শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা পর্ব-২৭+২৮

0
320

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২৭)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

হসপিটালের ফিনেইল এর গন্ধ সহ্য হচ্ছে না রামিসার।টিস্যু দিয়ে ঘ্রাণেন্দ্রিয় চেপে ধরে আছে সে।
কায়েস কে বসিয়ে রেখে ডাক্তার মিথিলা পাল এর সাথে দেখা করতে এসেছে সে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখা করার সুযোগ পেল।

ডাক্তার মিথিলা পাল রামিসা কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে বললেন,
-” আপনি আপনার সমস্যার কথা না বললে তো আমি সমাধান দিতে পারবো না।আর ডাক্তার দের কাছে লুকানোর কিছু নেই। নির্দ্বিধায় আপনি আপনার সমস্যার কথা বলতে পারেন।

রামিসা এবার সাহস যুগিয়ে বললো,
-” আসলে ম্যাডাম আমি জানতে চাচ্ছিলাম প্রেগন্যান্ট হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি?

ডাক্তার মিথিলা পাল এক হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে অন্য হাত রেখে বললেন,
-” আচ্ছা এই ব্যাপার? তো নতুন বিয়ে হয়েছে তাই না?

রামিসা মাথা নাড়িয়ে বলে,জ্বি।

মিথিলা পাল মুচকি হেসে বললেন,
-” বয়স কত আপনার?
-” সতেরো প্লাস!
-” বয়স তো অনেক কম আপনার। এতো কম বয়সে মা হতে চাচ্ছেন কেন? এতে তো আপনার অনেক ঝুঁকি নিতে হবে।
১৮ বছরের কম বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হলে গর্ভপাতসহ প্রসবকালীন মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে সবচেয়ে বেশি।কমবয়সে গর্ভধারণ করায় প্রসূতির শরীর ভেঙে যায়। নিজেকে বোঝার মতো উপলদ্ধির আগেই মেয়েরা দুই থেকে তিন বাচ্চার মা হওয়ার ফলে তাদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।

ডাক্তারের বয়ান শুনে একটু মন খারাপ হলো রামিসা’র।
ডাক্তার মিথিলা পাল সেটা বুঝতে পেরে বললেন,
-” আচ্ছা সেসব কথা বাদ দেই।
প্রেগন্যান্ট হওয়ার চারটা লক্ষণ শুনুন?
১)প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ
আপনি গর্ভবতী কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওষুধের দোকানগুলোতেই প্রেগন্যান্সি পরীক্ষার স্ট্রিপ পাওয়া যায়। তা দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এর নিয়মাবলি প্যাকেটের গায়ে স্পষ্টভাবে লেখা থাকে। তাছাড়া হসপিটালে টেষ্ট করিয়ে জানতে পারেন।
২)পিরিয়ড
নারীদের প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পিরিয়ড হয়ে থাকে (সাধারণত ২৮ দিন পর পর)। যদি তা না হয়, তবে বুঝে নিতে হবে আপনি গর্ভবতী।
৩)রক্তপাত
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পিরিয়ডের সময় খুব সামান্য পরিমাণ রক্তপাত হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এটি হতে পারে গর্ভধারণের লক্ষণ।
৪)স্তনের পরিবর্তন
গর্ভধারণের আরেকটি লক্ষণ হল- স্তনের পরিবর্তন। আপনি যদি গর্ভধারণ করেন, তা হলে স্তনের আকৃতি কিছুটা বৃদ্ধি পাবে ও নিপল গাঢ় রঙ ধারণ করবে।
.
সবগুলো লক্ষন মনোযোগ দিয়ে শুনলো রামিসা।সে মনে করতে পারছে না শেষ বার কতো তারিখ পিরিয়ড হয়েছিল। তাই ডাক্তার কে বললো,
-” আচ্ছা ম্যাডাম মাথা ঘোরা,বমি এরকম কোন লক্ষণ নেই?
-“সাধারণত আমরা দিদা-থাম্মাদের মুখে শুনে আসছি যে, নারীরা গর্ভবতী হওয়ার পর সকালে ঘুম থেকে উঠলে প্রচণ্ড দুর্বল, মাথা ঘোরা ও বিষণ্ন লাগে।এটি গর্ভবতী হওয়ার অন্যতম লক্ষণ।এ ছাড়া হজমে সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

এরপরেও আপনার সন্দেহ থাকলে আপনি টেষ্ট করিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন।

-” আচ্ছা ম্যাডাম ধন্যবাদ।
.
.
সবাই হসপিটালে থেকে রিসোর্ট এ ফিরে আসে। তখনকার ঘটনা টা আলো কাউকে না বললেও মনে মনে ভিশন ভয়ে টটস্থ হয়ে আছে সে। ফয়জান কে সারাক্ষণ আঁকড়ে ধরে আছে।যেন ফয়জান কোথাও গেলে তখনকার কালো ছায়া মানব তার কোন ক্ষ’তি করে ফেলবে! না না তা তো হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। এখন তো সে একা নয়।তার মধ্যে অন্য আরেকটি প্রাণ বেড়ে উঠছে।
সেই প্রাণের জন্য হলেও তাকে সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

রাতের খাবার আনা হলে আলো নাক সিঁটকায়।বলে এসব খাবে না সে।
ফয়জান তখন বললো,
-” তাহলে কি খাবে বলো?

আলো একটু ভেবে বললো,
-” ব্রেড আর মিল্ক।

ফয়জান অবাক হয়ে বললো,
-” এই সময় এগুলো খাবে?

আলো বাচ্চাদের মত করে ঠোঁট উল্টে মাথা উপর নিচ করে বোঝায় এগুলোই খাবে সে।

ফয়জান বললো,
-” আচ্ছা ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করছি তুমি বসো।

এই বলে উঠতে নিলে আলো ফয়জান এর হাত ধরে বাঁধা দিয়ে বললো,
-” আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

ফয়জান কপাল কুঁচকে বললো,
-” তুমি তো বললে এই খাবার খেতে চাও না।তাই তো বাহিরে বের হয়ে দেখি পাই কিনা।

আলো ফয়জান কে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“না আপনি কোথাও যাবেন না।
-” তাহলে খাবার গুলো আনতে হবে না?যদি এখানে না থাকে তবে?

কোনরকম ভ্রক্ষেপ করলো না আলো। আগের ন্যায় জড়িয়ে ধরেই বসে রইল ফয়জান কে। ফয়জান আর কিছু না বলে পাশ থেকে হাতড়ে কাউকে কল করে ব্রেড আর মিল্ক এর কথা বললো।
কলের ওপাশ থেকে কিছু বলতেই ফয়জান থ্যাংক ইয়ু বলে কল কেটে দিল।
.
দশ মিনিট পর দরজায় কড়াঘাত শুনে ফয়জান আলোকে বললো,
-” ম্যাডাম ছাড়েন এবার,ওয়েটার দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

এবার আলো ছেড়ে দেয়। তারপর ফয়জান দরজা কিছুটা খুলে খাবার ট্রে হাতে নিয়ে পুনরায় দরজা বন্ধ করে, আলোর কাছে খাবার গুলো নিয়ে আসে।

তারপর আলো কোন রকম এক পিস আর কিছুটা মিল্ক খেয়ে বলে আর খাবে না। ফয়জান জোরাজুরি করলে বলে, জোর করতে না। না হয় বুমি হয়ে যাবে।
তাই আর ফয়জান জোর করলো না।
.
রামিসা দ্রুত অল্প কিছু খেয়েই শুয়ে পরেছে। খুব ক্লান্ত লাগছে তার।চোখ দুটো বুজে আসছে ঘুমে। কায়েস খাবার খেয়ে সব কিছু গুছিয়ে রেখে আসলে রামিসা তাঁকেও শুয়ে পড়তে বলে। কেননা কায়েস এর আলিঙ্গন বদ্ধ না হয়ে ঘুমাতে পারে না রামিসা।এ যেন তার নৃত্য দিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
কায়েস ও তাকে খুব সন্তর্পণে আগলে রাখে তার প্রশস্ত বুকে।

ঘুমের পূর্বে কায়েস রামিসা কে মাসনুন আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দিল
আমাদের সবারই যাদু এবং জ্বিন- শয়তানের ক্ষ’য়ক্ষ’তি থেকে বাঁচার জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিখিয়ে দেয়া আমল গুলো যত্ন সহকারে করা উচিত। এগুলোকে মাসনুন আমল অর্থাৎ সুন্নাহসম্মত আমল বলে। এসবের অসাধারণ সব উপকারিতার পাশাপাশি বড় যে লাভ রয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বাড়ে।
.
.
তায়েস এর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আসছে কিন্তু নূর তাকে কিছুতেই ঘুমাতে দিবে না।
কফি অর্ডার করে বেলকনিতে তায়েসের কোলে বসে আছে নূর।সে এই নির্জন রাতের মুহূর্ত উপভোগ উপভোগ করতে চায়।তাই তার পাশে তায়েস কে ও থাকা চাই।

তায়েস বারবার ঘুমে বিভোর হয়ে যায়। তখন নূর এটা ওটা নিয়ে প্রশ্ন করলে হুঁ হাঁ করে উত্তর দেয়।যা দেখে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকায় নূর। দুষ্টুমি করে তায়েসের কান টেনে ধরে! কিন্তু তায়েসের কোন ভাবান্তর নেই এতে।সে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়।

শেষে নূর তায়েস এর পুরো মুখশ্রী জুরে অজস্র অধরের স্পর্শ ছুঁয়ে দেয়।যার অনুভবে আঁখিপল্লব দুটো মেলে বড় বড় করে তাকায় তায়েস।
তখন লুকোচুরি খেলার মতো তায়েসের প্রশস্ত বুকে মুখ লুকায় নূর।তায়েস চেষ্টা করেও তার মুখশ্রী উপরে তুলতে ব্যর্থ হয়।
এমনি করে এক সময় ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় দুজনে।
.
সকালের নাস্তা শেষ করে ফয়জান আর আলো হসপিটালে আসে। আলোর বাকি রিপোর্ট গুলো নেওয়ার জন্য।
তারপর ডাক্তার আসতে দেরি হবে বিধায় তারা কাছের একটা পার্কে ঘুরে আসে।
ডাক্তার মিথিলা পাল রিপোর্ট দেখে জানান, রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। কোন প্রবলেম নেই।যা শুনে ফয়জান বললো, “আলহামদুলিল্লাহ।

ডাক্তারের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসার সময় আলো পিছু ফিরে তাকিয়ে রইল মিনিট কয়েক। কিন্তু সামনে থাকা ব্যক্তিটির এতে কোনরকম ভ্রক্ষেপ করলো না! তিনি নিজের মতো ফাইলে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছেন।
.
.
সূর্য মামার তেজস্ক্রিয় রশ্মি কমে এলে তারা সবাই বাসায় ফিরে আসে।
বাসায় ফিরে আসার পর আলো লক্ষ্য করলো ফাহমিদা খাতুন তার সাথে কোন কথা বলছে না!আলো কিছু বললেও তার উত্তর দিচ্ছে না!..

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২৮)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

ফাহমিদা খাতুন চুলায় রান্না বসিয়ে নিজের রুমে গিয়েছেন। তখন ভাত বলকানি এসে পড়ছে দেখে আলো দৌড়ে গিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে দিল।ঢাকনা টা নামিয়ে রেখে দিল।খু’ন্তি হাতে নিয়ে চারিদিকে ছিটিয়ে পড়া ভাত গুলো ঠিক করে দিতে নিলে ফাহমিদা খাতুন এসে ক্ষীপ্ত গলায় বললেন,
-” তোমাকে কে বলেছে আমার রান্না ঘরে ঢুকতে?

পিছন থেকে হঠাৎ করে এমন কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো আলো।হাত থেকে খু’ন্তি রেখে এগিয়ে এসে বললো,
-” মা ভাত বলকানি এসে পড়ছে দেখে আমি..

ফাহমিদা খাতুন আরো তীব্র ক্ষো’ভ প্রকাশ করে বললেন,
-” সব পরে গেলেও তুমি আমার কোন কিছুতে হাত দিবে না! তোমার ঐ নোং’রা হাত আমার সংসারটা ধ্বং’স করে দিবে!একদম হাত দিবে না বলে দিচ্ছি আমি।

ফাহমিদার এহেন কথায় যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হল!
আলো কি বলবে? সেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-” মা আমি কি কোন ভুল করেছি?

ফাহমিদা খাতুন কিচেনে ঢুকে চুলায় কড়াই বসিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নাড়তে নাড়তে বললেন,
-” তুমি এখান যাও। আমার মোটেও ইচ্ছে করছে না তোমার সাথে কথা বলতে।তাই বলছি কথা শুনতে না চাইলে চলে যাও!

আলো কাঁপা কাঁপা পায়ে কোন রকম নিজের রুমে ফিরে খাটে বসলো। নেত্রজোড়া ছাপিয়ে কান্না আসছে ভিশন। ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না রোধ করার চেষ্টা করছে মেয়েটা।

ফয়জান বাহিরে বেরিয়েছে।থাকলে কি হতো আল্লাহ জানেন।
ফাইজা ওখান থেকে ফিরে মাথা ব্যথা নিয়ে শুয়ে আছে তাই, না হয় নিশ্চ‌ই তার মায়ের থেকে জানতে পারতো। হঠাৎ করে ফাহমিদা খাতুন এর ঠিক কি হয়েছে? কি কারণে তিনি এমন রাফ ব্যবহার করছেন?
.
রুহুল আমিন এবং ফয়জান মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পর ফাহমিদা খাতুন হাতে করে ফোন নিয়ে এসে বললেন,
-” দেখ তোর পর্দাশীল ব‌উয়ের আসল রূপ!

ফয়জান এ কথার মানে কিছুই বুঝতে পারলো না।ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
রুহুল আমিন থমথমে মুখ করে বসে আছেন। তিনি হয়তো আগেই এ সম্পর্কে অবগত আছেন। তাই কিছু বলছেন না।

ফয়জান মুখে কিছু না বলে ফোন হাতে নিল।ভিডিও তে টার্চ করে চালু করলো।

রঙিন আলোয় ঝলমলে এক কনসার্ট এ হাজারো মানুষের সমাগম।স্টেজে দাঁড়িয়ে একজন এনাউন্স করলো, এখন আমাদের মাঝে আসতে চলেছে নৃত্য শিল্পী ঐশ্বরিয়া পাল ঐশী!
হাজারো দর্শক তৃপ্তির আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে করতালিতে মুখরিত করে তোলে। তাদের প্রিয় নৃত্য শিল্পী ঐশ্বরিয়া পাল ঐশী আসতে চলেছে। অনেকের বহু দিনের স্বপ্ন ছিল বাস্তবে মুখমুখী নৃত্য শিল্পী ঐশ্বরিয়া পাল ঐশী কে দেখার।যে কিনা মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে নৃত্য শিল্পী হিসেবে খ্যাত। পাশাপাশি তার গানের গলা ও দারুন।তার গান বেশ উপভোগ করে দর্শক।

হঠাৎ সব লাইট অফ হয়ে গেল।সবার মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পিনপতন নীরবতা ভেঙে হঠাৎ করেই লাইট জ্বালিয়ে আঁধার কেটে ঝলমলে আলোর দেখা মিলল।স্টেজে গারো লাল রঙের গাউন পরিহিতা মেয়েটি তার নৃত্যের ছন্দে দাঁড়িয়ে আছে!
দর্শকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত নৃত্য শিল্পী ঐশ্বরিয়া পাল ঐশী কে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে জানান দিচ্ছে! চারিদিকে হ‌ই হুল্লোড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে পরিবেশ।

তারপর ঐশ্বরিয়া পাল তার নৃত্য শুরু করে একটি হিন্দি গানের মধ্য দিয়ে।
.
.
স্টেজের মেয়েটিকে দেখে ফয়জান এর ভিতরটা ধক করে উঠল। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে। মায়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় ফয়জান। ফাহমিদা খাতুন মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
-” দেখ কাকে ঘরে তুলেছিস!
নাচনেওয়ালি মেয়ে তোর বউ!

“নাচনেওয়ালী” কথাটা কয়েক বার বারি খেল ফয়জান এর কানে। সেদিন সমির স্যার ও বলেছিলেন নাচনেওয়ালী। তাহলে কি স্যার সবটা জেনে শুনেই বলেছিলেন?

মায়ের এমন চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ফাইজা রুম থেকে বেরিয়ে এলো কি হয়েছে জানার জন্য?এসেই বললো,
-” মা কি হয়েছে? এভাবে কথা বলছো কেন?

ফাহমিদা খাতুন ফয়জান এর কাছ থেকে ফোন নিয়ে ফাইজার হাতে দিয়ে বললো,
-” এই দেখ তোদের আদরের ভাবী মনির মুখোশ উন্মোচন!

ফাইজা এক হাতে মাথা টিপে বললো,
-” কি সব বলছো তুমি?

ফাহমিদা খাতুন ফোনটা ফাইজার সামনে ধরে বললো,
-” দেখে নে তারপর যা বলার বলিস।

অতঃপর ফাইজা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো!এ কাকে দেখছে সে? নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না ফাইজা। ফোন হাতে নিয়ে সোফায় বসে পড়লো।

তখন ফাহমিদা খাতুন আরো একটা আশ্চর্য জনিত খবর বলেন।যা শুনে ফয়জান এর চোখে পানি চলে আসে!

ফাহমিদা খাতুন জানান,আলো একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ে!তার জন্ম হিন্দু পরিবারে!

একের পর এক অজানা সত্যের মুখোমুখি হতে নিজেকে সামলাতে বেশ কষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফয়জান এর।তাই মাথা চেপে ধরে বললো,
-” প্লিজ মা চুপ করো।আর কিছু বলো না আমি সহ্য করতে পারছি না প্লিজ।

ফাহমিদা খাতুন ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
-” এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করিস না বাপ। তুই ঐ মেয়েকে জিজ্ঞাসা কর কেন এভাবে আমাদের ধোঁকা দিল? আমরা কি ক্ষতি করেছিলাম ঐ মেয়ের?
.
আলো কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভাঙ্গতেই বাহিরের কিছু কথা কর্ণধারে পৌঁছায় আলোর। কিন্তু সবাই ঠিক কি নিয়ে আলোচনা করছে তা বুঝতে পারে না সে।তাই বাথরুম থেকে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের বাহিরে বের হলো।
ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে এক পাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়াতেই ফাহমিদা খাতুন বলে উঠলেন,
ঐ তো মহারানী এসেছেন জিজ্ঞাসা কর তাকে?

সবার নজর এখন আলোর দিকে নিবদ্ধ। ফয়জান অসহায় মুখশ্রী করে তাকায় আলোর দিকে।
সবার এরকম চাহনিতে অস্বস্তি বোধ করে আলো। বুঝতে পারে না ঠিক কি হয়েছে?তার শ্বাশুড়ি মা কি জিজ্ঞাসা করার কথা বলছেন?

ফয়জান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-” আলো এখানে আসো?

আলো গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলে, ফয়জান তার পাশে বসিয়ে বললো,
-” সত্য কখনো চাপা থাকে না জানো তো?

আলো হকচকিয়ে তাকায় ফয়জান এর দিকে। ফয়জান আবার বলে,
-” কেন বললে না তুমি একজন হিন্দু ধর্মের! আমার আর তোমার বিয়েটা যে আদৌ বিয়ে হয়নি! সেই সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা আছে? একজন মুসলিম ছেলের সাথে একজন হিন্দু ধর্মের মেয়ের বিয়ে কে আমাদের ধর্মে নিষিদ্ধ আর সেই নিষিদ্ধ কাজটা আমি করেছি! আমাকে কেন বাঁধা দিলে না তুমি? কেন এই গুনাহের কাজ আমাকে করতে দিলে বলো?

আলো কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে ফাহমিদা খাতুন রেগে বললেন,
-” এখন চুপ করে আছো কেন? জবাব দাও এমন অন্যায় কেন করলে?

ফয়জান তার মাকে চুপ করিয়া বললো,
-” মা তুমি চুপ করে থাক প্লিজ।যা বলার আমাকে বলতে দাও?

ফাহমিদা খাতুন চুপ করে বসে রইলেন। সাথে বাকিরা ও নিরব হয়ে শুনছেন।

আলো’র চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি ঝরে পড়ছে। ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করে বললো,
-” মুসলিম হওয়ার নিয়তে কালেমা পাঠ করা কি আমার অপরাধ হয়েছে স্যার?

এ কথা শুনে সবাই চমকে তাকায়।
তখন আলো আবারো বললো,
-” যখন আমি ব‌ই’য়ে পড়ি আমার রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে এতো ধর্ম থাকতে এবং আমার হিন্দু ধর্ম থাকতে ইসলাম কেন রাষ্ট্রীয় ধর্ম?ভিশন জানতে ইচ্ছে করে এই ধর্মের ব্যাপারে।
তাছাড়া আমার একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড মেয়ে ছিল কখনো কথা হয়নি উনার সাথে কিন্তু উনি নিয়মিত উনার ধর্মের কিছু কিছু কথা নিয়ে পোস্ট করতো। যেগুলো আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। তখন আমার খুব ভালো লাগতো। আলাদা একটা টান অনুভব করতাম আমি। আমার মনে এটাই সেরা ধর্ম,এর উপরে কোন ধর্ম হয় না।

প্রতিদিন ই কোন না কোন চ্যানেল থেকে আমার শো এর অফার আসতো। সেগুলো তে আমার অনিহা তৈরি হতে শুরু করলো। নিজেকে পর্দা নামক ছায়ায় আবৃত করতে ইচ্ছে শুরু হলো। এই নিয়ে আমি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হতে থাকি। কারণ আমার সোসাইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। আমার সোসাইটি তে এগুলো কখনোই মেনে নিবে না আমি জানতাম।

অনেক ভেবে চিন্তে ঐ ফেসবুক ফ্রেন্ড আপুর সাথে যোগাযোগ করি আমি।আপুটা আমাকে অনেক গুলো হাদীসের ব‌ই সাজেস্ট করে….

#চলবে.…ইনশা আল্লাহ।