#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(৩১)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। আকাশের লক্ষন দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হবে। সাথে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
ফয়জান নামায পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে অবলোকন করলো।বুঝলো কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হবে। তাই দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করলো।
বাসা থেকে মসজিদ একটু দূরে হওয়ায় ফয়জান আসতে আসতেই কাক ভেজা হয়ে গেল। বাসায় এসে দেখলো মেইন দরজা ভিরিয়ে রেখে দেওয়া।
ফয়জান ভিজে থাকা পোশাক পরিবর্তন করার জন্য দ্রুত রুমের দিকে গেল। দরজায় হাত রাখতেই খুলে গেল। এবারো অবাক হয়ে ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে আলো কে কোথায় দেখতে পেল না ফয়জান।
বেলকনিতে গিয়ে দেখলো সেখানেও নেই।
তারপর রুম থেকে বের হয়ে কয়েকটি রুমে খুঁজে না পেয়ে মায়ের রুমের দরজায় কড়াঘাত করলো।
ফাহমিদা খাতুন নামায শেষে জায়নামাজে বসে তাসবিহ পড়ছিলেন। দরজায় কড়াঘাত শুনে বললো,
-” দরজা খোলা আছে ভেতরে আস।
ফয়জান দ্রত ভিতরে ঢুকে বললো,
-” মা আলো কে দেখেছো?
ফাহমিদা খাতুন চমকে উঠে বললেন,
-” বউ যে গতকাল রাতে রুমে ঢুকলো আর তো বের হলো না!
-” না মা ও রুমে নেই!
ফাহমিদা খাতুন বসা থেকে দাঁড়িয়ে জায়নামাজ হাতে নিয়ে বললেন,
-” দেখ না ফাইজার রুমে বা অন্য কোন রুমে আছে কিনা?
ফয়জান কিছু না বলে দ্রত ফাইজার রুমে গিয়ে দরজায় কড়াঘাত করলো। মিনিট কয়েকের মধ্যে ফাইজা দরজা খুলে দিলে ফয়জান ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
-” আলো কোথায়? এখানে এসেছে?
ফাইজা ভাইয়ের অস্থিরতা দেখে বললো,
-” না ভাইয়া ভাবীমণি তো এখানে আসেনি।
ফয়জান বললো,
-” তাহলে নিশ্চয়ই ছাদে এক্সারসাইজ করতে গিয়েছে! আমি বরং ছাদে যাই।
এই বলে দৌড়ে সিঁড়ির দিকে চলে গেল।ফাইজা হাঁ করে তাকিয়ে আছে!কি বললো তার ভাইয়া?এই ঝুম বৃষ্টির মাঝে ভাবীমণি এক্সারসাইজ করবে কেন?
.
.
রামিসা পূর্বের ন্যায় জড়িয়ে ধরে আছে কায়েস কে। কায়েস কতো বলছে কি দেখানো কথা বলছে রামিসা,তা দেখানোর জন্য। কিন্তু রামিসা পড়েছে মহাবিপদে।যদি কায়েস তাকে বকাঝকা করে তবে? সেই ভয়ে টটস্থ হয়ে কায়েসের ই বুকে মুখ লোকায় সে।
রামিসা চিন্তায় পড়ে গেল,
ডাক্তার মিথিলা পাল তো বলেছিলেন,অল্প বয়সে গর্ভধারণ বা টিএনএজ প্রেগনেন্সি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।এটি মা ও শিশু দুজনের শরীরের ওপরই বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।আর তাই কায়েস যদি এগুলো নিয়ে ঝামেলা করে তাহলে?
আবার বিষয়টি লুকিয়ে রাখার ও নয়।যে না বললেই হবে।স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন হবে পরম বিশ্বাসের। বন্ধুত্বপূর্ণ, শেয়ারিং ও কেয়ারিং টাইপের। একসঙ্গে থাকতে গেলে ঠোকাঠুকি লাগবেই। এ জন্য নিজেকে সরিয়ে নেওয়া, লুকোচুরি খেলা কোন কিছুতেই ঠিক নয়।
.
রামিসা চোখ বন্ধ করে কায়েসের পাঞ্জাবি শক্ত করে মুঠোয় বন্ধ করে বললো,
-” আমি প্রেগন্যান্ট!
কথাটা কানে আসতেই কায়েসের হাত দুটো আলগা হয়ে গেল। এতেই রামিসা যা বোঝার বুঝে গেল।
কায়েস জোর করে রামিসা কে ছাড়িয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে বাহু চেপে ধরে বললো,
-” তুমি জানো কি বলছো? সেই সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা আছে?
কায়েস দ্রুত গিয়ে ড্রয়ার খুলে মেডিসিনের পাতা হাতে নিয়ে দেখে রামিসা মেডিসিন একটাও খায়নি। পুরো পাতা ফুলফিল রয়ে গেছে। কায়েস দুশ্চিন্তায় খাটে বসে পড়লো।
রামিসা ভয়ে ভয়ে গিয়ে পাশে বসে কায়েসের কাদে মাথা রেখে বললো,
-” ভাবুন তো একটা প্রাণ আমার মাঝে একটু একটু করে বড় হচ্ছে। ভাবতেই শরীর শিহরিত হয়ে উঠে তাই না?যে একদিন পৃথিবীর আলো দেখবে, আমাদের চোখের সামনে হাসবে, খেলবে।
একটা ছোট্ট প্রাণ যার শরীরটা তুলার মতো নরম, মখমলে হবে। ছোট ছোট হাত পা ছোড়াছুড়ি করে খেলবে।আদো আদো ভাষায় কথা বলবে। ভাবতেই আনন্দে আমার নাচতে ইচ্ছে করছে জানেন?
কায়েস দৃষ্টি সামনে নিবদ্ধ রেখেই বললো,
-” টিএনএজ প্রেগনেন্সি কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ সে সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা আছে? আমার কথা শুনলে না কেন?জানো না স্বামীর আদেশ অমান্য করার পরিণতি হবে ভয়াবহ? তবুও কেন এমন করলে তুমি?
রামিসা অশ্রুসিক্ত নয়নে বললো,
-” বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে এরকম কিছু করিনি। আমি মেডিসিন নিতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। কিছুদিন থেকে অন্য রকম ফিল করছিলাম তাই প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ এনে টেষ্ট করেছি আজ।আর তার পরেই শিউর হলাম।
.
.
ফয়জান দৌড়ে ছাদে ছুটে আসে। দরজা খুলে যখন বৃষ্টির উপস্থিত দেখলো তখন মনে পড়লো এই বৃষ্টির মাঝে আলো এক্সারসাইজ করবে কেন?তাই ফিরে যেতে নিলে কি মনে করে আবার ফিরে ছাদে চলে এলো।
ছাদের মাঝখানে আলোকে বসে থাকতে দেখে ফয়জান এর ভিতরটা ধক করে উঠল।মেয়েটা এই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজছে। সকাল বেলা এমনিতেই শীতের প্রকোপ থাকে কিছুটা।তারউপর এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে তো ভালো মন্দ কিছু একটা হয়ে যাবে আল্লাহ না করুক। তাছাড়া আলো তো এখন একা নয় ওর মধ্যে একটা প্রাণ বেড়ে উঠছে।তাও এতোটা অবুঝ হয় কিভাবে?
ফয়জান আলোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
-” আমাকে অন্যভাবেও তো শাস্তি দেওয়া যেত। এভাবে নিজেকে শাস্তি দিয়ে কেন আমাকে শাস্তি দিচ্ছ? আমার সাথে আমার অনাগত সন্তানকে ও দিচ্ছ! কেন আলো?
ঝুম বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে আলোর শরীর ঠান্ডা বরফের মতো শিথিল হয়ে গেছে। আধখোলা চোখে তাকিয়ে আছে ফয়জান এর দিকে।অধর দুটো বিরতিহীন ভাবে কাঁপছে তার। মুখে কোন টু-শব্দ করছে না। ফয়জান আর অপেক্ষা না করে আলোর হাত ধরে উঠে দাঁড়ায় কিন্তু আলো বসেই আছে তার মতো।
ফয়জান আরো কিছু বলতে নিলে আলো জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ল! ফয়জান দ্রুত মাথার দিকটায় হাত রাখার কারণে আঘা’ত থেকে বেঁচে গেল আলো।
ফয়জান আর সময় নষ্ট না করে আলোকে পাঁজা কোলে তুলে নিল।
বাসায় ঢুকতেই ফাহমিদা খাতুন এমন অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে আলোর? ফয়জান শুধু বললো,
-” বৃষ্টিতে ভিজছে,যার ফলে জ্ঞান হারিয়েছে।ওর কাপড় গুলো দ্রত চেঞ্জ করতে হবে মা।
তারপর রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কাবার্ড খুলে হাতের কাছে যা পেয়েছে তা নিয়েই ফিরে আসে আলোর পোশাক পরিবর্তন করার জন্য।
দরজার কথা খেয়াল হতে দৌড়ে গিয়ে বন্ধ করে নিল।
.
.
ঘন্টা খানেক পর,
আলো ঘুমের মাঝে কি যেন বলছে অস্পষ্ট বলে বোঝা যাচ্ছে না। ফয়জান পাশে বসে তেল মালিশ করে দিচ্ছিল।আলো কিছু বলছে শুনতে পেয়ে আলোর উপর ঝুঁকে পরে বললো,
-” কি বলছো আলো? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
কপালে হাত রেখে বুঝল জ্বর চলে এসেছে আলোর। ফয়জান এর নিজেরো ঠান্ডা লেগে গেছে। তবুও সে তার প্রাণ প্রিয় স্ত্রীর সেবায় নিয়োজিত।
কিছুক্ষণের মধ্যে কাঁপিয়ে জ্বর দ্বিগুণ বেড়ে গেল আলোর। একটা কাঁথার উপর আরেকটা কম্বল গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে ফয়জান।
ফাহমিদা খাতুন নাস্তা তৈরি করে নিয়ে এসেছেন।মেয়েটা গতকাল দুপুরের পর কিচ্ছুটি খায়নি।এই ভেবে আহত স্বরে বললেন,
-” বাবা ওরে কোন রকম ভাবে খাইয়ে দে না? এভাবে না খেয়ে থাকলে শরীর আরো বেশি খারাপ হবে।
ফয়জান আলো কে ডাকলো কিন্তু আলোর কোন সাড়া শব্দ নেই।মাঝে মাঝে জ্বরে কাঁপছে, কাতরাচ্ছে এই যা।
রুহুল আমিন ও ছেলে বউকে এসে দেখে গেলেন।আর আফসোস করলেন কেন যে কথা গুলো তুলতে গেলেন তারা? না হয় তো এরকম কিছুই হতো না।মেয়েটা এতো কষ্ট পেত না। নিজের আপনজন হারিয়ে একটু সুখের সন্ধান পেয়েছিল মেয়েটা। তারপর কি থেকে কি হয়ে গেল আহ্ আফসোস।
ফাহমিদা খাতুন চিন্তিত মুখে বসে রইলেন।ফাইজা বললো,
-” দো’আ করো মা তোমার দো’আ বিফলে যাবে না। তবে এই সময়ে এতোটা টেন্স ভালো নয় জানো তো?
-” এই সময় মানে?
-” হায়রে ঝামেলার কারণে তোমাদের বলাই হয়নি সরি সরি সরি!
ফাহমিদা খাতুন এই দুঃখ ভারাক্রান্ত মনের মাঝে যেন চাঁদ হাতে পাওয়ার খবর পেলেন!…
#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।
#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(৩২)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
সারাটা সকাল বৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রকৃতি নিস্তব্ধ। প্রকৃতি নতুন করে সতেজতার সহিত প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এখন শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা নেই।
শহরের সমস্ত ধুলোবালি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে। একটা ফুরফুরে অনুভূতি মিশ্রিত এক আবহাওয়া।
আলো’র জ্বরটা এখন ছেড়েছে। শরীর ঘর্মাক্ত হওয়ায় কাঁথা,কম্বল সব ফেলে দিয়েছে শরীরের উপর থেকে। ফয়জান অনেক জোরাজুরি করে কিছুটা খাবার খাইয়ে মেডিসিন দিয়েছে আলো’কে।
কিন্তু ফয়জান বেচারা বিরতিহীন ভাবে হাঁচি দিয়েই যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত টিস্যু বক্স অর্ধেক অংশ প্রায় খালি করে ফেলেছে। সেই দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই আলো’র। কেমন একটা নিস্তেজ হয়ে গেছে মেয়েটা। কোন কিছুতেই ভাবান্তর নেই যেন।
অথচ অন্য সময় হলে ফয়জান এর জন্য বিভিন্ন মশলা দিয়ে রং চা তৈরি করে নিয়ে আসতো।
আজকে শনিবার বলে কলেজ বন্ধ। এইদিক দেখে ফয়জান এর শান্তি। না হয় আলোকে রেখে আবার নিজেও অসুস্থ অবস্থায় কিভাবে যেত?এ জন্যই বলে আল্লাহ তা’আলা যা কিছু করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন।
“আলহামদুলিল্লাহ”।
.
.
রামিসার বিবশ হয়ে থাকা দেখে ব্যাপারটা সন্দেহজনক মনে হলো “লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক”আয়েশার কাছে। পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-” কি হয়েছে রে? এভাবে আনমোনা হয়ে কি ভাবছিলি?
রামিসা আয়েশার মুখোমুখি বসে বললো,
-” বড় মা তোমাকে একটা খুশির সংবাদ দেওয়া হয়নি!
-” অমা তাই কি সেটা?
-” ভাবীমণি প্রেগন্যান্ট।
-” আলহামদুলিল্লাহ।যাক এতো বছর পর বংশে নাতি নাতনির মুখ দেখতে পাব।
তারপর একটু মন খারাপ করে বললেন,
কিন্তু আমাদের ঘরে কবে যে ছোট ছোট হাত পা ছুড়ে দৌড়ে বেড়াবে।কবে দাদুমণি ডাক শুনবো?বয়স কম হলো না কোন দিন যেন ডাক চলে আসে!
এই কথা শুনে রামিসা কিঞ্চিৎ রেগে বললো,
-” একদম বাজে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি।
-” এটা যে চিরন্তন সত্য কথা। সকলকেই একদিন মৃ’ত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।(দীর্ঘশ্বাস)
রামিসা মলিন মুখে বললো,
-” তুমি দাদু হতে চলেছো বড় মা!
আয়েশার চক্ষু চরক গাছ! তারপর নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
-” এগুলো নিয়ে কেউ মজা করে পাগলী?
রামিসা কিছু না বলে মেইন দরজা খুলে বাহিরে এক পা রেখে বললো,
-” আমি ঐ বাসায় যাচ্ছি বড় মা, তোমার ছেলে খুঁজলে বলে দিও।আর হ্যা যা বললাম তা সত্যি!
এই বলে বেরিয়ে চলে গেল রামিসা। আয়েশা দাঁড়িয়ে পড়ল বসা থেকে।তার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না কিছুতেই। লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক। আচ্ছা কেন বিশ্বাস হচ্ছে না?রামিসা এখনো টিএনএজ বলে?
তিনি চললেন কায়েস এর কাছে। গিয়ে দেখলেন কায়েস লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। কপালে হাত রেখে। আয়েশা পাশে বসে বললেন,
-” রামিসা যা বললো তা কি সত্যি বাপ?যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে এভাবে জানতে হলো কেন আমাকে? আমার আর তোর বাবার কতো স্বপ্ন আমাদের ঘর আলো করে নাতি নাতনি আসবো। আমরা শেষ বয়সটা তাদের সাথে কাটাবো।
কায়েস ঠিক হয়ে বসে বললো,
-” তোমার বউ’মার বয়সটা দেখেছো মা? এই বয়সে রামিসার গর্ভধারণের কতো ঝুঁকি থাকবে সেই সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই। আমার হাত পা বাঁধা বলে না হয়..
আয়েশা হতচকিত হয়ে বললেন,
-” থাম! আর বলিস না।
আয়েশা বুঝতে পারলেন কায়েস কি বলতে চাইছিল।তাই সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে দিল না। হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন,
-” এবোরশনের বিধি,
কোন মহিলা অত্যাধিক দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম হয়। তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক গর্ভপাত বৈধ হবে। মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা।
এ ব্যাধি সম্পর্কে বিস্তারিতঃ
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, ভ্রুণের বয়স যখন হয় তেতাল্লিশ দিনের কম, তখন ভ্রুণ একটি রক্তপিন্ড হিসেবে মায়ের গর্ভে অবস্থান করে। এ সময় পর্যন্ত তার কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায় না। এ অবস্থায় ভ্রুনটিকে মানুষের শরীরের একটা অঙ্গ হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। আর মানুষের প্রতিটি অংশের মালিক স্বয়ং
আল্লাহ তায়ালা। অতএব শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো এই অঙ্গটিও নষ্ট করা নাজায়েজ। তবে যদি স্তন্যদানকারিনী গর্ভবতী হয়ে দুধ বন্ধ হওয়া এবং বাচ্চা মারা যাওয়ার আশঙ্কা হয়, এ অবস্থায় গর্ভে বীর্য জমাট রক্ত কিংবা গোশতের টুকরাকারে থাকলে এবং কোনো অঙ্গ প্রকাশ না পেলে চিকিৎসার মাধ্যমে গর্ভপাত করানো জায়েজ আছে।[১]
ভ্রুণের বয়স যখন তেতাল্লিশ দিন হয়ে যায়, তখন থেকে তার প্রয়োজনীয় অরগ্যান, যেমন ফুসফুস, নাক, হাত ও বিশেষ কিছু হাড় ইত্যাদি প্রস্তুত হওয়া শুরু হয়। অতএব তখন থেকে শুরু করে চার মাস পর্যন্ত গর্ভপাতের মাধ্যমে বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় ভ্রুণটি নষ্ট করে ফেলা মাকরুহে তাহরিমি।[২]
ভ্রুনের বয়স যখন ১২০ বা চার মাস হয়ে যায়, তখন আল্লাহ তায়ালা তার মধ্যে রুহ দান
করেন। আর রুহ আসার পর বাচ্চা নষ্ট করা কোনো মানুষকে হত্যা করার শামিল। তাই এ সময় ভ্রুণহত্যা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।[৩]
তাছাড়া আমাদের রামিসা বয়সের তুলনায় বেশ ম্যাচিউর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করলে ইনশা আল্লাহ কোন সমস্যা হবে না। এখন কতো মেয়েরাই টিএনএজ বয়সে গর্ভবতী হচ্ছে। আমাদের যুগে তো আমারাই তার প্রমাণ। তুই এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করিস না আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা রাখ আর মোনাজাতে বেশি বেশি দো’আ কর।
কায়েস চুপ করে সবটা শুনে বললো,
-” রামিসা কোথায়?
-” ওর বাবার বাসায় মানে ঐ বাসায় গিয়েছে।
-” ওহ্
.
.
রামিসা বাসায় আসতেই আলো’র ব্যাপারে সবটা শুনলো। ফাহমিদা খাতুন বললেন,
-” আলোকে শান্তনা দেওয়ার জন্য।এ সময়ে হাসিখুশি থাকা খুব জরুরী।অথচ মেয়েটা কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলছে না।
রামিস বললো,
-” আমি দেখছি কিছু করা যায় কিনা।
তারপর ফয়জান দের রুমে গেল।
আলো খাটে বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে আর ফয়জান একটু দুরত্বে বসে টিস্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে।
রামিসা দু’জনকে এক পলক দেখে বললো,
-” ভাইয়া তুমি বাহিরে যাও তো আমি ভাবীমণির সাথে কিছু কথা বলবো।
এ কথা শুনে ফয়জান আলোর দিকে তাকিয়ে টিস্যুর বক্স আর ঝুড়ি হাতে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
ফয়জান চলে যেতে রামিসা আলোর একদম কাছে বসে বললো,
-” কেমন আছো ভাবীমণি?
আলোর থেকে কোন সারা পাওয়া গেল না।তাই রামিসা আবারো বললো,
-” আচ্ছা ভাবীমণি তুমি তো অনেক কিছু জানো, আমাকে বলতে পারো?গর্ভের ভ্রূণ এবো’রশন করা আর মানুষ হ’ত্যা করা একই গুনাহ এর সামিল তাই না?
রামিসার এমন অদ্ভুত কথায় চোখ দুটো বড় বড় করে তাকায় আলো। বুঝতে পারলো না রামিসা এই ধরনের কথা কেন বলছে?
রামিসা আলোকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-” আমি প্রেগন্যান্ট ভাবীমণি।
আলো চোখ বন্ধ করে রামিসা কে আঁকড়ে ধরে,অস্পষ্ট স্বরে বললো,
-” আলহামদুলিল্লাহ।দো’আ করি আল্লাহ তা’আলা একজন নেক সন্তানের জননী করুন তোমাকে।
রামিসা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
-” কিন্তু উনি চান না আমি এখনি সন্তান জন্ম দেই!
আলোর কন্ঠ এবার স্পষ্ট হলো।রামিসা কে সোজা করে বসিয়ে কাঁদে হাত রেখে বললো,
-” সেকি!কেন? ভাইয়া এরকম কথা কিভাবে বলতে পারেন, আমি জানি তিনি একজন পরহেজগার মানুষ তবে?
-” উনি আমাকে নিয়ে ভিশন চিন্তিত হয়ে আছেন ভাবীমণি। লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক।তাই বলেছেন সময় থাকতে যেন আমি এবো’রশন করিয়ে নেই! আমি কিছুতেই বুঝাতে পারছি না ভাবীমণি। এখন তুমি বলো আমার করণীয় কি?
-” ভাইয়া কে বোঝাতে হবে, এখন অনেক উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
-” আমি জানি না উনি বুঝবে কিনা!
আলো চিন্তিত মুখে বললো,
-” এটা তো লক্ষ্য রাখতে হবে,দুনিয়ার সামান্য ভোগবিলাস, কষ্ট বা লজ্জার ভয়ে আমরা যেন আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ঈমান ও আখেরাত কে বরবাদ না করে দেই।…
_______
রেফারেন্স:
[১](ফতওয়ায়ে কাজিখান : ৩/৪১০)
[২](আদ্দুররুল মুখতার ১০/২৫৪)
[৩](ফতহুল আলিয়্যিল মালিক খ. ১/৩৯৯)
______
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।