শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা পর্ব-২০

0
329

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২০)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

ফয়জান সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে আর ভাবছে আলো’কে বকে দিবে,সে কেন একা একা এই ভোরের নির্মল পরিবেশে আসে? ফয়জান কে কেন বলে না আসার জন্য?

খানিকটা অভিমান হয়েছে ফয়জান এর। ছাদে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে, ছাদের ঠিক মাঝবরাবর তার নয়ন’জোড়া আটকে যায়।স্থিথ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

আলো শরীরের ওরনাটা খুব সুন্দর করে শরীর ডেকে বেঁধে নিয়েছে। তারপর, খুব সুনিপূণ ভাবে ব্যায়াম করছে!

আলো’কে দেখতে যেমন শান্তশিষ্ট, সহজ-সরল মানুষ বলে মনে হয় সে ক্ষেত্রে এরকম ব্যায়াম করা সত্যিই একটু আশ্চার্যো’র
বিষয়।
যাই হোক ফয়জান দাঁড়িয়ে শুধু দেখে যাচ্ছে কিছু বলছে না। বিদেশে থাকা কালীন সকাল বেলা ব্যায়াম করতে করতে বহু দূর দৌড়ে চলে যেত ফয়জান।নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পুনরুদ্ধার হতে সাহায্য করে। হৃদ্ররোগ, সংবহন তন্ত্রের জটিলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা রোধে শারীরিক ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা রাখে।

কিন্তু দেশে ফিরে অলসতা প্রবল ভাবে গ্রাস করছে যেন। নামায পড়েই ঘুমিয়ে থাকে।

আলো এক পর্যায়ে হঠাৎ ফয়জান কে দেখে থেমে গেল। ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ফয়জান এর কাছে। এসে ওরনার আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে বললো,
-“আপনি!কখন এসেছেন এখানে?

ফয়জান আলোর কপালে লেপ্টে থাকা বেবি হেয়ার গুলো কানের পিছনে খুঁজ দিতে দিতে বললো,
-“কিছুক্ষণ আগে।

আলো মাথা নিচু করে বললো,
-“আচ্ছা।
-“হুম।তা ম্যাডাম একা একাই ব্যায়াম করতে চলে আসেন? আপনার স্বামী নামক মানুষটাকে সাথে করে নিয়ে আসলে কি হয় শুনি?

আলো জ্বীবে কামড় দিয়ে বললো,
-“সরি! আমার মাথায় আসেনি আপনার কথা।
-“এটা কোন কথা হলো? তোমার অস্তিত্ব কে তুমি ভুলে গেলে? আচ্ছা ঠিক আছে ব্যাপার না।চলো তোমার সাথে ব্যায়াম করবো?

আলো সম্মতি দিলে ফয়জান হেসে শুরু করে ব্যায়াম করা।
.
.
কায়েস মসজিদে নামায পড়ে, কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে বাসায় ফিরে। রুমে ঢুকে দেখে রামিসা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
কায়েস রুম থেকে শুনতে পায় রামিসা হাঁচি কাশি সমান তালে দিয়ে যাচ্ছে! কায়েস বেলকনিতে গিয়ে রামিসার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-“এতো ঠান্ডা বাধালে কখন?

রামিসা লজ্জায় মাথা নিচু করে বললো,
-“হঠাৎ করে রাতের বেলা শাওয়ার নেয়ার ফলে এরকম ঠান্ডা লেগে গেছে।

কায়েস কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বুঝলো ব্যাপারটা। আলতো হাতে রামিসা’র চুলে হাত রেখে বুঝতে পারলো এখনো অবধি চুল ভেজা আছে।তাই রামিসা কে বসিয়ে রেখে কাবার্ড খুলে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে খুব যত্ন করে ভেজা চুল গুলো শুকিয়ে দিতে শুরু করে কায়েস।

রামিসা পরম আদুরে নেত্রজোড়া বন্ধ করে নেয়। হঠাৎ মনে করে, আজকে এই স্থানে তো তার বোনের থাকার কথা ছিল।তার বোন তো এরকম সুখী হতে পারতো।

রামিসা বলে,
-“আচ্ছা ভাইয়া আপুই কে আপনি খুব মিস করেন তাই না?

এ কথা শুনে কায়েসের হাত থেমে গেল খানিকক্ষণ। তারপর আবার নিজের কাজ বহাল রেখে বললো,
-“না!

রামিসা চমকিত হয়ে কায়েসের দিকে ঘুরে বসে বললো,
-“কিভাবে সম্ভব ভাইয়া? আপনি তো আপুই কে ভালোবাসেন তাহলে?

কায়েস কিছুটা কঠোর গলায় বললো,
-“ভালোবাসি আর ভালোবাসতাম এর মধ্যে পার্থক্য বুঝ?

রামিসা মাথা নাড়িয়ে বললো,
-“জ্বি ভাইয়া।
-“আমি তোমার কে হ‌ই বলো?

রামিসা চুপ করে বসে রইল। কায়েস বললো কি হলো বলো?

রামিসা ছোট করে বললো,
-“স্বামী।
-“তাহলে ভাইয়া বলো কেন?

-“স্বামী আর ভাইয়ার মধ্যে বিরাট পার্থক্য।তাই ভাইয়া ডাকা নিষেধ।

রামিসা দুষ্টুমি করে বললো,
-“তাহলে নাম ধরে ডাকি?
-“না নাম নিয়েও ডাকা যাবে না।
-“কিন্তু কেন?
-”
স্বামী-স্ত্রী এক অপরকে সম্মান সূচক নাম ব্যবহার করে ডাকবে। বিশেষ করে স্ত্রী তার স্বামীকে সর্বক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শন করবে।পরিবারের মধ্যে যেহেতু স্বামীর মর্যাদা স্ত্রীর চেয়ে একটু উপরে তাই স্ত্রী কখনো তার স্বামীর নাম ধরে ডাকবে না। কেননা এতে বেয়দবী মূলক আচরণের বহির্প্রকাশ ঘটে।

এ সম্পর্কে ফাতাওয়া শামীতে বর্ণিত আছে। .
ছেলে কর্তৃক তার পিতাকে এবং স্ত্রী কর্তৃক তার স্বামীকে নাম ধরে ডাকা মাকরুহ।
ইবনে আবেদীন শামী রাহ উক্ত বক্তব্যর সুস্পষ্ট ব্যখ্যা প্রদান করে বলেনঃ-
বরং এমন শব্দের মাধ্যমে ডাকা একান্ত প্রয়োজন যা সম্মান বুঝাবে,

যেমনঃ- হে আমার সর্দার, অমুকের পিতা ইত্যাদি, অথবা সম্মানসূচক পেশার সাথে সংযুক্ত করে ডাকবে, যেমন,ইমাম সাহেব,ডাক্তার সাহেব ইত্যাদি)।
কেননা পিতা এবং স্বামী, তাদের উভয়ের হক্ব একটু বেশীই।
.
-“সরি ভাইয়া, আসলে আমি জানতাম না এ ব্যাপারে। তাছাড়া মজা করে বলেছি আমি কখনোই আপনার নাম নিতাম না।

কায়েস কপাল কুঁচকে বললো,
-“আবার ভাইয়া?

রামিসা কানে ধরে বললো,
-“সরি সরি আবারো মিস্টেক হয়ে গেছে।
-“আচ্ছা বাদ দাও এগুলো। এবার চলো কিছু খেয়ে মেডিসিন নিবে। না হয় ঠান্ডার কারণে কষ্ট পাবে।

তারপর কায়েস কিচেন থেকে শুকনো খাবার কেক,বিস্কুট নিয়ে এসে রামিসা কে খেতে বললো।রামিসা কেক কিছুটা মুখে পুরে বললো,
-“আপনিও খান।

কায়েস খেতে না চাইলে জোর করে খাইয়ে দিল রামিসা। তারপর খাওয়া শেষ হলে ডেসলর নামের একটা মেডিসিন খাইয়ে দিল রামিসা কে।

রামিসার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে তাই তাকে শুইয়ে দিয়ে ব্ল্যাঙ্কেট গায়ে জড়িয়ে দিল কায়েস।

এতে উষ্ণতায় বেশ আরাম বোধ করে ঘুমিয়ে পরলো রামিসা। কায়েস মুচকি হেসে বলে,
-“পিচ্চি একটা।
.
.
গতকাল রাতের কথা,
রামিসা কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দেয়,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,বান্দা যখন বিবাহ করল তখন তার দ্বীনদারী অর্ধেক পূর্ণ হয়ে গেল। অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে সে যেন আল্লাহকে ভয় করতে থাকে।
এছাড়াও বিবাহের দ্বারা মানুষ নিজেকে অনেক গুনাহের কাজ থেকে বাঁচাতে পারে। নেক আওলাদ হাসিল করতে পারে। আর নেক আওলাদ এমন এক সম্পদ যা মৃত্যুর পরে কঠিন অবস্থার উত্তরণে পরম সহযোগিতা করতে সক্ষম হয়। কারো যদি নেক সন্তান থাকে তাহলে তারা যত নেক আমল করবে, সেগুলো পিতা-মাতার আমলে যোগ দেয়া হবে। বিবাহ-শাদী যেহেতু শরীআতের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি ইবাদত, সেহেতু এর মধ্যে কোনভাবে গুনাহ এবং আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানীর কোন সংমিশ্রণ না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাছাড়া এতে বেপর্দা, নাচ-গান, অপব্যয়-অপচয়, ছবি তোলা, নাজায়িয দাবী-দাওয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে দুরে থাকতে হবে। নতুবা মুবারক বিবাহের সমস্ত বরকতই নষ্ট হয়ে যাবে এবং স্বামী-স্ত্রী দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি সূচনাতেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

এতটুকু বলার পর কায়েস বলে এর মানে বুঝতে পেরেছো?রামিসা বলে কিছু কিছু।
কায়েস তখন বলে,
-” আমি এবং তুমি দু’জনেই এখন স্বামী স্ত্রী।আর তাই আমাদের কারোরই উচিৎ নয় পর-পুরুষ বা পর-নারীর দিকে নজর দেওয়া। অবশ্য এটা কখনোই উচিৎ নয়।যাই হোক যেটা বলছিলাম,
আমি যদি স্ত্রী ব্যাতিত অন্য নারীকে নিয়ে মত্ত থাকি বা মনে মনে তাকে কল্পনা জল্পনা করি তাহলে আমার অন্তর কুলসিত হবে। এতে আমার ঈমান নষ্ট হবে।
তাই আমাদের উচিৎ এই দুনিয়ার মোহে আকৃষ্ট হয়ে না পড়ে,পরকালের চিন্তা করে হলেও নিজেদের সম্পর্কটা ঠিক করে নেওয়া!

রামিসা অবাক চাহনিতে তাকিয়ে বললো,
-“আপুকে ভুলে যেতে পারবেন আপনি?
-“আমার আল্লাহ তা’আলার জন্য আমি সবকিছু করতে পারবো। হয়তো তোমাকে বিয়ে না করলে অন্য ব্যাপার ছিল কিন্তু এখন আমি আমার দায়িত্ব পালন থেকে এভাবে গুটিয়ে থাকতে পারি না। এতে আমার আল্লাহ আমার উপর নারাজ হবেন।
-“আচ্ছা বুঝলাম, শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলার ভয়ে..
-“এখন এতটুকুই জেনে রাখ। মানুষের মন পরিবর্তনশীল কখন কি হয় তারা নিজেরাই বুঝতে পারে না।

রামিসা মাথা নাড়িয়ে বলে,
-“আচ্ছা।

তারপর তারা বাসায় ফিরে আসে,রাত বেড়ে যাচ্ছে তাই।
এবং স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রথম আহ্বান জানায় কায়েস!
যত‌ই হোক স্বামীর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার সাধ্য রামিসার নেই।
হয়তো এভাবেই তাদের পবিত্র বন্ধন জোড়ালো হয়ে উঠবে একদিন ইনশা আল্লাহ।
.
.
বেলা এগারোটা বেজে পাঁচ মিনিট,
কায়েস আর তায়েস নিজেদের কর্মক্ষেত্রে চলে গেছে।রামিসা আজকে কলেজে যায়নি, বাসায় ই আছে।
আয়েশা রান্নার তদারকি করছে আর রিনু আপা সাহায্য করছে।রামিসা কে কাজ করতে দেয় না বলে সে বসে বসে ম্যাগাজিন পড়ছেন।
এরমধ্যে কলিং বেল বেজে উঠল,
রিনু গিয়ে দরজা খুলে দিল। একটা মেয়ে হাসি দিয়ে বললো এটা নিশ্চ‌ই এস আই তায়েস মাহমুদ এর বাসা?

রিনু তখন কপাল কুঁচকে বললো,
-“হয়।তয় আন্নে কেডা?…..

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।