#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগো(২৫)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
তপ্ত দুপুরের গরমে হয়তো মাথা ঘুরে উঠেছে এই বলে সবাই কে আশ্বস্ত করলো রামিসা। আয়েশা কায়েস কে কল করতে নিলে রামিসা নিষেধ করে বলে,
-“বড় মা উনার কিছুদিন যাবত কাজের অনেক প্রেসার তাছাড়া ট্যুরের জন্য ছুটি নিতে হবে তাই বলো না প্লিজ। আমি কিছুদিন দেখি তারপর না হয় উনাকে বলে ডাক্তার দেখাবো।
রিনু দ্রুত পায়ে চলে যায় কিচেন রুমে। ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবুর শরবত তৈরি করে নিয়ে আসে রামিসার জন্য।রামিসা শরবত খেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে শুয়ে রইলো।
.
.
এরপরের দিন এগারোটার দিকে সবাই কে রওনা হয় “লা রিভারিয়া রিসোর্ট এন্ড পার্ক” এর উদ্দেশ্যে। তাদের সকাল সকাল রওনা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু নূরের জন্য লেইট হয়ে গেল।
নূর পর্দা না করলেও শালীন পোশাক পরিধান করে। কিন্তু গতকাল যখন রামিসার মুখে পোশাক পরিধান সম্পর্কে হাদীসের বিভিন্ন বয়ান শুনলো তখন তার বিবেকে বাধে যে সে তো পর্দা মেনে চলে না। তাই দ্রত অনলাইন থেকে কালো বোরকা,ছয় পার্ট হিজাব অর্ডার করে।
অবশ্য আবু দাঊদ তারা সুনানের ৪১০১ এ একটা হাদীস উল্লেখ করেছেন, যাতে বুঝা যায় সাহাবী মহিলারা কালো হিজাব পরে মসজিদে আসতেন।
উম্মে সালামা বলেন, যখন “মেয়েরা যেন তাদের জিলবাবের উপরে একটা কাপড় নিচে টেনে নেয়” আয়াত নাযিল হয়, তখন আনসার মহিলারা বের হলে দেখা যেত যেন তাদের মাথার উপর কাপড়ের কারণে কাকের মত লাগছে।
এ থেকে বুঝা যায় তারা কালো কাপড় মাথার উপর দিতেন। আর কালো রঙ মেয়েরা পরলে তাদের দিকে পুরুষের লোভাতুর দৃষ্টি অনেক কমে। সে জন্য কালো রঙ ভালো, কিন্তু তাই বলে এই কালো রঙ পরাটাকে ফরয বলা যাবেনা। বরং অন্য রঙের বোরকা ও পরা যাবে।
মেয়েদের পোশাকের জন্য কালো রঙ হতে হবে এমনটা নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং তার যে কোন রঙের পোশাক পরা জায়েয আছে, যদি তা সতরগুলো ঢেকে ফেলে। সেই পোশাকে থাকবেনা পুরুষের পোশাকের সাথে সাদৃশ্য, এমন টাইট হবেনা যা তার শরীরের খাঁজ নির্ণয় করে, বা এমন পাতলা হবেনা যা দিয়ে পোশাকের নিচে থাকা চামড়ার রঙ বুঝা যায়, এবং তা হবেনা এমন পোশাক যা দিয়ে ফিতনা উষকে দেয়। সর্বোপরি একজন নারী এমন পোশাক বা বোরকা পরিধান করবে যেন তার সুন্দর্যো বাহিরে প্রকাশ না পায়। তাহলেই হবে।
নূরের অর্ডার করা বোরকা ভেলিভারি হতে হতে বেলা সাড়ে দশটা বেজে যায়।আর এ কারণেই তাদের রওনা হতে সময় লাগে।
.
.
ঘন্টা খানেক পর তারা রিসোর্ট এসে পৌছায়।গাড়ি থেকে নেমে চারিদিকে তাকায় আলো। সবুজ প্রকৃতির সমারোহ তাকে দারুন ভাবে আকৃষ্ট করে। সাথে আসা লোকজনের কথা ভুলেই যায় সে।একা একা হেঁটে বেড়াচ্ছে আর সবুজ পাতায় ছুঁয়ে দিচ্ছে তার কালো মৌজায় আবৃত হাত।কালোর মাঝে সবুজ রঙ যেন ফুটে উঠেছে।
হাঁটতে হাঁটতে অনেক খানি চলে এসেছে।তার সম্পূর্ণ মনোযোগ এখন প্রকৃতিতে মগ্ন। কখনো গ্রামে যাওয়ার সুযোগ হয়নি ঢাকা শহরেই তার জন্ম, সেখানেই বেড়ে ওঠা।
চিকন পাকা রাস্তার পাশে থাকা গাছ গুলো যখন ছুঁয়ে দেখছিল তখন পিছন থেকে আকস্মিক কেউ তার শরীর সাথে ছোট করে ধাক্কা দিল যেন!আলো চমকে উঠে তাড়াতাড়ি পিছনে ফিরে তাকাতে দেখতে পায় একজন পুরুষ লোক দ্রুত পায়ে হেঁটে সামনের কটেজে ঢুকে গেল।
মুহুর্তেই আলোর মন খারাপ হয়ে গেল। খুব রাগ হলো, লোকটাকে ইচ্ছে মত জেড়ে দিতে ইচ্ছে হলো। আলো ড্যাম শিউর লোকটা ইচ্ছে করে এরকমটা করেছে। মেয়ে মানুষ দেখলেই এদের গায়ে পড়তে ইচ্ছে করে!
ভাবী মনি?ডাক শুনে পিছনে ফিরে তাকায় আলো।ফাইজা সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আলো তাকাতে বললো,
-” তোমাকে আমরা খুঁজে পাই না!আর তুমি একা একা এখানে চলে এসেছো?চলো সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
রোদের তাপমাত্রা কমলে সবাই বের হবো কটেজ থেকে। এখন ফ্রেশ হয়ে লান্স করতে হবে তো নাকি? তাছাড়া যোহর নামায পড়তে হবে।চলো চলো?
আলো পিছনে একবার তাকিয়ে বললো,
-“আচ্ছা আপু চলেন।
তারপর যার যার বুকিং দেওয়া রুমে সবাই অবস্থান করে।
রামিসা রুমে ঢুকেই ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কায়েস টলি ব্যাগটা একপাশে রেখে বললো,
-“এটা কি হলো? বাহিরে থেকে এসে ফ্রেশ না হয়ে এভাবে বিছানায় শুয়ে পড়ে কেউ?
রামিসা আঁখিজোড়া বন্ধ রেখে বললো,
-” খুব ক্লান্ত লাগছে। আপনি আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন প্লিজ তারপর আমি যাব।
এ কথা শুনে কায়েস এর খুব মায়া হলো তাই আর কিছু না বলে সে প্রথমে বাথরুমে গেল ফ্রেশ হতে।
তারপর, মিনিট খানেক পর ফ্রেশ হয়ে অযু করে এসে রামিসা কে বাথরুমে পাঠিয়ে নামাযে দাঁড়ায় সে।
.
নূর প্রথম বারের মত বোরকা পরে ঘামে জর্জরিত অবস্থা তার।তাই একেবারে শাওয়ার নিয়ে তবে বের হয়ে আসে সে। এখন খুব শান্তি লাগছে তার।
তার অবস্থা দেখে কায়েস বললো,
-” বেশি সমস্যা হলে না হয় বোরকা পড়তে হবে না।ডিলেডালা থ্রিপিস পড়লেই হবে।
নূর এর প্রতিবাদ করে বললো,
-” উঁহু তাও বোরকার মতো পর্দা হবে না। আমি রামিসা ভাবী,আলো ভাবী এবং ফাইজা আপুর মতো পর্দা মেনে চলতে চাই। তুমি শুধু দো’আ করো আমার জন্য। আমি যেন আল্লাহ তা’আলার এরকম প্রতিটি ইবাদত পালন করতে পারি।
তায়েস নূর কে তার খুব কাছে নিয়ে এসে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমি জানি তুমি ঠিক পারবে ইনশা আল্লাহ। তুমি তোমার এই অধম স্বামীর জন্য দো’আ করো সে যেন ইডাদতে মনোযোগী হতে পারে।
নূর তৃপ্তির হাসি হাসে।
তায়েস তার নরম মখমলে গাল দুটো তে নিজের অধরপল্লব দিয়ে আঁকড়ে ধরে।
এঁকে অপরের প্রতি ভালোবাসায় সিক্ত হয় তারা।
.
আলো দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নামাযে দাঁড়িয়েছে। নামায শেষে তাসবিহ পড়ার সময় পেটে খিদে অনুভব করলো। ইদানিং তার প্রচুর খিদে পায়। লজ্জায় কাউকে বলতে পারে না। আবার কি যেন খেতে ইচ্ছে করে তার নাম জানা নেই তার। শুধু মনে হয় ঐ খাবার টা খেলে সে তৃপ্তি পেত।
ফয়জান ফ্রেশ হয়ে মাত্র নামাযে দাঁড়িয়েছে।
আলো মোনাজাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। আশেপাশে তাকিয়ে রুমটা পর্যবেক্ষন করে নিল। তারপর দক্ষিণে অবস্থিত বেলকনির সন্ধান পেয়ে খুশি মনে চলে গেল সেখানে।
বাহিরে থেকে ফুরফুরে বাতাস বইছে।শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে রিসোর্ট এর খোলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আশেপাশের পরিবেশের সাথে নিবিড় সম্পর্ক এ যেন খুব সুন্দর অনুভূতি মিশ্রিত এক আবহাওয়া।
বছর খানেক পর এই সুন্দর মূহুর্তটা আলোর জীবনে এলো।এর আগে বিদেশে পর্যন্ত তার ভ্রমণ হয়ে গিয়েছে! তারপর একটা দিনের পর সব বদলে গেল! পরিবেশের সাথে সাথে আপন মানুষ গুলো পর্যন্ত।
জীবনের মানে শুধু সেদিন ই বুঝতে পারে আলো। তবুও কিছু করার ছিল না।এ দুনিয়ার মোহে আকৃষ্ট হতে পারেনি আলো!
.
সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে বিশেষ করে মেয়েরা।তাই লান্স যার যার রুমে নিয়ে আসে ওয়েটার। তাদের আর কষ্ট করে রেস্তোরাঁয় যেতে হয় না।
খাওয়া দাওয়া করে সবাই ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়। কয়েকদিন যেহেতু সময় আছে তাই আজকের দিনটা না হয় বিশ্রাম হয়ে যাক।
নিঝুম রাতে সবাই কটেজ থেকে বের হয়ে আসে। রিসোর্ট ঘুরে দেখার জন্য।
রিসোর্ট পুরোপুরি রঙিন আলোয় আলোকিত হয়ে আছে।তায়েস বললো,
-” আলো কিছুটা কম হওয়া উচিৎ ছিল। তাহলে রাতের মুহূর্তটা উপভোগ করা যেত।
এতো লাইটিং হলে তো দিন ই হয়ে গেল তাই নয় কি?
ফয়জান হেসে বললো,
-” চিন্তার কারণ নেই ভাই তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে।চলো রিসিভসনে কাউকে জিজ্ঞাসা করে নিব।
.
.
সবাই আবছা আলো যেখানে সেখানে আসে। রাতের মুহূর্ত উপভোগ করার এটাই সুন্দর প্লেস। আকাশে তারার মেলা।আলো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।ভাবছে আল্লাহ তা’আলা তাকে নিশ্চই দেখছেন। কি সুন্দর মুহূর্ত ভাবা যায়?
কিছু একটা মনে পড়তে আলো ফয়জান কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-” ঐ দেখুন?
পিছনে ফিরে দেখল ফয়জান নেই।তাকে খুঁজতে আশেপাশে তাকিয়ে সামনে হাঁটল আলো।আর বাকি সবাই দূরত্বে দাঁড়িয়ে নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছে।
আলো খুঁজতে খুঁজতে একটা বাগানে চলে এসেছে! চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার,ঝিরঝির পোকার শব্দ কানে বাজছে!…
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।
#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২৬)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
#সারপ্রাইজ_পর্ব
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
আলো’র জ্ঞান ফিরে আসার পর,কিছু টেষ্ট করানো হয়েছে!ফাইজা আলো’র একপাশে বসে শান্তনা দিচ্ছে আরেক পাশে বসে আছে ফয়জান।
সবকিছু যে মাথার উপর দিয়ে গেল ফয়জান এর। কি থেকে কি হয়ে গেল?
ঘন্টা খানেক আগের ঘটনা,আলো ফয়জান কে খুঁজতে খুঁজতে গভীর অন্ধকারে চলে যায়। তখন হঠাৎ কেউ মুখ চে’পে ধরে আলো’র! নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হয়ে উঠে আলো’র।ঘুঙানো স্বরে উহুম উহুম শব্দ।হাত দুটো ঝাপটাতে থাকে অনবরত। কিছুতেই শক্ত দেহের অধিকারী ব্যক্তির সাথে পেরে উঠেনা আলো।
ভয়ে ধ’ম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। মনে মনে আল্লাহ তা’আলা কে স্মরন করে চলেছে।এই পরিস্থিতি থেকে তাকে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রক্ষা করতে পারেন।যদিও এমন পরিস্থিতিতে সূরা কালাম পড়তে কষ্ট হচ্ছে তবুও আলো পড়তে চেষ্টা করছে। চোখের অজস্র পানি ঝড়ে পড়ছে গড়িয়ে।
ফয়জান কে একটা ছেলে এসে বলেছিল, রিসোর্ট এর ম্যানেজার সাহেব তাকে ডেকেছে।
ফয়জান আলো কে বলে যেতে চাইলে ছেলেটা তাগাদা দিয়ে বলে,দ্রুত যেতে খুব জরুরী কথা বলবেন ম্যানেজার সাহেব।
তাই ফয়জান কটেজের ভিতরে চলে যায়।
তারপর যখন ম্যানেজার সাহেব কে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে তখন উনি জানান যে, তিনি ফয়জান কে ডেকে পাঠান নি!
ফয়জান খুবই আশ্চর্য হলো এ কথা শুনে। বললো,
-” তাহলে কে করলো এমন ফাজলামি? শুধু শুধু এমন মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল?
এ ব্যাপারে ম্যানেজার সাহেব কিছু বলতে পারলেন না। ফয়জান হাঁটতে ভাবলো এমনটা কেন করা হলো তার সাথে?
তারপর আলো’কে যেখানে রেখে গিয়েছিল সেখানে এসে দেখলো আলো নেই। এদিক ওদিক খুঁজেও পেল না। কায়েস আর তায়েস কে কল করে জিজ্ঞাসা করলো তাদের ওখানে আলো গিয়েছে কিনা? কিন্তু তারা বললো না আলো কে তো দেখেনি আসা তো দূর।
ফয়জান তখন ভাবো আলো বুঝি রুমে চলে গেছে তাকে দেখতে না পেয়ে।তাই দ্রত পায়ে ফয়জান রুমে গিয়ে দেখলো আলো কোথাও নেই। বেলকনিতে, বাথরুমে পর্যন্ত চেক করে দেখলো তাও নেই।
এরকম দেখে ফয়জান এর মনে ভয় জাগে কোথায় গেল মেয়েটা একা একা ?ফাইজা সহ বাকি সবাইকে কল করে আলো কে খুঁজে দেখার জন্য বললো ফয়জান।
সবাই হননি হয়ে খুঁজে বেড়ায় আলো কে।ম্যানেজার কে জানানো হলে তিনি লোক লাগিয়ে খুলতে শুরু করেন।
ফয়জান আর ফাইজা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে আঁধারের দিকটায় খুঁজে চলে আলোকে। খুঁজতে খুঁজতে এ পর্যায়ে আলো’র দেখা মিলে! তবে স্বাভাবিক অবস্থায় নয়!
মাটিতে জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে আলো!
ফয়জান দৌড়ে গিয়ে মাটিতে বসে আলোর মাথাটা তার কোলে রেখে নেকাব খুলে ফেলল। তারপর চিৎকার করে ডাকতে শুরু করে,আলো?এই আলো কি হয়েছে তোমার? এখানে এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে কেন এসেছো তুমি?আলো উঠো?
পাশে ফাইজা বসে আলোর হাত দুটো ঘসে ঘসে ডাকে ভাবী মনি কি হয়েছে আপনার? কিন্তু কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না।তাই ফাইজা বললো,
-“ভাইয়া ভাবী মনি কে হসপিটালে নিয়ে চলো দ্রুত?
ফয়জান মাথা নাড়িয়ে,আলো কে কোলে তুলে নিল।এর মধ্যে ফাইজা তায়েস কে কল করে বললো,
-” আলো ভাবী কে ইমার্জেন্সি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে!ম্যানেজার কে বলে গাড়ি ঠিক করো!
এমন ধারা কথা শুনে তায়েসের মস্তিষ্ক যেন হ্যাং হয়ে গেল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কায়েস জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে আলোকে খুঁজে পাওয়া গেছে? তখন তায়েস ফাইজার কথা গুলো রিপিট করে বললো,
-“আলো ভাবী কে ইমার্জেন্সি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে!ম্যানেজার কে বলে গাড়ি ঠিক করো!
কায়েস চমকে উঠে বললো,
-” তো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?চল তাড়াতাড়ি।
কায়েস চলে যায় সব ব্যবস্থা করার জন্য। তখন তায়েস সম্বিত ফিরে পেয়ে সেও পিছু পিছু যায় কায়েস এর সাথে। তারপর হসপিটালে নিয়ে আসা হয় আলোকে।
ডাক্তার ইনজেকশন দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসে আলোর। তারপর ডাক্তার কিছু টেষ্ট লিখে দিলে এগুলো করানো হয়।
আলো ফয়জান কে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ভিশন ভয় পেয়েছে সে। তখন ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে না পড়লে হয়তো তার খুব বড় বি’পদ ঘটে যেত। মহান রাব্বুল আলামীন রক্ষা করেছেন তাকে।
.
.
ডাক্তার ফাইল হাতে কেবিনে ঢুকলে ফাইজা বলে উঠে ডাক্তার রিপোর্ট কি তৈরি হয়ে গেছে?
ডাক্তার ছোট করে বললেন,জ্বি,একটার রিপোর্ট এখন বলে দিচ্ছি বাকি গুলো আগামীকাল দেওয়া হবে।
তারপর ফয়জান কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-” কনগ্রেচুলেশন ফয়জান মাহমুদ চৌধুরী আপনি বাবা হতে চলেছেন!আর মিসেস আলো আপনাকে এখন খুবই সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে। আজকের মতো কেয়ারলেস হয়ে চলাফেরা করা যাবে না।
আলো ফয়জান এর বুক থেকে মাথা তুলে পাশে তাকাতেই পিলে চমকে উঠলো!
আকস্মিক ফয়জান কে ছাড়িয়ে বেড থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার কে জড়িয়ে ধরে
“মামনি” বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
ঘটনার আকস্মিকতায় ফয়জান এবং ফাইজা খুশির সংবাদ ভুলে গিয়ে বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইলো।
ডাক্তার মিথিলা পাল নিজেও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন!এদিকে আলো কেঁদেই চলেছে।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বললেন,
-” মিষ্টার ফয়জান আপনার স্ত্রীকে সামলান। এই সময় এভাবে উত্তেজিত হওয়া তার জন্য মোটেও ভালো কিছু নিয়ে আসবে না।
ফয়জান তখন বললো,
-” ইয়েস ডাক্তার।
তারপর আলোকে জোর করে টেনে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিল।
আর ডাক্তার মিথিলা পাল এই সময়ে কিভাবে চলাফেরা করতে হবে তা সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়ে একটা বই দিলেন।ফাইজা এগিয়ে গিয়ে হাতে নিল ডাক্তারের কাছ থেকে।
তারপর তিনি চলে গেলেন।আলো ভিজে থাকা নেত্রজোড়া দিয়ে তাকিয়ে রইল সেদিকে যেদিকে ডাক্তার মিথিলা পাল হেঁটে গেলেন।
ফয়জান কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো,
-” কি হয়েছে তোমার বলো তো? এভাবে ডাক্তার কে জড়িয়ে ধরেছিলে কেন? উনাকে তুমি কোন ভাবে চিন? পূর্ব পরিচিত তোমার?
ফাইজা তখন বললো,
-” যদি পরিচিত হতো তাহলে ডাক্তার কিছু বললেন না কেন? উনি এভাবে স্বাভাবিক ভাবে উনার ডিউটি পালন করে চলে গেলেন কেন? হয়তো ভাবী মনি তখনকার জন্য নার্ভাস হয়ে এরকম করেছেন।যাই হোক ভাইয়া এবং ভাবী মনি তোমাদের দুজনকেই কনগ্রেচুলেশন।
আলোর এবার টনক নড়ে উঠলো।সে তো তখন ব্যাপারটা গুরুত্ব দেয়নি।ডাক্তার বলেছেন ফয়জান বাবা হতে চলেছেন! তারমানে তো সে মা… এতটুকু স্মরন হতেই নিমিষেই ডান হাতটা পেটের মধ্যে চলে যায় আলো’র।আরো আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে আলো। বাচ্চাদের মত ঠোঁট কামড়ে কান্না রোধ করার চেষ্টা করে আলো।
ফয়জান আলোর অনুভূতি বুঝতে পেরে তাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয়।
এবার আলোর কান্না গুলো পানি হয়ে ঝরে পড়ে।
ফাইজা মুচকি হেসে কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে সু-খবর টা দেয়। এতো আনন্দের খবর শুনে রামিসা দৌড়ে যায় আলোর কেবিনে। গিয়ে দেখে ফয়জান আলো দুজন দুজনকে আলিঙ্গন করে রেখেছে।যা দেখে সাথে সাথে ঘুরে দায় রামিসা। তারপর হেসে বলে,
-“আমি কিন্তু কিচ্ছু দেখিনি।
রামিসার কথা শুনে দুজনেই সচকিত হয়ে ছাড়িয়ে বসে।আলো লজ্জা রাঙ্গা হয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে। ফয়জান উঠে গিয়ে রামিসার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
-” দুষ্টু মেয়ে ।
তারপর ফয়জান বাহিরে বের হয়ে গেলে নূর ভিতরে ঢুকে।
রামিসা আলোকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আল্লাহ তা’আলার কাছে লাখো লাখো শুকরিয়া ভাবী এতো সুন্দর একটা মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য। তোমাকে জাযাকিল্লাহু খাইরন ভাবী মনি।
আলো তখন বলে আলহামদুলিল্লাহ।
নূর এগিয়ে গিয়ে হেসে বললো,
-” ভাবী আমাকেও একটু সুযোগ দিন?
তারপর রামিসা সড়ে দাঁড়ালে নূর আলোকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-” কনগ্রেচুলেশন ভাবী।
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।