শেষের পঙক্তি পর্ব-১৪+১৫

0
431

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
তানজিনার বাবা পিনপতন নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করেন। তানজিনার গালে সপাটে চ’ড় পরে। হতবিহ্বল হয়ে যায় সকলে। চ’ড়টার শব্দ এতোটাই জোরে ছিলো যে তানজিনা মেঝেতে পরে গেছে। তানজিনার বাবা গর্জে উঠে বলেন,

–এরকম নিচু মন মানসিকতার অধিকারী তুমি কবে হলে? তোমাকে তো এই শিক্ষা দেওয়া হয় নি। বিবেকে বাঁধে নি তোমার তখন? মানুষ যদি নিজের বিবেকের সাথেই লুকোচুরি খেলে তবে সেই বিবেকহীন মানুষ প’শুর সমান। একটা ছেলের মানসিক অবস্থা নষ্ট করো তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছো তুমি।

তানজিনার ভাবি সাথি মেঝেতে তানজিনার পাশে বসে তার শ্বশুরের উদ্দেশ্যে নতমস্তকে বলে,

–বাবা, তানু তো সত্যও বলতে পারে। আর সাজিদ যদি না চায় কেউ না জানুক তাহলে ওরা প্রিন্সিপ্যালকে কি মুখের কথায় বিশ্বাস করিয়েছে? সাজিদ নিশ্চয়ই কিছু করেছে। শুধু শুধু তানুকে মিহাল হ্যারাস করছে।

তানজিনা যেনো ভাবির কথায় ভরসা পেলো। ভাবিকে ধরে নিজের অসহায়ত্ব জাহিরে ব্যাস্ত। তানজিনার মা, ভাই ও মিহালের মা এরা একবার তানজিনার দিকে তাকায় একবার মিহালের দিকে। তানজিনাকে যখন ওর বাবা মে’রে’ছিল তখন তামজিদ বাঁধা দিতে আসলে ওদের বাবা হাতের ইশারায় নিজের স্ত্রী এ পুত্রকে সামনে আসতে মানা করেন। মিহাল তানজিনার ভাবির কথার প্রতিউত্তরে বলে,

–সাজিদের ব্যাগ আমাদের কাছে ছিল। সাজিদ যখন তিন লাইনের চিঠি লিখছিল সেটা আমাদের দেখিয়েছিল ডায়েরি থেকে। এরপর পাতা ছিঁড়ে তানজিনাকে দেয়। তানজিনা বি’চার দেওয়ার পর সাজিদকে সাসপেন্ড করলে সাজিদের তখন নিজের ব্যাগের কথা মনে ছিল না। আমরা পরেরদিন প্রিন্সিপ্যালকে ওই ডায়েরির পরে পৃষ্ঠাতে পেন্সিল দিয়ে হালকা করে ঘষে তিন লাইনের লেখাটা প্রিন্সিপ্যালকে দেখিয়েছি তারপর সাজিদের বাবাকে ব্যাগের জন্য অনেক রিকুয়েস্ট করে সাজিদকে কলেজে আনি। এটা নিশ্চয়ই জানা যে আগের পৃষ্ঠার লেখার ছাপ পরের পৃষ্ঠাতে পরে।

তানজিনার বাবা কপালে হাত দিয়ে সোফাতে বসে পরেন। তানজিনা কান্নারত অবস্থায় হতবাক হয়ে মিহালের দিকে তাকিয়ে মেঝেতেই বসে আছে। কিছুক্ষণ পর তানজিনার বাবা মিহালকে প্রশ্ন করে,

–তুমি কি চাও? তানজিনাকে তুমি পছন্দ করো না তাই রুড ব্যাবহার করো তার কারণ তো দেখালে এখন তুমি কি চাও?

মিহাল এখনো তামজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পকেটে হাত গুঁজে মিহাল অকপটে বলে,

–তানজিনাকে বিয়ে করতে চাই না।

মিহালের জবাব শুনে তানজিনার মা ও মিহালের মা মিহালের দিকে তাকিয়ে আছে। তানজিনার সেদিকে ভাবাবেগ নেই তার শুধু নিজেকে বাঁচানো নিয়ে চিন্তা। সাথি ও তামজিদ এরকমটাই ভেবেছিল। তামজিদ বলে,

–সেটা তোমার সকল অভিযোগ গুলোতে অনেকটা স্পষ্ট।

মিহাল হোসে তামজিদের কাঁধে এক হাত রেখে বলে,
–আপনি বুঝলেও আমার মা বোঝে নি। এতসব হওয়ার পরেও আমার মা তানজিনাকে সুযোগ দিতো। হ্যাঁ, সুযোগ দেওয়ার যায়েজ আছে তবে আমি তো আর তানজিনাকে ভালোবাসি না। আর বিয়ে যেহেতু আমার সাথে তাই আমার চাওয়া না চাওয়ার তো মূল্য থাকা উচিত।

তামজিদ সহ সবাই চুপ করে আছে। মিহাল এক পলক তার বাবা-মায়ের দিকে তাকায়। মিহালের বাবার চোখে লুকায়িত প্রসন্নতার রেশ কিন্তু মিহালের মায়ের চোখে মুখে অমানিশা। মিহাল আবার বলে,

–আমি ছোট থেকেই পড়ালেখা ও খেলাধুলা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। আমি সবকিছু নোটিশ করতাম কিন্তু জরুরী না হলে চুপ থাকতাম। তানজিনার সকল কাজকর্ম নোটিশ করেও চুপ থাকতাম কারণ ওকে কয়েকজন মেয়ে মানা করেছিল। তূর, ইরা সহ কয়েকজন কিন্তু তানজিনা শোনে নি। ওদেরটা শুনেনি তাই আমার রুচি হয় নি কিছু বলার। কিন্তু সাজিদের ঘটনাটা গুরুতর ছিল বলেই আমি ইন্টারফেয়ার করেছিলাম। আমি ও সাজিদ দুইজনে ভালো ফ্রেন্ডই ছিলাম। ইন্টারের পর রুয়েটে চান্স পাবার পর যখন মা আমাকে তানজিনার সাথে বিয়ে ঠিকের কথা জানিয়ে কারও সাথে সম্পর্কে যেতে মানা করেন তখন আমি বাড়িতে কি করেছি তা মা নিজেও জানে।

মিহালের মা ছেলের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে আছে। মিহাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–মা জানতো কলেজ পর্যন্ত আমি নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে এসব প্রেম-ভালোবাসাতে জড়াই নি। কিন্তু একজনের মনের খবর সামনে আসার পর আমার মনেও সেই মেয়েটার প্রতি কিছু অনুভূতি জন্ম নিয়েছিল। যেই মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে বলে জেনেছিলাম সেটা আমি রুয়েটে ভর্তির আগেই আরেক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে জেনেছিলাম। কথায় কথায় মুখ ফসকে বলে ফেলেছিল আমার এক ফ্রেন্ড কিন্তু পরক্ষণেই তার হুঁশ হওয়াতে কথা ঘুরিয়ে ফেলে। আমি ঠিকই শুনেছিলাম তারপর সেদিন বাসায় গিয়ে যে মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে তার কথা চিন্তা করতে করতে তাকে আমার নিজেরও ভালো লেগে যায়। কিন্তু মায়ের সিদ্ধান্ত শোনার পর আমি বাধ্য হই মেয়েটার ব্লাইন্ড কনফেশনকে রিজেক্ট করতে।

তানজিনার বাবা চুপ করে শুনলেন তারপর বললেন,
–ঠিক আছে। তোমার সাথে তানজিনার বিয়ে আমি এখানেই ভেঙে দিলাম। তোমাদের এনগেইজমেন্ট এখানেই সমাপ্ত। তুমি তোমার নিজের পছন্দে বিয়ে করো। দোয়া করি সুখি হও।

মিহালের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে। মিহাল ওর বাবাকে ইশারা করে চলে আসতে। মিহাল তানজিনাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। মিহাল বেরিয়ে গেলে তানজিনার বাবা উঠে মিহালের বাবা ও মায়ের উদ্দেশ্যে বলেন,

–আমার মেয়ে যা করেছে তা জানা স্বত্বেও আপনাদের ছেলে যে এতোদিন চুপ ছিল এটা তার ধৈর্যশীলতা। মিহাল চেয়েছিল তানজিনার মাধ্যমেই এসব সামনে আনতে। আর এতোকিছুর পরেও যদি ওদের বিয়ে দেই তবে দুজনের জীবন নষ্ট করা হবে। মিহাল তো বলেই দিয়েছে সে তানজিনাকে সবসময় অপদস্থ করতে ছাড়বে না। এর চেয়ে ভালো নয় কি, ওদের একে অপরের সাথে না জড়ানো? মিহালের পছন্দেরও তো গুরুত্ব থাকা উচিত।

তানজিনার বাবার শান্ত ভঙ্গিতে কথায় মিহালের বাবা এগিয়ে গিয়ে উনার হাত ধরে বলেন,
–আপনার সাথে আমি একমত। মনের মধ্যে প্রথম থেকে অসম্মান ও রেশ নিয়ে পবিত্র সম্পর্ক শুরু না করাই ভালো কারণ এটার সমাপ্তি করুণ হতে দেখা যায়। আর মিহাল তো তানজিনার ব্যাপারে সবটা অবগত তাই বিরূপ প্রভাব আরও বেশি পরবে।

মিহালের বাবা-মা তানজিনাদের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে চলে আসেন। মিহাল বাহিরে বের হয়ে অর্ককে ফোন করেছে। অর্ককে সব জানালে অর্ক এবার রাফিকে জানিয়ে কিছু ঠিক করবে। মিহালের বাবা-মা এলে মিহালরা তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।

ওদিকে তানজিনার বাবা নিজের মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তানজিনার মা নিজের মেয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন।

________

আঁধার কাটিয়ে নতুন শুভ্রতায় আলোকিত ধরণী। কিছু নতুন করে শুরু হওয়ার আহ্বান করছে যার এক সময়ের শেষটা ছিল বিষাদময়। এবার সেই শেষ থেকে রচিত হোক নতুন শেষের পঙক্তি। নতুন শুরুতে কিছু আয়োজন না করলেই নয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে বেছে নিয়েছে শুভারম্ভ করতে।
তূরের দিনকাল বাড়িতে শুয়ে বসেই কাটে। মায়ের সাথে হেল্প করা এসবেই ব্যাস্ত। রমজান আসছে তাই প্রিপারেশন নিচ্ছে। অর্ক যখন ফোন করে একদিনের জন্য গাজিপুরের রিসোর্টে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে তখন তূর যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। চার-পাঁচদিন যাবত ঘরেই বসে আছে সে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৫
রিসোর্টে ওরা রাতে থাকবে না তাই সকালে যাত্রা শুরু করেছে। যাত্রা পথে তূর মিহালকে দেখে অবাক হয়। মিহালও যে যাবে তার ধারণা ছিল না। অর্ককে তূর দুয়েকবার ইনডাইরেক্টলি জিজ্ঞাসা করেছিল এটা জানতে যে মিহালও যাবে কি-না? তখন অর্ক কথা ঘুরিয়ে ফেলেছে। তূরের রাগ হচ্ছে মিহালকে ফোনে কথা বলার সময় হাসতে দেখে। হেসে হেসে হাত দিয়ে কপালে পরে থাকা চুল সরাচ্ছে যেটার কারণে মিহালকে অনেকটা এট্রাক্টিভ লাগছে। তূররা আলাদা মাইক্রোতে যাচ্ছে না। বাসেই যাচ্ছে। তূর আর মিহাল এক জায়গা থেকে বাসে উঠেছে। বাকিরা তাদের এরিয়াতে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে। টিকিট কা’টা আগের। মিহাল ও তূর পাশাপাশি বসে নি। মিহালের সিটের পাশের সারিতে তূর বসেছে। তূরের পেছোনে দুইটা মেয়ে বসা। ওরা মিহালকে নিয়ে নানারকম কথা বলছে যার কিছুটা তূরের কানে আসছে। তূর ওদের কথা শুনে শুনে ভ্রুঁ কুঁচকে মিহালের দিকে তাকাচ্ছে। মিহাল কালো শার্ট, বাদামি প্যান্ট ও কেডস পরেছে। চোখে সানগ্লাস। হাতে রিচ ওয়াচ। শার্টের হাতা গুলো কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। তূর মুখ কালো করে বসে আছে আর নিজের ওড়না খুঁটছে রাগে। পেছোনের মেয়ে গুলোর যেনো থামার লক্ষণই নেই। ওই মেয়েগুলোর কথা শুনে তূরের ইচ্ছা করছে মিহালকে বোরখা পড়িয়ে দিতে বা ওই মেয়েদের চোখ বেঁধে দিতে।

হঠাৎ তূরের সাইডে রোদ মামা উঁকি দিলো, ওমনি তূর মুচকি হেসে মিহালের দিকে ঘুরে বললো,

–মিহাল।

মিহাল তৎক্ষণাৎ কান থেকে এয়ারফোন খুলে তূরের দিকে তাকালো। এয়ারফোন কানে দিলে যে কেউ এক ডাকে কথা শুনে ফেলে তা আমার জানা ছিল না! এরপর তূর মিহালকে মুখ কালো করে বললো,

–আমার সাইডের জানালা দিয়ে না রোদ আসছে। আমার প্রবলেম হচ্ছে। আমি কি তোমার সাথে বসতে পারি?

মিহাল বাঁকা হাসলো। তারপর সিট থেকে উঠে দাঁড়ায়। তূর মৌন সম্মতি পেয়ে মিহালের সাথে জানালার সাইডে বসে। ওদিকে তূরের পেছোনের মেয়েগুলো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তূর মিহালের সাথে বসার আগে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়েছিল যার দরুন মেয়েদের এই অবাকতা।

______

পরের বাস স্ট্যান্ডে অর্ক, রাফি, রিজভী, তাইজুল ও রণক উঠলো। তাওহীদ, শাফকাত ও মেয়েরা সব পরের স্ট্যান্ড থেকে উঠবে। তূর মিহালের সাথেই বসে আছে। তূর ফেসবুক স্ক্রোল করছিল তখন রাফসান মেসেজ করে,

“হ্যালো, তূর।”

তূর মেসেজটা পড়ে ভ্রুঁ উঁচিয়ে তাকায় কিছুক্ষণ তারপর ফিরতি রিপ্লাই করলে রাফসান মেসেজ করে,

“কি করছো?”

তূর এক রাশ বিরক্তি নিয়ে লেখে,
“ফ্রেন্ডদের সাথে ট্যুরে যাচ্ছি ভাইয়া।”

রাফসান উৎফুল্লিত হলো। তারপর লেখে,
“বাংলাদেশে গিয়ে তো অনেক ঘোরাঘুরি করছো। যাক দুই মাসের মধ্যে ফিরে আসবে তো ঘোরাঘুরি করো।”

তূর অবাক হয়। রাফসান কি এখনও তাকে বিয়ে করার আশাতে আছে নাকি সেটাই ভাবছে তূর। তূর বুঝে পায় না, এই ছেলে পিছু কেনো ছাড়ছে না। ইগনোর করাটাও কি বোঝে না? ভদ্রতার জন্য টুকটাক কথা বলাতে যেনো সে মা’থায় চড়ে বসেছে। তূর নিজেকে কন্ট্রোল করে লেখে,

–এবার আমি আমার ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে ফিরবো। আর তাদের সাথেই থাকবো।

রাফসান জানে না তূরের ভার্সিটি পরিবর্তন ও তূরের খালামনিদের বাসায় থাকবে না সেটা। রাফসান সাথে সাথে অবাক হয়ে মেসেজ করে,

–মানে? কোথায় থাকবে তুমি? আর জাহিনদের বাসায় থাকবে না কেনো? আমেরিকাতে পরিচিত মানুষ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার তূর।

তূর মুচকি হাসির ইমোজি দিয়ে মোবাইল ডাটা অফ করে দেয়। এদিকে মিহাল সানগ্লাস পড়ে বসে আছে কিন্তু সে লক্ষ্য করেছে তূর মেসেজিং করছে। কিন্তু কার সাথে সেটা বুঝতে পারছে না।

দুপুর ১২ টার মধ্যে গাজিপুরের একটা রিসোর্টে পৌঁছে যায় ওরা। রেস্ট করার জন্য দুইটা রুম নিয়েছে। মেয়েরা একটু ফ্রেশ হয়ে রিসোর্ট ঘুরে ঘুরে দেখতে ব্যাস্ত সাথে ছবি তোলা। দুপুর ২ টার সময় লাঞ্চ করবে। তূররা কিছুক্ষণ ঘুরে রুমে এসে শুয়ে পরেছে। লাঞ্চের পর আবার ঘুরবে।

_________
তানজিনার বাবা তানজিনার সাথে দুইদিন ধরে কথা বলেন না। তানজিনা ভার্সিটিতে যায় আসে। সেদিনের তার বাবার কথা গুলো তানজিনার খারাপ লেগেছিল। আজ যেহেতু ভার্সিটি নেই তাই তানজিনা বাসায়। তানজিনার বাবা মেয়েকে ডাকেন। তানজিনা ভয়ে জড়সড় হয়ে বাবার থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়ায়। তানজিনার বাবা বলেন,

–তোমাকে আমি কানাডা পাঠিয়ে দিবো। সেখানে আমার এক ফ্রেন্ড আছে। ওখানে থেকে মাস্টার্স কম্পিলিট করবে। আমার যোগাযোগ হয়ে গেছে। তোমাকে এবার নিজেকে শোধরাতেই হবে। মনে রেখো, আমার বন্ধুর পরিবার নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে। ওর মেয়েরা শালিনতার মধ্যে চলাচল করে। তোমাকেও সেখানে ওদের মতো করে চলতে হবে। কোনো খারাপ সঙ্গে যুক্ত হবে না। আমার বন্ধুর ছোট মেয়ে তোমার সাথেই ক্লাস করবে। দুই মাস পর কানাডার ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হবে কিন্তু তোমাকে তিন মাস সময় দিবে ওরা। তোমার তো আইএলটিএস করা আছে। এখন তোমাকে প্রথম একমাস অনলাইনে ওদের ক্লাস এটেন্ড করতে হবে। তোমার ভিসার জন্য আমি এপ্লাই করে দিয়েছি। কয়েকদিন পর ডকুমেন্ট চাবে। ভার্সিটি থেকে সব ঝামেলা শেষ করে নিবে। এবার যাও।

তানজিনা অবাক হয়ে যায়। এভাবে হুট করে এতোকিছু তার মস্তিষ্ক যেনো গুলিয়ে ফেলছে। তানজিনা নিজের রুমে এসে বসলে ওর মা সেখানে আসেন। তারপর তানজিনার পাশে বসে বলেন,

–তোমার বাবা যা বলেছে সেটাই হবে। তোমার জন্য সেদিন উনাকে কম অ’পমানিত হতে হয় নি। তাছাড়া উনি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে তোমার ভালোই হবে। নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবে। দুইটা বছরেরই তো ব্যাপার। তারপর ফিরে আসবে। আমাদের মান ঠিক রেখে ফিরবে আশাকরি। তোমার বাবাকে আমি অনেক বলেও বোঝাতে সক্ষম হই নি। তাই মেনে নেও।

তানজিনা কিছুই বললো না। চুপ করে শুনে গেলো। তার ভবিষ্যৎ কি হতে চলেছে বা কেমন হবে নতুন পরিবেশ তা নিয়ে শঙ্কিত সে।

_______

লাঞ্চের পর কিছুক্ষণ রেস্ট করে ওরা অনেক ছবি ও ঘোরাফেরা করে আড্ডাতে বসলো। এবার ওরা ট্রুথ অর ডেয়ার খেলবে। একটা কাচের বোতল টেবিলের মাঝে রেখে সেটাকে ঘুরাবে। টেবিলটা গোল ও মোটামোটি বড়ো। ছেলেরা একবার করে হলেও ডেয়ার নিচ্ছে ইচ্ছে করে। মেয়েরা দুই-একজন ছেলেদের পিঞ্চে রে’গে গিয়ে ডেয়ার নিচ্ছে। ডেয়ারে নাচ-গান, প্রোপোজ সবই আছে। ট্রুথ নিলেও নিজের জীবনে অজানা কিছু সত্য বলতে হচ্ছে। তূরের কাছে এলে তূর ট্রুথ নেয়। তূরকে নিজের জীবনের লুকায়িত কিছু বলতে বলে যা তূর সবার কাছে প্রকাশ করে না বা বলে না।

তূর ইতস্তত হয়ে বলে,
–আমি রেগে গেলে নিজের ক্ষতি করি।

অর্ক হাই তুলতে তুলতে বলে,
–নেক্সট প্লিজ। এটা সবাই জানে। অন্যকিছু বল।

তূর বাঁকা চোখে তাকায় অর্কর দিকে। তারপর ভাবলো মিহালকে একটি ক্ষেপানো যাক। তাই তূর বলে,

–আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল আমার কাজিনের ফ্রেন্ডের সাথে। যার কারণে আমি দেশে এসেছি। দেশে আসার ওটাও একটা কারণ ছিল। এজন্য বাবা অসন্তুষ্ট ছিল দেশে আসাতে তবে তিনি তখনও জানতেন না যে আমি বিয়ের কথা জেনে দেশে এসেছি। বাবা-মাকে বুঝিয়ে বিয়ে ভাঙিয়েছি কিন্তু সেই ছেলে এখনও আমার আশা রাখে।

সবাই অবাক হয়ে যায়। ওরা এটা জানতো না।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন ও কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।