে,

–“শুনছেন? বেলা হয়ে যাচ্ছে উঠুন।”

–“আর একটু ঘুমোবো প্লিজ।”

–“আরেহ সাড়ে আটটা বাজে। এরপরও ঘুমালে বাসার অন্যরা কি বলবে?”

–“একটু ম্যানেজ করে নিও। ঘুমিয়েছি বেশিক্ষণ হয়নি তো।”

–“আচ্ছা ঘুমান তাহলে।”

চলে যাচ্ছিলো আনিতা৷ আহিয়ান পিছন থেকে ওর হাত টেনে ধরে নিজের বুকের উপর ফেলে দেয়। আচমকা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় আনিতা। এভাবে পড়ায় আনিতার ভেজা চুলগুলো সব ওর মুখের উপর উপচে পড়ে। আহিয়ান হাত দিয়ে আনিতার চুলগুলো পিছনে সরিয়ে দেয়। আর ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দেয়৷ আনিতা ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করে বলে,

–“ছাড়ুন কি করছেন?”

–“কই কিছু করছি না তো।”

–“তাহলে এভাবে ধরে রেখেছেন কেন আমায়? ছেড়ে দিন।”

–“ছাড়তে ইচ্ছে করছে না বউ।”

আহিয়ান কথাটা আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল। আহিয়ানের ঠোঁট আনিতার কান স্পর্শ করায় আনিতা মৃদু কেঁপে উঠলো। আনিতা বলে,

–“এখন ধরে রাখার সময় না। ছাড়ুন বাইরে যেতে হবে।”

এই বলে জোড় করেই নিজেকে আহিয়ানের থেকে ছাড়িয়ে নেয় আনিতা। তারপর কাবার্ড থেকে আহিয়ানের জন্য জিন্স, টি-শার্ট আর টাওয়াল বের করে দিয়ে বিছানার এক সাইডে রেখে বলে,

–“আপনার জামা-কাপড় রেখে গেলাম তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে আসুন।”

–“আমার জামা-কাপড় এলো কোত্থেকে?”

–“কাল ফাইয়াজ আর তন্ময় ভাইয়া ফুল আনার সময় আপনার জন্য জামা-কাপড়ও কিনে এনেছিলো।”

আহিয়ান আর কিছু না বলে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। টাওয়াল গলায় পেঁচিয়ে জিন্স হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ও। আনিতা বিছানা গুছিয়ে দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে এলো৷ বাইরে গিয়ে আহিয়ানের আম্মু রুহি নাহিয়ান ওদের সাথে দেখা করে নিলো আগে। তারপর রুহির কাছে ফাইয়াজ ওদের কথা জিজ্ঞেস করাতে রুহি বলে,

–“সবকটা সারারাত জেগে ফজরের সময় ঘুমোতে গিয়েছে। তাই এখনো উঠেনি।”

–“আচ্ছা। নাস্তা করেছেন আপনারা?”

–“উঁহু ভাবলাম তোমাদের সাথেই নাস্তা করি।”

–“আন্টি খেয়েছেন?”

–“আন্টি কে?”

–“আহিয়ানের আম্মু।”

–“এখন থেকে তো আমাদের মতো তোমারও আম্মু তাহলে আন্টি বলছো কেন?”

–“একটু সময় লাগবে।”

–“কোনো সময় দেওয়া যাবে না। এখন থেকেই আম্মু বা মা ডাকতে হবে।”

–“আচ্ছা চেষ্টা করবো।”

–“তা আমার দেবরজি কোথায়? এখনো ঘুম ভাঙেনি বুঝি?”

–“ফ্রেশ হচ্ছে। আপনারা নাস্তার টেবিলে বসুন। আমি উনাকে ডেকে নিয়ে আসছি।”

–“আচ্ছা।”

রুহি কথাটা বলতেই আনিতা নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে ঢুকে দেখে আহিয়ান মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বের হলো। টাওয়াল গলায় ঝুলানো। টাওয়ালের এক সাইড নিয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নিজেকে একবার ভালো করে দেখে নিয়ে বিছানার এক কোনে ভেজা টাওয়াল রেখে দিয়ে টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিলো। আনিতা ভেজা টাওয়াল নিয়ে বারান্দায় মেলে দিলো। আনিতা বারান্দা থেকে আসতেই আহিয়ান ওর হাত টেনে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো। তারপর আহিয়ান ওর বুক আর ঘাড়ের দিকে ইশারা করে বলল,

–“কি করেছো এগুলা?”

আনিতা একবার তাকালো আহিয়ানের বুক আর ঘাড়ের দিকে। ঘাড়ের এক জায়গায় আর বুকের কয়েক জায়গায় লাল হয়ে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। বুকে নখের আচড়ও আছে। লজ্জা পেয়ে গেলো আনিতা৷ লজ্জায় মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বলে,

–“ক্ কই আমি কিছু ক্ করিনি তো।”

–“তুমি কিছু করোনি রাইট?”

–“হু্ হুম”

–“তাহলে এগুলো কে করলো? কাল রাত থেকে তো এই ঘরে তুমি আর আমি ছাড়া অন্য কেউ ছিলো না।”

–“আ্ আমি কি জানি? আমি কি্ কিছু জ্ জানি না।”

আহিয়ান কিছু বলার আগেই রুমে নুজাইরাহ চলে আসে। নুজাইরাহকে দেখে আহিয়ান আনিতাকে ছেড়ে দেয়। আনিতা আহিয়ানের কোল থেকে উঠে পাশে সরে দাঁড়ায়। নুজাইরাহ “কাকিয়া” বলে দৌড়ে আনিতার কাছে যায়। আনিতাও হাটু গেড়ে বসে ওকে কোলে তুলে নেয়। নুজাইরাহ আনিতার গলা জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ আনিতার সাথে লেপ্টে থাকে। তারপর অভিমানী কন্ঠে বলে,

–“কাল না তুমি রাতে আমার সাথে শুয়েছিলে? তাহলে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে পাশে আব্বু আম্মুকে দেখলাম কেন? সকালেও তোমায় পায়নি আমার পাশে।”

–“উমম আমি তো তোমার ঘুম থেকে উঠার আগেই উঠে পড়েছি আম্মু। তাই সকালে আমায় দেখতে পাওনি।”

–“উঁহু তুমি মিথ্যে বলছো। আমি শুনেছি তুমি কাকাইয়ের সাথে ঘুমিয়েছিলে।”

নুজাইরাহ এর কথা শুনে আনিতা ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওর দিকে এতটুকু মেয়ে কি পাঁকা পাঁকা কথা বলছে ভাবা যায়? আহিয়ান উঠে আনিতার কোল থেকে নুজাইরাহকে ওর কোলে নিয়ে বলে,

–“আম্মু তোমার কাকিয়া ভুল করেছে তোমার সাথে না ঘুমিয়ে। নেক্সট টাইম থেকে তোমার সাথেই ঘুমাবে ও। ওকে?”

আহিয়ানের কথায় নুজাইরাহ খুশি হয়ে যায়। খুশিতে মাথা একদিকে হেলিয়ে আহিয়ানের কথায় সম্মতি জানায়। আনিতা রুম থেকে বের হতে হতে বলে,

–“ভাইয়া ভাবী অপেক্ষা করছে নাস্তার টেবিলে। চুলন।”

এই বলে আনিতা বের হয়ে যায় রুম থেকে। আহিয়ানও আনিতার পিছু পিছু নুজাইরাহকে কোলে নিয়ে বের হয়ে যায়। আনিতার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসে আহিয়ান। নুজাইরাহ আহিয়ানের কোল থেকে নেমে গিয়ে ওর দাদুর কাছে চলে যায়। বাড়ির অন্য সবাই নাস্তা করে নিয়েছে। এখন আহিয়ান ওরা খাওয়ার পর ফাইয়াজ রোদেলা ওরা বাকী থাকবে শুধু। কিন্তু ওরা কখন উঠবে কে জানে? আনিতা একবার ডাকতে গিয়েছিলো। কিন্তু কারো কোনো সারাশব্দ নেই। তাই আর ওদের জন্য আহিয়ান ওরা ওয়েট করলো না। আনিতা আহিয়ান রুহি নাহিয়ান অনিমা অদ্রি ছয়জনে একসাথে নাস্তা করে নিলো।

নাস্তা শেষে সবাই মিলে বেশ কিছুটা সময় আড্ডা দেয়। তারপর আহিয়ান উঠে রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ বাদে আনিতার ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠে। আনিতা ম্যাসেজ ওপেন করে দেখে আহিয়ান লিখেছে,

–“একা একা ভালো লাগছে না। রুমে আসো এক্ষুনি।”

মুচকি হেসে আনিতা রিপ্লাই করলো, “এতদিন তো একা একাই ছিলেন। তবে আজ কেন ভালো লাগছে না?”

ম্যাসেজটা পড়ে আহিয়ান ঠোঁট উলটে রিপ্লাই করে, “বিয়ের আগে সারাজীবন একা থাকা যায়। কিন্তু বিয়ের পর এক সেকেন্ডও বউকে ছাড়া একা ভালো লাগে না।”

ঠোঁট কামড়ে ধরে নিঃশব্দে হাসলো আনিতা। তারপর রিপ্লাই করলো, “একা থাকার অভ্যাস করুন। আপাতত দু/তিন বছর বউ ছাড়াই থাকতে হবে।”

আহিয়ান মৃদু হেসে রিপ্লাই করে, “মানি না মানবো না। কিছুদিন যেতে দাও তারপর ভার্সিটির কথা বলে তোমায় আবার ঢাকা নিয়ে যাবো। এখন তো আর কেউ বারন করবে না ঢাকায় আসতে৷ একবার ঢাকায় আসো তারপর সারাক্ষণ তোমার সাথেই কাটাবো।”

আনিতা মুচকি হাসলো শুধু। এবারে আর রিপ্লাই করলো না। তখন তো ওদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি তাই ঢাকা থেকে নিয়ে আসছিলো। কিন্তু এখন তো মেনে নিয়েছে আর ওরা লিগ্যালি হাজবেন্ড ওয়াইফ৷ সো এখন আর আনিতার ঢাকা যাওয়া নিয়ে কেউ কিছু বলবে না। ম্যাসেজটা পড়ে আনিতা ফোন রেখে দিলো। আনিতার সামনে বসে রুহি এতক্ষণ সবটা খেয়াল করেছে। আনিতা ফোন রেখে রুহির দিকে তাকাতেই দেখে রুহি ওর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছে। আনিতা ভ্রু নাচিয়ে রুহিকে জিজ্ঞেস করে,

–“কি হয়েছে?”

–“কিছু না।”

–“তাহলে ওভাবে হাসছেন কেন?”

–“আমার দেবরটা বুঝি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছে না।”

–“মা্ মানে?”

–“মানে এই যে তোমাকে ম্যাসেজ করে রুমে যেতে বলছে।”

–“না্ না তে্ তেমন কিছু না।”

আনিতার কথায় রুহি কিছুটা শব্দ করে হেসে দেয়। তারপর বলে,

–“বুঝি বুঝি। সব বুঝি বুঝলে? যাও গিয়ে দেখো ওর কিছু লাগবে কিনা।”

আনিতা কিছু বলল না। বেচারি লজ্জায় পড়ে গিয়েছে। রুহি মুচকি হেসে আনিতাকে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো৷ আনিতাও এদিক ওদিক তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো রুমে যাওয়ার জন্য। রুহির দিকে একবার তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো আনিতা। তারপর সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। আনিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রুহি শব্দ করে হেসে দিলো। আনিতা রুমে ঢুকতেই আহিয়ান দরজা লক করে দিলো।



চলবে।

#শুধু_তোমারই_জন্য
#পর্ব_৪৯
#Ornisha_Sathi

পনেরো দিন পরের কথা। আহিয়ান আবার এসেছে আনিতাদের বাসায়। কাল আনিতার আব্বু চলে যাবে। তাই আনিতার আব্বু আর চাচ্চুকে ইনভাইট করেছিলো আহিয়ানদের বাসায়। সেজন্যই আনিতার আব্বু আর চাচ্চু আজ আহিয়ানদের বাসায় গিয়েছিলো। তাছাড়া যাওয়ার আগে দেখা করতেও যেতো। আসার সময় উনারা আহিয়ানকে সাথে করে নিয়ে আসে। বাসায় আসার মিনিট পাঁচেক বাদেই আহিয়ান আবার ফাইয়াজকে নিয়ে বের হয়ে যায়। আনিতার সাথেও দেখা করেনি। অবশ্য আনিতাকে দেখেনি আহিয়ান। তাই ভাবলো এখন আর ডাকবে না। একেবারে এসেই ডাকবে। ওকে দেখলে মেয়েটা চমকে যাবে। আসার আগে অনিমাকে বলে এসেছে আনিতাকে যেন না জানানো হয় ও এসেছে।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজে। আহিয়ান ফাইয়াজকে নিয়ে বাজারে এসেছে। নতুন জামাই বলে কথা। বিয়ের পর আজ প্রথম এসেছে শশুড় বাড়ি। খালি হাতে গেলে চলে? শুরুতেই নিতে চেয়েছিলো কিন্তু আনিতার আব্বু ছাড়েনি ওকে। বাজারে গিয়ে নানা ধরনের ফলমূল তিন চার ধরনের মিষ্টি আর আনিতার দাদীর জন্য পান সুপারি কিনে নিলো। বাজার থেকে বের হয়ে একটা আইসক্রিম শপে গিয়ে অনিমা জারাফের জন্য আইসক্রিম আর আনিতার জন্য চকলেটস কিনে নিলো।

আনিতাদের বাসা থেকে বাজার বেশি দূরে না হওয়াতে পৌনে এক ঘন্টার মাঝেই বাড়ি ফিরলো আহিয়ান আর ফাইয়াজ। ওদের হাতে এত ব্যাগ থেকে কিছুটা রাগারাগি করে আনিতার আম্মু আর দাদী। আহিয়ান মৃদু হেসে সবটা মাথা পেতে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে। আনিতার আম্মু কিচেনে চলে যায়। আনিতার দাদী কিছুক্ষণ আহিয়ানের সাথে গল্প করে নামায পড়তে যান। মিনিট পাঁচেক বাদেই অনিমা ট্রেতে করে নাস্তা এনে আহিয়ানের সামনে রাখে৷ আহিয়ান অনিমার হাত টেনে নিজের পাশে বসায়। তারপর পেছন থেকে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,

–“আনিতা কোথায় অনিমা? ওকে দেখছি না।”

–“সন্ধ্যার পর ঘুমিয়েছে এখনও উঠেনি।”

–“কেন শরীর খারাপ?”

–“বিকেল থেকে মাথা ব্যাথা করছিলো।”

–“আচ্ছা আমি আসছি ওর সাথে দেখা করে৷ তুমি বসো।”

–“কিছুই তো খেলেন না।”

–“এসেছি যখন অবশ্যই খাবো। তুমিও চলো আমার সাথে।”

–“আপনিই যান। আমি জারাফের কাছে যাচ্ছি।”

–“ওকে।”

এই বলে আহিয়ান সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে গেলো আনিতার রুমের দিকে। রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে আহিয়ান দেখে রুমের লাইট অফ করা৷ লাইট অন করে আহিয়ান দরজা চাপিয়ে দিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়। আনিতার কপালে হাত রাখতেই আনিতা চোখ মেলে তাকায় একবার। একপলক আহিয়ানকে দেখে আবারো চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখ বন্ধ অবস্থায় আনিতা বলে,

–“আপনি কেন বারবার আমার স্বপ্নে এসে বিরক্ত করেন বলুন তো?”

–“আমি তোমার স্বপ্নে আসি?”

–“হ্যাঁ আসেন তো। প্রতিদিন আসেন৷ কিন্তু দ্বিতীয় বার যখন চোখ মেলে দেখিনা তখন আমার খুব কষ্ট হয় জানেন? আপনি কেন বারবার আমার থেকে দূরে সরে যান? সারাক্ষণ আপনি আমার পাশে থাকতে পারেন না? আপনি আমার আশেপাশে থাকলে আমার খুউউব ভালো লাগে।”

–“আচ্ছা তাহলে তোমার আশেপাশে থাকার ব্যবস্থা করছি ওয়েট।”

–“আপনি অনেক অনেএএক ভালো। এত্তগুলা ভালোবাসি আপনাকে।”

–“আমিও আপনাকে ভালোবাসি।”

কথাটা বলে আহিয়ান আনিতার দিকে ঝুকে ওর কপালে একটা চুমু দিলো। ঘুমের ঘোরেই কিছুটা কেঁপে উঠলো আনিতা। আহিয়ান আনিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

–“এই যে মিসেস আহিয়ান আদৃত আপনার যদি স্বপ্নের ঘোরে কথা বলা শেষ হয়ে থাকে তাহলে এবার একটু চোখটা খুলুন। চোখ মেলে দেখুন একবার। আমি আপনার স্বপ্নে নয় বাস্তবেই আছি।”

কথটা শুনে আনিতা একপ্রকার চমকে চোখ তুলে তাকালো। আহিয়ানকে ওর পাশে বসে থাকতে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। আনিতা চোখের ভুল ভেবে ভালো করে চোখ ডলে তাকালো আহিয়ানের দিকে। নাহ তো ও ভুল দেখছে না সত্যিই আহিয়ান ওর সামনে বসে। আনিতা লাফিয়ে উঠে বসে। আহিয়ান আনিতাকে সামলে নিয়ে বলে,

–“আস্তে উঠো পরে যাবে তো।”

–“আ্ আপনি? সত্যি আমার সামনে বসা?”

–“হ্যাঁ। কেন তুমি কি ভেবেছিলে? প্রতিদিনকার মতো আজও স্বপ্নে এসেছি?”

আনিতা কিছু না বলে হ্যাবলার মতো আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আহিয়ান আনিতার দিকে আরো কিছুটা ঝুকে বলে,

–“আমার বউটা যে আমাকে এত ভালোবাসে সেটা তো কখনো নিজের মুখে বলেনি আমায়৷ ভাগ্যিস আজ এসেছিলাম নয়তো জানতেই পারতাম না।”

লজ্জা পেয়ে গেলো আনিতা। ইশ্ স্বপ্ন ভেবে কত কিছুই না বলে ফেলল ও। আনিতার লজ্জা লজ্জা মুখ দেখে আহিয়ান মুচকি হাসলো। প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলে,

–“অনিমা বলল বিকেল থেকে মাথা ব্যথা করছে তোমার। ব্যাথা কি কমেছে? মেডিসিন নিয়েছো? না কমলে চলো ডক্টরের কাছে নিয়ে যাই।”

–“এতটা চিন্তা কেন করছেন? ঘুমিয়েছি না এখন ব্যাথা নেই। আচ্ছা আপনি কখন এসেছেন? আর আজকে আপনি আসবেন এটা আমাকে আগে বলেননি কেন?”

–“আগে বললে কি হতো শুনি?”

–“বা রে শশুড় বাড়ি আসবেন আর বউকে জানাবেন না এটা কি হয়?”

–“আমার শশুড় বাড়ি আমি যখন ইচ্ছে তখন আসবো তোমাকে কেন জানাবো?”

–“আমাকে___”

–“আনিতা আহিয়ানকে নিয়ে বাইরে এসো। ও এসেছে থেকে কিচ্ছু খায়নি এখনো।”

ড্রয়িংরুম থেকে আনিতার আম্মু আনিতাকে ডেকে কথাগুলো বলল। আনিতা আহিয়ানের দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে বলে,

–“এখনো কিছু খাননি কেন?”

আহিয়ান আনিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

–“বউটাকে ছাড়া খেতে ইচ্ছে করছিলো না তাই।”

–“ছাড়ুন আমায়।”

এই বলে আনিতা নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো আহিয়ানের থেকে। বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে আহিয়ানকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে এলো আনিতা। জারাফকে কোলে নিয়ে বসে আছে আহিয়ান। পাশেই আনিতা বসে ফোন টিপছে। কিছুক্ষণ বাদে আনিতা আহিয়ানের ফোন চাইলে আহিয়ান পকেট থেকে ওর ফোন বের করে আনিতার হাতে দেয়। আহিয়ানের ফোন লক করা। পাসওয়ার্ড না জানায় আনিতা আহিয়ানকে বলল লক খুলে দিতে। আহিয়ান আনিতাকে পাসওয়ার্ড বলে দিলো। পিচ্চিপাখি। আহিয়ানের ফোনের পাসওয়ার্ড পিচ্চিপাখি এটা শুনতেই আনিতা তাকালো আহিয়ানের দিকে। আহিয়ান জারাফের সাথে খেলায় ব্যস্ত। প্রথমেই আনিতা গ্যালারিতে গেলো। একটা ফোল্ডার জুড়ে শুধু আনিতার ছবি। বেশ অবাক হলো আনিতা। এত ছবি বোধহয় ওর নিজের ফোনেও নেই যতটা আহিয়ানের ফোনে আছে। বেশিরভাগ ছবিই আনিতার অজান্তে তোলা হয়েছে। হঠাৎই মেসেঞ্জারে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। কৌতুহল বশত আনিতা মেসেঞ্জারে যায়। একটা মেয়ে আহিয়ানের স্টোরিতে রিপ্লাই করেছে, “ইউর লুকিং সো হট।” লেখাটুকু দেখে আনিতার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো। স্টোরি ওপেন করে দেখে আহিয়ান চকলেট কালার শার্ট পড়া একটা পিক স্টোরি দিয়েছে। শার্টের নিচে কালো টি-শার্ট পড়া আর শার্টের বোতামগুলো খোলা। ফলে আহিয়ানের বুকে অনেকটা দেখা যাচ্ছে। ওই মেয়েটার রিপ্লাই দেখে যতটা না মাথা গরম হয়েছে তার থেকে কয়েকগুন বেশি আহিয়ানের ছবিটা দেখে হয়েছে।

আনিতা মেয়েটার আর আহিয়ানের ম্যাসেজগুলো প্রথম থেকে দেখলো। আহিয়ান হাতে গোনা দু/একটা ম্যাসেজের রিপ্লাই করেছে৷ আর বাকীসব ম্যাসেজ মেয়েটা একাই করে গিয়েছে। আনিতা গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটা খেয়ে নিলো। তবুও ওর মাথা কিছুতেই ঠান্ডা হচ্ছে না। আহিয়ান আনিতার হাতের উপর হাত রেখে বলে,

–“কি হয়েছে আনি? এনিথিং ইজ রং?”

আনিতা কিছু না বলে চোখ কটমট করে তাকায় ওর দিকে। তারপর সোফায় আহিয়ানের ফোনটা ছুড়ে মেরে গটগট করে নিজের রুমে চলে যায়। আনিতার এমন হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারনটা ঠিক খুঁজে পেলো না আহিয়ান। ফোনটা তুলে হাতে নিলো। লক খুলতেই দেখলো মেসেঞ্জারে “আমিশা আহমেদ” নামের একটা মেয়ের ইনবক্সে ক্লিক করা। ওর ছবিতে মেয়েটার এমন রিপ্লাই দেখে আহিয়ান বুঝতে পারলো আনিতার রেগে যাওয়ার কারন। আহিয়ান জারাফকে কোল থেকে নামিয়ে সোফায় বসিয়ে বলে,

–“তুমি আইসক্রিম খাও। আমি একটু আসছি।”

–“আচ্ছা।”

আহিয়ান পা বাড়ালো আনিতার রুমের দিকে। ওদিকে আনিতা সারারুম জুড়ে পায়চারী করছে আর এক হাত দিয়ে অন্যহাত ঘঁষছে। হঠাৎই দাঁড়িয়ে গিয়ে আনিতা একা একাই বলে,

–“ওই মেয়েটার সাহস হয় কি করে আমার আহিয়ানকে ওভাবে বলার? আর উনাকেও বলিহারি কি দরকার ছিলো ওরকম একটা পিক স্টোরি দিয়ে নিজের বুক অন্যদের দেখানোর? আমার সম্পত্তি আমি এখনো সেরকম ভাবে কিছু বললাম না আর কোথা থেকে কোন মেয়ে এসে একটা ছবি দেখেই আমার জামাইকে হট বলে। সাহস কত ওর। ওকে যদি আমি সামনে পেতাম না মাথায় তুলে একটা আছাড় মারতাম। লুচ্চি মাইয়া একটা অন্যের জামাইয়ের উপর নজর দেয় খালি।”

এইটুকু বলে আনিতা আবারো পায়চারী করতে থাকে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ আহিয়ান সবটা শুনছিলো। আনিতা আবারো পায়চারী করতে করতে বিড়বিড় করে বলে,

–“আর আহিয়ান আপনাকে তো আমি দেখে নিবো৷ ওরকম পিক স্টোরি দেওয়ার ঝাল তো আমি মিটাবোই। মেয়েদের খালি বুক দেখানোর বড্ড শখ জেগেছে মনে তাই না? আপনার শখ আজকে আমি সারাজীবনের মতো ঘুচিয়ে দিবো। মেয়েদের থেকে ওরকম কথা শুনার জন্যই পিক স্টোরি দেন তাই না? আজ আসুন একবার।”

কথাগুলো বলে আনিতা ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। সবটা শুনে আহিয়ান একটা শুকনো ঢোক গিলে। বেশ রেগে আছে দেখা যাচ্ছে। আহিয়ান ভিতরে যাবে কি যাবে না ভাবছে। দ্বিধা কাটিয়ে আহিয়ান ছোট ছোট পা ফেলে আনিতার পাশে গিয়ে বসে। আহিয়ানকে দেখে আনিতা ঘুরে বসলো। আহিয়ান আনিতার হাত ধরে বলে,

–“শুনো না। একটা কথা ছিলো।”

–“আপনার কথা শোনার মতো কোনো ইচ্ছে বা সময় আমার নেই।”

–“বেশি না অল্প একটু কথা।”

–“যা বলার তাড়াতাড়ি বলে বিদায় হোন এখান থেকে।”

–“বলছিলাম কি তুমি যেরকমটা ভাবছো সেরকম কিচ্ছু না বিশ্বাস করো।”

–“কি বিশ্বাস করবো আমি হ্যাঁ? মেয়েটা কি লিখেছে দেখেছেন? হট কেন লিখলো ও? মেয়েটা আপনাকে কি নজরে দেখে হট শব্দটা ইউস করেছে বুঝতে পেরেছেন আপনি?”

–“ছাড়ো না এসব৷ মেয়েটা লিখেছে এটা মেয়েটার দোষ শুধু শুধু আমরা কেন এটা নিয়ে ঝামেলা করবো বলো? এরপর থেকে আর ওরকম ছবি আমি স্টোরি দিবো না সত্যিই।”

–“মেয়েটার দোষ তাই না? প্রথম দোষটা তো আপনিই করেছেন। আপনি যদি ওই পিকটা না দিতেন তাহলে মেয়েটা এই কথাটা লিখতোই না। এখন সব দোষ একা মেয়েটাকে দিয়ে দিচ্ছেন তাই না? আর আপনি দুধে ধোয়া তুলসি পাতা তাই তো?”

–“ইয়াক তুলসি পাতা অনেক তিতা। আর আমি তো রোমান্টিক মানে খুবই মিষ্টি। আমাকে কিভাবে তুমি তুলসি পাতা বলছো বলো তো? আমি কোনো তুলসি পাতা না।”

আনিতা কিছু না বলে উঠে চলে যাচ্ছিলো। আহিয়ান ওর হাত টেনে ধরে দাঁড় করিয়ে দেয়। তারপর আনিতার সামনে দাঁড়িয়ে কানে ধরে বলে,

–“এই যে দেখো কানে ধরছি৷ আর এমন হবে না। প্রমিস।”

–“উঠবস করুন।”

–“মানে?”

–“মানে হলো আপনি এখন কানে ধরে বিশ বার উঠবস করবেন।”

–“এই আমি কি বাচ্চা নাকি? আর তাছাড়া আমার কি কানে ধরে উঠবস করার বয়স আছে আর?”

–“ধরবেন না তো? ওকে চলে যাচ্ছি আমি।”

–“এই ওয়েট। ধরছি তো৷ এত রাগ করো কেন?”

এই বলে আহিয়ান দুহাতে আনিতার কান ধরে উঠবস করার চেষ্টা করলে আনিতা ধমক দিয়ে বলে,

–“আমার কান ছাড়ুন। আমি আপনার কানে ধরে উঠবস করার কথা বলেছি।”

–“ও আমার কানে ধরতে হবে তাই না? আমি আরো ভেবেছিলাম তোমার কানে ধরতে হবে।”

–“আজ্ঞে না। আপনার কানে ধরে উঠবস করতে হবে।”

–“এই পাখি কানে ধরে উঠবস না করলে হয় না? এবারের মতো এমনি ছেড়ে দাও। নেক্সট টাইম এমন হলে কানে ধরে উঠবস করবো পাক্কা।”

–“কোনো ছাড় নেই।”

আহিয়ান করুন চোখে তাকাতেই আনিতা চোখ পাকিয়ে তাকায়৷ তা দেখে আহিয়ান ভয় পাওয়ার ভান ধরে কানে হাত দিয়ে বলে,

–“আচ্ছা করছি।”

এই বলে আহিয়ান কানে ধরে উঠবস করে। তিনবার হতেই আনিতা আহিয়ানকে থামিয়ে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওকে। আহিয়ানের বুকে মাথা রেখেই বলে,

–“আপনি শুধু আমার। আর আপনাকে কেমন লাগছে না লাগছে সব কিছু বলার অধিকারও শুধুমাত্র আমারই বুঝলেন?”

–“হ্যাঁ ম্যাডাম বুঝেছি।”

–“ভালোবাসি আমি আপনাকে। সুতরাং আপনার দিকে অন্য কেউ বাজে নজরে তাকালে তার চোখ উপচে ফেলবো আমি।”

আহিয়ান মুচকি হেসে আনিতার মাথায় আলতো করে চুমু খায় একটা। তারপর বলে,

–“আমিও আমার পাগলীটাকে অনেক ভালোবাসি। আল্লাহ আমাকে #শুধু_তোমারই_জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছে। শুধু তোমাকেই ভালোবাসার জন্য। শুধু তোমারই হয়ে থাকার জন্য।”



চলবে।
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং🥰 ]