শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-১৩

0
2387

?শুধু তোমায় ঘিরে?

#মেঘা আফরোজ…..?
#পর্ব-১৩…..?

?

নিজের রুমে দুগালে হাত রেখে বসে আছি তিশা পাশে থেকে বলে উঠলো
..মেঘা এভাবে বসে থাকার মানেটা কি বলবি আমায়? কোনো প্রবলেম হয়েছে কি?
..হুম প্রবলেম রে তিশা বড় প্রবলেম।
..কি হয়েছে বল না?
..তিশা কাল খালামনিরা আসবে আমার আর তাসিনের বিয়ের ডেট ঠিক করতে!
..কিহ এ তো খুব ভালো কথা! তোর এখন উড়াধুরা ডান্স করার কথা আর তুই মুখটা পেচার মতো করে বসে আছিস। তুই কি এটাকেই প্রবলেম বলছিস?
..হুমম
..ওই হারামি এতে প্রবলেমের কি আছে শুনি? তুই আর তাসিন ভাইয়া দুজন দুজনকে ভালোবাসিস তাহলে বিয়ে যত তাড়াতাড়ি হবে ততই ভালো তাইনা।
..এই বিয়ের কথা শুনেই তো ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
..কিসের এতো ভয়? ভ্রু কুঁচকে বললো তিশা।
..জানি না কেমন যেনো একটা নার্ভাসনেস কাজ করছে।
তিশা আমার কথায় জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
..ওই পেত্নি হাসছিস কেনো তুই?
..হাসবো না তো কি কাঁদবো! ভালোবাসিস যাকে তাকেই তো বিয়ে করবি তাহলে এতো ঢং করার কি আছে হুম?
..হেসে নে বেশি করে হেসে নে আমারো সময় আসবে।
..আমার টা পরে ভাবিস আগে বল শপিং এ কবে যাবি? উফ মেঘা আমি তো ভাবতে পারছি না তোর বিয়ে হবে!!
..এই তোর মাথা ঠিক আছে তিশা? নাকি আয়ান ভাইয়া তোর মাথাটা পুরোই চিবিয়ে খেয়েছে! কাল বিয়ের দিন ঠিক করবে তারপর তো শপিং এর কথা আসবে আর তুই আগেই লাফাচ্ছিস।
..আমার মাথা তোর ওই বাদর ভাই চিবিয়ে খাবে! কি যে বলিস না তুই উল্টো আমি তার মাথা চিবিয়ে খাবো।
..হুম খেতেও পারিস পেত্নি বলে কথা! আহারে আমার ভাইটা শেষ পর্যন্ত একটা পেত্নির প্রেমে পড়লো।
..মেঘা ভালো হচ্ছে না কিন্তু। বলেই আমাকে মারতে লাগলো।

.?

তখনি কেউ বলে উঠলো
..এটা কি করছো পিচ্চি আমার বোনটাকে মেরে ফেলবে নাকি? ওকে ছেড়ে আমাকে মারো আমি কিছু মনে করবো না।
আয়ান ভাইয়া হেসে কথাগুলো বলে খাটে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো।
তিশা চুপ করে দাড়িয়ে পড়লো আর আমি ভাইয়াকে বললাম
..দেখেছো তো ভাইয়া তিশা বিয়ের আগেই ননদের ওপর টর্চার করছে।
..আমি মটেও টর্চার করিনি তুই আমাকে ও কথা কেনো বললি।
ব্যাস আবার লেগে গেলো আমাদের। আয়ান ভাইয়া দুহাতে কান চেপে ধরে জোরে বললো
..তোরা থামনি! আমার কানের তো ১২ বেজে গেলো তোদের ঝগড়াতে। আর এই যে পিচ্চি কম কম কথা বলতে পারো না। তিশাকে বললো।
..হ্যা এখন তো সব আমার দোষ তাইনা। আর কতবার না বলেছি আমাকে পিচ্চি বলবেন না।
..তো কি বলবো পিচ্চির আম্মু বলবো? তাহলে তো তার ব্যবস্থা জলদি করতে হবে তাইনা? চোখ মেরে বললো।
তিশা কিছু না বলে রেগে অন্য দিকে ঘুড়ে দাড়ালো।

আয়ান ভাইয়া আমাকে বললো
..মেঘ চোখটা একটু বন্ধ কর তো।
..কেনো ভাইয়া?
..যা বলেছি কর। আমি বলার আগে চোখ খুলবি না।
..ঠিকআছে করলাম।
আমি চোখ বন্ধ করতেই আয়ান ভাইয়া তিশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। তিশা চমকে উঠলো হঠাৎ এভাবে ধরায়। ভাইয়া তিশার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো
..তুমি কি যানো তোমার এমন রাগি চেহারাটা দেখতে কতটা সুইট লাগে মন চাইছে খেয়ে ফেলি তোমায়,,,,বলেই তিশার গালে একটা চুমু খেয়ে ছেড়ে দাড়ালো।
আর তিশা ও তো বরফের মতো শক্ত হয়ে চোখ বড় বড় করে দাড়িয়ে আছে। আমি সবটাই দেখেছি ভাইয়া যখনি ওকে ছাড়লো আমি আবার চোখ বন্ধ করে নিলাম।
..মেঘ এবার চোখ খুলতে পারিস।
..হুম কাজ তো শেষ তাইনা। বলেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগলাম।
..ওরে পাজি তুই দেখেছিস!!
..কই না তো আমি কিছু দেখিনি।
তিশার কাছে গিয়ে ওর হাতে একটা চিমটি কেটে বললাম
..কিরে পেত্নি তোর বকবকানি গুলা কোথায় গেলো এখন।
..তিশা বিষ্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকালো তারপর আয়ান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
..ভাই বোন সব গুলো এক রকম। বলেই বেড়িয়ে গেলো।

. ?

খালামনি খালু তমা আপু ইমরান ভাইয়া এসেছে বিয়ের দিন ঠিক করতে। তাসিন আসেনি তবে আমাকে জালিয়ে মারছে বার বার ফোন দিয়ে।
..কি হয়েছে এত বার ফোন দিচ্ছেন কেনো?
..ইচ্ছে করছে তাই। আমাকে ওরা কেনো নিলো না বলোতো কোথায় ভেবে রেখেছিলাম তোমাকে আজ একটু দেখবো।
..কেনো আগে দেখেন নি বুঝি?
..৫দিন হয়েছে দেখি না ভাবতে পারছো মেঘাপাখি! আমার তো এখনি ছুটে আসতে মন চাইছে। আচ্ছা কি পড়েছো তুমি আজকে শাড়ি পড়েছো?
..পড়তে চাইনি তমা আপু জোর করে পড়িয়ে দিলো।
..হুম ভালো হয়েছে এখনি আমাকে ছবি পাঠাবে।
..ছবি তুলতে আমার ভালো লাগে না জানেন না আপনি?
..ওহ,তাহলে ভিডিও কলে এসো, খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে তারপর আবার শাড়ি পড়েছো না জানি কতটা সুন্দর লাগছে তোমায়।
..এত দেখতে হবে না পরে দেখবেন।
..হুমম কি আর করা কপাল খারাপ হলে যা হয় ঠিকআছে পরেই দেখে নিবো।
অরিন আমার কাছেই ছিলো আমাদের কথার মাঝেই ও বললো
..মামি ওইতা কি? একটা সোপিস দেখিয়ে।
তাসিন হেসে বললো বাহ আমার অরিন আম্মুটা মামি বলতে শিখে গিয়েছে! ওকে আমার হয়ে একটা পাপ্পি দিয়ে দাও তো মেঘাপাখি।

আমি খালামনির পাশে বসে আছি খালামনি একটা আংটি আমার আঙ্গুলে পড়িয়ে দিলো। তমা আপুও নানা রকম কথা বলে চলেছে। বাবা আর খালু অন্য সোফায় বসে কথা বলছে। ইমরান ভাইয়া তমা আপুকে বললো
..তাসিনকে নিয়ে আসলে ভালো হতো ও তো আসতেই চেয়েছিলো।
তমা আপু বললো
..বাবা না করলো আসতে। বললো আজ তো দিন তারিখ দিবো আজ ওর গিয়ে কাজ নেই।

অবশেষে বিয়ের ডেট দেওয়া হলো আজ থেকে ১০ দিন পর। আপুরা চলে যাবে তাই বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলবে।

.?

মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে
..মেঘা তোর কি মন খারাপ মা? এভাবে এসে কোলে শুয়ে পড়লি যে!
..এমনি ভালোলাগছিলো না।
..কেনো রে তাসিন কি কিছু বলেছে তোকে?
..না মা উনি কি বলবেন। আচ্ছা মা বিয়ে হলে মেয়েদের নিজের বাড়ি ছেড়ে কেনো চলে যেতে হয়?
..এবার বুঝতে পারলাম আমার মেয়েটার মন খারাপ কেনো। মারে এটাই যে নিয়তি মেয়েদের নির্দিষ্ট ঠিকানা তো তার শশুর বাড়ি সব মেয়েকেই যে তা মেনে নিতে হয়। ওই বাড়ি এবং বাড়ির মানুষগুলো কেই আপন করে নিতে হবে।
..মা তোমাকে আর বাবাকে ছেড়ে আমি যাবো না।
..পাগলি মেয়ের কথা শোনো। তোকে কি অচেনা কোনো পরিবারে দিচ্ছি আমরা তোর খালামনি খালু ওরা তোকে কখনো কিছুতে বাধা দিবে না আর তাসিন ও তো আরো বাধা দিবে না। তোর যখন মন চাইবে চলে আসবি।
আচ্ছা মেঘা এখনি তুই এসব নিয়ে মন খারাপ করছিস কেনো বলতো। এখনো তো ১০ দিন দেরি আছে।
..আমার এখনি খারাপ লাগছে মা।
বাবা তখনি রুমে এসে বললো
..আমার মেঘা মায়ের কি জন্য খারাপ লাগছে? মায়ের পাশে বসতে বসতে বললো।
মা বাবাকে বললো সব। বাবা হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
..মেঘা এত তাড়াতাড়ি আমিও তোমার বিয়েটা দিতে চাইনি। তোমার খালু বললো তমা আর ইমরান এক মাসের বেশি থাকবে না তাই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চায়। ওদের দিকটাও তো দেখতে হবে। তমা তাসিনের একমাত্র বোন ওকে ছাড়া কিভাবে হবে।
মা বললো
..অনেক রাত হয়ে গিয়েছে মেঘা যা গিয়ে ঘুমিয়ে পর এখন।
বাবাও বললো
..হ্যা মেঘা মা যাও ঘুমিয়ে পড়ো বেশি রাত জাগা ভালো নয়।
আমি উঠে বাবা মা দুজনের গালে চুমু দিয়ে রুমে চলে আসলাম।

. ?

পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙলো ফোনের রিংটনে। আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো মানে চরম বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। ফোনটা রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম।
..ওই কেরে আমার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলি।
ওপাশ থেকে তাসিন হেসে বললো
..তোমার হাফ হাজবেন্ড গো মেঘাপাখি। ইসস এত সুন্দর করে ঘুম জড়ানো কন্ঠে কেউ কথা বলতে পারে আমার জানা ছিলো না। তোমার আর কি কি গুন আছে বলোতো যা আমি জানি না।
উনার কথা শুনে চোখ মেলে ভালো ভাবে তাকালাম ভ্রু কুঁচকে বললাম।
..আমার কোনো গুন নেই আপনি এত সকালে কেনো ফোন দিয়েছেন বলুন।
..কেনো হবু বউকে ফোন দিতে হলে সকাল বিকেল রাত লাগে নাকি যখন তখন দেওয়া যায়।
..তাই বলে এত সকালে আমার ঘুমটা ভাঙাবেন আপনি?
..তুমি তো সকালেই উঠো আজ এখনো ঘুমিয়ে ছিলে সেটা আমি বুঝবো কি করে।
..হয়েছে আসল কারনটা কি বলুন?
..কারনটা হলো ১০ টার মধ্য রেডি হয়ে থেকো শপিং এ যেতে হবে হাতে সময় নেই বেশি। আপু বলছিলো শপিং এর ঝামেলাটা আগে শেষ করবে।
..আজকেই শপিং করবো!
..না বিয়ের পরের দিন গিয়ে বিয়ের শপিং করো মাথা মোটা একটা। আজকে না গেলে সময় হবে না হাতে মাত্র ৯ দিন আছে দেখতে দেখতে চলে যাবে।
..আপনি আমাকে মাথামোটা বললেন! মুখ ফুলিয়ে বললাম।
..হায় আল্লাহ এই মেয়ে কি কিছুই বুঝে না। আচ্ছা সরি গো আমার ভুল হয়ে গিয়েছে আর বলবো না।
..হুম,শুনুন না তিশা যাবে না আমাদের সাথে?
..তুমি কি ভেবেছো আয়ান ওকে বলেনি, তুমি রেডি থেকো আমি গিয়ে নিয়ে আসবো তোমাকে তিশাও টাইমলি শপিং মলে পৌছে যাবে।
..ঠিকআছে রাখছি এখন।
..রাখছি মানে! সকালে যে সুইট মর্নিং দিতে হয় জানো না। ওটা দিয়ে তারপর রাখবে।
আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি উনি কি চাইছেন। আমি মজা করে বললাম
..সুইট মর্নিং দিয়ে কি করে খায় না মাথায় দেয়?
..মেঘা ফাজলামো কেনো করছো দাও না।
..ফাজলামো কেনো করবো বলুন না কি করে?
..কি করে তাইনা কাছে পাই তারপর বুঝাবো।
আমি আর কিছু বললে রেগে যেতে পারে তাই কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলাম।

?

#চলবে. . . ?