শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা পর্ব-২১+২২

0
361

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২১)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

আগুন্তক মেয়েটি মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
-“আমি নূর‌আইন বিনতে রাকিব।

রিনু একটু মনে করার চেষ্টা করে বললো,
-“ভালা নাম আন্নের কিন্তু আন্নেরে তো চিনবার পারলাম না শড়ি আন্নে আসেন এবার!

নূর দ্রত পায়ে ভিতরে ঢুকে বললো,
-“আপনি চিনবেন না কিন্তু এবাসার বাকি সদস্যরা নিশ্চ‌ই চিনবে আপনি ডাকুন কাউকে?

রামিসা এগিয়ে এসে বললো,
-“কে আপনি?
-“আসলে আমি এস.আই.তায়েস মাহমুদ উনার পরিচিত!

এ কথা শুনে রামিসা বিনয়ি স্বরে বললো,
-“আচ্ছা আচ্ছা ভিতরে আসুন?
-“জ্বি, ধন্যবাদ।

রামিসা নূর কে ভিতরে নিয়ে এসে ড্রয়িং রুমে বসালো।রিনু শরবত তৈরি করে দিতে বলে নিজেও বসলো মুখমুখি সোফায়।

কিছুক্ষণ নিরবতা শেষে নূর বললো,
-“তায়েস মাহমুদ উনি আপনার কি হয়?

রামিসা মজা করে বললো,
-“জেঠাতো দেবর!

নূর একটু ভাবলো এর মানে কি? ভেবে যখন উত্তর না পায়না তখন বললো,
-“সরি জেঠাতো দেবর মানে বুঝলাম না?

রামিসা ঠোঁটে হালকা হাসি ঝুলিয়ে বললো,
-“উনি আমার দেবর হন।

নূর একটু কৌতূহল নিয়ে বললো,
-“তাহলে যে জেঠাতো দেবর বললেন?
-“আসলে আমার হাসবেন্ড প্রথমে আমার জেঠাতো ভাই তারপর হাসবেন্ড।
-“ওয়াও ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তাহলে!
-“না না ইন্টারেস্টিং কোন ব্যাপার নেই।

রিনু শরবত নিয়ে আসলে রামিসা শরবত এগিয়ে দিল নূর কে। সাথে আয়েশা আসলো। জিজ্ঞাসা করলো কে তুমি মা? তোমাকে ঠিক চিনতে পারলাম না?

নূর দাঁড়িয়ে সালাম দিল। আয়েশা ব্যস্ত হয়ে বললো,বসো বসো দাঁড়িয়ে পরলে কেন?

নূর হাসি দিয়ে বললো,
-“আপনিও বসেন আন্টি।

আয়েশা বসলে নূর তার পরিচয় দিয়ে বললো,
-“আমার বাবাকে চিনতে পারেন কিনা জানিনা, আমি ইন্সপেক্টর রাকিব হাওলাদার এর মেয়ে নূর‌আইন বিনতে রাকিব।

আয়েশা একটু ভেবে বললো,
-” ওহ আচ্ছা তায়েসের স্যার রাকিব হাওলাদার এর কথা বলছো?
-“জ্বি,আন্টি।
আসলে কক্সবাজার তায়েস মাহমুদ উনার সাথে পরিচয় হয় আমার। উনার সাথে পরিচয় হ‌ওয়ার পর আমার খুব ইচ্ছে হলো আপনাদের সাথে দেখা করার সে জন্যই চলে এসেছি। কিছু মনে করবেন না তো? এভাবে হুট করে চলে..

আয়েশা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,
-“আরে না না কি বলো? তুমি এসেছো আমি ভিশন খুশি হয়েছি।

নূর এর কথায় রামিসা কপাল কুঁচকে মনে মনে ভাবলো, এমনিতেই কি দেখা করতে এসেছে নাকি কোন ব্যাপার আছে? সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রামিসা।

আর আয়েশা গল্প জুড়ে দিলো নূরের সাথে। দুজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ডিং তৈরি হয়ে গেল এর মধ্যেই।
দুজনের এমন নিবিড় কথাবার্তা দেখে বললো,
রামিসা কিচেনে গেল রান্না দেখার জন্য। সাথে রিনু আসলো। অল্পের জন্য তরকারি পুরে যায়নি,রামিসা এসে পানি দিয়ে নেড়ে দিল।
রিনু বললো,
-“ছোড ভাবী আন্নে কিছু বোঝবার পারছেন?

রামিসা কড়াইর দিকে নজর রেখে বললো,
-“কি বুঝবো রিনু আপা?
-“ঐ মাইয়ার বেপার টা!ছোড ভাইজান এর লগে কোন রকম সম্পর্ক আছে মনে অইতাছে!

রামিসা চুপ করে থেকে ভাবলো, হতে পারে অসম্ভবের কিছু নয়।আর রিনু কে বললো,
-“রিনু আপা তাহলে তো ভালই হবে তোমার নতুন ছোট ভাবী আসবে বাসায়। আমাকে তো আর তুমি পছন্দ করো না, এখন উনাকে পেয়ে তুমি নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে?

রিনু এ কথা শুনে চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেললো!রামিসা বরকে গেল রিনুর এহেন কান্ড দেখে।
রিনু বললো,
-“ছোড আফা আন্নে এই কতা ক‌ইতে পারলেন আমারে? আমি কি আন্নেরে ক‌ইছি আন্নেরে আমার ভাল্লা’গে না?
-“আমি বুঝতে পারি রিনু আপা। মুখে বলতে হয় না।

রিনু চোখের পানি ফেলে বললো,
-” আফা আমারে ভুল বুঝবেন না পিলিজ।এডা হক কতা পতথম পতথম আন্নেরে ভালা পাইতাম না কিন্তু বিশশাস করেন অনে আন্নেরে আমার মেলা ভাল্লা’গে।
-“কেন ভালো লাগে শুনি?
-“আন্নে আমার বড় ভাইজানের ব‌উ।হেল লাইগা।
-“অহ আচ্ছা সব ক্রেডিট তাহলে তোমার বড় ভাইজানের?তার ব‌উ হ‌ওয়ার সুবাদে আমাকে ভালো লাগে?
-“হ”।

এবার দুজনেই হাসলো।
তখন আয়েশা এসে ফিসফিস করে বললেন,রামিসা রিনু মেয়েটাকে তোদের কেমন মনে হলো?

দু’জনেই বিষ্ময় নিয়ে বললো,
-“কেমন মনে হয় মানে?
-“মানে বিয়ের পাত্রী হিসেবে কেমন মনে হয়?

রামিসা ভালো করে কনফার্ম হতে বললো,
-“কার জন্য বড় মা?
-” আমাদের তায়েসের জন্য! আমার মনে হয় তায়েসের সাথে মেয়েটির যোগাযোগ আছে! তোদের পছন্দ হলে আমি বিয়ের কথা আগাবো।

রামিসা একটু ভেবে বললো,
-“ভালোই হবে বড় মা। মেয়েটা দেখতে শুনতে স্মার্ট আছে।তায়েস ভাইয়ার সাথে বেশ মানাবে।

আয়েশা উৎসাহ ভরা কন্ঠে বললেন,
-“আমারো তাই মনে হচ্ছে।ইশ কি আনন্দ লাগছে তুই আসার সাথে সাথে এখন ছোট ব‌উ ও বাড়িতে আসতে চলেছে।

রামিসা মনে করিয়ে দিতে বললো,
-“কি বলছো বড় মা? আমি তো আরো কত মাস পূর্বে আসলাম তোমার ছেলের বউ হয়ে। সাথে সাথে কোথায় হলো?
-“আরে এক‌ই হলো। দেখি রান্নার কতটা বাকি? মেয়েটাকে তো না খাইয়ে ছাড়তে পারি না। তুই বরং মেয়েটার সাথে কথা বল গিয়ে। আমি ফাহমিদা কে খবর দিয়েছি ও এক্ষুনি চলে আসবে।

রামিসা অবাক হয়ে বললো,
-“এখানে মা এসে কি করবে?
-“আরে ওর মেয়ে পছন্দ হতে হবে না?পরে আবার শুনলে রাগ করে বসে থাকবে।
-“ওহ আচ্ছা।

রামিসা চলে গেল নূরের কাছে।আর রিনু বললো,
-“খালাম্মা আমি কিন্তু আগেই জানতাম!

আয়েশা চোখ দুটো খানিকটা ছোট করে বললো,
-“কি জানতি?
-“এই যে ছোড ভাইজান এর লগে এই আফার সম্পর্ক আছে!
-“তো আগে বললি না কেন?
-“আইজ ই তো জানলাম।
-“হ‌ইছে এখন মন দিয়ে কাজ কর
.
.
আলো আজকে খুব আনন্দে আছে। বেশি পড়ার চাপ নেই তবে পরীক্ষার জন্য দুশ্চিন্তা আছে। ফয়জান কলেজে গিয়েছে।
শ্বাশুড়ি মা একটু আগে রামিসা’দের বাসায় গেল।
এখন সে আর তার শ্বশুর মশাই বাসায়।একা লাগছে বলে শ্বশুরের সাথে গল্প করতে বসেছে। সাথে নিয়েছে ছুলা বুট।কুরকুরিয়ে খাচ্ছে আর গল্প করছে।

ফোনে কল আসলে আলো দৌড়ে রুমে এসে কল রিসিভ করে। ফয়জান কল করেছে।
আলো রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললো,
-“কলেজে ঠিক মতো পৌঁছেছেন?
-“এখন আমি কল করাতে জিজ্ঞাসা করছো?নিজে থেকে তো কল করে জিজ্ঞাসা করলে না একবারো?

আলো ঠোঁট কামড়ে বললো,
-“সরি খেয়াল ছিল না।কি করছেন এখন?
-“এইতো একটা ক্লাস শেষ করে অফিসে এসে বসলাম। তুমি কি করছিলে?
-“আমি বাবার সাথে গল্প করছিলাম।
-“মা কোথায়?
-“রামিসা দের বাসায় গিয়েছে।
-“হঠাৎ ঐ বাসায়?
-“বড় মা জরুরি তলব করেছেন সে জন্য।
-“ওহ্ আচ্ছা। তাহলে গল্প কর আমি রাখছি এখন।
-“আচ্ছা।
আল্লাহ হাফেজ….

আলো একটু টেনে বললো “আল্লাহ হাফেজ”।যা শুনে মুচকি হেসে ফয়জান ও টেনে বললো,”আল্লাহ হাফেজ”…
.
.
কলেজে শেষে বাসায় ফিরে খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ফয়জান বাহিরে বের হয়। আলো জিজ্ঞাসা করলে বলে কিছু কাজ আছে তাই যাচ্ছে।তাই আলো আর কিছু বলে না, পড়তে বসে।

তারপর,
মাগরিব এর পূর্বে বাসায় ফিরে ফয়জান। হাতে এত্ত এত্ত শপিং ব্যাগ দেখে অবাক হয় আলো। তবে মুখে কিছু বলে না।

ফয়জান একে একে তার মা বাবার হাতে একটা করে ব্যাগ দিয়ে বললো,
-“এটা তোমার জন্য দেখো পছন্দ হয় কিনা?

তারপর আরো ছয়টি ব্যাগ দিয়ে বললো, এখানে ফাইজা আর রামিসা এবং রামিসার শ্বশুরবাড়ির জন্য।

আর বাকি অনেক গুলো ব্যাগ আলোর হাতে দিয়ে বললো,
-“এগুলো সব তোমার!

চক্ষু বিস্ফোরিত করে তাকায় আলো, এতো গুলো ব্যাগ? নিশ্চয়ই অনেক কিছু আছে।আর এগুলো নাকি সব তার?

ফাহমিদা খাতুন হেসে বললো,
-“খুলে দেখ ব‌উ ? আমার ছেলের পছন্দ তোমার সাথে মিলে কিনা।

বিয়ের পর এই প্রথম ফয়জান আলোকে কিছু দিলো। এতো দিন কিছুই দেয়নি। শুধু কায়েস এর বিয়ে উপলক্ষে ফাহমিদা আর আয়েশা সাড়ি, থ্রিপিস কয়েকটা কিনে দিয়েছে এই যা।

ফয়জান এতো দিন বেতন এর টাকা সংসারে খরছ করে কয়েক হাজার করে জমিয়েছিল।যেন আলোর সাথে সাথে পরিবারের সকলের জন্য শপিং করতে পারে।
.
.
ফাইজা পেন্সিল, রাবার নিয়ে সাদা কাগজে আঁকিবুঁকি করছে। গত এক দেড় বছর এটাই তার একমাত্র লক্ষ্য। কিভাবে ঐ হাতের ট্যাটু আঁকা যায়!…

#চলবে…ইনশা আল্লাহ।

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২২)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

ফাইজা পেন্সিল, রাবার নিয়ে সাদা কাগজে আঁকিবুঁকি করছে। গত এক দেড় বছর এটাই তার একমাত্র লক্ষ্য। কিভাবে ঐ হাতের ট্যাটু আঁকা যায়!

কিছুটা ঝাঁপসা হয়ে গেছে এতো দিনে। তবে সামনে থেকে দেখলে সে ঠিক চিনে নিতে পারবে।

আজকাল কেমন উদাস মনে বসে থাকে সে। পৃথিবীটা কেমন অসহ্য লাগে তার কাছে। মনে হয় এর থেকে বুঝি মৃ’ত্যুই শ্রেয়।
কিন্তু আবার ভয়ে ভীত হয়। মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে দাঁড়ানোর ভয়।তার দরবারে আমল নিয়ে দাঁড়ানোর ভয়।সেকি আমল জমা করতে পেরেছে? পারেনি তো!সে তো একজন পা’পী বান্দা আল্লাহ তা’আলার। আল্লাহ তা’আলা কি তার গুনাহ গুলো মাফ করবেন?

তখন কোরআন এর আয়াতের কথা মনে পরে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
তবে একটা ব্যাপার আছে, পূর্বের গুনাহের জন্য সর্বদা ত‌ওবা করে আল্লাহ তা’আলার পথে ফিরে আসতে হবে। পূর্বের গুনাহ পুনরায় করা যাবে না।

ফাইজা ঠিক করেছে তার চাওয়া পূর্ণ হয়ে গেলে সে আর কোন গুনাহ তে লিপ্ত হবে না ইনশা আল্লাহ। কিন্তু ততদিন?
.
.
আলো ব্যাগ থেকে সমস্ত জিনিস পত্র বিছানায় খুলে রাখলো। এতো কিছু দেখে তার চক্ষু চরক গাছ !

একটা সাড়ি হাতে নিয়ে দেখছে ভিশন সুন্দর শাড়িটা। গারো সবুজ রঙের জামদানি শাড়ি টা। সবুজ রঙ আলো’র ভিশন পছন্দ। ফয়জান কি করে জানলো তার সবুজ রঙ পছন্দ?সে তো কখনো বলেনি। তাহলে?

ফয়জান নিজ থেকেই বললো,
-“আমি খেয়াল করেছি তুমি সবুজ রঙটা বেশি ইউজ করো।যেমন, তোমার থ্রিপিস সবুজ, গলায় সবুজ রঙের লকেট,কানে ইয়ারিং পরে আছ, তোমার ব্রাশ সবুজ, তোমার হেয়ার ব্রাশ সবুজ, হেয়ার ফ্রান্স ক্লিপ সবুজ।
তাই এখানের বেশিরভাগ জিনিস সবুজ রঙের এনেছি। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তো সাদা রঙ প্রিয় ছিল।আর সাদা পোশাক পরিধান করা সুন্নাত।তো এই সবুজ রঙের রহস্য কি?

আলো বললো,
-“রাসূলুল্লাহ সাঃ কোনো এক কালারকে যে পছন্দ করেছেন এবং পড়েছেন। বিষয়টা এমন নয় বরং হরেক রকম কালার,যেমন সবুজ,সাদা,কালো,লাল,ইত্যাদি অনেক রকমের কালারকে পরিধান করেছেন।কোনো একটি কালারকে নির্দিষ্ট করে সুন্নত বলা যাবে না।বরং হাদীসে যতগুলো কালারের আলোচনা এসেছে,সবগুলোই সুন্নত।এবং এগুলো সুন্নতে যায়েদা।যার উপর কোনো সওয়াব ধর্তব্য নেই।হ্যা অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নতের অনুসরণ হবে।
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
-“আচ্ছা। তোমার পছন্দের রং অনুযায়ী তোমার বৈশিষ্ট কি জানো?
-“জ্বি না।
-“সবুজ💚
তারা খুব অল্পতেই খুশি হন। নিজের কাজের সামান্যতম স্বীকৃতি পেলেই অনেক আনন্দ পান।
আচ্ছা এবার বলো পছন্দ হয়েছে কিনা?

আলো’র আঁখিপল্লব দুটো পানিতে ডুবে আছে। হয়তো যেকোন সময় গড়িয়ে পরবে! দুই বছর আগেও সে এরকম ভাবেই শপিং করতো। তবে সেটা নিজে পছন্দ করে। এরকম কতশত জিনিস পত্র কিনতো যেগুলা ব্যাবহার করার ও সময় পেত না। কেননা কোনটা রেখে কোনটা ব্যাবহার করবে? বেশিরভাগ জিনিস পত্র ই অবহেলায় পড়ে থাকতো কাবার্ডে।
মাঝে মাঝে ফ্রেন্ডরা কোন জিনিস তাদের ভালো লেগেছে বললেই হতো,আলো’র ঐ জিনিষটা তার ফ্রেন্ডদের দিতে সময় লাগতো না।

ছোট বেলা থেকেই খুব উদার মনের অধিকারী আলো।অন্যের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে অন্য কে সাহায্য করার আর সে জন্যই আজকে সে এই স্থানে। না হয় তার স্থান আজ রাজকীয় হালে থাকতো।

আলো ছোট্ট করে ফয়জান কে বললো,
-“খুব সুন্দর হয়েছে।

ফয়জান আলোর হাত দুটো ধরে বললো,
-“আচ্ছা এতেও কি তুমি খুশি হ‌ওনি আলো? সবসময় এরকম গোমড়া মুখে কাঠিন্য ভাব ফুটিয়ে থাক কেন?মন খুলে হাসতে পারো না?
-“আমার হাসি গুলোকে মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি সেই কবেই!তাই এখন আর হাসতে পারি না আমি।

আলোর এমন অদ্ভুত কথা শুনে, ফয়জান আলোর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তুমি কাঁদছো আলো? কিন্তু কেন?আর হাসি বিসর্জন দিয়েছো মানে কি?

আলো হাত ছাড়িয়ে ছড়িয়ে থাকা জিনিস পত্র গুলো ব্যাগে গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললো,
-“সেসব কথা বাদ দিন।আগে আপনি বলুন
এতো গুলো টাকা খরচ করার কি দরকার ছিল বলুন তো? শুধু শুধু এতো গুলো টাকা খরচ করেছেন। আমার এতো কিছুর প্রয়োজন ছিল না।
-“এই প্রথম ই তো কিছু দিলাম তোমাকে।তাও বলছো শুধু শুধু টাকা খরচ করেছি?

আলো কাবার্ডে ব্যাগ গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললো,
-“আমার জন্য আপনি এবং আপনার পরিবারের লোকজন ই আল্লাহ তা’আলার দেওয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আমার জন্য।তাই এর বেশি কিছু আমার চাই না বুঝলেন?
আচ্ছা সে সব কথা বাদ দিন। একটা প্রশ্ন সমস্যা খুঁজে পেলাম একটু সমাধান করে দিন?
-“আচ্ছা দেখাও কি সমস্যা?
.
.
এক সপ্তাহ পর।
আজ শুক্রবার দিন সবাই বাসায় আছে।
আয়েশা দুই পরিবারের সাথে পরামর্শ করে। রাকিব হাওলাদার এবং তার স্ত্রীর সাথে কথা বলে সব ঠিক করেছেন দুদিন আগে।

আজকে তায়েস কে নিয়ে পাকা দেখা করে, নূর আর তায়েসের আংটি বদলের কাজটা সেরে ফেলবেন। সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক করছেন। তবে তায়েস কে সারপ্রাইজ দিবেন বলে জানানো হয়নি তাকে!

আর বাদবাকি সবাই এ সম্পর্কে অবগত আছেন। দুই পরিবার যখন তৈরি হয়ে গাড়িতে চড়ে বসে তখন আড়চোখে তাকায় তায়েস।তার মনে প্রশ্ন জাগে এরা সবাই মিলে যাচ্ছে কোথায়?তাকে লোকেশন বলছে ও না।

শেষে যখন তার বস এর বাসার সামনে গাড়ি এসে থামে তখন।বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তায়েস। সবাই বাসার ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে অথচ তার কোন হেলদোল নেই।সে এখনো অবধি বিষ্ময় ভাব কাটিয়ে উঠতে পারছে না।কেউ কিছু বলছে ও না। কি এক অবস্থা?

আয়েশা শেষে টেনে নিয়ে গেল তাকে।
তাদের জন্য খুব রাজকীয় আয়োজন করা হয়েছে। এক পর্যায়ে আয়েশা বললো,
-“আপা মেয়েকে নিয়ে আসেন?

তহুরা বেগম সম্মতি দিয়ে শাড়ি পরিহিত এক মেয়েকে নিয়ে আসেন।যে কিনা বড় করে ঘুমটা এঁটে বসে আছে। ফাহমিদা খাতুন বললেন মা ঘুমটা টা তুলো?আমরা দেখে চোখ জুড়িয়ে নেই।

তায়েস বসে বসে সবকিছু হজম করছে।এর মধ্যে তার ভিতরে সন্দেহের বিজ বপন হতে শুরু করেছে। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না এখানের সন্ধান তার এই বি’চ্ছু পরিবার কিভাবে পেল?

বস সামনে থাকায় কিছু বলতেও পারছে না।

নূরের ঘুমটা খানিকটা সরিয়ে দিল তার মা। ছেলেরা অন্য দিকটায় বসে আছে।আর বাদবাকি মেয়েরা সবাই মন ভরে দেখছে তাকে। সাথে আছে তায়েস, তার জন্য মেয়ে দেখা তাই তাকে এখানে বসানো হয়েছে।
.
কিছু সময় পর,
ফাহমিদা আর আয়েশা পরামর্শ করে বললো,
-“আমাদের পাত্রি পছন্দ হয়েছে।তায়েস তোর মতামত জানিয়ে দে?

তায়েস কিছু না জানার ভান করে বললো,
-“কিসের মতামত?

এ কথা শুনে মুচকি হাসে নূর।

আয়েশা মজার ছলে বলে,
-“মেয়ে নিজেই পছন্দ করে বসে আছিস! এখান বলছিস কিসের মতামত?দিব একটা চ’র।

তায়েস এতোক্ষণ ভেবেছিল তার পরিবার হয়তো নূর কে পছন্দ করেছে তাই এখানে আসা। কিন্তু এখন তো দেখছে সব উল্টা!তার উপরেই সব দোষ দিয়ে দিচ্ছে! কখন এই মেয়েকে পছন্দ করলো?

তায়েস কিছু বলতে মুখ খুলবে তার আগেই আয়েশা বললো,
-“থাক তোকে আর কিছু বলতে হবে না। আমাদের সবার মেয়ে পছন্দ হয়েছে।এই নে রিংটা পরিয়ে দে নূর মায়ের হাতে!

তায়েস দ্বিমত পোষণ না করে পরিয়ে দেয় নূর এর অনামিকা আঙুলে রিং।
পরে নূর ও পরিয়ে দেয়।
.
.
অতঃপর,
এক সপ্তাহ পর ধুমধাম করে তাদের বিয়ের কার্য শেষ হয়।
বাসর ঘরে সব ফর্মালিটি শেষে নূর প্রথমে তায়েস এর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
-” কি শান্তি টা কেমন দিলাম বলুন?

এ কথা শুনে বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে,তায়েস বললো,
-“এই সবটা আপনার পরিকল্পনা ছিল?
-“হুম সে একটু ছিল, তবে আপনার মানে বর্তমানে আমারো পরিবারের সদস্যরা সবটা সুষ্ঠু ভাবে এগিয়ে নিয়ে সাহায্য করেছেন আমাকে। বিশেষ করে আমার শ্বাশুড়ি মা।

তায়েস বলে,
-“আপনি তো মহা..

এটুকু বলতে নূর তায়েস এর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,
-“আপনি কি হ্যা?ব‌উকে কেউ আপনি করে সম্বোধন করে? নিরামিষ কোথাকার!….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।