শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা পর্ব-৩৫

0
357

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(৩৫)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

একজন নার্স দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন। কোলে নবজাতক শিশুকে নিয়ে এলেন। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল বেবি কে দেখার জন্য, কোলে নেওয়ার জন্য। কিন্তু নার্স বললেন তিনি বকশিশ ছাড়া বেবি কে দিবেন না।
মেয়েরা দুশ্চিন্তার কারণে হাতে করে টাকা পয়সা কিছুই নিয়ে আসে নাই।তাই অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নার্সের দিকে।নূর বলেই বসলো টাকা তো নেই! আপনি এখন বেবি কে দিন,আমরা পরে দিয়ে দিব।
নার্স বললেন,
-” উঁহু তা তো হবে না!বাকির নাম ফাঁকি! এখন আমি বাচ্চা আপনাদের হাতে তুলে দেই পরে আপনারা আমার বকশিশ দিতে ভুলে যাবেন,তা আর হচ্ছে না।

তারপর,
তায়েস আর ফয়জান দু’জনেই টাকা বের করে দিল নার্স’কে।নার্সের টাকা দেখে তার চক্ষু চকচক করছে। বেবি কে ফাইজার হাতে দিয়ে তিনি টাকা নিয়ে চলে গেলেন।
ফাইজা খুব সাবধানতা অবলম্বন করে বেবি কে কোলে তুলে নিয়েছে। বেবির ছোট্ট তুলতুলে নরম হাতটা খুব সন্তর্পণে ধরে ফাইজা।যেন তার শক্ত হাতের ছোঁয়ায় বেবি ব্যথা না পায়।ফাইজা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,পর্যবেক্ষন করে মনে মনে সুধালো বেবির ঘ্রাণেন্দ্রিয় তার বাবার মতো হয়েছে। কপালের দিকটায় মায়ের মতো।

নূর বললো,
-” আপু এবার আমার কাছে দিন না?
-” আচ্ছা নাও?
-” দারাও আমি বসে নেই, না হয় ভয় করে আমার এত্ত ছোট্ট শরীর।

নূর বসলে ফাইজা তার কোলে তুলে দেয় বেবি কে।নূর বেবির হাত সরিয়ে বললো,
-” ওলে বাবা রে তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেন?ব্যথা পাবে তো নাকি?

বেবি তার হাত দিয়ে নাক, মুখে খামচে দিচ্ছে যার ফলে লাল রঙা হয়ে যাচ্ছে মুখশ্রী।
আয়েশা আর ফাহমিদা খাতুন বললেন,
-” আচ্ছা ছেলে নাকি মেয়ে হলো সেটাই তো জানা হলো না।

এই বলে ফাহমিদা খাতুন বেবির শরীরে জরিয়ে রাখা তা‌ওয়েল সরিয়ে দেখতে নিলে নূর বললো,
-” ছোট মা আপনি তো বেবির সম্মান নিয়ে টানাটানি করছেন হা হা হা…

ফাহমিদা খাতুন বললেন,
-” আরে বউ জানতে হবে তো আমাদের নাতি নাকি নাতনি হলো?

আয়েশা বললেন,
-” তাই তো নার্স কে জিজ্ঞাসা করলাম সেও কিছু বললো না। ফাহমিদা দেখ তুমি?

তারপর,
দুই নানু,দাদু দেখে বললেন,
-” আমাদের নাতি হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
.
কায়েস দাঁড়িয়ে আছে ওটির দরজার কাছে, তার মনে খুব দুশ্চিন্তা। এখনো রামিসা কে বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে না কেন?সে জন্য।
ওটির সামনে কোন নার্স নেই যে জিজ্ঞাসা করবে।
এদিকে সবাই বেবি কে নিয়েই ব্যস্ত কারো রামিসার কথা মনে নেই।তায়েস নূরের পাশে বসে বেবি কে আদর করছে তখন ফাহমিদা খাতুন বললেন, বেবির কানে আযান দিতে। তারপর তায়েস আযান দেয়।
ফয়জান কলে আলোর সাথে কথা বলছে।আলো খবর শুনে আলহামদুলিল্লাহ বলে জিজ্ঞাসা করলো রামিসা কেমন আছে?
এ কথা শুনে ফয়জান এর টনক নড়ে,যে রামিসার কথা তো জানা হলো না এখনো।কল কেটে দ্রত ওটির সামনে এসে দেখলো কায়েস চিন্তিত মুখে ওটির দিকে তাকিয়ে আছে। ফয়জান তেজ’হীন কন্ঠে বললো,
-” রামিসার কোন খবর পাওয়া যায় নাই কায়েস?

কায়েস মনমরা হয়ে মাথা নাড়িয়ে বোঝালো “না”। তখন ফয়জান ও চিন্তায় পড়ে গেল।
আয়েশা এসে বললেন,
-” কিরে কায়েস ছেলের মুখ দেখলি না যে এখন পর্যন্ত?আয় দেখে যা একদম তোর মতো হয়েছে দেখতে!
-” মা রামিসা কে এখনো কেবিনে আনা হচ্ছে না কেন?আর কতো সময় লাগবে?

এখন আয়েশার ও রামিসার কথা স্মরণ হলো, সচকিত হয়ে উঠলেন তিনি।এর মধ্যে ওটির দরজা খুলে একজন নার্স বেরিয়ে বললেন,
-” সবাই সরে দাঁড়ান রোগীকে কেবিনে নেওয়া হবে।

কায়েস দ্রত এসে জিজ্ঞাসা করলো,রামিসা কেমন আছে? নার্স জবাবে বললেন, ভালো আছে এখনি দেখতে পাবেন। কায়েসের স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বলে আলহামদুলিল্লাহ।
.
রামিসা কে কেবিনে নিয়ে আসা হলে কায়েস পাশে টুল টেনে বসে রামিসার মাথায় বুলিয়ে বলে,
-” অনেক কষ্ট হয়েছে তাই না?

রামিসা শরীর নাড়াচাড়া করতে পারে না। তবুও ঠোঁটে হালকা হাসি ঝুলিয়ে বলে,
-” একটু একটু।

কায়েস রামিসার হাত টেনে নিয়ে চু’মু খায়।রামিসা অস্পষ্ট স্বরে বললো,
-” বেবি কার মতো হয়েছে দেখতে?
-” মা বললো, আমার মতো।
-” আপনি দেখেননি?
-” না!
-” কেন?
-” তোমার জন্য দুশ্চিন্তা করে ইচ্ছে হয়নি দেখার।
-” খুব খারাপ করেছেন আপনি।যান এখনি কোলে নিয়ে আদর করুন ওরে।
-” আমার ভয় লাগে কোলে নিতে,যদি বাই এনি চান্স ফেলি দেই!
-” কিছু হবে না ইনশা আল্লাহ।

তারপর কায়েস বেবির কাছে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে কোলে তুলে নিল বেবি কে। কায়েস এর মনে হচ্ছে তার শক্ত শরীরের ছোঁয়ায় বেবি বোধহয় ব্যথা পাচ্ছে। এতো নরম শরীর,লাল র’ক্ত গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
তারপর ধীরে ধীরে রামিসার কাছে নিয়ে এসে ওর পাশে শুইয়ে দিয়ে।রামিসা মুচকি হেসে তাকায় বেবির পানে।সদ্য মা ছেলের এই মুহূর্তটা ক্যামেরা বন্দি করে নূর। সাথে আলোর ফোনে সেন্ড করে দিল।
সবাই খুব খুশি নতুন অতিথি কে পেয়ে।

তারপর,
কায়েস, আয়েশা আর ফাহমিদা খাতুন হসপিটালে রয়ে গেলেন রামিসার পাশে।আর বাকিরা সবাই বাসায় ফিরে এলো।
ফয়জান বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে বের হতেই আলো প্রশ্নের জুড়ি নিয়ে বসে। কতো সত প্রশ্ন তার‌।বেবি হাসছে কিনা? ফয়জান এর দিকে তাকায়ছে কিনা?আরো কতো কি।
ফয়জান বলে,
-” আচ্ছা ম্যাডাম আপনি সারা দিন খেয়েছেন তো নাকি? না দুশ্চিন্তা করে না খেয়ে বসে ছিলেন? তেমন হলে কিন্তু আপনার শা’স্তি আছে!
-” খেয়েছি বাট ভালো করে খেতে পারিনি, কেমন যেন দুশ্চিন্তায় খাবার খাওয়ার রুচি ছিল না।
-” এমন করলে সব? আমাদের বেবি ও খাবে তোমার সাথে সাথে।

তারপর আলোর উঁচু পেটের কাছে গিয়ে বললো,
-” বেবি তোমার মামনি খুব পঁচা তাই না? তোমাকে না খাইয়ে রেখেছে।
নিজের অধর দুটো ছুয়ে দেয় পেটে।আলো মুচকি হাসে।
.
.
দেড় মাস পর,
রামিসা এখন সুস্থ প্রায়।বেবির দেখাশোনা পরিবারের সবাই মিলে করে তাই রামিসার কষ্ট হয় না।আর কায়েসের কথা কি বলবো?সে তো তার ছেলেকে ছাড়া এক মূহূর্ত‌ও ভাবতে পারে না। তখন রামিসা পিঞ্চ করে বলে,ও আমার ছেলে! কায়েস তখন বাঁকা হেসে বলে,
-” এখন মুখ খুললে আপনি নিজেই লজ্জাবতী গাছ হয়ে যাবেন ম্যাডাম!

এ কথা শুনেই রুম থেকে প্রস্থান করে রামিসা। কায়েস হেসে তার ছেলের সাথে কথা বলে।
.
.
আজকে বহুদিন পর,
শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখতে পায় রামিসা! সকাল বেলা কতো সুন্দর ছিল,আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখে রামিসার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। বেলকনির রশিতে দেওয়া বেবির কাপড় গুলো নিয়ে রুমে চলে এলো রামিসা।এসে মনমরা হয়ে গুছিয়ে রাখছে। কায়েস ব্যাপারটা খেয়াল করে বললো,
-” হঠাৎ ম্যাডাম এর মুখশ্রী জুরে মেঘের আনাগোনা কেন?
-” কেন জানি না হঠাৎ শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখে মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেছে! ভালো লাগছে না কিছুই।

কায়েস রামিসার কাছে এসে দাঁড়িয়ে তার মাথা নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে বললো,
-” মন খারাপ করে না আল্লাহ ভরসা।

রামিসা শান্তির স্থান পেয়ে আদুরে চোখ বুজে আল্লাহ তা’আলার কে স্মরন করে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর বেবি চিৎকার করে কান্না শুরু করে দেয়। বিচলিত হয়ে রামিসা দৌড়ে গিয়ে কোলে তুলে নিল ছেলেকে।আদর করে বলে,
-” আমার”রাদ শাহমাত” এর কি হয়েছে?ভয় পেয়েছে সে?

ছোট্ট “রাদ শাহমাত” মাকে পেয়ে ঠোঁট উল্টে আরো জোরে কেঁদে ওঠে। কায়েস পাশে বসে বলে,
-” আমার বাবাটাকে তার আম্মু মেরেছে তাই না বাবা?

এ কথা শুনে চোখ দুটো কিঞ্চিত ছোট করে তাকায় রামিস। এতে করে হাসতে থাকে কায়েস।
.
.
রাত দশটা বেজে পনেরো মিনিট,
একদিকে খুশির সংবাদ অন্যদিকে দুটো পরিবারে হাহা’কারে ছেয়ে গেছে! সেখানে খুশির সংবাদ চাঁপা পরে দুঃসংবা’দ টাই বড় হয়ে গেল!….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।