শেষের পঙক্তি পর্ব-১৬+১৭

0
419

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
অতীত তিক্ত হলেও সত্য। মিহাল যেমন চার বছর আগে তূরকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাধ্য হয়ে কস্ট দিয়েছিল তেমনি আজকে সত্য জানতে জোরাজোরিতে মিহাল নিজেও কস্ট পেলো। কিন্তু এটা তূরের প্রাপ্ত আঘাত থেকে অনেকটাই লঘু। মিহাল সামলে নিয়েছে নিজেকে। বিয়ে তো ভেঙেই দিয়েছে তূর। সবার চুপ হয়ে যাওয়া দেখে তূর চুটকি বাজিয়ে বলে,

–ও হ্যালো! ওটা এখনও নেই। সব ক্লিয়ার ওকে? খেলায় ফেরা যাক?

আবার খেলা শুরু হলো। রাফির কাছে দ্বিতীয়বারের মতো বোতল থামলে রাফি তো কোনো ভাবেই ডেয়ার নিবে না। প্রথমবার নাচিয়েছে তাই এবার ট্রুথ নিলো। রাফিকে প্রশ্ন করবে জারিন। জারিন বলে,

–কাউকে লাইফপার্টনার বানাতে চাস এমনভাবে ভালোবাসিস?

রাফি কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ রয়। যেনো প্রশ্নের জবাবটা তার কাছেই বড্ড অস্বস্তির। শেষমেশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–না।

তবে রাফি মুখে না বললেও মনে মনে যে তার অন্যকিছু তা উপস্থিত সকলের বোঝা কষ্টসাধ্য হয় নি। নাদিয়া সন্দিহান হয়ে বলে,

–সত্য বলতে বলা হয়েছে। লুকাতে না। সত্যটা বল। একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর “না” বলতে কারও চিন্তা করতে হয় না যদি না সে কিছু লুকায়!

রাফি এখনও নিরব। অর্ক পরিবেশ ঠিক করতে হেসে বলে উঠে,
–বাদ দে তো। বোতল ঘুরা।

তূর এবার অর্কের দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তারপর বলে,
–আমার সময় তো তুই ছাড় দিস নি। এখন কেনো রাফিরটা ঘুরাচ্ছিস? রাফিকে বলতে হবে। বল রাফি। আমাদের ফ্রেন্ড মনে করে বল।

রাফি বলতে চাচ্ছিলো না। আরও কয়েকজন ঝেঁকে ধরাতে তারপর স্বিকার করে,
–হ্যাঁ।

রাফির মুখাবয়ব দেখে মেয়েটার নাম এখনই জিজ্ঞাস করলো না। অন্তরালের কারণটা তো তারা জানে না। এরপর আবার খেলা শুরু হলো। মিহালের কাছে বোতল থামলে ডেয়ার নেয় মিহাল। মিহালকে ডেয়ার দেয় রিজভী।

–তূরকে প্রোপোজ কর মিহাল।

রিজভীর কথা শুনে তূর আশ্চর্যান্বিত হয়ে যায়। ডেয়ার দিবে ভালো কথা কিন্তু এটা কেমন ডেয়ার? তূর অসন্তোষ নিয়ে বলে,

–এটা কেমন ধরনের ডেয়ার? এতে আমাকে ইনভলব করছো কেনো?

রিজভী তূরের অসন্তোষ মনোভাব দেখে কথার খেই হারিয়ে ফেলে। আমতা আমতা করে বলে,
–মিহালের জন্য এটা চ্যালেঞ্জিং। সহজে পূরণ করতে পারবে না। তাই আর কি। তুমি রাগ করো না হ্যাঁ!

মিহাল অর্কদের দিকে তাকায়। ওরা চোখ দিয়ে ইশারা করলে মিহাল উঠে যায়। তূর মিহালকে উঠতে দেখে তাচ্ছিল্য হাসে। তূর মনে মনে জানে, মিহাল এটা করবে না। মিহাল তাকে পছন্দ করে ঠিক তবে তানজিনার সাথে বিয়ে ঠিক আবার চার বছর আগে হয়তো এটার জন্যই রিজেক্ট করেছিল। তূর অনিচ্ছাসত্ত্বেও মুখে হাসির রেশ লাগিয়ে বসে আছে।
কিছুক্ষণ পর হাতের তালুতে কয়েকটা গন্ধরাজ, কাঠগোলাপ ও বেলি ফুল নিয়ে হাজির হয় মিহাল। সব শুভ্রতায় পরিপূর্ণ। রঙিন ফুল তূরের পছন্দ কিন্তু শুভ্রতার প্রতীকী কিছু ফুল সর্বদা ভালোবাসার ছোট্ট তালিকায় একটা অতুলনীয় স্থান দখল করে আছে। ফুল গুলো এনে মিহাল তূরের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে পরে। মিহালকে যখন ফুল আনতে দেখেছিল তখনই তূর স্বস্থানে দাঁড়িয়ে যায় অবাক হয়ে। এটা সে কাশ্মিককালেও আশা করে নি। একটা ডেয়ারের জন্য এতো আয়োজন! তূর মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে মিহালের দিকে চেয়ে। মিহাল তার ওষ্ঠকোনে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে তূরের হতবাক হওয়া মুখশ্রী অবলোকন করে। তূরের পাশে বসে থাকা সবাই আস্তে করে সরে যায়। অর্ক ও রণক ছবি তুলছে। ওরা দুইজন ভালো ছবি তুলতে পারে বলে ওরাই তুলছে। রাফিও ভালো ছবি তুলতে পারে কিন্তু তার মন আজ খুব খারাপ!

মিহাল তূরের স্থির হওয়া কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
–চোখে তার মায়াতে পরিপূর্ণ। হোক সে অনেকটা অভিমানী! তার কাজল চোখের মায়ায় পরে আমি আজও উঠতে পারি নি। কাজলমায়া তার সাথে সয়ংসম্পূর্ণ। তার স্নিগ্ধ হাসিতে মুক্তো ঝরে। শুভ্রতা ঘেরা ভালোবাসা তারই জন্য। নীল অন্তরিক্ষে যখন মেঘেরা পেজা তুলোর মতো উড়ে যায় আবার যখন মেঘেরা এক রাশ বিষন্নতাকে কেন্দ্র করে খুব কাঁদে! আমার মন তখন বলে, মেঘকন্যার আমার উপর বড্ড অভিমান তো আমি আজও ভাঙাতে পারি নি। সে কি জানে? আমি তার অভিমানের ভার নিতে নিতে ক্লান্ত? ভালোবাসি তো তাকে। আমার কারণে তার ওই কাজলমায়া মিশ্রিত আঁখিযুগল থেকে অশ্রুরা অন্তহীন গড়িয়েছে। আমি যদি পারতাম তার অশ্রুকণার মূল্য দিতে! তার সামার্থ আমার আদৌ আছে? যদি সে এই শুভ্র ভালোবাসার প্রতীকগুলো গ্রহণ করে? আমার প্রতি অসম্ভব রাগ এই পবিত্র ফুলগুলোকে ভাগিদার করো না। তোমার সকল অভিযোগ আমি মেনে নিলাম।

রণক পুরো দৃশ্য রেকর্ড করে নেয়। তূরের নয়নযুগল দিয়ে নোনাজলের ধারা বইছে। বহুপ্রতীক্ষিত ভালোবাসার মানুষটা যখন সকল অভিযোগ গুলোকে হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো মুখ নিঃসৃত বাক্য দিয়ে হাওয়া করে দিতে পারে তখন কেমন অনুভূতি হয়? শুভ্র ভালোবাসা গুলোও যেনো অপেক্ষা করছে তাদের সাদরে গ্রহণ করার জন্য। কিন্তু তূরের মনে এখন দুই রকম ভাবনারা আন্দোলোন করছে। পূর্বের কস্টগুলো স্বীয় ইচ্ছায় মনের পর্দায় ভেসে উঠছে। তূর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরে। ভালোবাসা ও ফুল দুটোরই অপমান সে ইচ্ছাবশত করতে নারাজ। কি করবে না করবে তা ভেবে পাচ্ছে না। চোখের উপরে কপালের রগ ধপধপ করছে। মাথা প্রচণ্ড ব্যাথায় আরও অস্থির অবস্থা। তূর মিহালের মুখশ্রীতে আকুলতা দেখতে পাচ্ছে। এদিকে তূরের নিজের মনের অন্দরমহল ঝরে বিদ্ধস্থ হচ্ছে। তূর মিহালের মুখাবয়ব অপলক অবলোকন করতে থেকে নিজের দুহাত বারিয়ে মিহালের হাত থেকে ফুল গুলো স্বিকার করে নেয়। তারপর বহু কস্টে জড়ানো কন্ঠস্বরে বলে,

–আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ যদি তুমি দেখতে! আফসোস! আমি তোমার নিবেদন করা ফুল গুলো অস্বিকার করতে পারলাম না। এটা তোমার প্রতি থাকা আমার দুর্বলতার এক বিশাল কারণ। আমার পূর্বের ক্ষতগুলো আমাকে সকল অভিযোগ ও অভিমান ত্যাগ করতে দিচ্ছে না। আমি নিরুপায়। আজ হয়তো তোমার কস্টের কারণ হবো আমি আবার হয়তো না। মানুষের মন খুব খুব অভিমানী জানো! আমার অভিমানের পাহাড় ভাঙবে কবে তার দিনক্ষণ সমন্ধে আমি নিজেও অজ্ঞাত।

তূর ফুল গুলো নিয়ে দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে সেই স্থান ত্যাগ করে। মিহাল এখনও হাঁটু গেঁড়ে বসে আছে। অধরকোনে তার সূক্ষ্ম হাসি পরক্ষনেই নয়নযুগল দিয়ে টুপ করে কয়েক ফোঁটা সুখ গড়িয়ে পরলো। অস্বিকৃত হয়ে তার মনে দহন হচ্ছে তবে এই অস্বিকৃতি একদিন তার মঞ্জিল হাসিল করবেই। ভালোবাসার অভিমানের পাহাড় সে ভঙ্গ করবেই।

তূরের পিছু পিছু নাদিয়া, লিরা, ফাইজা ও জারিন যেতে চাইলে তাওহীদ ও শাফকাত ওদের বাঁধা দেয়। নাদিয়া শাফকাতের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে যেতে নিলে আসফি নাদিয়ার যাওয়ার পথ রোধ করে বলে,

–যাস না। জানি আমার কথা তোদের আজও বোকা বোকা লাগবে। তাও বলছি যাস না। কিছুটা সময় ওতে নিভৃতে নিজের কস্ট বিসর্জন দিতে দে। চার বছর আগের ওইদিন আমি তোদের আমি আটকাই নি তূরের সাথে সাথে থাকতে কিন্তু আজকে বলছি, যাস না।

চার বান্ধুবী আসফির ভাবাবেগ শূণ্য মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। তাওহীদ তখন আসফির সুরে সুর মিলিয়ে বলে,
–এখন তূরের একা থাকাটা জরুরী। থাকুক কিছু সময়। মিহালকেও এখন স্পেস দেওয়া উচিত। ওদের মনোমালিন্যে আমরা প্রত্যেক্ষ ভাবে না পরোক্ষভাবে সামিল হতে পারি যাতে আমাদের হস্তক্ষেপ ওরা জোর-জবরদস্তি মনে না করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
কিছু প্রহর বহমান কারও মিষ্টি প্রতিক্ষায়। তূর আড্ডার মধ্যে এলো তবে তার মুখশ্রীতে কিছুক্ষণ আগের ঘটনার রেশ মাত্র নেই। তূরের ভাবসাবে সবাই অবাক হলেও খুশি হয়েছে তূর স্বাভাবিক ভাবে কথা বলাতে। তূর এসেই বলে,

–বোতল ঘুরা। একবার বোতল যেনো আমার দিকে ঘুরে।

অর্ক বোতল ঘুরালো। প্রথমবার জারিনের দিকে গেলো যে কি-না তূরের পাশে বসা। এরপর আবার ঘুরালো সেটা লিরার দিকে। তৃতীয়বার তূরের দিকে আসলে তূর উৎফুল্লতার সাথে বলে,

–ডেয়ার নিবো।

সবাই কিছুটা অবাক হলেও তূরকে ডেয়ার দিতে নিলে তূর ওদের থামাতে বলে,
–ডেয়ারটা যেনো রিজভী আমাকে দেয়। যেমনটা সে তার বন্ধুকে দিয়েছিল। সেম টু সেম।

তূরের এহেনো কথায় সবাই নিশ্চুপ হয়ে তূরের দিকে চেয়ে আছে। মিহাল তীক্ষ্ণ নজরে তূরকে পর্যবেক্ষণ করছে কিন্তু ফলাফল শূণ্য। তূরের মুখাবয়ব প্রতিক্রিয়াহীন। রিজভী দোটানাতে আছে কি ডেয়ার দিবে। তূর রিজভীকে উদ্দেশ্য করে সহজ ভাবে বলে,

–আরে! টেক ইট ইজি। ইটস জাস্ট এ গেম। নাথিং মোর। সো, সেম টু সেম ডেয়ার দিতেই পারো। আই এম এক্সসাইটেড।

মিহালের মনে হচ্ছে তূর কিছু একটা করতে চলেছে তাই এরকম করছে। মিহাল রিজভীকে ইশারাতে ডেয়ার দিতে বলে। রিজভী তূরকে মিহালের মতো একই ডেয়ার দেয়, মিহালকে প্রপোজ করতে। তূর সানন্দে তা গ্রহণ করে। তূর নিজের স্থান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তারপর হাতের ইশারায় মিহালকে উঠতে বলে। মিহাল এখনও তূরের মতিগতি পর্যবেক্ষণে ব্যাস্ত। এমতাবস্থায় মিহাল উঠে দাঁড়ায়। তূর বাঁকা হেসে মিহালের চারিপাশে একবার চক্কর দেয় তারপর আবার রাউন্ড দেওয়ার উদ্দেশ্যে মিহালের ডান সাইডে গিয়ে তূর বলতে শুরু করে,

“ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই যে তাকে, ভালোবেসে ভালোবাসা বেঁধে যে রাখে।”

এবার তূর মিহালের সামনে এসে মিহালের চোখের দিকে তাকায়। তূরের চোখে মুখে একধরণের রম্যতার ছাঁপ। তূর ঘার কাঁত করে বলে,
–ডেয়ার ডান! তুমি আগেরবার এটা বলতে ভুলে গিয়েছিলে। তোমার ডেয়ার ডান হয়েছিল এবার আমারটাও।

মিহাল তূরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তূরের কথাতে সে বুঝেছে, তূর তাকে ইনডাইরেক্টলি কি বুঝিয়েছে। মিহালও তো ডেয়ারের বাহানায় প্রোপোজ করেছিল তাই তূর নিজের জমানো ভাব গুলো ডেয়ারের মাধ্যমে বলে দিলো। তূর ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা রেখে মিহালকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–কিছু তো প্রতিউত্তর করতে হবে, যেমনটা তখন আমি করেছিলাম। সো প্লিজ!

মিহাল মাথা নুইয়ে হেসে হাত পকেটে পুরে তূরের দিকে ঈষৎ মা’থা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বলে,

“অভিমানী পাখির অভিমান ভাঙাতে আমি সদা প্রস্তুত। তার করা অভিমান যে আমার কাছে প্রিয় অভিমান। তার অশ্রুতে আমি কাজলের মতো গলে যেতেও প্রস্তুত কারণ কাজলমায়ার নয়নযুগলে আমি কাজল হতে চাই।”

তূর ঠোঁট এলিয়ে হাসে তারপর চোখ-মুখে হেসে বলে,
–বেস্ট অফ লাক।

তূর নিজের জায়গায় এসে বসে নিজেই বোতল ঘুরায়। খেলা আবার চলতে শুরু করে। একপর্যায়ে খেলার সমাপ্ত ঘটিয়ে ওরা রিসোর্টে আরও কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। তূর আজকে ওর নানুর বাড়ি যাবে। তূরের নানুর বাড়ি যেতে রণক ও জারিনের পথে পরে। তূর রণকদের সাথে চলে যায়।

রিজভী মিহালকে উদ্দেশ্য করে কনফিউজড হয়ে বলে,

–তোর আর তূরের মাঝে কি কোল্ড ও’য়া’র শুরু হলো? আমার তো সব কনফিউশন লাগছে। হুট করে তূরের কি হলো যে সে ওরকম বিহেভ করা শুরু করলো?

মিহাল, রিজভী, অর্ক ও তাইজুলের সাথে একটা ব্রিজে এসে দাঁড়িয়েছে। ঘরির কাঁটা এখন ১০ টার ঘর ছুঁই ছুঁই। মিহাল নিরবতাকে উপলব্ধি করতে ব্রিজের সাথে গা এলিয়ে দাঁড়িয়ে খোলা আকাশ দেখছে। তারকাখচিত চাদরে আচ্ছাদিত অম্বর ঝিকিমিকি করছে। মিহাল জবাব দেয় নি রিজভীর প্রশ্নের। অর্ক সন্দিহান হয়ে বলে,

–তূর মেইবি অনেকটা অসন্তুষ্ট আমাদের প্রতি। নাহলে এই রাতের বেলা ওর নানুর বাড়ি কেনো যেতে যাবে? ওর নানুর বাড়িতে যে যাবে এমন কিছু তো বলে নি। হুট করে রণকরা বাস থেকে নামার সময়ই ওর নানুর বাড়ি যাওয়ার কথা মনে পরলো।

মিহাল ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–তার অভিমান! সে বড়োই অভিমানী। এতো সহজে সে মানবে না। প্রথমে আবেগে কন্ট্রোলেস হলেও পরক্ষণেই সে নিজের অভিমানকে প্রায়োরিটি দিয়েছে। আমি কি করবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না। সে মনে হয় ভাবছে, আমি তানজিনাকে পছন্দ করি! কিন্তু এটা তো সত্যি না। আমি তানজিনাকে কখনোই পছন্দ করতাম না। তানজিনার সাথে বিয়ে ঠিক হবার কিছুদিন আগে থেকেই আমি অর্কর মুখ ফসকে বলে ফেলা তূরের ভালোবাসার কথা জানার পর থেকে আমি তূরকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি। অন্যরকম ফিলিংস হতো মনে যা তখন আমার জীবনের বিশটা বসন্তে আগে কখনো হয় নি। আমার আগে প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে ভাবার সময়ই ছিল না। আমি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পড়ালেখাতেই ফোকাসড ছিলাম সাথে টুকটাক খেলাধুলা। বুয়েটে চান্স না পেলেও রুয়েটে সিএসসিতে খুব ভালো অপশন। নিজের লাইফ অর্ধেকের বেশি সেটআপ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার পর আমি ফ্রেন্ড সার্কেলের আড্ডাতে সামিল হতাম। এর আগে আমি খুব একটা আড্ডাতে আসতাম না। ক্লাসের ফাঁকে কেউ আমার সাথে কথা বলতে আসলে তখন হাসি-তামাশা হতো। কিন্তু কখনও কি ক্লাস ছুটির পর বন্ধুদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডাতে আমাকে দেখেছিস অর্ক? এখন আমার ফ্যামিলি কি ঠিক করে রেখেছিল তা আমাকে না জানালে কি আমার জানার কথা? না তো। যখন জেনেছি তখন আমি আমার মায়ের পছন্দের সাথে প্রথমবারের মতো দ্বিমত পোষণ করেছিলাম। আম্মুকে বোঝাতে অক্ষম হওয়ার পরে আমি নিজের মতো করে সবটা হ্যান্ডেল করতে চেয়েছিলাম। এরপর তূরের ব্লাইন্ড কনফেশন। আমি যদি তখন তূরকে এক্সেপ্ট করতাম তবে সেটা অনেক বড় হাঙ্গামা হতো। আমি তোদের কাউকে হয়তো বোঝাতে পারবো না সেটা কিন্তু পরিস্থিতি যার সেই বুঝে। বাবা-মায়ের সব কথা মানা ছেলেটাও যখন বাবা-মায়ের কোনো সিদ্ধান্তে কঠোর বিরোধিতা করে তখন বাড়ির পরিবেশ কেমন হয় তা সবাই বুঝতে পারবে না। আমি তখন নিজের মায়ের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিলাম আর তখন যদি তূরকে এক্সেপ্ট করতাম তবে তানজিনা সেগুলোকে রাঙিয়ে বেরাতো। আমার দিক থেকে তখন আমার করা কাজটা খারাপ মনে হয় নি। আমি তূরকে “তানজিনার সাথে বিয়ে ঠিক” এটা বলার তো এই মানে বের হয় না যে, “আমি তানজিনাকে ভালোবাসি!” কী? বের হয়? আমি কি তখন একবারও বলেছিলাম সে কথা? বলেছিলাম, “বিয়ে ঠিক”। আর তোদের সাথে তখন ইনায়াও ছিল। ইনায়া তানজিনার বেস্টি সেটা তো অর্ক তোর অজানা ছিল না। হ্যাঁ, আমি পরে সবটা ক্লিয়ার করি নি। কারণ আমার তখন সত্যি সময়ের দরকার ছিল তাছাড়া তখনও আমি ক্লিয়ার হতে পারি নি যে, তূরের প্রতি হওয়া অনুভূতি গুলো ভালোবাসা। তূরকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগতো তারপর তো মায়ের থেকে বিয়ের কথা জানলাম। তখন আমার মনে কেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা আমিই জানি। তোদের বললে জানতি তবে আমি রিজভীকে ছাড়া কারও সাথে কিছু শেয়ার করি নি।

রিজভী মিহালের কাঁধে হাত রেখে বলে,
–আস্তে আস্তে যখন সব ঠিক হওয়া শুরু করেছে তখন এটাও ঠিক হবে। ধৈর্যহারা হলে হবে না।

মিহাল হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। এরপর আরও কিছুক্ষণ সেখানে থেকে যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,