শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা পর্ব-২৯+৩০

0
318

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(২৯)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

“ইসলাম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম, যার অনুসারী সংখ্যা প্রায় ২ বিলিয়ন এবং এটি মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪.৪%, যারা মুসলমান নামে পরিচিত। মুসলমানরা ৫০ এর অধিক দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসমষ্টি। ইসলাম শিক্ষা দেয় যে আল্লাহ দয়ালু, করুনাময়, এক ও অদ্বিতীয় এবং একমাত্র ইবাদতযোগ্য অভিভাবক”।

এর মানে আমি গভীর ভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছি স্যার।
ঐ আপু টার সাজেস্ট করা ব‌ই গুলো আমি নিজে গিয়ে নীলক্ষেত থেকে সংগ্রহ করেছি। তারপর আমার পরিবারের চোখের আড়ালে গভীর রাতে পড়া শুরু করেছি। কারণ আমি আমার মামনি আর বাবার একমাত্র সন্তান। তাদের চোখের মণি ছিলাম আমি। না চাইতেই সব কিছু হাজির করা হতো আমার জন্য।আর তাই তাদের চোখের আড়াল হ‌ওয়া মুশকিল ছিল আমার জন্য।
মামনি এবং বাবা দুজনেই প্রফেসর ডাক্তার! তাদের কাজের মাঝেও আমার খুঁজ নিতে এতটুকু ভুলতেন না কখনোই। সবসময় একজন গার্ড নিযুক্ত থাকতো আমার সাথে। সেই সব খবরাখবর মামনি আর বাবার কাছে পেশ করতো।তাই ভয় পেতাম সে যদি ব‌ইয়ের ব্যাপারে কিছু বলে দেয়?

একটা মজার ব্যাপার হয়েছিল, আমি সারারাত জেগে ব‌ই পড়ে সারাদিন বিভোর হয়ে ঘুমিয়ে থাকতাম। খাবার খাওয়ার জন্য জোর করে ঘুম ভাঙ্গানো হলে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ঢুলে পড়তাম। তখন মামনি আর বাবা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে আমার জন্য ভাবে আমার কিছু হলো নাকি?এর জন্য কিছু টেষ্ট করানো হয় হা হা হা!
.
এতটুকু বলে কান্নায় নেত্রজোড়া ঝাপসা হয়ে আসে আলো’র।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে,একটু পানি পেলে গলাটা ভিজাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু কষ্ট চেপে রেখেছে নিজের মধ্যে পানি খেতেও তার ইগোতে লাগছে।
ফয়জান হাত ধরতে নিলে আলো হাত সরিয়ে নিল। অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় ফয়জান আলোর দিকে। ফয়জান বুঝতে পারছে আলো ভিশন কষ্ট পেয়েছে তার এবং তার পরিবারের ব্যবহারে।আলো’র কষ্ট সহ্য করতে পারছে না সে।তাই বললো,
-” আর কিছু বলতে হবে না, আমাকে মাফ করে দাও না জেনে অনেক কথা বলেছি তোমাকে?

আলো প্রতিবাদ করে বললো,
-” কথা যখন উঠেছে তখন সবটা বলতে চাই আমি। আমাকে বাধা দিবেন না প্লিজ?

ফাহমিদা খাতুন ভাষা হারিয়ে বসে আছেন নিরবে, মনে মনে ভিশন অনুতপ্ত তিনি।ফাইজার চোখে বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। মনে মনে ভাবছে ইসলাম ধর্ম কে কতোটা ভালবাসলে আলো তার জন্মদাত্রী মা এবং বাবা কে ত্যাগ করেছে। ভাবলেই শরীর লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে!

আলো জ্বীব দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে আবার বলতে শুরু করে,
-” হাদীসের ব‌ই গুলো পড়ে আমার চক্ষু খুলে যায়। আমি মহান রাব্বুল আলামীন এবং তার হাবীবের প্রেমে পড়ে যাই।
আমার ধর্মকে ভোজা মনে হতে শুরু হয়। যেখানে ইসলাম সম্পর্কে জেনেছি,
বিশ্বে ইসলাম সব বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইসলাম শব্দের সরল অর্থ শান্তি। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলাম ধর্মের লক্ষ্য। অশান্তি হয় এমন সব কাজ ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ। আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ (স.) বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব। তিনি জীবনে মিথ্যা কথা বলেননি। তিনি ছিলেন সত্যের
উপাসক। নবী হওয়ার আগে মক্কায় তিনি সত্যবাদিতার জন্য ‘আল-আমিন’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি ইমান। আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় তাঁর কোনো শরিক নেই। হযরত মুহম্মদ (স.) তাঁর (আল্লাহর) বার্তাবাহক। এই বিশ্বাসই ইমান। ইমান আনার পরে মানুষের পরিচয় হয় মুসলমান হিসেবে। মুসলমানরা হবে নবীর অনুসারী। মুসলমান আল্লাহর ইবাদত করে। ইবাদত শব্দের অর্থ সার্ভিস (সেবা) দেওয়া। ইবাদত দুই প্রকারের। আল্লাহর প্রতি (হকুল্লাহ) আর আল্লাহর সৃষ্টকুলের প্রতি (হক্কুল ইবাদত)। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত হলো আল্লাহর প্রতি বান্দার ইবাদত। এ ইবাদতে ভুল হলে আল্লাহ তা ক্ষমা করার অধিকার রাখেন। এ বিষয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনে বহু আয়াত আছে। কিন্তু বান্দার প্রতি অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি যে ইবাদত তা যদি আমরা পালন না করি এ জন্য যে গুনাহ হবে তা ক্ষমা করার মালিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি তা ক্ষমা না করেন তাহলে তা আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। এমন বিধান অন্য কোনো ধর্মে আছে কি? বান্দার হককে ইসলাম ধর্মে আল্লাহর হকের পরেই স্থান দিয়েছে।

ইমানের পরে আসে নামাজ। সময়ের ৫টি অবস্থানকে কেন্দ্র করে ইসলাম ধর্মে ৫ বার আল্লাহকে স্মরণ করার বিধানকে নামাজ বলে। ভোরে ফজর, দুপুরে জোহর, বিকালে আসর, সন্ধ্যায় মাগরিব আর রাতে এশার নামাজ ফরজ (অবশ্য পালনীয়) করা হয়েছে। মুসলমানরা একত্রিত হয়ে যথাক্রমে ২, ৪, ৪, ৩ ও ৪ রাকায়াত ফরজ নামাজ মসজিদে একত্রিত হয়ে আদায় করে। নামাজ আদায়ের আগে পানি দিয়ে পবিত্র হওয়ার (অজু করার) বিধান রয়েছে। দৈনিক ৫ বার অজু করার ফলে হাত, মুখমন্ডল, নাক, পা, মাথা পানি দিয়ে তিনবার করে বিশেষ নিয়ম মেনে ধৌত করা হয়। এতে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি লাভ করা যায়। দৈনিক ৫ বার ছাড়াও ইসলাম ধর্মে সাপ্তাহিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক আরও তিন ধরনের ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়। প্রতি শুক্রবার মসজিদে ২ রাকায়াত ফরজ নামাজ, দুই ঈদে মাঠে ২ রাকায়াত ওয়াজেব নামাজ ও বছরে একবার পবিত্র কাবাঘরে হজের তাওয়াফ করতে হয়। এতে মুসলমানদের মধ্যে সাপ্তাহিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক সম্মেলন আকারে পারস্পরিক দেখা শোনা হয় ফলে ভ্রাতৃত্ব দৃঢ় হয়। অন্য কোনো ধর্মে এমন ব্যবস্থা আছে বলে আমার জানা নেই। নামাজের মাধ্যমে মানুষের মনে আল্লাহর প্রেম সৃষ্টি হয়। ফলে প্রকৃত
নামাজ আদায়কারীর দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ সাধিত হয় না।

দ্বিতীয় স্থানে আসে বছরে ১ মাস রোজা পালন। হিজরি বর্ষের রমজান মাসে দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত ও সকল প্রকার অন্যায় কাজ, অন্যায় চিন্তা ও কুমতলব থেকে মুক্ত থাকাই রোজা। রমজান মাসে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী একই সময়ে সাহরি খায়, একই সময়ে ইফতার করে। এতে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে একটি শৃঙ্খলা আসে। দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজের অতিরিক্ত হিসাবে আরও ২০ রাকায়াত তারাবিহ নামাজ পড়ার ফলে প্রতিটি রোজাদারের শরীর ও মন পরিশিলীত হয়। সারা দিন পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকায় একজন রোজাদার ক্ষুধার কষ্ট বুঝতে পারে বিধায় সে অনাহারি মানুষের দুঃখ যাতনা অন্তর দিয়ে অনুভব করতে সক্ষম হয়। যা একজন বেরোজাদার কখনও অনুভব করতে পারে না। রোজাদার অনাহারি গরিব মানুষদের সহায়তা সরার তাগিদ রোজার মাধ্যমে অনুভব করে। ফলে মনুষ্যত্ববোধ হৃদয়ে বেশি করে জাগ্রত হয়। এতে মহান আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য বৃদ্ধি পায়। নামাজ ও রোজার মাধ্যমে মানব মনে আল্লাহর প্রেম (তাকওয়া) সৃষ্টি হয়। চরিত্রে নম্রতা ও বিনয় সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ জাগ্রত হয়। এটাই রোজার শিক্ষা।
সব মুসলমানের জন্য ইমান, নামাজ ও রোজা ফরজ। মুসলমানদের মধ্যে যারা ধনী তাদের জন্য আরও দুটি ফরজ ইবাদত আছে। তা হলো জাকায়াত আদায় করা ও জীবনে একবার মক্কায় গিয়ে হজ পালন করা। ধনীদের সম্পদে রয়েছে গরিবের হক। ইসলামের বিধান মেনে নির্দিষ্ট হারে সম্পদের ওপর জাকায়াত হিসাব করে কড়ায় গন্ডায় আদায় করতে হবে। ক্ষোদ দেখানো, ফাঁকিঝুকি দিয়ে নিজের মনগড়া হিসাবে জাকায়াত দিলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ধনীরা যদি ঠিকমতো জাকায়াত না দেয় তা হলে শেষ বিচার দিনে তাদের ধরা খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামের বিধান মেনে সব মুসলমান জাকায়াত দিলে বিশ্বে মুসলমানদের
মধ্যে গরিব খুঁজে পাওয়া যেত না। অন্য কোনো ধর্মে জাকাতের অনুরূপ আর্থিক ইবাদত নেই।

জীবনে একবার হজ পালন করা ধনী মুসলমানের জন্য ফরজ। হজ পালনের মধ্য দিয়ে একজন হাজী শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসেন। সারা বিশ্বের মুসলমানরা আরাফাত ময়দানে একত্রিত হয়। যা একদিক দিয়ে বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের রূপ নেয়। যার ফলে বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। হক্কুল ইবাদতের মধ্যে নিষ্ঠার সঙ্গে সব কাজকর্মই আসে। কৃষকের কৃষি কাজ, জেলের মৎস্য ধরা, মাঝির নৌকা চালানো, ঠিকমতো ড্রাইভ করা, সৎভাবে চাকরি করা ইত্যাদি হক্কুল ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। কথায় সৎভাবে সম্পাদিত সব কর্মই ইবাদত।

এর পর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে আমি পিছুপা হ‌ই না। একদিন মামনি আর বাবাকে বললাম চলো আমরা মুসলমান হয়ে যাই!এ কথা শুনে সেদিন প্রথম এবং শেষ বারের মত মামনি আমার গায়ে হাত তোলেছিল!যে কখনো একটা ভুলের টুকাও দেয়নি আমাকে। খুব কেঁদেছিলাম সেদিন কিন্তু মামনি আর বাবার চোখে এতটুকুও মায়ার ছিটেফোঁটা দেখতে পাইনি!

মামনি, বাবাকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু তার তাদের পূর্ব পুরুষদের রিতি কিছুতেই পরিবর্তন করবে না। আমি তখন পাগল প্রায় হয়ে পড়ি। কি করবো? কোথায় যাবো?
কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শুরু জুনিয়র শিক্ষক’রা আমাকে খুব ভালোবাসে। আমার জীবন বিত্তান্ত প্লাস পড়াশোনার জন্য। একদিন মাথা ব্যথা নিয়ে কমন রুমে বসে ছিলাম তখন আইরিন সুলতানা মিস আমার পাশে বসে স্নেহের স্বরে জিজ্ঞাসা করলো আমার কি হয়েছে? আমি ক্লাসে মনোযোগী ন‌ই কেন?

তখন আইরিন সুলতানা মিস কে আমার সমস্যার কথা জানাই। তিনি এতে ভিশন খুশি হয়ে প্রায় কেঁদেই দিয়েছিলেন। এরপরের দিন লাইব্রেরী কক্ষে আমাকে ডেকে পাঠালেন। তারপর আমাকে বললেন যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করলে তিনি আমাকে দত্তক নিবেন! সেদিন নতুন করে বাঁচার স্বপ্নের পথ পেয়েছিলাম আমি। আমি বুঝতে পারি সবটাই আমার আল্লাহ তা’আলার কুদরত ছিল।

অতঃপর,
আমি মুসলিম হওয়ার নিয়তে কালেমা পাঠ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি “আলহামদুলিল্লাহ”।
যারা কারণে মামনি আর বাবা আমাকে ত্যাজ্য কন্যা করে দেন! তারপর আইরিন সুলতানা মিস আইনগত সহায়তা নিয়ে আমাকে তার মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এস.আই. তায়েস মাহমুদ!যিনি সমস্ত ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন!

আলোর শেষার্ধ কথায় সবাই চমকায়! রুহুল আমিন বলে উঠেন,
-” আমাদের তায়েস! তারমানে ও সবকিছু জানতো?…

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(৩০)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, হয়তো বৃষ্টি হবে।সাথে কারেন্ট চলে গেল।রামিসা অন্ধকার রুমে হাতরে দেশলাই এবং মোমবাতি খুঁজে চলেছে জ্বালানোর জন্য। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না কিছুতেই।

এর মধ্যে মৃদু মন্দ হাওয়া বইছে, বেলকনির গ্রিল গলিয়ে রুমে প্রবেশ করছে। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে রামিসা অরুনলোচন আঁখি মেলে তাকায় কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না অন্ধকারের দৌলতে!
রামিসা এদিক ওদিক সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
-” কে এখানে?

কোন সাড়া শব্দ নেই!তাই আবার বললো,
-” কে এখানে? কথা বলছেন না কেন?

এবারো নিশ্চুপ নিরবতা। তবে পায়ের শব্দ আর গারো হতে লাগলো! ধীরে ধীরে খুব নিকটে এসে রামিসার অধরপল্লব দুটো আঁকড়ে ধরে! সেই শব্দ যুক্ত মানব।
রামিসা প্রথমে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যায়। পরে বুঝতে পারে এ আর কেউ নয় তার ছায়া সঙ্গিনী।তার সবটুকু জুড়ে যার অস্তিত্ব।

কায়েস রামিসা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ধীর পায়ে বেলকনিতে এগিয়ে যায়। সেখানে কিছুটা আলোর দেখা মিলল।রামিসা নত মুখে বললো,
-” এভাবে কেউ এরকম করে? জানেন কতোটা ভয় পেয়েছি আমি?

কায়েস রামিসা কে আরো গারো ভাবে আলিঙ্গন বদ্ধ করে বললো,
-” মাঝে মাঝে স্ত্রীর সাথে হাসি ঠাট্টা করা প্রিয় নবীর সুন্নাত।তাই তো সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটা সুন্নাত কামিয়ে নিলাম হা হা হা।

রামিসা কায়েস এর পেটে কনুই দিয়ে খুচা মেরে বললো,
-” তাই না?

কায়েস রামিসার গলায় অধর ছুঁয়ে বললো,
-” তাই তো মিসেস রামিসা।

রামিসা পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।এই অন্ধকারচ্ছন্ন মুহূর্তটা উপভোগ করতে সেও তার স্বামীর সাথে যুক্ত হয়।
.
পুরো বাসায় অন্ধকার বিরাজ করছে।এক সপ্তাহ হবে সৌর বিদ্যুৎ নষ্ট হয়ে আছে। আয়েশা কতোবার শফিক মাহমুদ কে বলেছেন লোক এনে ঠিক করানোর জন্য। কিন্তু তিনি আলসেমি করে লোক আনান নাই তাই ঠিক করানো হয়নি।
দুই ছেলে অফিসার কাজে সারাদিন ব্যস্ত থাকে তাই তাদের বলে নাই আয়েশা।

এখন বসে বসে ইচ্ছামতো ব‌উয়ের কাছে বকাঝকা হজম করছেন শফিক মাহমুদ।
শফিক মাহমুদ ব‌উয়ের জারি কমানোর জন্য মোবাইল এর ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে দেয়।এতে আঁধার কিছু টা কাটলেও আয়েশা আরো রেগে বললেন,
-” তোমার এই বন্ধ করবে নাকি আমি আছাড় মেরে বন্ধ করবো!যখন একটা কাজ দিয়েছি তখন করলে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হত আজকে? আজকে যদি কারেন্ট না আসে তখন কি হবে? কিভাবে খাওয়া দাওয়া সব কিছু হবে?

শফিক মাহমুদ বুঝলেন আজকে তার স্ত্রী ভিশন ক্ষেপেছে। তাই চুপ থাকাই শ্রেয়। না হয় আগুন ঘি ঢালার মতো হবে। সাথে কানে আঙ্গুল দিয়ে রেখেছেন!ভাগ্যিস অন্ধকার তা নয় তো সব কিছু শুনতে হতো।

পরক্ষনেই আবার ভাবলেন, অন্ধকার বলেই তো তার স্ত্রী ভিশন ক্ষেপেছে তা নয় তো কী আর এতো কথা শুনাতো?
.
.
রিসোর্ট থেকে তায়েস আর নূর চলে গিয়েছে নূরের বাসায়।আলিফ অনেক খুশি তায়েস কে পেয়ে।তার খেলার পার্টনার হিসেবে তায়েস কে খুবই পছন্দ তার।

নূর অনেক দিন পর বাবার বাড়ি এসে ভিশন খুশি।তার ভার্সিটি ফ্রেন্ডদের ইনবাইট করা হলে তারা সবাই চলে আসে নূর এর বাসায়। এখন নাস্তার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে তাদের সাথে নূর।কেউ কেউ তায়েস কে নিয়ে এটা ওটা বলে ঠাট্টা করছে আর নূর লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
.
.
আলো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-” গতকাল আমাকে যে ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছে তিনি আমার জন্মদাত্রী মামনি!ডাক্তার মিথিলা পাল!

ফাইজা এবং ফয়জান এবার বুঝতে পারে গতকাল আলো এই কারণেই ডাক্তার মিথিলা পাল কে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল।
অথচ ডাক্তার মিথিলা পাল কে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে আলো তার জন্মদাত্রী।

আসলে যার যার ধর্ম তার তার কাছে প্রিয়।
তাই কে কি ধর্ম গ্রহণ করবে এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বাধীনতা।কেউ কারো উপর ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
আর তাই মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! সাবধান, তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। কেননা তোমাদের পূর্বের জাতিগুলো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে’ (ইবনে মাজা, কিতাবুল মানাসিক)
.
আলো চোখের পানি মুছে নাক টেনে বললো,
-” বাবা ও হয়তো ঐ হসপিটালে ছিল। মামনি নিশ্চ‌ই আমার কথা বলেছে। কিন্তু আমি তো আর এখন তাদের মেয়ে ঐশী ন‌ই তাই আমার সামনে আসতেও এখন তাদের বিবেকে বাধে।

আলো মুখ চেপে ধরে কাঁদে।
ফয়জান উঠে গিয়ে গ্লাসে করে পানি নিয়ে এসে আলোর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
-” পানিটা পান করো?

আলো পানি তৃষ্ণায় কাতর হয়ে ছিল তাই ফয়জান এর থেকে গ্লাসটা নিয়ে পানি পান করলো।

তারপর কেউ কিছু বলার আগেই আলো উঠে দাঁড়ালো। বললো,
-” আমাকে একটু একা থাকতে দিবেন প্লিজ?

এ কথা শুনে সবাই ব্যথাতোর দৃষ্টিতে তাকায় আলোর পানে।আলো উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে দ্রত পায়ে হেঁটে নিজের রুমে গিয়ে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিল!

ফয়জান দুঃখে নিজের চুল টেনে ধরে।ফাইজা বলে,
-” সবটা না জেনে তোমাদের উচিৎ হয়নি ভাবী মণি কে এভাবে বলার। মেয়েটার ক্ষত স্থানে নতুন করে আঘাত করলে তোমরা। কি দরকার ছিল এভাবে বলার?

এই বলে ফাইজা চলে গেল তার রুমে।
ধীরে ধীরে রুহুল আমিন এবং ফাহমিদা খাতুন ও চলে গেল।তারা ভিশন অনুতপ্ত হয়ে আছে।সেটা প্রকাশ করার সময় তো দিল না আলো।

এখন একা বসে আছে ফয়জান।
বার বার এ কথা মনে করে ভিতর পুড়ছে তার যে সে আলোকে কিভাবে অবিশ্বাস করলো?সে তো আলোকে চিনে তার শিক্ষকতার শুরু থেকেই। তবুও এমন ভুল করতে পারলো?
মুখ চেপে ধরে বসে আছে সে।চোখ মুখ লাল রঙা হয়ে ফুলে আছে।

ঘন্টা খানেক পর মনে পড়লো আলো সেই দুপুরে খেয়েছে এর পর আর কিছু খায়নি।এই সময় তার ঘন ঘন খাবার খেতে হবে। এভাবে খালি পেটে থাখলে সমস্যা হবে তাছাড়া মেডিসিন আছে কিছু।
দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল, দরজায় কড়াঘাত করে বললো,
-” আলো দরজাটা খুলো প্লিজ তোমাকে খাবার খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে?

ভিতর থেকে কোন সারা শব্দ নেই। ফয়জান বার বার কড়াঘাত করেই যাচ্ছে।

এদিকে আলো রুম অন্ধকার করে শুয়ে আছে। কষ্টে তার বুক ফেটে কান্না আসছে। গতকাল মামনি কে দেখে খুব কষ্টে নিজেকে সামলাতে পারলেও আজকে আর সম্ভব হচ্ছে না। বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করছে আলো।
গতকাল হসপিটালে এদিক ওদিক খুঁজেও তার বাবার দেখা মিলেনি।চোখ দুটো তৃষ্ণার্ত কাকের মত খুঁজে বেড়িয়েছে এদিক সেদিক কিন্তু দেখা মিলেনি। হয়তো ইচ্ছে করেই আড়াল হয়ে ছিলেন।

ফয়জান বেশ কিছুদিন আলোকে ডেকে তার দেখা না পেয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসে। কি করবে ভেবে না পেয়ে কিছুক্ষণ পায়চারি করে। শেষে তিন সিটের সোফায় শুয়ে পড়ল ঠিকই কিন্তু রাতটা তার নির্ঘুম কাটলো।
.
কায়েস প্রতিদিনের মত আজকেও মসজিদ থেকে বেরিয়ে হাঁটাহাঁটি করে বাসায় ফিরে।
রুমে আসতেই রামিসা ঝাপটে ধরে কায়েস কে। কায়েস হেসে বলে,
-” ব্যাপার কি আজকে কি কোন স্পেশাল দিন নাকি? না হয় ম্যাডাম না ঘুমিয়ে জেগে আছে তার‌উপর নিজ থেকে এভাবে..

রামিসা কথার মাঝে বলে,
-“একটা জিনিস দেখাবো আপনাকে। কিন্তু কিভাবে দেখাই, আমার ভিশন লজ্জা লাগছে।

কায়েস হেসে বলে,
-” ভাবনার বিষয় তো! কি এমন জিনিস যেটা দেখাতে লজ্জা লাগছে? আমি তো ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারছি না।দেখাও দেখি?.…

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।